***আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা) এর একটি ঘটনা এবং আমাদের জন্যে শিক্ষা***
লিখেছেন: ' manwithamission' @ মঙ্গলবার, অগাষ্ট ১৭, ২০১০ (১২:০৯ অপরাহ্ণ)
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
আলহাদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালমু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মদ ﷺ।
আবু উবাইদা (রা) সম্পর্কে রাসূল ﷺ বলেছিলেন, ‘লিকুল্লি উম্মাতিন আমীনুন, ওয়া আমীনু হাজিহিল উম্মাহ আবু উবাইদা’ অর্থাৎ ‘প্রত্যেক জাতিরই একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি আছে। আর এ মুসলিম জাতির পরম বিশ্বাসী ব্যক্তি আবু উবাইদা’।
আবু উবাইদা (রা) সেই দশজন সাহাবীদের অন্তর্ভূক্ত যারা দুনিয়ায় থাকতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। আর এক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যেসব সাহাবীদের দুনিয়ায় জীবিত থাকতেই জান্নাতের সংবাদ প্রাপ্ত তাদের জীবনীর দিকে তাকালে দেখতে পাই তারা আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল ﷺ এর চূড়ান্ত আনুগত্য করতেন। আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটি করতেন। তাদের মনে বিন্দুমাত্র অহংকার ছিল না। বিষয়টি আমাদের মতো নয়, আমরা যেমন কোন জিনিস পাওয়ার আকাঙ্খা করি যতক্ষণ পর্যন্ত জিনিসটি আমাদের হাতে না আসে সে পর্যন্ত আমরা অস্থির অনুভব করি, জিনিসটি পাওয়ার জন্যে প্রচেষ্টা চালাই কিন্তু যখনই জিনিসটি আমাদের হাতে এসে যায় আর তার কিছুদিন পর জিনিসটির জন্যে আমাদের সেই ব্যকুলতা থাকে না। বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীগণ জান্নাতে যাওয়ার সংবাদ দুনিয়ায় থাকতে জানতে পেয়েও আরো বেশী করে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল এর আনুগত্য করতেন। জান্নাতে যাওয়ার জন্যে কাজগুলো আরো বেশী বেশী করে করতেন আর এত এত ইবাদত করেও তারা কান্নাকাটি করতেন যে আল্লাহর নিকট ইবাদত গুলো গ্রহণযোগ্য হচ্ছে কিনা!
আবু উবাইদা (রা) উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) এর শাসনামলে শাম অঞ্চলের মুসলিম বাহিনীর সেনাপতির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। রোমান সম্রাটের দূত আসলেন শাম অঞ্চলে মুসলিম বাহিনীর সেনাপতির সাথে দেখা করার জন্যে। এসে দেখলেন, কিছু মুসলিম সৈন্য মাটিতে বসে আছে তিনি তাদের নিকট যেয়ে সেনাপতি কোথায় তা জিজ্ঞেস করলেন। সৈন্যরা কিছুদূরে মাটিতে বসে থাকা অতি সাধারণ পোষাক পরিহিত এক ব্যক্তির দিকে ইঙ্গিত করল। দূত চরম বিস্ময় নিয়ে সেনাপতি আবু উবাইদা (রা) এর নিকট আসলেন! দূতের বিস্ময় হওয়ার কারণ হচ্ছে, রোমান সম্রাজ্যে সেনাপতির পোষাক জৌলুসপূর্ণ, সেনাপতি সম্মানিত আসনে বসেন, উন্নত ধরণের আহার করেন, তার কথা-বার্তা, আচার-আচরণ অন্যদের থেকে ভিন্ন অহংকারপূর্ণ আর এই রকম চিত্রই ছিল স্বাভাবিক ঘটনা রোমান সম্রাজ্যে। আর তার বিপরীতে মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি নিজ সৈন্যদের সাথে অতি সাধারণ পোষাকে মাটিতে বসে আছেন দূতের নিকট তা ছিল চরম বিস্ময়ের! দূত লোভ শামলাতে পারলেন না আবু উবাইদা (রা) কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কেন মাটিতে বসে আছেন? আপনার এই মাটিতে বসে থাকা কি আল্লাহর নিকট কোন গুরুত্ব বহন করে? আবু উবাইদা (রা) বললেন, আমি তোমার নিকট মিথ্যে বলব না, সত্যি কথা বলতে নিজের খাওয়ার জন্যে আমার নিকট বর্তমানে একটি অর্থকড়িও নেই যা দিয়ে আমি কিছু কিনে খেতে পারি! আমাকে খেতেও হবে আমার মুসলিম ভাই মুআজ ইবনে জাবাল (রা) এর নিকট থেকে কিছু অর্থ ধার করে। আর যদিও আমার নিকট অর্থ থাকতো তবুও আমি কোন সম্মানিত আসনের ব্যবস্থা করতাম না। কারণ, হয়তো আমি সম্মানিত আসনে বসে আছি আর আমার সামনে আমার মুসলিম সৈন্যরা মাটিতে বসে আছে আর সেই সৈন্যদের মাঝে কতক মুখ এমন থাকতে পারে যারা আল্লাহর নিকট বেশী পছন্দনীয় তাহলে আমার এই সম্মানিত আসনে বসে থাকার আল্লাহর সামনে কি অর্থ হতে পারে? আমরা আল্লাহর বান্দাহ, গোলাম – আমরা মাটির উপর হাটি, মাটির উপর বসি, মাটির উপরই খাদ্য গ্রহণ করি আর মাটির উপরই ঘুমাই! আর এটাই আমাদের নিকট যথেষ্ট আল্লাহর নিকট আনুগত্যশীল বান্দাহ হওয়ার জন্যে।
হে মুসলিম ভাই এবং বোনেরা, কেউ কত দামি বা আধুনিক পোষাক পড়ল, কেউ কত দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি মার্সিডিজ, বিএমডাব্লিইতে চড়ল, দামি খাবার খেল, আধুনিক ব্র্যান্ডের মোবাইল ব্যবহার করল তার কোনই মূল্য, গুরত্বই নেই আল্লাহ তাআলার নিকট। আমাদের হৃদয়ে কতটুকু তাকওয়া তথা আল্লাহ ভীতি রয়েছে শুধুমাত্র সেটাই আল্লহ তাআলা দেখবেন, আমাদের বাহ্যিক বেশভুষা দিকে চেয়ে আল্লাহ তাআলা আমাদের পুরস্কৃত করবেন না। সাহাবীদের তাকওয়া তথা আল্লাহ ভীতির জন্যে আল্লাহ তাআলা তাদের দুনিয়াতে সম্মানিত করেছেন আর এই সম্মানিত হওয়া কোন দামি পোষাক পরিধান করার মাধ্যমে নয় কিংবা অধিক সম্পদের মালিক হওয়ার মাধ্যমেও নয় এই সম্মানিত হওয়া হচ্ছে আল্লাহর ভালো বান্দাহগণ সাহাবীগণকে ভালোবাসে, তাদের পছন্দ করেন। কারুন অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিল, ফেরাউন সম্পদের মোহে দাম্ভিক ছিল কিন্তু তাদের সেই সম্পদ আজ কোথায়? সবই ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে। আল্লাহ তাআলার কোন ভালো বান্দাহই তাদের পছন্দ করেন না।
একটা জিনিস হাতে আসার পূর্ব পর্যন্ত আমাদের খুব আগ্রহ থাকে কিন্তু যখনই আমরা তা পেয়ে যাই তার কিছুদিন পরই আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলি, যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে, প্রেমিক-প্রেমিকাগণ। প্রবল আগ্রহ নিয়ে তারা একে অপরকে ভালোবাসে, তারা মনে করে তাদের মনের মানুষটিকে না পেলে তারা সুখী হবে না কিন্ত যখন সংসার জীবন শুরু হয় তখন তাদের চোখ খুলে যায়, বিবাহপূর্ব সেই আগ্রহ আর থাকে না। এই বিষয়টা বাচ্চার হাতে কোন নতুন খেলনা কিনে দেওয়ার মতো, খেলনা হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত কান্নাকাটি আর হাতে পাওয়ার কিছুক্ষণ পর খেলনা থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে! আমি বৈরাগ্য হওয়ার কথাও বলছি না, আমি যেটা বলতে চাইছি, সৎ-হালালভাবে বাচার জন্যে ব্যয়বহুল পোষাক, ব্যয়বহুল গাড়ি, বাড়ির প্রয়োজন নেই এগুলোর কোনটাই আমাদের তাকওয়া বৃদ্ধি করবে না। আমরা পৃথিবীতে এগুলো অর্জন করার জন্যেই সর্বাত্নক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। আমরা ভাবি এগুলো যখন অর্জন করতে পারবো তখন আমরা একটা কিছু হয়ে যাব আর তাই প্রবল আগ্রহ নিয়ে আমরা এগুলো অর্জনের জন্যে প্রচেষ্টা চালাই কিন্তু যখন এগুলো আমাদের করায়ত্ব হয় তখন কি আমরা সন্তুষ্ট হই? না, আরো উন্নত আরো অধিক ভালো কিছু পাওয়ার জন্যে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে আর এই অবস্থায় আমরা মৃত্যু মুখে পতিত হই। আমরা আল্লাহর নিকট কি জবাব দিব?
“অধিক (সম্পদ) লাভের প্রতিযোগিতা তোমাদের গাফেল করে রেখেছে, যত দিন না তোমরা কবরে গমন কর (অর্থাৎ যতক্ষণ না কবরে উপনীত হও ততক্ষণ পর্যন্ত অধিক প্রাপ্তির আশায় তোমরা ভুলে থাক)”। (সূরা তাকাসুরঃ ১-২)
আল্লাহ তাআলা আমাদের হক বুঝার তৌফিক দান করুন। পার্থিব সম্পদের মোহে আমরা যেন জীবনের মূল্যবান সম্পদ তাকওয়াটুকু হারিয়ে না ফেলি, সৎপথ থেকে যেন বিচ্যুত না হই। আমরা যেন আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল ﷺ এর আনুগত্য করতে পারি। পথভ্রষ্ট, গোমরাহী থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ তাআলা আমাদের হিফাজত করুন। আমীন।