***ইসলামী খিলাফা অমুসলিমদের যে সুবিধা দিয়েছিল আজকের যুগের তথাকথিত সেকুলার কোন রাষ্ট্র তার ধারের কাছেও নেই***
লিখেছেন: ' manwithamission' @ শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১০ (১০:০৮ অপরাহ্ণ)
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
আলহামদুলিল্লাহির রহমানির রাহিম, ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ ﷺ।
বর্তমান যামানার অধিকাংশ মুসলমান ইসলামী খিলাফা কি রকম ছিল সে সম্পর্কে খুব কম ধারণাই রাখেন। ইসলামী খিলাফার শাসন ব্যবস্থায় অমুসলিমরা পর্যন্ত এতটাই সন্তুষ্ট ছিল যে রোমানরা যখন সিরিয়া’র হিমস এর নিকট সৈন্য সমাবেশ করতে থাকে তখন মুসলিমরা হিমস এর খ্রিস্টানদের নিকট থেকে যে ‘জিজিয়া’ নিয়েছিল তা সকল খ্রিস্টানদের নিকট ফিরিয়ে দেয়, মুসলিম সৈন্যরা তাদের বলেছিল, আমরা তোমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলাম কিন্তু যেহেতু আমরা নিরাপত্তার আশ্বাস দিতে পারছি না তাই আমরা তোমাদের ‘জিজিয়া’ ফিরিয়ে দিচ্ছি। মুসলমানদের এই ব্যবহারে হিমস এর জনগণ এতই অভিভূত হয়েছিল যে, তারা বলেছিল এটা যদি রোমান সম্রাট নিতো তাহলে তারা কখনই এই অর্থ ফিরিয়ে দিতো না। আমরা প্রার্থনা করি তোমরা যেন আবার আমাদের অঞ্চলে ফিরে আস! তারা স্বতস্ফূর্তভাবে মুসলমানদের শাসন মেনে নেওয়ার কথা বলেছিল কারণ তারা ন্যয়বিচার দেখতে পেয়েছিল যা রোমান সম্রাজ্যে ছিল অলীক বস্তু।
পনের হিজরীতে পবিত্র নগরী জেরুজালেম মুসলমানদের দখলে আসে। সে সময় রোমানদের সাথে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) এর চুক্তি হয় আর এই চুক্তির মাধ্যমে তারা পবিত্র শহরের চাবি মুসলমানদের হাতে হস্তান্তর করে। সেই চুক্তিতে যা লেখা হয়েছিল তা সংক্ষেপিত আকারে নিম্নরুপ ছিলঃ
১. আল্লাহর বান্দাহ এবং বিশ্বাসীদের নেতা উমর ইবনুল খাত্তাবের (রা) পক্ষ থেকে জেরুজালেম নগরীর অধিবাসীদের তাদের জীবনের এবং তাদের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তির নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে, কোন প্রকার সম্পত্তি তাদের নিকট থেকে কেড়ে নেওয়া হবে না।
২. খ্রিস্টানদের চার্চ এবং তাদের ক্রস সমূহ আগে যেমন ছিল এখনও ঠিক তেমনি থাকবে। তাদের চার্চ সমূহ মুসলমানদের দ্বারা দখলকৃত হবে না।
৩. প্রার্থনার স্থান সমূহ এবং ধর্মীয় আচার আচরণ পালন করার ক্ষেত্রে তারা পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে, কাউকে জোর করে ইসলাম গ্রহণ করার জন্যে প্ররোচিত করা হবে না।
৪. বিচার ব্যবস্থার জন্যে তারা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বিচার প্রয়োগ করার পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে এমনকি এক্ষেত্রে মুসলমনগণ পূর্ণ সজাগ থাকবে যেন তাদের বিচার তাদের ধর্মীয় নীতি অনুযায়ী হয় এবং কোনভাবেই যেন তা মনগড়া রায়ে বিচার না হয়।
৫. এই চুক্তি এই নগরীর সকল বাসিন্দাদের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।
সুবহান’আল্লাহ, কি চমৎকার শাসন ব্যবস্থা, কি চমৎকার ন্যয়বিচার যা বর্তমান যামানার তথাকথিত সেকুলার রাষ্ট্রগুলো দিতে পারে নি। আজকে যেসব মুসলমান ভাই-বোনেরা এই সব তথাকথিত সেকুলার রাষ্ট্রগুলোতে বসবাস করছে তারা কি আজ ইসলামী খিলাফার মতো ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করছে? মুসলমানরা কি পারছে তাদের ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে চলতে, তাদের সমস্যাগুলো, তাদের অভিযোগগুলো, তাদের বিচারগুলো ইসলামী রীতিতে সমাধান করতে? আছে কি কোন ইসলামী বিচার ব্যবস্থা এই তথাকথিত সেকুলার রাষ্টগুলোতে? নেই! তবে বল্গাহীন স্বাধীনতা আছে যে স্বাধীনতা হচ্ছে তাদের নিজস্ব গন্ডিতে যা ভাল মনে করবে সেটা পালন করতে বাধ্য করার স্বাধীনতা! মদ খাওয়ার স্বাধীনতা, সেক্সের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতার নামে ইসলামের বিরুদ্ধে জঘন্য-অকথ্য ভাষায় সাহিত্য চর্চা, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে কথা বলার স্বাধীনতা। মুসলিম নারীরা হিজাব পড়তে গেলে তাদের স্বাধীনতায় আঘাত লাগে অথচ তারা ব্যক্তি স্বাধীনতার চর্চা করে। মুসলমানরা তাদের সমস্যাগুলো ইসলামী নিয়মে সমাধান পায় না, তাদেরকে মেনে নিতে হয় সেকুলার ব্যবস্থার যে আইন সেগুলো।
ইসলামী খিলাফাতে খ্রিস্টানগণ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে প্রকাশ্যে তাদের ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে চলতো। তাদের ধর্মীয় কার্যাবলীতে কোন মুসলিম বাধা দেওয়া তো দূরের কথা বিরোধিতা পর্যন্ত করতো না। আজকে কোথায় আমাদের স্বাধীনতা? মুসলমানদের অমুসলিম, কাফির হতে স্বাধীনতা আছে, মদ খাওয়ার স্বাধীনতা আছে, অবৈধ সম্পর্ক রাখার স্বাধীনতা আছে। ইসলামের বিরুদ্ধে জঘন্য-অকথ্য ভাষায় সাহিত্য চর্চা করার স্বাধীনতা আছে, ইসলামী শরীয়ার বিরুদ্ধে কথা বলার স্বাধীনতা আছে শুধু স্বাধীনতা নেই শুধুমাত্র আল্লাহর পূর্ণ আনুগত্য করার ক্ষেত্রে অর্থাৎ যেভাবে আল্লাহর আনুগত্য করার কথা ছিল সেই আনুগত্য করার স্বাধীনতা নেই! স্বাধীনতা নেই ইসলাম অনুযায়ী মুসলমানদের জীবনটাকে পরিচালিত করার। মুসলমানদের বাস্তবে কোন স্বাধীনতাই নেই!
মুসলমান ভাই-বোনেরা ইসলাম মানে শুধু তো এটা নয় যে আমরা কোনমতো নামাজ পড়বো আর আমাদের জীবনটা হবে সম্পূর্ণ ইসলামী শরীয়ার বাইরে! যে পর্যন্ত পূর্ণ ইসলামী শরীয়ার অভ্যন্তরে আমরা প্রবেশ করতে না পারবো সে পর্যন্ত আমরা পরিপূর্ণ ইসলামিক হতে পারবো না। আপনারা সাহাবীদের জীবনী দেখুন, দেখুন তারা কিভাবে আল্লাহর আনুগত্য করতেন। পরিপূর্ণ ইসলামী পরিবেশে তারা জীবন অতিবাহিত করেছেন। আল্লাহর রাসূল ﷺ তাদেরকে যেভাবে ইসলাম শিখিয়েছিলেন তারা সেভাবেই ইসলাম পালন করেছেন। আর আমরা কোন পথে হাটছি? আল্লাহ তাআলা আমাদের বুঝার সুমতি দান করুন, আমীন।
মাশা-আল্লাহ । ভাল পোষ্ট ।