***আবু লাহাব এবং আমরা…***
লিখেছেন: ' manwithamission' @ শুক্রবার, অক্টোবর ১, ২০১০ (১২:০৬ অপরাহ্ণ)
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
আলহাদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মদ ﷺ।
আবু লাহাব – এই নামটি মুসলমান মাত্রই সবাই জানেন। রাসূল ﷺ এর মক্কী জীবনের অন্যতম প্রধান শত্রু। রাসূল ﷺ এর প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব মানুষকে একদম পরিস্কার ভাবে ইসলাম বুঝিয়ে দেওয়া এবং ভয়াবহ আযাব থেকে সতর্ক করা। মক্কার জীবনে এই দায়িত্বগুলো পালন করতে যেয়ে রাসূল ﷺ কে যারা বাধা দিত, ইসলাম গ্রহণকারীদের অত্যাচার করতো তাদের মধ্যে আবু লাহাব অন্যতম। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা ইসলামের এই প্রধান শত্রু আবু লাহাবের চরিত্র আমাদের মাঝে ধারণ করেছি। ইনশা’আল্লাহ, সেই বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করবো।
প্রাথমিক অবস্থায় ইসলামের দাওয়াত ছিল গোপনে। এরপর যখন রাসূল ﷺ এর প্রতি নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল হল,
“(হে নবী,) তুমি তোমার নিকটতম আত্মীয় স্বজনদের (আল্লাহ তাআলার আযাব থেকে) ভয় দেখাও”। (সূরা আস শুয়ারাঃ ২১৪)
তখন রাসূল ﷺ তার নিকটতম স্বজনদের দাওয়াত দেওয়ার জন্যে একদিন দিনের বেলা যখন সবাই যার যার কাজ, ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত তখন সাফা পাহাড়ে আরোহন করে ডাক দিলেন, ‘ইয়া সাবাহাহ’! যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থা উপনীত হতো তখন আরবের লোকজন ‘ইয়া সাবাহাহ’ বলে লোকজনকে সমবেত করতো। রাসূল ﷺ এর ডাক শুনে কুরাইশগণ তার নিকট সমবেত হলেন, যারা সমবেত হতে পারলেন না তারা অন্য একজনকে তার পরিবর্তে পাঠিয়ে দিলেন গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি শোনার জন্যে। কুরাইশগণ সমবেত হয়ে বললেন, তোমার ব্যাপার কী? তিনি ﷺ বললেন, আমি যদি তোমাদের বলি শত্রুবাহিনী এই পাহাড়ের পিছনে অবস্থান করছে তোমাদের আক্রমন করার জন্যে, তাহলে কি তোমরা আমার এ কথা বিশ্বাস করবে? তারা বলল, অবশ্যই বিশ্বাস করবো। তুমি কখনো আমাদের সাথে মিথ্যা বলনি। আরবের লোকেরাই রাসূল ﷺ কে উপাধি দিয়েছিল “আস্সাদাকাল আমীন”। এরপর রাসূল ﷺ বললেন, আমি তো তোমাদের জন্য এক আসন্ন কঠিন শাস্তির ভয় প্রদর্শনকারী। কুরাইশের লোকজন আগে থেকেই জানতো যে মুহাম্মাদ ﷺ একটি নতুন ধর্মের প্রচার করছেন কাজেই রাসূল ﷺ এর এই কথা শোনা মাত্রই আবু লাহাব বলে উঠলো, এই জন্যেই কি তুমি আমাদের সমবেত করেছিলে? তোমার ধ্বংস হোক। আবু লাহাব ছিলেন ব্যবসায়ী আর সময়টা ছিল Business hour , তার মনের মাঝে তখন ধর্মের কোন চিন্তাই ছিল না, কাজেই Business hour এর সময় ধর্মের আলোচনা তাকে রাগান্বিত করে তোলে।
আজকে আমাদের অধিকাংশ মুসলমানদের মাঝে আবু লাহাবের এই চরিত্রটি চমৎকারভাবে লালিত হচ্ছে। বিভিন্ন কাজে অনেকেই প্রচুর সময় দেন কিন্তু ইসলামের কথা বলতে গেলেই তারা বিরক্ত হয়ে উঠেন, বিষেদগার শুরু করেন। হয়তো একটা কাপড় কিনতে যেয়ে অনেকগুলো দোকান ঘুরে দুই এক ঘন্টা পর একটা কাপড় কেনার সিদ্ধান্ত নেন, কিংবা কোন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রটা ভালো মানের হবে সে জন্যে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করে বিস্তারিত একটা রিসার্চ করে ফেলেন। কোন গাড়িটা কেনা যায়, কোন ফ্ল্যাটটা কিনলে ভালো হয় এই নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা গবেষণার শেষ নেই। এসমস্ত কাজের পিছনে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করলেও আধ্ ঘন্টার জন্যেও ইসলাম সম্পর্কে জানার সময় হয় না, কেউ বলতে গেলে চরম বিরক্ত হয়, ব্লগে কোন লেখা ইসলাম সম্পর্কিত দেখলে, মন্তব্য করে এসব কি হচ্ছে? আমরা এখানে বিনোদন করতে এসেছি! ঠিক আবু লাহাবের মতো রাগান্বিত হয়ে উঠেন অনেকে আর বিরুপ মন্তব্য করা শুরু করেন!
আমরা রোবটের মতো হয়ে যাচ্ছি, বোধশক্তি হারিয়ে যাচ্ছে, দুনিয়ার মোহের পিছনে অনবরত দৌড়াচ্ছি, সময় নেই! কোরআন-হাদীস পড়ার কিংবা ইসলাম সম্পর্কে কোন লেখা পড়ার আহবান জানালে অনেকেই বলে উঠেন, ‘সময় হলে পড়ে দেখব’ কিন্তু বাস্তবে অনেকেরই সেই সময়টা আর হয়ে উঠে না। কোথায় রাসূল ﷺ এর উম্মৎ হিসেবে তার সুন্নাহ আকড়ে ধরার কথা ছিল তা না করে আমরা ইসলামের শত্রু আবু লাহাবের চরিত্র ধারণ করেছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের বুঝার সুমতি দান করুন। আমীন।
“অধিক (সম্পদ) লাভের প্রতিযোগিতা তোমাদের গাফেল করে রেখেছে, এমনি করেই (ধীরে ধীরে) তোমরা কবরের কাছে গিয়ে হাজির হবে; এমনটি কখনো নয়, তোমরা অচিরেই জানতে পারবে, কখনো নয়, তোমরা অতি সত্বরই (এর পরিণাম) জানতে পারবে; (কতো ভালো হতো!) যদি তোমরা সঠিক জ্ঞান কি তা জানতে পারতে;” (সূরা তাকাসুরঃ ১-৫)