“সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন?” – এই প্রশ্নের সরল উত্তর
লিখেছেন: ' মেরিনার' @ বুধবার, এপ্রিল ২১, ২০১০ (৬:৪২ পূর্বাহ্ণ)
“মুক্তমনা” নাস্তিকরা, “ডি-জুস”-কালচারে-বড়-হওয়া নিজের দ্বীন-সম্বন্ধে-একেবারে-অজ্ঞ কোন কিশোর বা তরুণকে যে ক’টি প্রশ্ন করে ভড়কে দেয়, তার একটি হচ্ছে: “সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন?” অথচ, একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে, এই প্রশ্নটা সেই গ্রাম্য “শঠ-পন্ডিতের” সাথে “সত্যিকার পন্ডিতের” বিতর্কের প্রসিদ্ধ গল্পের মত – যেখানে “শঠ-পন্ডিত” তার প্রতিদ্বন্দিকে জিজ্ঞেস করেছিল: I don’t know – মানে কি?
চলুন দেখি “সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন?” এই প্রশ্নের একটা সরল উত্তর ভেবে দেখা যাক:
স্রষ্টা এমন সত্তা যিনি সৃষ্ট নন, তিনি অস্তিত্বে আসনে নি বরং সর্বদা অস্তত্বিশীলএবং তিনি সৃষ্টিজগতের স্থান-কাল কাঠামোর অংশ নন ৷ আর এজন্যই তিনি অসৃষ্ট বা অবস্তু, ফলে তাঁর সৃষ্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই ৷ এজন্য স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছেন, এই প্রশ্নটিই অবান্তর ৷ যেমন একটি ছবি কে এঁকেছে, এর উত্তরে একজন চিত্রশিল্পীর অস্তিত্ব থাকা আবশ্যক, কিন্তু “চিত্রশিল্পীকে কে এঁকেছে?” এই প্রশ্নটি অবান্তর কেননা চিত্রশিল্পীর ক্ষেত্রে “আঁকা” নামক ক্রিয়াটি প্রযোজ্য নয় ৷ তাই চিত্রশিল্পীর অংকিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, অন্য কথায় “অংকিত নয়” এমন একজন অংকনকারী থাকা সম্ভব ৷ একইভাবে “সৃষ্ট নন”, এমন একজন স্রষ্টা থাকা সম্ভব, তাই বার্ট্রান্ড রাসেলের “হু ক্রিয়েটেড গড মাম?” এই প্রশ্ন করা অযৌক্তিক, অবান্তর, বোকামী ৷ আরেকটা উদাহরণ দেয়া যাক ৷ ধরা যাক আপনি অনেক দীর্ঘ একটি তাসের সারির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনি দেখছেন একটি একটি করে তাস পড়ে যাচেছ এবং পড়ে যাওয়ার সময় সে পরের তাসটিকে ধাক্কা দিচ্ছে, ফলে পরের তাসটিও পড়ে যাচেছ, এভাবে একটি তাসের পতনের কারণ হচ্ছে তার পূর্বের তাসটি, তার পতনের কারণ তার পূর্বের তাসটি, তার পতনের কারণ তার পূর্বের তাসটি, এভাবে যেতে থাকলে একটি তাসে গিয়ে আপনাকে থামতেই হবে যেটি প্রথম তাস ৷ এখন যদি প্রশ্ন করা হয় যে, প্রথম তাসের পতনের কারণ কি? উত্তরে বলা যাবে না যে সেটিও একটি তাস, ফলে বুঝতে হবে যে প্রথম তাসের পতনের কারণ এমন কিছু যে নিজে তাস নয় ৷ হয়ত সে একজন মানুষ যে প্রথম তাসটিকে টোকা দিয়েছে ৷ এই মানুষটি যেহেতু তাস নয়, সেজন্য তাসের ক্ষেত্রে যে বৈশিষ্ট্যসূচক প্রশ্ন করা যাবে, এই মানুষের ক্ষেত্রে তা করা যাবে না ৷ যেমন তাসের ক্ষেত্রে প্রশ্ন করা যায় যে “তাসটি কি হরতন না ইস্কাপন?”, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটি অবান্তর ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও তাসের পতনের পেছনে আদি কারণ হিসেবে মানুষ থাকার বিষয়টি বাস্তব ৷ ঠিক তেমনি স্রষ্টা যেহেতু সৃষ্টি নন কিংবা ফল নন, সেহেতু “তাঁর স্রষ্টা কে?” বা “কারণ কি?” এই প্রশ্নগুলি তাঁর বেলায় প্রযোজ্য নয় – কিন্তু তাঁর থাকার বিষয়টি বাস্তব ৷ এখানে আপাতদৃষ্টিতে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, যদি স্রষ্টাকে অস্তিত্বে আনার প্রয়োজন নেই বলে ধরে নেই, তবে খোদ মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেই একথা ধরে নেই না কেন ? এর কারণ এই যে, মহাবিশ্ব কোন “জ্ঞানসম্পন্ন সত্তা” নয় যে নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, পরিচালনা করতে পারে। বরং মহাবিশ্বের সকল ব্যবস্থা ও সকল অংশ ইংগিত করছে যে, তা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত। এজন্য কোন স্রষ্টা ব্যতীত মহাবিশ্বের স্বয়ংসর্ম্পূণ অস্তিত্বের ধারণা সর্ম্পূণ যুক্তি বিরোধী, তাই এক্ষেত্রে একমাত্র যৌক্তিক সম্ভাবনা হচ্ছে এই যে, এর একজন জ্ঞানী স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রণকারী থাকতে হবে যিনি নিজে সৃষ্ট নন।
এই প্রশ্নের উত্তর দিবার পারমিশন কি আপনার আছে? আমি নিশ্চিত নই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অনুমতি আছে কি না, তাই আমার একটি সুন্দর সিন্টিফিক কাজ পাবলিকের সম্মুখে প্রকাশ করতেছি না।
ভালো উদ্যোগ।
সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন তিনি যিনি সব কিছুকে সৃষ্টি করেছেন, যাকে কেউ সৃষ্টি করে নাই।
কাজেই যারা বলে সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছে,
১. তারা হয় শিশু যাদের তাদের সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাই নেই।
২. নয়ত তারা পাগল তারা যুক্তি বুদ্ধির ধার ধারে না।
৩. নয়ত তারা প্রতারক ,মানুষকে বোকা বানিয়ে ধোঁকা দেওয়াই তাদের কাজ
নাস্তিকদের যুক্তি: সৃষ্টিকর্তার পিতা – (ক) ঘড়ি বানায় ঘড়ির কারিগর। ঘড়ির কারিগরের পিতা আছে। (খ) মহাবিশ্ব বানিয়েছে মহাবিশ্বের কারিগর। মহাবিশ্বের কারিগরেও পিতা থাকতে হবে। (গ) অতএব ঘড়ির যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় এবং সেই কারণে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা বলেও কিছু থাকতে পারে না।
যুক্তি খণ্ডন: প্রথমত, এই মহাবিশ্বের কারিগরের পিতা থাকলে সেই পিতাই হবেন এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা। ফলে সমস্যাটা কোথায় তা তো বুঝা গেল না! দ্বিতীয়ত, সবকিছুরই যে পিতা-মাতা বা সৃষ্টিকর্তা থাকতেই হবে – এই ধরণের উদ্ভট ও অবৈজ্ঞানিক কথা কে বলেছে! সংজ্ঞা অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার কোন পিতা-মাতা বা সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারে না। এই ধরণের যুক্তি নিতান্তই শিশুসুলভ ও হাস্যকর শুনায়। যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি একটি অসম্ভাব্যতা। কারণ সবকিছুরই পিতা-মাতা বা সৃষ্টিকর্তা খুঁজতে গেলে অসীম পর্যন্ত যেতে হবে, যেটি বাস্তবে অসম্ভব। তৃতীয়ত, সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা থাকতে হলে এই ন্যাচারাল মহাবিশ্বের কোন অস্তিত্বই থাকতো না। কারণ পরের সৃষ্টিকর্তা তার আগের সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তো। যার ফলে কখনোই কিছু সৃষ্টি হতো না। চতুর্থত, বিবর্তনবাদ বা যে কোন ধর্মের আলোকে যদি পিতা-মাতা খুঁজতে খুঁজতে পেছন দিকে যাওয়া হয় তাহলে দেখা যাবে যে প্রথম জীবের কোন পিতা-মাতা নেই! প্রথম জীব যদি কোন ভাবে একটি ঘড়ি বানাতে সক্ষম হতো তাহলে সেই ঘড়ির কারিগরের কোন পিতা-মাতা থাকতো না। অতএব নাস্তিকদের এই যুক্তি একদমই ভুল। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তো বটেই এমনকি বিবর্তনবাদ দৃষ্টিকোণ থেকেও নাস্তিকদের ‘সৃষ্টিকর্তার পিতা’ যুক্তি কিন্তু সহজেই ধরাশায়ী হচ্ছে। পঞ্চমত, নাস্তিকদের বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষই যদি স্বয়ম্ভু (?) হতে পারে তাহলে সৃষ্টিকর্তার স্বয়ম্ভু হতে সমস্যা কোথায়! অতএব দেখা যাচ্ছে যে, তারা নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মেরেছে। তাদের যুক্তি দিয়েই তাদেরকে খণ্ডন করা যাচ্ছে – যাকে বলে সেল্ফ্-রেফিউটেড যুক্তি।