লগইন রেজিস্ট্রেশন

আমলের সুফল পেতে সহীহ-শুদ্ধ আমল হওয়া জরুরী

লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ সোমবার, জুলাই ১১, ২০১১ (৬:০৮ অপরাহ্ণ)

মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দাঃবাঃ-এর বয়ান
স্থান : কলতা বাজার আল মুঈন মাদরাসা,
তারিখ : ০২/০৫/০৮ ইং
আল্লাহপাক আমাদেরকে কুরআন-হাদীসের আলোচনা শুনে বোঝা ও আমল করার তাওফীক দান করুন। বোঝার দরকার এজন্য যে, আমল করতে হবে। আর আমলের প্রয়োজন এজন্য যে, আল্লাহপাক মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবী এবং শারীরিক ও আধ্যাত্মিক সফলতার জন্য তার আমলকে মাধ্যম বানিয়েছেন। যেমন যারা দুনিয়াদারি করে তাদের দুনিয়াবী সফলতা আমল তথা কর্মের উপর নির্ভরশীল। যারা আমল তথা কাজ করে তারা নিস্ফল হয় না। কর্মকারদেরকে সব মানুষেই ভালোবাসে। সমাজের লোকেরা তাদেরকে শ্রদ্ধা করে।
কুরআনে কারীমের বিধানবলীর প্রতি যদি মানুষ সঠিক জ্ঞানে চিন্তা করে তাহলে বুঝবে যে, এগুলো সব মানুষের কল্যাণের জন্যই। আমরা জানি, দুনিয়াতে মানুষের জীবন খুবই অল্প দিনের জন্য। এখানে একজন অপরজনকে প্রয়োজনে সহযোগিতা করতে পারে। এখানে যদি কেউ ঠিক মতো কাজ না করে তাহলে তার জীবন হয় নিস্ফল। মাতা পিতা তাকে গালি দেয়। এদুনিয়া থেকে আমল না করে গেলে আল্লাহ পাকও আখেরাতে খাবার দিবেন না। সুস্বাদু খাবারের পরিবর্তে দুর্গন্ধযুক্ত খাবার দিবেন এবং ঠাণ্ডা পানির পরিবর্তে গরম পানি পান করাবেন।
তবে একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে যে, শুধু আমল করলেই চলবে না বরং কৃত প্রতিটি শরীয়তের নিয়ম মুতাবিক আমল পরিশুদ্ধ হতে হবে। যেমন ঔষধ ভুল প্রয়োগের দ্বারা রোগ দূর হয় না, বরং আরো বেড়ে যায়। ঠিক আমলও তেমনই। আমল ভুল হলে উল্টো রিয়েকশন করে। অশুদ্ধ আমল বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমল হলেও প্রকৃত পক্ষে আমল হয় না। যেমন, কোন লোক অজু ছাড়া নামায পড়লে, মানুষ তাকে নামাযী বলবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে নামযী নয়। অশুদ্ধ আমলের দ্বারা আমলের সুফল পাওয়া যায় না। কতক মানুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সঙ্গে পড়ে, আবার মিথ্যাও বলে, গীবত করে, চুরি করে অথচ আল্লাহপাক কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন-
ان الصلوة تنهى عن الفحشاء والمنكر
অর্থাৎ নামায তাকে জোরপূর্বক গোনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর কথা ভুল হতে পারে না। আল্লাহপাক উক্ত আয়াতের শেষ দিকে বলেছেন ولذكرالله اكبر যিকির নামাযীর দিল-দেমাগ তথা সারা শরীরে প্রবিষ্ট হয়ে যায়। ফলে আল্লাহ ছাড়া তার ভিতরে কিছুই থাকে না। যখনই তার সামনে গোনাহ আসে তখন আল্লাহর কথা স্মরণ হয়ে যায় এবং সে গোনাহ থেকে বিরত থাকে। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, জনৈক সাহাবী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজির হয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক সাহবী নামায পড়ে আবার চুরিও করে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে যদি নামায পড়ে তাহলে অতিসত্ত্বর সে চুরি ছেড়ে দেবে। সত্যি সত্যি কিছুদিন পর সেই সাহাবী এসে বললেন, ইয়া রাসূল্লাল্লাহ! সে চুরি ছেড়ে দিয়েছে।
হাদীসের এই ঘটনা থেকে বুঝতে পারলাম, শুধু কুরআনের আয়াতে না, বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে নামাযী যখন কোনো গোনাহের মুখোমুখি হয় তখন তার আল্লাহর কথা মনে হয় এবং গোনাহ থেকে দৌড়ে পালায়। আল্লাহপাক বলেন-
اذامستهم طائفة من الشيطان تذكروا فاذاهم مبصرون
ভাল মানুষ যখন সামাজিক কিংবা পারিপার্শ্বিকতার কারণে গোনাহ করে ফেলে, তখন তার দিলে আগুন লেগে যায়। গোনাহের উপর সে স্থির থাকতে পারে না। হাকীমুল উম্মত হয়রত খানবী (রহ.) বলেন, গোনাহের কাজ সামনে আসলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয় এবং গোনাহ থেকে দৌড়ে পালায়, এধরণের বুযুর্গ কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী (রহ.) এক বুযুর্গের ঘটনা নকল করেছেন যে, সে তার বাগানের দারোয়ানের স্ত্রীর প্রতি আসক্ত হয় এবং কৌশল করে দারোয়ানকে দূরে কোথাও কাজের জন্য পাঠিয়ে দেয়। তারপর দারোয়ানের বাসার ভেতরে প্রবেশ করে তার স্ত্রীকে বললো, সকল দরজা জানালা বন্ধ করে আসো, কাজ আছে। দারোয়ানের স্ত্রী মালিকের মতলব বুঝে ফেললো। যাহোক দরজা জানালা বন্ধ করে এসে হাজির হলো। মালিক জিজ্ঞেস করলো, সব দরজা বন্ধ করেছ? সে বলল, হ্যাঁ, একটি দরজা ছাড়া সব বন্ধ করেছি। মালিক বললো সেটাও বন্ধ করে আস। দারায়ানের স্ত্রী বললো, সেটা বন্ধ করতে পারি না। মালিক বললো, সে আবার কোন দরজা? দারোয়ানের স্ত্রী বললো, যে দরজা দিয়ে আল্লাহপাক তাকিয়ে আছেন সে দরজা বন্ধ করতে পারি না। মহিলার একথা শুনে মালিকের মনে ঝড় বয়ে গেলো। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সেজদায় পড়ে আল্লাহর দরবারে কান্না কাটি ও তওবা করতে শুরু করে দিলো। এধরণের হাজারো ঘটনা রয়েছে। এখান থেকে বুঝে আসে, সহীহ-শুদ্ধ আমল মানুষকে গোনাহ থেকে বিরত রাখে। আমাদের বুঝে আসে না যে, আমরা নামায পড়ি, অন্যান্য নেক আমলও করি, সাথে সাথে গোনাহও করি কেন? হযরাতে সাহাবায়ে কেরাম নামায পড়তেন আমরাও নামায পড়ি। সাহাবায়ে কেরামের নামাযকে আল্লাহপাক আমাদের জন্য মাপকাঠি বানিয়েছেন। এখন বলুন, আমাদের নামায কি তাদের নামাযের মত হয়? না হওয়ার একটি কারণ হলো আমরা চেষ্টা করেও তাদের মত পারি না। তখন আল্লাহর ফয়সালা হলো, চেষ্টা করেও যখন তোমরা সক্ষম না হও তখন আমি তোমাদেরকে পরিপূর্ণ সাওয়াব দান করবো। কিন্তু অবহেলা ও অলসতা করার কারণে যদি তোমাদের নামায পরিশুদ্ধ না হয়, তাহলে এর রিয়েকশন তথা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। রিয়েকশন হলো, দুনিয়াতে বিভিন্ন বালা-মসীবত আসবে আর আখেরাতের মসীবত তো পরে আসবেই। আমি নামায পড়ছি আবার আমার দ্বারা গোনাহও হচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে আমার নামায পরিশুদ্ধ হচ্ছে না। আলেমদের কাছে গিয়ে প্র্যাক্টিক্যাল অনুশীলন করা উচিত। আল্লাহপাক আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।
মোট কথা পরিশুদ্ধ আমল করতে হবে, পরিশুদ্ধ আমলকেই নেক আমল বলে। যে আমল এখলাস ও সুন্নত মোতাবেক হয় সেটাই নেক আমল। আমি বলি পরিশুদ্ধ হওয়টা হলো আমলের জন্য রুকন। যেমন নামাযের মধ্যে রুকু, সেজদা, কেরাত রুকন। এগুলো ছুটে যাওয়ার পর সেজদায়ে সাহো দিলেও নামায হবে না। ঠিক আমলেরও দুটি রুকন আছে। তা হলো, এখলাছ ও সুন্নত। যে কোন আমল এখলাছপূর্ণ ও সুন্নত মোতাবেক হতে হবে। কোন আমলে এদুটি না থাকলে ফলাফলও উল্টো হবে। কেয়ামতের দিন আমল শুদ্ধ না অশুদ্ধ, ঈমান ওয়ালা না কুফর ওয়ালা, এগুলো যাচাই করা হবে। সে জন্য একটি দিন নির্ধারণ করেছেন। কুরআনে পাকে বলা হয়েছে-
اليوم تجزي كل نفس بما كسبت لاظلم اليوم
কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষকে তার কৃতকর্মের ফল দেয়া হবে। হয়তো পুরস্কৃত হবে, নয়তো সাজাপ্রাপ্ত হবে। এর কোন বিকল্প নেই। আমল ভালো হলে পুরস্কৃত হবে, অনন্তকাল জান্নাতে থাকবে, আর মন্দ হলে সাজাপ্রাপ্ত হবে।
আল্লাহপাক বলেন- ووجدوا ما عملوا حاضرا 
অর্থাৎ মানুষ দুনিয়াতে যে আমল করেছে তা কিয়ামতের দিন দেখতে পাবে। মানুষ আমল করার পর তা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। যেমন কোন কথা বলার পর সেটা আর নিজের ভিতরে ফিরিয়ে আনা যায় না- নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। ততক্ষণ মানুষ আমল করলে সেটা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। চাই তা নেক হোক কিংবা বদ হোক। কোন কাজের পরিকল্পনা যতক্ষণ অন্তরে থাকে ততক্ষণ ফেরেশতারা জানতে পারে না। আর যখনই কাজে বাস্তবায়ন করা হয় তখনই তা মানুয়ের আয়ত্বের বাইরে চলে যায়। আল্লাহপাক কত বড় দয়ালু। মানুষের মনের গোনাহসমূহ সম্পর্কে ফেরেশতাদেরকে অবগত করেন না। মানুষ তাদের জীবনে অনেক আমলের চিন্তা করে কিন্তু সবগুলো বাস্তবায়নের সময় ও সুযোগ পায় না। কিছু বাস্তবায়ন করে আর কিছুর কথা ভুলে যায়। মহান আল্লাহপাক তাদের নেক নিয়তের কারণেও সওয়াব দান করবেন, কিন্তু বাস্তবায়নহীন বদ নিয়তের কারণে তাদের উপর কোন প্রকারের শাস্তি আসবে না। বরং এর বদলেও আল্লাহপাক তাদেরকে সওয়াব দিতে পারেন। কারণ মনে গোনাহের খেয়াল এসেছিল কিন্তু সে মনের উপর চাপ সৃষ্টি করে গোনাহ থেকে বিরত থেকেছিল। এই মুজাহাদার করণে তার যে কষ্ট হয়েছে তার বিনিময়ে আল্লাহপাক তাকে সওয়াব দান করবেন।
চোখ হাত পা ও নাকের দ্বারা যদি অনিচ্ছায় গোনাহ হয়ে যায় তাহলে তার মাফের লাইন থাকে। আর যদি ইচ্ছাকৃত গোনাহ হয় তাহলে তার জন্য ক্ষমার কোন লাইন থাকে না। গোনাহ গারের জন্য এশাস্তিও কম নয় যে, হাশরের মাঠের সকলেই জেনে যাবে যে, অমুক অপরাধীর কারণে এই লোকের শাস্তি হচ্ছে।
গোনাহ করলেই জাহান্নামে যেতে হবে এটা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকীদর নয়। এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, সকল গোনাহগাররাই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে না, বরং জাহান্নামে যাবে, তবে অল্প কয়েকদিন জাহান্নামে থাকার পর আল্লাহপাক তাকে ক্ষমা করে দিবেন। এই ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে আল্লাহপাক নবীগণকে বলবেন-
اخرجوا من كان في قلبه مثقال ذرة من خردل من ايمان
অর্থাৎ তোমরা জাহান্নামে গিয়ে দেখো, যাদের অন্তরে অণুপরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে নিয়ে যাও। আল্লাপাকের এনির্দেশ পাওয়ার পর নবীগণ অণুপরিমাণ ঈমান ওয়ালাদেরকে খুঁজে বের করে জান্নাতের দরজার সামনের হাউযে গোসল করিয়ে তাদেরকে জানাতে পৌঁছিয়ে দিবেন। তারপর আল্লাহপাক নবীদের জিজ্ঞেস করবেন, আরো কোন ঈমানদার জাহান্নামে আছে? নবীগণ বলবেন, না। আল্লাহপাক বললেন, ভালো করে দেখো। নবীগণ বলবেন, না ভালো করে দেখেছি কোন ঈমানদার জাহান্নামে নেই। আল্লাহপাক বলবেন, তোমরা যা বের করেছ আমি তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি বের করবো। সেদিন আল্লাহপাক একশতগুণের নিরানব্বই গুণ দয়া প্রকাশ করবেন। আল্লাহপাক বলবেন, এখন আমি নিজ হাতে বের করে আনবো অতঃপর এপর্যন্ত যত লোক জান্নাতবাসী হয়েছেন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লোক জান্নাতে পাঠাবেন, যাদেরকে নবীগণও তালাশ করে পাননি, ফেরেশতারাও পাননি। তাদের পরিচয় হলো সরকারী ক্ষমাপ্রাপ্ত। তাদের কোন আমল নেই। আল্লাহপাক তাঁর নিজ দয়ায় ক্ষমা করে তাদেরকে জান্নাত দান করবেন। তাদের কপালে লেখা থাকবে عتقاءاللهএর অর্থ হলো এদের কোন আমল নেই, এরা জান্নাতে যাওয়ার যোগ্য নয়; স্বাধীনতা দিবসে যেমন অনেক অপরাধীরা কারাগার থেকে সাধারণ ক্ষমা পেয়ে বের হয়ে আসে। অনরূপ আল্লাহপাক নিজ দয়ায় জাহান্নামীদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন। জান্নাতে যাওয়ার পর যখন তারা জান্নাতীদের সঙ্গে পরস্পর দেখা সাক্ষাৎ করবে তখন জান্নাতীরা তাদের কপালে লেখা দেখে বলবে আপনারা জাহান্নামে ছিলেন, তাই না? আপনাদের কোন আমল নেই, আল্লাহপাক নিজ দয়ায় আপনাদেরকে জান্নাত দান করেছেন। কিন্তু তারা কোনো জবাব দিবে না।
কারণ হলো, তারা আসলেই অপরাধী। যারা অপরাধ করে তারা মানসিকভাবে দুর্বল থাকে। এমনকি অপরাধী তাওবা করার পরও যখন অপরাধের কথা মনে পড়ে তখনও দুর্বল হয়ে যায়। এজন্যই বলা হয়েছে, জীবনের শুরু থেকে নিজেকে এমন পাক পবিত্র রাখো, যাতে চক্ষু বন্ধ করলে মনে হয় যে, জীবনেও একটি গোনাহ করিনি। অন্যথায় গোনাহ হয়ে যাওয়ার পর অনুতপ্ত হয়ে তওবা করার পর আল্লাহপাক ক্ষমা করে দিলেও গোনাহের কথা স্মরণ হলে মন দুর্বল হয়ে যায়। হাদীসে শাফায়াতে বর্ণিত হয়েছে, কিয়ামতের দিন হাশর বাসীরা কষ্টে অসহ্য হয়ে সবাই মিলে পর্যায়ক্রমে হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম, তারপর হযরত নূহ আলাইহিস সাল্লাম, তারপর হযরত মূসা আলাইহিস সাল্লাম, এরপর হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লামের কাছে যাবে আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করার আবেদন নিয়ে। তাঁদের সকলেই নিষ্পাপ ও জান্নাতী। কিন্তু তাদের প্রত্যেকেরই কোন এক বিষয়ে আল্লাহর দরবারে লজ্জিত হতে হবে। উম্মত সর্বপ্রথম হযরত আদম আলাইহিস সাল্লামের নিকট যাবে এবং কিয়ামতের এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে নিস্কৃতি লাভের জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করতে আবেদন করবে। তখন হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম তাদের জবাবে বলবেন, আমি এক অপরাধ করেছি বিধায় আল্লাহপাকের দরবারে যেতে আমার লজ্জাবোধ হচ্ছে। আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করার জন্য তোমরা হযরত নূহ আলাইহিস সাল্লামের কাছে যাও। অতঃপর তারা সকলেই হযরত নূহ আলাইহিস সাল্লামের কাছে গিয়ে আবেদন করলে হযরত নূহ আলাইহিস সাল্লাম বলবেন, আল্লাহর দরবারে যেতে আমার লজ্জা লাগে। কারণ আমি আমার কাফের ছেলের জন্য আল্লাহর দরবারে মাগফেরাত ও রহমতের জন্য দোয়া করেছি। একই অবস্থা হযরত মূসা ও ঈসা আলাইহিস সাল্লামের। তারাও সুপারিশ করার ব্যাপারে নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করবে। অবশেষে সকল উম্মত মিলে আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওসাল্লামের কাছে আসবে।
অনেকদিন পর্যন্ত আমার মনের মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল যে, যেখানে সকল নবীই অপারগতা প্রকাশ করবে সেখানে আমাদের নবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে নির্দ্বিধায় সুপারিশ করতে এগিয়ে যাবেন? বহু দিন পর এপ্রশ্নের সমাধান হয়েছে। তা হলো, আমাদের দেশে লোক মুখে শোনা যায় যে, দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেছে। দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর ধাক্কা দিলেও আর পেছনে যায় না। বরং দেয়ালে পিঠ ঠেকলে গায়ে একটু প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি পায়। এপ্রবাদটি নিয়ে গবেষণা করে আমার প্রশ্নের জবাব বের করেছি। জবাটি হলোÑ আগের আম্বিয়ায়ে কেরাম উম্মতের জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন আমার পর তো উম্মতের সুপারিশের জন্য আর কেউ নেই। তাঁর পিঠও দেয়ালের সঙ্গে মিশে গেছে। তখন তিনি মুখে কিছু না বলে সেজদায় চলে যাবেন এবং বলবেন, হে রাব্বুল আলামীন! সুপারিশের জন্য নবীদের একজন আরেকজনকে দেখিয়ে দিয়েছেন, আমার কাছে এসে সেই ধারাবাহিকতা শেষ। আমি উম্মতকে কার কাছে যেতে বলবো? আমার পর তো আর কোন নবী নেই! হে আল্লাহ! তুমি সকল নবীকেই ধমক দিয়েছ, আমাকেও ধমক দিয়েছ, লজ্জায় তাদের কেউ তোমার সামনে উম্মতের সুপারিশের জন্য আসছে না, এখন আমিও যদি না আসি তাহলে উম্মত যাবে কার কাছে? হে আল্লাহ! তোমার কদমে মাথা রেখে উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি, তুমি তাদেরকে ক্ষমা করে দাও।
যাহোক আলোচনা চলছিলো, জাহান্নাম থেকে নাজাতপ্রাপ্ত জান্নাতীদের কপালে লেখা থাকবেعتقاءالله আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত। মিলে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে আবেদন জানাবে, হে আল্লাহ! আমাদের কপালের লেখা মুছে দাও!
কুরাআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-
فيها تشتهيه الانفس
জান্নাতে কোন কষ্ট থাকবে না। মনের দিক থেকেও না, শরীরের দিক থেকেও না। মান মর্যাদার দিক থেকেও না। জান্নাতে প্রবেশ হওয়ার পর عتقاءالله (উতাকাউল্লাহ) লেখাটি তাদের জন্য কষ্টের কারণ হওয়ায় আল্লাহপাক তাদের কপাল থেকে এ লেখাটি মুছে দিবেন।
আখেরাতের মাঠে প্রতেককে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। কাফের হলে চিরস্থায়ী জাহান্নামী আর মুসলমান হলে অপরাধের শাস্তি ভোগ করে জান্নাত পাবে। আর যদি নেকীর কাজ করো, নিষ্পাপ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো, যেমন আম্বিয়া আলাইকুস সালামগণ, শিশু বাচ্চারা ও প্রকৃত শহীদ, তাহলে মৃত্যুর সাথে সাথে জান্নাত পাবে।
কিছু লোক বরযখী যিন্দেগীতেই তাদের অপরাধের শাস্তি ভোগ করে জান্নাতে যাবে। আর কিছু লোক হাশরের ময়দান থেকে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়ে জান্নাতে যাবে। মোটকথা প্রত্যেককে নিজের আমলের বদলা দেয়া হবে। আখেরাতের জীবনে অনন্তকালের লাঞ্ছনা থেকে বাঁচার জন্য দুনিয়াতেই আমল করে যেতে হবে এবং সঠিক আমল করতে হবে। দুনিয়াতে নেক আমলের সবচেয়ে বড় ফায়দা হলোÑ মৃত্যুর সময় ঈমানী মৃত্যু নসীব হবে, কবরে সাওয়ালের সঠিক উত্তর দেয়া সহজ হবে।
এখন একটি প্রশ্ন হয় যে, মানুষকে জাহান্নামে কষ্ট দিয়ে বলা হলো যে, তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দেয়া হলো। তাহলে আল্লাহর দয়া গেল কোথায়? আল্লাহপাক তো গাফফার? এর উত্তরে বলা যায় যে, আল্লাহপাক পূর্বোক্ত আয়াতে বলেছেনÑ لاظلم اليوم জুলুম তথা অবিচার করা হবে না। আল্লাহপাক এক অপরাধীকে বলবেন, তুমি আমার অমুক বান্দার বাড়ী-ঘর দখল করে তার প্রতি জুলুম করেছ, তাই তোমাকে জাহান্নামে দিয়েছি। তুমি যেমন আমার বান্দা, তুমি যার বাড়ী দখল করেছ সেও আমার বান্দা। সে দুর্বল থাকায় তুমি তার প্রতি জুলুম করেছ। সে তোমার কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারেনি। আমি তোমার যেমন প্রভু তারও তেমন প্রভু। এখানে তোমাকে সাজা না দিয়ে বে কুসুর খালাছ দিলে অবিচার করা হবে।
দুনিয়াতে যদি একজন আরেকজনকে হত্যা করে, আর হত্যাকারীকে আদালতে নিরাপরাধ ও নির্দোশ বলে ঘোষণা করে ছেড়ে দেয়, তাহলে আপনারা এবিচারে সন্তুষ্ট হবেন নাকি অসন্তুষ্ট থাকবেন? নিশ্চয়ই অসন্তুট থাকবেন। দুনিয়াতে যেমন আখেরাতে তেমনই। আল্লাহপাক জালেমকে বলবেন, তুমি আমার দুর্বল বান্দার প্রতি জুলুম করেছ এ জুলুমের বিচার যদি না করা হয় তাহলে জুলুম করা হবে। এজন্য অপরাধীকে অপরাধ পরিমাণ শাস্তি ভোগ করার পর জান্নাত দান করা হবে। আল্লাহপাক আমাদেরকে এমন মুত্তাক্বী ও পরহেজগার বানান- যার দরুন প্রথমেই জান্নাতের টিকেট পেয়ে যাই।
www.dawatul-haq.com

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৩৭৭ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)

৩ টি মন্তব্য

  1. আল্লাহ তায়ালা হযরতের হায়াতের মাঝে খুব বরকত দান করুন। আপনাকে ধন্যবাদ। (Y)

  2. ধন্যবাদ আপনাকে আল্লাহপাক আমাদেরকে সঠিক ভাবে আমল করতে তাওফিক দান করুন।