শবে বরাত ও কিছু জরুরী কথা (দিতীয় কিস্তি)
লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ রবিবার, জুলাই ১৭, ২০১১ (৩:৩৫ অপরাহ্ণ)
মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দা:বা: -এর বয়ান
(গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদে প্রদত্ত বয়ান, তাং ১৪ শা’বান ১৪১৯ হি.)
সন্তানের দীনী শিক্ষার ফলাফল
এসব চিন্তা-ভাবনা করে সন্তানকে আখেরাতের পুঁজি হিসেবে মাদরাসায় ভর্তি করেছে। মাদরাসার ছাত্র হয়ে তোমার সন্তান বলেছে : بسم الله الرحمن الحيم উস্তাদকে সাক্ষী রেখে বলেছে ‘মহান আল্লাহর নামে শুরু, যিনি পরম করুণাময় এবং অত্যন্ত দয়ালু।’ নিষ্পাপ সন্তানের মুখের কত মধুর ডাক! এমন সন্তানের ডাক, যার মুখ পাক, ঠোট পাক, জিহবা পাক, সমস্ত দেহই পাক। সুতরাং যে মাছুম ছেলে আমাকে রহমান এবং রাহীম বলে ডেকেছে, তার পিতাকে জাহান্নামের আগুনে শাস্তি দিতে আমার লজ্জাবোধ হচ্ছে। ফেরেশতাদেরকে বলেছি, যাও সেই সন্তানের পিতাকে অনতিবিলম্বে জাহান্নাম থেকে জান্নাতের উচ্চাসনে, অকল্পনীয় ভোগবিলাস-সামগ্রীর প্রাসাদে তার অবস্থান নির্ধারণ করে দাও। সুতরাং তোমার মুক্তির কারণ তোমার নেক নিয়ত, তোমার নেক স্ত্রী, যাকে তুমি দীনী পরিবেশ থেকে গ্রহণ করেছিলে। তোমার নেক সন্তান তোমার জন্য দোয়া করেছে।
এ থেকে দোয়ার গুরুত্ব বোঝা গেল। তবে মনে রাখতে হবে যে, সঠিক নিয়ত ও বিশ্বাস এবং আল্লাহর ভয় ও আশা দোয়া কবূলের পূর্বশর্ত। তাই শবে বরাতের রাতে আমাদের সকলের জন্য জরুরী এবং অত্যন্ত জরুরী যে, আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে নিজের জন্য, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন সর্বোপরি সমস্ত মুসলমানের জন্য মুহাব্বতের সাথে উভয় জাহানের মঙ্গলের দোয়া করা।
খ. দোয়া কবূলের জন্য দ্বিতীয় শর্ত হল, খাঁটি মনে তওবা করা এবং ভবিষ্যতে গোনাহ না করার প্রতিশ্র“তি প্রদান করা। সাথে সাথে হক্কুল ইবাদ ও হক্কুল্লাহ আদায় করতে যথাযথ চেষ্টা করা। হক্কুল্লাহর মধ্যে নামায সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বের ক্বাযা নামাযসমূহ গুনে গুনে আদায় করতে হবে। শবে বরাত অতীতের নামায সমূহ কাযা করে নেওয়ার একটি সুযোগ। আর হক্কুল ইবাদ আদায় করে দেওয়ার সুদৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে এই রাতে মুনাজাতে নিমগ্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
বুযুর্গদের সাহচর্যের বরকত
এ রাতে যাদের ভাগ্যে কল্যাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে, যাদের দোয়া মঞ্জুর করা হবে, তারা বড়ই ভাগ্যবান। তারা মহান আল্লাহপাকের প্রিয় বান্দা। যারা তাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে তাদের আশেপাশে থাকে, তাদের সাথে উঠাবসা করে, মুহাব্বত ও শ্রদ্ধা রাখে, আল্লাহপাক তাদেরকে বঞ্চিত করেন না বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিকে ইঙ্গিত করে হাদীসে কুদসীতে উল্লেখ করেন,
هم الجلساء لايشقي جليسهم
অর্থাৎ তারা পূন্যশীল জামাতের সহযাত্রী, তাদেরকে বঞ্চিত করা হবে না।
আসলে আমাদের এমন যোগ্যতা নেই যে, আল্লাহপাকের শান অনুযায়ী কোন আমল এই রাতে তার দরবারে পেশ করবো। তাহলে আমরা আল্লাহর রহমত এবং মাগফিরাতের অধিকারী কিভাবে হতে পারি? হতে পারি এই ভাবে যে, এই রাতে আমরা আল্লাহর প্রিয়জনদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবো, তাদের সাথে বসবো, তারা যা করে তাই করবো। আল্লাহপাক তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, তারা ইতিপূর্বেও আল্লাহপাককে সন্তুষ্ট করার আমল করে এসেছে। তারা মসজিদে হাজরি হয় এবং তাদের অনুসরণে আরো অসংখ্য মানুষ মসজিদে উপস্থিত হয়। এ রাতের ফযীলতের কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, অনান্য রাতে আল্লাহপাক শেষ রাতে বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য, বিপদমুক্ত করার জন্য এবং হারাল রিযিক প্রদানের জন্য আহবান করেন, আর এই রাতে প্রথম রাত্রি থেকেই আহবান জানাতে থাকেন। ফেরেশতাদের আগমণও প্রথম রাত্রি থেকেই শুরু হয়ে যায়, তারা মানুষের জন্য আল্লাহর দরবারে কল্যাণের দোয়া করতে থাকে।
শবে বরাতে ফেরেশতাগণের আগমণ
হাদীসে পাকে আছে যে, শবে বরাতে অসংখ্য অগণিত ফেরেশতার আগমন ঘটে। কত সংখ্যক ফেরেশতার আগমন হয়, তার সঠিক পরিমাণ নির্ভরযোগ্য হাদীসের মাধ্যমে বলা কঠিন। ফেরেশতাদের মূল সংখ্যার কথা আল্লাহপাক ব্যতীত আর কেউ জানে না। প্রত্যহ বাইতুল মামূরে সত্তর হজার ফেরেশতা আল্লাহপাকের ইবাদতের জন্য একবার প্রবেশ করে বের হয়। একবার যে প্রবেশ করে কেয়ামত পর্যন্ত দ্বিতীয়বার তার প্রবেশের সুযোগ হয় না। পৃথিবীর শৃংখলা রক্ষার খেদমতের জন্য রয়েছে অসংখ্য ফেরেশতা। এর দ্বারা এতটুুক প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহপাকের সমস্ত সৃষ্টির তুলনায় বহু গুণ অধিক হচ্ছে ফেরেশতাদের সংখ্যা।
ফেরেশতাদের আকৃতি ও স্বভাব
আবার ফেরেশতাদের স্বভাব-চরিত্র ও আকৃতি আমাদের মত নয়। বিশুদ্ধ হাদীস মতে জিবরীল আ.-এর রয়েছে ছয়শত ডানা। সমগ্র পৃথিবীর ধ্বংসের জন্য তার একটি ডানাই যথেষ্ট। অতীতে তার দ্বারা বহু পাপাচারীদের বস্তিকে ধ্বংস করা হয়েছে। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ২/৪ বার তাঁকে আসল আকৃতিতে অবলোকন করে স্থীর থাকতে পারেননি, বরং সাথে সাথে বেহুশ হয়ে পড়েছেন। এ ধরনের অসংখ্য ফেরেশতা সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। তারা সকলেই আল্লাহপাকের আনুগত্য করে। তিনি যা হুকুম করেন, তারা তাই করে, মোটেও নাফরমানী করে না।
কুরআনের বাণী
لايعصون الله ما امرهم ويفعلون ما يؤمرون
“তারা আল্লাহর যা নির্দেশ, তা অমান্য করে না। যা নির্দেশ হয় তাই তারা পালন করে।”
শবে বরাতেও অসংখ্য ফেরেশতা আল্লাহপাকরে হুকুমে নাযিল হয়ে থাকে। হাদীসে আছে-
ان جبريل ينزل في كبكبة من الملائكة হযরত জিবরীল আ. পাখির ঝাকের ন্যায় অসংখ্য ফেরেশতাদেরকে নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন এবং সমগ্র পৃথিবীতে বিচরণ করেন। তারা ইবাদতে নিমগ্ন মানুষের নাম, ঠিকানা এবং আমলসমূহের সূচীপত্র তৈরি করে মহান আল্লাহপাকের দরবারে জমা দিয়ে থাকেন।
মানব আল্লাহর সর্বপ্রিয় সৃষ্টি
আল্লাহ পাক মানুষের জীবন-মৃত্যুর আগে-পরের সবকিছু জানা সত্ত্বেও কেন ফেরেশতাদের এই রিপোর্ট দান করার ব্যবস্থা? এর রহস্য তিনিই ভাল জানেন। তবে মানব সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে ফেরেশতাদের ধারণা ছিল যে, মানব জাতি পৃথিবীতে ফেতনা-ফাসাদের মাধ্যমে চরম বিপর্যয় সৃষ্টি করবে, আল্লাহর নাফরমানীতে সমগ্র পৃথিবীতে জটিলতার সৃষ্টি হবে। এরা আল্লাহপাকের ইবাদত এবং দাসত্বের যথাযথ হক্ব আদায়ে ব্যর্থ হবে। তারা ব্যাপারে আল্লাহ পাকের দরবারে আবদেন-নিবেদনও পেশ করেছিল। অথচ এই মানুষের মধ্যেই আছেন মাকামে বেলায়েত এবং রিাসালতের যোগ্যতার অধিকারী নবী-অলীগণ। আল্লাহপাকের সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাদের মাধ্যমেই সফল হবে। তারাই হবে আল্লাহ পাকের গৌরব ও কৃতিত্বের পাত্র। হাদীসে পাকে আছে, এ রাতে আল্লাহপাক يباهي بهم الملائكة মানুষকে নিয়ে ফেরেশতাদের সম্মুখে গৌরব বোধ করেন। এ জন্যই হয়তো ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাদের অবস্থান নির্ধারণের ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে।
ক্ষমা ঘোষণার রাত
অপর এক হাদীসে রয়েছে যে, ফেরেশতারা আল্লাহপাককে মানুষের ইবাদত, আমল-আখলাক সম্পর্কে অবহিত করে বলে যে, তারা তাদের কৃত গুনাহ-খাতার জন্য অশ্র“সিক্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত লাভের জন্য মুনাজাত করছে। তখন আল্লাহপাক ফেরেশতাদরেকে সাক্ষী রেখে উপস্থিত সকল মানুষের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করেন। আল্লাহপাক সমবেত সকলের প্রতি ক্ষমা ঘোষণার ফলে ফেরেশতাগণ বলেন, হে আল্লাহ! অমুক লোকটা তো এমনিতেই তাদের সাথে বসে আছে। তার প্রতি ক্ষমা ঘোষণার হেতু কি? তখন আল্লাহপাক বলেন,
هم الجلساء لايشقي جليسهم
আমার প্রিয় বান্দার সাহচর্যে যারা থাকে আমি তাদের সম্মানার্থে ওদেরকেও ক্ষমা করে থাকি। যারা তাদের সহকর্মী হয়, তাদেরকে বঞ্চিত করা হয় না।
আল্লাহর দরবারে মুনাজাত
তাই আমরা সকলেই আল্লাহর নিকট আবেদন-নিবেদন করবো এবং অশ্র“সিক্ত হয়ে আল্লাহর প্রিয়জনদের পাশে থেকে তাঁর দরবারে এভাবে প্রার্থনা করবো, হে আল্লাহ! আমরা অপরাধী! তোমার দরবারে পেশ করার মতো কোন যোগ্যতা আমাদের নেই, তবে আমরা তোমাকে, তোমার প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, অন্তরে রয়েছে তোমার প্রতি অনুরাগ, জাহান্নামের ভয়, জান্নাত লাভের কামনা, তোমার করুণার কোন শেষ নেই, তুমি করুণা করে আমাকে মানুষরূপে সৃজন করেছ, লক্ষ-কোটি নেয়ামত দানে বাধিত করেছ। আর মহান এই রাত্রিতে তোমার দরবারে তোমার প্রিয়জনদের সাথে বসে মুনাজাতের সুযোগ দিয়েছ। হে রাহমানুর রাহীম! তুমি করুণা করে আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার সন্তান-সন্তুতি, আমার পরিবার-পরিজন, আমার দেশ ও দেশবাসী এবং সমস্ত উম্মতকে তুমি ক্ষমা করে দাও। তোমার ওলী বুযুর্গদের তুফাইলে, তাদের বরকতে দয়া করে তোমার গোলাম বানিয়ে নাও। জীবিত এবং মৃত সকলকেই ক্ষমা করে দাও। তোমার বিশেষ রহমতের অধিকারী বানাও। অতীতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আর বর্তমান ও ভবিষ্যতে সীরাতে মুস্তাকীমের উপর কায়েম দায়েম থাকার জন্য মুনাজাত করছি।
দোয়া কবূল না হওয়ার কারণসমূহ
পবিত্র হাদীস এবং মুরব্বীদের আলোচনা থেকে জানা যায, যারা রাসূল সা. এবং সাহাবাগণের সমালোচনা করে, আলেম-ওলামাগণের প্রতি বিদ্বেষ ভাব পোষণ করে, মাতা-পিতাকে কষ্ট দেয়, শরাব পান করে, গীবত-কুৎসা রটনা করে, হিংসা করে, হয়, আমানতের খেয়ানত করে, প্রতিশ্র“তি রক্ষা করে না, বান্দার হক বিনষ্ট করে এবং দায়্যুছ অর্থাৎ প্রকাশ্যে গোনাহে কবীরায় লিপ্ত থাকে, এই রজনীতে খাঁটি তাওবা না করলে তাদের মুনাজাত কবূল হয় না। যারা সুদ খায়, ঘুষ খায়, যিনা-ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়, পতিবেশীর হক বিনষ্ট করে, অন্যের জমি দখল করে রাখে, খাটি তাওব না করলে এরূপ লোকের দোয়াও মঞ্জুর হয় না। সুতরাং খাঁটি তওবা করে আমাদের এই রজনীর বরকত ও ফয়েজ লাভ করতে হবে।
১. এ রাতের করণীয় কাজের অন্যতম একটি হচ্ছে রাতের আধারে ক্বাযা নামায এবং নফল নামায আদায় করা। আর পরের দিন ১৫ তারিখের রোযা পালন করা। হাদীসে একটি রোযা রাখার কথাই পাওয়া যায়। দুইটি রোযা পালরেন হুকুম আশুরার জন্য, শবে বরাতের জন্য নয়। অবশ্য নফলের নিয়তে এ্ মাসে অধিক রোযা রাখতে কোন বাধা নেই। রাসূলে পাক সা. এই মাসে রমযান মাসের স্মরণে অধিক রোযা পালন করতেন। এই নামাযের জন্য বিশেষ কোন সূরা নির্ধারণ করা হয়নি। যে কোন সূরার মাধ্যমে নফলের নিয়তে নামায আদায় করাই উত্তম। অবশ্য কোন কোন কিতাবে বিশেষ সূরার কথা বলা হয়েছে তবে এর কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
নামাযের গুরুত্ব
একটি কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, নামায দুই প্রকার। একটা হল রাসূলের তরীকামত ফরজ, ওয়াজিব, সন্নত, মুস্তাহাব মুতাবিক আদব ও খুশু-খুযুর সাথে নামায আদায় করা। আরেক প্রকার হল, এ সব বিষয়ের তোয়াক্কা না করে নিজ ইচ্ছা মত নামায আদায় করা। যে নামাযের ফযীলত ও বরকতের কথা কুরআন হাদীসে বলা হয়েছে, যে নামায মানুষকে গোনাহ থেকে মুক্ত রাখে এবং আল্লাহপাকের নৈকট্য লাভে ধন্য করে, যে নামায দ্বারা বালা-মুসীবত দূরীভূত হয়, যে নামাযের দ্বারা বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের যুদ্ধে সফলকাম হয়েছিলেন, সে নামায হচ্ছে ঐ নামায, যা রাসূলের তরীকামতে আদায় করা হয়। হাদীসে পাকে বলা হয়েছে :
من صلي صلوتنا واستقبل قبلتنا واكل ذبيحتنا فهو المسلم
অর্থ : যারা আমার নামাযের মতো নামায পড়বে এবং আমাদের ক্বেবলাকে কেবলা বানাবে, আমাদের যবাইকৃত পশুর গোশত ভক্ষণ করবে, সে প্রকৃত মুসলিম।
কিন্তু আফসোসের বিষয় হল উম্মত আজ নামাযকে সম্পূর্ণ বর্জন করে বসে আছে। আর যারা নামায আদায় করে থাকে, তাদের মধ্যে সহীহশুদ্ধ নামাযের কোন বালাই নেই। এজন্যেই ‘মজলিসে দাওয়াতুল হকে’র মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে এবং চেষ্টার যথাযথ ফলও দেখা যাচ্ছে। আলেম-ওলামা এবং ইমাম-মুয়াযযিনদের বিরাট দায়িত্ব, তারা মুসল্লীদের নামায পরিশুদ্ধির পিছনে মেহনত করবে।
২. পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত
এ রাতে করণীয় কাজের মধ্যে রয়েছে, পবিত্র কুরআনের সহীহ-শুদ্ধ তেলাওয়াত। তেলাওয়াতের বরকাত অনেক বেশি। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা এবং তার মুহাব্বতের অধিকারী হওয়ার একটি অন্যতম উপায় হল শুদ্ধতার সাথে কুরআন তেলাওয়াত করা। আমাদের পূর্বসুরীগণ তেলাওয়াতের প্রতি খুৃবই মনযোগী ছিলেন।
ইমাম আবু হানীফা রহ. ইমাম শাফেয়ী রহ. ইমাম বুখারী রহ. প্রমুখ প্রত্যহ দুই বার করে সমস্ত কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করতেন। কিন্তু আজ আমরা তেলাওয়াত করি না। বাসা-বাড়ীতে তেলাওয়াতের চর্চা রাখি না। তেলাওয়াতের পরিবর্তে চালু হয়েছে গান-বাদ্য এবং নাচানাচি। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়! হাদীসে আছে, পবিত্র কুরআন কবরে-হাশরে এবং পুলসিরাতে শাফাআত করবে। তাই আমি তেলাওয়াতের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আফসোস! আজকে কুরআন শরীফ শুধু তাবীযের কিতাবে পরিণত হয়েছে। রূহের মাগেফরাতের জন্য, বাসা-বাড়ী, ফ্যক্টরী উদ্বোধনের জন্য, মান্নতের তেলাওয়াতের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু কুরআনের আসল উদ্দেশ্যের প্রতি কারো কোন চিন্তা-ভাবনা নেই। পীর সাহেবের মুরীদগণ ঘন্টার পর ঘণ্টা জিকিরে সময় দিচেছ, কিন্তু তেলাওয়াতের জন্য দশ মিনিট সময়েরও অবকাশ হচ্ছে না। বড়ই আফসোসের বিষয়!
৩. দুরূদ, তাসবীহ-তাহলীল
এ রাতের আরেকটি কাজ হচ্ছে দুরূদ, জিরিক এবং তাসবীহ-তাহলীল। এর দ্বারা এক দিকে আল্লাহ রাসূলের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়, অপরদিকে অন্তরে শান্তি লাভ হয়। হাদীসে দুরুদ ও জিকিরের অনেক ফযীলতের কথা উল্লেখ রয়েছে। এক হাদীসে আছে কোন আমল বা দোয়ার পূর্বে দরুদ পাঠ করলেই তা কবূল হয়। অন্য এক হাদীস মতে একবার দরুদ পাঠ করলে কমপক্ষে দশটি রহমত নাযিল হয়। অনুরূপভাবে জিকিরের অসংখ্য ফযীলতের কথা বর্ণিত আছে। তাই প্রত্যহ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জিকির ও দুরুদ শরীফ পাঠ করা অত্যন্ত প্রয়োজন ।
প্রত্যেক নামাযের পর তিনবার দরুদ শরীফ এবং একশতবার লা ইলাহা ইল্লাহ জিকির করলে এক সাথে অনেক সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। অল্প হোক কিন্তু দৈনিক হওয়া চাই এবং পরিশুদ্ধ হওয়া চাই।
এ রাত্রি দুরূদ ও জিকিরের উপযুক্ত সময়। অন্যদের কষ্ট না দিয়ে কারো আমলের ক্ষতি সাধন না করে কমপক্ষে একশত বার দুরুদ শরীফ এবং এক হাজার বার তাসবীহ-তাহলীল ও আল্লাহর জিকির করা একান্ত প্রয়োজন।
৪. যিয়ারত
হাদীসে পাকে আছে আল্লাহর রাসূল সা. এ রাত্রিতে জান্নাতুল বাকীতে যান এবং কবর যিয়ারত করেন। এক যুগে কবর যিয়ারত নিষেধ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময় দুই উদ্দেশ্যে এর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ক. কবর যিয়ারতের মাধ্যমে আখেরাতের প্রতি ভয়-ভীতি সৃষ্টি হয়। আখেরাতের প্রস্তুতির মন-মানসিকাত সৃষ্টি হয়। অনন্তকালের জীবনের জন্য করণীয় আমলের প্রতি আগ্রহ পয়দা হয়।
খ. দুনিয়ার বস্তু-সম্পদের আকর্ষণ দূরীভূত হয়। কবর যিয়ারতে গেলে ভবিষ্যতের অবস্থান সম্পর্কে অন্তরে নাড়া পড়ে। কত রাজা-বাদশাহ মাটির নীচে চাপা পড়ে আছে। সহায়-সম্পত্তি তাদের কান কাজে আসে নাই। জিয়ারতকারীর এসব কথা স্মরণে আসে, মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। এ সব নেক উদ্দেশ্যে কবর যিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারতে যাওয়ার অনুমতি নাই। তারা তাদের সংরক্ষিত স্থান থেকেই যিয়ারতের নিয়তে দোয়া-দরুদ পৌঁছাবে। সাবধান! কবর যিয়ারতের সময় বেপর্দেগী শিরকী ও বেদআতী কোন কাজ করা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এমতাবস্থায় যিয়ারতে না যাওয়াই উত্তম।
৫. সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল হল অত্যন্ত দীনতা-হীনতার সাথে অশ্র“সিক্ত হয়ে আল্লাহপাকের দরবারে মাগফিরাতের জন্য মুনাজাত করা। বর্ণিত প্রতিটি আমলের ক্ষেত্রেই ইখলাছ ও সুন্নতের অনুসরণ করা কর্তব্য। কেননা সুন্নত ও ইখলাসবিহীন কোন আমলই আল্লাহর নিকট গৃহীত হয় না।
৬. মুনাজাতের বিষয়বস্তু ঃ
আফসোসের বিষয়, এই রাত্রিতে মানুষ নিজের ঈমান-আমল ও সীরাতে মুস্তাকীমের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে ঈমানী মৃত্যু লাভের জন্য দোয়া করার পরিবর্তে কেবল দুনিয়ার স্বার্থকে সম্মুখে রেখে কান্নাকাটি করে এবং এটাকেই শবে বরাতের মূল বিষয় হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। অথচ আজকের দোয়া-মুনাজাত তাই হওয়া উচিত যা উপরে বর্ণনা করা হল।
৭. রিযিক ইত্যাদি সম্পর্কে আজকে সিদ্ধান্ত হয় বলেও হাদীসে পাকে বর্ণিত আছে। তবে রিযিকের প্রশস্ততা নির্ভর করে হালাল হারামের বিধি-নিষেধের উপর। হারামকে বর্জন করে হালাল তরীকায় উপার্জনকে বিশেষ ইবাদত এবং জান্নাত লাভের উপায় হিসেবে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। এক হাদীসে বলা হয়েছে
“সত্যবাদী আমানতদার ব্যবসায়ী নবীগণের সাথে জান্নাতে যাবে।
আল্লাহ তায়ালা হযরতের হায়াতের মাঝে খুব বরকত দান করুন। আপনাকে ধন্যবাদ
পড়ে উপকৃত হলাম। আপনাকে ধন্যবাদ।