শবে বরাত ও কিছু জরুরী কথা (তৃতীয় কিস্তি)
লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ রবিবার, জুলাই ১৭, ২০১১ (৩:৪১ অপরাহ্ণ)
মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দা:বা: -এর বয়ান
(গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদে প্রদত্ত বয়ান, তাং ১৪ শা’বান ১৪১৯ হি.)
হালাল রিযিকের গুরুত্ব
আরো এক হাদীসে বলা হয়েছে, “যারা হালাল খাদ্য গ্রহণ করবে, তারা জান্নাতে যাবে। কেননা হারাম সম্পদ ভক্ষণ করলে দেহ নাপাক হয়ে জাহান্নামের উপযুক্ত হয়ে যায়।
لحم نبت سحتافالنار احق به
অর্থা : শরীরের যে মাংশপিণ্ড হারাম উপার্জন দ্বারা বর্ধিত হবে, তা জাহান্নামেরই অধিক উপযুক্ত। সুতরাং হারাম উপায়ে উপার্জন থেকে মুক্ত থাকা চাই।
অভাব অনটনের জন্য আমরা হালাল হারাম অনেক কিছুই করে থাকি, কিন্তু কুরআন-হাদীসে যে সমস্ত আমলের কথা বলা হয়েছে, আমাদের সেগুলোর উপর আমলের সুযোগ হয় না। হযরত ইবনে মাসউদ রা. রাসূলে পাকের অত্যন্ত প্রিয় খাদিম তিনি, খুবই গরীব ছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে অতি বেশি কান্নাকাটি করতেন। যুগটি ছিল হযরত উসমান গণীর খেলাফতের যুগ। আমীরুল মুমিনীন একদিন ইবনে মাসউদের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, আপনার অস্থিরতার কারণ কী? তিনি উত্তর করলেন ذنوبيঅর্থাৎ গোনাহের ভয়। হযরত উসমান গনী রা. বললেন, আপনার মনের চাহিদা কী? তিনি উত্তরে বললেন رحمة ربي আমার প্রতিপালকের রহমতই আমার একমাত্র কামনা। হযরত উসমান রা. বললেন, আপনার জন্য চিকিৎসক নিয়ে আসি? তিনি উত্তরে বললেন, যিনি আসল চিকিৎসক তিনিই তো আমাকে রোগ দিয়েছেন। হযরত উসমান রা. বললেন, আপনি গরীব অভাবী; যদি সম্মত হন, তাহলে কিছু ব্যবস্থা করতে চাই। তিনি বললেন, আমার অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে স্বচ্ছলতার জন্য রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৈনিক সূরায়ে ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করতে বলেছেন। আমি তা আমল করে আসছি ফলে আমার কোন অভাব নেই।
চার ঘাঁটি
অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাই মানুষের লক্ষ্যবস্তু নয়। আমাদের আসল গন্তব্যস্থল হচ্ছে জান্নাতের চিরস্থায়ী জীবন। চিরস্থায়ী জান্নাতী জীবনে পৌছার পূর্বে আমাদের সম্মুখে চারটি ঘ ¿াটি রয়েছে। এসব ঘাটি নিরাপদে পার হতে পারলেই আমারা গন্তব্যস্থলে পৌঁছে চিরশান্তি লাভে ধন্য হব। এর পূর্বে আমাদের কোন শান্তি নেই, হতে পারে না। বিপদজনক ভয়াবহ চারটি ঘাটি যাতে নিরাপদে পার হয়ে যেতে পারি, সে জন্য যে সমস্ত আমল-আখলাক শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত রয়েছে, তা তালাশ করা জরুরী। এ ব্যাপারে অবহেলা করা মারাত্মক ধবংসের কারণ হবে।
মৃত্যু অনবিার্য
প্রথম ঘাটি হচ্ছে মৃত্যু। মৃত্যুর কোন গ্যারান্টি নেই। মৃত্যুর ন্যায় মারাত্মক যাতনা আর কিছুতেই নেই। ঈমানী মৃত্য নসীব না হলে বড়ই দুর্ভাগ্যের হবে অনন্তকালের জীবন। ঈমানী মৃত্যর উপরই নির্ভর করে কে ভাল আর কে মন্দ। কোন ব্যক্তিই নিজের ব্যাপারে মৃত্যুর পূর্বে জান্নাতী বা জাহান্নামী হওয়ার কথা বলতে পারে না।
এক বুযুর্গকে এক ব্যক্তি উপহাস করে প্রশ্ন করেছিল ‘হুজুর! আপনার দাড়িগুলো উত্তম নাকি আমার বকরীর দাড়িগুলো উত্তম?’ আল্লাহর ওলীরা উপহাসে বিচলিত হন না। তাই তিনি ধৈর্য সহকারে শান্ত মনে উত্তর দেন, যদি আমার মৃত্যু ঈমানের উপর হয়, তবে তো আমার দাড়ি উত্তম অন্যথায় তোমার বকরীর দাড়িই উত্তম।
ঈমানী মৃত্যুর জন্য গোনাহ বর্জন এবং নেক আমল জরুরী। দৈনিক সূরায়ে ইয়াসীনের তেলাওয়াত ঈমানী মৃত্যুর জন্য বড়ই উপকারী। হাদীসের বর্ণনা মতে দান-খয়রাতের কারণেও ঈমানী মৃত্যুর পথ সুগম হয়।
কবর
কবর হচ্ছে দ্বিতীয় ঘাটি। হযরত উসমান গনী রা. কবর দেখলেই বিচলিত হয়ে পড়তেন, কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন। এক ব্যক্তি তাঁকে প্রশ্ন করেছিল ‘আপনি হাশর ও পুলছিরাতের ব্যাপারে এত বিচলিত হন না, কবরের ব্যাপারে এত বিচলিত হন কেন? তিনি উত্তর দেন, ‘হাশরের ময়দানে, পুলসিরাতে লোকের সমাবেশ থাকবে, অনেককেই তখন পাওয়া যাবে; কিন্তু কবর হচ্ছে একাকী থাকার ঘর, অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘাটি, তাই আমি এত বিচলিত হই। হাদীসে পাকে বলা হয়েছে-
بيت الوحدة بيت الظلمة بيت الافاعي والعقرب
কবর হলো ‘একা থাকার ঘর, অন্ধকার ঘর, সাপ-বিচ্ছুর ঘর।’ এখানেই সওয়াল জওয়াব হবে। যে সঠিক উত্তর দানে সক্ষম হবে তার বেলায় ইল্লীনের সিদ্ধান্ত হবে, সে হবে ভাগ্যবান। আর যে সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হবে তার বেলায় সিজ্জীনের সিদ্ধান্ত হবে সে অত্যন্ত হতভাগা। কবরের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে নামায, রোযা , হজ্ব যাকাত ইত্যাদি নেক আমল সহায়তা করবে বলে হাদীসে পাকে উল্লেখ আছে।
হাশরের ময়দান
তৃতীয় ঘাঁটি হচ্ছে হাশরের ময়দান। বড় ভয়াবহ ঘাঁটি এটা। নবী রাসূলগণসহ সমস্ত ওলী-দরবেশগণও এখানে অস্থীর থাকবেন। অবশ্য সাত ব্যক্তি অত্যন্ত নিরাপদে রহমতের ছায়ার নীচে থাকবেন। হাদীসের ভাষ্যমতে তারা হচ্ছেন- (১) ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ। (২) যাদের মধ্যে আল্লাহর ওয়াস্তে দায়েমী মুহাব্বত রয়েছে। (৩) যে যুবক-যুবতী সদা সর্বদা ইবাদত করে। (৪) যার অন্তর মসজিদের সাথে নিবদ্ধ থাকে। (৫) যে ব্যভিচারের সুযোগ পেয়েও আল্লাহর ভয়ে নিজেকে গোনাহ থেকে মুক্ত রাখে। (৬) যে অন্ধকারে ও নির্জনে আল্লাহর জিকির করে অশ্র“সিক্ত হয়। (৭) এবং যে গোপনে দান-খয়রাত করে।
হাশরের ময়দানে জীবনের সমস্ত ভাল-মন্দ কৃতকর্মের বিচার হবে, হিসাব-নিকাশ হবে। জান্নাত বা জাহান্নামের ফয়সালা হবে। মহা সংকটের সময় হবে সেটা। মাতা-পিতা, সন্তান-সন্তুতি, স্বামী-স্ত্রী যত আপনজনই হোক বিচারের পূর্বমুহূর্তে কারো সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসবে না। তবে পবিত্র হাদীসে বলা হয়েছে যে, রোযাদার ও আহলে কুরআনকে রোযা ও পবিত্র কুরআন সুপারিশ করবে।
الصوم والقران شفيعان يوم القيامة
অর্থ : কেয়ামতের দিন রোযা এবং কুরআন উভয়ই সুপারিশ করবে।
পুলসিরাত
সর্বশেষ ঘাঁটি হবে পুলসিরাত। জাহান্নামের উপর স্থাপন করা হবে পুলসিরাত, যা হবে অত্যন্ত সরু, কিন্তু পার হতে পারলে সম্মুখেই হবে জান্নাত। তবে নিরাপদে পার পাওয়া বড় কঠিন হবে। অনেকেই এখানে এসে ধরা পড়ে যাবে। যারা বান্দার হক্ব বিনষ্ট করে, ফাঁকি দেয়, অন্যের সম্পদ লুটে খায়; এ ধরনের অপরাধীরা এখানে এসে জটিলতার সম্মুখীন হবে আর ক্ষতবিক্ষত হয়ে নীচে জাহান্নামে খসে পড়বে। আবার অনেকেই ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় অতি কষ্টে পার হয়ে যাবে। যারা পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতে অভ্যস্ত, তারা অক্ষত অবস্থায় নিরাপদে, চোখের পলকে বিদ্যুৎ গতিতে পার হয়ে যাবে।
রেফায়ী কবীরের ঘটনা
হযরত শাহ আহমদ কবীর রেফায়ী জামানার গাউছ এবং উপরের দরজার ওলী ছিলেন। আল্লামা সুয়ূতী রহ. হযরত থানবী রহ. প্রমুখ মনীষীগণ লিখেছেন যে, তিনি একবার রওযা পাকের পার্শ্বে দাড়িয়ে এশকের আগুনে দগ্ধ হয়ে আবেগের সুরে দরখাস্ত করলেন যে, হে আমার দাদাজান! আপনার ডান হস্ত মুবারক বের করুন, আমি চুম্বনের সৌভাগ্য অর্জনের মাধ্যমে আমার অধীর চিত্ত প্রশান্ত করি। আল্লাহপাকের মহিমায় রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডান হস্ত মুবারক বের হয়ে আসে। নূরে নূরান্বিত হয় সমস্ত মসজিদে নববী। হযরত রেফায়ী হস্ত মুবারক চুম্বনের সৌভাগ্য অর্জন করেন। এই মহান আধ্যাত্মিক সম্রাটকে এক ইয়াহুদী উপহাসের সুরে স্বীয় কুকুরের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিল, আপনি উত্তম না এই কুকুরটি উত্তম? ধৈর্যের পাহাড় হযরত রেফায়ী কোন প্রকার বিরক্তি প্রকাশ না করে প্রশান্ত মনে উত্তর দেন:
অর্থঃ হে ইয়াহুদী ভ্রাতা! আমার সম্মুখবর্তী যে ঘাঁটি রয়েছে, তা যদি নিরাপদে পার হয়ে যেতে পারি, তবে আমি উত্তম নতুবা তোমার কুকুর উত্তম।
দুনিয়া আমলের স্থান
প্রিয় হাযিরীন! এই ঘাঁটিসমূহ নিরাপদে বিদ্যুৎ গতিতে পার হওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণোর উপযুক্ত এবং একমাত্র স্থান হচ্ছে এই পৃথিবী। বররকতের এই রাত্রি এ জন্য আল্লাহপাকের দরবারে মুনাজাতের উপযুক্ত সময়।
মুনাজাত কবুল হওয়ার আলামত
মুনাজাত কবূল করা না করা আল্লাহপাকের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। আমাদের তা জানার কোন উপায় নেই। অবশ্য এমন কিছু নিদর্শনাবলী রয়েছে, যার মাধ্যমে মোটামুটি আঁচ করা যায় যে, দোয়া কবূল হয়েছে। যেমন -
(ক) মুনাজাতের পর ইবাদতে মন লাগা, গোনাহের প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি হওয়া।
(খ) পূর্বের অবস্থার মধ্যে পরিবর্তন অনুভূত হওয়া।
(গ) আখেরাতের প্রতি মন ধাবিত হওয়া। দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি সৃষ্টি হওয়া। যদি এমন অবস্থা অনুভূত হয়, তাহলে ধারনা করা যায় যে, আল্লাহপাকের করুণার দৃষ্টি আরোপিত হয়েছে। তাই আল্লাহর এহসানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা প্রয়োজন। যাতে এই অবস্থা বিদ্যমান থাকে। তাই গোনাহ বর্জন পূর্বক নেক কাজের প্রতি ধাবমান থাকা বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে, যে ঘরে মাল থাকে, চোর-ডাকাত সে ঘরেই ঢুকে। শয়তান মানুষের চির শত্র“। সে আমার আপনার ঈমানের ডাকাত ও চোর, তাই সতর্ক থাকতে হবে।
কবুল না হওয়ার আলামত
(ক) আর যদি পূর্বের অবস্থায় কোন উন্নতি অনুভূত না হয়।
(খ) যদি ইবাদত-রিয়াজতে মন না বসে, গোনাহের প্রতি মন ধাবিত হয়।
(গ) যদি আখেরাতের দিকে মন ধাবিত না হয়ে দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, আরো পরীক্ষা দিতে হবে। এমতাবস্থায় যা করণীয় তা করতে হবে, নিরাশ হওয়া যাবে না। নিজের কামিয়াবীর জন্য মেহনত-মুজাহাদায় মগ্ন হতে হবে।
নফসের ইসলাহের গুরুত্ব
তবে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে যে, ইবাদতের দিকে মন ধাবিত হয় না কেন এবং কেন গোনাহের দিকে দাবিত হয়। আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনের শাস্তির পরিবর্তে অস্থায়ী দুনিয়ার প্রতি মন প্রলুব্ধ হয় কেন? আত্ম-চিন্তার সহায়ক হিসেবে দেহ ও আত্মার
সম্পর্ক বিবেচনা করা যেতে পারে। অনেক সময় মানুষ সুখাদ্য ভক্ষণে অসস্থিবোধ করে, খেতে মন চায় না, ভাল লাগে না, বমি আসে। এমতাবস্থায় ধরে নেওয়া হয় যে, লোকটির স্বাভাবিক সুস্থতা বিপন্ন হতে চলেছে, রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণে রুচিকর সুখাদ্য খেতে চায় না। ভাল লাগে না। অরুচিকর অপুষ্টিকর খাদ্য খেতে চায়, খেতে ভাল লাগে। এমতাবস্থায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়, তার চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। আবার রোগ একটি দুটি নয়, বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। চিকিৎসার নিয়ম, ঔষধপত্র ও সেবন পদ্ধতিও বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, আবার কয়েকটি রোগের জন্য একই ঔষধ যথেষ্ট হতে পারে। তবে এসব কিছু নির্ভর করে চিকিৎসকের চিকিৎসার উপর, রোগীর বিবেচনার উপরে নয়।
অন্তরের রোগ
এমনিভাবে দেহে ক্রিয়াশীল আত্মা অনেক সময় রোগাক্রান্ত হয়ে যায়, তার স্বাভাবিক অবস্থা বিপন্ন হয়ে পড়ে। আর তা হয় গোনাহের কারণে। গোনাহ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন অহংকার, হিংসা, পরনিন্দা, মালের লোভ। দেহের গোনাহ আত্মা ও অন্তরে প্রভাব সৃষ্টি করে। যেমন গীবত, তুহমত, অশ্লীলতা, ঝগড়া-কলহ, অপদৃষ্টি, বাদ নজরী, বে পর্দেগী ইত্যাদি। এসব গোনাহের কারণে অন্তর এবং আত্মার স্বাভাবিক অবস্থা বিপন্ন হয়ে যায় এবং তার রুচিকর সুখাদ্য ইবাদত রিয়াজাতের প্রতি মান ধাবিত হয় না। এমতাবস্থায় আত্মা এবং অন্তরকে রোগমুক্ত করার জন্য ডাক্তারের চিকিৎসা গ্রহণ এবং তার দেওয়া ঔষধকে তারই প্রদত্ত নিয়ম শৃংখলা মোতাবিক সেবন করতে হয়, তাহলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।
মুহাসাবার গুরুত্ব
আমি যে আয়াত তেলাওয়াত করেছি এবং যে হাদীস পাঠ করেছি, সেখানে বিভিন্ন বিষয়ের দিক-নির্দেশনার সাথে সাথে চিকিৎসার জন্য আধ্যাত্মিক ডাক্তারের চিকিৎসা ও তার প্রদত্ত ঔষধ সেবনের কথা বলা হয়েছে। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বিষয়বস্তু। স্স্পুষ্ট হয়ে উঠে। আয়াতের মধ্যে আল্লাহকে ভয় করে গোনাহের কাজ বর্জন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর গোনাহ বর্জন এবং আল্লাহপাকের ভয় সৃষ্টির জন্য মুহাসাবা অর্থাৎ নিজের কৃতকর্ম সম্পর্কে হিসাব করে আখেরাতের জন্য পুজি জমা হয়েছে কি না, তা চিন্তা করার জন্য দৃষ্টি আরোপ করতে বলা হয়েছে। আর হাদীসে পাকে কুরআন ও সুন্নতকে ঔষধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কুরআন ও সুন্নতের অনুসরণ
এ থেকে সুস্পষ্টভাবেই বুঝা যায় যে, পবিত্র কুরআন ও হাদীসে পাকে বর্ণিত হুকুম-আহকাম মানুষের জন্য মহৌষধ। আজমত, মুহাব্বত নিয়ে পরিশুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআনের তেলাওয়াত বড় উপকারী। হাদীসে বলা হয়েছে কুরআনে পাক তিলাওয়াতের মাধ্যমে অন্তরের যাবতীয় রোগের চিকিৎসা হতে পারে।
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীর প্রশ্নের উত্তরে এ অমূল্য বাণী ইরশাদ করেন। সাহাবী প্রশ্ন করেছিলেন- “ইয়া রাসূলাল্লাহ! অন্তরকে গোনাহমুক্ত এবং পরিশুদ্ধ করার উপায় কী? এর উত্তরে তিনি উপরোক্ত উত্তর দেন।
সুহবতের উপকারিতা
রোগীকে শারীরিক চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে বা সাহচর্যে থাকলে যেমন চিকিৎসা সহজ হয়, তেমনি রুহানী রোগ সারাতে রূহানী চিকৎসক আল্লাহ ওয়ালাদের সুহবতে, তাদের তত্তাবধানে থাকলে রুহানী চিকিৎসা সহজ হয়। পবিত্র কুরআন-হাদীসে বুজুর্গানে দ্বীনের সুহবতের অপরিসীম গুরত্বের কথা এজন্যই বর্ণিত হয়েছে। বরকতের এই মহান রাতে আপনাকে যেমন অন্তরের রোগমুক্তির ঔষধ কুরআন। হাদীস মুতাবিক আমলের ওয়াদা করতে হবে, তেমনিভাবে আল্লাহ ওয়ালাদের সুহবত ও সাহচর্যের ব্যাপারে প্রতিশ্র“তি গ্রহণ করতে হবে।
বর্জনীয় আমল
এ রাতে আর একটি করণীয় কাজ হচ্ছে নিজের বাসাবাড়ি এবং পরিবার-পরিজনের খোঁজ-খবর নেওয়া। আপনি মসজিদে ইবাদতে আছেন, অন্যদিকে এরকম যেন না হয় যে, ফেরেশতাগণ আল্লাহর রহমত নিয়ে আপনার বাসায় গিয়ে ফিরে আসলো। কেননা হাদীসে পাকে বলা হয়েছে :
لايدخل الملائكة فيه صورة وكلب وتماثيل
যদি বাসায় ফটো, মুর্তি থেকে থাকে, তা বাসা থেকে দূর করতে হবে। এছাড়া অন্য কোন গোনাহের কাজ হচ্ছে কি না, যার কারণে রহমতের ফেরেশতাদের জন্য কষ্টের কারণ হয়। যেমন- বে পর্দেগী ইত্যাদি থাকলে তা থেকে বাসাকে পাক পবিত্র করতে হবে। আরো দেখতে হবে, বাসাতে গানবাদ্য, টেলিভিশন, ভিসিয়ার, ডিস ইত্যাদি চলছে কি না, এ সমস্ত গোনাহের কাজ থেকে বাসাকে পাকপবিত্র করতে হবে।
হাদীসে পাকে ফটো বা মূর্তির প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে কেন? এজন্য যে, এর মাধ্যমে অনেক প্রকার গোনাহ জন্ম নেয়। এমন কি ইতিহাস পর্যালোচনা করলে প্রমাণিত হয় যে, শিরকের মত অমার্জনীয় অপরাধের প্রথম সূত্রপাত ফটোর মাধ্যমেই ঘটেছিল। আজ সেই শিরকের গ্লানিতে সমাজ ধ্বংসের গহবরে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। আর কুকুর তো অত্যন্ত নাপাক খবীছ জানোয়ার। কুকুরের স্বভাবে যে সমস্ত খারাবী আছে, তা বাদ দিলেও কেবল দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা, প্রকাশ্যে যৌন সম্ভোগে লিপ্ত হওয়া; কৃপণতা, স্বার্থপরতা ইত্যাদি এমন জঘন্য খারাপ স্বভাব যা বলার অপেক্ষা রাখে না। যারা এ সমস্ত স্বভাবের মানুষ হয়, কেবল তারাই বিনা প্রয়োজনে কুকুরকে বাসা বাড়িতে লালন-পালন করে থাকে। এর বাস্তব প্রমাণ হচ্ছে পাশ্চাত্য সমাজ। পাশ্চাত্য সমাজের অপসংস্কৃতি আজ এ পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, মানুষ হয়ে তারা আজ কুকুরের মাধ্যমে যৌন চাহিদা নিবারণ করে। এজন্যই রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং কুকুরকে ঘরে রাখতে বা লালনপালন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
মোটকথা শুধু নিজে আমল করলে হবে না, বরং অধীনস্ত লোক ও পরিবার-পরিজনের খোঁজ খবরও নিতে হবে। তাদেরকে এই পবিত্র রাতের ফযীলতের কথা শুনিয়ে আমলে নিয়োজিত করতে হবে।
শেষ কথা
পবিত্র এ রাতে স্বীয় শক্তি অনুসারে ইবাদত করুন এবং ভবিষ্যতেও ইবাদত করার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে আল্লাহপাকের দরবারে তাওফীক তলব করুন। সাথে সাথে কোন প্রকার গোনাহ না হয়, সে ব্যাপারে চেষ্টা করুন। গোনাহ মোটেই করা যাবে না। কেননা গোনাহ তো এমনিতেই জীবন ধ্বংসের কারণ, তাছাড়াও গোনাহের কারণে ইবাদত ও নেক আমলের সওয়াব বিনষ্ট হয়ে যায়। তাই এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।
শবে বরাত অর্জনের রাত্রি, আল্লাহপাকের নৈকিট্য হাসিলের রাত্রি। সুতরাং অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে যাতে বঞ্চিত হতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিজের আমল-আখলাকের হিসাব-নিকাশ করতে থাকুন। আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাতকে পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করুন। বুজুর্গানে দ্বীনের সুহবত গ্রহণ করুন, ইনশাআল্লাহ কামিয়াবী আপনাদের পদচুম্বন করবে।
সমাপ্ত
www.dawatul-haq.com
আল্লাহ তায়ালা হযরতের হায়াতের মাঝে খুব বরকত দান করুন। আপনাকে ধন্যবাদ
পড়ে উপকৃত হলাম। আপনাকে ধন্যবাদ।