লগইন রেজিস্ট্রেশন

দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান

লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ মঙ্গলবার, জুলাই ১৯, ২০১১ (১:২৬ অপরাহ্ণ)

আমার প্রিয় ভাই-বোনেরা,
আহল্লাহ পাক আমাদেরকে পশু-পাখি, কিট-পতঙ্গ না বানিয়ে সর্ব শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তার প্রশংসার শেষ নাই। তার গুণাবলির অন্ত নাই। তারই দেয়া অসংখ্য নেয়ামত ভোগ করে আমরা বস্তু জীবন ধারণ করে আছি। বস্তুত এই জীবন অতন্ত ক্ষণস্থায়ী, চিরস্থায়ী জীবন সম্মুখে রয়েছে। অবিকল্প মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কারও কোন উপায় নেই। মৃত্যুর পরেই শুরু হবে সেই অনন্তকালের চিরস্থায়ী জীবন। যারা চিরস্থায়ী জীবনের জন্য সঠিক পুঁজি সংগ্রহ করে তারা আখেরাতের জীবনে হবে চিরসুখী। আল্লাহ পাক তাদেরকে যথাযথ প্রতিদানে বাধিত করবেন, সম্মানি করবেন। তারা বড়ই সৌভাগ্যের অধিকারী হবে। আর যারা বস্তু মোহে লিপ্ত হয়ে আখেরাতের ব্যাপারে উদাসীনতার ফলে ঈমান আমলবিহীন পশুর মত জীবন যাপন করে পুঁজিবিহীন, সঙ্গীবিহীন কবরে যাবে, তাদের জন্য আখেরাতের জীবন হবে বড়ই কষ্টের জীবন। তারা আল্লাহ পাকের কঠোর শাস্তিএবং ক্ষোভের সম্মুক্ষীণ হবে। অত্যান্ত অভিসপ্ত এবং হতভাগা হবে তারা। সুতরাং জীবন থাকতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার পূর্বে সমস্ত অমুসলিম ভাইগণ অনতিবিলম্বে ইসলাম গ্রহণ করে আখেরাতের নাজাতের পথ অনুসরণ করুন। আমাদের এবং আপনাদের তথা সমগ্র পৃথিবীর মালিক অসীম শক্তিশালী আল্লাহ পাককে সন্তুষ্ট করার মেহনতে মনোযোগী হন।
আমার প্রাণ প্রিয় এবং শ্রদ্ধাভাজন ভাই-বোনেরা,
বর্তমান বিশ্বে এবং আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে ইসলাম এবং মুসলমানদের সঠিক অবস্থা নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে কলিজা ফেটে যায়। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অশ্রুশিক্ত হতে হয়। কিন্তু কোন সুগম পথ খোঁজে পাইনা। ইসলাম এবং মুসলমানকে নিয়ে এই খেলা আর কত দিন চলবে? ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলাম এবং মুসলমানের এই ভয়াবহ অবস্থা কেন? মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ্সহ ইসলামের মূলকেন্দ্র, লক্ষকোটি আলেম-ওলামা, পীর-আউলিয়ার দেশে ইসলাম এবং মুসলমানকে খতম করে দেয়ার প্রকাশ্য চক্রান্ত প্রতীয়মান হচ্ছে। রাসূলে পাক সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ এবং সুন্নতের বেহুরমতী, অপমান, অপদস্তের কথা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে ও নিজ কানে শুনেও আমরা কেন ঘুমন্ত? তবে কি আমাদের উপর আল্লাহপাকের আজাব শুরু হয়ে গেছে?
আমার ভাই-বোনেরা, যুবক-যুবতিরা কোন উপায় অন্তর না দেখে বুকভরা ব্যাথা, দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত হৃদয়ে সকলের প্রতি আবেদন-নিবেদন করছি, আমরাতো মুসলমান সবাই ভাই-ভাই। আমরা সকলেই আল্লাহ পাকের মহান দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়ি। নিজের কৃত পাপাচারিতা থেকে খাটি মনে তওবা করি, দোয়া মুনাজাত করি এবং আল্লাহ পাকের নিকট বলি হে আল্লাহ পাক!
১। আমাদের দেশে যারা অমুসলিম রয়েছে তারা সকলেই আপনারই বান্দা। আপনি বড় মহান, দয়ার আধার, বড় কৃপাময়। আপনি তাদেরকে ঈমানের দৌলাত দান করুন। তাদেরকে হেদায়েত দানের সিদ্ধান্ত কার্যকর করুন। আল্লাহ পাক আমাদের দোয়া কবুল করুন।
২। আল্লাহ পাক! আপনি মহান, আপনি ক্ষমাশীল, আপনি করুনাময় । আমরা সর্বশ্রেণীর মুসলমানগণ আপনার নেয়ামতের যথাযথ কৃতজ্ঞতা আদায় করি নাই। কেবল তাইনা বরং আমরা আপনার সাথে জ্ঞাতে অজ্ঞাতে চরম বেয়াদবী, নাফরমানী করে ফেলেছি। আমাদের গুনাহের কারণে আপনি অসন্তুষ্ট হয়ে শাস্তি দেয়া শুরু করেছেন বলে মনে হয়। আল্লাহ পাক আমরা সকলেই আজ আপনার সম্মুখে নতশীর, ভারাক্রান্ত, অশ্রুশিক্ত। আমাদের সমস্ত অন্যায়, অপরাধ ক্ষমা করুন।
৩। আল্লাহ পাক! আমরা আমদের সকল অপরাধের জন্য অনুতপ্ত, লজ্জিত। আমরা আপনার মহান দরবারে খাঁটি মনে তওবা করছি। আমরা সমস্ত পাপাচারিতা থেকে দূরে থাকার ওয়াদা করছি এবং এর জন্য আপনার সাহায্য কামনা করছি এবং তওফীক প্রার্থনা করছি।

৪। আল্লাহ পাক ! আপনি সর্বজ্ঞ। আপনি জানেন, আমাদের দ্বারা অনেক অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নাই। তাই আমরা আপনার দরবারে নতশীর হয়ে স্বীকার করছি , হে আল্লাহ পাক! আপনি জানেন এদেশের মুসলমানরা যাই করুকনা কেন, কিন্তু আপনাকে ভুলেনা। আপনার প্রতি ঈমান রাখে। আপনার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী। আপদে-বিপদে আপনার নিকট ক্ষমা চায়, আশ্রয় চায়। শুক্রবার জুমার দিনে কোন মসজিদেই জায়গা হয়না। শবে-বরাতে ১৬ কোটি মুসলমান সকলেই সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। দুই ঈদে সারা দেশে আপনার সন্তুষ্টি লাভের কামনায় ঈদগাহে , মসজিদে নতশীর হয়ে আপনার নিকট ক্ষমা চায়। রহম ও করমের আশা নিয়ে বুক ফাটিয়ে ক্রন্দন করে। আল্লাহ পাক এসব কিছুই আপনার জানা আছে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে ক্ষমা করে আপনার খাঁটি গোলামী দান করুন।
৫। আল্লাহ পাক! আমাদের দেশের বর্তমান সরকার এবং অতিতের সরকার এবং বিরোধী দল, সামরিক বাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ইত্যাদি ৯০ ভাগ আপনার প্রতি ঈমান রাখে। আপনার হাবীব এবং রসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সকলে মনে-প্রাণে মুহাব্বত করে। আল্লাহ পাক! তারা মুসলমানের এই বিশাল দেশটাকে পরিচালনা করে। তাদের উপরে বিদেশীরা বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে থাকে। কারণে অকারণে হুমকীর সম্মুখীন হয়। এদিক সেদিক ভুল ত্রুটি হয়ে যায়। আল্লাহ পাক! এদরেকে ক্ষমা করে আপনার আপনজনে পরিণত করুন। যাতে এরা হযরত উমরের ভূমিকায় ইসলামের এবং দেশের সঠিক সুন্দর খেদমত করতে সক্ষম হয়।
৬। হে আল্লাহ পাক! নবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ারীস উলামা-মাশায়েখদের উপর অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে। তাদেরকে দয়া করুন, ক্ষমা করুন, তাদেরকে বছীরত, সহিঞ্চতা, স্বচ্ছলতা দান করুন। তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। তাদের কুরবাণী এবং বহু ত্যাগের বিনিময়ে এদেশ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলামী অনুশীলনের স্থান লাভ করে চলেছে। দ্বীনি তালিম-তরবীয়ত, শিক্ষা-দ্বীক্ষা, দাওয়াত ও তাবলীগ, মাদ্রাসা-মসজিদ এবং খানকাহ প্রতিষ্ঠা, শরিয়ত ও সুন্নতের প্রভাবের পিছনে তাদের পরিশ্রমের কোন শেষ নাই। আল্লাহ পাক! তাদেরকে ক্ষমা করে দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করে দিন। তাদের মধ্যে ঐক্য দান করুন, উম্মতের ফিকির দান করুন।
৭। আল্লাহ পাক! আমাদের বাংলাদেশকে শান্তি শৃংক্ষলা এবং নিরাপদ দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে দিন। এদেশে বিজাতীয় সংস্কৃতির অবসান ঘটিয়ে ইসলামের শিক্ষা-দ্বীক্ষা ,ইসলামী আমল-আখলাকের পরিবেশ তৈরি করে দিন। শিরক, বিদআতসহ সকল প্রকারের গোমড়াহী মুক্ত করে দিন। আল্লাহ পাক! আমাদের সমস্ত দোয়া কবুল করুন। আমাদের যাবতীয় প্রয়োজন মিটিয়ে দিন।
৮। আল্লাহ পাক! আমাদের ছেলে-মেয়ে, বিবি, মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী, সকল বন্ধু-বান্ধবকে ক্ষমা করে দিন এবং সুস্থতা দান করুন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাবন্দী করার তওফীক দান করুন।
৯। আল্লাহ পাক! সমস্ত কবরবাসী, মুমীন মুসলমানদেরকে ক্ষমা করেদিন। তাদেরকে জান্নাতে উঁচ্চ মাকাম দান করুন। আর যারা দুনিয়াতে রয়েছে তাদেরকে মৃত্যুর পূর্বে খাঁটি মুমীন হয়ে যাওয়ার তওফীক দান করুন।
১০। আল্লাহ পাক! যুবক-যুবতীদেরকে শরীয়ত মুতাবেক আমল করার তওফীক দান করুন। বেপর্দেগী, গান-বাদ্য, নাট্যনুষ্ঠানসহ সমস্ত অপকর্ম থেকে হেফাজত করুন।
হে আমার ভায়েরা, মসজিদ-মাদ্রাসায়, খানকায়, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে, পার্লামেন্টে, বাসা-বাড়িতে, বাজারে-মার্কেটে, অফিস-আদালতে সব জায়গায় অধিক পরিমাণ দোয়া মুনাজাত করবেন।

তারিখ, ১৫ জুলাই ২০১১
মাওলানা মাহমূদুল হাসান
খতীব, গুলশান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
মুহতামিম, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
আমীর, মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৬৪ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)

৪ টি মন্তব্য

  1. পড়ে খুব ভাল লাগল, ধন্যবাদ আপনাকে। মাহমুদুল হাসান সাহেব আজাদ মসজিদে মাসের কোনদিন বয়ান রাখেন?

    মাসরুর হাসান

    @মুসাফির,প্রতি মাসের ২,৩,৪ জুমার দিন।

  2. ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।