নবীর সাথে বেয়াদবির পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ
লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১১ (২:২০ অপরাহ্ণ)
মহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান
তাং ২২ জুলাই, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ
আল্লাহ জাল্লা শানুহু অতি মহান দয়ালু, করুণাময়,। তাঁর নাম হল রহমান, রাহীম, অর্থাৎ অসীম দয়ালু, পরম করুণাময়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মায়ের গর্ভে প্রথমে আমাদেরকে হাত, পা দিয়েছেন। এরপর আমাদের মধ্যে আত্মা রেখেছেন, জ্ঞান দান করেছেন। অর্থাৎ মায়ের গর্ভে প্রথমে শরীর পয়দা হয়েছে, যেমন কুরআনের বর্ণনা,
ثم من نطفة ثم من علقة ثم من علقة
এই সিরিয়ালের রহস্য সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন। তাঁর সৃষ্টবস্তু সম্বন্ধে তো তিনিই জানবেন। তবে আল্লাহর সব কাজই যে আমাদের কল্যাণের জন্য আমরা তা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি।
দয়ালু আল্লাহ চান, তার সব বান্দা যেন জান্নাতে যায়। পিতা কোনদিন চায় না, তার কোন সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হোক। পিতার চেয়ে কোটি গুণ দয়ালু আল্লাহ। তাঁর কোন বান্দা ১ সেকেন্ডের জন্যও জাহান্নামে যাক তা তিনি চান না। এক হাদীসে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, (তরজমা)
“যে ব্যক্তি সারা জীবন কুফুরির অপরাধ করেছে, মৃত্যুর আগেও যদি বলে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’, মৃত্যুর পরে সে জন্নাতে প্রবেশ করবে।” এটা মহান দয়াময়ের দয়া ছাড়া আর কী বলা যায়! জীবনভর অস্বীকার করে আসলাম এমন এক সত্তাকে যিনি আমাকে আত্মা ও আকল দিয়েছেন, হাত-পা দিয়েছেন, সারা পৃথিবী আমার জন্য তৈরী করেছেন; তাঁর সাথে আমি বিদ্রোহ করছি, বেয়াদবী করছি, এর পরেও তিনি বলেন, তুমি তোমার মৃত্যুর আগেও যদি বলো, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ তাহলে তোমার জানাযার নামায মুসলমানদের অবশ্যই পড়তে হবে। যদি না পড়ে তাহলে সবাই গোনাহগার হবে।
কারণ কী? কারণ সে কালিমা পড়েছে, সে মুসলমান। তাকে গালি দিলে, তার বদনাম করলে, তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে আল্লাহ নারাজ। জানাযা পড়াতেই হবে এবং তাকে মুসলিম ত্বরীকায় দাফন করতে হবে। এমনও হতে পারে, মৃত্যুর আগে কালিমা পড়েছে, এরপর আর গোনাহ করে নাই, তাহলে তো সে নিষ্পাপ।
‘আল্লাহ অতি দয়ালু’ একথা আমরা মুখে তো বলি, কিন্তু কাজের মধ্যে তার প্রতিফলন নাই। আমাদের দিল বড় কঠোর। দিলের উপর তো কারো ক্ষমতা নাই। তার দ্বারা কিছু করানো সাংঘাতিক কঠিন। দিলে যার যেটা এসেছে, থাকবেই। বাংলাদেশের সংবিধানের কাগজের পাতা থেকে আল্লাহর আস্থা সরে গেছে, মানুষের দিলের থেকে কি সরে গেছে? সরে যাবে না, সম্ভবও না।
মুসলমান হলো পাগলের জাত। আমার কথা শুনে যদি রাগ করেন তাহলে দলীল দেখুন। আল্লাহ বলেছেন,
انا عرضنا الامانة على السموات والارض الخ
অর্থাৎ পৃথিবীর বড়-ছোট সব সৃষ্টিকে বলেছিলাম, কুরআন শরীফ গ্রহণ করো, বিশ্বনবীর উম্মতি গ্রহণ করো। সারা পৃথিবীর ছোট-বড় সৃষ্টি, আসমান-জমীনও বলেছে, আল্লাহ! আমরা তোমার বিদ্রোহী না, কিন্তু এ যে বিরাট বড় ব্যাপার! দিলের ভিতরে তোমাকে রাখা, তোমার আনুগত্য করা, বিশ্বনবীকে মেনে চলা, তাঁর আনুগত্য করা, পৃথিবীর মানুষকে তাতে আকৃষ্ট করা, এ তো মহা দায়িত্ব! আল্লাহ মাফ করো, আমরা পারব না। তুমি তোমার সৃষ্টির মধ্যে তাদেরকে তালাশ করো যারা তোমার কাছে সর্বাপেক্ষা পছন্দের। তুমি তো জানোই কারা পারবে, আল্লাহ! তুমি তাদেরকেই নির্বাচন করো।
সব সৃষ্টি একের পর এক অপারগ। মানুষ ছাড়া আর কোন সৃষ্টি বাকি নাই। পিতা ছেলেদেরকে বলে, আমার বোঝাটা মাথায় নাও। বড় ছেলে না করে, তার ছোটজনও না করে। সবাই না করছে। সর্বকনিষ্ঠ ছেলে পেরেশান! বাবার দশটা ছেলে, আমার বয়স মাত্র ১০, আর তারা ৩০-৫৫ বয়স। আব্বা মহা শ্রদ্ধার পাত্র, তাঁর কথা মানা আমার জন্য কামিয়াবী। আমার সভ্যতা-ভদ্রতা পিতা-মাতার কথা মানার উপর নির্ভরশীল। আমার ৯জন ভাই সবাই না করে দিল, তাহলে কি আমার আব্বার অপমান হবে নিজের সন্তানদের কাছে? এসব ভেবে ছোট ছেলে দৌড় দিয়ে গিয়ে বলে, আব্বা এই বোঝা আমার মাথায় দিন। ছেলে মনের কথা ছিলো এরকম যে, আমি জানি এটা আমি উঠাতে পারবো না, কিন্তু আমার চেয়ে বেশী আমার আব্বা জানে। আমার মাথায় উনি ছাড়বেন না। কিন্তু যদি বলি যে, আমিও পারব না, তবে আব্বার দশটি ছেলেই অবাধ্য সাব্যস্ত হবে। আর আব্বা যদি আমার মাথায় ছেড়েই দেয়, উঠানো খুব কঠিন হবে, আর যদি না উঠাতে পেরে পড়ে মারাও যাই তবে এর মধ্যেই আমার কামিয়াবী। ছোট বাচ্চা দৌড়ে গিয়ে যখন বলে, আমার মাথায় দেন! আব্বা বলে, তুমি পারবে না তো। ছেলে বলে, পারবো। ছেলে বোঝা ধরে টানছে। তখন আব্বা ‘আচ্ছা ঠিক আছে’ বলে বোঝাটা তার মাথায় লাগিয়ে উপর দিয়ে টেনে ধরে রেখেছে। এভাবে ছেলে এটা মাথায় করে বাজার থেকে ঘরে ঢুকেছে। ধরে রেখেছে বাপে। মাকে বলে মা! আমি এনেছি! কিন্তু আসলে বোঝাটা তো উঁচিয়ে রেখেছে পিতা।
ঠিক অনুরূপ পৃথিবীর কোন সৃষ্টি যখন ধরে না, তখন মানুষ দৌড় দিয়ে গিয়ে মাথায় নিয়ে নিয়েছে পবিত্র কোরআনকে, আল্লাহর ঈমানকে, আল্লাহর রাসূলের ঈমানকে । আল্লাহ বলেন যে, তোমরা পারবে না। মানুষ বলে, না- পারব। মানুষ এটা বুঝেছে যে, আল্লাহ যখন বলছেন পারবে না, তখন ব্যবস্থা তিনি একটা করবেনই। পরিশেষে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের মাথার মধ্যে কুরআন শরীফ রেখে দিয়ে দুটি ঘোষণা করলেন। প্রথম ঘোষণাঃ
ولقد كرمنا بنى ادم وحملناهم فى البر والبحر الخ
যেহেতু কোন সৃষ্টি আমার এই দায়িত্ব গ্রহণ করে নাই, আমার এই ছোট একটা সৃষ্টি যে কিনা ২৪ ঘণ্টা অন্য সৃষ্টির মুখাপেক্ষী; বাতাসের, পানির, অন্যান্য পদার্থের এমনকি কীট-পতঙ্গেরও মুখাপেক্ষী; সে এত মুহাব্বত দেখিয়ে মাথায় নিল, আমি এদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘোষণা করলাম।
দ্বিতীয় ঘোষণাঃ কুরআনকে হেফাজত করা বিরাট দায়িত্ব। ইতিপূর্বে ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান তাদের আসমানী কিতাবকে নষ্ট করেছে, হেফাজত করতে পারেনি। তাই আরেকটা ঘোষণা দিলেন,
انا نحن نزلنا الذكر وانا له لحافظون
এই ঈমানের হেফাযতের দায়িত্ব, কোরআনের হেফাযতের দায়িত্ব আমার। আমার বান্দার মাথায় থাকবে তাদের দিকে সম্বোধন করার জন্য, তবে এটাকে উপর থেকে টেনে ধরে বোঝার ভার কাঁধে রাখানোর দায়িত্ব আমি আল্লাহ নিজে নিয়ে নিয়েছি।
এজন্য আমি প্রায়ই বলি (আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই এক¦ীন দান করুন) যে, কুরআন শরীফকে অর্থাৎ কুরআনের শব্দ, অর্থ ও ব্যাখ্যাকে, কুরআনের মালিককে, কুরআনের নবীকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে পৃথিবীতে এই রকম সৃষ্টি জন্ম নেয়নি। কোন দিন সম্ভব হবে না, কোন দিনও না। আল্লাহও থাকবেন, কোরআনও থাকবে, হাদীসও থাকবে। এর সাথে যারা লেগে থাকবে তারা দুনিয়াতেও থাকবে, আখিরাতেও থাকবে। আর ইসলামের শত্র“ ও বিদ্বেষীরা ফেরাউন, নমরূদের পরিণতির শিকার হবে।
তবে ধ্বংসের জন্য বদ দোয়া করা যাবে না। দেশের অবস্থা ভালো নয়। আপনারা কি ধ্বংসের বদদোয়া করার জন্য এসে এখানে জমা হয়েছেন, নাকি তাদের জন্য কেঁদে দোয়া করে তাদেরকেও সহী ঈমানওয়ালা বানিয়ে আল্লাহকে খুশী করতে চান? সারা পৃথিবীর মানুষ আল্লাহওয়ালা হয়ে যাবে, হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না, এই দোয়া করুন!
দিল অতিবড় নিয়ামত! কিন্তু তা আমাদের হাতে নাই। দিল দিয়ে আল্লাহর জন্য কিছু করা বড় কঠিন। আমরা তো বাহ্যিক হাত-পা দিয়েও করতে পারি না! আল্লাহ জানেন যে, মানুষ দিলের দ্বারা করতে পারবে না, শরীরের দ্বারা করবে। এটাও কম কষ্ট না। এটিও সবাই পারবে না। তাই তার জন্য কাজকে আল্লাহ সহজ করেছেন, যাতে বান্দা সহজে কোন নেক আমল করলেই তার উছিলায় জান্নাত দেয়া যায়। সন্তানকে যেমন বাহানা করে মা-বাপ মাফ করে দেয়, তেমন আল্লাহ পাক মাফ করতে চান। তাই তিনি সহজ সহজ আমল নির্ধারণ করেছেন দৈনিক ভিত্তিতে, সপ্তাহের ভিত্তিতে, মাসের ভিত্তিতে,বৎসরের ভিত্তিতে, সারা জীবনের ভিত্তিতে। এগুলো সবই দয়া। তেমন একটি সহজ আমল হলো দরূদ শরীফ। যে দুরূদ নামাযে পড়ি সেটা বাইরেও পড়া যায়। অনেক আমল আছে আমরা নামাযে পড়ি, বাইরে মনে থাকে না। যেমন, দুরূদ শরীফ, বেতের নামাযের দোয়ায়ে কুনূত, জানাযার নামাযের দোয়া। ওটা ঐ নামাযের সময় হলে ঠিক মনে আসে। নামাযের দুরূদ শরীফ যদি বাইরে না পড়তে পারেন তবে আরেকটা ছোট্ট দরূদ আছে,
صلى الله على محمد ـ صلى الله عليه وسلم
লোকেরা এটা মিলাদের মধ্যে পড়ে। আমাদের তো সুর পছন্দ। সুর করেও পড়া যায় কিন্তু সুরের কারণে শব্দ পরিবর্তন করা যাবে না। যারা বোঝে না তারা গলদ হলেও আল্লাহর নাম মনে করে পড়তে থাকে জোশের সাথে। থামানো যায় না। যারা মুসলমানদেরকে নিয়ে মজা ঠাট্টা করে, ওরা দেখুক এরা সব আল্লাহর পাগলের দল। আয়াতের মধ্যে এসেছে, انه كان ظلوما جهولا হে পৃথিবীর সৃষ্টি! শোনো, তোমরা কুরআনকে গ্রহণ করলে না। এইযে দেখো, মানুষ! সব আমার পাগল! পরিণাম চিন্তা করেনি, পাগল হয়ে আমার কুরআনকে মাথায় নিয়ে নিয়েছে। এজন্যই আমি বললাম, যারা মুসলামানদের নিয়ে আতংকিত, যারা কাগজের থেকে আল্লাহর নাম সরিয়ে দিচ্ছে, তারা এই পাগলের জাতকে এসে দেখে যাও, এদের দিল থেকে আল্লাহর নাম কীভাবে সরাবে? হ্যাঁ, শত্র“রা দিলের থেকে সরানোর জন্যও ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। যখন আল্লাহ সবার উপর নারাজ হয়ে যাবেন তখন আল্লাহ নিজে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অসুবিধা এই হবে যে, মুসলমান জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
আমরা সবাই আল্লাহর আশেক। কিন্তু না জানার কারণে আমাদের ভুল হয়। আমি এখন আপনাদেরকে শেখাব যে, আমাদের কী ভুল হয়? দুরূদ শরীফ আমরা কীভাবে পড়ি? ‘আল্লাহুম্মা’ এর ‘মিম’ এর মধ্যে টান নাই। যদি টান দেয়া হয় তাহলে এর একটাই অর্থ হয়, তা হলো আল্লাহ দুইজন। ‘নাউজুবিল্লাহ’॥
সমস্ত আরবী গ্রামারের মধ্যে ‘হুমা’ এর মধ্যে টান দুই বোঝানোর জন্য আসে। এখানে ‘হুমা’ এর মধ্যে টান দেয়া যাবে না। এতে আল্লাহর লা-শারীক শেষ হয়ে অংশীদারিত্ব এসে যায়। আল্লাহু শব্দ আসে একজন আল্লাহ বুঝাতে। যেমন, কুলহু। ‘হু’ মানে ‘এক’। একজন বুঝাতে ‘হু’ আসে। এজন্য আমরা নামাযের মধ্যে আশহাদু আল লা বলার সময় আঙ্গুল উঠাই। এর অর্থ আশহাদু আল লা মানে আল্লাহ নাই (মুখে বলে), ‘লা’ মানে নাই, তাহলে তো মুশরিক হয়ে যাই, এজন্য হাতের শাহাদাত আঙ্গুল উঠিয়ে দেখাই যে না, একজন আছেন। ‘ইল্লাল্লাহ ’ বলার সময় আঙ্গুল নামিয়ে দেই কেন? কারণ, তখন মুখে বলি যে, তবে একজন আছেন। ঐ সময় আঙ্গুল উঠানো থাকলে মুখে ও আঙ্গুলে দুইজন হয়ে যায়, তাই ‘ইল্লাল্লাহ’ বলার সময় আঙ্গুল নামিয়ে দেই।
অনেক ভায়েরা আঙ্গুল উঠিয়ে নাড়াচাড়া করে। তারা তারাবীর নামায আট রাকাত পড়ে। তারা হাদীস পালন করে! কিন্তু রমজান মাসে সকল সাহাবায়ে কেরাম ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীন তারাবীর নামায ২০ রাকআত পড়েছেন। ভাইয়েরা আমার! বুঝবার চেষ্টা করুন!
তারা তাদের শতকরা ৬০ভাগ মাসআলা হানাফী মাযহাব থেকে চুরি করে নিয়েছে। খবর নাই।
একটা দলকে দেখি, টুপি মাথায় দেয় না। তাদেরকে দেখলে বড় দয়া লাগে। তারা যুবক, তাদের মধ্যে ইসলাম মানার স্পৃহা আসছে। “টুপি মাথায় দেও না কেন”? একথা জিজ্ঞাসা করলে বলে, হাদীসে কোথায় টুপির কথা আছে? যদি আজ এখানে তোমরা উপস্থিত থেকে থাক, একবার হাদীসের কিতাব নিয়ে আমার কাছে আসো। তোমাদের বড় ভালো লাগে। কারণ তোমরা হাদীস এত মান! টিভি চ্যানেলেও অনেকে ভুল মাসআলা বর্ণনা করে, ইসলামকে গলদভাবে উপস্থাপন করে, বিদআতের প্রতি উৎসাহিত করে।
৯০% মুসলিম দেশের চ্যানেলগুলোতে কি দেখানো হয়? আমার চেয়ে আপনারা ভালো জানেন। সব অশ্লীলতা বাংলাদেশের চ্যানেলের মধ্যে আছে। বহু কাফের রাষ্ট্রের মধ্যেও এমনটি নাই। উলঙ্গ হয়ে গান করা, নাচ করা। এগুলো বাংলাদেশের ২০টা চ্যানেলের মধ্যেই আছে, কিন্তু সিঙ্গাপুরের মতো, চিনের মতো কাফের রাষ্ট্রের মধ্যেও নাই। এটা কি ৯০% মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ? কি হচ্ছে এখানে? আমাদের ছেলেরা মদ খায়, যিনা করে। স্কুলের ভিতের ঢুকে মেয়েদেরকে ধর্ষণ করছে, নবীর নামের আগে গনেশ লিখতে বলছে (নাউজুবিল্লাহ), নবীর দাড়িকে ছাগলের দাড়ি বলছে, নবীর বৈবাহিক জীবন নিয়ে মারাত্মক ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি করছে (নাউজুবিল্লাহ), আর বলছে এটা সাম্প্রদায়িকতা নয়! কিন্তু ইসলামের পক্ষে কিছু বললে এটা মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ। কুরআনের কথা বললে এটা কুপণ্ডুকতা, সাম্প্রদায়িকতা। অনেকে হয়তো এখন মনে মনে বলছে যে, হুজুর দেখি এখানে বসে রাজনীতি করে! আরে ভাই, দেশের মুসলমানদের তো দ্বীনের সঠিক কথা জানাতে হবে। এটাকে আপনি যে নাম দেন দিতে পারেন। এরা আমাদের বুকের মধ্যে হাত দিচ্ছে, আমাদের ঈমানের মধ্যে হাত দিচ্ছে। আমরা ঐ জাতি, আমাদের জীবন যাবে, তবু নবীর উপরে আঘাত আসতে দেব না। নবীর কষ্ট আমরা সহ্য করতে পারব না। আমরা নবীর পাগলের দল। আল্লাহর রাসূলের কোন ধরনের কাজকে যদি সাম্প্রদায়িকতা বল তবে এই সাম্প্রদায়িকতাই আমরা করে যাব। বুঝবার চেষ্টা করো। মুসলমানদের চেতিওনা। আমরা মুসলমান। আমাদের দিলে আল্লাহ, রসূল, কুরআন ছাড়া কিচ্ছু নাই। হে আল্লাহ! তুমি মাফ করে দাও আমাদের সবাইকে! আল্লাহ! এরা বোঝে না, এদেরকে বুঝ দাও।
হে মুসলমান রাষ্ট্রপ্রধানগণ! তোমরা বিদেশের চাপের ধার ধেরো না, আল্লাহর জাতের উপর ভরসা করো। হে দুনিয়ার মুসলমান! দিল ফাটাও, সিজদায় পড়ে আল্লাহর দ্বীন জিন্দা করার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও।
আমাদের মেয়েদেরকে বলা হচ্ছে, “কুরআনের শিক্ষা, নবীর শিক্ষা, যদি তোমরা অর্জন করো, তাহলে তোমাদেরকে বোরকা পরতে বাধ্য করা হবে। তাই তোমরা গান করো, নাচ করো।” এ কথা এদেশের এক মন্ত্রীর মুখ দিয়ে বের হয়েছে! নাউজুবিল্লাহ! “মৌলবাদের উত্থান হচ্ছে, তারা তোমাদেরকে বোরকা পরতে বাধ্য করবে, ঘরে আবদ্ধ থাকতে বাধ্য করবে। এ কারণে সব জায়গায় গান চালু করো, নাচ চালু করো” এ কথাগুলো কি মুসলমানের উপরে, কুরআন ও হাদীসের উপরে টিটকারী নয়? ইসলামকে কটাক্ষ করা নয়? কেন এগুলো বলা হচ্ছে? কারা বলে? রাস্তাঘাটের লোকেরা বলে? তোমরা এর দ্বারা কি বুঝাতে চাও? একদিকে বল, রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম, বিসমিল্লাহ ঠিকই থাকবে, অন্যদিকে আল্লাহর উপর আস্থা বাদ। আপন স্রষ্টা, মালিক ও প্রতিপালকের উপর আস্থা-বিশ্বাস নাই, তো কার উপর আস্থা রয়েছে? নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছো? আমাদের জবাই করবা? করো জবাই। রাসূলের সাহাবীরাই তো জবাই হয়েছেন। আমরা আল্লাহর জন্য জান দিতে রাজী আছি।
কি হলো মুসলমানদের? মুসলমানরা কোথায়? মুসলমানরা কেন নিস্ক্রীয় রয়েছে? কেন মৌলভীদের দায়ী করো? ইসলাম শুধু মৌলভীদের নাকি? মৌলভীরাই কি শুধু জান্নাতে যাবে? নবী কি শুধু মৌলভীদের? হে সমাজ ও দেশের কর্ণধাররা! তোমরাই বেশী দায়ী। আমরা অপারগ, আমরা বলতে পারি, এর চেয়ে বেশী পারি না।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যে, এদেশের সব মানুষকে যেন আল্লাহ খাঁটি মুমিন বানিয়ে দেন। যারা বোঝে না, আল্লাহ পাক যেন তাদের বুঝ দেন।
হে ভায়েরা! শুধু নিজের মুক্তির চিন্তা করলে হবে না। সন্তানদেরও খবর নিন। আমার ছেলে-আপনার ছেলে কী করছে? এরা কোন্ দিকে ভেসে যাচ্ছে? এদের দিলের ভিতরে ঈমান-আমল ঢোকানোর চেষ্টা করুন! দ্বীনদার বানাতে চেষ্টা করুন! কুরআনের, শিক্ষার দিকে, রসূলের আদর্শের দিকে আনুন। সে তো আল্লাহর বান্দা, আল্লাহ তাকে আপনার কাছে আমানত রেখেছেন, কী দিয়েছেন আপনি তাকে? চক্ষু আপনি দিয়েছেন? হাত, পা, শরীর, আত্মা, জ্ঞান, বুদ্ধি এর একটাও কি আপনি দিয়েছেন? তাহলে কেন তাকে আল্লাহর বিদ্রোহী করে তুলেছেন? কিসের কারণে সে কালিমা পড়তে পারে না? কেন সে কুরআন পড়তে পারে না, কবর-আখেরাত বোঝে না? সন্তানদের ঈমান-আমল ঠিক করার প্রধান দায়িত্ব মা-বাপের।
হে ভায়েরা! স্ত্রীদের হক আদায় করুন! ইসলামের তাদের মহরানা আদায় করেছেন কি না? সরকারের উচিত, যারা মহরানা আদায় করে নাই, দ্রুত ডেকে তাদের মহরানা বাধ্যতামূলক আদায় করানো। বর্তমানে বিবাহের সময় আমি আপনাদের এক দেড় হাজারের নাম বলতে পারি যারা মেয়ের হকও দেন না, বিবির হকও দেন না। স্ত্রীর হক আদায় করুন, সন্তানের হক আদায় করুন। দুনিয়ার শিক্ষার পাশাপাশি দ্বীনী শিক্ষাও দান করুন। আপনার ছেলে ও মেয়ে যেন জাহান্নামী না হয়। ভায়েরা আমার! আরেকটা কথা বলি, আপনার ঘরের চাকর-চাকরানী, ড্রাইভারসহ সব কর্মচারীর হক আছে। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, যারা দুর্বলের প্রতি জুলুম করেনি, চাকর-চাকরানী- অধীনস্তদের প্রতি জুলুম করেনি, আমি এদেরকে বিনা হিসাবে জান্নাতে দেব।
স্কুল-কলেজ-ইউনিভর্সিটির যুবক ভায়েরা! তোমরা নামায ছেড়ো না, তোমরা মুসলমানের সন্তান। মসজিদে মধ্যে যেমন আযান দিয়ে নামায পড়, স্কুলে আযান দিয়ে নামায পড়ো। যখন যেখানে থাকো, ওখানে নামায পড়ো। জামাতের সাথে নামায পড়, আল্লাহ পাক তোমাদেরকে আসমান থেকে রক্ষা করবেন।
বদরের যুদ্ধে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন, অনেক সাহাবী নিহত হয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি যুদ্ধের ফিল্ড থেকে খিমার মধ্যে গিয়ে সিজদায় পড়েছেন। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললেন, “হে আল্লাহ! আজকে যদি মুসলমানরা পরাজিত হয়, তাহলে পৃথিবীর মধ্যে তোমার নাম নেওয়ার কেউ থাকবে না।”
আল্লাহর রাসূল কি আল্লাহর প্রতি আস্থাশীল ছিলেন না? আল্লাহর বিজয়ের ওয়াদার ব্যাপারে তাঁর মনে কি কোনো সন্দেহ ছিল? উনি কি যুদ্ধ আল্লাহর হুকুমে করেন নাই? নবীর চেয়ে বড় ওলী কে হবে? সাহাবীর মতো নিষ্পাপ কে হবে? এইরকম সৈনিক, যাদেরকে জান্নাতী বলা হয়েছে, আর এদের সেনাপতি হলো সকল নবীর শ্রেষ্ঠ নবী, তারপরও সিজদায় পড়েন কেন? নবী সিজদায় পড়েছেন, চোখের পানিতে বুক ভেসে গেছে, নামায পড়ছেন আর সিজদায় পড়ে কাঁদছেন। তখন জিবরাঈল আমীন এসেছেন। সুরায়ে ক্বমারে লেখা আছে, নবী সিজদায়, জীবরাঈল আ. বললেন, ارفع رأسك মাথা উঠান, মাথা উঠান ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার মাথা পড়ে গেছে নিচে।
বাচ্চা বেয়াদবী করে যখন বাপের পায়ে ধরে বসে, তখন বাপে টান দিয়ে তাকে বুকের সাথে মিলায়। হে শ্রেষ্ঠ নবী! আপনি মাথা রেখে দিয়েছেন মাটিতে, আপনার চোখের পানি পড়েছে মাটিতে, আপনি মাথা উঠান। আমি জিবরীল, আপনার উপরে সালাম। আপনি ময়দানের দিকে তাকিয়ে দেখুন! শত্র“রা সব ভেগে যাচ্ছে, মুসলমানদের বিজয় হয়ে গেছে।
সে যুদ্ধে কাফেরদের নেতা (পরবর্তীতে মুসলমান) আবু সুফিয়ান বলেন, আমি কাফের ছিলাম, আমি উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি, আকাশ জুড়ে ফেরেশতা নামছে। কুরআনে বলা হয়েছে-
ان الذين قالوا ربنا لله ثم استقاموا تتنزل عليهم الملئكة ان لاتخافوا ولاتحزنوا وابشروا بالجنة التى كنتم توعدون ـ
“যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক হলেন আল্লাহ, অতঃপর এর উপরই অটল-অবিচল থাকে, তাদের সাহায্যে আসমান থেকে ফেরেশতা নাযিল হয়। তারা এসে তাদেরকে বলে, তোমরা কোনো ভয় করো না, কোনো দুঃশ্চিন্তাও করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্র“ত জান্নাতের সুসংবাদ শোনো।”
আল্লাহপাক আমাদেরকে এই আয়াতে বর্ণিত গুণে গুণান্বিত করুন!
www.dawatul-haq.com
আল্লাহ তায়ালা হযরত ওয়ালার হায়াত বাড়িয়ে দিন (আমীন)