‘কিতাবুল্লাহ’ ও ‘রিজালুল্লাহ’ দ্বীন শেখা ও বোঝার প্রধান মাধ্যম
লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ মঙ্গলবার, অক্টোবর ১১, ২০১১ (৮:২৫ অপরাহ্ণ)
মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দা:বা: এর বয়ান
বান্দাকে দ্বীন শিক্ষা প্রদানে আল্লাহর পদ্ধতি
اللهم صل على محمد وعلى اله وسلم تسليما ـ استغفر الله رابى من كل ذنب واتوب اليه ـ لا حول ولا قوة الا بالله العليى العظيم ـ
আল্লাহ পাক যুগে যুগে অসংখ্য নবী পাঠিয়েছেন। তাঁরা উম্মতকে বুঝাতেন, সত্য ও সঠিক পথের পরিচয় পেশ করতেন এবং সে পথে চলতে উপদেশ দিতেন। বোঝা গেল যে, আল্লাহপাক সরাসরি বান্দার নিকট কিতাব পাঠিয়ে নিজে নিজেই তার অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবন করে সেমতে আমল করার নির্দেশ ও উপদেশ দেননি। বরং এরূপ নিয়ম করেছেন যে, আল্লাহ পাক নবীগণকে তার অর্থ ও ব্যখ্যা শিক্ষা দিয়েছেন, অতঃপর নবীগণ সাধারণ বান্দাদেরকে তা শিখিয়েছেন। শিক্ষা গ্রহণের এই একটি পদ্ধতিই পৃথিবীতে মানব বসবাসের সূচনা লগ্ন থেকে স্বীকৃত। কোন একটি শাস্ত্র যতই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কিতাবে পাওয়া যাক না কেন তা শিখতে উস্তাদ তথা শিক্ষকের প্রয়োজন। নিজে নিজে সে কিতাব অধ্যয়ন করে আদৌ সংশ্লিষ্ট শাস্ত্রের অভিজ্ঞজনদের কাতারে শামিল হওয়া সম্ভব নয়।
শুধু যদি কিতাব পাঠালেই হত তাহলে আল্লাহ পাক লক্ষাধিক নবী পাঠাতেন না। নবীগণ হলেন ‘রিজালুল্লাহ।’ এই রিজালুল্লাহ আল্লাহ তা’আলা পাঠিয়েছেন উম্মতকে কিতাবুল্লাহ বুঝিয়ে দেয়ার জন্য।
রিজালুল্লাহর দায়িত্ব
রিজালুল্লাহর দায়িত্ব কী ছিল, সে সম্পর্কে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-
هو الذى بعث فى الاميين رسولا منهم يتلوا عليهم ايته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب والحكمة ـ وانكانوا من قبل لفى صلال مبين
তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে তাদেরই একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন, যিনি তাদেরকে আল্লাহর আয়াতসমূহ পড়ে শোনাবেন, তাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করবেন এবং তাদেরকে সে অনুযায়ী চলার কৌশল শিক্ষা দিবেন। অথচ এই লোকগুলোই (রাসূল সা. আসার পূর্বে) এক সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল।”
নবীর প্রথম দায়িত্ব
শব্দ ও অর্থ উভয়ের সমন্বয়ে কুরআন। কুরআনের তাফসীর যেমন উদ্দেশ্য, তিলাওয়াতও তেমনি উদ্দেশ্য। তাই কুরআনে নবীর প্রথম দায়িত্ব বলা হয়েছে তিলাত করে দেয়া। আর হাদীসে শুধু তিলাওয়াতের অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। আবার কুরআনের রয়েছে নিজস্ব পঠন রীতি। যে রীতি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত ক্বারী সাহেবদের সনদ পরম্পরায় সংরক্ষিত হয়ে আসছে নিরবিচ্ছিন্নভাবে। আরবী ভাষাভাষী সাহাবায়ে কেরামের সামনে কুরআন তিলাওয়াতকে নবীর প্রথম দায়িত্ব সাব্যস্ত করা থেকেই বোঝা যায় যে, উস্তাদ ছাড়া তিলাওয়াত শিখতে পারা অসম্ভব। অতএব যারা শুধু আরবী পড়তে পারার অহমিকায় উস্তাদ তথা শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে নিজেই কুরআন তিলাওয়াত আয়ত্ব করার কসরত করে, তারা আর কিছু না হোক অন্তত শ্রোতার জন্য অনেক হাসির খোরাক যোগায়।
কুরআন বুঝতে উস্তাদের প্রয়োজনীয়তা
নবীর দ্বিতীয় প্রধান দায়িত্ব হলো, তালীমে কিতাব অর্থাৎ কুরআন বুঝিয়ে দেয়া। কেননা কেবল আরবী ভাষা সম্পর্কে অবগত হওয়া কুরআন বুঝার জন্য আদৌ যথেষ্ট নয়। কুরআনের রয়েছে নিজস্ব পরিভাষা। শুধু ভাষাজ্ঞানের দ্বারা তার উদ্দেশ্য, মর্ম ও উপদেশ অনুধাবন করা সম্ভব নয়। নতুবা কুরআনের প্রথম অনুসারীরা কেবল আরবী ভাষাভাষীই ছিলেন না বরং ভাষার গতি প্রকৃতি সহ সকল দিক সম্পর্কেই ছিলেন সম্যক অবগত। উস্তাদ ছাড়া বোঝা সম্ভব হলে তারাই ছিলেন এ যোগ্যতায় সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু তাদের নিকট শিক্ষক হিসেবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করা হয়েছে। কারণ কেবল ভাষা জানলেই কোন বিষয়ে পারদর্শী হওয়া যায় না। ইংরেজী ভাষায় ব্যুৎপত্তি থাকলেই ডাক্তার হওয়া যায় এমন কথা কি কেউ বলে? সবার জানা আছে যে, ডাক্তার হওয়ার জন্য মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলির তত্ত্বাবধানে থেকে বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করতে হয়, হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। বড় ডিগ্রি তো দূরের কথা, শিক্ষক ছাড়া আজ পর্যন্ত কেউ অক্ষার জ্ঞানও লাভ করতে পারেনি।
আগেই বলেছি যে, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক যুগে কিতাবুল্লাহর সাথে রিজালুল্লাহ তথা নবী পাঠিয়েছেন শিক্ষক হিসেবে। সবশেষে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছেন। তাঁকে সরাসরি ওহীর মাধ্যমে নিজ কালাম বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং অপরকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। সেমতে তিনি সাহাবীদেরকে বুঝিয়েছেন, সাহাবীগণ বুঝিয়েছেন তাবেয়ীনদের। তারা বুঝিয়েছেন তাবয়ে তাবেয়ীনদের। এরকম নিরবিচ্ছিন্ন ধারা পরম্পরায় কুরআনের শিক্ষা চলে এসেছে আমাদের পর্যন্ত।
কুরআন ব্যাখ্যার মূলনীতি
কুরআন ব্যাখ্যার মূলনীতিও তাই। প্রথমত, কুরআনের ব্যাখ্যা কুরআন দিয়ে হবে, কারণ কুরআনের এক আয়াতের ব্যাখ্যা অন্য আয়াত করে দেয়। অতঃপর কুরআনের ব্যাখ্যা হবে হাদীস দিয়ে; এরপর সাহাবায়ে কেরামের উক্তির মাধ্যমে। তারা সরাসরি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুহবাত থেকে কুরআন শিখেছেন, বুঝেছেন ও সে অনুযায়ী আমল করেছেন। অতঃপর তাবেয়ীনদের উক্তির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে হবে। তারা হাদীসে বর্ণিত শ্রেষ্ঠ যুগের লোক। তাদের মন-মেযাজ গঠিত হয় সাহাবাদের সুহবতে। এ মূলনীতি লংঘন করে তাফসীর করাকে মনগড়া তাফসীর বলা হয়, যা সুস্পষ্ট গোমরাহী ও হারাম। এরকম তাফসীরের কিতাব কিন্তু আমাদের দেশে এবং অন্যান্য দেশেও অনেক রয়েছে। নামী-দামী প্রকাশনী থেকে মযবুত বাঁধাই ও ঝকঝকে ছাপায় প্রকাশিত হয়ে দাপটের সাথে বাজারে পরিবেশিত হচ্ছে। সাবধান! চকচক করলেই সোনা হয় না। সোনা কিনতে চান, তো অভিজ্ঞ স্বর্ণকারকে সাথে নিযে যান। তদরূপ যদি তাফসীর কিনতে চান কিংবা পড়তে চান তাহলে অভিজ্ঞ নির্ভরযোগ্য আলেমের সাথে পরামর্শ করুন। যেমন ধরুন, আপনারা যারা কুরআনের জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষার কিংবা অন্য যে কোন ভাষার তাফসীর অধ্যয়ন করতে চান, তাহলে আমার সাথে পরামর্শ করলেন কিংবা যাত্রাবাড়ী মাদরাসার অভিজ্ঞ কোনো আলেমের সাথে পরামর্শ করলেন। নিজে নিজে একটা নির্বাচন করে পড়া শুরু করবেন না। অনেকে তো শুধু কুরআনের তরজমা গ্রন্থ পড়েই কুরআনের জ্ঞানী বনে যায় এবং অন্যকে আয়াত পড়ে উপদেশ দেয়। এরা যে কত সাংঘাতিক বিভ্রান্তি ও গোমরাহীর শিকার হয়ে পড়ে, তা তারা বুঝতেই পারে না। এদেরকে বোঝানোও মুশকিল। কারণ এরা তো দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ; আরবী ভাষার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে কিছুই জানে না।
একটি বাস্তব ঘটনা
থানবী রহ. এর নিকট এক ব্যক্তি শাহ আব্দুল কাদির রহ. এর প্রচলিত সহজ সরল ভাষায় লিখিত তরজমা গ্রন্থটি আনল। সে গ্রন্থে-
فاغسلوا وجوهكم وأيديدكم الى المرافق وامسحوا برئوسكم وارجلكم
অযু সংক্রান্ত এই আয়াতের তরজমা তিনি এভাবে করেছেন- “তোমরা নিজেদের মুখসমূহকে ধৌত করো এবং হাতসমূহকে, আর মাসেহ করো মাথাসমূহকে এবং পাসমূহকে।” সেই ব্যক্তি থানবী রহ. কে এই তরজমা দেখিয়ে বলল, “হুযুর কুরআন শরীফেই তো পা মাসেহ করার কথা বলা হয়েছে। আর আমরা কোথাকার কতগুলো মাসআলার কিতাব দেখে পা ধৌত করে যাচ্ছি।”
আসলে উপরোক্ত তরজামায় পাসমূহ’ শব্দটি ‘মাথাসমূহ’ শব্দের পরে হওয়ায় ঐ ব্যক্তি এরূপ বুঝেছে। প্রকৃতপক্ষে পায়ের হুকুম, মুখ ও হাতের হুকুমের মতোই, অর্থাৎ ধৌত করা। কিন্তু তরজমা দেখে সাধারণ মানুষ এটা বুঝবে কী করে? যাহোক থানবী রহ. বলেন, “ঐ ব্যক্তির বক্তব্য শুনে আমি ভীষণ ভাবনায় পড়ে গেলাম। আরবী ভাষার ব্যবহার সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিকে আমি কেমন করে বোঝাই! পরে আমি তাকে বললাম, আচ্ছা ভাই! প্রথমে আপনি আমার এ প্রশ্নের উত্তর দিন যে, আপনি কেমন করে একথা জানতে পারলেন যে, এই যে কাগজের পাতায় পাতায় কালি দিয়ে লেখা আরবী বাক্যগুলো আল্লাহ তা’আলার কালাম? উত্তরে সে বক্তি বললো, আলেমগণের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তখন বললাম, যে আলেমদের কথা সত্য মনে করে একে কুরআন তথা আল্লাহর কালাম বলে বিশ্বাস করেছেন, সেই আলেমগণই তো পা ধৌত করা ফরয বলেছেন, এখানে তাদের কথা বিশ্বাস করছেন না কেন? সে ব্যক্তি আর কোন কথা বললো না।
শুধু কুরআনের তরজমা পাঠ করা
আমি বললাম, আপনার মতো লোকদের পক্ষে কুরআনের তরজমা পাঠ করা ক্ষতিকর। তাই তরজমা পাঠ না করে আলেমদের থেকে মাসআলা জিজ্ঞেস করে আমল করবেন।” আমিও থানবী রহ. এর মতো আপনাদের বলছি যে, শুধু তরজমাগ্রন্থ পাঠ করে নিজের ক্ষতি ডেকে আনবেন না।
নবীর তৃতীয় প্রধান দায়িত্ব
যাহোক পূর্বে কথা চলছিল রিজালুল্লাহ তথা নবীদের দায়িত্ব সম্পর্কে। দুটি দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। তৃতীয় দায়িত্বের কথা আল্লাহ বলেছেন- ¢ ¤ œ ¤ § Ÿঅর্থাৎ তাঁরা উম্মতের আত্মার পরিশোধন করবেন। ভাল-মন্দ সব কাজের উৎস হল অন্তর। অন্তর পরিশুদ্ধ হলে গোটা দেহ পরিশুদ্ধ হবে, শরীরের প্রতিটি অঙ্গ থেকে ভাল কাজ নির্গত হবে। পক্ষান্তরে অন্তর নষ্ট হলে, সারা দেহ নষ্ট হবে। তাই আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব অপরিসীম।
ইলম হলো আলো। শরীয়ত হল পথ। শুধু আলোর ব্যবস্থা হলেই পথ চলা যায় না। চলার জন্য শরীরে শক্তি থাকতে হয়। ঠিক এরকমই শুধু ইলম নিয়ে শরীয়তের পথে চলা অসম্ভব। চলার শক্তি থাকার দরকার রয়েছে। তাযকিয়া তথা মানবাত্মার পরিশোধনই হল সেই শক্তি। এ কারণেই তো কুরআনে কারীমে তালীম ও তাযকীয়াকে নবীর দুটি পৃথক দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মনে রাখতে হবে যে, কেবল কিতাব পড়ে তাযকিয়া অর্জন সম্ভব হয় না। কিতাব থেকে সৎ গুণাবলী সম্পর্কে তথ্যগত জ্ঞান লাভ করা যায় বটে, কিন্তু অন্তরে সৎগুণাবলী অর্জনে এবং অসৎ গুণাবলী নিয়ন্ত্রণে কিতাবের মৃত কাগজ কোন ভূমিকা রাখতে সক্ষম নয়। একাজের জন্য অত্যাবশ্যক হল, কোন প্রকৃত আল্লাহওয়ালার সুহবত ও সতর্ক নেগরানীতে থাকা এবং তার নির্দেশনা মোতাবেক মুজাহাদা করা।
মূল কথা চলছিল, নবীদের দায়িত্ব সম্পর্কে। নবীগণ উম্মতের শিক্ষক হয়ে থাকেন। তারা যেমন মহান অভিজ্ঞ শিক্ষক, তেমনি তাদের সরাসরি ছাত্রগণও হন বিচক্ষণ ও উঁচু মাপের মেধাসম্পন্ন। যেমন উস্তাদ তেমন ছাত্র না হলে মেলে না। আবার যেমন মেধা ও যোগ্যতাসম্পন্ন ছাত্র হবে, উস্তাদও তেমন হওয়া বাঞ্ছনীয়। ফার্স্ট ক্লাস উস্তাদের পক্ষে থার্ড ক্লাস ছাত্রকে পড়ানো খুবই জটিল; তদরূপ ফাষ্ট ক্লাস ছাত্র যদি থার্ড ক্লাস শিক্ষকের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করতে যায়, তাহলে ইলম বা জ্ঞান অর্জন তো কিছুই হবে না, বরং নানা অপ্রীতিকর সমস্যার সৃষ্টি হবে।
সর্বসেরা শিক্ষক
সারা পৃথিবীর মধ্যে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট শিক্ষক হলেন নবীগণ। তারা সারা জাহানের মধ্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। আলমে আরওয়াহ তথা রুহের জগতে রুহের মর্যাদাগত স্তর রয়েছে। দুনিয়াতে যে ব্যক্তি যে স্তরের হবে, সেই স্তরের রূহ এনে তার শরীরে প্রবিষ্ট করানো হয়। প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী, তৃতীয় শ্রেণী, চতুর্থ শ্রেণী; আবার প্রথম শ্রেণীর মধ্যে ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ এরূপও আছে। যেমন আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম শ্রেণী ক, অন্যান্য নবীদের মধ্যে কেউ ‘খ’ কেউ ‘গ’। তবে নবীগণ সবাই প্রথম শ্রেণীর। এরপর দ্বিতীয় শ্রেণীর হল, আশআরায়ে মুবাশশারাহ অর্থাৎ জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবী।
তৃতীয় শ্রেণীতে আসবে সকল নবীর সাহাবীগণ। চতুর্থ শ্রেণীতে আসবে যারা বেকসুর খালাস পেয়ে জান্নাতে যাবে। পঞ্চম শ্রেণী হল, যারা প্রথমে কিছুকাল দোযখের শাস্তি ভোগ করে তারপর জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি পাবে। ষষ্ঠ শ্রেণী হল, যারা চির জাহান্নামী হবে। কখনোই জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি পাবে না।
আপন ভাবনা
এখন ভাবতে থাকেন যে, আমরা কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। আপনারা ভাবেন কি না জানি না। আমি কিন্তু নিজেকে নিয়ে ভাবি। প্রথম প্রথম চুতর্থ শ্রেণীতে আসতে পারব বলে মনে হত। কারণ প্রথম তিন শ্রেণীতে আসা তো অসম্ভব। কিন্তু এখন চতুর্থ শ্রেণীতেও মনে হয় না। কারণ যখন দেখলাম হযরত রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহ. বলেছেন, ফেরাউন উত্তম না আমি উত্তম তা আমার জানা নেই।” আর হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী রহ. বলেছেন, “কুকুর উত্তম না আমি উত্তম তা আমি জানি না।” ঠিক এই উক্তি করেছেন শাহ আহমাদ কাবীর রেফায়ী রহ.। হযরত হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. বলেছেন, “খিঞ্জির যে আমার চেয়ে অনুত্তম সে কথা আমি জোর গলায় বলতে পারি না।”
এসব দেখার পর আমি কি নিজেকে চুতর্থ শ্রেণীতে শামিল করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারি? কক্ষনো পারি না।
হেদায়েত ও গোমরাহীর চাবিকাঠি
উপরে উল্লেখিত বুযুর্গদের প্রত্যেকেই সর্বজন-বিদিত ও স্বীকৃত আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তিত্ব। কিন্তু তাদের এরূপ উক্তির কারণ কী? কারণ হল, হেদায়েত ও গোমরাহীর চাবিকাঠি একমাত্র আল্লাহর হাতে। যে কোনো মুহূর্তে যে কেউ কাফের থেকে মুমিন হতে পারে আবার মুমিন থেকে কাফের তথা মুরতাদ হতে পারে। এই অজ্ঞাত তাকদীরী ফয়সালা শুধু আল্লাহর হাতে। কেউ যদি ঈমান হারা হয়ে কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে তো ফেরাউন, কুকুর ও শুকরের চেয়েও দুর্ভাগা হল। কারণ, কুকুর, শুকর জান্নাতী ও জাহান্নামী কোনটাই হবে না। পক্ষান্তরে কাফেরকে তো চিরকাল জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর ফেরাউন যদিও চির জাহান্নামী, কিন্তু সে দুনিয়াতে যে সুখ-শান্তি ভোগ করে গেছে এরূপ অন্য কোনো জাহান্নামীকে পাওয়া যাবে কি?
ঈমানের উপর অটল থাকার দোয়া
তাই মনে রাখতে হবে, ঈমান হল আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় নেয়ামত। অন্য সব নেয়ামত ছিনিয়ে নেওয়া হলেও জান্নাতে এক দিন না একদিন যাওয়া যাবে। কিন্তু ঈমান হারা হয়ে মারা গেলে আর কোনো সুযোগ নেই। জাহান্নামই হবে চিরস্থায়ী ঠিকানা। তাই আমাদরেকে আল্লাহ তাআলার নিকট সব সময় ঈমানের উপর অটল থাকার এবং বেঈমান না হওয়ার দোয়া করতে হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহই দয়া করে কী দোয়া করতে হবে তা শিখিয়েছেন। তার শেখানো দোয়ার চেয়ে উত্তম আর কোন দোয়া আছে কি? নিশ্চয়ই না। দোয়াটি হলÑ
اهدنا الصراط المستيم، صراط الذين انعمت عليهم، غير المغضوب عليهم ولا الضالين
নিয়মিত নামাযী ব্যক্তি প্রতিদিন কমপক্ষে বত্রিশবার এ দোয়া করে থাকে।
আর একটি হলো-
ربنا لا تزغ قلوبنا بعد هديتنا وهب لنا من لدنك رحمة ، انك انت الوهاب
আল্লাহপাক আমাদেরকে ঈমানী হায়াত-মউত নসীব করুন!
বয়ান সংরক্ষণ : মুহাম্মাদ মাহফুযুর রহমান
www.dawatul-haq.com
শুকরিয়া, জাযাকাল্লাহ
জাযাকাল্লাহ।