সরকারের পলিসি : আমাদের করণীয় (পর্ব১)
লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ মঙ্গলবার, জানুয়ারি ৩, ২০১২ (১:৩৭ অপরাহ্ণ)
মহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান
টুইন টাওয়ার
আফগানিস্তান ইস্যূতে সাম্রাজ্যবাদি শক্তি মোটামুটি সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু সার্বিক এবং স্থায়ী এবং পুরাপুরি সফলতা অর্জনে কতটুকু সুনিশ্চিত হতে পেরেছে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারে এবং ইসলাম কে চিরতরে খতম করে দেয়ার লক্ষ্য অর্জনে কতটুকু সফলকাম হয়েছে এ ব্যাপারে চুড়ান্ত মতামত ব্যক্ত করার জন্য আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হয়। তবে এরি মধ্যে টুইন টাওয়ারের অকল্পিত ঘটনা সারা বিশ্বকে প্রকম্পিত করে তুলেছে। সারাবিশ্বের চিত্রকে বদলে দিয়েছে এই ঘটনা। এনিয়ে যথেষ্ট জল্পনা কল্পনা লেখালেখি, বক্তৃতা-বিবৃতি সংবাদ মাধ্যমে বহুল প্রচারিত হয়েছে। ঘটনাটি স্বাভাবিক ভাবেই ঘটেছে না কী এর পিছনে কোন গোপন পরিকল্পনা রয়েছে, সে যাই হোক, তবে মোটামুটি একটি বিষয়ে ঐক্যমত পরিলক্ষিত হয় যে মূলত এই ঘটনাটি -
১. ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে নতুন একটি সুপরিকল্পিত সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা, এর পিছনে কেবল দীর্ঘ সময় এবং যথেষ্ঠ চিন্তা ব্যয় করা হয়নি বরং প্রচুর অর্থকড়িও খরচ করা হয়েছে।
২. যাতে করে আফগান ইস্যুতে অর্জিত বিজয়কে ধরে রাখা যায় এবং পরিপূর্ণ বিজয় এবং স্থায়ী বিজয় অর্জনের পথ সুগম হয়।
৩. পৃথিবীর দৃষ্টির অগোচরে ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী হয়।
৪. বরং স্বয়ং মুসলমানদের মধ্যে সংঘাত দেখা দেয়। তাদের ঐক্যশক্তি বিনষ্ট হয়। তাদের মাধ্যমেই সাম্রাজ্যবাদি আধিপত্য বিস্তার সুনিশ্চিত করা যায়।
৫. তারা তাদের অভিষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনের প্রয়োজনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণ করেছে।
৬. তারা এমন এমন ভিত্তিহীন পরিভাষা এবং উত্তেজনামূলক রিপোর্ট মিডিয়ায় প্রচার করে চলেছে, যাতে করে মুসলমানদের ধর্মের পাহারা চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যায়, তারা চরম অসহনীয় হয়ে সাম্রাজ্যবাদিদের সেবা দাসে পরিণত হতে বাধ্য হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশ
আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যগারিষ্ঠ দেশ, আয়তনে কম হলেও ইসলামী আকীদা বিশ্বাস, শিক্ষা দীক্ষা এবং আমল আখলাকে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এই দেশটি বিশ্ব মুসলিমের প্রাণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে শুরু করেছে। আর তা অমুসলিম এবং সাম্রাজ্যবাদি শক্তিকে আতংকিত করে তুলেছে। বাংলাদেশের উলামা মাশায়েখ এবং শ্রেণীর মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ ঈমানী শক্তি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধের কারণ। তাই মনে সামরাজ্যবাদি শক্তি আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান অভিযান থেকে শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা গ্রহণ করে বাংলাদেশ অভিযানে সংশোধিত কর্মসূচী বাস্তবায়নে প্রয়াসী।
১. বাংলাদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় অবস্থান কঠোর হলেও অর্থনৈতিক রাজনৈতিক রাষ্ট্রীয় এবং সমর শক্তির অবস্থান সুসংহত নয়। প্রতিহত ক্ষমতা নেই মোটেই। অর্থ, সমর এবং রাষ্ট্রীয় সমর্থন ব্যতীত অপশক্তিকে প্রতিহত করা যায় না। যারা অর্থশালী মুসলমান এবং যারা রাষ্ট্র প্রশাসন পরিচালনা করে তাদের মধ্যে খোদা ভীতি শরীয়ত এবং সুন্নতের অনুসরণ ও অনুকরণ নেই মোটেই তাদের ইসলামের প্রতি উদাসিনতা কেবল ধর্মহীনতাই নয় বিধর্মী অবস্থানকে শক্তিশালী করে তুলেছে। তাই সামরাজ্যবাদি শক্তি তাদের মাধ্যমে সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কলা কৌশল গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে সাধারণ মুসলমান এবং ওলামা মাশায়েখদের মধ্যে সংঘাত এবং ফাটল ধরানোর মানসে জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ, ইত্যাদি পরিভাষা প্রয়োগ করে অনৈক্য সৃষ্টি করে চলেছে। বিশেষ করে কওমী ওলামা মাশায়েখ এবং ছাত্রদেরকে দোষারোপ করে সমাজের মধ্যে উত্তেজনা এবং উস্কানীমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চলেছে।
২. সর্বপ্রথম কাওমী মাদরাসাসমূহকে জঙ্গীবাদের আস্তানা হিসেবে চিিহ্নত করার গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়। সিরিজ বোমাবাজির নগ্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে কওমী মাদরাসা এবং সংশ্লিষ্ট উলামা মাশায়েখ ও দাড়ী টুপীওয়ালাদের অবর্ননীয় হয়রানী এবং অপমান করা, সারাদেশে তাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরীর চেষ্টা করা হয়, গ্রেফতার করা হয় হাজার নির্দোষ আলেম উলামা এমনকি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রদেরকেও। জেল হাজতে বন্দী করা হয় এবং রিমান্ডে নেয়া হয় দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় অগণিত উলামা মাশায়েখদেরকে। পত্র পত্রিকায় এবং মিডিয়ায় প্রোপাগাণ্ডা এবং অপপ্রচারের মাধ্যমে তাদের ভাবমুর্তি ক্ষুণœ করার জঘন্য পন্থা অবলম্বন করা হয়। যদিও সরকারী তদন্তে তারা সম্পূর্ণ নির্দোষ সাব্যস্ত হয়।
৩. ফাতওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনর্থক ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে, এ নিয়ে সরকারের মাথা ব্যথার কোন কারণ অদ্যাবধি বুঝে আসে না। মুসলিম বিশ্বে তো বটেই কোন অমুসলিম দেশেও ফাতওয়া নিষিদ্ধকরণ আইন পাশ হয় নি। অহেতুক একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে মুসলমানদরেকে উত্তেজিত করা হয়। উস্কানীমূলক অবস্থার সৃষ্টি করে সারা দেশে আন্দোলনের ঝড় সৃষ্টি করা হয় এবং বেধড়ক গুলি করে মাদরাসার ছাত্রদের জীবন ধক্ষংস করা হয়। একই অবস্থা বর্তমানেও বিরাজমান।
৪. জাতীয় শিক্ষানীতির নামে সেক্যুলার শিক্ষানীতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয় এবং অদ্যাবধি প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষানীতির ব্যাপারে বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের এবং ইসলামের প্রতি বৈষম্য দূরীভূত করার বারবার আবেদন নিবেদনের পরও কোন প্রকার কর্ণপাত করা হচ্ছে না। সংশোধনী নীতিমালায় সেক্যুলার বাক্যটি বাদ দেয়া হয়েছে বটে, কিন্তু বিষয়বস্তু সেক্যুলারই রয়েছে, কোন পরিবর্তন আনা হয়নি মোটেই অথচ মূল আপত্তি বিষয়বস্তু নিয়েই উঠেছে। এমনিভাবে সংশোধনীয় নীতিমালা থেকে বাইবেলের আলোকে সমাধান বাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিষয়বস্তুতে কোন পরিবর্তন আনা হয় নাই। যারা সেক্যুলার শিক্ষানীতি তৈরী করেছে এবং বাইবেলের আলোকে সমস্যার সমাধানের সম্মত নয়, প্রশ্ন হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে, মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকারকে ক্ষুণœ করে এই শিক্ষানীতি প্রণয়ন কারী এরা কারা (?) তাদের সংশোধনের মাধ্যমে মুসলমানগণ কী আশা করতে পারে? বস্তুত শাব্দিক পরিবর্তন ব্যতীত মূলত কোন পরিবর্তন মোটেই করা হয়নি। প্রাইমারী শিক্ষা ৮ বৎসর বাধ্যতামূলক করার কারণে পবিত্র কুরআন মুখস্ত করা বন্ধ হয়ে যাওয়ার তীব্র আশংকা থেকে মুক্তির কোন পথ বের করা হয়নি সংশোধিত শিক্ষানীতিতে এমনিভাবে সহশিক্ষার পরিণামে চরিত্রগত অধপতনের হাত থেকে যুবক যুবতীদেরকে রক্ষার করার কোন বাস্তবমূখী কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়নি, যেমন নারীদের জন্য ভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা এ ব্যাপারে কোন প্রকার প্রস্তাবও করা হয়নি। সরকারের এ ধরনের কঠোর মনোভাবের কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের মধ্যে হতাশা আতংক এবং ক্ষোভের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
৫. নারী উন্নয়ন নীতিমালা নামে ইয়াহুদী ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতিভিত্তিক প্রণিত সিডও সনদ বাস্তবায়নের তৎপরতা চালানো হচ্ছে, মজার ব্যাপার হলো যে, সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ করা হবে না আরো বলা হচ্ছে যে, নারী উন্নয়ন নীতিমালায় কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন কিছু নাই। তাই নয় যারা নারী উন্নয়ন নীতিমালায় কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন কিছু আছে বলে মন্তব্য করে তাদেরকে কুরআন সুন্নাহের অপব্যাখাকারী এবং ধর্মব্যবাসয়ী বলে ভর্ৎসনা এবং নিন্দা করা হচ্ছে, অথচ নারী উন্নয়ন নীতিমালায় কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন কিছু আছে কী না এটা বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট এই নীতিমালায় পাশ্চাত্য প্রণিত নারীনীতি মালার সিডও সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গিকার ব্যক্ত হয়েছে। অথচ এই সিডও সনদ ইসলাম বিরোধী আর ইসলাম বিরোধী বিধায় বরং মানবসভ্যতা এবং মানব চরিত্রের জন্য ধক্ষংসকারী বিধায় মুসলিম এবং অমুসলিম অনেক রাষ্ট্র এই সিডও সনদে সাক্ষর করে নাই, আর অনেকেই আপত্তিকর বিষয় পরিহার করার শর্তে সাক্ষর করেছে। মনে হয় বাংলাদেশ সরকার যে কোন কারণে এই সিডও সনদে সাক্ষর করেছে তাই তারা স্বীয় অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এই নারী নীতিমালা পাশ করতে চায়। আর চায় বলেই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু সংখাগরিষ্ঠ মুসলমানগণ ইতিমধ্যে এই নীতিমালা প্রত্যাখ্যান করেছে। এ নিয়ে দেশে যথেষ্ট উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।
৬. অনেক উলামা মাশায়েখদেরকে এবং মাদরাসা ছাত্রদেরকে নির্যাতন এবং গ্রেফতার করা হয়েছে, অনেকেই মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয় না। এর সমাধানের জন্য সরকারকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উত্তেজনা এবং উস্কানীমূলক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নয় বরং ধীর ও স্থিরভাবে দেশের আস্থাভাজন উলামা মাশায়েখদেরকে নিয়েই। তাদেরকে ভর্ৎসনা করে নয়, সাথে সাথে উলামা মাশায়েখদেরকে বিষয়বস্তুর গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। উত্তেজিত অবস্থান থেকে এমন কোন ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ সমীচীন হবে না যা তাদের শক্তি এবং দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়। হালালভাবে নয় অত্যন্ত গভীরতা এবং দূরদর্শিতার সাথে আমাদের অভিষ্ঠ লক্ষ অর্জনে ব্রতী হতে হবে যাতে হিতে বিপরীত কোন কিছু ঘটে না যায়। অনেকেই মনে করে যে, আসলে কিছুদিন পর পর ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু ইস্যু তৈরী করে সমাজে ছেড়ে দেয়া হয়, যাতে একদিকে কোন বিষয়ে জনগণের মনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে চাপ মুক্ত হওয়া যায় এবং মুসলমান এবং আলেমদেরকে উত্তেজিত করে মাঠে নামিয়ে তাদেরকে লক্ষ্য ভ্রষ্ট করা যায় এবং ধক্ষংস করার পরিকল্পনা কার্যকর করা যায়।
বৈদেশিক চাপ
অনেককেই বলতে শুনা যায় ইসলামের ব্যাপারে যা হচ্ছে সে বিষযে সরকারের করার কিছুই নেই। কারণ সরকারের উপর বিদেশী চাপ রয়েছে। কিন্তু সরকারের কথাবার্তায় এমন কিছু মনে হয় না যা সরকার যা করছে তা নিজের ইচ্ছায় নিজের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই করছে বলে মনে হয়। কেননা সরকার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে যাচ্ছে এদেশে ইসলাম তথা কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ করা হবে না এবং নারী উন্নয়ন নীতিমালায় কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন কিছু নাই। যারা নারী উন্নয়ন নীতিকে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী বলে মন্তব্য করে তারা সবাই অপব্যাখ্যা কারী এবং ধর্ম ব্যবসায়ী। যদি দেশের সর্বজন স্বীকৃত আলেমদের কথা এবং বক্তব্য অপব্যাখ্যা হয়, তাহলে ধর্মীয় বিষয়াদিতে কাদের কথা গ্রহণযোগ্য হবে? এ ধরনের উক্তির পরিণাম কী হতে পারে, জনগনের নিকট সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হতে পারে কি না, এটুকু চিন্তা ভাবনাও কী সরকারের নেই। বিভিন্ন বিষয়ে এবং বিভিন্ন কারণে সরকারে সীমাবদ্ধতা আছে এবং থাকতে পারে। এই বাস্তবতা কে অস্বীকার করা যায় না। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত অনুন্নত সকল দেশগুলোতেই পরাশক্তি সমূহের এরূপ চাপ রয়েছে। এমতাবস্থায় নাগরিকদেরকেও সরকারের অবস্থা অনুধাবন করতে হবে এবং সরকার বিরোধী দল ও দেশের সর্বশ্রেণীর বিজ্ঞজনেরা গভীর চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে খোলা মনে পরামর্শ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে, প্রকৃত সত্যকে আড়ালে রেখে বল প্রয়োগের মাধ্যমে সাময়িক উপকৃত হওয়া যায়, কিন্তু স্থায়ী সমাধানের পথ সুগম হয় না।
সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ
বাংলাদেশের মুসলমানগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের ব্যাপারে এবং মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার লাভের ব্যাপারে আতংকগ্রস্থ এবং হতাশায় ভুগছে- মনে হয় সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ, আর সজাগ বলেই মুসলমানদেরকে আতংকমুক্ত এবং শান্তকরনের প্রয়োজনে সরকার বারবার ঘোষণা দিচ্ছে কুরআন সুন্নাহ তথা ইসলাম বিরোধী কোন আইন পাশ করা হবে না। বর্তমান নির্বাচনী ইশতেহারেও ইসলাম বিরোধী কোন আইন না পাশ করার অঙ্গিকার আবদ্ধ বাংলাদেশের পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ জাতির জনক শেখ সাহেবের এই বিশ্বাস এবং অনুভুতি অবাস্তব নয়, সুতরাং এদেশের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ইসলাম এবং মুসলমানকে উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নাই বলেই নির্বাচনী ইশতেহারে এর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে যে কোন কারণেই হোক এই সরকারকে ইসলাম বিরোধী সরকার বলে যথেষ্ট প্রোপাগাণ্ডাও রয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে স্স্পুষ্ট ঘোষণার পরও মুসলমানদের আতংক এবং প্রোপাগাণ্ডা কেন নিরসন হচ্ছে না, মনে হয় সরকারকে এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন। যা অনুভূত হচ্ছে না, যা মোটেই সমীচীন বলে মনে হয় না।
অজুহাতসমূহ
আতংক এবং প্রোপাগাণ্ডা নিরসন না হওয়ার গুটিকয় কারণ এবং অজুহাত এইজন্য উল্লেখ করা হচ্ছে যাতে সংশ্লিষ্টজনেরা নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করে সমাধানের পথ বের করতে পারে।
১. জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, এই দুইটি পরিভাষার অপপ্রয়োগ, এই দুইটি ভাষাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালিত হয়ে থাকে, আর তা পরিচালিত হয়, মাদরাসা এবং মাদরাসা সংশ্লিষ্ট ওলামা-মাশায়েখদের উপর অথচ জঙ্গীবাদ এবং মৌলবাদের প্রচলিত কর্মকাণ্ডের সাথে মাদরাসাসমূহ এবং ওলামা মাশায়েখদের কোন ন্যুনতম সম্পর্ক নেই তা সর্বজন স্বীকৃত। মুসলিম জনগণ মাদরাসা সমূহ কে ইসলামী শিক্ষা দীক্ষার একমাত্র দুর্গ এবং কেন্দ্র মনে করে থাকে, তাদেরকেই প্রাণ খোলা অর্থ সাহায্যে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালিত হয়ে থাকে আর কোন অন্য ব্যবস্থা নেই, অপর পক্ষে ওলামা মাশায়েখদের প্রতি রয়েছে মুসলিম জনগনের প্রাণের সম্পর্ক এবং গভীর শ্রদ্ধাবোধ তারা তাদেরকেই বিশ্ব রাসূল সা.-এর উপযুক্ত উত্তরসুরী হিসেবে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে থাকে আর বাস্তবও তাই। সুতরাং মাদরাসা এবং ওলমাদের প্রতি জঙ্গী এবং মৌলবাদের মত ন্যাক্কারজনক অপবাদ আখ্যা জনমনে আতংকের জন্ম দেয়।
২. ফাতওয়ার বিষয়টি ধর্মীয় ব্যাপার অথচ এ নিয়ে সারাদেশে দীর্ঘদিন যাবত ধর্মীয় ব্যক্তিদের সাথে বরং সমস্ত মুসলমানদের সাথে অহেতুক চরম বিরোধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফাতওয়া নিষেধকরণ আইনের প্রতিবাদে সারা দেশে আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে এবং অনেক আলেম ওলামাদেরকে গ্রেফতার করা হয় এবং অনেকেরই রক্ত ঝরে দীর্ঘদিন পরে হলেও সরকার আলেম উলামাদের পরামর্শের পর ফাতওয়া নিষেধ করণ আইন বাতিল ঘোষণা করেছে। অথচ অনেক পূর্বেই এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে পরিস্থিতির এতো অবনতি হতো না, ফাতওয়া নিষেদ করা কেবল ওলমাদের অধিকারের উপরই হস্তক্ষেপ নই বরং সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ এবং ইসলামের বিধানের উপর হস্তক্ষেপের শামিল। এমতাবস্থায় সাভাবিক কারণেই মুসলমানদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়।
৩. অমুসলিম দেশসমূহে মুসলমানদের সাথে যে ধরনের অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে তা কারো অজানা নেই, বিশেষ করে ভ্রমণকারী মুসলমানদের সাথে এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশনে তল্লাশীর নামে হয়রানী করা হচ্ছে, বিশেষ করে টুপী দাড়ী ওয়ালাদের সাথে আচরণে তাদের অন্তরে ইসলাম এবং মুসলমানদের প্রতি চরম ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান বাংলাদেশের যমীনেও তাদের এজেণ্ডা বাস্তবায়নে স্বার্থবাদী একটি দল তৎপর রয়েছে, যারা কুকুরের মাথায় টুপী পরায় এবং কুকুরের থুতনিতে দাড়ী ধারন করে মুসলমানদের এবং ইসলামী হুকুম আহকামের ব্যাপারে ধৃষ্টতা দেখায় উপহাস করে থাকে, টুপী-দাড়ী রাসূল সা.এর অবর্জনীয় সুন্নত এবং ইসলামের প্রতীক, রাসূলের এই সুন্নতের সাথে তাদের পশুসুলভ আচরণ মুসলমানদেরকে উস্কানী দেয়া এবং উত্তেজিত করা তোলার দুঃখজনক ষড়যন্ত্র বই আর কী হতে পারে?
৪. অমুসলিমদের কুরআন বিদ্বেষ কোন নতুন কথা নয়, অমুসলিমরা লক্ষ লক্ষ পবিত্র কুরআন ইসলামী কিতাবাদি বই পুস্তক পোড়ানো, অগণিত মাদরাসা মসজিদ ধক্ষংসের মাধ্যমে তাদের অন্তরনিহিত ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছে, কিছুদিন পূর্বেও পবিত্র কুরআন পোড়ার মাধ্যমে তারা টুইন টাওয়ার দিবস পালন করেছে। পবিত্র কুরআন অবমাননা করে মুসলমানদেরকে উত্তেজিত করা এবং উস্কানী দেয়ার এহেন কোন ঘৃণ্য কর্মকান্ড নেই যা তারা করে না। এমন কি কুরআন শরীফের উপর পা রেখে ডাস্টবিনে, পায়খানায় নিক্ষেপ করেও তারা স্বীয় অসভ্যতার পরিচয় দিয়েছে, কিন্তু এহেন কর্মকাণ্ড কী বাংলাদেশেও সংঘটিত হতে পারে? আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশের মাটিতেও যে দেশ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশেও? যে দেশের সরকার প্রধানমন্ত্রী, এবং পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য মুসলিম? ভাবতেও শরীর শিহরিয়ে উঠে। কিন্তু এ ধরনের মানবতা বিরোধী জঘন্য কর্মকাণ্ড বন্ধের এবং শাস্তি বিধান কার্যকরণের কোন ব্যবস্থা চুড়ান্ত করা হয়েছে কী, এমতাবস্থায় যদি কেও বলে যে এহেন কর্মকাণ্ড দেশকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঠেলে দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র, তা অস্বীকার করা যায় কী?
৫. বৃটিশ বেনিয়ারা অন্যায়ভাবে বহুকাল ভারতবর্ষে স্বীয় আধিপত্য কায়েম করে শাসন করেছে। তাদের জুলম নির্যাতন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলন মূলত: মুসলমানগনই করেছে, বালাকোটের ময়দানে সায়্যেদ আহমদ বেরলভী রহ. এবং শহীদ ইসমাইল রহ. দশ হাজার ওলামা মাশায়েখ সহ লক্ষ লক্ষ নরনারী মুসলমান শহীদদের রক্তাক্ত ইতিহাস এরই সাক্ষর বহন করে অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে তারা এই দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যে তারা ইতিমধ্যে তাদের শিক্ষা দীক্ষা কৃষ্টি সভ্যতার শিকড় সুদৃঢ় করে ফেলেছে। তাদের উক্তি “আমরা চলে যাচ্ছি বটে, তবে আমরা এতটুকু করতে সক্ষম হয়েছি, ভারত বর্ষের মুসলমানগণ নামে এবং দেখতে দেখা যাবে মুসলমান কিন্তু শিক্ষা দীক্ষা কর্মকাণ্ডে এবং সভ্যতার দিক দিয়ে হবে খৃষ্টান এবং অমুসলিম।” এই উক্তির আলোকে প্রমাণিত হয় যে-
ক. তাদের মূলশত্র“তা মুসলমান এবং ইসলামের সাথে মুসলমানদেরকে তারা তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য দায়ি মনে করে।
খ. তারা মুসলমানদের শিক্ষা দীক্ষা আমল আখলাক বিধক্ষংস করে অমুসলিম শিক্ষা দীক্ষা কালচার অব্যহত থাকার মজবুত ব্যবস্থা করে নিয়েছে। বাস্তবে গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে, পর্যায়ক্রমে তারই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়ে চলেছে, ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন সবক্ষেত্রেই অমুসলিম খৃষ্টান ইয়াহুদী ও পশ্চিমাদের প্রভাব এবং আধিপত্য বিস্তার হয়ে চলেছে। আমাদের দেশের অবস্থাও ভিন্ন নয়, স্বাধীনতার পরও পাশ্চাত্য শিক্ষা সংস্কৃতি থেকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বতন্ত্র সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি, বরং আলিয়া মাদরাসা সমূহের শিক্ষা সিলেবাসে পরিবর্তনের মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষাকে সীমিত করা হয়েছে। বর্তমান শিক্ষানীতিতে ইসলামী শিক্ষা কেবল সংকোচিত করা হয়নি বরং তিনটি বিষয় এমন ধরনের সংশোধন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষা সংস্কৃতি একক অবস্থান অর্জনের পথ সুগম হবে এবং ইসলামী শিক্ষা সমূলে ধ্বংস হবে যথা (১) বর্তমান শিক্ষানীতি সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থার রনকৌশল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে বলে শিক্ষানীতিতে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে তীব্র প্রতিবাদের মুখে কিছু শব্দ বাদ দেয়া হলেও সিলেবাসে অর্থবোধক কোন পরিবর্তন সূচিত হয়নি। (২) বাইবেলের আলোকে বিশ্বসমস্যার সমাধানের কথা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার সাথে সরকারী মহলের সাথে কথাবার্তার সময় তারা বলেছেন : আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ এখানে ইসলাম, হিন্দু খৃষ্টান এবং বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে, বাইবেলের আলোকে সমাধান কেবল খৃষ্টানদের বেলায় প্রযোজ্য সুতরাং এ ব্যাপারে বিরোধিতা বা প্রশ্ন সংবিধান সম্মত নয়। আমি বলেছি যে, প্রথম কথা হলো যে শিক্ষানীতিতে এমন কোন দিক নির্দেশনা নেই যার মাধ্যমে এই বিশেষত্ব প্রতীয়মান হয়। সুতরাং বিষয়টি পরিষ্কার ভাবে শিক্ষা নীতিতে সংযোজন করা প্রয়োজন, দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, যে তাহলে অন্যান্য ধর্মীয় কিতাবের স্বধর্মের খাতে উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করা হয়নি কেন, বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের ধর্মীয় উৎস কুরআন সুন্নাহের কথা উল্লেখ হয়নি কেন? তারা এই প্রশ্নটিকে যৌক্তিক মনে করে পরিবর্তন অথবা সংযোজনের আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু পরবর্তি সংশোধিত শিক্ষানীতিতে কেবল বাইবেলের আলোকে শব্দটি বাদ পরেছে আর কোন পরিবর্তন সাধিত হয়নি এবং মুসলমানের বেলায় পবিত্র কুরআন সুন্নাহ কে সংযোজন করা হয়নি। অনেক কেই বলতে শুনেছি যে, বর্তমান শিক্ষানীতিকে সকল ধর্মাবলম্বী নাগরিকগণই স্বাগত জানিয়েছে এবং যুগোপযোগী বলে মন্তব্য করেছে, কেবল মাত্র মুসলমান এবং মুসলমানদের উলামা মাশায়েখদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ অথবা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, যা গনতান্ত্রিক পন্থার পরিপন্থি। আমি বলবো বর্তমান জগতে প্রচলিত গনতন্ত্র হচ্ছে আধিপত্যবাদিদের নিরীহদের উপর নির্যাতন এবং অধিকার হরনের এবং রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের ভয়ংকর অস্ত্র। অন্যথায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় ও শিক্ষাগত অধিকার উপেক্ষার জন্য গনতন্ত্রের অস্ত্র বিপরীতমুখী হলো কী করে? তা ছাড়া অমুসলিমদের শিক্ষা কালচার এবং মুসলমানদের শিক্ষা কালচারের মধ্যে রাত দিনের পার্থক্যও রয়েছে।
১. মুসলমানদের শিক্ষাকালচার পরিপূর্ণ কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক এবং খোদায়ী ব্যবস্থা যা বিশ্ব রাসূল সা. কর্তৃক প্রণিত ও প্রবর্তিত ও অব্যাহত, যেখানে মৌলিকভাবে পরিবর্তন ও পরিবর্তনের অথবা রচিত কোন অসমর্থিত বিষয় সংযোজনের অবকাশ নেই।
২. ইসলামী শিক্ষা বিষয়বস্তু কেবল বস্তু এবং নশ্বর পৃথিবী ভিত্তিক নয়, বরং তাদের শিক্ষা দীক্ষা বস্তু শিক্ষার সাথে সাথে আখেরাতের বিষয় সমূহ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচিত হয়। পক্ষান্তরে ইসলাম এবং মুসলমানদেরকে বাদ দিলে অমুসলিদদের শিক্ষা দীক্ষায় আখেরাতের কোন গুরুত্বই নেই বরং নাস্তিকসহ অনেক ধর্মে আখেরাতের বিশ্বাস কেবল কাল্পনিক অবাস্তব বিষয়রূপে পরিগণিত হয়।
এধরনের নাস্তিক বিশ্বাস-সমর্থিত একক শিক্ষানীতি বাধ্যতামূলক চালু করা হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের গণতান্ত্রিক এবং ধর্মীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে কী করে? মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষা, ঈমান, আমল, আখলাক-চরিত্র, কৃষ্টি-সভ্যতা-সংস্কৃতি, আখেরাতের অনুশীলন এবং সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা লাভ হবে কীভাবে? ইশতেহারে উল্লেখিত মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হওয়ার উপায় হবে কীরূপে? যদি মুসলমানদের মনে হয় যে, মূলত এই নাস্তিক মতামত-ভিত্তিক শিক্ষা নীতির মাধ্যমে ইসলাম এবং মুসলমানদেরকে ধক্ষংস করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কার্যকরকরণের পথ সুগম করা হচ্ছে, তাহলে তাদের এরূপ ধারণাকে ভিত্তিহীন বলে নির্যাতন-নিপীড়ন নীতির মাধ্যমে সংঘাতের পথ বন্ধ করা সম্ভব হবে কি? না কি মুসলমানদেরকে উস্কে দিয়ে এবং তাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক স্বার্থ এবং অভিলাষ পূরণ করা যাবে? এসব ভাবতেও শরীর শিউরিয়ে ওঠে।
অমুসলিমদের ধর্মকর্ম মুসলমানদের মত নয়! অমুসলিম শিক্ষা সংস্কৃতিতে পাপ পুন্যের ভেদাভেদ নেই। ‘নারীর ক্ষমতায়ন’, তাদেরই রাজনৈতিক একটি পরিভাষা। এ অর্থে পর্দা, সহশিক্ষা, ললিতকলার নামে গানবাদ্য, নাট্যানুষ্ঠান, মদ্যপান, বেহায়া বেলাল্লাপনা কোনো কিছুই অসঙ্গত নয়। এমন কি ফ্রী-সেক্স, সমকামিতার মতো মানবতা বিবর্জিত কর্মকাণ্ড তাদের নিকট বর্তমান আধুনিক সময়ে মানবাধিকার এবং সভ্যতার প্রতীক। পক্ষান্তরে উপরোক্ত সবকিছুই ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতির আলোকে কেবল ইসলাম বিরোধীই নয় বরং অত্যন্ত জঘন্য, মানব সভ্যতা বিরোধী, ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্কজনক এবং ধক্ষংসের কারণ। সুতরাং এরূপ একক শিক্ষানীতি মুসলমানগণ কীরূপে মেনে নিবে? যারা এটা বাস্তবায়নের মত পোষণ করেন তারা কি এবিষয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন বোধ করেন না?
অনেককে বলতে শোনা যায় যে, এই শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হলে ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে বাধা কোথায়? কেননা এই শিক্ষানীতিতে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তাছাড়া একজন ছাত্র মাদরাসা শিক্ষার সাথে সাথে বস্তু ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্বনির্ভর হতে পারবে এবং পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পাবে, বেকারত্বের সমস্যার সমাধান হবে এবং কলেজ ইউনিভার্সিটির পড়ুয়াদের কাতারে দাঁড়াতে সক্ষম হবে, সুতরাং এর বিরোধিতার কোন যুক্তিসংগত কারণ নেই। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় আমি ভিন্ন প্রবন্ধ লিখেছি, এখানে কেবল বলতে চাই।
(ক) বর্তমান শিক্ষানীতিতে ইসলামী শিক্ষাকে সংকুচিত করা হয়েছে। একক এবং বাধ্যতামূলক হওয়ার কারণে এবং ইসলামী বিষয়াদি স্বল্প এবং ঐচ্ছিক হওয়ার কারণে শিক্ষিতের হার মারাত্মকভাবে কমে যাবে।
(খ) কুরআন শুদ্ধ করে পড়া, নাজেরা পড়া, হিফজ অর্থাৎ কুরআন মুখস্থ করা অসম্ভব হবে। কারণ আট বৎসরের বাধ্যতামূলক শিক্ষা সিলেবাসের নির্ধারিত বিষয়াদি পড়াশুনার পর পরিশুদ্ধ নাজেরা পড়ার সময় থাকবেনা। তদুপরি বাচ্চাদের জন্য কঠিন হবে। আর কুরআন মুখস্থ করা তো মোটেই সম্ভব হবে না। কেননা কুরআন মুখস্থের সময় ফজরের আযানের এক ঘণ্টা পূর্বে শুরু হয়। শেষ রাতের এই সময় আল্লাহর বিশেষ রহমত নাযিলের সময়, এজন্য সারা দেশে সমস্ত হিফজ খানাসমূহে এই সময় নতুন সবক মুখস্থ করানো সহজ হয় যা অন্য সময় মোটেই সম্ভব হয় না। অতঃপর ফজরের পরও হিফজ পড়া চালু থাকে মধ্যে ১৫/২০ মিনিট নাস্তার সময় দেয়া হয়। ৯টার সময় গোসল সেরে ছাত্রদেরকে ঘুমাতে দেয়া হয়। ১২ টার সময় ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে অজু করে পড়তে বসতে হয়। এই পড়া একটানা আসর পর্যন্ত চালু থাকে। আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ছুটি থাকে। মাগরিব থেকে এশার নামাযের এক ঘণ্টা পর পর্যন্ত পড়া চালু থাকে। এরপর ছাত্রদেরকে শোওয়ানো হয়, এই সময়টুকুতে নামায পড়া ব্যতীত আর কোন পড়াশুনার মোটেই অবকাশ নেই। এই সময় হিফজসংক্রান্ত তাদের মোটামুটি রুটিন নিম্নরূপ :
(ক) নতুন সবক পরিশুদ্ধ করা, মদ্দ-গুন্না তাজভীদ মশক করা।
(খ) নতুন সবক মুখস্থ করা। পিছনের সবক ইয়াদ করা।
(গ) পিছনের এক সপ্তাহের মুখস্থ করা সবক শুনানো।
(ঘ) আমুখতা মাসিক সবক শুনানো।
(ঙ) মোট মুখস্থকৃত পড়া থেকে শুনানো।
সুতরাং বলা যায় যে, মুখস্ত করার জন্য পাঁচটি বিষয় রয়েছে। এর সাথে অন্য বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে যোগ হলে কুরআন মুখস্থ করা মোটেই সম্ভব নয়। সুতরাং যারা বলে থাকেন যে, এই শিক্ষানীতি ইসলামী শিক্ষার জন্য কোনোরূপ বাধা নয়, মনে হয় তাদের মাদরাসা শিক্ষা ও এর সিলেবাস ইত্যাদি সম্পর্কে মোটেই ধারণা নেই। যেমন একজন ইঞ্জিনিয়ারের জন্য ডাক্তারী অথবা ডাক্তারের জন্য ইঞ্জিনিয়ারীর বিষয়ে একসাথে পড়াশুনা কঠিন তেমনি ইসলামী পরিপূর্ণ বিষয়াদির সাথে অন্য বিষয়াদি মোটেই সম্ভব নয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, ইসলামী শিক্ষার বেলায় এই বাস্তব বিষয়টি উপলব্ধি করা হয় না। অবশ্য বস্তুশিক্ষার বেলাই ভালোই উপলব্ধি করা হয় এবং বলা হয় যে, একজন ইঞ্জিনিয়ার অথবা ডাক্তারের জন্য হাফেয, কারী, মুফতী, ফকীহ এবং বড় আলেম হওয়া কী করে সম্ভব হতে পারে? যারা বলে থাকে যে, বস্তু শিক্ষায় শিক্ষিত হলে স্বনির্ভরশীলতা আসবে। বেকারত্ব দূর হবে, তাদের কথার সাথে কোন দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ নেই। কিন্তু উক্ত প্রয়োজনে ইসলামী শিক্ষা যথেষ্ট নয়, এই কথার সাথে একমত হওয়ার অবকাশ কোথায়? যারা বস্তু শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে, বাস্তবে বেকারত্বের সংখ্যা তাদেরই অধিক পক্ষান্তরে যারা ধর্মীয় তথা ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে আল্লাহ পাকের মেহেরবাণীতে তাদের মধ্যে বেকারত্বের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় বলা যায়। তাদের উপার্জনে হারাম উপার্জন নাই, সুদ, ঘুষ, অথবা অন্যের সম্পদ হরণ, বিদেশে পাচারের নজির নাই। এ সমস্ত অপরাধের অপরাধী শতভাগ তারাই যারা নিজেদেরকে লুটপাটের সম্পদের অধিকারী হয়ে স্বনির্ভর বলে থাকে। হ্যাঁ এটা সত্য যে, মাদরাসা শিক্ষিতরা অর্থের লোভ, অপব্যয়, বিনোদন-বিলাসিতা ইত্যাদি ব্যাধিতে আক্রান্ত নয়। তাদের স্ত্রীদেরকে শপিংয়ে নিয়ে যেতে হয় না। তাদের হোটেল এবং ক্লাবের জন্য কোন বাজেট নেই। এ সমস্ত মানবতা বিবর্জিত জঘন্য পাপাচারিতায় নিমজ্জিত লোকেরা যখন বলে যে, মাদরাসার ছাত্রদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে এমনভাবে তৈরী করতে হবে, যাতে তারা কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রদের পাশে প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে পারে; তখন সত্যিই অবাক হতে হয়। মাদরাসার ছাত্রদের মধ্যে ঈমানী-আমলী চেতনা বিদ্যমান রয়েছে, তারা খোদাভীরু হয়। তাদের জীবন অপরাধমুক্ত জীবন, তারা আখেরাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে সবকিছু করে থাকে। সুন্নত ও শরীয়তের কঠোর পাবন্দি করে থাকে। অর্থলোভ, ক্ষমতার অভিলাস তাদের নেই। তাই বরং আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের এমন পাক-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী করে গড়ে তোলা উচিত যাতে তারা মাদরাসার ছাত্রদের পাশে প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে পারে। একজন মুসলমানের চিন্তাভাবনা এমনই হওয়া উচিত কিন্তু আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতিতে এরূপ মনমানসিকতা সৃষ্টির কোন অবকাশ রাখা হয় নাই। এই শিক্ষানীতি অনুসরণকারী ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে-
১. অর্থ ও বস্তু লোভ চরমভাবে বৃদ্ধি পাবে। বৈধ-অবৈধতার বাধ ভেঙ্গে যাবে। ধনী-গরীবের পার্থক্য আরো প্রশস্ত হবে এবং ধনীর জন্য গরীবকে শোষণের পথ সুগম হবে।
২. অহংকারী, ক্ষমতালোভী, ভোগ-বিলাসীর সংখ্যা বাড়বে। দুর্বলের সম্পদ গ্রাস করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।
৩. মহিলা ও দরিদ্র শ্রেণীর অধিকার, তাদের সম্মান-মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হবে। পাশ্চাত্য ধারায় নারীভোগ, নারী-ব্যবসা ও নারী নির্যাতনের হার বৃদ্ধি পাবে।
৪. যুবক-যুবতীদের চারিত্রিক মারাত্মক অধঃপতন ঘটবে। তারা অল্প বয়স থেকে যৌনতা এবং অবৈধ প্রেমপ্রীতির জালে আবদ্ধ হয়ে পুরো পরিবারকে কলংকিত করে ছাড়বে। বেহায়া-বেলাল্লাপনা, খুন-খারাবী ভয়ানক হারে বৃদ্ধি পাবে।
সরকারের বড় দায়িত্ব হচ্ছে যুবক-যুবতীদের চরিত্রের হেফাযত করা। এর জন্য প্রয়োজন, তাদেরকে ধর্মীয় অনুশীলনের প্রতি অনুপ্রাণিত করা এবং ধর্মীয় অনুশীলনের নিরাপদ পরিবেশ তৈরী করা। কেননা ধর্মীয় বিশ্বাস এবং খোদাভীতি ব্যতীত কোনভাবেই তাদেরকে অপরাধমুক্ত করা সম্ভব নয়। অতএব সরকারের কর্তব্য হবেÑ
(ক) তাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে ধীরে ধীরে সহশিক্ষার পথ পরিহার করা। কারণ সহশিক্ষা চালু থাকাবস্থায়, যুবক-যুবতীদের অবাধ মেলামেশার অনুমতি থাকাবস্থায় তাদের চারিত্রিক অধঃপতন রোধ করা কিছুতেই সম্ভব নয়।
(খ) তাদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে বাধ্যতামূলক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং আক্বীদা-বিশ্বাস ও আমল-আখলাক পরিশোধনের পথ সুগম করা।
(গ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য মহিলাদের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে যে, যুবক-যুবতীদের অবাধ মেলামেশার পশ্চিমা সভ্যতাকে জারি রেখে যে কোন কর্মসূচীই গ্রহণ করা হোক না কেন তা অতীতের মতই অকার্যকর সাব্যস্ত হবে।
টিভি, ভিসিআরসহ অত্যাধুনিক প্রচার মাধ্যমসমূহ নগ্নতা-বেহায়াপনা আর যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বিষয়ে ভরপুর। এসব কিছু জাতীয় ঐতিহ্য এবং মানব সভ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এ সমস্ত প্রচার মাধ্যমে এমন এমন ভিত্তিহীন ঘটনাবলি এবং চিত্রপ্রদর্শন করা হয়, যার মাধ্যমে সাধারণ জনতার মনে ইসলাম ও মুসলমানের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি হয়। সিনেমা-নাটকে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী, জঙ্গী হিসেবে তুলে ধরা হয়। গডফাদার ও সন্ত্রাসীদের মাথায় টুপী পাগড়ী পরিয়ে তাদের দ্বারা চুরি, ডাকাতি-রাহাজানী ছিনতাই-এর অভিনয় করানো হয়। ইসলামের আদর্শ, শিক্ষা-সংস্কৃতিকে বিকৃতভাবে দেখানো হয়। এর মাধ্যমে মুসলিম সেন্টিমেন্টালে আঘাত আনা হয়। পরস্পর অনাস্থা এবং দাঙ্গা হাঙ্গামা ও সাম্প্রদায়িকতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। এ ধরনের উস্কানীমূলক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সিনেমার প্রচার প্রসার বন্ধের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যকীয়। অন্যথায় সরকার যে মুসলমানদের সমর্থন এবং আস্থা হারাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
এনজিওরা মুসলমানদের শিশু ও বালক-বালিকাদেরকে সাহায্যের নামে কলাকৌশলে ধর্মান্তরিত করে যাচ্ছে অন্যায়ভাবে। মুসলমানদের জন্য তাদের ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে বালক বালিকাদের স্বতন্ত্র শিক্ষার অবকাশ জাতীয় শিক্ষা নীতিমালায় রাখা হয়নি। কিন্তু অমুসলিমদের বেলায় স্বতন্ত্র শিক্ষা-সংস্কৃতির অবকাশ সুনিশ্চিত করা হয়েছে। বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের প্রতি এ ধরনের আচরণকে মানবাধিকার অথবা গণতন্ত্র পরিপন্থি বলে মনে করা হয় না। এহেন অসম ব্যবস্থাপনা কোনক্রমেই ন্যায়সংগত হতে পারে না। এতে করে মুসলমানদের মধ্যে দুঃখ বেদনা এবং ক্ষোভ বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। অবাক লাগে যে, কোন অমুসলিম যদি স্বইচ্ছায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে কোন মুসলমানের কাছে আশ্রয় নেয়, তখন ইসলাম গ্রহণ কারী যার আশ্রয় নেয় এবং যার নিকট কালিমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করে তাদের সকলেই দোষী হয়। এমনকি, এফিডেভিট করা সত্ত্বেও দোষী সাব্যস্ত হয়, অথচ এনজিওরা যাদেরকে ধর্মান্তরিত করছে তাদের বেলায় কোন ধরনের বিধি-বিধান আছে বলে মনে হয় না, অমুসলিম এলাকার মধ্যে খৃষ্টান মিশনারীদের অভিযান অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও ইসলামের দাওয়াত ও তাবলীগের বেলায় বিভিন্ন অজুহাত সৃষ্টি করে দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা হয়। যা খুবই বেদনাদায়ক।
রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাস দমনের প্রয়োজনে অভিযান চালানো হয় এবং এটা রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার জন্য অত্যাবশকীয়। এ বিষয়ে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। সমগ্র পৃথিবীর মত আমাদের দেশেও বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীরা তাদের বিভিন্ন স্বার্থ হাসিলের প্রয়োজনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আসছে। কেবল সরকার চেষ্টা করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে মোটেই সক্ষম হবে না বরং এর জন্য দেশের সর্বশ্রেণীর নাগরিককেই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে ইসলামের ভূমিকা পরিষ্কার। ইসলাম কোন ধরনের সন্ত্রাস এবং হত্যাকাণ্ডের স্বীকৃতি দেয় না। এ সমস্ত ব্যাপারে ইসলামের কঠোর বিধিবিধানের বিষয় সর্বজন স্বীকৃত। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে-
(ক) এমনভাবে প্রোপাগাণ্ডা করা হয় যে, সন্ত্রাসী ও জঙ্গী বলতে আলেম-উলামা ও মাদরাসার ছাত্র এবং ইসলামের কর্মকাণ্ড নিয়ে যারা কথা বলে, কাজ করে তাদেও যেন কালারিং করা যায়। দেশে সিরিজ বোমাবাজির মত ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য আলেম-উলামা এবং মাদরাসার ছাত্রদেরকে দায়ী করা হয়েছে, তাদরেকে গ্রেফতার করেছে। নির্যাতন করা হয়েছে, মাদরাসামূহেও অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তারা সকলেই নির্দোষ সাব্যস্ত হয়েছে। অনেক মাদরাসার নাম ব্যবহার করা হয়েছে, পরবর্তীতে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তারা মাদরাসার ছাত্র নয়। অথচ সরকারের উপরস্থ লোকেরা বলে থাকে, মাদারাসাগুলো হচ্ছে জঙ্গী-সন্ত্রাসীর জন্মস্থান। অনেক সময় পত্রপত্রিকায় বলা হয়, সন্ত্রাসী-জঙ্গী ধরা পড়েছে, তাদের নিকট প্রচুর অস্ত্র পাওয়া গেছে এবং প্রচুর ইসলামী জেহাদী বই পুস্তক পাওয়া গেছে।
(খ) অস্ত্র পাওয়া যাওয়ার ঘটনা কোন নতুন বিষয় নয়, প্রায় প্রতিদিনই অস্ত্র পাওয়া যায়। সন্ত্রাসী ধরা পড়ে, এমনকি কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রদের অস্ত্রবাজী স্বাভাবিক ব্যাপার। হলসমূহে অভিযান চালালে অস্ত্রসহ আটকের ঘটনার কোন সীমা থাকে না। কিন্তু তাদেরকে সন্ত্রাসী অথবা জঙ্গী বলা হয় না, সন্ত্রাসীদের হাতে জেহাদী বই পাওয়া গিয়েছে বলে ঢাকঢোল পেটানোর কারণ এ ছাড়া আর কী হতে পারে যে, ইসলামী জেহাদকে সন্ত্রাস হিসেবে চিিহ্নত করা? অথচ কে না জানে যে, জেহাদ এবং প্রচলিত জঙ্গীবাদ এক নয়, ইসলামে সন্ত্রাসের মোটেই স্থান নেই। ইয়াহুদী-খৃষ্টানসহ অমুসলিম চক্র ইসলাম এবং মুসলমানদেরকে জঙ্গী এবং সন্ত্রাসী বলে সমস্ত মুসলিম দেশসমূহে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কোন মুসলিম দেশ কিংবা দেশে মুসলমানগণ শান্তিতে ও সম্মানের সাথে নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারছে না। তারা চায়, ইসলাম এবং মুসলমানকে চিরতরে খতম করে দিতে। এমতাবস্থায় আমাদের দেশে যারা এহেন কর্মকাণ্ড করে থাকে, যদি তাদেরকে পশ্চিমাদের দালাল বলা হয়, তারা পশ্চিমাদের এজেণ্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত রয়েছে বলে মনে করা হয়, তাহলে তা কোন্ যুক্তিতে অবান্তর হবে?
ইসলামী জেহাদের জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে-
(ক) মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের অথবা তার মনোনীত আমীরের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয়শক্তির সমর্থনে জেহাদ হবে।
(খ) কাফেরদেরকে প্রথমে দ্বীনের দাওয়াত দিবে যদি গ্রহণ করে তাহলে জেহাদ নেই।
(ঘ) সম্মত না হলে কর আদায় করে মুসলিম রাষ্ট্রের অধীনে থাকতে হবে। সম্মত হলে তাদের সাথে জেহাদ নেই।
(ঙ) তাতেও সম্মত না হলে অমুসলিমদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে জেহাদের অনুমতি আছে। কিন্তু সেখানেও শরীয়ত নির্দেশিত যথাযথ বিধি-বিধান অনুসরণ শর্ত। যথাÑ
(১) কেবল এ’লায়ে কালিমাতুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর বিধানের প্রাধান্য বিস্তারের জন্য জেহাদ করা যায়। যদি উদ্দেশ্য ক্ষমতা দখল অথবা অর্থসম্পদ কিংবা বস্তুসার্থ উদ্ধারের জন্য হয়, স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য হয়, তাহলে একে জেহাদ বলে না।
(২) নিরীহ নারী, শিশু, রোগী বৃদ্ধ ও বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা করা ও তাদেরকে হত্যা বা হয়রানি করার অনুমতি নেই।
(৩) এ ধরনের শর্তাবলীর মাধ্যমে ইসলামে জেহাদের অনুমতি আছে। এটা ইসলাম ও মুসলমানের ধর্ম আদর্শ এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে বৈধ করা হয়েছে। এর সাথে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোন ধরনের সম্পর্ক নেই। স্বীয় আদর্শ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে যেমন পৃথিবীর অন্যান্য জাতি যুদ্ধ করে থাকে, যেরকম তারা তাদের জাগতিক এবং ধর্মীয় স্বার্থে যুদ্ধকে অপরিহার্য মনে করে থাকে মুসলমানরাও তাদের ধর্মীয় স্বার্থে জীবন বিলিয়ে দিতে জেহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মুসলমান জাতি তাদের জাগতিক প্রয়োজনে এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের খাতিরে জেহাদের অধিকার রাখে। অথচ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পূজারি পশ্চিমা গোষ্ঠি অপপ্রচার ও প্রোপাগাণ্ডার মাধ্যমে মুসলিম সৈনিক এবং মুজাহিদদেরকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করে কলংকিত করতে চায়। সে কারণে উত্তেজনার পরিবেশ তৈরী হয়ে চলেছে।
জেহাদী বই-পুস্তক
অবাক লাগে যে, কোন সন্ত্রাসী ধরা পড়লে বলা হয়, তার কাছে অস্ত্র পাওয়া গেছে এবং প্রচুর জেহাদী বই-পুস্তক পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় বাক্যটি যোগ করার পিছনে রহস্য কি? যারা জিহাদী বই-পুস্তক পড়া-শুনা করে, যাদের নিকট জিহাদী বই-পুস্তক থাকে এবং যাদের নিকটই জিহাদী বই-পুস্তক পাওয়া যাবে তারা সকলেই সন্ত্রাসী এবং জঙ্গী? সন্ত্রাসীর নিকট অস্ত্র পাওয়া যাওয়া অবশ্যই মারাত্মক অপরাধ। সুতরাং এর যথাযথ বিচার হওয়া উচিত, তা যার নিকটই পাওয়া যাক। সে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক হোক অথবা কলেজ-ভার্সিটির ছাত্র-শিক্ষক হোক। শুধু তাই না, সন্ত্রাসীদের নিকট অস্ত্র-সস্ত্র পৌছল কি করে, কাদের সহযোগিতায় অস্ত্র পেয়ে থাকে, কারা তাদেরকে কী উদ্দেশ্যে অস্ত্র-সস্ত্র সরবরাহ করে থাকে তাদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করা উচিত। তারা কেবল সন্ত্রাসীই নয়, বরং জাতি এবং মানবতার শত্রু। এদেরকে চিহ্নিত করা এবং গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি প্রদান করা সরকারের বড় দায়িত্ব। এর জন্য রয়েছে সরকারের এন,এস, আইসহ বহু ধরণের সংস্থা। প্রশ্ন হচ্ছে, যারা জিহাদী বই-পুস্তক সঙ্গে রাখে, যাদের নিকট জিহাদী বই-পুস্তক পাওয়া যায় তারা সন্ত্রাসী? জিহাদ অর্থই সন্ত্রাস? এছাড়া এই বাক্য উচ্চারণ এবং যোগ করার আর কি উদ্দেশ্য হতে পারে? পবিত্র কুরআনের পাতায় পাতায় মুসলমানদেরকে জিহাদের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। জিহাদের জন্য রয়েছে সঠিক-সুন্দর দিক-নির্দেশনা। বিশ্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য বাণীতে জিহাদের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন এবং স্বয়ং নিজেও জিহাদ করেছেন। তাহলে যার নিকটই পবিত্র কুরআন এবং হাদীস পাওয়া যাবে,যারাই বিশ্ব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর অনুকরণে জিহাদে ব্রতী হবে তারা সকলেই সন্ত্রাসী? এই জন্যই পশ্চিামারা পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত বাদ দিয়ে মনগড়া কুরআন প্রচারের পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হয়েছে। এই জন্যই তারা মুসলমানদেরকে বিশ্বের নিকট সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচার-প্রোপাগাণ্ডা করে চলেছে এবং একই অজুহাত দেখিয়ে তারা সমগ্র মুসলিম বিশ্বে নগ্নভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। সুতরাং কোন মুসলমানের জন্য এধরনের উক্তি করা এবং সহ্য করা আদৌ কি সম্ভব? এহেন কথা-বাতা ও আচরণ মুসলমানদেরকে উসকানী দেওয়া এবং উত্তেজিত করার শামিল নয় কি? এতে সম্প্রীতির পথ সুগম হবে নাকি দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদেরকে সম্প্রদায়িকতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে?দেশের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষ বিবেচনার প্রয়োজনবোধ করেন কি?
নারী সমস্যা
নারী-পুরুষ,যুবক-যুবতীদের অবাধ মেলামেশার কারণে সামাজিক, মানবিক এবং পারিপার্শিক চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। যুবক-যুবতীদের চারিত্রিক অধ:পতন কোন ক্রমেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, ক্লাব, রেস্তোরা, হোটেল ইত্যাদি স্থানে যৌন হয়রানি,ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যাসহ নানা ধরনের ভয়াবহ ঘটনা অহরহ ঘটছে। কেবল ছাত্র-ছাত্রী নয় বরং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাধ্যমেও এসব ন্যাক্কার জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। সরকার এহেন অবস্থার পরিশোধনে ‘ইভটিজিং প্রতিরোধ’ নামে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু নারী সমঅধিকার, নারী ক্ষমতায়ণের কর্মসূচির পরিণামে হিতে বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। যারা নারী সমস্যার সমাধানে কর্মরত রয়েছেন তাদের অনেকেই নারী সমস্যার সমাধানে আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-বিধানকে কেবল যুগ-উপযোগী নয় বলে মশকরা করেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না বরং চরমভাবে কটাক্ষ করে চলেছেন। তাদের উদ্দেশ্য কি তা সুস্পষ্ট বোঝা যায়না । তবে ইয়াহুদী, খৃস্টান এবং নাস্তিকদের নীতিমালা এবং ইতিহাস থেকে মনে হয় যে, তারা নারীদেরকে পূর্বের মতই ভোগের পণ্যে পরিণত করতে চায়। এটাই তাদের পূর্বসূরীদের ইতিহাস।
হিন্দু ধর্মে নারী
হিন্দু ধর্মকে প্রাচীনতম ধর্ম বলা হয়। এই ধর্মেও নারীদের কোন ধরনের অধিকার নির্ধারণ করা হয় নাই। ভারতের ধর্মীয় আইন রচিয়তা মনুর মতে,
(ক) নারী অপ্রাপ্ত বয়স্কা- প্রাপ্ত বয়স্কা যা হোক না কেন স্বাধীন যেন না হয়। কুরবাণী এবং ব্রত পালন করা নারীর জন্য মহাপাপ। (মনু স্মৃতী ৫, ১৪৫পৃঃ)
(খ) প্রাচীন হিন্দু আইনে বলা হয়েছে রোগ, মহামারি, অগ্নী, মৃত্যুবিষ ইত্যাদি নারী অপেক্ষা উত্তম।
(গ) এই ধর্মে পৈর্তৃক নিকটাত্মীয়ের সম্পদের নারীর কোন অধিকার নাই। এমনকি তাদেরকে শিক্ষার কোন অধীকার ও সুযোগ দেওয়া হত না। ১৮৭৭ সালে কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ে হিন্দু ছাত্রী ভর্তি হতে পারবে কি না এ বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়।
(ঘ) কিছু কাল পূর্বেও হিন্দু ধর্ম মতে দেবতাদের সন্তুষ্টির জন্য নারীকে মন্দিরের বেদিতে বলি দেওয়ার বিধান চালু ছিল।
(ঙ) হিন্দু ধর্মে স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রীকে জ্বলশত্র“ চিতায় দ্বগ্ধ করে সতীদাহ পালন করা হত। এধরনের অনেক অযোক্তিক হিন্দু ধর্মে রয়েছে।
গ্রীক সভ্যতায় নারী
গ্রীক সভ্যতায় নারীদের জন্য কোন ধরনের অধীকার নির্দিষ্ট করা নেই। প্রখ্যাত গ্রীক চিশত্রুাবিদ বেবেস্তিন বলেছেন ,
(ক) আমরা যৌন তৃপ্তির জন্য বেশ্যালয়ে যাই। আর সশত্রুান গ্রহণের জন্য স্ত্রী গ্রহণ করি।
(খ) বিশিষ্ট চিশত্র“াবিদ সক্রেটিস বলেন , গ্রীকরা দেবতার সম্মুখে গিয়ে অনুশোচনা করত যে, একই সূর্যের নিচে পুরুষের সাথে নারীকে দেওয়া হল কেন? নারীর চেয়ে দুনিয়ায় আর কোন নিকৃষ্ট বস্তু নাই।
(গ) রোমান গ্রীক সভ্যতায় নারীকে সমাজের দুঃখ-দুর্দশার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মোট কথা গ্রীক সভ্যতায় নারী হচ্ছে কেবল পুরুষের ভোগ্য পণ্য। এর অধিক কোন অধিকার, ক্ষমতা নারীদের নাই।
বৌদ্ধ ধর্মে নারী
কেবল বুদ্ধের উপদেশ বাণী ও চিশত্রুা ধারনাই হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মের মূলসূত্র। এই ধর্মে আল্লাহ অথবা শাশ্বত সত্তা বলতে কোন কিছু নাই। নারী অধিকার, নারী মর্যাদার কোন বিধান বৌদ্ধ ধর্মে নাই।
(ক) জাপানী বৌদ্ধ সমাজে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে এবং মন্দিরে নারীদের প্রবেশ করার মোটেই অনুমতি নাই।
(খ) গৌতম বুদ্ধের মতে, নারীর সাথে বসবাস করা মহাপাপ। নারীর ক্ষেত্রে বসবাসকারী পুরুষ পরকালে মুক্তি পাবে না।
(গ) গৌতম বুদ্ধের মতে, নারীর সাথে বসবাস করার অর্থ হচ্ছে বাঘের মুখে চলে যাওয়া অথবা জল্লাদের ছুরির নিচে মাথা পেতে দেওয়া।
ইয়াহুদী ধর্মে নারী
যারা ইয়াহুদী ধর্ম অবলম্বন করে থাকে তারা সবাই এক স্তরের নয়। ইয়াহুদিদের একাত্তরটি দলের মধ্যে চারটি দল অধিক প্রসিদ্ধ। তাদের মতে, নারীদের অধিকার ও ক্ষমতা বলতে কোন কিছু নাই। ইয়াহুদি ধর্ম গ্রন্থ নিয়ে তাদের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে।
(ক) তাদের অধিক স্বীকৃত ধর্মগ্রন্থ মুকাদ্দামে বলা হয়েছে , সে কে? যে নাপাক থেকে পাক বের করবে?
কেউ নাই। (আইউব অধ্যায় ১৪ পৃঃ)
(খ) তাদের মতে, নারীরা নাপাক। নারীর সত্তার মধ্যে সত্যবাদিতা নাই। মোট কথা নারীর সমানাধিকার, নারীর মর্যাদার নামে তাদের “সিডিও” ও “নারী সনদ” ইত্যাদি কেবল ভুয়া কথা-বার্তা ব্যতিত অন্য কিছু নয়। এই ভাবে প্রকৃত পক্ষে এসব ইসলামী বিধি-বিধানের বিপক্ষে ষড়যন্ত্র কার্যকর করার পরিকল্পনা মাত্র।
খৃস্টান ধর্মে নারী
বর্তমান বিশ্বে নারীর সমঅধিকার রক্ষায় সর্বাধিক উৎসাহী খৃস্টানদেরকে দেখা যায়। অথচ এক সময়ে তারা
(ক) নারী জাতিকে শয়তানের যন্ত্র, বিষধর সাপ এবং বিষাক্ত ভুলতার সাথে তুলনা করত।
(খ) বিশ্বকোষ ব্রিটানিকায় (৯০৯ পৃঃ) বলা হয়েছে , খৃস্টান ধর্মে নারীদের কোন ধরনের অধিকার মোটেই নাই। বরং নারীদেরকে প্রলুব্ধকারিনী শয়তান হিসেবে অবিহিত করা হয়েছে।
(গ) ইউরোপীয় খৃস্টান দেশগুলোতে ১৮৭৮ সালের প্রথম দিক পর্যশত্রু নারীদেরকে লেখা-পড়ার নূণ্যতম অধিকার টুকু দেওয়া হয় নাই। নারী কেবল ভোগের পণ্যের স্বাধীনতাই লাভ করেছে। বর্তমান খৃস্টান বিশ্বসহ সমস্ত অমুসলিম বিশ্বে নারী সমানাধিকার, নারীর জাতীয় মর্যাদার কথা বলা হলেও মূলত নারী ভোগের ব্যবস্থাপনাই সুসংহত করা হচ্ছে। পাশ্চাত্য বিশ্বের ফ্রি সেক্স, সমকামিতা এবং যৌনস্বাদ আস্বাদনের নগ্নতা পরিদর্শকের চোখে এই ভয়াবহ অবস্থা গোচরে থাকার কথা নয়। একারণেই পাশ্চাত্যের অনেক গবেষকদেরকে নারী সমস্যা এবং যুবক-যুবতীদের অধ:পতনের অভিযোগ করতে শোনা যায়। তাদের মতে ইসলামের নারীনীতি কার্যকর করা ব্যতীত এই সমস্যা সমাধানের কোন পথ নাই। এটাই বাস্তবতা।