সরকারের পলিসি : আমাদের করণীয় (পর্ব৩)
লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ মঙ্গলবার, জানুয়ারি ৩, ২০১২ (১:৪৫ অপরাহ্ণ)
মহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান
মদীনার রাষ্ট্র কি ঐতিহাসিক এক্সিডেন্ট ?
প্রবন্ধকার মদীনায় বিশ্ব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামের প্রথম রাষ্ট্রকে “এ্যকসিডেন্ট” বলে বিশ্বাস করে। তার অনুসন্ধানে কেবল রয়েছে মদীনার সংবিধানের ২৫ নং অনুচ্ছেদ।
প্রত্যেককে স্বীয় ধর্ম পালনের অধিকার তো স্বয়ং ইসলামেরই আদর্শ। কিন্তু প্রবন্ধকার ২৫ নং অনুচ্ছেদের বরাতে যে বিষয়টি উল্লেখ করেছে তা নির্ভরযোগ্য ইতিহাসের মৌলিক গ্রন্থসমূহে এই নম্বরে এর কোন উল্লেখ নাই। হয়তো বা তিনি মূল কিতাবের অনূদিত বই-পুস্তকের সাহায্য গ্রহণ করেছেন। কেবল ইহুদীরাই নয় বরং চুক্তির আওতার সকলের জন্যই স্বীয় ধর্ম পালনের অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। অদ্যাবধি ইসলামের চুক্তির ক্ষেত্রে একই আইন বিধিত রয়েছে। আর এই অধিকার ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষেই অনুমোদিত। এখান থেকে মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র ‘ঐতিহাসিক অ্যাক্সিডেন্ট’ কী করে যুক্তিযুক্ত প্রমাণিত হয় তা মোটেই বোধগম্য নয়। কেননা পরবর্তী সময়েও এই রাষ্ট্রীয় ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানেও পৃথিবীতে ৮২টির অধিক ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র বিদ্যমান রয়েছে। এমতাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন হয়, যদি ধর্ম-ভিত্তিক রাষ্ট্র বর্তমান বিশ্বেও থাকতে পারে এবং বিভিন্ন মতবাদ, ইজম ও ধর্ম থাকতে পারে তাহলে ইসলাম-ভিত্তিক রাষ্ট্র থাকতে পারে না কেন? ইসলামী রাষ্ট্রকে অ্যাক্সিডেন্ট বলতে হবে কেন? ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম না হলে ইসলামের সামগ্রিক বিধিবিধানসমূহ কার্যকর করার উপায় কী হবে?
খেলাফত ব্যবস্থা
যে কোন রাষ্ট্র পরিচালনার প্রয়োজনে অবশ্যই পরিচালনা পরিষদ হতে হয়। যে ভাবেই হোক পরিষদের দায়িত্বশীলদের নামে দায়িত্বে পরিচায়ক পদবিও হতে পারে, বরং হতে হয়। যেমন, এমপি, সংসদ সদস্য, মন্ত্রি, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট। কিন্তু পরিষদকে প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট বলা হয় না। তাদের অধীনে মন্ত্রণালয় থাকে। ঠিক তেমনিভাবে ইসলামী রাষ্ট্রের মূল হচ্ছে আল্লাহপাক যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আল্লাহপাক কর্তৃক পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ-ভিত্তিক সংবিধানে বর্ণিত খোদায়ী বিধি-বিধান কার্যকর করনের প্রয়োজনে একটি পরামর্শ সভা অথবা পরিষদ হবে, এই পরিষদের বিভিন্ন দায়িত্ব প্রাপ্তদের নামের সাথেও পরিচায়ক পদবি সংযুক্ত হতে পারে, যথা, উক্ত পরিষদকে কুরআন-হাদীসের আলোকে শুরা অথবা খেলাফত, আর পরিষদের আমীর অথবা প্রধানকে খলীফা বলা হয়। সুতরাং খেলাফত প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ পাকের হুকুম-আহকাম কার্যকর করণের ব্যবস্থাপনা। যেখানে কুরআন-হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক কোন ধরনের বিধি-বিধানের অবকাশ নেই মোটেই। খেলাফত ব্যবস্থাপনার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে যে, পরিষদ সদস্যদের পরামর্শ প্রদানের পরিপূর্ণ অধিকার থাকলেও খলীফার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করার অধিকার তাদের নেই। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের একমাত্র অধিকার খলীফার জন্য সংরক্ষিত থাকে। সংখ্যা ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখানে অবকাশ নেই। যে মতকে খলীফা অধিক মঙ্গলজনক মনে করবেন সে অনুযায়ীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন। তাই গণতন্ত্রের নামে বর্তমান বিশ্বে যে পরিষদ পরিচালিত রয়েছে তা ‘খেলাফত বিধান’ এর সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। কিন্তু প্রবন্ধকারের মতে খেলাফতকে গণতান্ত্রিক সাধারণ পরিষদের হাতে ন্যস্ত করা যেতে পারে। বরং এ পদ্ধতিকে তিনি বর্তমান মুসলিম বিশ্বের বিধক্ষস্ত অবস্থাকে সুসংহত করার ব্যাপারে অত্যন্ত সহায়ক মনে করেন। অবাক লাগে যে, স্বীয় ভ্রান্ত চিন্তাধারা প্রমাণের প্রয়োজনে তিনি কবিদের এবং তুরষ্কের পার্লামেন্টকে আমলে এনেছেন। পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামের শুরু সময় থেকে অদ্যাবধি ইসলামের মহান মনীষীদের কর্মপন্থায় বিশ্বাসী হতে পারেননি। স্বয়ং তুরস্কেরই অতীত ও বর্তমান অবস্থা থেকেও চিন্তার খোরাক আহরণে সক্ষম হননি। এমতাবস্থায় সঠিক ও তত্ত্বজ্ঞানের পথ সুগম হতে পারে না।
এই প্রবন্ধে নারীদের প্রতি অবিচারের আর্তনাদ করা হয়েছে। প্রবন্ধকারের মতো কিছু ভ্রান্ত চিন্তাধারায় বিশ্বাসী এবং যৌন অভিলাষীদের কপটতাই বড় বাধা। এই বাধা চূর্ণবিচূর্ণ করে ইসলামেই রয়েছে নারীদের প্রতি ইনসাফ। যারা নারীদেরকে ভোগ্য পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকে তাদের জন্য কার্যকর বিধিবিধান ইসলামে হয়েছে। প্রশ্ন করতে চাই যে, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মায়াকান্নাকারীগণ কি তাদের মহরানা এবং ইসলাম কর্তৃক নির্ধারিত অর্থ-সম্পদের অংশটুকু নারীদেরকে প্রদান কওে থাকেন ? আন্তরিক হলে সবাই মিলে ইসলামের আইন-কানূন কার্যকরের মাধ্যমেই নারী সমস্যার সমাধান হতে পারে। যিনি নারীকে সৃষ্টি করেছেন তার হুকুম-আহকাম পরিহার করে নারী সমস্যার সমাধান করা অবাস্তব স্বপ্ন ব্যতীত আর কিছু নয়।
ইশ্বরবিহীন বিশ্ব
এই পৃথিবীর মালিক মহান আল্লাহপাক। তিনি এর একক সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। এ ব্যাপারে গুটি কয়েক নাস্তিক মুরতাদ ব্যতীত সমগ্র মানুষের ঐক্যমত রয়েছে। অবশ্য অন্য ধর্মাবলম্বীরা সৃষ্টিকর্তাকে গড, ইশ্বর, ভগবান ইত্যাদি। আর মুসলমানগণ তাঁকে আল্লাহ নামে স্মরণ করে। এমতাবস্থায় ইশ্বর-মুক্ত পৃথিবী গড়ার অভিলাষী মানবরূপী পশুদের জন্য এই নশ্বর, এই যমীন ও আসমানের এলাকা ব্যতীত যদি অন্য কোন এলাকা থাকে সেখানে চলে যাওয়া প্রয়োজন। এই যমীন ও আসমান যারসৃষ্ট, কেবল তার বিশ্বাসীদের জন্যই এই পৃথিবী, নাস্তিকদের জন্য নয়। প্রকারান্তরে এরা সমাজে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সাম্প্রদায়িকতার পথ সুগমকারী বিধায় কঠোর শাস্তির উপযোগী। সরকারের এ ব্যাপারে নিরব থাকা মোটেই সমীচীন নয়। মূলত এদের লক্ষ বস্তু ইসলাম ও মুসলমান। এরা চায় মুসলমানদেরকে উত্তেজিত করতে। এরা চায় ইসলামকে চিরতরে ধক্ষংস করে নৈরাজ্যবাদ কায়েম করতে। ইসলাম বিরোধী চক্রেরই এই ধারাবাহিক অপতৎপরতা সম্পর্র্কে মুসলমানদের অবশ্যই হুশিয়ার ও সজাগ থাকতে হবে।
এ দেশে ধর্মের প্রয়োজন নেই ?
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্ম ও গোত্রের লোকদের বসবাস। এ দেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অক্ষুণœ রয়েছে। মুসলমানদের কাছে ইসলাম ধর্ম আপন সহায় সম্পদ, মান-সম্মান এমনকি জীবনের চেয়েও অধিক প্রিয় ও মূল্যবান। যেমন পিতা ব্যতীত সন্তানকে জারজ সন্তান বলা হয়, তেমনি ধর্মহীন মানুষকে জানোয়ার-পশু বলা যেতে পারে। এজন্য সমগ্র পৃথিবীর মানুষ কোন না কোন ধর্মে বিশ্বাসী। অধিকাংশ রাষ্ট্রসমূহে ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সমস্ত ধর্মের স্বাধীনতার কথা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত রয়েছে। মানুষের সমস্ত কর্মকাণ্ড তাদের ধর্ম-বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই সম্পন্ন হয়ে থাকে, বিশ্বাসই তাকে কর্মস্পৃহা যোগায়। যারা নাস্তিক তাদের আল্লাহর উপর এবং আখেরাতের কঠোর শাস্তি ও পুরস্কারে বিশ্বাস নেই। তারা আখেরাত ও মৃত্যুর পর পুনর্জীবনে বিশ্বাসী নয়। আর যারা আস্তিক, তারা আখেরাত ও পুনর্জীবনে, আল্লাহপাকের আযাব ও প্রতিদানে বিশ্বাসী। এই উভয় দলের কর্মকাণ্ড আদৌ এক ধরনর হয় না, হতে পারে না। সুতরাং যারা বলে এদেশে ধর্মেও প্রয়োজন নেই, তাদের এ ধরনের উক্তি কেবল পাগলের প্রলাপই নয় বরং তাওহীদবাদীদের প্রতি রীতিমত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এতে রয়েছে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনার জন্য
জাতীয় শিক্ষানীতির একটি মূল্যায়ন
১। এক বছর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের একটি প্রাথমিক পর্যায়ের ধর্মীয় জ্ঞান দানের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হবে।
২। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতেও ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অন্তর্ভূক্তি জরুরী।
৩। তৃতীয় শ্রেণী থেকে জীবন ও গল্পভিত্তিক ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যার ধরন ও প্রকৃতি স্পষ্ট নয় এবং প্রয়োজনীয় ফলাফল ও লক্ষ্য অর্জনে এটা যথেষ্ট হবে বলে মনে হয় না। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে মূল ধর্মীয় শিক্ষার অন্তর্ভূক্তি আবশ্যক।
৪। সাধারণ ও মাদরাসাসহ (আলিয়া ও কওমী) সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় রেজিষ্ট্রেশন করার বিধান শিক্ষা প্রসারকে বাধাগ্রস্ত করবে। এখানে সাধারণ ও আলিয়া মাদরাসাকে বিধানের আওতায় রেখে ব্যক্তিগত, পারিবারিক তথা শিক্ষা প্রসারের অন্য সকল উদ্যোগকে নিঃশর্তভাবে উৎসাহিত করা যেতে পারে। শিক্ষাদানের প্রচলিত সকল উদ্যোগ ও আয়োজনকে ‘বিকল্প পদ্ধতি’ হিসেবে গণ্য করার ব্যবস্থা রাখা উচিত বলে মনে করি।
৫। ‘কোন ব্যক্তি বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বা কোন এনজিও প্রাথমিক শিক্ষাদানকল্পে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে চাইলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান পালন করে করতে হবে’- মর্মে শিক্ষানীতিতে যে ধারা রাখা হয়েছে, তাতে ঐতিহ্যবাহী, বিশেষায়িত ও স্বতন্ত্রধারার প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে বিশেষ শিথিলতা এবং ছাড় থাকা প্রয়োজন। যেমন, ফোরকানিয়া মক্তব, কুরআন হিফজ করার প্রতিষ্ঠান, কেরাআত শিক্ষাকেন্দ্র, নূরানী নাদিয়া ইত্যাদি পদ্ধতির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কওমী মাদরাসার প্রাথমিক স্তর। কেননা, ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ও ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সুরক্ষায় এসব প্রতিষ্ঠান যে মৌলিক অবদান রাখছে তা অস্বীকার করে কোন শিক্ষানীতি প্রণীত হলে মুসলিম জনসাধারণের কাছে তা গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রদান ও প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষার পথে কঠিন অন্তরায় সৃষ্টি ছাড়া এ শিক্ষানীতি বাস্তবায়নও সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। যা দেশ ও জাতির জন্য কোনক্রমেই মঙ্গলজনক নয়। পাশাপাশি প্রাথমিক স্তর অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ‘এক ও অভিন্ন পাঠ্যক্রম’ বাধ্যতামূলক হওয়ার ফলে উপরোক্ত শিক্ষারীতি ও ঐতিহ্যও অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব নয়। অথচ মুসলিম জাতির একটি অংশ ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষাগ্রহণে ধর্মীয় বিধান অনুসারেই বাধ্য। অতএব, প্রাথমিক শিক্ষায় এক ও অভিন্ন পাঠ্যক্রম ‘বাধ্যতামূলক’ না করে সমান্তরাল বিকল্প পথ খোলা রাখাই হবে অধিকতর বৈজ্ঞানিক, যৌক্তিক এবং গ্রহণযোগ্য পন্থা। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেনসহ ভারতেও যে সুবিধাগুলো বর্তমান।
৬। ‘শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে ইবতেদায়ী ও কওমী মাদরাসাসমূহ আট বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষা চালু করবে এবং প্রাথমিক স্তরের নতুন সমন্বিত শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে’- এ ধারাটি থেকে কওমী মাদরাসাকে আলাদা রাখা প্রয়োজন। শিক্ষানীতির মৌল নির্দেশনার আলোকে কওমী মাদরাসমূহ নিজেদের বৈশিষ্ট্য ও সরকারের নতুন সমন্বিত শিক্ষা কর্মসূচির প্রেরণা বজায় রেখে স্বতন্ত্র পাঠ্যক্রম চালাতে পারলে দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে। উন্নত বিশ্বে যার নজির রয়েছে।
৭। মাধ্যমিক স্তর অর্থাৎ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত প্রধান কিছু বিষয়ের পাশাপাশি ধর্মীয় নানা বিষয়কেও অন্যসব বিষয়ের মতই ঐচ্ছিক বা নৈর্বাচনিক পর্যায়ে স্বাভাবিকভাবেই রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে মৌলিক ও প্রধান বিষয় হিসেবেও সকল শ্রেণীতে একটি সমন্বিত ধর্ম শিক্ষা বিষয় রাখা আবশ্যক। এতে শিক্ষার্থীরা নীতিবান, ধর্মপ্রাণ ও আদর্শ নাগরিকরূপে গড়ে উঠার প্রেরণা লাভ করবে।
৮। ‘যেহেতু শিক্ষানীতি কোন স্থবির বিষয় নয়, এটির পরিমার্জন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এজন্য প্রয়োজন একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশনের। এই কমিশনের সদস্য হবেন উচ্চযোগ্যতা, মর্যাদা ও ধী-সম্পন্ন ব্যাক্তিবর্গ যাদের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষানুরাগী, প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধি থাকবেন।’ দেশীয় ও সামাজিক বাস্তবতার আলোকে কমিশনে কওমী মাদরাসার শিক্ষক, ইমাম, খতীব ও ইসলামী চিন্তাবিদ প্রতিনিধি থাকা জরুরী। শতকরা ৯০জন নাগরিকের ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মঘনিষ্ট জীবনাচরণের প্রতিফলন না থাকলে জাতীয় পর্যায়ের কোন কাজই পূর্ণরূপে সাফল্য অর্জন করতে পারে না।
৯। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ -এর ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ অংশে প্রধান চারটি ধর্ম শিক্ষা সস্পর্কে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাতে বৌদ্ধ ও খৃষ্টান ধর্ম শিক্ষা কৌশল দুটি খুবই চমৎকার ও পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। হিন্দু ধর্ম শিক্ষা অংশটি চলনসই হলেও ইসলাম ধর্ম শিক্ষা কৌশলটি হয়েছে অত্যন্ত অবহেলিত ও দায়সারা গোছের। এতে পবিত্র কুরআন ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মর্যাদাবান সুন্নাহ্র কথা উল্লেখিত হয়নি। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর জীবন ও শিক্ষার প্রসঙ্গও আসেনি। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি, মানবতার নানা সংকট ও মানবজীবনের নানা জটিল গ্রন্থির উম্মোচনে ইসলামী শিক্ষার ভূমিকা নিয়েও কিছু বলা হয়নি। অথচ অন্যান্য ধর্ম শিক্ষায় ছাত্রদের ‘ধর্মানুমোদিত পথে জীবন যাপনের’ কথা, ‘ধর্ম প্রণেতার সাথে সম্পর্কিত কাহিনী ও গল্পের মাধ্যমে নীতিবোধ জাগ্রত করা’ ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। ‘বর্তমান জগতের বাস্তব সমস্যা ইত্যাদির কারণ সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে সচেতন করা এবং তাদের ধর্ম গ্রন্থের আলোকে তা সমাধান’- বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম শিক্ষাঅংশে যা বলা হয়েছে তা খুবই দায়সারা ও অশোভনীয়, যা শিক্ষানীতি প্রণেতাদের সততা ও আন্তরিকতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করতে পারে। এ অংশটির যথাযথ পূর্ণতা সাধন ও শোভনীয়করণ একান্ত জরুরী।
১০। জাতিকে একটি শিক্ষানীতি উপহার দিতে পারা সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এতে যেসব অসঙ্গতি ও অসর্তকতা দেখা যাবে তা দূর করাও সংশ্লিষ্টদেরই কর্তব্য। দু’দিন আগে বা পরে এ দুনিয়ায় আমরা কেউই থাকব না। থাকবে শুধু আমাদের কীর্তি ও অবদান। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী জাতির শিক্ষানীতিতে ধর্মের উপস্থিতি ও প্রভাব যথার্থরূপে বজায় রাখা শাসকগণের ঈমানী দায়িত্ব। এ জন্য আল্লাহর কাছে তারা দুনিয়া ও আখেরাত- উভয় জাহানে পুরস্কৃত হবেন, ইনশাআল্লাহ।
তারিখ, ১৯ জুলাই ২০১০
মাওলানা মাহমূদুল হাসান
খতীব,গুলশান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
প্রিন্সিপাল, জামিয়া ইসলামিয়া যাত্রাবাড়ী মাদরাসা, ঢাকা
আমীর, মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ।