লগইন রেজিস্ট্রেশন

জান্নাতের যোগ্য হওয়ার কতিপয় গুণ

লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ শনিবার, জানুয়ারি ৭, ২০১২ (১২:৪৩ অপরাহ্ণ)

মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান

তিনটি গুণ
আল্লাহপাক এই বিশাল দুনিয়া সৃষ্টি করে তাকে মানুষের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত করেছেন, যাতে মানুষ তার ফরমাবরদার হয়ে যায়, এরপর তার বানানো বিশাল জান্নাতের অধিকারী হতে পারে। এক হাদীসে আছে, তিনটি গুণ যে ব্যক্তি অর্জন করতে পারবে সে জান্নাতে যাওয়ার যোগ্য হবে। তার মধ্যে প্রথমটি হলো, হালাল খাদ্য খাওয়া। যার শরীরের রক্ত-মাংস ইত্যাদি হারাম খাদ্যের দ্বারা তৈরি হয়েছে সে জান্নাতের মতো মহা পবিত্র স্থানে প্রবেশের যোগ্য হতে পারে না কিছুতেই।
শক্ত মনোবল
দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায়, যদি কোন লোকের শরীরে বাহ্যিক নাপাক লেগে থাকে যা গোসলের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব, তাকে মসজিদে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। তাহলে যে ব্যক্তির শরীরের রক্ত মাংস সবই হারাম, তাকে ফেরেশতারা জান্নাতে প্রবেশ করতে দিবে কীভাবে? হালাল খাদ্য নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত সবকিছুর ঊর্ধ্বে। সন্দেহমূলক খাদ্যও বর্জনীয়। হালাল খাদ্যের ব্যবস্থাপনা বাহ্যিকভাবে কঠিন মনে হলেও যে ব্যক্তি শক্ত মনোবল নিয়ে চেষ্টা করে, আল্লাহ পাক তার জন্য সুব্যবস্থা করেই দেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন “আমার প্রতি বান্দার ধারণা-বিশ্বাস অনুযায়ী আমার ফয়সালা হয়।” অর্থাৎ হালাল খাদ্যের ব্যবস্থা করা কষ্টকর হবে, কিন্তু আমি যখন দেখব তুমি চেষ্টা করে যাচ্ছ, তখন তোমার জন্য গায়েবীভাবে হালাল খাদ্যের ব্যবস্থা করে দেব।
দ্বিতীয়টি হলো, দুনিয়াবী সকল কাজ-কর্ম সুন্নত মুতাবেক করা, অর্থাৎ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেখানো নিয়ম ও তরীকা মোতাবেক করা।
তৃতীয় গুণ হলো, কোন মানুষকে কষ্ট না দেয়া। সাধারণ বান্দাকেও কষ্ট দেয়া কবীরা গোনাহ। আর যারা আল্লাহর মুকাররাব বান্দা তাদেরকে কষ্ট দেয়ার পরিণাম আরো ভয়াবহ। আল্লাহর কথা হলোÑ যে ব্যক্তি আমার প্রিয়জন তথা আলেম-ওলামা, হাফেয-ক্বারীদেরকে কষ্ট দেয় তাদের সাথে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করলাম।
সাহাবীদের কষ্ট দেয়া
আর সাহাবায়ে কেরাম তো সবার ঊর্ধ্বে, তাঁদেরকে কষ্ট দিলে আল্লাহ তায়ালা কেমন অসন্তুষ্ট হন তা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝে আসে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-“সাবধান! আমার সাহাবীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আমার পরে তোমরা তাদেরকে শত্র“তার লক্ষস্থলে পরিণত করো না। তাদের প্রতি ভালোবাসার অর্থ হবে আমার প্রতিই ভালোবাসা, আর তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ হিসেবেই গণ্য হবে।”
রাসূল সা.-কে কষ্ট দেয়া
এটা তো গেলো সাহাবীদের কথা। এখন কেউ যদি স্বয়ং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দেয় তার অবস্থা কী হবে? কুরআনের আয়াতেই রয়েছে এর উত্তর। দেখুন কেমন কঠিন মেজাযী ভাষায় আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন-
“নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তার রাসূলকে কষ্ট দেয়, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা অভিশম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন লাঞ্ছনাকর শাস্তি।”
যাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত রয়েছে তারা কোন দিন কামিয়াব হতে পারবে না। তাদের ধ্বংস অনিবার্য।
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যদি এই প্রতিজ্ঞা করে যে, আমি অপরকে কষ্ট দেব না, তাহলে দুনিয়া জান্নাতে পরিণত হতে পারে। কারণ, জান্নাত তো সেই স্থানকেই বলা হয়, যেখানে কোন প্রকারের কষ্ট নেই।
সামগ্রিক অস্থিরতার মূল কারণ
গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, আমাদের সামগ্রিক অস্থিরতার মূল কারণ হলো, আমার দ্বারা অপরজন কষ্ট পাচ্ছে। অনেক সময় দলীল ও যুক্তি প্রমাণে সেই কষ্ট ন্যায্য হতে পারে, তারপরও কুরআনের শিক্ষা হলো ক্ষমা করে দেয়া। কারণ এটা ভেবে দেখা উচিত যে, আমি ব্যক্তিগতভাবে সেই শাস্তির যোগ্য হওয়ার পর তা মেনে নিতে রাজি হই কি না। যেমন আমি আইন প্রণয়ন করলাম যে, কোন ব্যক্তি যদি অমুক অপরাধ করে, তাহলে তাকে এই শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন আমাকে চিন্তা করতে হবে যে, কোন দিন আমি এই আইনের আওতাভুক্ত হলে, আমার মনের বাসনা কী হবে? তখন আমার মনের বাসনা হবে যে, আহ! আমি যদি ক্ষমাপ্রাপ্ত হতাম তাহলে কতইনা ভালো হতো।
দুনিয়ার ব্যাপারে বাদ দিয়ে আখেরাতের কথাই ধরা যাক। আল্লাহপাক যদি বলেন, তুমি দুনিয়াতে যে অপরাধের জন্য যেই শাস্তি নির্বাচন করেছিলে, আজ তোমার অপরাধের কারণে তোমাকে সেই শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ অবস্থায় আমি কি সন্তুষ্টিচিত্তে আল্লাহর কথা মেনে নেব? অবশ্যই না; বরং আমি আরয করব, হে আল্লাহ! দুনিয়াতে বুঝতে পারিনি, অনেক ভুল করেছি, সেগুলো ক্ষমা করে আমাকে জান্নাত দান করুন!
সাধারণ মুসলমানকে কষ্ট দেয়া
এরপর আল্লাহপাক সাধারণ মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে বলেছেন,
“যারা মুমিন পুরুষ ও মহিলাদেরকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, তারা অত্যন্ত বড় অপরাধী।”
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারীমে সরাসরি স্ত্রী-লিঙ্গের ক্রিয়ারূপ ব্যবহার করে মহিলাদেরকে সম্বোধন কিংবা মহিলাদের আলোচনা খুব কমই করেছেন, বরং পুরুষদের অধীনে মহিলাদেরকে গণ্য করে সবখানে পুং লিঙ্গের ক্রিয়ারূপ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু কিছু জায়গায় ব্যতিক্রম হয়েছে। অর্থাৎ মহিলাদের জন্য ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন এই আয়াতে করা হয়েছে।
স্বামীদের ভিন্নতর স্বভাব
স্বামীদের অভ্যাস হলো স্ত্রী যদি তাকে একটি গালী দেয়, তাহলে সে রাগে বাঘের মতো গর্জে ওঠে। পক্ষান্তরে সে যদি স্ত্রীকে একশত গালী দেয় তবুও তাকে কিছুই বলা যাবে না। স্ত্রী যদি দু-একটি কথার উত্তর দেয় তাহলে মস্ত বড় বেয়াদব বলে গণ্য করে। এরূপ আচরণ আদৌ ঠিক নয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তো প্রভুত্বের সম্পর্ক নয় যে, স্বামী যাই করবে তাই স্ত্রীকে মাথা পেতে মেনে নিতে হবে। বরং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক হলো প্রেমিক-প্রেমাষ্পদের সম্পর্ক। প্রেমাষ্পদের রয়েছে অভিমানের অধিকার, যে কারণে প্রেমিকাকে প্রেমাষ্পদের মন জয় করার জন্য তার পেছনে হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়। স্বামী হলো প্রেমিক আর স্ত্রী হলো প্রেমাষ্পদ, এ দৃষ্টিকোণ থেকে লক্ষ্য করলে বুঝা যায় যে, স্ত্রী তার অভিমানের কারণে দুচারটি কড়া কথা বলতে পারে, স্বামীকে সেগুলো সহ্য করতে হবে। একথাগুলো আমার নিজের বানানো কথা নয়, বরং স্বয়ং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী- “তোমরা মহিলাদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। এমন ব্যবহারে করো না যাতে তারা মনে ব্যথা পায়।” এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, মহিলারা সাধারণ বিষয় নিয়ে তর্কে লিপ্ত হয় এবং এক গুয়েমী করে, তখন তাদের সাথে সৎব্যবহার কীভাবে করি? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস থেকেই এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে, “আল্লাহ মহিলাদেরকে হযরত আদম আ. এর শরীরের সবচেয়ে বক্র হাড্ডি থেকে সৃষ্টি করেছেন।” সুতরাং এদের মধ্যে বক্রতা থাকবেই। এ অবস্থাতেই তাদের থেকে উপকৃত হতে হবে। আর যদি হাড্ডি সোজা করতে চেষ্টা করা হয়, তাহলে তা ভেঙ্গে যাবে, ফলে মহাবিপদের সম্মুখীন হতে হবে। স্ত্রীদের স্বভাব হলো, ছোট বাচ্চাদের স্বভাবের মত। তারা স্বামীর সাথে অভিমান করে, বিভিন্ন প্রকারের দাবী উত্থাপন করে।
কুরআনে কোন ধরনের কষ্টকে নিষেধ করা হয়েছে আলোচনা হচ্ছিল মুমিনদেরকে কষ্ট দেয়া প্রসঙ্গে। তবে কুরআনে কোন ধরনের কষ্টকে নিষেধ করা হয়েছে সেটা বুঝতে হবে। কারণ কষ্ট দুপ্রকার : (১) শিক্ষক তার ছাত্রকে, পীর তার মুরীদকে, পিতা-মাতা তাদের সন্তানকে বিভিন্ন শাস্তি প্রদানের দ্বারা কষ্ট দেন আদর্শবান প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। এ শাস্তি অনর্থক নয় বরং প্রয়োজনীয়। এর জন্য তাদেরকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। (২) অন্যায়ভাবে বিনা কারণে বিনা অধিকারে কাউকে কষ্ট দেয়া। এ প্রকারের কষ্টের জন্য দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে শাস্তি পেতে হবে। কষ্টপ্রাপ্ত ব্যক্তি থেকে ক্ষমা নেয়া ছাড়া এর শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না।
মুনাফিকদেরক সাবধান করে কুরআনে আয়াত
কুরআনের আয়াত থেকে বুঝতে পারলাম যে, সাধারণ মুসলমান নারী ও পুরুষকে কষ্ট দেয়া হারাম ও মহাপাপ। বিশেষ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দেয়া কুফর ও আল্লাহর অভিসম্পাতের কারণ। মদীনার মুনাফিকদের পক্ষ থেকে সমস্ত মুসলমান এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নানা ধরনের কষ্ট পেতেন। মুসলমানদের দাসীরা কাজকর্মের জন্য বাইরে গেলে দুষ্ট ও বখাটে স্বভাবের মুনাফিকরা তাদেরকে বিভিন্ন অশোভন উক্তির মাধ্যমে উত্ত্যক্ত করত। ফলে সাধারণভাবে মুসলমানগণ এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কষ্ট পেতেন। এ প্রকার নির্যাতন থেকে স্বাধীন নারীদেরকে বাঁচানোর তাৎক্ষণিক ও সহজ ব্যবস্থা ছিল, স্বাধীন নারীদের মধ্যে খাছ এমতিয়ায তথা বিশেষ স্বাতন্ত্র ফুটিয়ে তোলা। কারণ মুনাফিকরা স্বাধীন নারীদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও শক্তি-সামর্থ্যরে কারণে তাদেরকে সচরাচর উত্ত্যক্ত করার সাহস পেত না। পরিচয়ের অভাবেই এরূপ ঘটনা সংঘটিত হত। তাই স্বাধীন নারীদের বিশেষ পরিচয় ফুটিয়ে তোলার প্রয়োজন ছিল, যাতে তারা অতি সহজে দুষ্টদের কবল থেকে নিরাপদ হয়ে যায়। এ উদ্দেশ্যে আল্লাহপাক কুরআনের আয়াত নাযিল করেন- এখন প্রশ্ন হয় যে, শুধু স্বাধীন নারীদের হেফাযতের ব্যবস্থা করা হল, তাহলে কি দাসীদেরকে হেফাযত করার কোনো প্রয়োজন নেই? হ্যাঁ, তাদেরকে হেফাযত করার প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। এ কারণেই তো এর পরের আয়াতে আল্লাহ পাক দাসীদের হেফাযতের জন্য মুনাফিকদেরকে শাস্তির সতর্ক বাণী শুনিয়েছেন। বলেছেন, তারা যদি বিরত না হয় তাহলে আল্লাহ তাদেরকে ইহকালেও নবী ও মুসলমানদের হাতে শাস্তি দিবেন, আর পরকালের ভয়ানক সাজা তো রয়েছেই।
আইনের প্রয়োজনীয়তা
কুরআনে কারীমে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পর্দার নির্দেশ এসেছে। সামাজিক বিশৃংখলার কারণে অনেক সময় আইন কার্যকর করা ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমরা অনেকেই চাই ভালো মানুষ হতে। চাই আমার কানে গান-বাদ্যের আওয়াজ না আসুক। চাই আমার দ্বারা পর্দাহীনতা না হোক। কিন্তু প্রয়োজনে রাস্তায় বের হলে বেপর্দা মহিলার সাথে সাক্ষাৎ হয়ে যায়। অতএব উপদেশে কাজ হবে না বরং আইন করে সমাজের পর্দাহীনতা অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। উপরোক্ত আয়াতে তাই করা হয়েছে। বলা হচ্ছে যে, মহিলাদের যদি হাঁট-বাজারে কিংবা অফিসে যেতে হয় তাহলে পর্দাবৃত হয়ে বের হতে হবে, যাতে পুরুষদের আকর্ষণের কারণ না হয়।
একটি জরুরী কথা
এখানে এসে একটি খুবই দরকারী কথা মনে পড়লো, তা হলো, পীর-মাশায়েখদের জন্য ভক্ত ও মুরীদদের বাড়িতে যাওয়া উচিত নয়। কারণ, মুরীদ তার পরিবার-পরিজনের কাছে পীর সাহেবের উত্তম, উন্নত গুণাবলী ও চরিত্রের কথা আলোচনা করে থাকে, ফলে তার পরিবারের লোকেরা পীর সাহেবকে একনজর দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে এবং পীর সাহেবকে তাদের বাড়ীতে নেয়ার জন্য দাওয়াত করে। যদি কোন সময়-সুযোগ মতে কোন দিন পীর সাহেব তাদের বাড়েিত যান, তাহলে মুরীদের স্ত্রী, মা, বোন ও মেয়েরা বেড়া ও জানালার ফাঁক দিয়ে পীর সাহেবের চেহারা দেখে। ফলে উভয়েই গোনাহগার হয়। যদি পীর সাহেব মুরীদের বাড়ীতে না যেতেন তাহলে কেউ গোনাহগার হতো না। আর যদি একান্ত প্রয়োজনে যেতেই হয়, তাহলে মুরীদের সাথে শর্ত করে নিত হবে যে, মুরীদ পীর সাহেবকে এমন স্থানে বসতে দেবে, যেখানে পীর সাহেবকে কোন মহিলার দেখার অবকাশ না থাকে।
পূর্বোক্ত আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বয়ং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ আদেশ দিয়েছেন যে, হে নবী! আমি উম্মতকে তোমার মেয়ে ও স্ত্রীদের প্রতি কু-দৃষ্টি করে তোমাকে কষ্ট দিতে নিষেধ করেছি, কিন্তু এদিকেও লক্ষ রাখতে হবে যে, তোমার মেয়ে ও স্ত্রীগণ যেন তোমার উম্মতের সামনে বেপর্দায় চলা ফেরা না করে। তবে প্রয়োজনে তাদের বাইরে যেতে হলে তারা যেন তাদের ঐ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাপড় দ্বারা ভালোভাবে ঢেকে বের হয়, যেগুলো দেখে পর পুরুষ আকৃষ্ট হয়।
মহিলাদের দুটি শ্রেণী
মহিলাদের মধ্যে দুটি শ্রেণী রয়েছে (১) মালিক ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলা (২) চাকরানী ও দাসী। প্রত্যেকের নিরাপত্তার জন্য উল্লেখিত আইন প্রযোজ্য। তবে কিছু পার্থক্য রয়েছে, তাহলো, সম্ভ্রান্ত ও স্বাধীন মহিলারা পুরো চেহারা ঢেকে রাখবে। আর চাকরানী ও দাসীদের জন্য কিছু শিথিলতা রয়েছে। কারণ তাদেরকে জীবনোপকরণ ব্যবস্থার তাগিদে বিভিন্ন কাজ করতে মালিকদের সামনে কিংবা বাইরের পুরুষদের সামনে যেতে হয়। পর্দার এ পার্থক্যের কারণ হিসেবে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন-
পর্দা দেখে দুষ্টু চরিত্রের লোকেরা সহজেই বুঝতে সক্ষম হবে যে, তারা হলেন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী কিংবা নবীর কন্যা কিংবা সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলা, ফলে কুদৃষ্টি করার মতো দুঃসাহস তাদের হবে না। এরপর যদি না বুঝে কষ্ট দিয়ে ফেলে এবং তার জন্য অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করে তাহলে তাদের জন্য আল্লাহপাক বলেনÑ
দয়াময় আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যদি কেউ অপরাধ করেও অনুতপ্ত হয়ে তওবা না করে তাহলে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। দাসীদের পক্ষে কুরআনের আয়াত
এখন রয়ে গেল দাসীদের কথা। দাসীদের প্রতি কুদৃষ্টি করা মুনাফিক ও নিম্ন শ্রেণীর লোকের কাজ। এদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেছেন-
“মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে এবং যারা মদীনায় গুজব রটায় তারা যদি গরীব মিসকীন মহিলা যারা বস্ত্র না থাকার দরুন পর্দা করতে পারে না, তাদের প্রতি কু-দৃষ্টি করে, তাহলে অতিসত্বর আমি তাদের ব্যাপারে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করবো যাতে তারা ধ্বংস হয়ে যায় কিংবা মদীনা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।”
সমাজপতিদের প্রতি ইঙ্গিত
পৃথিবীর বুকে অসংখ্য নজীর রয়েছে যে, যারা মহিলাদরেকে বিরক্ত করে তারা অল্প দিন নিজ দেশে বসবাস করতে পেরেছে, পরবর্তীতে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, কিংবা দেশান্তর করা হয়েছে। উল্লেখিত আয়াতে সমাজপতিদের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যে, সমাজে যদি এরূপ বখাটে যুবক থাকে, যারা মহিলাদেরকে উত্ত্যক্ত করে, কষ্ট দেয়, তাদের জন্যও এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কেয়ামতকে নিয়ে ঠাট্টা
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদেরকে বিভিন্ন ব্যাপারে কেয়ামতের ভয়াবহতার কথা বলতেন। প্রতিউত্তরে কাফেররা ঠাট্টা করতো।
কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময় রয়েছে। তবে আমাদের দেশে কিছু লোকের মুখে একটি প্রচলিত ভুল উক্তি শোনা যায়। তারা বলে থাকেন, “ভাই কিয়ামত কোন্ দিন সংঘটিত হবে তা জানা নেই, আগামী কালও তা হয়ে যেতে পারে; এ উক্তি সম্পূর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন।” বর্তমান পৃথিবীর অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এখনও আসল কিয়ামতের শত শত বছর বাকী।
কিয়ামতের আলামত এবং বর্তমান হালত
কিয়ামত দু প্রকার : (১) মানুষের মৃত্যুই তার জন্য কিয়ামত। এটাকে ছোট কিয়ামত বলা হয়। (২) বড় কিয়ামত। এই কিয়ামতের কিছু আলামত ও পূর্বাভাস রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হল, যিনা-ব্যভিচারের সয়লাব বয়ে যাওয়া। এ ব্যাপারে বর্তমান বিশ্বের প্রতি তাকালে দেখা যায় যে, বিশ্বে বহু ধর্মের মানুষ বাস করে, তাদের মধ্যে ইহুদী খৃষ্টানদের মাঝে এই পাপের প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ লোকই তো মাহরাম আত্মীয়ের সাথে পর্যন্ত ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। তারা তাদের পার্লামেন্টে ব্যভিচারের বৈধতাও পাস করিয়ে নিয়েছে। এটা নাকি তাদের মানবিক অধিকার! পাশ্চাত্যে বসবাসকারী মুসলিমদের মধ্যেও এর কিছু প্রবণতা দেখা যায়। মুসলমানদের মধ্যে ব্যভিচারের আধিক্য হওয়াই কিয়ামতের একটি আলামত।
আরেকটি আলামত হলো, সন্তান পিতা-মাতাকে চাকর চাকরানী মনে করবে। বর্তমান আধুনিক বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থা অতি উন্নত, অতি সহজেই দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করা যায়। বিগত পঞ্চাশ বছর পূর্বে এ সুব্যবস্থা ছিল না, তাই বিদেশে শিক্ষার জন্য খুব কম লোকই যেত। এখন তো প্রায় প্রতিটি উচ্চবিত্ত পরিবারের দুই তিনটি ছেলে বিদেশে লেখাপড়া করে। তারা নাকি উচ্চ ও উন্নত শিক্ষার উদ্দেশ্যে সন্তানদেরকে বিদেশে পাঠায়। অতঃপর ছেলে মেয়েরা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এসে পিতামাতাকে দেখতে পায় যে, তারা তাদের সামনে অজ্ঞ ও মূর্খ। ফলে তারা পিতামাতার সাথে সেরূপই আচরণ করতে থাকে। এর জন্য ছেলে মেয়েরা দায়ী নয় বরং দায়ী হলো পিতা মাতা। কারণ তারা সন্তানদেরকে প্রকৃত আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলেনি। যাহোক এই ধরনের অবস্থা হওয়া কিয়ামতের একটা আলামত।
এছাড়াও কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আরো বড় বড় পূর্বাভাস আছে। যেমন মাহদী আ. ও হযরত ঈসা এর আগমন, দাজ্জালের আগমন, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া, ইয়াজুজ-মাজুজের বহিঃপ্রকাশ, দাব্বাতুল আরদ বের হওয়া ইত্যাদি।
মাহদী আ.-এর পরিচয় হলো তিনি আরব দেশে কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করবেন। তার নাম হবে মুহাম্মাদ, পিতার নাম আব্দুল্লাহ। চল্লিশ বছর বয়সে হজ্বের মৌসুমে লাখো লাখো হাজ্বীদের তাওয়াফকালে বাবে জিবরাইলে দাঁড়িয়ে বাইতুল্লাহ শরীফে হাত রেখে বলবেন, “আমি মাহদী, আল্লাহ পাক আমাকে পাঠিয়েছেন। তোমরা আমার কাছে বাইআত গ্রহণ করো। তখন তাঁকে সত্যায়নের জন্য আকাশ থেকে ফেরেশতারা বলতে থাকবেন। “মাহদী সত্য বলেছেন, তোমরা তাঁর হাতে বাইআত গ্রহণ করো।”
অহেতুক-অবান্তর প্রশ্ন
যাদের শরীয়তের বিধান মানার স্পৃহা নেই, তাদের প্রশ্নের শেষ নেই। যেমন নামায পড়ে কী হবে? কত লোকই তো নামায পড়ে কিন্তু গোনাহ বর্জন করে না। তাহলে তাদের নামায পড়ে লাভটা কী হচ্ছে? আবার অনেকে বলে “যতই নামায পড়লাম ততই ব্যবসায় লোকসান” (নাউযুবিল্লাহ) এ সবের মূল কারণ দ্বীনের জ্ঞান না থাকা এবং শরীয়তে প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি ও আমলের স্পৃহা না থাকা।
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের কাফের বেঈমানরা রাসূল ও শরীয়তকে তো মানতোই না উপরন্তু রাসূল ও শরীয়তের উপর বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করত। যাতে দুর্বল মুসলমানগণ বিভ্রান্ত হয়ে যায়। যেমন আমাদের দেশে কোন সৎ লোকের বাড়িতে আগুন লাগলে অনেক দ্বীনী-জ্ঞানহীন মূর্খ লোক উক্ত দ্বীনদার ও সৎলোকটি সম্পর্কে এই মন্তব্য করে যে, নিশ্চয়ই লোকটির মনের মধ্যে কোন খারাবী আছে, তা না হলে তার বাড়িতে আগুন লাগল কেন? পাশের লোকে বলে ওঠে, ঠিকই বলেছেন, আল্লাহ পাক তার প্রতি অসন্তুষ্ট। নইলে তার উপর এত বড় বিপদ আসে কেন? যে যাকে ভালোবাসে ও মুহাব্বত করে, সে তাকে সাধ্যমত সাহায্য করতে চেষ্টা করে। সে যদি আল্লাহর প্রিয় পাত্র হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ পাক তাকে সাহায্য করলেন না কেন? এই সকল অর্বাচীনদেরকে আমি বলতে চাই, তায়েফের ময়দানে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাঁত মুবারক শহীদ হয়েছিল, খন্দকের যুদ্ধে খাদ্যের অভাবে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেটে পাথর বাঁধতে হয়েছিল, এসব কি তাহলে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোনাহ ও তার প্রতি আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির কারণে হয়েছিল? (নাউযুবিল্লাহ)
দ্বীনের জন্য কষ্ট স্বীকার কেন করতে হয়?
নবী-রাসূলগণের সিরাত পড়লে জানা যাবে তাঁদেরকে কেন এত ধরনের কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। দ্বীন জিন্দা রাখতে চাইলে, দ্বীনের ঝাণ্ডা উঁচু করতে চাইলে এবং পরকালে জান্নাত লাভের আশা করলে আমাদেরকেও সেসব কষ্টের কিছুটা হলেও ভোগ করতে হবে। যেমন কুরআনে পাকে ইরশাদ হচ্ছে-
দুনিয়ায় অর্থোপার্জন করতে, দালান কোঠা নির্মাণ করতে, এসি রুমে বাস করতে, নরম ফুল শয্যায় শয়ন করতে হলে কেমন চেষ্টা ও কষ্ট করতে হয়? এগুলো কি এমননিতেই হাতে এসে যায়? আদৌ নয়, বরং এর জন্য প্রচুর চেষ্টা ও সাধনা করতে হয়। দুনিয়ার অস্থায়ী সুখ শান্তি লাভ করার জন্য যদি এ পরিমাণ চেষ্টা মুজাহাদা করতে হয়, তাহলে দুনিয়ার তুলনায় কোটিগুণ বেশি শান্তি উপভোগ করার জন্য তথা আখেরাতে স্থায়ী শান্তি প্রাপ্তির জন্য কেমন মেহনত-মুজাহাদার প্রয়োজন। তাই কেউ বিপদে পড়লেই এরূপ ধারণা করা যাবে না যে, লোকটি খারাপ বরং এ ধারণা করা উচিত যে, লোকটির যে সকল অন্যায় অপরাধ ছিল সেগুলো ক্ষমা করার জন্যই তার উপর বিপদ এসেছ। এর মাধ্যমে আল্লাহ পাক তাকে গোনাহমুক্ত করে তার পবিত্র দরবারে হাজির করতে চান।
কাফেরদের বাহুল্য প্রশ্নের উত্তরে কুরআনের আয়াত
যাহোক কথা বলছিলাম কাফেরদের অহেতুক ও বাহুল্য প্রশ্ন সম্পর্কে। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ঈমানের দাওয়াত দিতে গেলে তারা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিভিন্ন রকমের বিদ্রুপাত্মক ও বিরক্তিকর প্রশ্ন করত। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ঈমান না আনলে কিয়ামতে এ সকল প্রশ্নের চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে। তখন তারা ঠাট্টাপূর্ণ ভাষায় প্রশ্ন করতো ‘কিয়ামত কখন হবে’ এর উত্তরে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন “হে নবী আপনি বলে দিন কিয়ামতের ইলম ও খবর কেবল আল্লাহরই আছে।”
সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়া উচিত নয়। যেমন কোন ছাত্র পরীক্ষার হলে তার প্রশ্নের সকল উত্তর লিখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু একটি প্রশ্নে আটকে পড়েছে। এমন সময় সে দেখতে পেল তার উস্তাদ সম্মুখ দিয়ে ধীর গতিতে হেঁটে যাচ্ছেন। ছাত্র উস্তাদকে ডেকে বিনয়ের সাথে বলল, হুযুর! আমি প্রশ্নপত্রের সবকটি প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে লিখতে সক্ষম হয়েছি। তবে এই প্রশ্নের উত্তরটি ভুলে গেছি। অনুগ্রহ পূর্বক মাত্র এই একটি প্রশ্নের উত্তর বলে দিন না! এখন আপনারাই বলুন, উস্তাদ যদি এই প্রশ্নের উত্তর বলে দেন, তাহলে কি পরীক্ষা থাকবে?
জনৈক সাহাবীর প্রশ্ন
একদিন জনৈক সাহাবী হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সবিনয়ে আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিয়ামত কখন হবে? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, কিয়ামত কখন হবে এটা জানার তেমন প্রয়োজন নেই, বরং প্রয়োজন হলো কিয়ামতের দিনের জন্য তুমি কতটুকু প্রস্তুত হয়েছো।
এখন আপনারা হয়তো বলবেন যে, কাফেরদের মতো প্রশ্ন একজন সাহাবী করলেন কীভাবে? এর উত্তরে বলা যায় যে, প্রকৃতপক্ষে সাহাবীর পক্ষ থেকে এই প্রশ্ন হয়নি বরং আল্লাহপাক সাহাবীর অন্তরে প্রশ্ন জাগিয়ে দিয়েছেন, যাতে পরবর্তীতে আমাদের মতো অজ্ঞ লোকেরা কিয়ামত সম্পর্কে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উত্তর জেনে নিতে পারে এবং ভবিষ্যতে কিয়ামত সম্পর্কে অহেতুক প্রশ্ন না করে বসে।
এমনিভাবে একদিন ফেরেশতাদের সর্দার হযরত জিবরাইল আ. মানুষের সূরতে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর-দরবারে হাজির হয়ে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? উত্তরে হুযুর বললেন, “এ ব্যাপারে জিজ্ঞেসিত ব্যক্তি জিজ্ঞেসকারী অপেক্ষা বেশি জ্ঞানী নয়।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বের প্রশ্নকারী সাহাবীকে জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামতের জন্য তুমি কতটুকু প্রস্তুত হয়েছো”? জবাবে সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের জন্য আমি উপযুুক্ত কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারিনি। কিন্তু আমি নিজের জান-মাল, সন্তান-সন্তুতি অপেক্ষা আল্লাহ ও তার রাসূলকে বেশি ভালোবাসি। সাহাবীর এই উত্তর শুনে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব খুশি হলেন এবং বললেন তুমি যদি প্রকৃতপক্ষেই আমাকে ভালোবেসে থাক তবে হাশরের দিন তুমি আমার সাথে থাকবে। কারণ আল্লাহ পাকের চূড়ান্ত বিধান হলো, যে যাকে ভালবাসবে হাশরের দিন সে তার সাথে থাকবে।
ভণ্ডপীরের গুমরাহী
এখানে একটি জরুরী কথা মনে পড়লো। তা হলো, আমাদের দেশে একদল নামধারী ভণ্ডপীররা বলে থাকে যে, নামায রোযা দিয়ে কী হবে? আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুহাব্বতই নাজাতের জন্য যথেষ্ট। তাদের যুক্তির পেছনে বুখারী শরীফের হাদীস দিয়ে তারা দলীলও পেশ করে থাকে। যেমন বুখারী শরীফের হাদীসে আছে-
তারা এ হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করে বলে যে, এখানে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তার মর্ম হলো যার অন্তরে আমার ভালবাসা আছে সে নামায রোযা করুক বা না করুক, অবশ্যই জান্নাতে যাবে। সুতরাং আমাদের অন্তরে রাসূলের ভালবাসা আছে, তাই শরীয়তের প্রয়োজন নেই, মারেফতই যথেষ্ট।
তাদেরকে বলতে চাই যে, উম্মতে মুহাম্মাদীর শ্রেষ্ঠ মানব খুলাফায়ে রাশেদীন এবং অন্যান্য সাহাবগণ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কেমন ভাল বেসেছেন? তারপরও তাঁরা নিয়মিত নামায রোযা ও শরীয়তের অন্যান্য বিধানাবলী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করেছেন কেন?
মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে সাহাবীর আকাংক্ষা
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রিয় সাহবী খুবাইব রা. কে কাফেররা গ্রেফতার করে হত্যার সিদ্ধান্ত করল। তখন হত্যার পূর্বে তারা খুবাইব রা. কে জিজ্ঞেস করল, হে খুবাইব! এক্ষুনি তোমাকে হত্যা করা হবে, তোমার কোন আশা-আকাঙক্ষা থাকলে বলতে পার, আমরা তা পূরণ করতে চেষ্টা করব। তিনি উত্তরে বললেন, আমার মনে সামান্য দুটি আকাক্সক্ষা ছাড়া অন্য কোন আকাক্সক্ষা নেই। তার মধ্যে একটি হলো, আমার প্রাণপ্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মনভরে এক নযর দেখতে চাই। দ্বিতীয় আকাঙ্খাটি হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মুসলমান বানানোর পর সর্বপ্রথম নামাযের শিক্ষা দিয়েছেন। তোমরা আমাকে হত্যার পূর্বে দু’রাকাত নামায আদায়ের সুযোগ দাও। যাতে আমার জীবনের শেষ মুহূর্তটাও প্রিয় রাসূলের নির্দেশ পালনের মাধ্যমে অতিবাহিত হয়।
এই হলো সাহাবায়ে কেরামের হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি মুহাব্বত ও ভালবাাসা। এখন আমরা নিরপেক্ষভাবে তুলনা করে দেখতে পারি যে, রাসূলের প্রতি কাদের মুহাব্বত খাঁটি। যারা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও শরীয়তের সঠিক অনুসরণ করে তারা, নাকি যারা শুধু মুখে মুহাব্বতের ও মারেফতের দাবী করে তারা?
অতঃপর হযরত খুবাইব রা. ছোট খাটো সূরা দিয়ে দু’রাকাত নামায পড়ে কাফেরদরেকে লক্ষ করে বললেন, আমি যদি তোমাদের এ মন্তব্যের আশংকা না করতাম যে, তোমরা বলবে, খুবাইব দুনিয়াতে কিছুক্ষণ বেঁচে থাকার জন্য লম্বা সূরা দিয়ে নামায পড়েছে, তাহলে দু’রাকাতেই কুরআন শরীফ খতম করে ফেলতাম। রাসূলের নির্দেশিত পথে আমার জীবন উৎসর্গ করতে চলেছি, এরচেয়ে সৌভাগ্যজনক আর কোন কাজ হতে পারে না। এরপরই কাফেররা তাকে নৃশংভাবে হত্যা করে।
হযরত খুবাইব রা.-এর ঘটনা থেকে আমরা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রকৃত প্রেমিকের নমুনা খুঁজে পাই। এছাড়া কে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাঁটি প্রেমিক, আর কে নকল প্রেমিক তাও স্পষ্ট হয়ে যায়।
বিস্ময়কর ব্যবস্থাপনা
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই মহা বিশ্ব পরিচালনা করছেন। যার মধ্যে অনেক বিষয়ের প্রতি লক্ষ করলে অবাক লাগে। যেমন, একজনের কান্নার মাধ্যমে অন্যজনের হাসি অর্জিত হয়। এর উদাহরণ হলো, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর চিৎকার করে কাঁদতে থাকে এবং মাও কষ্টের কারণে গুংগাতে থাকে। অপর দিকে দাদা-দাদী, নানা-নানী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন হাসতে থাকে। এরপর সন্তান যখন ক্রমশ দিন, সপ্তাহ, মাস ও বছর পার করে বড় হতে থাকে তখন মাতা-পিতার মন আনন্দে ভরে ওঠে। অথচ সন্তান ক্রমে চিরবিদায় তথা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে! দিন-রাতের বিবর্তনে আমাদের বয়স যত বেড়ে চলছে আমরা ততই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
সর্বাপেক্ষা আপনজন
দুনিয়ার বুকে মানুষের জন্য তার পিতা-মাতার চেয়ে আপনজন আর কেউ নেই। পিতা-মাতা যদি কোন সন্তানকে ত্যাজ্য করেন, তাহলে পৃথিবীর সকলে তাকে ভালো বললেও প্রকৃতপক্ষে সে খারাপ। তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ হতে পারে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে তার মাতা-পিতা অপেক্ষা বহু গুণ বেশি ভালবাসেন। এতদসত্ত্বেও যারা কাফের, তারা হলো আল্লাহ তাআলার পরিত্যাজ্য বান্দা। এদের চেয়ে হতভাগা আর কেউ হতে পারে না।
দুনিয়াতে মানুষ কারাগারে আবদ্ধ হলে প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী-মিনিষ্টারদের সাহায্য সহযোগীতায় কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে কিন্তু আখেরাতে সে সুযোগ নেই। সেখানে আল্লাহর ফয়সালার বিপরীতে সামান্য টু-শব্দ করার ন্যূনতম সাহস কারো থাকবে না। সেথায় তারা কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কুরআনের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের তাওফীক দান করুন!

বয়ান সংরক্ষণ : মুহাম্মাদ মাহফুযুর রহমান

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
২৬৩ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)

১ টি মন্তব্য

  1. মা-শা- আল্লাহ। খুবই সুন্দর লেখা। (F) (F) (F)