লগইন রেজিস্ট্রেশন

মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ ও মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান

লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ সোমবার, জুন ১১, ২০১২ (১:৫৫ অপরাহ্ণ)

মুহাম্মাদ মাসরুর হাসান
১৩৫৮ হিজরীতে হযরত থানভী রহ.-এর দূরদর্শী এবং বৈপ্লবিক জীবনের অভিজ্ঞতা ও শুদ্ধি অভিযানের আলোকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও বিভ্রান্ত সমাজের পরিশুদ্ধি এবং অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের সঠিক দিক নির্দেশনা ও পাথেয় হিসেবে ‘মজলিসে দাওয়াতুল হক’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতি, ইহকাল ও পরকালের মুক্তি এবং নাজাতের উপায় হচ্ছে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুকরণ ও অনুসরণ। সমাজের সর্বস্তরে সুন্নত প্রতিষ্ঠা, বিদআত এবং মুনকারাতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা মুসলিম উম্মাহর অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমাদের পূর্বসুরী মনীষীগণ এই উপায় অবলম্বন করেই পরম সফলতা অর্জন এবং আদর্শ জীবন গড়ায় সুসক্ষম হয়েছেন। সুতরাং সার্বিক সফলতার জন্য আমাদেরকেও তাদেরই পাদঙ্ক অনুসরণ করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। হযরত থানবী রহ. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দাওয়াতুল হক মূলত মানবতার উৎকর্ষ সাধনে একটি নির্দেশনা এবং পাথেয়। মুসলিম উম্মাহর হেদায়েতের জন্য রচিত অগণিত বই পুস্তকে আর বিশেষত দাওয়াতুদ্দায়ী, তাফহীমুল মুসলিমীন, তানজীমুল মুসলিমীন এবং হযরত মুহিউস সুন্নুাহ রহ.-এর রচিত আশরাফুন্নেজামে দাওয়াতুল হকের বিস্তরিত কর্মসূচী বিদ্যমান রয়েছে। মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের লক্ষ উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী শিরোনামে বাংলা ভাষায় দাওয়াতুল হকের কর্মসূচী প্রকাশ করা হয়েছে এবং সে অনুপাতে এদেশেও কার্যক্রম চালু রয়েছে।
মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ
হযরত থানবী রহ. তাঁর জীবদ্দশায় নিজে এবং তার সহচরদেরকে নিয়ে দাওয়াতুল হকের কর্মসূচী বাস্তবায়নে অবিরাম প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন এবং সমকালীন উলামা-মাশায়েখগণের প্রতি দ্বীনের এই মহতী কাজে অংশগ্রহণের আহবান জানান। ফলে দাওয়াতুল হকের কর্মসূচী সর্বমহলে সমাদৃত হয়, হতে থাকে। তারই বিশেষ অনুরাগী ভক্তবৃন্দ এবং খুলাফাগণের প্রচেষ্টা বাংলাদেশেও এই কাজের সূচনা হয়। হযরত মাওলানা আতহার আলী রহ., হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব হাটহাজারী রহ., হযরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ., হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুলী রহ., হযরত মাওলানা ফয়জুর রহমান সাহেব রহ., ইমাম জামে মসজিদ মোমেনশাহী প্রমুখের নিরলস উদ্যেগে হযরত থানভীর চিন্তাধারার বিশেষ প্রসার লাভ হয়।
মজলিসে দাওয়াতুল হক ও হারদুয়ী রহ.
হযরত থানবী রহ. এর খুলাফাগণের একের পর এক বিদায়ের পর দাওয়াতুল হকের কর্ণধার ছিলেন হযর থানবী রহ. এর সর্বশেষ খলীফা, নবী বশের উজ্জল প্রদীপ মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা শাহ আবরারুল হক রহ.। তিনি তার মুর্শিদের এই কার্যক্রমকে আরো বেগবান করার লÿ্যে আজীবন নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
তার অসাধারণ যোগ্যতা, পরহেজগারী ও সুন্নতের পাবন্দী দেখে তার কাছে মাথানত করেছে শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক দা. বা., মুফতী আব্দুর রহমান,মাওলানা আনওয়ার শাহ ,আল্লামা শাহ মুহাম্মাদ তৈয়াব, আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ,মুফতী মনসুরুল হক,সহ এদেশের প্রতিথযশা বিজ্ঞ আলেমে দ্বীনগণ।
বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ছিল তার গভীর ভালবাসা ও নেক নজর। তিনি সুন্নতের অনুসরণের আহবান নিয়ে বারবার ছুটে আসতেন বাংলার জনগণের কাছে। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বেও মজলিসে দাওয়াতুল হকের ১১তম মারকাযী ইজতেমায় তিনি তাশরীফ এনেছিলেন।
মজলিসে দাওয়াতুল হক ও মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান
‘মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান’ আপোষহীন এক ইসলামী ব্যক্তিত্ব, মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের প্রতিট রন্ধ্রেরন্ধ্রে যার অস্তিত্ব, জীবনের প্রতিটি ধাপে সুন্নতে রাসূলের অনুসরণ যার কৃতিত্ব, দুনিয়ার শান শওকত ও পার্থিব প্রাচুর্যের কাছে মাথানত না করা যার বৈশিষ্ট, সকল প্রকার রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে যিনি মুক্ত, সহনশীলতা, ক্ষমা ও উদারতা যার বীরত্ব, গীবত, কুৎসা, মিথ্যা বলা থেকে বেচে থাকা যার বৈশিষ্ট, যিনি সর্বদা দীনী খেদমত নিয়ে ব্যস্ত, তিনিই হলেন মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের বর্তমান আমীর আল্লামা মাহমুদুল হাসান। অসাধারণ প্রজ্ঞা, কৌশল ও অতুলনীয় পান্ডিত্যের অধিকারী এই ক্ষণজন্মা আলেমে দ্বীনের সংস্পর্শে এসে সকলেই হতভম্ব হয়ে যায়। আলেম সমাজতো বটেই অন্যান্য সমাজের উচুতলার ব্যক্তিরাও তার জ্ঞান সাগরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিছুদিন পূর্বে সাবেক রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব হুসেইন মুহামমাদ এরশাদ সাহেব মুহিউস সুন্নাহ দা. বা. কে নিয়ে একটি ভক্তিমাখা প্রবন্ধ লিখে অত্যন্ত জননন্দিত হন। বাংলা ভারত, পাকিস্তান তথা পুরো এশিয়ায় একজন আলেমের কর্মগুণের স্বীকৃতি এভাবে কোন সাবেক সেনা প্রধান, রাষ্ট্রপতি দিয়েছেন বলে আমর জানা নেই। সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাহেবও একটি চমৎকার প্রবন্ধ লিখেছেন তার সম্পর্কে, যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয় এটা মুহিউস সুন্নাহ-এর প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ভক্তি, সর্বোপরি তাদের ইসলাম প্রীতি ও ধর্মীয় অনুরাগের প্রতিফলন। এজন্য অবশ্য তারা প্রশংসার দাবীদার। পাঠকের জ্ঞাতার্থে হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদ সাহেবের লেখার একটি অংশ তুলে ধরছি।
“আল্লামা মাহমুদুল হাসান সাহেবকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। তার সান্নিধ্যে থাকার সৌভাগ্যও আমার হয়েছে। তাঁর পিছনে দাড়িয়ে নামায পড়ে আমি অতিশয় তৃপ্তিবোধ করি। খুতবায় তার বক্তব্য শুনে আমি তন্ময় হয়ে যাই। ইসলামী জলসায় তার বয়ান শুনে আমি বিমুগ্ধ হই।যতবার তার বক্তব্য শুনেছি ততবার যেনো মনে হয়েছে ইসলামকে আমি নতুন করে জানলাম। ইসলাম সম্পর্কে কত অতলান্তিক জ্ঞান আল্লামা মাহমুদুল হাসান সাহেবের মধ্যে রয়েছে তা ধারণা করাও যেনো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। হাজার হাজার লাখো লাখো মানুষ তার বক্তব্য শুনে, কুরআন সুন্নাহর প্রকৃত ব্যখ্যা শুনে বিমোহিত হয়।
আমি একান্তভাবে বিশ্বাস করি যে, কেউ মনোযোগ সহকারে মাওলানা হাসানের বক্তব্য শুনলে ইসলাম সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান আহরণ করে আমাদের প্রিয় ধর্মের মাহাত্ম্য অনুধাবন করতে পারবে এবং বিপথগামীও ধর্মের দিকে ফিরে আসবে। বহুবার আল্লামা মামুদুল হাসান সাহেবের বক্তব্য শুনেছি এবং যতবারই শুনেছি ততবারই অবাক হয়ে ভেবেছি- আলøাহ একজন মানুষের মধ্যে তার অপার মহিমার এত জ্ঞান দিতে পারে! তার বক্তব্যের মধ্যে কখনোই কোনো উদ্দেশ্যের গন্ধ পাইনি। কোনো ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য তার মুখে শুনিনি। শুনেছি ইসলামের মাহাত্ম, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কীর্তিকথা এবং আ্লোহার বাণীর অপূর্ব ব্যাখ্যা। তার কথা শুনে আমি স্নত হয়েছি। নিজকে ধন্য মনে করেছি একজন মুলমান হিসেবে।আল্লাহরর প্রতি লক্ষ কোটিবার কৃতজ্ঞাত প্রকাশ করছি, আমার মনে ইসলামী চেতনা জাগ্রত রাখার জন্য। (দেনিক ইনকিলাব : ২৬/০৭/০৭)
আমীরুল উমারার দায়িত্ব অর্পণ
১৯৯৩ সনে হযরত ওয়ালা হারদূয়ী রহ. ধানমন্ডিস্থ হাজী হাবীবুল্লাহ সাহেবের বাসায় সমস্ত মুরিদ্বীন ও খুলাফায়ে কেরামের মজলিসে এক পর্যায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, কি হল বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরামের সুন্নতের কাজের প্রতি তারা এত অবহেলা করছে। আমার আফসোস হয় আপনাদের কাজের প্রতি। আজ আমি এত ব্যথিত যে, এখন যদি আমার উপযুক্ত তিন তিনটি ছেলে এক সঙ্গে মারা যেত, তবুও আমি এত কষ্ট পেতাম না, যতটুকু কষ্ট পেয়েছি আপনাদের কাজের অবস্থা লক্ষ করে। একথা শোনামাত্র মরহুম মাওলানা ফজলুর রহমান সাহেব রহ. অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। হযরত আরো বললেন, বাংলাদেশের সফর বাতিল করে আমি আজই হারদূয়ীতে চলে যাব। এই বলে তনি কামরা বন্ধ করে দিয়ে সকলের সাথে সাক্ষাৎ বন্ধ করে দিলেন। এ অবস্থায় উপস্থিত সকলে অঙ্গীরকারণামা পেশ করলে হযরত খুশী হয়ে যান তারপর হযরত সকলকে ডেকে খুসুসী নসীহত করেন।
৩রা জিলকদ ১৪১৩ হি. মোতাবেক ১৯৯৩ বসুন্ধরা ইসলামী রিসার্চ সেন্টারের মুহতামিম হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুর রহমান সাহেব দা. বা.-এর দস্ত মুবারকে হযরত ওয়ালা হারদূয়ী রহ. লেখালেন :
حضرن مرشدنا ومولانا شاه ابرار الحق دامت بركاتهم نے حضرت مولانا محمود الحسن مهتمم جامعة إسلامية جاترابارى كو أمير الأمراء دعوة الحق بنايا هے
“আমাদের মুর্শিদ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক সাহেব দা. বা. যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মাহমূদুল হাসান সাহেব কে মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমীরুল উমারা মনোনীত করেছেন।”
সে দিন থেকেই সরাসরি হারদূয়ী হযরত কর্তৃক মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমিরুল উমারা হিসেবে বিরাট দায়িত্বের বোঝা মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দা.বা.এর উপর অর্পণ করা হয়।
হযরত ওয়ালা হারদূয়ী রহ. প্রণীত মজলিসে দাওয়াতুল হকের কর্ম পরিচালনার মূলনীতি
১. প্রয়োজন হলে ‘মজলিসে উমারার’ সাথে পরামর্শক্রমে আমীর এবং নায়েবে আমীরদের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে।
২. দাওয়াতুল হকের বাৎসরিক ইজতিমা মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ-এর মারকাজ জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে। আমীরুল উমারার অনুমোদন সাপেক্ষে জেলা ও থানা পর্যায়ে ইজতিমা অনুষ্ঠিত হতে পারে। প্রয়োজন বোধে আমীরুল উমারা মজলিসে উমারার সাথে পরামর্শ করতে পারেন।
৩. মজলিসে দাওয়াতুল হকের কোন আমীর, নায়েবে আমীর ও বিশেষ সদস্যগণ মজলিসুল উমারার অনুমোদন ব্যতীত দাওয়াতুল হক অথবা অন্য কোন নামে ভিন্নভাবে কাজ করতে পারবেন না। তবে দাওয়াতুল হক থেকে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্রভাবে যে কোন নামে কাজ করার ব্যাপারে সে স্বাধীন।
৪. সমগ্র বাংলাদেশে দাওয়াতুল হকের যাবতীয কার্যক্রম পরিচালনা ও তত্তাবধানের সকল দায়-দায়িত্ব মজলিসুল উমারার উপরই ন্যস্ত থাকবে। অন্য কোন নেগরান বা মজলিসে শুরার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনে মজলিসুল উমারা বা কোন বিশেষ সদস্যের সাথে পরামর্শ করে নেয়া যেতে পরে।
৫. জেলা এবং থানা ভিত্তিক ইজতিমার জন্য হালকার সদস্যদের নিকট থেকে অবাধে চাঁদা আদায় থেকে বিরত থাকবে।
৬. জেলা এবং থানা ভিত্তিক ইজতিমায় আমীরুল উমারা অথবা তাঁর মনোনীত মজলিসুল উমারার সদস্যদের মধ্য হতে একজন বিশিষ্ট আলেমের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরী।
৭. জেলা এবং থানাভিত্তিক ইজতিমার জন্য আমীরুল উমারা ও হালকার আমীর উভয়ই আহবায়ক হতে পারেন।
৮. কেন্দ্রীয় সমস্ত এ’লান ও প্রচারপত্র ইত্যাদি কেন্দ্র থেকেই প্রচরিত হবে।
৯. কোন বিষয়ে মত পার্থক্য দেখা দিলে আমীরুল উমারার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে।
১০.আমীর এবং নায়েবে আমীরগণ সরাসরি রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবেন।
আমার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিগণ বিশেষ করে আমার খুলাফাগণ সবসময় দাওয়াতুল হকের কাজের ব্যাপারে ইখলাস ও মুহাব্বতের সাথে আমীরুল উমারার প্রতি র্সপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন।

(মুহিউস হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক সাহেব রহ.
নাযিম মজলিসে দাওয়তুল হক, হারদূয়ী,
১০ শাওয়াল ১৪২৪ হিজরী, ৫ ডিসেম্বর ২০০৩ ইং শুক্রবার)

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৮৫২ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ২.৩৩)