শিক্ষানীতি ২০১০ : পর্যালোচনা ও পরামর্শ
লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ শুক্রবার, অগাষ্ট ৬, ২০১০ (৪:০৮ অপরাহ্ণ)
মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান
বুখারী শরীফের হাদীসে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “উপদেশ প্রদান দ্বীনের অন্যতম একটি দায়িত্ব।” এই হাদীসের আলোকে ভাল পরামর্শ ও সদুপদেশ দানের গুরুত্ব ফুটে উঠে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ঘোষিত শিক্ষানীতি সম্পর্কে নিম্নে কিছু জরুরী পরামর্শ উল্লেখ করা হলো।
(১) জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯-এর চূড়ান্ত খসড়া
(ক) ইসলাম ধর্ম-শিক্ষা নিয়ে এতে অতি সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। ইসলামের মূল উৎস পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্-র কোনো বর্ণনা দেয়া হয় নাই। অথচ খৃষ্টান ধর্মের আলোচনা প্রসঙ্গে বাইবেলের উল্লেখ রয়েছে। এটা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনতার জন্য উস্কানিমূলক ও অতি বেদনাদায়ক। সমাধানের জন্য পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ শব্দদ্বয় সংযোজন করা প্রয়োজন।
(খ) অন্যান্য ধর্মের বৈশিষ্ট্যসমূহকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে যুগোপযোগী করে তুলে ধরা হয়েছে। আর তুলানামূলকভাবে ইসলামী শিক্ষার ব্যাপকতাকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এর সমাধান কল্পে ইসলামের বিশ্বাসগত, উপাসনাগত এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক, চারিত্রিক ও ব্যবহারিক ব্যাপক অবস্থানকে মানসম্মত ভাবে সংযোজন করা আবশ্যক।
(২) প্রাইমারী শিক্ষা
আট বছর মেয়াদ প্রাইমারী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার কারণে নিম্নোক্ত ক্ষতির আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।
(ক) পবিত্র কুরআন মুখস্থ করে হাফেয হওয়ার সুযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হবে।
(খ) আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের হাজার হাজার হাফেয আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে গৌরবময় ইতিহাস রচনা করে আসছে; মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের এই সুনাম ঐতিহ্য সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে।
(গ) সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দেশের হাজার হাজার হাফেয, খতীব, ইমাম, মুআজ্জিন কর্মরত আছেন। বিশেষ করে তারাবির নামাযের ইমামতির সুবাদে তারা বিদেশে সম্মানের সাথে বসবাস করছেন। হাফিয হওয়া বন্ধ হলে দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং এসব মানুষ অসহায়, অসচ্ছল জীবনযাপনের ছোবলে আক্রান্ত হবে।
(ঘ) উপরোক্ত হাফেযদের মাধ্যমে দেশে বিরাট অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আমদানী হয়ে থাকে, যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনিত ঘটবে।
(ঙ) পবিত্র কুরআনের হাফেযদের অভাবে আমাদের মাতৃভুমি বাংলাদেশে রমযান মাসের তারাবীসহ ধর্মীয় শিক্ষকতা ইমামতি, মুয়াজ্জেনীসহ অসংখ্য দ্বীনী কার্যক্রম বন্ধ হবে এবং বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে।
(চ) পবিত্র কুরআন মুখস্ত করা এবং তেলাওয়াত করার রহমত ও বরকত থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হবে। এবং খোদায়ী গযবের সম্মুখীন হবে।
উল্লেখিত বিপদগুলো ঘটবে কেন? কারণ-
(১) আট বৎসরে প্রাইমারী শিক্ষা সমাপ্তির পর ছাত্রদের প্রকৃত বয়স মোটামুটি ১৫/১৬ বৎসর হয়ে যাবে। অথচ পবিত্র কুরআন মুখস্থ করার স্বাভাবিক বয়স ৫/৬ থেকে ১০/১২ বছর পর্যন্ত।
(২) পবিত্র কুরআন মুখস্থ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। মদ, গুন্না ইত্যাদি তাজবীদের নিয়ামাবলীসহ সহীহশুদ্ধভাবে মুখস্থ করতে হয়। এর জন্য যেমন প্রয়োজন হয় শ্রম ও মেহনতের তেমনি প্রয়োজন হয় পরিপূর্ণ নিমগ্নতার। একটি যের-যবরেও যাতে ভুল না হয় সে ব্যাপারে একান্তভাবে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হয়। এজন্য ফজরের পূর্বে রহমতের বিশেষ সময়ে নীরব পরিবেশে প্রতিদিনের সবক মুখস্থ করতে হয়। তাছাড়া দৈনিক পেছনের সবক দুইভাবে সর্বমোট ৩ টি সবক শোনাতে হয়। এর সাথে অন্য কোন বিষয়ভিত্তিক বই-পুস্তক পড়া মোটেই সম্ভব হয় না। অন্যথায় হেফযের কাজ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(৩) ১৫/১৬ বৎসর বয়সের ছেলেদের চিন্তা-ভাবনায় স্থিরতা থাকে না। পারিপার্শ্বিকতার ছোবলে আক্রান্ত হয়ে অন্যমনস্ক হতে থাকে। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে হেফযের প্রতি মনযোগী করা দুস্কর হয়ে পড়ে।
অতএব আমাদের পরামর্শ (ক) আট বছর “বাধ্যতামূলক” এর স্থলে “ঐচ্ছিক” করা যেতে পারে। (খ) গানবাদ্য, নাচ, নাট্যান্ষ্ঠুান ছাত্রদের মন-মানসিকতাকে চরিত্রহীন করে তোলে। ইসলাম তথা কুরআন-সুন্নায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে কুসংস্কার ও পাপাচার আখ্যা দিয়ে তা বর্জনের কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় হেফযের ছাত্রদেরকে এ সমস্ত কর্মকাণ্ডে জড়িত করা হলে কেবল ধর্মের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনই হবে না, হেফয করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে। সুতরাং গানবাদ্য, নাট্যানুষ্ঠান ললিতকলা ইত্যাদি সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে।
(৩) একমুখী শিক্ষা
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী সন্তানদের জন্য আট বৎসরের একমুখী শিক্ষা নিম্নোক্ত কারণে যুক্তিযুক্ত নয়।
(ক) প্রত্যেক ধর্মানুরাগী ব্যক্তি স্বীয় সন্তানকে স্ব স্ব ধর্মবিশ্বাসে বিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে প্রয়াসী হয়। কচি বয়সেই মন-মানসে ধর্মীয় চিন্তাধারার বীজ বপন করা নাহলে পরবর্তীতে উঠতি বয়সে ধর্মীয় ভাবধারায় গড়ে তোলা মোটেই সম্ভব হয় না, বরং নিশ্চিতভাবে ধর্মহীনতার গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হয়।
(খ) বিভিন্ন ধর্ম-বিশ্বাসে পার্থক্য থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরস্পর বিরোধ,তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া-কলহ এমনকি অপ্রীতিকর ঘটনাবলী বৃদ্ধি পাবে। সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা প্রকট হয়ে উঠবে। বিশেষ করে মুসলিম-অমুসলিম সংঘাতের পথ সুগম হবে। নিম্নে ধর্ম-বিশ্বাসের পার্থক্যের কতিপয় উদাহরণ উল্লেখ করা হলোÑ
(ক) ইয়াহুদীরা হযরত ঈসা আ.কে নবী হিসেবে বিশ্বাস করে না বরং জারজ সন্তান বলে বিশ্বাস করে।
(খ) তারা হযরত মরিয়মকে ব্যভিচারিনী নারী হিসেবে বিশ্বাস করে।
(গ) তারা মনে করে, অপরাধের কারণে হযরত ঈসা আ.-কে শুলিবিদ্ধ করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
পক্ষান্তরে খৃষ্টানদের অন্তরে নিম্নরূপ বিশ্বাস বদ্ধমূল রয়েছে।
১. আল্লাহপাক স্বয়ং ঈসা-যিশুর আকৃতি ধারণ করে আত্ম প্রকাশ করেছেন, সুতরাং ঈসা-যিশু স্বয়ং আল্লাহ।
২. তাদের অন্য এক দলের ধারণা, হযরত ঈসা আ. আল্লাহর পুত্র, হযরত মরিয়ম আল্লাহর স্ত্রী, স্বামী-স্ত্রী মিলনে হযরত ঈসা-যিশু জন্মগ্রহণ করেন। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী এবং পুত্র এই তিনের সমষ্টি হলো আল্লাহ।
৩. হযরত ঈসা আ. তার অনুসারীদের অপরাধ ও পাপ মোচনের লক্ষ্যে শুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ফলে আখেরাতের জীবনে তারা সম্পূর্ণরূপে শাস্তিমুক্ত, মৃত্যু হওয়া মাত্রই তারা জান্নাতী।
অপরদিকে হিন্দুদের বিশ্বাস হলোÑ
(ক) হিন্দুরা বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসী। তাদের দেবতাদের সংখ্যা ৩৩ কোটি।
(খ) তারা পুন:জন্মবাদে বিশ্বাসী। তারা মনে করে, প্রত্যেক মানুষ মৃত্যুর আপন কর্মফল ভোগ করার জন্য পুনরায় পৃথিবীতে জন্ম লাভ করে।
(গ) হিন্দুরা গরুকে দেবতা গন্যকরে। এজন্য গো-রক্ষা আইন কার্যকর করতে গিয়ে গো-মাংসা ভোজী অন্যান্য জাতির সাথে বহু অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাত হয়।
(ঘ) তারা গাছ, পাথর, সাপ এমনকি লিঙ্গের পুজাও করে।
মুসলমানদের বিশ্বাস নিম্নরুপÑ
(১) আল্লাহ পাক এক, তার কোন স্ত্রী ও সন্তান নেই। ঈসা আ. নবী ছিলেন। তাঁকে শুলিবিদ্ধ করা হয় নাই। তিনি জীবিত অবস্থায় যথাস্থানে আছেন। পুনরায় তাঁর পৃথিবীতে আগমন ঘটবে।
(২) হযরত মরিয়ম ব্যভিচার করেন নাই। তিনি অত্যন্ত পাকপবিত্র নারী ছিলেন। তিনি সতীত্ব সুসংরক্ষণ করেছিলেন। তাঁর গর্ভে হযরত ঈসার জন্ম খোদায়ী কুদরতের নিদর্শন।
(৩) ত্রিত্ববাদের বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক।
(৪) বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তাঁর প্রতি ঈমান আনয়ন ব্যতীত মুক্তির কোন উপায় নেই। অবিশ্বাসী সকলেই অমুসলিম এবং আল্লাহ পাকের নিকট অভিশপ্ত।
(৫) মানুষ নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য নিজেই দায়ী। হাশরের বিচারে প্রতিটি মানুষ ভাল-মন্দের প্রতিদান প্রাপ্ত হবে।
(৬) হযরত উযাইর আ. নবী ছিলেন। আল্লাহর পুত্র হওয়ার বিশ্বাস ভিত্তিহীন।
(৭) পুনর্জীবন সত্য এবং অবশ্যম্ভাবী। মৃত্যুর পর পুনরায় পৃথিবীতে জন্ম হবে না। আখেরাতেই চিরস্থায়ী ভাবে ভাল-মন্দের ফল ভোগ করতে হবে।
(৮) তাওরাত, ইঞ্জিল, (বাইবেল) যাবূর এসব আসমানী কিতাব ছিল। এই কিতাবসহ অন্যান্য আসমানী কিতাবসমূহ রহিত এবং বিকৃত বিধায় আমলযোগ্য নয়। বেদ আসমানী কিতাব নয়। আর হলেও বিকৃত বিধায় অনুসরণ যোগ্য নয়। মোটকথা এ ধরণের অগণিত বিষয়ে বিশ্বাসগত, উপাসনাগত, অর্থনৈতিক, ব্যবহারিক বিভিন্ন ধর্মের ও চরিত্রগত বিধিবিধানে বিশাল পার্থক্য বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও শিশুদেরকে একমুখী শিক্ষায় শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তা কার্যকর করণ স্বপ্ন ছাড়া অন্য কিছু নয়, যা বুদ্ধিমানমাত্র বুঝতে সক্ষম।
(৯) একমুখী শিক্ষায় রয়েছে সহশিক্ষার ব্যবস্থা। প্রাইমারী শিক্ষার পরও থাকবে একই ব্যবস্থা। এর অনাকাংক্ষিত ফলাফল এবং ন্যাক্কারজনক ঘটনাবলি গুরুতর জাতীয় সমস্যা ও কলংকে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যে ধর্ষণ ও সমকামিতার বিভৎষ রূপ দেখে জাতি কিংকতর্ববিমূঢ়। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যুবতীরা সতিত্ব সম্ভ্রম হারাচ্ছে সহপাঠি যুবকদের দ্বারা। এমনকি শিক্ষকদের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে কোমলমতি ছাত্রীরা ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছে।
(১০) এমতাবস্থায় প্রাইমারী শিক্ষার জীবনে তাদেরকে সহশিক্ষার অশুভ পরিণতি থেকে মুক্ত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে তাদেরকে যৌন নিপীড়নের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে বাধ্য করার উদ্যোগকে কোনো সভ্য মানুষ বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতি মেনে নিতে পারে না।
এর সমাধানে করণীয় :
(ক) অগণতান্ত্রিক সেক্যুলার ব্যবস্থার পরিবর্তে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে প্রাইমারী শিক্ষার সিলেবাস তৈরী এবং কার্যকর করা।
(খ) প্রাইমারী একমুখী শিক্ষা বাধ্যতামূলক না করে স্ব স্ব ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার স্বাধীনতা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
(গ) কচি এবং উঠতি বয়সের শিশু সন্তানদের চরিত্রগত পবিত্রতা রক্ষার প্রয়োজনে গান-বাদ্য, নাচ, বেহায়া-বেলেল্লাপনা, ললিতকলা ও অপসংস্কৃতির বিষয়সমূহ প্রাইমারী শিক্ষা সিলেবাস থেকে বাদ দেয়া।
এর উপকারিতা নিম্নরূপ:
১. একমুখী বাধ্যতামূলক শিক্ষানীতি পরিবর্তে ধর্মীয় শিক্ষার স্বাধীনতা রক্ষা করলে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগন প্রশান্তি লাভ করবে।
২. সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সন্তানদের স্বতন্ত্রভাবে ধর্মীয় শিক্ষার অধিকার সংরক্ষিত হবে। ফলে মুসলিম বিশ্বের সমর্থন, তাদের অনুদান এবং সে সব দেশে কর্মসংস্থানের পথ সুনিশ্চিত হবে।
(৪) কওমী মাদরাসার মঞ্জুরী প্রসঙ্গে
কওমী মাদরাসার মঞ্জুরী তথা সরকারী স্বীকৃতির প্রয়োজন অনুভব করে বিগত সরকার গেজেট প্রকাশ করেও নিম্নোক্ত কারণে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি:
(ক) মঞ্জুরী গ্রহণ করা-না করার ব্যাপারে দুইটি গ্র“প সৃষ্টি হয়। যারা মঞ্জুরী গ্রহণ করার পক্ষে নয়, তাদের এ অবস্থান গ্রহণের অন্যতম কারণ হলো, সরকারী মঞ্জুরীপ্রাপ্ত আলিয়া মাদরাসাসমূহের ভয়াবহ পরিণতি।
(খ) আলিয়া মাদরাসার এ পরিণতির কারণ হচেছ, শিক্ষার সিলেবাস প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনায় সরকারী হস্তক্ষেপ।
(গ) যুগ যুগ ধরে কাওমী মাদরাসাসমূহ স্বতন্ত্রভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের প্রাণখোলা সহযোগিতা ও আল্লাহপাকের বিশেষ রহমতে স্বীয় আদর্শ রক্ষা করে খাঁটি ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিস্তারে অবদান রেখে আসছে। সরকারী হস্তক্ষেপের কারণে তার স্বাতন্ত্র্য, আদর্শ, বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে, যা কোন মুসলমানের জন্য কাম্য হতে পারে না।
(ঘ) সরকারী মঞ্জুরীর কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের ব্যাপারে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। ফলে জনগণের সাহায্য সহাযোগিতার হাত সংকুচিত হয়ে কওমী মাদরাসাসমূহ বিরাট অর্থনৈতিক সংকটে পতিত হবে।
অপর দিকে যারা মঞ্জুুরী গ্রহণের পক্ষে রয়েছেন তারা তিনভাগে বিভক্ত, যথা :
১. এসব মাদরাসার জাতীয় ও আঞ্চলিক একাধিক স্বতন্ত্র বোর্ড রয়েছে, রয়েছে তাদের স্বতন্ত্র শিক্ষা সিলেবাস। সিলেবাসের সমন্বয় সাধন, একমুখী করণ এসব কাজ কঠিন বিধায় প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্নভাবে মঞ্জুরী লাভের জন্য চেষ্টা করে চলেছেন।
২. রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত একটি গ্র“প মঞ্জুরীর পক্ষে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রচেষ্টার আড়ালে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের বিষয়টি অনেকের আস্থাহীনতার কারণ হয়ে আছে।
৩. রাজনীতির সাথে সম্পর্কহীন বৃহত্তর অংশটিও মঞ্জুরী লাভের পক্ষে, কিন্তু পরস্পর কোন্দলের কারণে গ্রহণযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না। মঞ্জুরীর স্বপক্ষে তাদের সামনে নিম্নোক্ত উপকারিতার বিষয়গুলো উপস্থিত:
ক. সরকারী মঞ্জুরীর মাধ্যমে মাদরাসাসমূহের ভিত্তি মজবুত হবে এবং ভবিষ্যতে কোন ধরনের হুমকির সম্মুখীন হতে হবে না।
খ. মঞ্জুরীর সুবাদে সিলেবাস ও অন্যান্য জটিলতা সহজেই নিরসন পূর্বক ঐক্যশক্তি সৃষ্টি হবে।
গ. একক বোর্ডের মাধ্যমে সিলেবাসের ঐক্য এবং লেখাপড়ার মানগত উন্নততর অবস্থান সৃষ্টি করা সহজ হবে। এই ত্রিমুখী মতপার্থক্যের সমাধানে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
১. এ লেভেল এবং ও লেভেল পদ্ধতির মত কওমী মাদরাসাকে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা প্রদান।
২. ঐতিহ্যবাহী মানসম্মত কওমী মাদরাসাকে ভার্সিটির মান দিয়ে অথবা পৃথক কওমী ভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করে সেই ভার্সিটির অধীনে দেশের কওমী মাদরাসাসমূহকে নিম্নশর্তে মঞ্জুরী দেয়া।
ক. একাধিক বোর্ডগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একক বোর্ডের অধীনে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা।
খ. একক শিক্ষা সিলেবাস বাধ্যতামূলক করা।
গ. কওমী মাদরাসা শিক্ষাকে সময়োপযোগী করে তোলার জন্য মূল সিলেবাস সংরক্ষণ পূর্বক শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন প্রয়োজনীয় বিষয় সংযোজন করা।
ঘ. একক শিক্ষা সিলেবাসের তিনটি স্তর বিন্যাস করে প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরে আঞ্চলিক বোর্ডকে পরিচালনার ক্ষমতা দেয়া এবং সর্বশেষ স্তরের পরীক্ষা পরিচালনা ও সার্টিফিকেট দেয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় বোর্ডকে দেয়া। অথবা সর্বস্তরের পরিচালনা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, সার্টিফিকেট দানের ক্ষমতা একক বোর্ডের অধীনে বাধ্যতামূলক করা। আর আঞ্চলিক বোর্ডকে স্তরভিত্তিক সনদপত্র দানের ক্ষমতা দেয়া।
ঙ. আঞ্চলিক বোর্ডের সনদপত্রের ভিত্তিতে একক বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের নিয়ম বাধ্যাতমূলক করা।
চ. আঞ্চলিক বোর্ডের প্রতিনিধি এবং যোগ্যতাসম্পন্ন অভিজ্ঞ ইসলামী শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে একক বোর্ড তৈরী করা।
ছ. আঞ্চলিক বোর্ড তৈরীর ক্ষমতা স্ব স্ব অঞ্চলের উপর ন্যস্ত করা এবং কেন্দ্রীয় বোর্ডের মঞ্জুরী হাসিলের শর্ত আরোপ করা।
জ. আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় বোর্ডসমূহের সদস্যমণ্ডলী, সভাপতি ও সেক্রেটারীসহ সবাইকেই রাজনৈতিক তৎপরতামুক্ত হওয়ার শর্ত আরোপ করা।
এ রূপরেখা সফল না হলে বিকল্প ব্যবস্থা নিম্নরূপ হতে পারে :
১. বিভাগভিত্তিক মানসম্মত ঐতিহ্যবাহী দাওরায়ে হাদীস (টাইটেল) মাদরাসাসমূহকে- যার পরিমাণ ৩০/৩৫ হতে পারে- মঞ্জুরী দিয়ে তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা। বিষয়টি কঠিন হলেও অসম্ভব হবে না। এই কমিটি নিরপেক্ষভাবে চেষ্টা চালিয়ে অবশিষ্ট মাদরাসাসমূহকে পর্যায়ক্রমে অধিভুক্ত করতে সক্ষম হবে।
২. মঞ্জুরীপ্রাপ্ত মাদরাসাসমূহের প্রতিনিধি এবং অরাজনৈতিক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের মাধ্যমে একটি কমিটি গঠন করা। এই কমিটি উপরোক্ত নিয়মে একক শিক্ষাবোর্ড তৈরী করতে সক্ষম হবে।
(৫) স্বতন্ত্র মঞ্জুরীর উপকারিতা :
ক) উপরোক্ত নিয়মে কওমী মাদরাসাসমূহকে স্বতন্ত্র মঞ্জুরী দান করলে সমস্ত মাদরাসাকে একই বোর্ডের অধীনে নিয়ন্ত্রণ পূর্বক শিক্ষার মান উন্নত করার পথ সুগম হবে।
খ) ব্যক্তিগত অথবা রাজনৈতিক উস্কানিতে গঠিত বিচ্ছিন্ন আন্দোলনমুখী প্রবণতা হ্রাস পাবে।
গ) মাদরাসা, মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্র সমাজ রাজনৈতিক ছোবল থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং পড়াশোনার পরিবেশ নিরাপদ হবে।
ঘ) কওমী মাদরাসার সর্বোচ্চ শিক্ষা সমাপ্তকারী ব্যক্তি সরকারীভাবে স্বীয় মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তাদের কর্মতৎপরতার সুফল দেশ ও জাতি লাভ করে ধন্য হবে।
ঙ) সরকারী-আধাসরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে যোগ্যতা অনুপাতে নিয়োগ লাভ করে অবদান রাখার সুযোগ পাবে। ফলে দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে।
চ) ধর্মীয় ক্ষেত্রে কাংক্ষিত সংহতি স্থাপিত হবে এবং এক কেন্দ্রিক শক্তি অর্জনের সুবাদে ধর্ম ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক তৎপরতা প্রতিহতকরণ সম্ভব হবে।
(৬) সংবিধান সংক্রান্ত :
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ এ (চুড়ান্ত খসরা) মাদরাসা শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে: ইসলামী শিক্ষার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের মনে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূল সা. এর প্রতি অটল বিশ্বাস গড়ে তোলা এবং শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রকৃত মর্মার্থ অনুধাবনে সক্ষম করে তোলা। তারা এমনভাবে তৈরী হবে যেন তারা ইসলামের আদর্শ ও মর্মবাণী ভাল করে জেনে বুঝে সে অনুসারে নির্ভরযোগ্য চরিত্রের অধিকারী হয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে সেই আদর্শ ও মূলনীতির প্রতিফলন ঘটায়।” এছাড়া ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে আলোচনাপ্রসঙ্গে কৌশলÑ (ক) ইসলাম ধর্মশিক্ষা ১-এ লেখা হয়েছে, ইসলামের মর্মবাণীর যথাযথ উপলব্ধি ঘটায় সেভাবেই ইসলাম ধর্ম শিক্ষা দেয়া হবে। অপরপক্ষে কৌশল খ. খৃষ্টান ধর্ম শিক্ষা ৪- এ লেখা হয়েছে, বর্তমান জগতের বাস্তব সমস্যা এবং অন্যায়-অত্যচারে ও অশান্তির কারণ সম্পর্কে সচেতন করা এবং বাইবেলের শিক্ষার আলোকে তা সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে চালানোর যোগ্যতা অর্জনের পথে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেয়া হবে।
ইসলাম ধর্ম শিক্ষা এবং খৃষ্টান ধর্ম শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে উপরোক্ত বক্তব্য ও মন্তব্য থেকে যে বিষয়সমূহ প্রতীয়মান হয় তা নিম্নরূপ :
(ক) উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা খৃষ্টধর্ম ব্যতীত অন্যান্য ধর্ম বিশেষ করে মাবন জীবনের নতুন-পুরাতন সকল ধরনের সমস্যার সমাধান সম্বলিত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ধর্ম ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বকে চরমভাবে খাটো করে এরূপ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যে, বর্তমান জগতের আধুনিক সমস্যাসমূহের সমাধান খৃষ্টধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্মে নেই।
(খ) বর্তমান জগতের সমস্যাবলীর সমাধান পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে দান করা এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু “বাইবেলের আলোকে সমাধান করা হবে” উল্লেখ করে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সমাধানের পথকে বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এর সমাধান নিম্নরুপ হতে পারে:
১. সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতির গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণের তাগিদে “বাইবেলের আলোকে”-এর স্থলে “পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে” কথাটি সংযোজন করা এবং সংখ্যালঘুদের স্ব স্ব-ধর্মের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের স্বাধীনতা দেয়া।
২. যদি খৃষ্টানদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বাইবেলের কথা উল্লেখ করা হয়ে থাকে, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সমস্যা সমাধানের জন্য পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর আলোকে কথাটি কেন সংযোজন করা হলো না? অবিলম্বে কথাটি সংযোজন করা হোক।
(৬) ধর্ম নিরপেক্ষতা :
(ক) ধর্মনিরপেক্ষতা স্বভাবগতভাবেই শান্তিশৃংখলা এবং রাষ্ট্রীয় সংহতির জন্য মারাত্মক বাধা। কারণ কোন মানুষ স্বীয় ধর্ম বিশ্বাস বাদ দিয়ে কোন কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে পারে না। এ জন্যই উন্নত-অনুন্নত কোন দেশেই কার্যত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নেই। অবশ্য অনেক রাষ্ট্রের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা লেখা রয়েছে কিন্তু কার্যকারিতা মোটেই নেই। শুধু তাই নয়, ঐ সমস্ত সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রসমমূহে শাসকদের ধর্মের প্রতি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা আরো প্রকট। কারণ মানুষ যা বিশ্বাস করে কর্মজীবনে তার প্রতিফলনই স্বাভাবিক। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের মুল শক্তি মূলত ধর্ম-বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে। যারা নাস্তিক তাদেরও রয়েছে কিছু বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসই তাদেরকে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যের প্রতি চালিত করে।
(খ) বাংলাদেশের পরিবেশে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ধর্মহীনতা। আর ধর্মহীনতা কারো নিকট কাম্য নয়।
(গ) এদেশে সাধারণভাবে ধর্ম শব্দটি বললে কেবল ‘ইসলাম ধর্ম’ বুঝায়। কারণ এখানে মুলমানদের সংখ্যা ৯০%। কোন স্থানে ‘ধর্মসভা’ আহবান করা হলে কেবল মুসলমানগণই স্বাভাবিকভাবে সেই ধর্মসভায় যোগদান করে থাকে। একথা সকলেরই জানা। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা সাধারণত ‘ধর্মসভা’ শিরোনামে কোন সমাবেশ আহবান করে না। বরং তারা খৃষ্টান বা হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান- এরূপ শিরোনাম ব্যবহার করে থাকে। এমতাবস্থায় ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে ইসলামধর্মহীনতা বুঝায়। অথচ শাসকদলের কেউ ধর্মহীন নয়। অতএব ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে ‘ধর্মের স্বাধীনতা’ বলা যেতে পারে। জাতীয় শিক্ষাতনীতিতেও এই বাক্যটি ব্যবহার করা নিরাপদ বিবেচিত হবে।
(৭) রাজনৈতিক প্রসঙ্গ :
(ক) ইতিমধ্যে সরকারী পর্যায়ে কারো কারো বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। এসব বক্তব্যের দ্বারা মূলত ইসলামী রাজনীতি বন্ধের কথাই বলা হচ্ছে। কেননা ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, এদেশে ধর্ম বলতে ইসলামকেই বোঝায়।
(খ) এরূপ বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত একদিকে অগণতান্ত্রিক অপরদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা এবং তাদেরকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে উসকানি দেয়ার শামিল।
(গ) কওমী মাদরাসাসমূহ যুগযুগ ধরে ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন দ্বীনী ও জাতীয় বিষয়ে অবদান রেখে আসছে। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রাণখোলা সাহায্যে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশেষ ঐতিহ্যের অধিকারী। কওমী মাদরাসার আদর্শে জঙ্গীদের স্থান নেই। বরং চরম ঘৃণা প্রদর্শনপূর্বক এটাকে হারাম মনে করা হয়। কওমী উলামাদের অবস্থান, কর্মকাণ্ড ও চারিত্রিক পবিত্রতা সর্বজনস্বীকৃত। যারা ইসলাম বিদ্বেষী তারাই কওমী মাদরাসা, এর পরিচালক এবং ছাত্র-শিক্ষকদেরকে ভর্ৎসনা ও তিরস্কার করে থাকে। আবার প্রশাসনের অনেকেও অজ্ঞের মতো অযৌক্তিক কথা বলে থাকে। অথচ সরকারী-বেসরকারী জরিপে জঙ্গীবাদের সাথে কওমী মাদরাসাসমুহের কোন সম্পর্ক নেই তা বারবার সাব্যস্ত হয়েছে।
(ঘ) সরকারীভাবে ডি জি এফ আই, সি আইডিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগের নথিপত্রে এবং থানার কাছে দুস্কৃতিকারীদের নাম ঠিকানা বিস্তারিতভাবে বিদ্যমান রয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়ে শাস্তি ভোগ করেছে। আবার অনেককেই দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসীতে ঝোলানো হয়েছে। এদের মধ্যে একজনও কি কওমী মাদরাসায় পাশ করা? সরকারীভাবেও বলা হয়েছে যে, কওমী মাদরাসার ছাত্রদের ব্যাপারে কোন সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
অত্যন্ত সুন্দর লেখা। বর্তমান প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি দৃশ্যত কোন অবিশ্বাসীর বা ছদ্ধবেশ ধারী কোন অমুসলিমের ( যেমন নামধারী মুসলমান-বাপে মুসলমান নাম রেখেছিল) চিন্তার ফসল। ইসলামের সব কিছুই বিশ্বের সবার জন্য মঙ্গলজনক, এটা জানাসত্তে ও মনে হচ্ছে শুধূমাত্র ইসলামের বিরোধিতার করার খাতিরেই এই ধরণের পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। আমাদেরকে এর বিরূদ্ধে শোচ্চার থাকতে হবে।আল্লাহ আমাদের সহায় হোন- আমীন।