আলেম সমাজ ও কওমী ছাত্রদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করা:মহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান
লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১০ (৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ)
গত ২৮/৭/১০ রোজ বুধবার মতিঝিল দারুল উলুম মাদরাসায় আয়োজিত খতমে কুরআন ও খতমে বুখারীর মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ গ্রহণ করেন যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহতামিম, গুলশান আযাদ মসজিদের খতীব, মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমীর শাইখুল ইসলাম মুহিউস সুন্নাহ হযরত মাওলানা মাহমূদুল হাসান সাহেব দা. বা.। প্রধান অতিথির ভাষণে হযরত বলেন, একটি চক্র দেশের নিরিহ আলেম সমাজ ও কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে সমাজের দৃষ্টিতে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য সর্বদা বিভিন্ন ধরনের অপবাদ, অসত্য, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কখনো জঙ্গিবাদ, কখনো সাম্প্রদায়িকতা, কখনো মৌলবাদ ইত্যাদি।
তারা আমাদের কওমী মাদরাসার শিক্ষা সিলেবাস সংস্কারের কথা বলে; এর মধ্যে নাকি অপূর্ণতা রয়েছে। আমি তাদেরকে বলবো, আপনারা নারী স্বাধীনতা নারী অধিকার ও নারী মুক্তির যে জিগির তুলে চলেছেন বলুন তো মাদরাসা শিক্ষা সিলেবাস ব্যতীত পৃথিবীর অন্য কোনো শিক্ষা সিলেবাসে নারীর যে প্রতি মাসে দশদিন ঋতুস্রাব হয় তখন নারীর করণীয় কী এবং তার সাথে স্বামীর যোগাযোগ ও আচরণ তখন কী ধরনের হবে এ ব্যাপারে কোন দিক-নির্দেশনা আছে কী? এটা শুধুমাত্র আমাদের শিক্ষা সিলেবাসে রয়েছে। তাহলে কোন শিক্ষার বাহাদুরি করো তোমরা?
আমাদের সিলেবাসের গ্রন্থ বা কিতাবসমূহের কী বিবরণ দেব? শুধু ছোট একটি কিতাবের নাম বলি, ‘মুখতাসারুল কুদুরী’। এই ছোট একটি কিতাবে ইবাদত থেকে শুরু করে লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, আচার-আচরণ বিবাহ-শাদি, অর্থনীতি, বিচারনীতি, পররাষ্ট্র বিষয়ক, স্বরাষ্ট্রবিষয়ক, প্রতিরক্ষা ইত্যাদি সর্ব বিষয়ের আলোচনা সন্নিবেশিত রয়েছে। তবে একটি বিষয় শুধু নেই। সেটা হলো- কীভাবে নারীর ইজ্জত, হরণ করার পর খুন করে বস্তাবন্দি লাশ নদীতে নিক্ষেপ করতে হয়, কীভাবে যিনা করতে হয়, কীভাবে পথে-ঘাটে নারীদের উত্যক্ত করতে হয়, কিভাবে শিক্ষক শিক্ষিকার উপর অস্ত্রের ব্যবহার করতে হয় এবং শিক্ষক-কর্তৃক শিক্ষিকা ও ছাত্রী ধর্ষিতা হতে পারে, সমাজে, রাষ্ট্রে বিশৃংখলা সৃষ্টি কীভাবে করা যায়, এসব বিষয় আমাদের শিক্ষা সিলেবাসে নেই।
তোমরা বিজ্ঞানের বড়াই করো অথচ তোমাদের বিজ্ঞান বারবার ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তোমরা একবার বলো,পৃথিবী নয় সূর্য ঘোরে, আবার কিছুদিন পর বলো সূর্য নয় পৃথিবী ঘোরে, কিছুদিন পর বলো, সূর্য, পৃথিবী, চাদ, গ্রহ সব কিছুই ঘোরে। অথচ এটা দেড় হাজার বছর আগে ওহীর মাধ্যমে আখেরী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। এই বিষয়টা আমাদের প্রথম শ্রেণীর ছোট বাচ্চারাও জানে।
আমাদের কওমী মাদরাসাগুলোতে কেন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না এটা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলে থাকে। আমি তাদেরকে বলবো, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া আবশ্যকীয় বা বাধ্যতামূলক একথা বাংলাদেশের সংবিধানের কোথায় উল্লেখ রয়েছে? তাছাড়া আমাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীত একটি কেন? আমাদেরকে আমাদের তাহযীব-তমদ্দুন ও ইসলামী সংস্কৃতির ভিত্তিতে এই দেশেরই যোগ্য লেখক-সাহিত্যিক-কবিদের মাধ্যমে সঙ্গীত রচনা করে দেওয়া হোক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একাধিক জাতীয় সঙ্গীতের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। বৃটেনে একাধিক সঙ্গীত রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও রয়েছে। আরো বহু রাষ্ট্রে রয়েছে। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সঙ্গীত। তাদের একাজকে সাম্প্রদায়িকতা বলা হয় না। অথচ আমরা অনুরূপ করতে চাইলেই বুলি ছাড়া হয়।
আরো একটি কথা হলো- আমাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীত দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি বলে মনে হয়। তাতে বলা হয়েছে, “আমার সোনার বাংলা” অথচ আমার দেশের নাম বাংলাদেশ। শুধু বাংলা বললে কী বোঝায়? পুরো নাম উল্লেখ করা হলো না কেন? বাংলা বলা হয় ভারতের পশ্চিম বঙ্গকে। যে কবি এই সঙ্গীত রচনা করেছেন তিনি সেখানকার। আফসোস লজ্জা ও দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, আমাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ভিন্ন দেশের এক কবির রচিত সঙ্গীতকে নির্ধারণ করা হলো। আমার দেশে কি কোন যোগ্য মানুষ, যোগ্য কবি ছিল না? স্বাধীনতার পর থেকে এই চল্লিশ বছরেও কি এ দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচনা করার মতো যোগ্য বিদ্বান এ দেশে তৈরি হয়নি?
তারা আমাদের শিক্ষা সিলেবাসে উর্দুর অন্তর্ভুক্তির কারণে বলে থাকে, আমরা দেশকে একটি মিনি পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র করছি। তাদেরকে বলি, আমাদের সিলেবাসে আরবি, বাংলা, উর্দু, ফার্সী ইংরেজী এই সবগুলো ভাষা শিক্ষা দেয়ার কথা রয়েছে। শুধু উর্দু নিয়ে তোমাদের মাথা ব্যথা কেন? তোমাদের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও উর্দু বিষয়ে অনার্স-মাষ্টার্স রয়েছে, সেটা দূষণীয় নয় কেন?
পাকিস্তনীরা আমাদের দেশের বিরুদ্ধে অসংখ্য বইপুস্তক রচনা করেছে উর্দুভাষায়। তোমাদের যদি বলা হয় এগুলোর বিরুদ্ধে তাদের ভাষায় জবাব লেখ। তাহলে কি পারবে? তাছাড়া যদি তোমার উর্দুভাষায় জ্ঞান না থাকে তাহলে তো বুঝতেই পারবে না যে, তারা কী লিখেছে; জবাব দেয়া তো দূরের কথা।
তোমাদের এত দেশ প্রেম, মাতৃভাষার প্রতি এত প্রেম দেখাও তাহলে কথা বলার সময় তোমাদের মুখ দিয়ে বাংলা বের না হয়ে ফটফট ইংরেজী বের হয় কেন? পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার আগে আমাদের ইংরেজীভাষী বৃটিশদের থেকে স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছিল। তাদের ভাষার মায়া ছাড়তে পার না কেন? মাতৃভাষা দিবস ইংরেজী তারিখ ২১শে ফেব্র“য়ারী পালন করো। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, সবই তো ইংরেজী তারিখে পালন করো। এই হলো তোমাদের স্বীয় দেশপ্রেম ও মাতৃভাষা প্রেম। বাংলা মাসের তারীখটাও মনে থাকে না।
আমাদের মাদরসাার ছাত্র ও আলেমদেরকে জঙ্গিবাদী বলো; জঙ্গ মানে হলো যুদ্ধ, মারামারি-কাটাকাটি। তোমাদের ছেলেরা কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে প্রতিনিয়ত জঙ্গ করছে, তাদেরকে জঙ্গী বল না কেন? আসলে এসবই হলো ইসলামের শত্র“দের ষড়যন্ত্র, আর তোমরা বুঝে না বুঝে হয়েছে তাদের সহযোগী।
হযরত সেখানে প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ের উপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করেন
www.dawatul-haq.com
লেখাটি সুন্দর হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ ।
সাদামাটা হলেও কথাগুলো বাস্তব। দেওবন্দের বর্তমান মুহতামিম সায়্যেদ আরশাদ মাদানী দা: বা : এর মুখে দেওবন্দ ও এই সিলসিলার মাদ্রাসাগুলোর ব্যাপারে তারসাথে এক এমেরিকান কালচারাল কুটনৈতিকের কথোপকথন শুনেছিলাম। মাদানী সাহেবকে সে বল্লো: তোমার এই প্রতিষ্ঠানই যে আমাদের সংষ্কৃতি-শিক্ষা ও আদর্শের বিরুদ্ধে সবচাইতে মোক্ষম ও শক্তিধর চ্যালেণ্জ তা আমরা জানি। কিন্তু মুসলমানদের ভক্তি ও বিশ্বাসের বলে তোমরা টিকে যাচ্ছ। পাশ্চাত্যের বিচক্ষণ ইসলাম বিরোধীরা আমাদের ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ। আর এ কারনেই তারা নাস্তিক বা আস্তিক খেলার আগে কারা এসবের মোক্ষম জবাব তৈরি করতে পারে তা গবেষণা করে। এবং তারপরে এমন কিছু সিচুয়েশন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে যাতে আমাদের বিশ্বাস যোগ্যতা আমাদের কাছেই না থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় তারা এ জাতিয় কওমী মাদ্রাসাকে কৌশলে মুসলিম বিশ্বে দুর্বল করে রাখা হয়েছে। দ্বিতীয়ত যে কৌশল তারা অবলম্বন করে তা হলো এই কওমী ঘরণার বাইরে যারা এদের আক্বীদায় বিশ্বাসী যেমন মধ্যপ্রাচ্যের নিরপেক্ষ আলেম সমাজ ও মুজাহিদগন এদেরকেও তারা সন্ত্রাসবাদ ও ইত্যাদিতে পরিচিত করে তোলে এবং এভাবে খোদ মুসলিম বিশ্বের কাছে ইসলামের গোল্ডসমতুল্য মহলকে অপদস্থ ও নির্ভরযোগ্যতাহীন করে তোলা হয়। আল্লাহ আমাদের সাধারণ মানুষদেরকে এই বাস্তবতাটুকো বুঝার তৌফিক দান করুন। এই দোয়া রইল। অবশ্য আশার আলোও দেখা যাচ্ছে। অনেক ইংরেজী শিক্ষিত মানুষ তাবলীগ – হক্কানী আলেম , পীর মাখায়েখ ও বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের সাহয্যে আলেমদেরকে চিনতে ও তাদের অবস্থান ও প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছেন- আলহামদু লিল্লাহ।
@আল মুরতাহিল,মাশাআল্লাহ
কিছু যুক্তি অকট্য। পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
মাশরুর ভাই,
নর্দমার মাঝে ফুল ছিটিয়ে লাভ নাই, আমারব্লগে আপনি এই পোস্টটা কপিপেস্ট করেছেন। এখন সেখানে মাহমুদুল হাসান(দা .বা.)কে নিয়ে হাসিঠাট্টা শুরু হবে। আমার পরামর্শ পোস্টটা সরিয়ে নেন, এরপর উনার যুক্তিগুলোকে নিজের মত করে লিখে একটা পোস্ট দেন। মাহমুদুল হাসান(দা .বা.) এর উদ্ধৃতি দেবার দরকার নাই।
@সাদাত,আপনার সাথে কথাবলার অপেক্ষায়০১৯৩৭৮৪০০৩৬