শিক্ষানীতি ২০১০ : পর্যালোচনা ও পরামর্শ 2
লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১০ (৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ)
মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান
(৬) ধর্ম নিরপেক্ষতা :
(ক) ধর্মনিরপেক্ষতা স্বভাবগতভাবেই শান্তিশৃংখলা এবং রাষ্ট্রীয় সংহতির জন্য মারাত্মক বাধা। কারণ কোন মানুষ স্বীয় ধর্ম বিশ্বাস বাদ দিয়ে কোন কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে পারে না। এ জন্যই উন্নত-অনুন্নত কোন দেশেই কার্যত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নেই। অবশ্য অনেক রাষ্ট্রের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা লেখা রয়েছে কিন্তু কার্যকারিতা মোটেই নেই। শুধু তাই নয়, ঐ সমস্ত সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রসমমূহে শাসকদের ধর্মের প্রতি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা আরো প্রকট। কারণ মানুষ যা বিশ্বাস করে কর্মজীবনে তার প্রতিফলনই স্বাভাবিক। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের মুল শক্তি মূলত ধর্ম-বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে। যারা নাস্তিক তাদেরও রয়েছে কিছু বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসই তাদেরকে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যের প্রতি চালিত করে।
(খ) বাংলাদেশের পরিবেশে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ধর্মহীনতা। আর ধর্মহীনতা কারো নিকট কাম্য নয়।
(গ) এদেশে সাধারণভাবে ধর্ম শব্দটি বললে কেবল ‘ইসলাম ধর্ম’ বুঝায়। কারণ এখানে মুলমানদের সংখ্যা ৯০%। কোন স্থানে ‘ধর্মসভা’ আহবান করা হলে কেবল মুসলমানগণই স্বাভাবিকভাবে সেই ধর্মসভায় যোগদান করে থাকে। একথা সকলেরই জানা। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা সাধারণত ‘ধর্মসভা’ শিরোনামে কোন সমাবেশ আহবান করে না। বরং তারা খৃষ্টান বা হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান- এরূপ শিরোনাম ব্যবহার করে থাকে। এমতাবস্থায় ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে ইসলামধর্মহীনতা বুঝায়। অথচ শাসকদলের কেউ ধর্মহীন নয়। অতএব ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে ‘ধর্মের স্বাধীনতা’ বলা যেতে পারে। জাতীয় শিক্ষাতনীতিতেও এই বাক্যটি ব্যবহার করা নিরাপদ বিবেচিত হবে।
(৭) রাজনৈতিক প্রসঙ্গ :
(ক) ইতিমধ্যে সরকারী পর্যায়ে কারো কারো বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। এসব বক্তব্যের দ্বারা মূলত ইসলামী রাজনীতি বন্ধের কথাই বলা হচ্ছে। কেননা ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, এদেশে ধর্ম বলতে ইসলামকেই বোঝায়।
(খ) এরূপ বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত একদিকে অগণতান্ত্রিক অপরদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা এবং তাদেরকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে উসকানি দেয়ার শামিল।
(গ) কওমী মাদরাসাসমূহ যুগযুগ ধরে ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন দ্বীনী ও জাতীয় বিষয়ে অবদান রেখে আসছে। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রাণখোলা সাহায্যে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশেষ ঐতিহ্যের অধিকারী। কওমী মাদরাসার আদর্শে জঙ্গীদের স্থান নেই। বরং চরম ঘৃণা প্রদর্শনপূর্বক এটাকে হারাম মনে করা হয়। কওমী উলামাদের অবস্থান, কর্মকাণ্ড ও চারিত্রিক পবিত্রতা সর্বজনস্বীকৃত। যারা ইসলাম বিদ্বেষী তারাই কওমী মাদরাসা, এর পরিচালক এবং ছাত্র-শিক্ষকদেরকে ভর্ৎসনা ও তিরস্কার করে থাকে। আবার প্রশাসনের অনেকেও অজ্ঞের মতো অযৌক্তিক কথা বলে থাকে। অথচ সরকারী-বেসরকারী জরিপে জঙ্গীবাদের সাথে কওমী মাদরাসাসমুহের কোন সম্পর্ক নেই তা বারবার সাব্যস্ত হয়েছে।
(ঘ) সরকারীভাবে ডি জি এফ আই, সি আইডিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগের নথিপত্রে এবং থানার কাছে দুস্কৃতিকারীদের নাম ঠিকানা বিস্তারিতভাবে বিদ্যমান রয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়ে শাস্তি ভোগ করেছে। আবার অনেককেই দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসীতে ঝোলানো হয়েছে। এদের মধ্যে একজনও কি কওমী মাদরাসায় পাশ করা? সরকারীভাবেও বলা হয়েছে যে, কওমী মাদরাসার ছাত্রদের ব্যাপারে কোন সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
(১) অশিক্ষা কুশিক্ষা
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ (চুড়ান্ত খসড়া) এর ভূমিকা এবং শিক্ষানীতির বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে “গণ মানুষকে নিরক্ষর রেখে অজ্ঞানতা অশিক্ষা কুশিক্ষার অন্ধকারে রেখে কোন জাতি, দেশ, রাষ্ট্র সামনে এগোয়নি, এগুতে পারেনি। অতীব যুক্তিসম্মত এবং বাস্তবমুখী বিশ্লেষণ, কিন্তু Ñ
(ক) জাতীয় শিক্ষানীতিতে অশিক্ষা কুশিক্ষার অন্ধকারÑ এর কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।
(খ) কী কী অশিক্ষা কু-শিক্ষা এদেশে চালু আছে, কারা চালু করেছে, কেন চালু করেছে- এ বিষয়েও নিরবতা অবলম্বন করা হয়েছে।
(গ) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মূলত: তিনটি সরকার এই দেশটিকে পরিচালনা করেছে।
( ১) আওয়ামীলীগ
(২) জাতীয়পার্টি
(৩) বিএনপি
আর বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি আওয়ামীলীগ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। দল দুইটি কীভাবে কেন সৃষ্টি হলো, এর রহস্য এবং কারণসমূহ এক সময় অস্পষ্ট থাকলেও শেষ পর্যন্ত অস্পষ্ট থাকেনি, বরং দেশের জনগণের নিকট তা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট। তাদের কর্মকাণ্ড দেশবাসী বুঝতে ভুল করেনি।
(৪) তারা নিজেদেরকে দেশপ্রেমিক বলে দাবী করে থাকে। তারা অশিক্ষা-কুশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত মূর্খ ঘরের সন্তান নয়। তারা দেশ-বিদেশে পড়াশুনা করে উচ্চমানের ডিগ্রী ধারী নিবেদিতপ্রাণ দেশদরদী।
(৫) কিন্তু দেশের উন্নতি সাধনে তাদের সোনার হরিনের স্বপ্ন দেখানো এবং আকাশচুম্বী গলাবাজী শ্রবণ ব্যতীত জনগণের ভিন্ন কোন অভিজ্ঞতা নেই। গদী দখল, প্রতিহিংসা আত্মকলহ, পরশ্রীকাতরতা, অভদ্রতা, অশিষ্টাচারিতা, পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ী, হানাহানী, কাটাকাটি, মারামারী, গডফাদারী ও ন্যাক্কারজনক ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড ব্যতীত দেশ গড়া, দেশের উন্নতি সাধন করা, নাগরিকদের সার্বিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং দেশটিকে সমগ্র বিশ্বে একটি ঐতিহ্যবাহী দেশ হিসেবে সমাসীন করার কোন ইতিহাস মোটেই নেই।
(৬) এমতাবস্থায় জাতির অধ:পতন, অশিক্ষা কুশিক্ষার অন্ধকার কলংকের জন্য দায়ী কারা? এ প্রশ্নের উত্তর এড়ানোর জন্য যত চেষ্টা তদবীরই করা হোক না কেন, জাতিকে এ ব্যাপারে অজ্ঞ ধারণা করা হলে বোকামী ছাড়া আর কিছু হবে না।
(৭) বর্তমান শিক্ষানীতি কাদের স্বার্থে কাদের ইঙ্গিতে রচিত হয়েছে, এর অন্তর্নিহিত লক্ষ্যবস্তু কী এবং কেন? এসব বিষয়ের জবাব লাভের জন্য এ শিক্ষানীতিই যথেষ্ট। আকাশে সূর্য উদিত হলে কুপি বাতির প্রয়োজন হয় না।
(২) কুদরত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশন
আলোচ্য শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে “বাঙ্গালীর মহান নেতা বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে দেশে সর্বপ্রথম “কুদরত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশন” গঠিত হয়েছিল, কিন্তু তিনি “কুদরত-ই-খোদা” শিক্ষানীতিকে কার্যকর করেননি। কেন করেননি? কুদরত-ই-খোদার শিক্ষানীতিকে স্বয়ং জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতির বিশ্বাস ও সংস্কৃতির পরিপন্থী বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন কী না- গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টিকে জাতীয় শিক্ষানীতিতে কেন অস্পষ্ট রাখা হলো? এ ব্যাপারে জাতির মনে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
(৩) ২০০০ সালের শিক্ষানীতি
১৯৭৪ সনে প্রণীত “কুদরত-ই-খোদা” কমিশনের প্রতিবেদনের ‘আলোকে’ শিক্ষানীতি প্রণয়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ এর নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণা, অতঃপর ২০০০ সালে প্রনীত শিক্ষানীতি পরবর্তী সরকার বাস্তবায়ন করেনি বলে দেশবাসীকে অবহিত করা হয়েছে। তাহলে শেখ সাহেবের নির্দেশে প্রনীত “কুদরত-ই-খোদা” শিক্ষানীতি কেন বাস্তবায়িত হয়নি, এ বিষয়টি ‘অনিচ্ছায় অনুল্লেখ রয়েছে’ বলে ধারনা করা অত্যন্ত রহস্যময় বলে মনে হয়।
(৪) কুদরত-ই-খোদার আলোকে
‘আলোকে’ শব্দটি বুঝায় যে,
(ক) কুদরত-ই-খোদার শিক্ষানীতি বর্তমান শিক্ষানীতিতে পুরোপুরিভাবে স্থান পায়নি, পরিবর্তন পরিবর্ধন এবং সংস্কার করা হয়েছে।
(খ) কিন্তু কোন্ কোন্ বিষয়সমূহে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং কেন আনা হয়েছে, এ ব্যাপারেও শিক্ষানীতিতে মোটেই আলোকপাত না করা বিষয়টিকে রহস্যময় করে তুলেছে।
(৫) কুদরত-ই-খোদা কমিশন পর্যালোচনা
এমতাবস্থায় “কুদরত-ই-খোদা কমিশন” প্রনীত প্রতিবেদনটিকে দুভাবে পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
(ক) জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান এই প্রতিবেদনটি মনে-প্রাণে পছন্দ বাংলাদেশীদের জন্য মঙ্গলজনক মনে করে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছিলেন, কিন্তু কার্যকর করার সময় পাননি।
(খ) তিনি এই শিক্ষানীতিকে পছন্দ করেন নি এবং জাতির জন্য অমঙ্গলজনক মনে করে বাদ দিয়েছেন।
গভীরভাবে চিন্তা করলে প্রথম ধারনাটি সঠিক নয় বলে মনে হয়।
(ক) কেননা বর্তমান শিক্ষানীতিতে পরিবর্তন পরিবর্ধন এবং সংস্কার করা হয়েছে। এই সংস্কার কেবল জাতির জনকের প্রতি ধৃষ্টতাই নয় বরং বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। যা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না।
(খ) কুদরতে-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন প্রনীত শিক্ষানীতি বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম উম্মার বিশ্বাস আচার-ব্যবহার, চরিত্র, শিক্ষা, কালচার এবং আদর্শের সাথে কেবল সাংঘর্ষিকই নয় বরং ইসলামী শিক্ষা বিবর্জিত এক সেক্যুলার শিক্ষা প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদন কোন ক্রমেই দূরদর্শীতার অধিকারী ইসলামে বিশ্বাসী শেখ সাহেবের নিকট মোটেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। কেননা তিনি ব্যক্তিগতভাবে এবং সামাজিকভাবে ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। তার অতীত রাজনৈতিক জীবন বিবেচনা করলে বিষয়টি আরো অধিক পরিষ্কার হয়ে উঠে।
(ক) তার প্রথম রাজনৈতিক আদর্শ ছিল মুসলম লীগের আদর্শ। দ্বিতীয় পর্যায়ে তার আদর্শ ছিল “আওয়ামী মুসলিম লীগ” এর আদর্শ অধিক ব্যাখ্যার এই মুহূর্তে প্রয়োজন নেই।
(খ) দেশ বিদেশের অবর্ণনীয় চাপের মুখেও তিনি লাহোর সম্মেলনে সাহসিকতার সাথে যোগদান করেন।
(গ) লাহোর সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশকে গর্বের সাথে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে দ্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন।
(ঘ) অনতিবিলম্বে সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে কওমী মাদরাসাসমূহ খুলে দেয়া এবং পড়া-শুনার স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরীর যুগান্তকারী নির্দেশ দান করেন।
(ঙ) ইসলাম প্রসার ও প্রচার এবং ইসলামের অবস্থানকে সুসংহত করার জন্য ‘ইসলামী ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন।
(চ) সমস্ত মুসলিম বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক কায়েমের প্রয়োজনে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
(ছ) তারই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘আমি একজন মুসলিম’ এবং বারবার ইনশাআল্লাহ বলে তার পরিচয় স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন।
(জ) নির্বাচনী ইশতেহারে ইসলাম বিরোধী কোন আইন পাশ না করার প্রতিশ্র“তি দিয়ে জাতির সাথে অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছেন।
(ঝ) উলামা-মাশায়েখদের সাথে একাধিকবার আলোচনা পর্যালোচনার মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন।
(ঞ) কওমী মাদরাসামূহের ঐতিহাসিক অবদানের কথা স্মরণ করে, স্বতন্ত্র স্বীকৃতি দান এবং মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হয়েছেন। এ সব সুস্পষ্ট বিষয়াদি তার নিজের এবং পিতার ইসলামের আনুগত্যের স্পষ্ট প্রমাণ।
বর্তমান শিক্ষানীতি
নির্বাচনী ইশ্তেহারে শিক্ষাবিষয়ক বিষয়াদির যথেষ্ট উল্লেখ করা হলেও মুসলিম জাতির শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপারে যথেষ্ঠ অবজ্ঞা ও উদাসীনতার পরিচয় দেয়া হয়েছে । এতে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতির অধিকার খর্ব হয়নি বরং সরাসরি মুসলিম জাতির প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছে। যা মূলত উসকানিমূলক এবং সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির পথ সুগম করার ষড়যন্ত্র মনে হওয়াই স্বাভাবিক।
(৬) মতামত গ্রহণ
মতামত গ্রহণের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “শিক্ষানীতি ২০০৯” প্রণয়ন ব্যাপক মতামত গ্রহণ ভিত্তিক করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৫৬ সংস্থা ও সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বিস্তারিত মতবিনিময় করা হয়। এখানেও চাতুর্যের আশ্রয় নেয়া হয়েছে কারণÑ
(ক) দেশবাসী তার সিংহভাগ সংস্থা ও প্রতিনিধিদের নাম, পরিচয় ও আকীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে অবগত হতে পারেনি, তাদের মতামতের উৎস সম্পর্কেও অবহিত হতে পারেনি। পত্র-পত্রিকা এবং মিডিয়াতেও বিস্তারিত বিষয়াদি প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা হয়েছে। মতামত গ্রহণের মাধ্যম এবং পদ্ধতি কতটুকু সাধারণ নাগরিকদের কাছে যুক্তিযুক্ত- এ সম্পর্কে শিক্ষানীতিতেও সুস্পষ্ট কোন কিছুর উল্লেখ নেই।
(খ) মতামত গ্রহণের ব্যাপারে কাওমী মাদরাসার শত বছরের শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষা-সিলেবাস ও আদর্শের প্রতি কতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তাও সুস্পষ্ট নয়। কওমী মাদরাসার গ্রহণযোগ্য প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময়েরও কোন উল্লেখ নেই।
(গ) যাদের সাথে নামমাত্র মতবিনিময়ের সন্ধান পাওয়া গেছে তাতে বুঝা যায় যে, এ ক্ষেত্রে ব্যাপক আলোচনা করাকে সমীচীন মনে করা হয়নি। কারণ সেক্যুলার শিক্ষানীতির বিষয়টি উলামা-মাশায়েখ ও মুসলিম জাতির জন্য মারাত্মক এবং কঠোর বাধা হয়ে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা অধিক। এজন্যই তাদের হাতে শিক্ষানীতির কোন কপি পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়নি।
(ঘ) বিভিন্ন সূত্রে অবগত হয়ে যারা কওমী মাদরাসার ব্যাপারে প্রস্তাবাদি পেশ করেছেন, তার কিঞ্চিত পরিমাণও গৃহীত হয়নি; যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।
(ঙ) আরো দুঃখজনক বিষয়টি হলো- চূড়ান্ত কমিটিতে কওমী মাদরাসার একজন সদস্যও স্থান পায়নি, যা কওমী মাদরাসার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের স্পষ্ট উদাহরণ।
(৭) কুসংস্কারমমুক্ত শিক্ষা
‘নৈতিক শিক্ষা’ ‘কুসংস্কারমুক্ত শিক্ষা’ এই দুটি শব্দ জাতীয় শিক্ষানীতিতে বারবার বলা হয়েছে।
কিন্তু নৈতিক শব্দের মূল উদ্দেশ্য যেমন গোপন রয়েছে, তেমনিভাবে কুসংস্কারের কোন ব্যাখ্যা-বিবরণ দেয়া হয়নি।
কিন্তু গান-বাদ্য, নাটক ললিতকলা ইত্যাদি চরিত্র হননকারী বিষয়াদি এবং মনমানসিকতার অধ:পতনের অনেক কিছুর প্রতি অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, মানবতা ও সভ্যতা-বিবর্জিত এ সমস্ত বিষয়াদি কুসংস্কারের অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং পরম নৈতিকতার সোপান। অথচ এ সমস্ত বিষয়াদি মানব সভ্যতা এবং সুস্থ মেধা সম্পন্ন মানুষের কাছে চরম ঘৃণ্য সংস্কৃতি বলে পরিগণিত। কেননা এ সমস্ত পাশ্চাত্য কালচারের কারণেই নারী-পুরুষ বিশেষ করে যুবক-যুবতীরা বেহায়া-বেলেল্লাপনা, যৌনকামিতা এবং বিভিন্ন ধরনের ক্রাইমে জড়িয়ে নিজে অসুস্থ হয় এবং সমাজকে অসুস্থ করে তোলে।
(৮) সেক্যুলার শিক্ষানীতি
সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে সেক্যুলার গণমুখী অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক এবং কর্মঠ নাগরিক গড়ে তোলার কথা জাতীয় শিক্ষানীতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ সেক্যুলার শিক্ষানীতি পরিপূর্ণ গণতন্ত্র বিরোধী এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবোধ’এর সাথে সাংঘর্ষিক। কেননা অন্যান্য ধর্মের ন্যায় সেক্যুলারিজমও একটি মতাদর্শ এবং একটি ধর্ম। এর ধর্মবিশ্বাস নিম্নরূপঃ
(ক) পৃথিবীর কোন স্রষ্টা নেই। অথচ সেক্যুলারিজমে বিশ্বাসী ব্যতীত পৃথিবীর সমস্ত মানুষ, মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী। এই ধর্মকে নাস্তিক্যবাদী ধর্মও বলা হয়।
(খ) নাস্তিক ধর্মাবলম্বীরা পৃথিবী ও পৃথিবীর সবকিছুকে প্রকৃতি সৃষ্ট মনে করে এবং বিশ্বাস করে। তদরূপ অপরের কাছেও প্রচার করে থাকে।
(গ) পরকালীন পূনঃজীবনকে অবিশ্বাস করে।
(ঘ) হাশরের হিসাব নিকাশ, খোদায়ী বিচার আদালত, জান্নাত এবং জাহান্নামকে অবিশ্বাস করে এবং কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন বলে থাকে।
সুতরাং যেহেতু সেক্যুলার একটি ধর্ম, তাই নাস্তিক ধর্মভিত্তিক সেক্যুলার শিক্ষানীতি সংবিধান এবং ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষই কোন না কোন ধর্মে বিশ্বাসী। সবাই স্রষ্টায়ও বিশ্বাসী, যদিও তাদের মধ্যে স্রষ্টার গুণাবলীর বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এমতাবস্থায় সেক্যুলার ধর্মের অনুকূলে জাতীয় শিক্ষানীতি অগণতান্ত্রিক এটা দেশ প্রেমিক নাগরিক গড়ে তোলার শিক্ষানীতি নয় মোটেই। বরং এ শিক্ষানীতি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশীদেরকে সাম্প্রদায়িক করে গড়ে তুলে তাদের ঐক্য ও ঐতিহ্য বিনষ্ট করত: নাস্তিকদের খেলনার পাত্র এবং তাদের গোলামীর বেড়াজালে আবদ্ধ করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করার পায়তারা বৈ কিছু নয়।
(৯) ধর্মনিরপেক্ষতাবোধ
ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীর কোন মানুষই ধর্মহীন নয়। মানুষ তার ধর্ম-বিশ্বাস অনুসারেই স্বীয় অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্রতী হয় এবং স্বীয় চরিত্র গড়ে তোলে। এমতাবস্থায় কোন জাতিই ধর্মীয় অনুশীলন বাদ দিয়ে জীবনের উৎকর্ষ সাধনে উদ্যোগী হতে পারে না। জাতীয় শিক্ষানীতিকে ধর্মনিরপেক্ষ এবং সাংবিধানিক বলা পরস্পর বিরোধী। কেননাÑ
(ক) সেক্যুলারিজম একটি ধর্ম, একটি নগণ্য সম্পদ্রায়ের মতবাদ। এই ধর্মভিত্তিক ‘জাতীয় শিক্ষানীতিকে’ ধর্মনিরপেক্ষ বলা জাতিকে বোকা মনে করার শামিল।
(খ) সেক্যুলার শিক্ষানীতি চালু করা মানে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের গণতান্ত্রীক অধিকার খর্ব করা এবং দেশকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঠেলে দেয়ার নামান্তর।
(গ) সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতির গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকার খর্ব করার প্রয়াস।
(ঘ) নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্র“তি- “ইসলাম বিরোধী কোন কিছু করা হবে না- এর অসারতা বাস্তবতায় পরিণত হবে এবং মুসলিম জনতার আস্থাহীনতা বৃদ্ধি পাবে। যার পরিণাম মোটেই শোভনীয় নয়।
(১০) সমমৌলিক চেতনা
“সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে সমমৌলিক চিন্তা চেতনা গড়ে তোলা এবং জাতির জন্য সমনাগরিক ভিত্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে সব ধারার শিক্ষার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে এক ও অভিন্ন শিক্ষাক্রম পাঠসূচী ও পাঠ্যবই বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানো, একই উদ্দেশ্যে মাধ্যমিক স্তরেও একইভাবে কয়েকটি মৌলিক বিষয় পড়ানো।”
কিন্তু বাধ্যতামূলক মৌলিক বিষয়সমূহ ভিন্নভাবে সংগতস্থানে উল্লেখ না করায় অনেকের জন্য মৌলিক অভিন্ন বিষয়সমূহ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে সেখানে সংক্ষিপ্তভাবে সিলেবাস বিন্যাস করে দেখানো হয়েছে যা নিম্নরূপ ঃ
(ক) ৮ বৎসরের প্রাইমারী সিলেবাসে আবশ্যিক এবং অতিরিক্ত বিষয় রাখা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী মাদরাসা শিক্ষার সিলেবাসে, বাংলা, গণিত এবং ইংরেজী আবশ্যিক বিষয় রাখা হয়েছে এবং আরবীকে অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী সমাপ্তির সময় শিক্ষার্থীর ন্যূনতম বয়স হবে ৮ বৎসর আরবী আবশ্যিক না থাকার কারণে মুসলিম শিক্ষার্থীরা আরবী শিক্ষায় অমনোযোগী হবে বরং আরবী শিক্ষাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে অনীহা প্রকাশ করবে। এমতাবস্থায় পরবর্তী শ্রেণীতে আরবী পড়ার মন-মানসিকতা এবং যোগ্যতা হারাবে। এর ফলে মুসলিম শিশুরা স্বীয় ধর্মীয় শিক্ষা থেকে খসে পড়বে, যা মোটেও কাম্য হতে পারে না।
(খ) তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে ধর্ম শিক্ষা আবশ্যক হিসেবে স্থান পেয়েছে। যেহেতু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে ধর্ম শিক্ষার বাধ্যবাধকতা নেই এবং আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই এমতাবস্থায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে ধর্ম শিক্ষা বয়সের সাথে অসম এবং অমনযোগিতার বিশেষ কারণ হয়ে দাঁড়াবে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে আরবী অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে এবং তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে আরবীর স্থলে ‘ধর্ম’ শব্দ ব্যবহারের মধ্যে কোন রহস্য নিহিত আছে কি না তা ভেবে দেখার বিষয়। কেননা ‘আরবী’ বললে সাধারণত ইসলামী শিক্ষা বুঝায়, অতএব ‘ধর্ম’ শব্দের দ্বারা জাতীয় শিক্ষানীতিতে কেবল ইসলামকে বুঝানো হয় নাই। যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে ‘ধর্ম’ শব্দটি ইসলামী শিক্ষাকেই বুঝায়।
(গ) তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে অতিরিক্ত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘আরবী এবং ধর্মের স্থলে’ কুরআন ও তাজবিদ, আরবী প্রথম পত্র, আকায়েদ ও ফিকাহ। আরবী দ্বিতীয় পত্র শুধুমাত্র পঞ্চম শ্রেণীতে। এর অর্থ দাঁড়ায় যে, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে কোন ধরনের আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। ফলে ইসলামী শিক্ষার প্রতি অমনোযোগিতা এবং অনীহা প্রকট হয়ে উঠবে।
(ঘ) ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ‘আরবী’র স্থলে ‘ধর্ম’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে আর অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে “কুরআন, আকাইদ ও ফিকাহ আরবী” রাখা হয়েছে। একই পৃষ্ঠায় এক স্থানে ‘কুরআন’ ও দ্বিতীয় স্থানে ‘কোরান’ এক স্থানে ‘ফিকাহ’ এবং দুই স্থানে ‘ফিকহ’ লেখা হয়েছে। এ ধরনের বানানগত পার্থক্য ইসলামের প্রতি অবহেলার সাক্ষ্য বহন করে।
(ঙ) অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত আবশ্যিক বিষয়াদি যেভাবে শ্রেণী বিন্যাস করা হয়েছে, সেই বিষয়াদি পঠন অতঃপর আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার চাপের মুখে শিশুদের জন্য অতিরিক্ত বিষয়াদি পঠন এবং যোগ্যতা অর্জন মোটেই সম্ভব নয়। তদুপরী পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার ব্যবস্থা না রাখার কারণে অতিরিক্ত বিষয়াদি পড়ায় কোন আকর্ষণ না থাকাই স্বাভাবিক। পরিণামে মূলত আরবী শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্ত হবে।
(চ) মুসলিম ছেলেদের জন্য কুরআন শরীফ মুখস্থ করার কোন অবকাশ রাখা হয় নাই। এ বিষয়ে ক্ষতির দিকসমূহের প্রতি পূর্বে আলোকপাত করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতির শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ‘১০’ এ লেখা হয়েছে, “মুখস্থ করা বিদ্যার পরিবর্তে বিকশিত চিন্তাশক্তি, কল্পনা শক্তি এবং অনুসন্ধিুৎসু মননের অধিকারী হয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি স্তরের প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করা।”
পবিত্র কুরআন মুখস্থকারী ছাত্ররা কেবল মুখস্থই করে থাকে, অর্থানুসন্ধান ও চিন্তা শক্তির বিকাশ ইত্যাদির মোটেই সুযোগ থাকে না। অবশ্য পরিশুদ্ধ তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে তাজবীদের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সুতরাং “মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে” কথাটির দ্বারা পবিত্র কুরআন শরীফ মুখস্থ করার বিষয়টি আগ্রহ করা হয়েছে বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান।
(ছ) ৮ম শ্রেণীর পর ইসলামী মৌলিক শিক্ষার বিষয়াদি যথা তাফসীর, হাদীস, ফিকাহ এবং আক্বায়েদ ইত্যাদি বিষয়সমূহে সঠিক যোগ্যতা অর্জনের জন্য আরবী ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ দক্ষতা ও পারদর্শী হওয়া অত্যাবশ্যক। কেননা ইসলামী শিক্ষার মূল কিতাব কুরআন শরীফ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসসমূহ সম্পূর্ণভাবে আরবী। তাই আরবী সাহিত্য, গ্রামার, অলংকারশাস্ত্রসহ প্রায় ১৫টি সংশ্লিষ্ট বিষয়াদ শ্রেণী বিন্যাসের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক পড়ানো জরুরী। অথচ এই আবশ্যক বিষয়াদি ৮ বৎসরের প্রাইমারী শ্রেণীসমূহে আবশ্যক অথবা অতিরিক্ত কোন শিরোনামেই স্থান পায়নি। অবকাশও রাখা হয় নাই। এমতাবস্থায় পরবর্তী স্তরসমূহে ইসলামী শিক্ষায় যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়াদির প্রতি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ণ কারীদের দৃষ্টি কেন যায়নি তা বোধগম্য নয়।
(১১) ও লেভেলে এবং এ লেভেল
এ ব্যাপারে ‘অন্যান্য’ শিরোনামের অধীনে ১৫ তে বলা হয়েছে “ও লেভেল এবং এ লেভেল শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্যক্রম এবং পরীক্ষা ও মূল্যায়ন যেহেতু একটি বিদেশী ধারায় হয় সেহেতু ও এবং এ লেভেল কে বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করা হবে।” এখান থেকে যে বিষয়সমূহ প্রণিধানযোগ্য তা নিম্নরূপ :
(ক) ও এবং এ লেভেল একটি বিদেশী ধারা
(খ) পাঠ্যক্রম ও পরীক্ষা-মূল্যায়ন সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র
(গ) এ শিক্ষা-ব্যবস্থা বিদেশী ধারায় বিদেশীদের নিয়ন্ত্রণাধীন।
(ঘ) এর জন্য রয়েছে অর্থায়ন ও বাজেট।
এমতাবস্থায় অন্যান্য বিদেশী শিক্ষার ন্যায় কাওমী মাদরাসা শিক্ষাকে বিশেষ ব্যবস্থা হিসাবে গন্য করতে অসুবিধা কোথায়?