লগইন রেজিস্ট্রেশন

বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং বান্দার কর্তব্য

লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ বুধবার, নভেম্বর ৩, ২০১০ (১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ)

মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দা. বা.
আমরা দুনিয়াতে জীবন যাপন করছি, এই জীবনকে দুনিয়ার জীবন বলে। এই জীবনের পর আরেকটা জীবন আসবে, তাকে আখেরাতের জীবন বলে। দুনিয়ার জীবন অস্থায়ী, আখেরাতের জীবন চিরস্থায়ী। ‘দুনিয়া’ শব্দটির দু’টি অর্থ পাওয়া যায়। এক. ‘দুনিয়া’ শব্দটি دناءة থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ হল, ঘৃণিত, নিকৃষ্ট। দুনিয়া মানুষকে পার্থিব ভোগ-বিলাসের প্রতি আপ্লুত করে বিশ্বাসঘাতক বানায়। দুনিয়া মানুষকে বিভিন্ন কল্যাণ থেকে বিমুখ করে রাখে। এজন্য দুনিয়াকে “দুনিয়া” বলা হয়। দুই. দুনিয়া শব্দটি دنو দুনুওউন থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ হল, নিকটে। মানুষের জীবনের দুটি স্তর আছে। একটি দুনিয়ার জীবন, আরেকটি আখেরাতের জীবন। দুনিয়ার জীবন যেহেতু আখেরাতের জীবনের তুলনায় নিকটবর্তী তাই দুনিয়াকে দুনিয়া বলা হয়।
মোটকথা ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ার জীবনের পর আখেরাতের স্থায়ী জীবন আসবে। অবশেষে জীবনের দুটি অবস্থানক্ষেত্র হবে। একটি জান্নাত, পরম শান্তির জায়গা। আরেকটা হলো জাহান্নাম, চরম অশান্তির জায়গা। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন এবং জান্নাতে যাওয়ার রাস্তাকে সহজ করে দিন! হাশরের ময়দানে ফয়সালা হবে। সে ফয়সালায় কেউ জান্নাতী হবে, কেউ জাহান্নামী হবে।
আল্লাহ তা’আলা মেহেরবানী করে আমাদেরকে মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, ইতর কোন প্রাণী বানাননি। তারপর আমাদের মুসলমান হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, কাফের বানাননি। আল্লাহ তা’আলা বড় মেহেরবান, তিনি দয়া করে বলে দিয়েছেন, মৃত্যুর পর কী হবে, কী কী সওয়াল করা হবে।
মৃত্যুর পরে প্রত্যেককেই পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে।
এক. عن عمره فيما افناه
অর্থাৎ জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাকে একটি জীবন দান করা হয়েছিল সে জীবনকে তুমি কোন কাজে লাগিয়ে ছিলে?
দুই নম্বর প্রশ্ন হলো,
عن شبابه فيما ابلاه
‘তোমাকে যৌবনকাল দেয়া হয়েছিল, সে যৌবনকালকে তুমি কী কাজে ব্যয় করেছিলে?
জীবনের প্রথম ধাপ হল শৈশবকাল। মানুষ শৈশবকালের অন্যায়-অপরাধকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখে। আল্লাহ তাআলাও শৈশব কালের সকল অন্যায়কে মাফ করে দেন।
এরপর আসে যৌবনকাল। যৌবনকাল আসার ক্ষেত্রে মানুষের কোন হাত নেই এবং যৌবনকাল যাওয়ার ক্ষেত্রেও মানুষের কোন হাত নেই। মানব জীবনের এই বিভিন্ন স্তর পরিবর্তনের মাঝে আল্লাহ তা’আলা নিদর্শন রেখেছেন। এক গোপন শক্তির ইশরায় মানুষের জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এই গোপন শক্তি হলেন এক এবং অদ্বিতীয় আল্লাহ।
যাহোক জীবন এবং যৌবন এ দুটি বিষয় সম্পর্কে মৃত্যুর পর প্রশ্ন করা হবে। তার আগে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে প্রশ্ন করে দেখি যে, আখেরাতের প্রশ্নের উত্তর প্রদানে আমরা সফল হবো না ব্যর্থ হবো। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে এমন ঈমান-আমল দান করুন, যাতে ইমাম মুসল্লী নির্বিশেষে সকলেই আমরা পরকালীন নাজাত লাভ করতে পারি।
তৃতীয় প্রশ্ন হল,
عن ماله من اين اكتسبه
মানুষকে তার উপার্জিত সম্পদ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে, কিভাবে তুমি সম্পদ উপার্জন করেছ? আরো সহজ কথায়, তুমি কি হালালভাবে সম্পদ উপার্জন করেছ, না হারাম উপায়ে সম্পদ উপার্জন করেছ?
জীবনের পর যৌবন সম্পর্কে যে প্রশ্ন করা হবে এর কারণ তো বুঝে আসে, কিন্তু যৌবনের পরই সম্পদ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে কেন? এর তাৎপর্য কী?
এর তাৎপর্য হল, মানুষের জীবনের মূল পর্ব শুরু হয় যৌবনকাল থেকে। সফলতা ও জীবনের অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা এবং ব্যর্থ হওয়ার আসল সময় হল যৌবনকাল। যৌবনকালকে কাজে লাগানো ও যৌবনকাল থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য যে সমস্ত উপকরণ ও আসবাবপত্রের প্রয়োজন তন্মধ্যে অন্যতম হল সম্পদ। জীবনের সফলতার অনেক অর্থ-সম্পদের উপর নির্ভরশীল। অর্থই পারে মানুষের জীবনকে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে দিতে, আবার অর্থই পারে তাকে ধ্বংসের অতল গহবরে নিক্ষেপ করতে। যৌবনকাল আসলেই বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্মের ময়দান সামনে আসে। আর কর্মজীবনে সফলকাম হতে হলে অর্থ-সম্পদের প্রয়োজন অনস্বীকার্য।
যারা মনে করে, অর্থ-সম্পদের প্রয়োজন নেই তারা মূলত: ইসলামকে বোঝেনি। অর্থের প্রয়োজন যদি বাস্তবিকই না থাকত, তাহলে আল্লাহ তা’আলা অর্থের ব্যবস্থাপনা কেন করলেন? দেহ কেন দিলেন? দেহ তো কেবল যিকির ও তেলাওয়াতের মাধ্যমে টিকে থাকবে না। নবুওয়াতের উপর কোন স্তর নেই। তথাপি নবুওয়াতপ্রাপ্ত হওয়ার পরও নবীগণ দেহের জন্য খাদ্য গ্রহণ করেছেন। বস্ত্র-বাসস্থান থেকে অমুখাপেক্ষী হতে পারেননি। অর্থাৎ নবীকেও দেহ সংরক্ষণের জন্য পানাহার করতে হয়েছে। কাপড় পরতে হয়েছে। বাসস্থান ব্যবহার করতে হয়েছে। তাই দেহকে সুঠাম সুন্দর রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সম্পদ উপার্জন করা আবশ্যক। তবে দুনিয়ার অর্থসম্পদ মানুষকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে কখনো সহায়তা করে কখনো ধ্বংস করে দেয়।
এজন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুটি বিষয়কে লক্ষ্য করে বলেছেন :
نعم المال الصالح للرجل الصالح
আমার উম্মতের মধ্যে ঐ লোকটি অত্যন্ত সৌভাগ্যশীল, যে সৎপথে সম্পদ উপার্জন করেছে এবং সে নিজেও সৎ। যে সম্পদ সৎপথে উপার্জন করা হয়েছে, সে সম্পদ উপার্জনকারীকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সহায়তা করে। অপরপক্ষে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
حب الدنيا رئس كل خطيئة
(দুনিয়ার লোভই সকল অনিষ্টের মূল) মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অনেক কারণ থাকে, বিভিন্নভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে মানুষের ধ্বংস এবং ক্ষতির মূল কারণ হল অর্থ-সম্পদ। একদিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, অর্থ-সম্পদ অনেক বড় নেয়ামত, অপরদিকে বলেছেন, অর্থ-সম্পদ মানুষকে ধ্বংস করে। আরেক হাদীসে বলেছেন
كاد الفقر ان يكون كفرا
‘আমার ভয় হয়, আমার উম্মত দারিদ্র্যের কারণে কাফের হয়ে যায় কি না! আমার সুন্নত ছেড়ে দেয় কি না!
অপরদিকে বুখারী শরীফের এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
“আমার উম্মত অভাব-অনটনে পড়বে এজন্য আমার কোন ভয় নেই। আমার ভয় হচ্ছে, আমার উম্মত অর্থের পিছনে পড়বে এবং অর্থ তাদেরকে ধ্বংস করে দিবে।”
অন্য এক হাদীসে বলেছেন,
“সত্যবাদী, বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী, কেয়ামতের দিন সিদ্দীক, শহীদ ও ছালেহগণের সাথে থাকবে।
একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলো,
সর্বপ্রথম কার জন্য জান্নাতের দরজা খোলা হবে? তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করব। আমার উম্মত সবার শেষে দুনিয়াতে আসার পরেও হাশরের বিচারের পর আমার উম্মত সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর অন্যরা প্রবেশ করবে। এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তখন আপনার সাথে কারা কারা থাকবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ ব্যবসায়ী আমার সাথে প্রবেশ করবে, যার মাঝে দুটি গুণ থাকবে। প্রথমটি হলো সত্যবাদিতা। অর্থাৎ যে ব্যবসায়ী সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা জানবেন যে, সে সত্যবাদী। যে ব্যবসায়ী মালে ভেজাল দিবে না। দ্বিতীয়টি হলো বিশ্বস্ততা ও আমানতদারি। অর্থাৎ যে সম্পদ তুমি অর্জন করেছ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার নিকট আমানত মনে করবে।
আমি আপনার নিকট কোন কিছু আমানত রাখলাম, তখন দায়িত্ব হল সে আমানত যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা। যদি আপনার পক্ষে আমানতের সংরক্ষণ সম্ভব না হয়, তাহলে আপনার সাথে সাথে বলে দেয়া উচিত যে, আমার পক্ষে এই আমানত রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু আপনি যখন আমানত রাখতে রাজি হবেন, তখন আপনার উপর দুটি দায়িত্ব এসে পড়বে। একটি হল সে আমানতের যথাযথ সংরক্ষণ করা। আরেকটি হল, মালের মালিক যখন তার মাল চাইবে, তখন মালের মালিকের নিকট তা হস্তান্তর করা।
অনুরূপভাবে অর্থ-সম্পদ আল্লাহ তাআলা আপনার নিকট আমানত রেখেছেন, তাই আপনার দায়িত্ব হল, অর্থ-সম্পদের যথার্থ হেফাযত করা এবং যখন আল্লাহ পাক তা চাইবেন, তখন তার হাতে তা তুলে দেয়া। এর মাঝে কোনরূপ খেয়ানত না করা। এটাই হল একজন সঠিক ব্যবসায়ীর দায়িত্ব।
হাদীসে দেখা যায়, কখনো অর্থসম্পদের প্রশংসা করা হচ্ছে আবার কখনো নিন্দা করা হচ্ছে। আর এ কারণেই কেয়ামতের দিন প্রশ্ন করা হবে : من اين اكتسبه
তুমি যে সম্পদ উপার্জন করেছ, তা কি হালালভাবে উপার্জন করেছ, না হারামভাবে উপার্জন করেছ? এখন হালাল ও হারাম কাকে বলে, এটা আপনাকে জানতে হবে। কারণ কোন মুসলিম যখন ব্যবসা করবে, তখন তার জন্য ফরয হচ্ছে শরীয়তে ব্যবসা সম্পর্কে কী আইন আছে তা জানা। সুতরাং ব্যবসায়ীকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি হালালভাবে ব্যবসা করেছিলে, না হারামভাবে ব্যবসা করেছিলে? তুমি যদি কৃষক হয়ে থাক, তাহলে তোমাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি কৃষির মাধ্যমে হালালভাবে জীবিকা উপার্জন করেছিলে, না হারামভাবে? তুমি কি তোমার দায়িত্ব যথার্থভাবে আদায় করেছিলে? যতটুকু সময় শ্রম দেয়ার কথা ছিল ততটুকু সময় শ্রম দিয়েছিলে? নাকি দায়িত্বে অবহেলা করেছিলে? তুমি শিক্ষক ছিলে, তুমি কি তোমার ছাত্রকে শিক্ষা-দীক্ষায়, আখলাক-চরিত্রে সুন্দরভাবে গড়ে তুলেছিলে, নাকি শুধু অর্থ কামানোর জন্য শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেছিলে। মোটকথা যে ব্যক্তি যে স্তরে আছে তাকে তার স্তর অনুযায়ী প্রশ্ন করা হবে, তুমি কিভাবে সম্পদ উপর্জন করেছিলে? যদি হালাল পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে থাক, তাহলে দুনিয়াতেও সফল, আখেরাতেও সফল। আর যদি হারাম পন্থায় উপার্জন করে থাক, তাহলে দুনিয়াতেও অশান্তি আখেরাতেও অশান্তি। এখন তুমি নিজেকে প্রশ্ন করে দেখ তোমার উপার্জন হালাল, না হারাম? তুমি তোমার নিজের ব্যাপারে সম্যক অবগত। কোনটা হালাল কোনটা হারাম, কোনটা বৈধ ও অবৈধ এটা বিবেচনা করার শক্তি আল্লাহ তা’আলা সকলের ভিতরেই সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তাছাড়া বৈধ-অবৈধ বুঝার সহজ উপায় হল, আমার সম্পদে যদি কেউ হাত দেয়, তাহলে আমার কাছে কেমন লাগে? আমি যদি মালিক হই, তখন আমার শ্রমিকের কাছ থেকে যতটুকু শ্রম ও সময় চাই, আমার মালিককেও ততটুকু শ্রম ও সময় দিচ্ছি কি না? এ সব বিষয় বুঝার জ্ঞান আল্লাহ তাআলা সকলকে দান করেছেন।
সম্পদ যদি হালাল পথে উপার্জন করা হয়, তাহলে দুনিয়া আখেরাতে কমপক্ষে দুটি কল্যাণ লাভ হবে। আর যদি হারাম পথে উপার্জন করা হয়, তাহলেও দুয়িা ও আখেরাতে দুটি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। বিশ্বাস করা বা না করা তোমার ইচ্ছা তবে বাস্তবতা এটাই।
দুনিয়ার কল্যাণ হল, সম্পদ যদি হালাল হয়, তাহলে ১. তোমার অণœ-বস্ত্র হালাল হবে, রক্ত-মাংস হালাল হবে, নূরান্বিত হবে। রক্ত থেকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর যিকির বের হবে। (২) তোমার আত্মা শক্তিশালী হবে, আত্মার ভিতর নূর সৃষ্টি হবে।
নামায, রোযার মতই হালাল উপার্জনও ইবাদত। বরং নামায রোযা কবুল হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত হল হালাল উপার্জন করা।
চিন্তা করে দেখুন, আপনি যে জায়নামাযে নামায আদায় করছেন, তা যদি অপবিত্র থাকে, তাহলে আপনার কাছে কেমন লাগে, আপনার নামায হবে বলে কি মনে হয়? অনুরূপভাবে আপনার রক্ত, গোশত, অস্থি ও চামড়ার মাঝে যদি নাপাকীর মিশ্রণ থাকে এবং নাপাকীর এই মিশ্রণ যদি আপনার আত্মার মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার কাছে কেমন লাগবে? পক্ষান্তরে আপনার উপার্জন যদি হালাল হয়, তাহলে রক্ত, গোশত, অস্থি ও চামড়া পবিত্র থাকবে। এই চারটি জিনিস পবিত্র থাকার অর্থ আপনার দেহ জান্নাতের উপযোগী। শরীর যদি পবিত্র হয়, তাহলে তার প্রভাব আত্মার উপর পড়বে। কেননা শরীর হল আত্মার পিঞ্জির। তাই শরীরের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আত্মার উপর প্রভাব বিস্তার করে। দুনিয়াতে যখন তোমার শরীর ও আত্মা পবিত্র হয়ে যাবে, তখন এর সার্বিক সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ পাক নিয়ে নিবেন।
এখন আপনি যদি প্রশ্ন করেন, হুযুর! নবীর শরীর ও আত্মা তো পবিত্র ছিল, তবু কেন তার শরীর থেকে রক্ত বের হল? আল্লাহ তাআলা কোথায় তার শরীর সংরক্ষণ করলেন? আপনার এই প্রশ্নের উত্তরে এতটুকুই বলবো যে, আপনি চিন্তা করে দেখুন, আল্লাহ তা’আলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন-
“আপনি কি বাদশা নবী হতে চান, না গোলাম নবী হতে চান?” তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিন্তা করলেন, বাদশা বানানোর মালিক আল্লাহ, আমি নবী হওয়ার পর বাদশা হলে ভালো হবে, না নবী হওয়ার পর গরীব হলে ভালো হবে, এটা আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন। তাহলে আল্লাহ তা’আলা আমাকে কেন জিজ্ঞেস করলেন! তিনি তো সুলায়মান আ. কে জিজ্ঞেস করেননি! এর রসহ্য কী? নিশ্চয় এর কোন কারণ আছে। আল্লাহ তাআলা যদি ্আমাকে বাদশা বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে তো আমি বাদশা হবই। তাই আমাকে এমন জিনিস চাইতে হবে যার দ্বারা আমার মনের পরিচ্ছন্নতা প্রকাশ পায়। ফলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
হে আল্লাহ! আমি গোলাম নবী হতে চাই। এখন আপনারাই বলুন, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় বাদশা হয়েছেন কি না? উপরন্তু তার নামে পৃথিবীতে মুসলমানদের মধ্যে অসংখ্য বাদশাহ হয়েছে। একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বাড়িতে গিয়ে বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এই জানালা কেন বানিয়েছ? সে বললো, আলো-বাতাসের জন্য বানিয়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা বলো না, বরং বল আযানের আওয়াজ শোনার জন্য বানিয়েছি। অনুরূপভাবে যখন আল্লাহর কাছে চাইবে, তখন খুব দীন-হীন হয়ে চাও। আল্লাহ পাক তোমাকে সম্মানিত করে দিবেন।
যাহোক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আল্লাহর নিকট মিসকীন নবী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, তুমি নবী হওয়ার পর মিসকীন হতে চাও। সুতরাং আমি মিসকীন নবী বানালাম এবং বাদশাহীও দান করলাম।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৫০৮ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)