আখেরাতে নাজাত ও জান্নাত লাভের শর্ত
লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৬, ২০১০ (১১:৩১ পূর্বাহ্ণ)
মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দা. বা.
বস্তু জগত আমাদের স্থায়ী বসবাসের আবাস ভুমি নয় বরং আমরা পরদেশী। এখানে এসেছি রিযিকের তালাশে, পুঁজি উপার্জনের জন্য। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া অবশিষ্ট পুঁজি স্বদেশে পাঠানো প্রয়োজন। আমাদের স্বদেশ এবং স্থায়ী আবাস ভুমি হচেছ আখেরাত। যারা এখান থেকে পুঁজি সংগ্রহ করেছে তারা সেখানে প্রশান্তি ভোগ করবে। আর যারা এখানের পুঁজি এখানেই শেষ করে যাবে তারা হবে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত, বিপদের সম্মুখীন। আখেরাতের জীবন হবে তাদের খুবই বেদনাদায়ক এবং কঠিন।
কিন্তু মানুষ মরীচিকাময় বস্তুর আকর্ষণে প্রলুব্ধ হয়ে এই ধ্র“ব সত্যটি অনুধাবনে সক্ষম হয় না। বস্তু আবরণের কারণে অভীষ্ট পথ হারিয়ে বসে। এই আবরণ ছিন্ন না করতে পারলে মানুষ উদাসীন এবং পথহারা হয়ে ধ্বংস হয়। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক এবং নির্ভুল জ্ঞানের। তবে কেবল জ্ঞানই যথেষ্ট নয় বরং জ্ঞানের দিকনির্দেশনা এবং কুরআন-হাদীসের তথ্যের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসেরও প্রয়োজন, যে বিশ্বাস মানুষকে অন্তর্দষ্টির অধিকারী করে, যে অন্তর্দৃষ্টি মানুষকে অপরাধ বর্জন শেখায় এবং অন্তরে নেক আমলের প্রতি আকর্ষণ ও অনুরাগ জন্মায়।
প্রগতিবাদী নব্য শিক্ষিতদের এক শ্রেণীর লোকদেরকে বলতে শুনা যায় যে, বিধর্মীরা সেবামূলক কাজ করে, রাস্তা-ঘাট এবং হাসপাতাল তৈরী করে, অন্ন বস্ত্রের ব্যবস্থা করে, বাড়ী ঘর প্রস্তুত করে দেয়, বেকারত্বের সমাধানে কর্মসংস্থান করে থাকে, শিক্ষা দীক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করে, বিশ্ব মানবতার খেদমতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। খৃষ্টান মিশনারী, ইয়াহুদী, কাদিয়ানীসহ বিধর্মীদের সেবামূলক তৎপরতা, বাংলাদেশের মত অনুন্নত দেশের প্রতি তাদের অবদানের কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সুতরাং তারা কেন মুক্তি পাবে না, তারা কেন জাহান্নামী হবে?
আমি এই অযৌক্তিক তর্কের জবাবের জন্য আপনাদেরকে একটি প্রশ্ন করি, যদি আপনি ফ্যাক্টরীর মালিক হন, আর শ্রমিকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা, ভাতা-বেতনের ঘোষণা দেন এবং শ্রমিকরাও আপনাকে মালিক হিসেবে মান্য করে, আপনার জারিকৃত বিধি-নিষেধ মেনে চলে তাহলে অবশ্যই তারা আপনার ঘোষিত সুযোগ-সুবিধা এবং আপনার করুণারও অধিকারী হবে। কিন্তু যে শ্রমিক কাজে অত্যন্ত তৎপর, সর্বগুণে গুণান্বিত। নিজের বেতনের টাকা দিয়ে গরীব-দুঃখীদের সেবা করে, রাত দিন সেবামূলক কাজে ব্যস্ত থাকে, সকলেই তার সুনাম করে, কিন্তু সে আপনাকে মালিক বলে স্বীকৃতি দেয় না। আপনার প্রতি আনুগত্য করে না। বরং আপনার প্রতি বিদ্রোহ দেখায়, আপনার সাথে শত্র“তা পোষণ করে, আপনার শত্র“দেরকে নিয়েই তার সব কার্যক্রম চালায়; তাহলে বলুন, এই শ্রমিক তার অন্যান্য সেবামূলক আচরণের কারণে আপনার ফ্যাক্টরীর শ্রমিক থাকতে এবং আপনার সুযোগ সুবিধার অধিকারের দাবী করতে পারে? কখনই না। কেন? এই জন্য যে, হতে পারে সে অত্যন্ত সেবক, কিন্তু সে আপনাকে মালিক মানে না, আপনার আনুগত্য করে না। অতএব সে আপনার ফ্যাক্টরীর শ্রমিক থাকার এবং সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
ঠিক এমনিভাবে বিধর্মীরা সেবামূলক কাজ করতে পারে। হতে পারে তারা অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ, মানুষের উপকারে তাদের খেদমত ও অবদান অপরিসীম, কিন্তু তারা আপন স্রষ্টার প্রতি ঈমান রাখে না, তার অনুগত্য করে না। তারা বরং আনুগত্যশীল ঐসব লোকদের প্রতি, আল্লাহর সাথে যারা শত্র“তা পোষণ করে, বিদ্রোহ করে প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের সেবার আবরণে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করে। গোপন ষড়যন্ত্রের কালো থাবায় ইসলাম এবং মুসলমানদের ধ্বংস সাধন করে। শিক্ষা, সংস্কৃতির নামে পবিত্র কুরআনের শিক্ষা তথা মুসলমানদের জাতীয় শিক্ষার মূল উৎপাটন করে। ইলমে রিসালাত তথা রাসূল কর্তৃক আনিত শিক্ষা সিলেবাস বাদ দিয়ে কার্লমার্কস, মাওসেতুং, লেলিন, ডারউইন, নিউটন, মাথিউছের মতো নাস্তিক এবং ধর্মদ্রোহীদের শিক্ষা সিলেবাস চালু করে মুসলমানদের রক্তে গড়া স্কুল-কলেজ ও ভার্সিটিতে খোদাদ্রোহী, ঈমান-আক্বীদা খর্বকারী কুশিক্ষা এবং অসভ্য কৃষ্টির প্রচলন ঘটায়। আপনারাই বলুন, এরূপ কাফের, বেদ্বীন এবং বিধর্মীরা কি নাজাত পেতে পারে? পারে কি আল্লাহর হেদায়েত এবং নাজাতের অধিকারী হতে?
হেদায়েত এবং নাজাতের পথ দুইটি; তার একটি হচ্ছে গোনাহ বর্জন। তবে গোনাহের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন স্তর। আল্লাহর নিকট দুইটি গুনাহ অত্যন্ত মারাত্মক। এর একটি গুনাহ এক পাল্লায় রেখে অন্য পাল্লায় নেকী দিয়ে ভরে রাখলেও গোনাহের পাল্লা ভারী হবে। তার একটি গোনাহ হচ্ছে কুফর এবং শিরক। যার মধ্যে কুফর, শিরক এবং নেফাক থাকে তার কোন আমলই গ্রহণীয় নয়। আখেরাতে নাজাতের জন্য এগুলো প্রতিবন্ধক হবে। আল্লাহর শোকর যে, মুসলমানগণ এই গোনাহ থেকে মুক্ত রয়েছে। এই গোনাহের শাস্তি হচ্ছে অনন্তকাল জাহান্নাম।
দ্বিতীয় গোনাহটি হচ্ছে গীবত। আমরা যাকে মনে করি ঘীভাত। কারো কাছে ঘীভাতের চেয়েও অধিক প্রিয়। কেননা ঘীভাত সকলের ভাগ্যে জুটে না। আর জুটলেও সদা-সর্বদা নয়। সদা-সর্বদা জুটলেও খাওয়া যায় না। তবে গীবত গরীব-ফকীর, ধনী, রাজা-বাদশাহ, পীর-মূরীদ, আলেম জালেম, জ্ঞানী-মুর্খ, সকলেরই প্রিয় খাদ্য এবং সহজখাদ্য। ঘীভাত মানুষের জন্য উপকারী হয়, আবার মাত্রাধিক ভক্ষণ করলে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয়। তবে এর জন্য রয়েছে প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু গীবতের কোন দিক উপকারী নয়। গীবত মানুষের অন্তরকে বিনষ্ট করে দেয়। এর কোন প্রতিষেধক ব্যবস্থা নেই। এমনকি সমস্ত আমলকেও বিনষ্ট করে দিতে পারে।
ইসলাম মদ পানকে হারাম ঘোষণা করেছে। এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে ৮০ দোররা পরিমাণ শাস্তি নির্ধারণ করেছে। কিন্তু প্রগতিবাদীরা এই শাস্তি বিধানকে মধ্যযুগীয় বিধান বলে বিদ্রুপ করে থাকে। তাদের প্রগতি বিধানে নির্লজ্জ, বেশরম হয়ে মদ পান করে হাটে-বাজারে, রাস্তাঘাটে কিংবা ডাষ্টবিনে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে থাকা কোনো ব্যাপার না।
মদপান কবীরা গুনাহ হলেও এর চেয়ে মারাত্মক গোনাহ চচ্ছে যিনা-ব্যাভিচারের গোনাহ। এই গোনায় অভ্যস্ত হলে মানব সমাজে বাস করার অধিকার তার থাকে না। সে বিবাহিত হলে তাকে ইসলামী সরকারী তত্ত্বাবধানে পাথরাঘাত করে খতম করে দেয়ার বিধান রয়েছে। রাসূলের ২৩ বৎসর নবুওয়াতী জীবনে এরূপ ঘটনা দুই তিনটির অধিক পাওয়া যায় না। সমাজের এই স্পটমুক্ত ইতিহাস কেবল ইসলামী বিধানেরই গৌরব। কিন্তু যৌন উন্মাদ বস্তুবাদীরা এই বিধানকে নিয়েও সমালোচনায় মুখর। যার পরিণামে আজ সমাজে আল্লাহর গযব এইডস এর আকারে যুবক-যুবতীদেরকে গ্রাস করে চলেছে।
কিন্তু গীবতের পরিণাম এর চেয়েও মারাত্মক। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, الغيبة اشد من الزناঅর্থাৎ গীবত যিনার চেয়েও অধিক জঘন্য। কেননা গীবতের কারণে তার সর্ব প্রকার ইবাদত অকার্যকর হয়ে পড়ে। সে দুনিয়া ও আখেরাতে লাঞ্চনা-বঞ্চনা, ও শাস্তির সম্মুখীন হয়। তার আল্লাহর কাছে তাওবার কোন পথ থাকে না, বরং যার গীবত করেছে তার কাছ থেকে ক্ষমা প্রাপ্ত না হলে তার মুক্তির উপায় থাকবে না।
কারো দোষ তালাশ করা এবং অপরের নিকট ব্যক্ত করা, একেই গীবত বলা হয়। আর দোষমুক্ত লোকের উপর মিথ্যা কোনকিছু আরোপ করা মারাত্মক গোনাহ। আরবীতে একে বলা হয় ইফ্ক্ তথা অপবাদ। গীবত, অহংকার, হিংসা-পরশ্রীকাতরতা, এ সব অন্তরের ব্যাধি, আমলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যাদের মধ্যে এই রোগ বিদ্যমান সে কোন দিন আল্লাহর মারিফত এবং রাসূলের শাফাআত পেতে পারে না।
গীবত যবানের গোনাহ কিন্তু এর মূল উৎস হচ্ছে অন্তরের অহংকার, হিংসা। যখন কোন জ্ঞানী-গুণী তার প্রতিপক্ষকে তার চেয়ে অধিক জ্ঞানী-গুণী দেখে; আলেম, পীর-মুরিদ, ছাত্র-শিক্ষক, বক্তা যখন স্বীয় গুণে অন্যকে অগ্রগামী দেখে; অর্থশালী, দোকানদার, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী, কৃষক যখন তার তুলনায় অন্যকে অধিক সফলকাম দেখে; মেম্বার, চেয়ারম্যান, কমিশনার এমপি, মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি যখন তার প্রতিদ্বন্দ্বীর উন্নতির খবর পায় তখন তার অন্তরে জালাপোড়া শুরু হয়। ফলে তাকে গ্রাস করার মানসে উঠে পড়ে লেগে যায়। সমাজে স্বীয় অবস্থান সুদৃঢ় করার তাকীদে প্রতিপক্ষের দোষচর্চা এবং সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু এসব কিছুর দ্বারা কেবল নিজেরই অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়, কোন লাভ হয় না, বরং প্রতিদ্বন্দ্বীর মর্যাদার প্রচার হয়, উন্নতি হয়। কেবল তাই নয়, গীবতের স্বভাব মানুষকে হেদায়েত এবং নাজাতের নেয়ামত থেকে বঞ্চিত করে। তার দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টিই বরবাদ হয়। এসব থেকে মুক্তির পথ হচ্ছে, গীবতের মারাত্মক ক্ষতি এবং আযাবের কঠোরতার কথা চিন্তা করা এবং হিম্মত করে গীবত পরিহার করা।
দেহে বিষাক্ত সাপের ছোবলে বিষ ঢুকলে যেমন সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিষ্ক্রীয় হয়ে যায়, শক্তি অনুভূত হয় না, তখন বিষক্রিয়া দূর করে দেহকে সজীব এবং শক্তিশালী করার জন্য টনিক সেবন করতে হয়, তেমনি গোনাহ হচ্ছে ঈমান আমল এবং অন্তরের জন্য বিষক্রিয়া। এর কারণে অন্তর এবং ঈমানী শক্তি নিষ্ক্রীয় হয়ে পড়ে, ইবাদত-রিয়াযতে শক্তি অনুভূত হয় না। এতে শক্তি সঞ্চারের জন্য প্রথম অন্তরকে গোনাহমুক্ত করতে হয় এবং ভিটামিন পরিবেশন করতে হয়। অন্তর এবং দেহকে গোনাহমুক্ত করে তার খোরাক পরিবেশন করতে হয়। ইবাদতই হচ্ছে এর খোরাক। যেমন দেহকে শক্তিশালী করার জন্য অত্যাবশ্যকীয় খোরাকের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এর মধ্যে কয়েক প্রকার খাদ্য বাধ্যতামূলক, অন্যগুলো বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু উপকারী। ঠিক তেমনিভাবে আত্মার জন্য ফরয, ওয়াজিব ইবাদতসমূহ বাধ্যতামূলক: আর সুন্নাত, নফল, মুস্তাহাব বাধ্যতামূলক নয় বটে কিন্তু উপকারী। এ সমস্ত ইবাদত মানুষের আত্মার খোরাক। কার্যগতভাবে সুন্নাতে মুআক্কাদাহসমূহ ওয়াজিবের মতো। এ সমস্ত ইবাদতের দ্বারা অন্তরে নুর এবং শক্তি সঞ্চার হয়। ফলে আখেরাত ও আল্লাহ পাকের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। আল্লাহপাক তার জন্য হেদায়াত নাজাতের ফয়সালা করে থাকেন।
মানুষের আত্মার খোরাক হিসেবে অনেক ইবাদত রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে অত্যাবশ্যকীয় ইবাদত হচ্ছে নামায। এই নামাযের সর্বাধিক বড় ফায়দা হচ্ছে, নামায নাজাতের জন্য গ্যারান্টি দেয়। হাদীসের দ্বারা বুঝা যায় যে, নামাযের হিসাব প্রথম গ্রহণ করা হবে। যদি বান্দা এই নামাযের ব্যাপারে দোষী সাব্যস্ত না হয়, তাহলে সে নাজাত পেয়ে যাবে। আল্লাহপাক তাকে ক্ষমা করে দিবেন বলে আশা করা যায়।
এখানে প্রশ্ন হয় যে, একজন মানুষ নামায পড়ে, অথচ এরপরও গোনাহে লিপ্ত থাকে তাহলে সে কিভাবে মুক্তি লাভ করবে? এর বিভিন্ন উত্তরের মধ্যে একটি উত্তর আপনাদের সামনে পেশ করছি। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন-
অর্থ : তুমি তোমার প্রত্যাদিষ্ট কিতাব আবৃত্তি কর এবং সালাত কায়েম কর। সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দকার্য থেকে।
এখান থেকে বুঝা যায় যে, নামায মানুষকে জাহেরী-বাতেনী তথা প্রকাশ্য- গোপনীয়, অন্তরের, দেহের, ব্যক্তি জীবনের, সামাজিক জীবনের এক কথায় সব ধরনের গোনাহ থেকে মুক্ত রাখে। সুতরাং নামাযী ব্যক্তি গেনাহ মুক্ত বিধায় তার অন্য হিসেবের প্রয়োজন হবে না।
প্রশ্ন হয় যে, আমরা নামাযী ব্যক্তিকে যেমন নামায পড়তে দেখি তেমনি তাকে গোনাহে লিপ্ত হতেও তো দেখি? এর উত্তর হচ্ছে, নামায সহীহ এবং কবূল হওয়ার জন্য শর্ত-শরায়েত রয়েছে। যেমন, ইখলাস এবং সুন্নাত মুতাবিক নামায, নামাযের পূর্বে সুন্নত মুতাবিক আযান, ইকামত; রেডিও-টেলিভিশনের আযান নয়, বরং বেলাল হাবশী, আবু মাহজুরা, উম্মে মাকতুম, সাআদ কুরাজী, আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদের আযানের মত আযান। অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেখানো আযান, যা কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও সুন্নাত মুতাবিক ওযু ইত্যাদি। এসব শর্ত ঠিক রেখে নামায আদায় করলে সে নামায গোনাহ মুক্তির উপায় হবেই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরে
এক হাদীসের মর্ম বাণী এই যে, হালাল খাদ্যে সৃষ্ট দেহ নিয়ে বাইতুল্লাহকে কেবলা করে যে ব্যক্তি সঠিক সুন্নত তরীকায় নামায পালন করবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ঐ নামাযী ব্যক্তির অভিভাবক হয়ে যান। দুনিয়ার জন্য ও আখেরাতের জন্যও। বোঝাগেল যে, নামায মানুষের রুহের খোরাক, দুনিয়া আখেরাতের নিরাপত্তার গ্যারান্টি এবং নাজাত ও হেদায়েতের উপায়।
অনেকে বলে থাকে যে, যারা নামায আদায় করে না আমরা দেখি তারা খুব শান্তিতে ও সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছে। তারা বিপদমুক্ত, রোগ-ব্যাধিমুক্ত। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অপর পক্ষে যারা নামাযী এবং ন্যায়পরায়ণ- তারা সর্বপ্রকার বালা-মুসীবত ও রোগ ব্যাধীতে আক্রান্ত এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেও ক্ষতিগ্রস্ত। সুতরাং উপরোক্ত উপকারিতার বাস্তবতা কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর প্রকৃতভাবে বুঝে আসবে যেদিন মৃত্যু হবে। বরং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তেই যখন ‘সাকরাতুল মাওত’ শুরু হবে এবং অদৃশ সবকিছু দৃশ্যমান হয়ে উঠবে, তখন সবকিছুই বুঝে আসবে। আগে যারা ঈমান পরিপক্ক করেনি তখনকার বিশ্বাস এবং ঈমান কোন কাজে আসবে না।
এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর একটি ঘটনা প্রসিদ্ধ আছে। তিনি ছিলেন জ্ঞানের সুপ্রশস্ত ও গভীর সাগর। এই ঘটনাও তার বুদ্ধির গভীরতা এবং তীক্ষèতার প্রমাণ বহন করে। কোন এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করেছিল যে, জান্নাতে কারা যাবে? তিনি বললেন, মুমিনগণ জান্নাতে যাবে। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করল, জাহান্নামে কারা যাবে? তিনি বললেন, যারা মুমিন। অর্থাৎ যারা জাহান্নামে যাবে তারা সকলেই মুমিন হবে। এ উত্তর শুনে লোকটি হতভম্ব হয়ে ইমাম সাহেবের দিকে তাকিয়ে থাকলো, ইমাম সাহেব বললেন, তুমি আমার কথা বুঝতে পারো নাই তাই হতভম্ব হয়ে গেছ। শোন, মৃত্যুর সময় আখেরাতের অদৃশ্য সবকিছু দৃশ্যময় হয়ে যায়। মৃতের সম্মুখে জান্নাত জাহান্নাম সবকিছু ভেসে ওঠে। সে ঐদিক তাকিয়ে আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে ঈমান আনয়ন করে। এই ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করে। কিন্তু এ সময় ঈমান গ্রহণযোগ্য নয়। পবিত্র কুরআনেও এরূপ বর্ণনা রয়েছে। সুতরাং বুঝা গেল যে, কাফির মুশরিকরা মৃত্যুর সময় ঈমান এনে মুমিন হয়ে মৃত্যুবরণ করে এবং জাহান্নামী হয়। এ কথাই ইমাম আবু হানীফা রহ. তাঁর বক্তব্যে বলেছেন।
মৃত্যুর প্রাক্কালে কাফেরের যবান বন্ধ হয়ে যায়। যদি বন্ধ না হতো তাহলে তাদেরকে ঐ সময় কালেমা প্রকাশ্যে পাঠ করতে শোনা যেত। তখন চোখের দৃষ্টি আখেরাতের বস্তুর দিকে নিবদ্ধ থাকে। এ কারণে মৃত্যু পথযাত্রীর নিকটে গিয়ে তার দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সে যেন কোন দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের দৃষ্টি প্রখর হলেও যবান একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। তাই মনে মনে ঈমান আনে, কিন্তু এ সময়ের ঈমান যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি যবানের প্রকাশ ছাড়া মনে মনে ঈমান আনাও যথেষ্ট নয়।
যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় মনে মনে ঈমান আনে কিন্তু যবানে প্রকাশ করতে পারে না, তার এরূপ ঈমান গ্রহণযোগ্য নয়। এর বাস্তব দৃষ্টান্ত হচেছ ফিরাউন। সে যখন সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছিল, নাকে মুখে পানি প্রবেশ করার পর যখন আখেরাতের অদৃশ্য বস্তু তার সামনে দৃশ্য হয়ে উঠলো, তখন তার ভুলের অবসান ঘটলো। তখন সে স্বীয় ঈমানের কথা ঘোষণা দেয়। আল্লাহপাক ঐ বিখ্যাত জালিম কাফিরের মৃত্যুকে বিশ্ব মানবতার জন্য পরম শিক্ষণীয় ঘটনা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছা করেন। বিধায় অসাধারণভাবে তার যবান খুলে দেন। আর ফিরাউনের মুখ থেকে এই আওয়াজ ফুটে ওঠে-
অর্থ : সে বলল, আমি বিশ্বাস করলাম বনী ইসরাইল যে খোদার প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
কিন্তু যেহেতু ঈমান গ্রহণের সময় শেষ। তাই আল্লাহপাক তার ঈমানকে গ্রহণ না করে ইরশাদ করেন, آلآن‘এখন ঈমান আনছো?’
তাই যখন মৃত্যু আসবে, নামায উপকারী কি না, নামায তরকের শাস্তি কেমন হবে, তা সঠিকভাবেই বুঝে আসবে।
তবে এতটুকু চিন্তা করা প্রয়োজন যে, এই বস্তু জগতে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তুলনায় বড় কেউ নয়। তিনি ছিলেন বে-গোনাহ নিষ্পাপ, জান্নাতী। আল্লাহর সর্বাধিক পিয়ারা নবী, যার শানে বলা হয়েছে-
انكنتم تحبون الله الخ
অর্থ : তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভাল বাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
এর মর্মার্থ এই যে, “রাসূলের আনুগত্য আল্লাহর প্রতি ঈমানের অলংঘনীয় শর্ত। যারা তার অনুসরণ করবে আল্লাহপাক তাদের গোনাহ ক্ষমা করেন এবং ইহজগত ও আখেরাতে তাদের প্রতি স্বীয় দয়া-মায়া অব্যাহত রাখবেন।”
আমাদের দেশে একশ্রেণীর লোক নিজেদেরকে ইসলামের এজেন্ট মনে করে থাকে। আর অপর দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইচ্ছাকৃতভাবে গোনাহ করেছেন বলে মন্তব্য করে থাকে। এরা সাহাবায়ে কেরাম রা. এবং ওলামা-মাশায়েখদের সমালোচনায় তৃপ্তি বোধ করে। এদের সংশ্রব থেকে সাবধান।
এত বড় মহান নবী হয়েও স্বীয় পেটে পাথর বেঁধেছেন, তায়েফের ময়দানে কাফেরদের পাথরাঘাতে দেহ মুবারক রক্তাক্ত হয়েছে, উহুদের যুদ্ধে দান্দান মুবারক শহীদ হয়েছে, শির মুবারক কেটে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। পবিত্র দেহ থেকে রক্ত ঝরেছে। তিনি কি নামায আদায় করতেন না? তাহলে তার উপর এই বিপদ কেন? এই বালা মুসীবত কেন?
মূলত জান্নাতের রাস্তা সহজ নয়, বড় কঠিন পথ। বহু বাধা বিঘেœর মধ্য দিয়ে এই পথ অতিক্রম করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের জেহাদ-মুজাহাদা করতে হয়। স্বয়ং আল্লাহপাক ইরশাদ করেন-
অর্থ : তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনও তোমাদের নিকট তোমাদের পূর্ববর্তীদের অবস্থা আসে নি? অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ তাদেরকে স্পর্শ করেছিল এবং তারা ভীত ও কম্পিত হয়েছিল। এমন কি রাসূল এবং তাঁর সাথে ঈমান আনয়নকারীগণ বলেছিল, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? হ্যাঁ, আল্লাহর সাহায্য নিকটেই।
আল্লাহপাক নবী রাসূলদেরকে নিষ্পাপ করেছেন। তাদের জন্য জান্নাতের সুনিশ্চিত ফয়সালা ঘোষণা করেছেন। তাদের অনুসারীদের জন্য জান্নাতের এবং নাজাতের ঘোষণা করেছেন। এরপরও তাদের এ পথে এতো কষ্ট, এতো যাতনা পোহাতে হলো কেন? বুঝা গেল যে, কেবল গোনাহের কারণে, অথবা কেবল শাস্তি ও আযাব স্বরূপই বালা-মুসীবত আসে না। এর আরো অন্যান্য কারণ এবং রহস্য থাকে। আল্লাহর খাটি বান্দাদের বেলায় তাই ধরে নিতে হবে।
ইমরান ইবনে হুসাইন রা. রাসূলের প্রসিদ্ধ সাহাবী ছিলেন। তিনি প্রায় ২৩ বৎসর পর্যন্ত আর্শ্ব রোগে আক্রান্ত হয়ে অসহনীয় কষ্ট সহ্য করেন। তবে তিনি ছিলেন মুস্তাজাবুদ্দাওয়াত। তার মুনাজাত কবুলের কথা সুপ্রসিদ্ধ। লোকেরা তাদের রোগ ব্যাধি এবং বিভিন্ন সমস্যাবলীর জন্য তাঁর দোয়া নিত এবং উপকৃত হতো। একজন শুভাকাক্সক্ষী তাকে বললেন, অসংখ্য মানুষ আপনার দোয়ার বরকতে আল্লাহর রহমত লাভে ধন্য হচ্ছে অথচ আপনার নিজের অবস্থা এত করুণ! যদি নিজের জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে মুনাজাত করেন, তাহলে তো আরোগ্যের আশা করা যেতো।
এর উত্তরে তিনি বলেন, “যখন তোমরা আমার নিকট থেকে সরে যাও, তখন আমার সম্মুখে আল্লাহপাক জান্নাত এবং জাহান্নামের ভোগসামগ্রী তুলে ধরেন। পর্দার আবরণ উঠে যায়। আমাকে আল্লাহপাক এত বড় নেয়ামত দান করেছেন এই কঠিন রোগের বদৌলতে। এই রোগের বেদনা সহ্য করায় আমার জন্য জান্নাতের শ্রেষ্ঠ মাকাম লাভের পথ সুগম করেছেন। আমি কি মুনাজাত করে এই নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হবো?
একথা সত্য যে, কাফির-বেদ্বীন এবং বিধর্মীদের জন্য বালা-মুসীবত আজাব ও শাস্তিস্বরূপই হয়ে থাকে। কিন্তু মুমিনদের বেলায় বাস্তবে যাই দেখা যাক এবং যাই বলা হোক বালা-মুসীবত অনর্থক নয় বরং অত্যন্ত রহস্যময়। বিশেষজ্ঞগণ বলেন, “মুমিনদের সতর্ক করণ, গোনাহ মাফ,দরজা বুলন্দ ইত্যাকার উদ্দেশ্যে বালা-মুসীবত দেয়া হয়। উপরন্তু আল্লাহপাক কাউকে মারিফাতের কোন বিশেষ মাকাম দানের ইচ্ছা করেন যার পিছনে কোন কারণ ও রহস্য থাকে। তাই তাকে সেই মাকামে পৌঁছানোর তাকীদে আমলের অভাব পুরণার্থে বালা-মুসীবত সহ্য করিয়ে সেই মাকামে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। রাসূলে পাকের হাদীসেও এর ইংগিত বিদ্যমান রয়েছে। তিনি ইরশাদ করেন, আমার উম্মত অত্যন্ত সম্মানী। আল্লাহপাক তাদেরকে আখেরাতের জীবনে আযাবে আক্রান্ত করে অপদস্থ করতে চান না। তাই পৃথিবীতে বিপদ-মুছীবত, জুলুম ইত্যাদিতে আক্রান্ত করে আখেরাতের জীবনে মুক্তির পথ সুগম করে থাকেন।
কিন্তু তাই বলে আমাদের মত মানুষের জন্য বালা-মুসীবতকে নেয়ামত মনে করে কামনা করা সমীচীন নয়। কারণ, আমাদের ঈমানী অবস্থা তেমন শক্তিশালী নয়।
আমরা এখানে হেদায়েত ও নাজাতের উপায় প্রসঙ্গে মোটামুটি বিস্তারিত আলোচনা শুনলাম। এর সার কথা হলো গোনাহ বর্জন এবং নেক আমল করা হেদায়াত এবং নাজাত লাভের উপায়।
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ইরশাদ করলেন, “আমার সমস্ত উম্মতই নাজাত পাবে এবং জান্নাতে যাবে তবে যারা অস্বীকারকারী তারা ব্যতীত।” একজন প্রশ্ন করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! অস্বীকারকারী কারা?” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যারা আমাকে অনুসরণ করে তারা জান্নাতে যাবে আর যারা আমার নাফরমানী করে তারা অস্বীকারকারী। সুতরাং তারা জাহান্নামে যাবে।” এই হাদীসের দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই বুঝা যায় যে, হেদায়েত এবং নাজাতের একমাত্র উপায় গোনাহ বর্জন এবং নেক আমল। পবিত্র কুরআনের অন্য আয়াতে এই বিষয়টিকে উল্লেখ করে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন-
অর্থ : যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে দয়াময় তাদের জন্য সৃষ্টি করবেন ভালবাসা।
ঈমান এবং নেক আমল আল্লাহর রহমত লাভের উপায়। হেদায়েত এবং নাজাত রহমতেরই অন্তর্ভুক্ত। আর নেক আমল তখনই হয় যখন আমল ইখলাস এবং সুন্নত মুতাবিক হয়। পক্ষান্তরে যদি আমল রিয়ার সাথে হয়, সুন্নত মুতাবিক না হয়, তাহলে একেই বিদআত এবং শিরকে খফী অর্থাৎ গোপন শিরক বলে। শিরক এবং বেদআত গোনাহের কাজ। সুতরাং এ থেকেও স্পষ্ট হয় যে, হেদায়েত এবং নাজাতের পথ গোনাহ বর্জন এবং নেক আমল।
অনেককেই বলতে শুনা যায় যে, “ঈমান থাকলে আমলের প্রয়োজন হয় না। ঈমানের বদৌলতে জান্নাত লাভ হবে।” কথা সত্য। হাদীসে এমন সুসংবাদ বিদ্যমান আছে। তিরমিযীসহ অনেক কিতাবে হাদীসুল বিতাকা নামে প্রসিদ্ধ একটি হাদীস এই মর্মে বিদ্যমান রয়েছে যে, একজন পাপীকে আল্লাহ পাক বলবেন,তোমার কোন নেক থাকলে তা পাল্লায় ওজনে দাও। সে বলবে, হে আল্লাহ! আমার এমন কোন আমল নেই। আল্লাহ পাক বলবেন, “ঐ যে একটি কাগজের টুকরা তাতে তোমার আমল লিখা আছে, তা ওজনে দাও।” পাল্লা ভরা গোনাহর মুকাবিলায় একটি কাগজের টুকরা কী উপকারে আসবে! বরং লজ্জার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু আল্লাহর হুকুমে বাধ্য হয়ে সে কাগজের ঐ টুকরাটি পাল্লায় উঠিয়ে দিবে আর দেখা যাবে যে, নেকের পাল্লা ভারী হয়ে গোনাহর পাল্লা নিচু হয়ে পড়েছে। আল্লাহ পাকের বিধান-
অর্থ : যার পাল্লা ভারী হবে, সে লাভ করবে সন্তোষজনক জীবন।
এই বিধান মুতাবিক লোকটি ক্ষমা লাভ করে জান্নাত লাভে ধন্য হবে। কিন্তু এ হাদীসের অর্থ এই নয় যে, আমলের প্রয়োজন নেই, অথবা পাপ করায় কোন বাধা নেই। এ তো হলো বাতিল পন্থীদের আকীদা।
এই হাদীসের অর্থ হচ্ছে, যারা কালিমা পড়ে ঈমান আনবে এবং আমলের দ্বারা ঈমানকে সজীব-সতেজ রাখবে তারা অবশ্যই জান্নাতে যাবে। গোনাহ করলে ঈমান সজীব থাকে না, দুর্বল হয়। পক্ষান্তরে দুর্বল ঈমানের সাথেও জান্নাত লাভ করবে তবে যদি তওবা করে নেয় অথবা আল্লাহ নিজ দয়ায় ক্ষমা করে দেন তাহলে সেটা হবে ভিন্ন কথা। অন্যথায় জাহান্নামের শাস্তি ভোগের পর অবশেষে জান্নাতে যাবে। বাতিল পন্থীরা হাদীসের যে অর্থ করেছে তা মোটেই হাদীসের আসল অর্থ নয়। বরং কুরআন-হাদীসের আলোকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকীদার সাথে সামঞ্জস্যশীল অর্থ সেটাই যা আমি বর্ণনা করেছি।
কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, এরূপ কতিপয় হাদীসের গলদ অর্থ করে এক শ্রেণীর পীর-মুরিদ কেবল নফী-এসবাতের যিকিরকে হেদায়েত এবং নাজাতের পথ হিসেবে ধরে নিয়েছে। তারা দীর্ঘক্ষণ ধরে যিকির করে। যিকির করা ভাল কিন্তু আশ্চর্য যে, তারা কোনদিন পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করে না। করার প্রয়োজনও মনে করে না। এমনকি সহীহ শুদ্ধ নামাযের জন্য কয়েকটি সুরাও সঠিক ও শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত শেখে না।
অপরপক্ষে এক শ্রেণীর আলেম-ওলামা ও মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদেরকে দেখা যায়, তারা হয়তো তেলাওয়াত করে, কিন্তু যিকির আযকারের ধার ধারে না। অথচ বিশেষ যিকির আযকারের মাধ্যমে অন্তরের কলুষতা দূরীভূত হয়। অন্তরে নূর সৃষ্টি হয়, অন্তর্দৃষ্টি লাভ হয়। নফসের পরিপূর্ণ ইসলাহ এবং পরিশুদ্ধির জন্য উভয়টিরই অত্যন্ত প্রয়োজন। এই প্রয়োজনের কথা পবিত্র আয়াত এবং হাদীসেও বর্ণিত আছে। আল্লাহর খাটি ওলীগণ এ কারণেই উভয় পথ অবলম্বন করে থাকেন। তাই উভয় শ্রেণীর লোকদের জন্য উচিত শরীয়তের পুরোপুরি অনুশীলন করা। আল্লাহপাক আমাদেরকে হেদায়েত ও নাজাতের সঠিক রাস্তা দেখিয়ে দিন!
www.dawatul-haq.com