লগইন রেজিস্ট্রেশন

কুরআন-হাদীসের চশমায় প্রকৃত বুদ্ধিমান

লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ বুধবার, ডিসেম্বর ১, ২০১০ (১১:২০ পূর্বাহ্ণ)

মহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান

(গত ৩১ আগষ্ট ২০০৭ শুক্রবার মাগরিবের পর জামিয়া ইসলামিয়া মদানিা যাত্রাবাড়ী মাদরাসার খতমে কুরআন ও খতমে বুখারী মাহফিলে প্রদত্ত বয়ান।)
ونضع الموازين القسط ليوم القيمة
দ্বীনের হেফাজতের দায়িত্ব দ্বীনের মালিকের হাতেই
আমাদের এই বাংলাদেশ রাসূলের সাহাবীদের পদধূলিতে ধন্য হয়েছে। ইসলামের প্রথম যুগেই আমাদের এই মাতৃভূমিতে সাহাবীরা দ্বীনের দা’ওয়াত নিয়ে আগমন করেছিলেন। আমাদের পরম সৌভাগ্য এবং আল্লাহপাকের অশেষ দয়া ও মেহেরবানী যে, আমাদের প্রিয় জন্মভূমিতে রাসূলের সাহচর্যপ্রাপ্ত স্বর্ণ মানবদের হাতে তিনি ইসলামের প্রথম বীজ বপন করেছেন। সেই বীজ আস্তে আস্তে আজ বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। এই বৃক্ষ হেফাজত করার গুরুত্ব আমাদের জান-মাল- ইজ্জতের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা যদি ইসলামের জন্য আমাদের জান-মাল কুরবান করতে পারি, তাহলে এদেশে ইসলামের প্রদীপ কোন দিন নি®প্রভ হবে না। পৃথিবীর কোন শক্তিই আমাদের এই কুরবানীর সামনে টিকবে না। কুরআনে পাকে বলা হয়েছে, ইসলাম ও ইসলামের সেবকদেরকে সকল শত্র“ থেকে আল্লাহপাকই হেফাজত করবেন। এদেশের গরীব দুঃখী মানুষের ইসলামপ্রিয়তা, ইসলামকে জিন্দা রাখার জন্য তাদের মেহনত-মোজাহাদা ও ত্যাগ-তিতিক্ষার কারণে আল্লাহ পাক এদেশে কেয়ামত পর্যন্ত ইসলামের দীপশিখা প্রজ্বলিত রাখবেন ইন্শা-আল্লাহ! যতদিন এদেশের মানুষ আল্লাহর কুরআন এবং রাসূলের সুন্নাহ ও আদর্শের উপর এখলাছের সাথে চলতে থাকবে, ততদিন আল্লাহ পাকই তাদেরকে নিরাপত্তা দিবেন এবং ইসলাম বিরোধী শক্তি থেকে হিফাযত করবেন।
ইসলামের শত্র“রা রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহ মোবারক কবর থেকে চুরি করে নিতে চেয়েছিল। কত সূক্ষ্ম কৌশল তারা অবলম্বন করেছিল! কিন্তু সে কৌশল কাজে আসেনি। এ ইতিহাস অনেকের জানা আছে। আল্লাহ পাক অত্যন্ত ক্ষমতাধর। তিনি বাদশাকে স্বপ্নাদেশের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহ মোবারক হিফাজতের ব্যবস্থা করে শত্র“দের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন।
দ্বীনের সেবকদের শক্তি ও বৈশিষ্ট্য
যারা দ্বীনের সেবক, দ্বীনকে যারা আঁকড়ে ধরে আছে, তাদেরকে দুনিয়াদারেরা বোকা অসহায় ও শক্তিহীন মনে করে। অথচ তারাই সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে শক্তিশালী। তাদের বুদ্ধি আল্লাহর বুদ্ধি, তাদের শক্তি আল্লাহর শক্তি। তারা আখেরাতের উন্নতির পেছনে সকল বিদ্যা-বুদ্ধি, কৌশল ও চেষ্টা ব্যয় করে। বিগত চৌদ্দশত বছর ধরে এদের মাধ্যমেই আল্লাহ পাক তাঁর দ্বীনকে হিফাজত করেছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত হিফাজত করবেন। আল্লাহ পাক বলেন, এ কুরআন দুনিয়াবাসীর জন্য আমি নাযিল করেছি এবং কেয়ামত পর্যন্ত হিফাজতের দায়িত্ব আমার জিম্মায় রেখেছি।
আল্লাহ তাআলা যাদের মাধ্যমে দ্বীনকে হেফাজত করেন তারা আল্লাহ প্রদত্ত অনেক বৈশিষ্ট্য ও গুণের অধিকারী হয়ে থাকেন। সে সব গুণ ও বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ঈমানের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণটির কথাই ইমাম বুখারী (রহ.) তাঁর বিশ্ববিখ্যাত হাদীসগ্রন্থ বুখারী শরীফের প্রারম্ভে উল্লেখ করেছেন। সেটা হলো এখলাস ও নিষ্ঠা।
انماالاعمال بالنيات
যে কোন কাজের পরিণাম শুভ অশুভ হওয়াটা নির্ভর করে নিয়তের উপর। নিয়ত যদি এখলাছপূর্ণ হয় তাহলে কাজের পরিণাম শুভ ও মঙ্গলজনক হয়। এখলাস ব্যতীত কোটি কোটি টাকা দ্বীনের পথে ব্যয় করলেও তাতে কোন ফায়দা হবে না। এখলাছের অর্থ হলো সকল নেক কাজ করার পেছনে একমাত্র উদ্দেশ্য থাকবে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা।
কামিয়াবির জন্য এক নম্বর কাজ
এ হাদীস উল্লেখ করে ইমাম বুখারী (রহ.) সকল মানুষকে এ কথা বোঝাতে চাচ্ছেন যে, দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবীর জন্য এক নম্বর কাজ হলো, অন্তরকে পরিষ্কার করতে হবে, সব আমলের ক্ষেত্রে এখলাস থাকতে হবে। এখলাস আত্মাতুল্য। আত্মা ছাড়া যেমন শরীরের কোন দাম নেই, তেমনি এখলাছ ছাড়া আমলের কোন দাম নেই। অন্যদিকে বুখারী শরীফের সর্বশেষ হাদীসের মাধ্যমে ইমাম বুখারী (রহ.) এদিকে ইশারা করেছেন যে, শুধু অন্তর পরিষ্কার থাকলে হবে না, সমস্ত অঙ্গ-পত্যঙ্গ দ্বারা আল্লাহর দাসত্ব প্রকাশ করতে হবে। এক শ্রেণীর মানুষ আছে, তারা বলে যে, ‘‘আমাদের দিল পাক, দিল পাক হলে অন্য কিছু লাগে না।” এরা নিজেদেরকে মারেফতওয়ালা বলে। জেনে রাখুন, শুধু ‘মারেফত’ ‘মারেফত’ করলে কোন কাজ হবে না, আমল করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো যবানের আমল। যবান খুবই মারাত্মক। কেউ ইচ্ছা করলে এক মুহূর্তে ৭০ বছরের ঈমান নষ্ট করে কাফের হয়ে যেতে পারে। অপর দিকে আশি বছরের কাফের এক সেকেন্ডে কালিমা পড়ে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হতে পারে। বোঝা গেল যে, সবচেয়ে মূল্যবান ও ক্ষতিকর আমল হলো যবানের আমল। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মিরাজের রজনীতে আমি জাহান্নামের দিকে চেয়ে দেখি, আমার উম্মতের অধিকাংশ লোক যবানের গুনাহের কারণে জাহান্নামী হয়েছে ।
নবী সা.-এর বক্ষবিদীর্ণ করার রহস্য
এখানে আজ মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ও বুখারী শরীফ খতম হবে। পবিত্র কুরআন লাওহে মাহফুয হতে সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতার মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসেছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনকে স্বীয় কুদরতের দ্বারা রাসূলের অন্তরে স্থাপন করে দিয়েছিলেন। প্রশ্ন হতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালা কেন বক্ষ বিদীর্ণ করে নবীজীর অন্তরে কুরআন প্রবেশ করালেন? এর দু’টি জবাব হতে পারে।
এক. কুরআন সংরক্ষণের আসল স্থান হল অন্তর, তাই অন্তরকে পবিত্র রাখার বিষয়টি বোঝানোর জন্য বক্ষ বিদীর্ণ করা হয়েছে।
দুই. কুরআন শরীফ আল্লাহর কালাম, যা মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত নবী শত চেষ্টা করেও তা আয়ত্ব করতে পারতেন না। তাই আল্লাহ পাক কুদরতীভাবে রাসূলের অন্তরে কুরআনকে প্রবেশ করিয়ে তাঁর অসীম ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন, তার মাধ্যমেই মহাগ্রন্থ আল-কুরআন হিফাযত করেন। মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা তা সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। দেখুন, বড় বড় বুদ্ধিমান, জ্ঞানী-গুণী, উকিল-ব্যারিষ্টার কুরআন মুখস্থ করতে পারেনি। অনেক শাইখুল হাদীসও পারেনি। অথচ গরীব ও সাধারণ বংশের ছোট ছোট ছেলেরা মুখস্থ করছে। আসলে সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি যাকে ইচ্ছা এ নেয়ামত দান করেন। মেধা কম বেশি হওয়ার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এর সম্পর্ক আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওফীক দেওয়া না দেওয়ার সাথে। আল্লাহ বলেন, আমি ইচ্ছা করে সর্ব প্রথম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরে হেফাযত করে দেয়েছি এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা হিফাযতের দায়িত্ব আমি নিজেই নিয়েছি। কুরআন হেফাযত করার জন্য সারা পৃথিবীর মধ্যে যে সমস্ত বক্ষ আমার পছন্দ হয়, তাদের বক্ষেই আমার কালাম সংরক্ষিত রাখি।
আল্লাহ পাক সব দিল ও সীনাকে পছন্দ করেন না। ঐ সব দিলকেই শুধু পছন্দ করেন যেগুলো পাপ পংকীলতা থেকে মুক্ত থাকে এবং আল্লাহর ভালবাসায় থাকে ভরপুর।
কুরআনের আলোচ্য বিষয়
কুরআনের আলোচ্য বিষয় হলো আল্লাহর পরিচয়, বড়ত্ব ও মহত্ত্বের আলোচনা। কীভাবে বান্দার দিলে আল্লাহর ইশক পয়দা হতে পারে, কীভাবে বান্দা রবের সাথে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি করে চিরশান্তির জান্নাত লাভ করতে পারেÑ এসব বিষয়ই কুরআনের মৌলিক বিষয়।
অনেকে কুরআনকে বিজ্ঞান গ্রন্থ বলে থাকে। তাদের অর্বাচীনতার দরুন কুরআনের অমর্যাদা হচ্ছে। কারণ, মানব মস্তিষ্কপ্রসূত বিজ্ঞান কোন নির্ভুল, অকাট্য, অপরিবর্তনীয় বা অখণ্ডনীয় বিষয় নয়। এক বিজ্ঞানী এক মত পেশ করে, পরবর্তীতে অন্য বিজ্ঞানী এসে তার বিপরীত মত পেশ করে এবং পূর্বের বিজ্ঞানীর মতামতকে ভুল প্রমাণিত করে। সুতরাং যদি বলা হয় যে, কুরআন বিজ্ঞান গ্রন্থ কিংবা কুরআন থেকেই বিজ্ঞান জন্ম নিয়েছে, তাহলে কুরআনের অকাট্যতা ও নির্ভুলতার ভিত নড়বড়ে হয়ে যাবে। আমরা বিজ্ঞানের বই পড়ে বলে থাকি, সূর্য পৃথিবী থেকে তেরো লক্ষ গুণ বড়, এর সত্যতা ও বাস্তবতা আপনি কীভাবে প্রমাণ করবেন? শুধু বিজ্ঞানের বইতে লেখা থাকলেই হবে? আমার ঘর থেকে আপনার ঘর বড়Ñ এ কথা আপনি তখনি বলতে পারবেন যখন নিজ হাতে উভয় ঘর মাপবেন। পৃথিবীর কোন ব্যক্তি কি পৃথিবী ও সূর্য মেপেছে? এখানে কেউ থাকলে বলুন। আমি গুলশান মসজিদেও চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছি যে, কেউ থাকলে আমাকে বলুন, কোন বিজ্ঞানী সূর্যকে মেপে দেখেছে ? আজ পর্যন্ত কেউ আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। আসলে এ সব কথা হলো বিজ্ঞানীদের অনুমান নির্ভর কথা। দুনিয়ার কিনারাই তো পায়নি তারা। কানাডার পরে গিয়ে দেখে শুধু বরফ আর বরফ। ঐ পাশে কত জায়গা আছে এবং সেখানে কী আছে তার কিছুই বিজ্ঞানীরা বলতে পারে না। আর সূর্য মাপা তো বহু দূরের কথা, সূর্যের কাছেই তো কেউ যেতে পারেনি। তাছাড়া তেরো লক্ষ গুণ হিসাব করলো কীভাবে? সব কিছুই অবাস্তব একটি অনুমান। অথচ আমরা এটাকে কুরআনের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করি।(নাউযুবিল্লাহ!)
কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য এবং বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্তি
প্রথম দিকের বিজ্ঞানীরা বলতো,পৃথিবী ঘোরে আর সূর্য স্থির থাকে। পরবর্তী বিজ্ঞানীরা এটাকে ভুল আখ্যায়িত করে বললো, সূর্য ঘোরে আর পৃথিবী স্থির থাকে। এর পরের বিজ্ঞানীরা এসে বলল, পূর্বের কোন মতই সঠিক নয়। কারণ সূর্য ও পৃথিবী উভয়টাই ঘোরে। এভাবে খণ্ডন ও ভুল প্রমাণিত হওয়া যে বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য, সে বিজ্ঞান কি কুরআন থেকে জন্ম নিতে পারে? কক্ষণো না। আসলে তারা কুরআন থেকে মৃদু টাচ গ্রহণ করে এক অনিশ্চিত অনুমান ও ধারণার পথে হেঁটে চলেছে। কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য অনুমানের পথে হাঁটা নয়। কুরআনের উদ্দেশ্য হলো, সৃষ্টিকে তার স্রষ্টার সাথে পরিচয় করিয়ে তাঁর সাথে সম্পর্ক কায়েম করা এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কুরআন-হাদীস, মক্কা-মদীনা ইত্যাদির সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে বান্দাকে দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াব করা। কুরআনের এই উদ্দেশ্য তখনি অর্জিত হয় যখন সঠিক নীতিমালার আলোকে কুরআনের অর্থ, মর্ম ও ব্যাখ্যা শিক্ষা করা হবে। কুরআন বুঝতে হয় হাদীসের মাধ্যমে। আর হাদীসের কিতাবসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য কিতাব হলো বুখারী শরীফ। কুরআনের উপরোল্লিখিত উদ্দেশ্য পূরণের জন্য মানব জীবনে যা যা করণীয়, সব বর্ণিত হয়েছে এই বুখারী শরীফে। অর্থাৎ আকায়েদ, মুআমালাত, মুআশারাত ও আখলাক এ সব কটি বিষয়ের আলোচনাই এসেছে।
সরকারের সামর্থ্য ও দায়িত্ব
এসব যদি আমরা মেনে চলতে পারি তাহলে বিশ্বের মধ্যে এদেশ আর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে না বরং সুনীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে। এ বছরের শবে বরাতের কথা চিন্তা করুন। আমার স্মরণে থাকা বিগত চল্লিশ বছরের মধ্যে এবারের শবে বরাত হয়েছে সব চেয়ে শান্তিপূর্ণ ও আতংকমুক্ত। কোথাও কোন পটকা বাজি ফুটতে শোনা যায়নি। মুমিনেরা শান্তিতে ইবাদত করেছে। অপচয় থেকে বেঁচে গেছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আসলে দেশের সরকার অল্প সময়ে যা পারে, অন্যরা তা হাজার গুণ বেশি সময়েও পারে না। সরকারই দেশের নাগরিকদের চালক। তাই সরকার যদি ইসলামের নীতিমালা ও দিক নির্দেশনা মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালনা করে, ইসলামী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা নতুন করে প্রবর্তন করে, তাহলে ছাত্রদের মাধ্যমে এরকম অনভিপ্রেত, অবাঞ্ছিত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না। সারাদেশে কার্ফিউ জারী করে জনজীবনকে মহা দুর্ভোগের সন্মুখীন করার প্রয়োজন দেখা দেবে না।
আহলে ইলমদেরকে অন্যায়ভাবে হয়রানি
আপনারাই বলুন, এই যে ক’দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশব্যাপী যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো, এতে সারাদেশের কওমী মাদরাসার ছাত্র-উস্তাদ ও আলেম-ওলামাদের মধ্যে একজনও কি জড়িত হয়েছে? এমন কি কোন দ্বীনদার দাড়িওয়ালা, টুপিওয়ালাদের সংশ্লিষ্টতার কোন প্রমাণ পাওয়া গেছে? শত শত মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এর মধ্যে একজন তালেবে ইলম বা আলেমকে পাওয়া যায়নি এবং ভবিষ্যতেও পাওয়া যাবে না ইনশাল্লাহ! আবার এমন অনেক ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করা হয় যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নির্দোষ বলে ছেড়ে দেয়া হয়। শুধুমাত্র সন্দেহমূলক তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়ে থাকে। এই সন্দেহমূলক গ্রেফতারকৃতদের মধ্যেও আহলে ইলম বা দ্বীনদার কাউকে দেখা যায় না, তাহলে প্রকৃত অপরাধীদের মধ্যে কীভাবে পাওয়া যাবে? আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরকে সন্দেহমুলকও গ্রেফতার না করার কারণ কী? কারণ হলো, প্রশাসনের লোকেরা একথা ভালোভাবেই জানে ও বিশ্বাস করে যে, আলেমগণ আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রবর্তিত শিক্ষায় শিক্ষিত। এ শিক্ষা দেশের নাগরিকদের মধ্যে অশান্তি, অরাজকতা ও বিশৃংলা সৃষ্টির শিক্ষা দেয় না, বরং এ শিক্ষা সভ্যতা ও নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি, সৌহার্দ ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার শিক্ষা দেয়।
দুঃখজনক সত্য
উপরোক্ত ঘটনায় আটক হয়েছে তারাই যারা ইসলামী সভ্যতা ও চিন্তাধারা থেকে অনেক দূরে, যাদের চেহারা-সূরতে, লেবাছ-পোশাকে ইসলামের রং অপ্রকাশমান। কিন্ত তারপরও অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এদেশের কোথাও কোন বোমাবাজি কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই ইহুদী-খৃষ্টানদের কাছে আকল-বুদ্ধি বিক্রয়কারী একটি মহল দাড়িওয়ালা, টুপিওয়ালা, দ্বীনদার মুসলমান এবং আলেম-ওলামাদের দিকে আড় চোখে তাকায়। কথায় আছে, যত দোষ নন্দঘোষ। ঘটনা ঘটায় তারা অথচ অভিযুক্ত করা হয় কুরআন-হাদীসের সেবক, দ্বীনের প্রহরী, ইসলামের পতাকাবাহী আলেমদেরকে। ইসলামকে মিটিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রকারী এসব ইহুদী খৃষ্টানদের উচ্ছিষ্ট ভোগীর দল সবসময় আল্লাহর কালাম ও রাসূলের হাদীস বক্ষে ধারণকারী অসহায় দ্বীনদার শ্রেণীর দিকে আঙ্গুল তোলে। এরা জানে না যে, কুরআন-হাদীসের খেদমতে জীবন উৎসর্গকারী এ সব ওলামা শ্রেণী বাহ্যিকভাবে অসহায় মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা এক মহাশক্তি। ইসলামের শত্র“রা যদি কুরআন-হাদীস ও এর সেবকদের বদনাম পরিত্যাগ করে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ না করে, তাহলে আল্লাহর গযবে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। এদেশ থেকে ইসলাম মিটিয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র কস্মিনকালেও সফল হবে না।
সরকারের উচ্চ মহলে পত্র প্রেরণ
কয়েক বছর আগে সারা দেশব্যাপী বোমা বিস্ফোরিত হওয়ার পর মাদ্রাসার নিরীহ ছাত্র ও আলেম ওলামারা গ্রেফতার ও হয়রানির শিকার হয়। আমি সরকারের উচ্চ মহলে এ মর্মে পত্র পাঠালাম যে, আগে যাচাই করুন তারপর ব্যবস্থা নিন। ইসলামের উপর অন্যায় আক্রমণ চালাবেন না। আল-হামদুলিল্লাহ! কিছুদিন পরেই পুলিশের আইজি, চৌষট্টি জেলার ডিসি, সরকারী ও বিরোধী দলের বহু এমপি এবং সরকারের শিক্ষামন্ত্রী পর্যন্ত ঘোষণা করলো যে, এই ঘটনার সাথে কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-উস্তাদ ও আলেম-ওলামাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আল্লাহ পাক কত বড় মহান! হে আল্লাহ তোমার শুকরিয়া আদায় করি। এই দেশের মুসলমানসহ পৃথিবীর সকল মুসলমানদেরকে হেফাযত কর।
হাদীসের মধ্যে এসেছে, দুই শ্রেণীর কারণে পৃথিবীতে আমার উম্মত (ইসলাম) ধ্বংস হবে। এক. আলেম, দুই. অর্থশালী ও ক্ষমতাবান। প্রিয় ছাত্ররা! তোমরা যদি ধ্বংস হও, তাহলে জাতিও ধ্বংস হয়ে যাবে। তোমরা দাওরা হাদীস পড়েছ। তোমাদেরকে বুখারী শরীফের মর্যাদা ও ইমাম বুখারীর ত্যাগ স্মরণ রাখতে হবে। বোখারীর প্রথম হাদীসে এখলাসের শিক্ষা ও শেষ হাদীসে আমলের শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। এটাকে তোমাদের জীবনের পথ ও পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আল্লাহর কাছে তোমাকে-আমাকে যেতেই হবে। দুনিয়ার এই শান্তি অল্প সময়ের জন্য, আখিরাতের শান্তিই হলো আসল। এ জন্যই-তোমাদেরকে এত কষ্ট করে মাদরাসায় পড়তে হয়েছে। মানুষ তোমাদেরকে বেকার বলবে, তাতে কিছুই আসে যায় না। কুরআন হাদীস হলো পৃথিবীতে সবচেয়ে মর্যাদার বস্তু। তাই তোমরা যারা সঠিক আমলওয়ালা আলেম হয়েছ, আল্লাহর কাছে তোমরাই বড় মর্যাদাবান। জাতিকে সঠিক সময়ে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার দায়িত্ব তোমাদের।
আলেমদের মহান দায়িত্ব ও পরম সৌভাগ্য
এই কুরআন যে দিন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল হয়েছিল, তখন তিনি কাঁপছিলেন। শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। কারণ কুরআনের বিরাট দায়িত্ব তাঁর উপর এসেছিল। তিনি এই ভেবে অস্থির হয়েছিলেন যে, জাতিকে কেমন করে গুমরাহী হতে বাঁচাবেন। আজকে তোমাদের মাথায় পাগড়ী পরানো হচ্ছে। তার অর্থ এই নয় যে, তোমরা বিরাট কিছু হয়ে গেছ। আজ তোমাদের কাঁদার দিন। কারণ তোমরা জাতির কর্ণধার হয়ে বের হচ্ছো। তোমাদের বেশি বেশি কাঁদা উচিত। কারণ এত বড় মহান দায়িত্ব তোমাদের উপর এসেছে, যে দায়িত্বের জন্য আল্লাহ পাক হাজী, রোযাদার, দানবীর, মুসল্লী এক কথায় পৃথিবীর অন্য কোন মানুষকে কবুল করেন নি। কবুল করেছেন একমাত্র আলেমদেরকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দ্বিধায় বলে গেছেন, হে আমার উম্মত! মনে রেখ, নামাযী, রোযাদার, ব্যবসায়ী, দানকারীগণ জান্নাতে যেতে পারবে বটে। কিন্তু আমি তাদেরকে আমার ওয়ারিস হিসেবে মনোনীত করিনি। আমার ওয়ারিস হবে শুধুমাত্র তারা, যারা কুরআনের হাফেয ও আলেম হবে। কারণ এরা আমার দ্বীনকে বুঝবে, হেফাযত করবে, শিরিক-বিদআত দূর করে হক প্রতিষ্ঠিত করবে। এই কাজ আলেম ছাড়া অন্য কেউ করতে পারবে না। এ জন্য আমি তাদেরকে ওয়ারিস ঘোষণা করে রেখে গেলাম। যদি তারা আমার আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, তাহলে কাল হাশরে আমার সাথে জান্নাতে অবস্থান করবে। তাদের রিযিকের ব্যবস্থা আল্লাহর পক্ষ হতে সুন্দরভাবে হবে। কিন্তু শর্ত হলো, তারা মানুষের কাছে অর্থ-সম্পদ ও মর্যাদা আশা করতে পারবে না। তাদের সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। প্রিয় ছাত্ররা! কসম খোদার! তোমাদের সকল ব্যবস্থা আল্লাহর পক্ষ থেকে হবে, যদি আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে পার। আমাদের দেশের মাওলানা আতহার আলী রহ., শামসুল হক ফরিদপুরী রহ., পীরজী হুযুর রহ., তাজুল ইসলাম রহ., এর পূর্বে হাকীমুল উম্মৎ থানভী রহ. হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ., শাইখুল হিন্দ মাহমূদুল হাসান রহ., ইয়াকুব নানুতুবী রহ., শাহওয়ালী উল্লাহ রহ., শাহ ইসহাক রহ., শাহ আব্দুল আযীয দেহলভী রহ., হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী রহ., মুজাদ্দেদে আলফেসানী রহ., গাংগুহী রহ. প্রমুখ মনীষীদের জীবনী পড়ে দেখ। দুনিয়া তাদের পায়ের নিচে চলে এসেছিল। এমপি, মিনিষ্টার, প্রেসিডেন্টসহ সকল শ্রেণীর লোক তাঁদের কাছে মাথানত করেছে। অথচ তাঁদের নিটক অর্থ সম্পদ ছিল না। নাম করা কোন পদও ছিল না। তারা হাদীস ও কুরআনের নেয়ামত পেয়েছিলেন। তাদের মত আল্লাহর সাহায্যকে নিজের একমাত্র অবলম্বন মনে করবে। আল্লাহর সাথে তায়াল্লুক মজবুত করবে। বেশি বেশি জিকির করবে। জিকির তো অনেক আছে, কিন্তু কিছু কিছু জিকির আল্লাহর নিকট অতি প্রিয়। যেমন বুখারী শরীফের শেষ হাদীসের কালিমা দুটি।-
سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم

সর্বদা তা পড়া ভালো। জানা তো নেই, কখন কোন্ আমল কবুল হয়ে যায়।
জুনায়েদ বাগদাদী রহ.-এর স্মরণীয় উক্তি
জুনায়েদ বাগদাদী রহ. বলেন, সারা জীবন আমল করলাম; নামায পড়লাম, রোযা রাখলাম, হজ্ব করলাম, কত মানুষকে মুরীদ করলাম, ওলী বানালাম, হাফেয বানালাম, কত কিছুইনা করলাম, কিন্তু মহান প্রভুর দরবারে গিয়ে যদি দেখি একটি আমলও কবুল হয়নি তখন উপায় কি হবে?
হাদীসটিতে বলা হয়েছে كلمتان মাত্র দুটি কালিমা, حبيبتان الي الرحمن মহান রহমানের নিকট খুবই প্রিয় ও পছন্দনীয়। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, রাসূল সা. এখানে ‘আল্লাহ’ নামটি উল্লেখ না করে ‘রহমান’ নামটি নির্বাচন করেছেন। এর কারণ কী? কারণ হলো, অন্য নামসমূহের কোনটির মধ্যে ভয়ের আছর রয়েছে, আবার কোনটির মধ্যে আল্লাহর হক ও অধিকারের কথা নিহত রয়েছে কিন্তু’ ‘রহমান’ নামের মধ্যে এসব নেই। রহমানের অর্থ হলো, এমন দয়ালু যিনি এরূপ ব্যক্তিকেও অনুগ্রহ করেন, যে ব্যক্তি অনুগ্রহ পাওয়ার যোগ্য নয়। যেমন তিনি দুনিয়াতে বেঈমান, কাফের-মুশরিকদের হাজারো নেয়ামত দান করে থাকেন। রহমান আল্লাহ ছাড়া আর কারো গুণ হতে পারে না। সুতরাং রহমান নামটিকে কেন নির্বাচন করা হয়েছে তা বোঝা গেল । কারো যদি এই ছোট্ট দুটি কালেমা আখেরাতের পাল্লায় ভারী হওয়া এবং তার দ্বারা জান্নাত লাভ করার ব্যাপারে শংসয় হয়, তাহলে সে রহমান নামের দিকে দৃষ্টি দিবে। সাথে সাথে তার শংসয় দূর হয়ে আশার জোয়ার নেমে আসবেخفيفتان علي اللسان কালিমা দুটি মুখে উচ্চারণ করতে খুবই সহজ। ধনী, গরীব, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, আরব, অনারব কারো জন্যই কঠিন নয়। কিন্তু পড়তে সহজ হলে কি হবে, কাজের ক্ষেত্রে খুবই দামীثقيلتان في الميزان জিনিস ছোট কিন্তু ওজন অনেক। আখেরাতে ওজনের পাল্লায় অনেক ভারী হবে।
মাপ দেয়া হবে কোন জিনিস?
এখন জানার বিষয় হলো, হাশরের ময়দানে যে জিনিস মাপ দেয়া হবে তা কী? কারণ এ সম্পর্কে তিন ধরনের হাদীস এসেছে। যেমন- (এক) বান্দার আমল মাপ দেয়া হবে। (দুই) বান্দার আমলনামাকে মাপ দেয়া হবে। তিরমিযীতে এসেছে যে, সহিফায়ে আমল অর্থাৎ দুই ফেরেশতা দুই কাঁধে যে কুদরতী কাগজে বান্দার নেক ও বদ আমল লেখেন, সেই কুদরতী কাগজ মাপ দেয়া হবে। (তিন) আমলকারীকে মাপ দেয়া হবে। হাদীস তিন প্রকার হয়ে গেল। ছাত্ররা জান যে, এ অবস্থায় কী করতে হবে। সর্ব প্রথম দেখতে হবে নাসেখ মানসুখ। অর্থাৎ এক হাদীস দ্বারা অপর হাদীসের হুকুম রহিত হয়েছে কিনা? এরূপ না হলে তারজীহ অর্থাৎ একটিকে অপরটির উপর প্রাধান্য দেয়ার নীতিকে অবলম্বন করতে হবে। এটাও যদি করা না যায়, তাহলে তাতবীক অর্থাৎ সবকটি হাদীসের মধ্যে সমন্বয় সাধনের নীতি অবলম্বন করতে হবে। ইমাম বুখারী রহ. বলতে চান যে, এখানে তারজীহ হবে। তিনটি হাদীসের মধ্যে বান্দার আমলকে মাপ দেয়ার হাদীসটি প্রাধান্য পাবে। এর জন্য তিনি তিনটি দলিল পেশ করেছেন। যথা (১) কুরআনের ঐ আয়াত যা দ্বারা ইমাম বুখারী রহ. শেষ অধ্যায় কায়েম করেছেন।
ونضع الموازين القسط ليوم القيمة
(২) ইবনে উমরের হাদীস, নিশ্চয় বান্দার আমলের ওজন হবে মিযানের পাল্লায়। (৩) হাদীসে মিযান অর্থাৎ বুখারীর শেষ হাদীস যা এখনি পাঠ করা হবে।
ইমাম বুখারী রহ. তো তারজীহের নীতি অবলম্বন করেছেন, কিন্তু আমার মতে সব হাদীসের মধ্যে সমন্বয় সাধনও করা যায়। সেটা এভাবে যে, আল্লাহ পাক তো রহমান ও রহীম। তিনি তাঁর বান্দাকে যথাসম্ভব জান্নাতে নেয়ার চেষ্টা করবেন। কোনো নিয়ম ছাড়াই জান্নাতে দিলে তো স্বজনপ্রীতি হবে। তাই আইনগত পন্থা অবলম্বন করে যেসব বান্দাদের শুধু আমলের ওজনে কাজ হবে না তাদের আমলকে আমলনামাসহ মাপ দিয়ে তাদেরকে জান্নাতে পাঠাবেন। এরপরও যারা জান্নাতের যোগ্য হবে না, তাদের শরীরসহ ওজন করাবেন।
ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বিশেষ উপদেশ
তোমরা যারা আজ ফারেগ হচ্ছো, তাদেরকে পরিপূর্ণ ঈমান ও আমল নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে। তোমরা যদি কাল হাশরের ময়দানে দ্বীনদার, আমলওয়ালা আলেম হয়ে হাজির হতে পার, তাহলে তোমাদের উসিলায় তোমাদের উস্তাদগণ পুরস্কৃত হবেন। তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ, তোমরা এখান থেকে চলে যাওয়ার পর দুনিয়ার জন্য আখিরাতকে নষ্ট করবে না। পাপের কাজে লিপ্ত হবে না। এটুকুই তোমাদের কাছে আমার চাওয়া। তোমাদের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে আমি বড় পুরস্কারের আশা রাখি। ইমাম বুখারী রহ. এর এক উস্তাদ ছিলেন ইসহাক ইবনে রাহওয়াই। তিনি উস্তাদের আশা পুর্ণ করেছিলেন। উস্তাদ একদিন বললেন, আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি, যদি কেউ শুধু সহী হাদীসগুলো সংকলন করে একটি কিতাব লিখত, তাহলে আমি খুব খুশি হতাম। ইমাম বুখারী রহ. উস্তাদের আশা পূর্ণ করার জন্য ষোল বছর অক্লান্ত মেহনত করে হাদীসের এই কিতাবটি লিখেছিলেন। ইমাম বুখারী রহ. প্রতিটি হাদীস লেখার পূর্বে অযু করতেন, দুই রাকাত নফল নামায আদায় করতেন। পূর্ণ কিতাবটি রাসূলের রওযা শরীফের পাশে বসে লিখেছিলেন। ইমাম বুখারী রহ. এর এত উঁচু মর্যাদা কেন হয়েছিল জান? উস্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি, আদব ও সম্মানের কারণেই হয়েছিল। আজ আমি তোমাদের উস্তাদগণের পক্ষং থেকে বলছি, যতদিন উস্তাদের আযমত ও মুহাব্বত তোমাদের অন্তরে থাকবে, উস্তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখবে, ইনশাআল্লাহ উস্তাদদের আন্তরিক দোয়া তোমাদের সার্বক্ষণিক সাথী হবে; যা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার জন্য তোমাদের সবচেয়ে বড় পাথেয়।
www.dawatul-haq.com

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
২৩১ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ১.০০)