লগইন রেজিস্ট্রেশন

মানব রচিত সংবিধান ও আল্লাহ প্রণীত সংবিধানের পার্থক্য

লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ শুক্রবার, জানুয়ারি ২৮, ২০১১ (৩:৫৩ অপরাহ্ণ)

মহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান দা:বা:এর বয়ান
তারিখ-১৫-১০-২০১০, স্থান : গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ

মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্টি
আল্লাহপাক পৃথিবীতে যত জিনিস সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে মানুষ হলো সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি। এই সর্বোত্তম সৃষ্টির উপকারার্থেই তিনি মহাবিশ্বের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য যদি না থাকতো তাহলে আল্লাহ পাক এই সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করতেন না। পৃথিবীতে শুধু একজন মানুষ বেঁচে থাকতে হলেও বিশাল এই পৃথিবীর প্রয়োজন পড়ে। যেমন মাদরাসা স্কুলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম, এভাবে পাঁচটি ক্লাস আছে। মনে করুন এই পাঁচটি ক্লাসের জন্য পাঁচজন শিক্ষকের প্রয়োজন। কারণ প্রত্যেক ক্লাসেই দশ, বিশ কিংবা ত্রিশ জন ছাত্র আছে। এই বিশ-ত্রিশ-জন ছাত্রকে পড়ানোর জন্য একজন শিক্ষকই যথেষ্ট। এখন যদি কোনো শ্রেণীতে মাত্র একজন ছাত্র থাকে তাহলে তার জন্যও একজন শিক্ষক লাগবেই।
আকাশে যখন সূর্য উদীত হয়, তখন এর আলোর দ্বারা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ উপকৃত হয়। এখন যদি পৃথিবীতে কেবল একজন মানুষ থাকে তাহলেও তার প্রয়োজন পূরণার্থে সূর্যের উদিত হওয়া লাগবেই। এভাবে একদিকে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, এই পৃথিবীকে আল্লাহ পাক একজন মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন, অপর দিকে চিন্তা করলে দেখা যায় কোটি কোটি মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি মহান কুদরত ওয়ালা!

আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণার হুকুম
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করতেন বলেছেন। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে অসংখ্য-অগণিত সৃষ্টি বিদ্যমান। এগুলো থেকে যে কোনো একটি নিয়ে গবেষণা করলেই আল্লাহর কুদরতের পরিচয় পাওয়া যায়। মানুষ তার সাড়ে তিন হাত শরীরের মঝে চিন্তা করলেও বুঝতে পারবে যে, তাকে কে সৃষ্টি করেছেন। শরীরের পঞ্চ ইন্দ্রীয় নিয়ে চিন্তা করলেও বুঝতে সক্ষম হবে। যেমন পঞ্চ ইন্দ্রীয়ের একটি হলো চোখ, এর দ্বারা আমরা দৃশ্যমান সব বস্তু দেখতে পাই। রাস্তায় চলার পথে চোখের সাহায্য কত দরকার তা বলাই বাহুল্য। এছাড়াও মাতা-পিতা, ভাই-বোন ও অন্যান্যদেরকে পৃথক পৃথকভাবে সহজে চেনা যায়। আরেকটি হলো নাক; এর দ্বারা মানুষ শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে, তদরূপ যে কোনো বস্তুর ঘ্রাণ শুঁকে বুঝতে পারে যে, সেটা পঁচা না ভালো। আরেকটি হলো নাক; চতুর্থটি হলো হাত, আর পঞ্চমটি হলো তক। এর প্রত্যেকটিই মানুষের নানা উপকারে ব্যবহৃত হয়। এগুলো কে দিয়েছেন? মানুষ কি এর কোনটি অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করেছে? মহান দয়ালু আল্লাহ পাকের এত দয়া যে, বান্দার কোনোরূপ আবেদন-নিবেদন ছাড়াই তিনি তাকে এসব দান করেন। এগুলো ব্যতীত মানুষ দুনিয়ার জিন্দেগীতে জীবনযাপন করতে সক্ষম নয় বলেই তিনি তা শরীরের মাঝে ফিট করে দিয়েছেন। এগুলো আল্লাহ পাকের দান। এসব নিয়ে চিন্তা-ফিকির করলেই বান্দার মুখে বের হবে কুরআনের এই আয়াত-
অর্থ “পরওয়ার দেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই। আমাদের তুমি দোযখের আযাব থেকে বাঁচাও।”
মানুষকে জ্ঞান দানের উদ্দেশ্য
এভাবে বান্দা আপন মালিকের কুদরত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করলে কি কখনোই মালিকের নাফরমান ও অবাধ্য হতে পারে? পারে না।
মানুষকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন যাতে সে আল্লাহকে চিনতে পারে এবং আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে। আল্লাহ প্রদত্ত এই জ্ঞানের মাধ্যমেই মানুষ বহু অজানা জিনিস জানছে, নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করছে। কিন্তু আল্লাহর পরিচয় জানার পেছনে জ্ঞানকে খুব কম মানুষই ব্যবহার করছে।
এই পৃথিবীর সবকিছুই নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছে। রাতের ক্ষমতা নেই নির্ধারিত সময়ের এক মিনিট পূর্বে আগমন করার, তদরূপ দিনেরও ক্ষমতা নেই নির্ধারিত সময়ের এক মিনিট পূর্বে চলে যাওয়ার। এই কঠোর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাপনা কে করে? হে মানুষ তোমার জ্ঞান দ্বারা এ বিষয়ে চিন্তা করে দেখ! অতিবর্ষণ, বন্যা, বাতাসের বেগ, পানির স্রোত এগুলো কে নিয়ন্ত্রণ করে তা জ্ঞানের মাধ্যমে চিন্তা করে দেখ! আল্লাহ পাক তো তোমাকে জ্ঞান দান করেছেন সৃষ্টির মাঝে চিন্তা-গবেষণা করে স্রষ্টাকে চেনার জন্যই।

দুই ধরনের জ্ঞান
আল্লাহ মানুষকে দান করেছেন দুই ধরনের জ্ঞান। একটা হলো ইন্দ্রীয় জ্ঞান ওহীলব্ধ জ্ঞান অন্যটি হলো মানুষের ইন্দ্রীয় জ্ঞান সীমাবদ্ধ। ইন্দ্রীয় জ্ঞানের পরিধির বাইরে আল্লাহ ওহী তথা কুরআন-হাদীসের জ্ঞান দান করেছেন। এই জ্ঞানের বাহক হলেন আখেরী নবী সায়্যেদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ইন্দ্রীয় জ্ঞান নির্ভুল নয়, হতেও পারে না, কিন্তু ওহীর জ্ঞান সম্পূর্ণ নির্ভুল। ভুলের লেশমাত্র তাতে নাই।

আখেরী নবীর আনিত সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
মানব জীবনের সফলতার জন্য সর্বগ্রাজ্য সংবিধান হলো এই ওহীর জ্ঞান তথা কুরআন-হাদীস। আখেরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর বুকে যে সংবিধান নিয়ে এসেছেন তার মাঝে আপত্তি ও সন্দেহ করার মতো কিছু নেই। তা কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক জাতি-গোষ্ঠির জন্য প্রযোজ্য ও যুক্তিযুক্ত। মানব রচিত সংবিধানের পিছনে পড়ে কোন লাভ নেই। কারণ এই সংবিধানের বিধান এই যুগে চলবে, আবার আগামী যুগে চলবে না। এক এলাকার মানুষ মানবে তো অন্য এলাকার মানুষ মানবে না। এই মানব রচিত পরিবর্তনশীল সংবিধানের দ্বারা জগতে কোন দিনও শান্তি আসবে না। একমাত্র কুরআন হাদীসের সংবিধানই দুনিয়া-আখেরাতের মুক্তির পথ ও পাথেয় হতে পারে যাদের জ্ঞানে এই বুঝটুকু ধরা পড়ে না তারাই হয় আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী!
আল্লাহপাক বলেছেন
অর্থ:“পৃথিবীতে আমার শোকরগোযার বান্দা অতি কম, (নাশোকর বান্দাই অধিক)।” বিনা আবেদনে, বিনা মেহনতে মানুষ হাজারো-লক্ষ ধরনের নেয়ামত প্রাপ্ত হচ্ছে। কিন্তু নেয়ামত দানকারীর শুকরিয়া আদায়ে সে চরম কৃপণ? অন্তত শুধু এতটুকুও যদি করতো যে, দুটি চোখের বিনিময়ে দিনে দুবার আল্লাহ ‘আল্লাহ’ যিকির করলো। তদরূপ দুই কানের জন্য দু’বার, নাকের দুছিদ্রের জন্য দুবার, দুহাতের জন্য দুবার, হাতের দশ আঙুলের জন্য দশবার, দু’পায়ের দশ আঙুলের জন্য দশবার। মুখের বত্রিশ দাঁতের জন্য বত্রিশবার ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ যিকির করলো; এতটুকু হলেও বিচারের মাঠে পেশ করার মতো কিছু হতো।
এখানে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, আপনার ৪০, ৫০, ৬০, ৭০ বছরের জীবনে আল্লাহপাকের দেয়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে এক বা একাধিকবার কে কে চিন্তা-গবেষণা করেছেন? তাহলে দুই এক জন পাওয়া যায় কি না সন্দেহ।

প্রচলিত শাসন ব্যবস্থায় জনগণের নিরাপত্তা
দেশের সরকার যেসব ট্যাক্স ধার্য করে, জনগণ তা এদিক-সেদিক করে হলেও রাষ্ট্রের আইন মেনে আদায় করে দেয়। বিনিময়ে সরকার দুনিয়ার জীবনে জান-মালের নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সরকারের চেষ্টা পুরোপুরি সার্থক হয় না। কারণ সরকার তো সৃষ্টিকর্তা নয়, মানুষ। মানুষের শক্তি-সামর্থ্য সীমিত। পক্ষান্তরে সৃষ্টিকর্তার শক্তি-সামর্থ্য অসীম। মানুষের কর্তব হলো বিশ্বজাহানের মহান স্রষ্টা আল্লাহ পাকের নেয়ামতের (মৌখিক ও কর্মগত) উভয়ভাবে শুকরিয়া আদায় করে তার কাছে জীবনের সার্বিক নিরাপত্তার দরখাস্ত করা। তিনি সবকিছুর উপর পূর্ণ সক্ষম।

নাশুকরির পরিণতি
আমাদের অবস্থা এমন যে, সমাজে যারা পণ্ডিত হয়, বুদ্ধিজীবী হয়, তারা আল্লাহ-প্রদত্ত নেয়ামতের শোকরগুজার তো হয়ই না উল্টো অহংকারী হয়। তারা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে নতুন নতুন ফর্মুলা দিয়ে দেশ রাষ্ট্র চালাতে চায়। তাদের ব্যাপারে কুরআনে আল্লাহ পাক এই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যদি তারা আমার দেয়া নেয়ামতের (মৌখিক ও কর্মগত) শুকরিয়া আদায় করতো তাহলে তাদের নিয়ামত আরো বাড়িয়ে দিতাম। যেহেতু তারা আমার নেয়ামতের নাশুকরি করে, তাই তাদের জন্য আমি মৃত্যুর পর যন্ত্রণাদায়ক আযাবের ব্যবস্থা করে রেখেছি।
সারা দুনিয়ার মানুষ যদি আল্লাহর শোকরগোযার বান্দা হয়ে যায় তাহলে আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের মাঝে চুল পমিাণ বৃদ্ধি ঘটবে না, অন্যদিকে যদি দুনিয়ার সমস্ত মানুষ আল্লাহর শক্র ও নাফরমান বনে যায় তাহলেও তার চুল পরিমাণ কোন ক্ষতি হবে না। তাহলে প্রশ্ন হয় যে, আমরা তবে কেন আল্লাহর আনুগত্য করবো? এর উত্তর হলো, নিজের জীবনের লাভের জন্য আল্লাহর আনুগত্য করতে হয়। আল্লাহ তায়ালা হলেন বান্দার অভিভাবক। তিনি মানুষকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। কোন পথে চললে বান্দার শান্তি ও সফলতা অর্জন সুনিশ্চিত হবে সে বিষয়ে তিনি বান্দাকে অবহিত করেন। এক মাখলুক অন্য মাখলুকের শান্তি সুনিশ্চিত করতে সক্ষম নয়।

শান্তি ও নিরাপত্তার চিন্তা
বর্তমান পৃথিবীতে মানুষের পধান চিন্তনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চি করা নিয়ে। পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ মানুষের জন্য যে বিধিবিধান তৈরি করেছে তার একটিও পূর্ণাঙ্গভাবে কাজে আসেনি। যে মানুষের জন্য এই বিশাল পৃথিবী, সেই মানুষই অন্যান্য মাখলুকের তুলনায় কঠিন সমস্যার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করে থাকে। জীবনের নিরাপত্তায় তাকে সর্বদা উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। ব্যক্তির পরিবর্তন, শক্তির পরিবর্তন, সংবিধানের পরিবর্তনসহ নানা ধরনের পরিবর্তন হওয়ার পরও শান্তির দেখা আমরা পাই না। এর কারণ কী? কারণ হলো, উল্লেখিত পরিবর্তনসমূহের দ্বারা শান্তি প্রতিষ্ঠা কোন দিনও সম্ভব নয় এ বিশ্বাস আমাদের নেই। মানুষ স্বীয় মস্তিষ্ক ব্যবহার করে যে ফর্মুলা তৈরি করে তা নিখুঁত ও সকলের জন্য প্রযোজ্য হয় না। মানুষ তো নিজেই শুদ্ধ নয়, তাহলে তার মস্তিষ্ক প্রসূত ফর্মুলার দ্বারা অন্য মানুষ কেমন করে শুদ্ধ হবে? আমাদের দেশে একদল এসে বলে, এটা করবো, ওটা করবো। পাঁচ বছর পর তাদের হটিয়ে জনগণ অন্যদলকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। তারাও এসে বলে আমরা এ করবো তা করবো। আগের উদ্যোগগুলো ভুল ছিল। এক সময় জাতি তাদেরকেও বিদায় করে। এই হচ্ছে আমাদের মানব-রচিত সংবিধানের সেবকগণের হাল। মানুষের বানানো সংবিধানকে সমুন্নত করার প্রত্যয় নিয়ে তারা দায়িত্ব গ্রহণ করে, কিন্তু জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদানে সফল হয় না। ফলে কয়েক বছর পর জনগণের কাছে তাদের প্রত্যাখ্যাত হতে হয়।

মানুষের রচিত সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
“মানুষের রচিত সংবিধান দিয়ে মানুষের সার্বিক শান্তির ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়” এ বিশ্বাস আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল করতে হবে। সংবিধান পরিবর্তন করে কী লাভ? পরিবর্তনকারীরা তো মানুষই। শান্তির জন্য দরকার স্রষ্টার সংবিধান। এর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো নবীযুগ। আখেরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিখুঁত-সুন্দর জীবন নিয়ে ইসলামের শত্রুরাও গবেষণা করে। নবীযুগের পর হযরত খোলাফায়ে রাশেদীনের স্বর্ণ-যুগকে সর্বাধিক শান্তির যুগ বলা হয়। তার কারণ হলো, মানব-রচিত ও পরিবর্তনশীল সংবিধান দিয়ে তাঁরা পৃথিবীতে শাসন করেনি, বরং তারা মহান সৃষ্টিকর্তার বিধান দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনা করেছিলেন। কুরআন-হাদীসের আলোকেই মানুষের জান মালের নিরাপত্তার ফর্মূলা প্রণয়ন করেছিলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের শান্তি, জান-মালের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নতি, সুশৃংখল সমাজ গঠন ও মানুষের অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে যে আসমানী ফর্মুলা জাতিকে দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই ফর্মুলায়ই হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন দেশ পরিচালনা করে সোনালী ইতিহাস কায়েম করে গেছেন।

জীবনের সার্বিক নিরাপত্তায় ইসলামের দর্শন
ইসলাম মানুষের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য যে বিষয়গুলো সবচেয়ে মূখ্য মনে করে তা হলো(১) মানুষের জানের নিরাপত্তা বিধান করা; চাই সে যে কোন ধর্মেরই হোক। জানের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ-
অর্থ:“আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে তোমরা অন্যায়ভাবে হত্যা করো না।”
(১) যিনা, (২) কেসাস (৩) রাষ্ট্রদ্রোহিতা (৪) মুরতাদ। এই চার ক্ষেত্রে ইসলামী রাষ্ট্রে হত্যার বিধান আছে। এছাড়া অন্য কোন কারণে মানুষকে হত্যার বিধান ইসলামে নেই। কুরআনের এই আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে পারলে মানুষের জানের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ।
(২) মালের নিরাপত্তা বিধান করা। মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মাল জরুরী। মালের নিরাপত্তার ব্যাপারে আল্লাহপাক কুরআনে বলেছেন-
অর্থ:“তোমরা অন্যায় ও অবৈধ পন্থায় একে অপরের মাল ভক্ষণ করো না।”
আজ সমাজে অবৈধ পন্থায় সম্পদ অর্জনের মহোৎসব লক্ষ করা যায়। অবৈধ পন্থাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পন্থা হলো, সুদ-ঘুষের পন্থা। এ পন্থা সহজ ও শ্রমহীন, তাই সবাই এটা গ্রহণে তৎপর। অথচ আল্লাহ সুদখোরদেরকে যুদ্ধের জন্য এগিয়ে আসতে বলেছেন। কিন্তু মানুষের এসব বাণীর কথা জানা নেই, কিংবা এর প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
(৩) মানুষের ইযযত-সম্মানের নিরাপত্তা বিধান করা। সমাজের মানুষ যাতে সচ্চরিত্রবান ও মনুষত্বের অধিকারী হতে পারে সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা সরকারের একান্ত কর্তব্য। চরিত্রহীন মানুষ পশুর চেয়েও খারাপ।
ইভটিজিং বন্ধ হবে কীভাবে?
মানুষের ইযযত-সম্মান রক্ষাকল্পে ইসলাম কয়েকটি অভ্যাস ও কর্মের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়ার জন্য বলেছে। যেমন- যবানকে কন্ট্রোল করা, মিথ্যা ওয়াদা না দেয়া, গীবত না করা, চোখের হেফাযত করা, পর নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত না করা, নারীদের পরিপূর্ণ শরয়ী পর্দা মান্য করা ইত্যাদি। পর্দার সাথে চলফেরা করা নারীর ইজ্জত রক্ষার প্রধান শর্ত। শরয়ী পর্দার বিধান বাস্তবায়ন না করে সমাজের ইভটিজিং বন্ধের কল্পনা করাও বোকামী। পর্দার বিধান ছাড়া মানব মস্তিষ্ক-প্রসূত যেই পদ্ধতিই গ্রহণ করা হবে তার দ্বারা ইভটিজিং আদৌ বন্ধ হবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা-প্রদত্ত বিধান মতে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জগতবাসীর জন্য যে পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন তার বিকল্প কিছু হতেই পারে না। চারিত্রিক গুণাবলির দিক দিয়ে সার্বিকভাবে মুসলমানরা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর তুলনায় অনেক ভালো। এটা ইসলামী আইন, বিধান ও শিক্ষার প্রভাবের ফল।

আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তাধারার ভিন্নতা
মানুষের জান-মাল ও ইযযতের নিরাপত্তা বিধানকল্পে একেক চিন্তাধারার অধিকারী একেক ফর্মুলা পেশ করে থাকে। এর ভিত্তি অবশ্য তার অন্তরের আকীদা-বিশ্বাস মানুষের বিশ্বাস যে দিকে যায় সে সেই দিক নিয়েই চিন্তা-ভাবনা করে থাকে। একজন কমিউনিষ্ট মানুষের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য যে ফর্মুলা পেশ করে তা কম্যুনিজম তথা সমাজতান্ত্রিক মতবাদের আলোকেই হয়ে থাকে। কমিউনিষ্টদের বিশ্বাসের প্রথম কথা হলো, এই পৃথিবীর কোন মালিক নেই, এর স্রষ্টা বলতে কেউ নেই। তাদের আর বিশ্বাস হলো, মৃত্যুর পরবর্তী জীবন হলো কল্পনাপ্রসূত কথামাত্র। কিয়ামত ও তার বিচার, পুলসীরাত, মিযান ইত্যাদি সবই ভিত্তিহীন। এসব বিশ্বাস ইসলামী আকীদার সম্পূর্ণ খেলাফ।
ইলম বলে যে, আল্লাহ রাসূলকে বাদ দিয়ে যে বিধান প্রণয়ন করা হবে অবশ্যই তা প্রত্যাখ্যাত হবে। যুক্তির দাবি হলোÑ সৃষ্টির শান্তির জন্য স্রষ্টার বিধান যমীনে কায়েম করতে হবে, তাহলেই শান্তির দেখা মিলবে। ইহুদী খৃষ্টানরাও তাদের আক্বীদা-বিশ্বাস অনুপাতে মানবজীবনের সমস্যা সমাধানের ফর্মুলা পেশ করে। তাহলে মুসলমানরাও তাদের মতো স্বীয় আক্বীদা-বিশ্বাস অনুপাতে ফর্মুলা পেশ করবে; কিন্তু সেটা করে না। তারা বরং ইহুদী-নাসারা, কমিউনষ্ট, এক কথায় পশ্চিমাদের ফর্মুলা গ্রহণে যারপরনাই উৎসাহী। মুসলমানদের বিশ্বাস হলো, দুনিয়াতে যা কিছু বলা হয়, করা হয়, তা পুরোপুরি লিপিবদ্ধ হয়। অতঃপর মৃত্যুর পর তার যথাযথ প্রতিদান প্রতিফল বান্দাকে দেয়া হবে। তাই দুনিয়াতে সেটাই করতে হবে যা আমাদের মালিক ও স্রষ্টা করতে বলেছেন।
“দুনিয়াতে অপরাধ করলে হাশরের ময়দানে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।” এই ভয় ও অনুভূতি যার অন্তরে জাগ্রত নাই, তাকে মানুষের নির্ধারণকৃত দুনিয়ার যত শাস্তিই প্রদান করা হোক না কেন সে সংশোধনের পথে আসবে না। মানুষের বানানো আইন-কানুনে দোষী নির্দোষ প্রমাণিত হয়, আর যে নির্দোষ সে দোষী হয়। আখেরাতে এমনটি হওয়া অসম্ভব। কুরআনে বলা হয়েছেÑ ¢ ¢ ে 
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরাম বলেছেন, দুনিয়ার জীবনে মানুষ যেসব অপরাধ করবে তা কিয়ামতের ময়দানে কুকুর-শুকরের আকৃতি ধারণ করে তার সামনে প্রকাশ পাবে। তেমনি নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, তেলাওয়াত ইত্যাদিও ভালো আকৃতি ধারণ করে পাশে উপস্থিত হবে।
ইসলামী রাষ্ট্রে গয়রে মুসলিমের নিরাপত্তা
প্রিয় উপস্থিতি! পৃথিবীর বুকে মানুষের প্রতি আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো কুরআন ও হাদীস। এই নেয়ামতই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সব ধরনের উম্মতের জন্য মুক্তির একমাত্র পাথেয়। মুসলমানারাই শুধু আখেরী নবীর উম্মত তা নয়, বরং অন্য ধর্মের লোকেরা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত। তাই তাদের জান, মাল, ইযযত-সমমানের উপরও অন্যায়ভাবে আঘাত করা যাবে না। তাদের সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও অথনৈতিক অধিকার সংরক্ষণে মুসলমানদের যতœবান হওয়ার নির্দেশ ইসলাম প্রদান করেছে।

রাসূল (সা.)-এর দু’য়া
আমি বয়ানের শুরুতে একটি আয়াতের অংশবিশেষ পড়ে ছিলাম। তা হলো, ربي زدني علما  রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা বেশি বেশি পড়তেন। এর মর্মার্থ হলো, “হে আল্লাহ! আমার মেধা, যোগ্যতা, বুদ্ধি-জ্ঞান সবই তোমার দান। আমার নিজের কিছুই না। তুমি মহান দয়ালু, অসীম দাতা। দয়া করে আমাকে দান করেছ। হে আমার প্রতিপালক! আমার প্রতি তোমার এই দানের পরিমাণ বাড়িয়ে দাও। ইলম, বুদ্ধি-জ্ঞান আমায় অধিক পরিমাণে দান করো! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জ্ঞান চাওয়ার কারণ ছিল এই যে, উম্মতের যে দায়িত্বভার তাঁর কাঁধে দেয়া হয়েছে তা পালনে যেন তিনি পূর্ণ সক্ষম হন এবং এর ফলে তার উম্মত যেন দুনিয়ার জীবনে সফল হয়ে ঈমান সহকারে মৃত্যুবরণ করতে পারে, এরপর নিরাপদে পুলসিরাত পার হয়ে আল্লাহর দিদার লাভ করতে পারে। তিনি মানুষ হিসেবেই আল্লাহর কাছে এ দোয়া করতেন, নচেৎ আল্লাহ তো তাঁকে পূর্ণ যোগ্যতা ও ইলম দেয়ার ফয়সালা আগেই করে রেখেছেন। তাছাড়া আল্লাহপাক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো কাজের নির্দেশ করার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো উম্মতকে শিক্ষা দেয়া। অতএব আমাদের উচিত ربي زدني علما   এই দুয়া সর্বদা বেশি বেশি পড়া। বিশেষ করে ওয়ারিছে নবী তথা উলামায়ে কেরামের জন্য এ আমলকে শরীরের পোশাকের মতো আবশ্যক করে নেয়া উচিত। আল্লাহ পাক আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন!

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
২৬৩ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)

২ টি মন্তব্য

  1. Allah amader sobai ke sothik pathy chalar taofiq dan karun. (amin)

  2. শুকরিয়া, সময় উপযোগি ও গুরুত্ব পূন্য বয়ান তুলে দেওয়ার জন্য ।