দাওয়াতুল হকের মারকাযী ইজতেমা সুন্নাহর সুস্মিত ধারায় উদ্ভাসিত হোক বাংলার জমিন
লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ মঙ্গলবার, মার্চ ১, ২০১১ (৩:৪৬ অপরাহ্ণ)
জহির উদ্দিন বাবর
সুন্নতে নববীর সূত্র ধরেই ইসলাম আমাদের পর্যন্ত অক্ষুণ্যভাবে পৌঁছেছে। ইসলামের আগে কোনো ধর্মের বিধি-বিধান এভাবে সংরক্ষিত না থাকার কারণ এটাই। আগেকার নবীর উম্মতেরা তাদের নবীর জীবন-দর্শনের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করতো না। নবী চলে যাওয়ার পর তাদের ধর্মাচারে যুক্ত হতো নানা আবিলতা। এভাবে এক সময় ধর্মের মূল স্পিরিট হারিয়ে তা বিকৃত রূপ ধারণ করতো। আল্লাহ তার অশেষ মেহেরবানীতে আমাদের ধর্মকে অক্ষুণ্য রেখেছেন তাঁর প্রিয় হাবীবের জীবনের প্রতিটি ধাপ চর্চা ও অনুশীলনের ব্যবস্থা করে। নবীজী সা্ল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা, কাজ, আদেশ-নিষেধ তথা জীবনের প্রতিটি পর্যায় অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে একজন মুমিনের সফলতা। রাসূল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ তোমরা তা আঁকড়ে রাখবে ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না-১. আল্লাহর কিতাব, ২. নবীজী সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পরও তার কথা, কাজ ও জীবনাচার প্রতি মুহূর্তে চর্চিত হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে। এটা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সুন্নাহর চর্চা ও অনুশীলনের গতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নবীদের উত্তরসুরি খ্যাত ওলামায়ে কেরামের ওপর। সাধারণ মুসলমানকে পুরোপুরি সুন্নাহর ওপর চলতে সাহায্য করার দায়িত্ব আলেমের। প্রকৃত আলেম তিনিই যিনি নিজে সুন্নাহর ওপর পুরোপুরি অবিচল থাকেন এবং অন্যকে সুন্নতের ওপর আমল করতে সহায়তা করেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এ যুগে ওলামায়ে কেরামের খুব কম সদস্যই সুন্নাহর চর্চা ও বিকাশে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করছেন। বর্তমানে মুসলমানদের অধঃপতনের অন্যতম কারণ এটাও যে, তারা আজ সুন্নতে নববী থেকে অনেক দূরে।
আলহামদুলিল্লাহ! পুরোপুরি সুন্নতে নববীর আলোকে জীবনযাপনের জন্য ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত কিছু প্রয়াস এখনও কার্যকর আছে। মজলিসে দাওয়াতুল হক এর অন্যতম। মুসলিম উম্মাহ যখন ক্রমেই সুন্নতে নববীর মূলধারা থেকে সরতে শুরু করেছে তখন এ দাওয়াতি সংগঠনটি প্রতিটি মুসলমানকে সুন্নতের ওপর টিকে থাকার তালকিন দিয়ে যাচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি সুন্নত সহীহ তরিকায় পালনের জন্য দাওয়াতুল হকের কর্মীরা নিরলস ও নিঃস্বার্থ শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। এটি গতানুগতিক কোনো সংগঠন বা সংস্থা নয়। বৈষয়িক কোনো প্রাপ্তির জন্য দাওয়াতুল হক কাজ করে না। এর নামটিতে যে স্পিরিট লুকিয়ে আছে-‘হকের দাওয়াত’, সে দাওয়াতি কার্যক্রমই চালিয়ে যাচ্ছে দাওয়াতুল হক।
দাওয়াতুল হক মূলত হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)-এর সুন্নাহ প্রতিষ্ঠার একটি বিপ্লবী আন্দোলন। যুগের সংস্কারক হযরত থানভী (রহ.) যখন দেখলেন মুসলমানদের মধ্যে সুন্নতের প্রতি গাফলত সৃষ্টি হয়েছে এবং সুন্নাহর ওপর আমল না থাকার কারণে পুরো দ্বীন থেকেই তারা ছিটকে পড়ছে তখন তিনি দাওয়াতুল হক নামে একটি দাওয়াতি কার্যক্রম হাতে নেন। তাঁর এই ইলহামী উদ্যোগে থানভী সিলসিলার প্রত্যেক বুযুর্গ আন্তরিকভাবে যুক্ত হন। পাক-ভারত উপমহাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে দাওয়াতুল হকের কার্যক্রম আস্তে আস্তে বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে দাওয়াতুল হককে তাবলিগ জামাতের পর সবচেয়ে বড় দাওয়াতি কাফেলা হিসেবে গণ্য করা হয়।
হাকীমুল উম্মতের খলীফা হযরত শাহ আবরারুল হক হারদুঈ (রহ.) ছিলেন দাওয়াতুল হকের কার্যক্রমে নিবেদিত একজন মহান বুযুর্গ। আপাদমস্তক তিনি ছিলেন সুন্নতে নববীর বাস্তব উদাহরণ। তাঁকে দেখলে মনে হতো সুন্নতে নববী ধাঁচে তৈরি একটি নিখুঁত সত্তা। তিনি বারবার বাংলাদেশে এসেছেন এবং এদেশের ওলামায়ে কেরামকে উদ্বুদ্ধ করেছেন দাওয়াতুল হকের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হতে। হারদুঈ হযরতের বিশিষ্ট খলিফা, বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা মাহমুদুল হাসান (দা.বা.) বর্তমানে বাংলাদেশে দাওয়াতুল হকের আমীরের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর সরাসরি নেগরানীতে দাওয়াতুল হকের কার্যক্রম আজ দেশের আনাচে-কানাচে বিস্তৃত। এ সংগঠনের উসিলায় কত বিপথগামী মুসলমান যে সুন্নতে নববীর আলোকবিভায় উদ্ভাসিত হচ্ছেন তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
জামিয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়িতে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত দাওয়াতুল হকের মারকাযী ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী লাখো মুসলমান সুন্নতে নববীর স্পিরিট নিয়ে বাড়ি ফিরে। সুন্নাহ মানুষকে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও আলোকিত করে। সুন্নাহর এই সুস্মিত ধারা বাংলার জমিনকে হিদায়াতের আলোকশিখায় উদ্ভাসিত করে তুলুক-সে প্রত্যাশা সবার।
zahirbabor@yahoo.com
এটি গতানুগতিক কোনো সংগঠন বা সংস্থা নয়। বৈষয়িক কোনো প্রাপ্তির জন্য দাওয়াতুল হক কাজ করে না। মহান আল্লাহ দ্বীনের খাদেমদেরকে কবুল করুন।