লগইন রেজিস্ট্রেশন

সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলো মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ-এর ১৭ তম বার্ষিক ইজতিমা

লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ শুক্রবার, এপ্রিল ৮, ২০১১ (১২:৪১ অপরাহ্ণ)

২’দিন ব্যাপী মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ-এর ১৭তম বার্ষিক ইজতিমা দাওয়াতুল হক-এর মারকায জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী, ঢাকায় অত্যন্ত সুশৃংখলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ৩ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার পর কালামে পাকের তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে মজলিসের সূচনা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বয়ান চলতে থাকে। সকাল দশটার মধ্যেই ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে আত্মশুদ্ধি ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে সুন্নতের অনুসরণের প্রেরণায় আগত উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার মুসলমান ভাইদের অংশগ্রহণে মসজিদ ও মসজিদের সামনের বারান্দা, সামিয়ানা টাঙ্গানো চত্বরসহ মাদরাসার মাঠ ভরে যায়।
সকাল ৯টার পর কালামে পাকের তেলাওয়াত, তারানা ও আসমায়ে হুসনা পাঠের মাধ্যমে ১ম দিনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা, বাহ্মনবাড়িয়া, ভৈরব, মোমেনশাহী, জামালপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, নওগাঁ, যশোর, খুলনা, বগুড়া, গাজীপুর, নরসিংদী, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলার আমীর, নায়েবে আমীর, কর্মী তথা দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামা ও ছাত্র শিক্ষক এবং মুহউিস সুন্নাহ হযরত মাওলানা আবরারুল হক সাহেব রহ. এর খুলাফাগণ উক্ত অনুষ্ঠানে তাশরীফ রাখেন। দেশবরেণ্য হাজার হাজার ওলামায়ে কেরামের পদভারে উক্ত দুটি দিন জামেয়া প্রাঙ্গন মুখরিত হয়ে ওঠে। কখনো গুরুত্বপূর্ণ বয়ান, কখনো আযান-ইকামতের আমলী মশক, কখনো নামাযের আমলী মশক, কখনো আত্মশুদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ইত্যাকার কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে ইজতিমা চলতে থাকে। সত্যি একটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান।
হাকীমুল উম্মাত হযরত থানবী রহ. এর সর্বশেষ খলীফা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লক্ষ কোটি মুসলমানের পরম শ্রদ্ধেয় আধ্যাত্মিক মুরব্বী, সুন্নতে নববীর মূর্ত প্রতীক, মুসলিহুল উলামা ওয়াল উম্মাহ, মুহিউস সুন্নাহ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক সাহেব হারদুয়ী রহ.-এর ইন্তেকালের পর তাঁরই মনোনীত সুযোগ্য আমীর মুহিউস সুন্নাহ হযরত মাওলানা মাহমূদুল হাসান সাহেবের দিক-নির্দেশনায় পরিচালিত মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ-এর কাজকে যথাযথভাবে এগিয়ে নেয়া এবং হযরতওয়ালা হারদুয়ী রহ.-এর রেখে যাওয়া কর্মসূচী আরো মজবুত ও গতিশীল করার লক্ষ্যে এই ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়। হযরতওয়ালা হারদুয়ী রহ.-এর সম্মানিত খুলাফায়ে কেরাম, মুরিদীন, মুহিব্বীন এবং দাওয়াতুল হকের সর্বস্তরের যিম্মাদার ও কর্মীদের ব্যাপক ও স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণে এ ইজতেমা দেশের শীর্ষ উলামা-মাশায়েখদের মিলনগাহে পরিণত হয়।
শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত ও তারানা পাঠের পর হযরত মাওলানা আনওয়ারুল হক সাহেব উদ্বোধনী বক্তব্য পেশ করেন। এরপর সকাল ১১.৪০ মিনিট পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মুহিউস সুন্নাহ হযরত ওয়ালা হারদুয়ী রহ. এর বিশিষ্ট খলীফা যথাক্রমে বুয়েটের সাবেক প্রবীণ প্রফেসর হামীদুর রহমান সাহেব এবং কাপাসিয়া গাজিপুর মাদরাসায়ে দাওয়াতুল হকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপ্যাল মিজানুর রহমান সাহেব বয়ান করেন।
১১.৪০ থেকে ১২.১৫ পর্যন্ত বগুড়া জেলা দাওয়াতুল হকের কার্যক্রমের কারগুযারী পেশ করেন বগুড়া জামিল মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ও বগুড়া জেলা শাখার আমীর মাওলানা আব্দুল হক হক্কানী সাহবে। অতঃপর দুপুর ১.০০ পর্যন্ত কুমিল্লা কাসেমুল উলূম মাদরাসার শাইখুল হাদীস মাওলানা আশরাফ আলী সাহেব দা. বা. সুন্নতে নববী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তাকরীর পেশ করেন।
এরপর যোহরের আযান হয়। আযানের পর সুন্নত মোতাবেক নামাযের আমলী মশক করান হযরত হারদুয়ী রহ.-এর খলীফা, মুফতী সুহাইল সাহেব।
জোহরের পর দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ নসীহত পেশ করেন আমীরুল উমারা মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান সাহেব দা. বা.। এরপর বয়ান করেন হযরত হারদুঈ রহ.-এর বিশিষ্ট খলীফা মুফতী মনছুরুল হক সাহেব । তারপর দাওয়াতুল হকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাদরাসা থেকে আগত শিশু-কিশোর ছাত্ররা নামায, আযান-ইকামত ও অন্যান্য আমলের সুনান বর্ণনা করে এবং আসমায়ে হুসনা ও (মুনাজাতে মাকবুল কিতাবের প্রারম্ভে লিখিত) তারানা পাঠ করে শোনায়। অতঃপর বয়ান করেন লালবাগ শাহী মসজিদের খতীব ও মিরপুর খাদেমুল ইসলাম মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস মাওলানা ইমরান মাযহারী সাহেব। এরপর ৪.২৫ থেকে আসরের নামাযের পূর্ব-পর্যন্ত ওযু ও কেরাতের মশকে আমলী করান মুফতী সুহাইল সাহেব।
আসরের পর তৃতীয় অধিবেশনের শুরুতে বিশেষ বয়ান পেশ করেন মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দা. বা.। অতঃপর বয়ান করেন , ঢাকা মতিঝিল মাদরাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদীস, বাইতুল মুকাররমের সাবেক পেশ ইমাম হযরত হারদুঈ রহ.-এর খলীফা মাওলানা রফিক আহমদ সাহেব। এরপর মাগরিবের নামাযের পূর্ব পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নসীহত পেশ করেন ঢাকা ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস, হযরত হারদুঈ রহ.-এর খলীফা মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস সাহেব।
মাগরিবের পর চতুর্থ অধিবেশনের শুরুতে হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর বড় ছেলে, ঢাকা কামরাঙ্গীর চর নূরিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফ সাহেব বয়ান করেন। এরপর দুই ঘণ্টা ১০মিনিট ব্যাপী আরবী ভাষায় বয়ান করেন মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. হাসান বিন মূসা সাহেব। বয়ানের তরজমা পেশ করেন যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহাদ্দিস ও ইজতিমার পরিচালক মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল-ফরিদী সাহেব। এশার পর প্রথম দিনের শেষ অধিবেশনে বয়ান পেশ করেন হযরত হারদুঈ রহ.-এর খলীফা মুফতী উবাইদুল্লাহ সাহেব দা. বা.।
দ্বিতীয়দিন
দ্বিতীয় দিন ফজরের পর অধিবেশনের শুরুতে মামূলাত সম্পর্কে বয়ান রাখেন আমীরে দাওয়াতুল হক, মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা মাহমূদুল হাসান সাহেব দা. বা.। নাস্তার বিরতির পর বয়ান রাখেন হযরত ওয়ালা হারদুয়ী রহ. এর বিশিষ্ট খলীফা জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জের শায়খুল হাদীস মাওলানা ইমদাদুল্লাহ সাহেব, মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের ভোলা জেলার আমীর মাওলানা আব্দুল খালেক সাহেব, ঢালকানগর মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল গাফফার সাহেব এবং হারদুয়ী রহ.-এর খলীফা প্রফেসর মাওলানা গিয়াসুদ্দীন সাহেব। তারপর কয়েকজন জেলা আমীর নিজ নিজ এলাকায় দাওয়াতুল হকের কার্যক্রমের কারগুজারী পেশ করেন। এরপর জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার মুহতামিম, মুহিউস সুন্নাহ হযরত হারদুঈ রহ.-এর খলীফা মাওলানা হিফযুর রহমান সাহেব সুন্নতে নববীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বয়ান শেষে ওযু, আযান ও সূরা কেরাতের সুন্নত মোতাবেক আমলী মশক করান। এরপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন, মুজাহিদে আযম হযরত সদর সাহেব রহ.-এর বড় সাহেবজাদা হাফেয মাওলানা উমর আহমদ সাহেব। অতঃপর জুমার পূর্বে আগত জনসমুদ্রের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ নছীহত পেশ করেন এবং জুমার নামায পড়ান অমীরে দাওয়াতুল হক মুহিউসসুন্নাহ মাওলানা মাহমূদুল হাসান সাহেব দা. বা.। জুমার পর গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন হযরত ওয়ালা হারদুয়ী রহ. এর বিশিষ্ট খলীফা মুফতী মনসুরুল হক সাহেব ও প্রিন্সিপ্যাল মিজানুর রহমান সাহেব।
সমাপনী বয়ানের পূর্বে ইজতেমার পরিচালক মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী সাহেব দাওয়াতুল হকের কাজের গুরুত্ব ও উপকারিতা বর্ণনা করত : দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ কাজের কিছু চাক্ষুস ফলাফলের কথা উল্লেখ করেন। সবশেষে দাওয়াতুল হকের ভবিষ্যত কার্যক্রম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা সম্বলিত আখেরী বয়ান পেশ করেন হযরত ওয়ালা হারদুয়ী রহ.-এর একান্ত প্রিয় খলীফা, তাঁর নিজ হস্তে লিখিত পত্রের মাধ্যমে আজীবন বাংলাদেশের ইমারতের দায়িত্বে নিয়োজিত এবং তাঁর নিজ জবানে ‘আমীরুল উমারা’ খেতাবে ভূষিত মুহিউস সুন্নাহ হযরত মাওলানা মাহমূদুল হাসান সাহেব।
ইজতিমার অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহাদ্দিস, ‘মাসিক আল-জামিয়া’-র সম্পাদক হযরত মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী সাহেব।
ইজতেমায় প্রদত্ত বয়ানে হযরতওয়ালা হারদুয়ী রহ.-এর খলীফা, মুরিদীন ও মজলিসে দাওয়াতুল হকের যিম্মাদারগণ সুন্নত যিন্দা করা এবং বেদআত দূর করে তদস্থলে সুন্নতের প্রচলন ঘটানোর জন্য দাওয়াতুল হকের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, আজ সুন্নতের অনুশীলন ও চর্চার কথা উঠলেই মানুষ বোঝে যে, এটা হযরতওয়ালা হারদুয়ী রহ.-এর কাজ, এটা দাওয়াতুল হকের কাজ। তিনি ছিলেন সুন্নত প্রতিষ্ঠার মূর্ত প্রতীক। ছোট-বড় সব সুন্নতের প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করে গেছেন। তাঁর ইন্তেকালের পর আরো অধিকহারে আমাদের সকল কর্মকাণ্ডে সুন্নতের অনুসরণ জরুরী। আমরা সুন্নত অনুযায়ী সকল কাজ পরিচালনা করলে এবং সুন্নত প্রতিষ্ঠার মেহনত চালিয়ে গেলেই তাঁর রূহ শান্তি পাবে। প্রত্যেকের বয়ানে সকলের মুরব্বী ও মুর্শিদ হযরতওয়ালা হারদুয়ী রহ.-এর দারাজত বুলন্দির জন্য যার যার অবস্থান থেকে দোয়া এবং তাঁর রেখে যাওয়া দাওয়াতুল হকের কাজে সর্বাত্মকভাবে আত্মনিয়োগ করতে উৎসাহিত করা হয় এবং আমীরুল উমারা হযরত মাওলানা মাহমূদুল হাসান সাহেবের নেতৃত্বে আজীবন দাওয়াতুল হকের মাধ্যমে এহইয়ায়ে সুন্নতের কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। দাওয়াতুল হকের কাজে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ও অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে ইজতিমা সফলভাবে সমাপ্ত হয়।
ইজতেমার শেষে আছরের পরে অত্যন্ত আবেগঘন পরিবেশে হৃদয় উজাড় করা আকুতি ঢেলে দিয়ে মুনাজাত পরিচালনা করেন- আমীরে দাওয়াতুল হক মুহিউস সুন্নাহ হযরত মাওলানা মাহমূদুল হাসান সাহেব দা. বা.। ইজতেমায় অংশ গ্রহণকারীদের পরিবেশ ভারী করা কান্নার রোল আর বুক ভাসানো অশ্রƒর স্রোতে তখন ভাবগম্ভীর এক পবিত্র দৃশ্যের অবতারণা হয়।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
১৭৩ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৩.০০)

১ টি মন্তব্য

  1. ইজতেমায় অংশ গ্রহণকারীদের পরিবেশ ভারী করা কান্নার রোল আর বুক ভাসানো অশ্রƒর স্রোতে তখন ভাবগম্ভীর এক পবিত্র দৃশ্যের অবতারণা হয়। ধন্যবাদ আপনাকে।