দাওয়াতুল হক ও উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব
লিখেছেন: ' মাসরুর হাসান' @ শনিবার, এপ্রিল ৯, ২০১১ (১:২৯ অপরাহ্ণ)
মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের ১৭ তম মারকাযী ইজতেমায় প্রদত্ত আখেরী বয়ান
মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান
اللهم صل علي محمد وعلي اله وسلم تسليما-استغفرالله ربي من كل ذنب واتوب اليه لاحول ولاقوة الا بالله العلي العظيم
সমাজের মানুষের দ্বীন-বিমুখতা অতি দুঃখজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এর জন্য প্রধানত দায়ী আমরা আলেমরা। দ্বীনী দাওয়াতের ক্ষেত্রে আমাদের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে দ্বীনের সহী পয়গাম মানুষের নিকট পৌঁছে না। আলেমরা আপন দায়িত্ব যথাযথ পালন করলে দেশ ও সমাজের বর্তমান দূরবস্থা আদৌ হবার কথা নয়। আমরা যখন সমাজে কোন মানুষকে গোনাহের কাজ করতে দেখি তখন শুধু ঐ গোনাহগারকেই এর জন্য দায়ী করি। অথচ কুরআন-হাদীসের দ্বারা বুঝা যায় যে, এর জন্য দায়ী আমরা আলেমরাও। এক হাদীসে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যার সারমর্ম হলোÑ “আমার উম্মত ঐ সময় আল্লাহর নাফরমানী ব্যাপকভাবে করতে থাকবে, যখন প্রকৃত আলেম তথা জাতির সংশোধনকারীরা তাদের মূল দায়িত্বে অবহেলা ও অলসতা করবে। উম্মতের বিপথগামী হওয়ার, তাদের চরিত্র নষ্ট হওয়ার জন্য প্রথমত দায়ী হলো আলেম সমাজ, দ্বিতীয়ত দায়ী রাষ্ট্র পরিচালকগণ।
আলেমদের দায়িত্ব হলো নবীর দায়িত্ব। আল্লাহ পাক নবুওয়াতের সিলসিলা বন্ধ করে আলেমদেরকে মহাসম্মানিত করেছেন। যদি নবুওয়াত চালু থাকতো তাহলে আলেমদের কেবল নবীর অনুসরণ-অনুকরণ করতে হতো ওয়ারিশে নবীর মর্যাদা পেত না। আগের উম্মতেরা এরকমই ছিলো। আল্লাহপাক এই আখেরী উম্মতকে মর্যাদাশীল বানিয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব কুরআনের মাধ্যমে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে। সকল আসমানী কিতাবসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কিতাব হলো আল কুরআন। তবে মনে রাখতে হবে যে, কুরআন শুধু আরবী হরফের নাম নয়। কুরআন হলো মানব জীবনের উভয় জাহানের সফলতা লাভের আল্লাহ প্রদত্ত গাইড।
নবুওয়াত খতম হওয়ার পর নবীর কাজের দায়িত্ব সাধারণভাবে আল্লাহ পাক পুরো উম্মতের উপর অর্পণ করেছেন, যার ধারাবাহিকতা কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে। এই দায়িত্বের কারণেই পূর্বের সব উম্মত অপেক্ষা এই উম্মত শ্রেষ্ঠ। বিশেষ করে উম্মতের আলেমগণ সেনাবাহিনী কমান্ডারের ভূমিকা পালন করবে এবং বাকিরা থাকবে সাধারণ সৈনিক হিসেবে। সাধারণ সৈনিক যত ভাল কাজই করুক না কেন জেনারেলের দিক-নির্দেশনা না মানলে কোন দিনও তারা যুদ্ধের ময়দানে বিজয় অর্জন করতে পারবে না। সৈনিক জীবনের রীতি-নীতি সবচেয়ে কঠিন। কোন সৈনিক যদি উল্টা-পাল্টা চলে তাহলে তার দায়-দায়িত্ব তাদের কমান্ডারের উপর বর্তায়। সে তার সৈনিককে সঠিক দিক-নিদের্শনা দিবে। কোনো সৈনিক যদি দলপতির হুকুম না মানে তাহলে উক্ত সৈনিকের চরম মূল্য দিতে হয়। উম্মতের আলেম সমাজ সেনাবাহিনীর কমান্ডারের মতো তাদের সাধারণ সৈনিকদেরকে অর্থাৎ জনসাধারণকে সঠিক পথের নির্দেশনা দিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিতে সচেষ্ট থাকবে। সাধারণ মানুষ হয়তো আলেমদের কথা নাও মানতে পারে, তাই বলে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। মুহাব্বত-ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যরে মনোভাব নিয়ে তাদেরকে দ্বীনদার বানানোর জন্য মেহনত করতে হবে। খালেছ দিলে মেহনত করলে অবশ্যই এর সুফল পাওয়া যাবে। আলেমগণের মূল দায়িত্বই এই মেহনত। তারা যদি মূল দায়িত্বে অবহেলা করে তাহলে জাতি বিপথগামী হতে বাধ্য। মানুষ আলেমদেরকে গালি দিতে পারে, তাদের থেকে দূরে সরে থাকতে পারে, তাই বলে আলেমদেরকে দূরে সরে পড়লে চলবে না। তারা সমস্ত মানুষকে নিজের সন্তান মনে করে তাদের সংশোধন করবে, সঠিক পথের দিশা দিবে। আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন-
كنتم خير امة اخرجت للنلس تأمرون بالمعرف وتنهون عن المنكر وتؤمنون بالله
মূলত এখানে আলেমদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, হে আলেম সমাজ! উম্মতের মাঝে তোমরাই হলে শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানুষের কল্যাণের জন্যই তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমাদের দায়িত্ব হলো তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে দূরে থাকতে বলবে।
মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, পুলিশক্যাম্প, সেনাক্যাম্প, বাসষ্টান্ড মোটকথা সর্বস্থানে সর্ব মহলে গিয়ে মানুষকে ঈমান-আমল শেখানো ও ট্রেনিং দেয়া আলেমদের একান্ত দায়িত্ব। আর এই ঈমান-আমল স্থায়ী রাখার জন্য প্রয়োজন হলো সুন্নতের তালীম। সুন্নত না শিখলে কোন আমলই স্থায়ী হবে না। যারা নবীর প্রতিনিধি, তারা মানুষকে কুরআন শিক্ষা দিবে, দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিবে; এগুলো করার ক্ষেত্রে যদি সে সুন্নতের রঙে রঙীন হতে পারে তাহলেই তার মেহনতের সুফল প্রকাশ পাবে। আলেমগণ যদি তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব আদায় না করার কারণে সমাজের মানুষ গোমরাহ হয়ে পড়ে তাহলে তাদের সঙ্গে এক সময় আলেমরাও গোমরাহীর শিকার হবে। আলেমগণ যদি সাধারণ মানুষের দিল-দেমাগের পরিশুদ্ধির দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে সঠিক পথে রাখতে পারে তাহলে তারাও সঠিক পথের উপর অটল থাকতে পারবে। সারা বিশ্বে আলেম সমাজ যদি বর্তমানে তাদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করতো তাহলে সব ধর্মের মানুষ ইসলামের ছায়ার নিচে আশ্রয় নিত। ইসলাম গ্রহণ না করলেও ইসলামের অধীনে থাকাকে উত্তম মনে করতো। হযরত সাহাবায়ে কেরামের যুগ হতে নিয়ে আনুমানিক ছয়শত বৎসর পর্যন্ত ইসলামের অনুশাসন প্রবল ছিল বিধায় সর্বক্ষেত্রে মুসলমানরা সারা বিশ্বের নেতৃত্ব দিয়েছে। এখন নেতৃত্বের কথা বলা হলেই মানুষ রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেয়া বোঝে। বিষয়টা আসলে এমন নয়। যারা এ সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারা জীবনের সর্ব বিষয়েই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে ক্রমশ আমরা ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছি। কেউ কেউ এর কারণ মনে করছে মুসলমানদের অর্থনৈতিক দুর্বলতা। যারা মনে করে যে, টাকা পয়সা অস্ত্র-শস্ত্র না থাকাটাই আমাদের ধ্বংসের কারণ তাদের বুদ্ধি এখনো শৈশব পেরোয়নি। বস্তুত এর আসল কারণ হলো, কুরআন-হাদীসের ইত্তেবা ও তালিম-তরবিয়ত ছেড়ে দেয়া। কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর দ্বীন ও রাসূলের আদর্শ হেফাযত করার পূর্ব সিদ্ধান্ত যদি আল্লাহর না থাকতো তাহলে বর্তমানে আমাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া সম্ভব হতো না। ইসলাম ও নবীর আদর্শকে দুনিয়ার বুকে কিয়ামত পর্যন্ত চালু রাখার জন্য আল্লাহপাক তাঁর হাবীবের উম্মতের মধ্য হতে ক্ষুদ্র একটি জামাত গঠন করে দিয়েছেন। নিম্নের আয়াতে তাদেরকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে-
فلولا نفر من كل فرقة منهم طائفة ليتفقهوا في الدين ولينذروا قومهم اذارجعوا اليهم لعلهم يحذرون
অর্থ : তাই তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হলো না, যাতে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং সতর্ক করে স্বজাতিকে, যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, যেন তারা বাঁচতে পারে।
হাদীসেও এ জামাত সম্পর্কে বলা হয়েছে-
لاتزال طائفة من امتي الخ
অর্থাৎ একটি দল সর্বদা কর্মতৎপর থাকবে যারা মানুষকে দ্বীনের তালিম-তরবিয়ত প্রদান করবে। এ দলটি কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে, তাদের পদস্খলন হবে না। এই ছোট্ট দলটি বর্তমানে কারা তা বলে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। দৃষ্টি মেললেই দেখা যায় যে, ছোট্ট এ দলটি পৃথিবীর আনাচে কানাচে মাথা নাড়ছে। কোথাও সিজদায় পড়ে চোখের পানি দিয়ে বুক ভাসাচ্ছে। কোথাও আল্লাহ আল্লাহ যিকির, দোয়া ও মাগফিরাত কামনা করছে। এই ছোট্ট জামাতের বিদ্যমানতার কারণেই আল্লাহপাক সমগ্র মানুষকে এই যমিনের উপর টিকিয়ে রেখেছেন।এই জামাতের কাছেই কুরআন-হাদীসের সহীহ ইলম রয়েছে। অনেকের মতে শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী রহ. এর ফিকিরের ধারক-বাহকগণই হলো এই জামাত। যারা দেওবন্দ মাদরাসা নামক জ্ঞানের খনি থেকে দ্বীনী জ্ঞানের আলো আহরণ করে এশিয়াসহ সমস্ত পৃথিবীতে বিতরণ করেছে, আলো ছড়িয়েছে। তালীম, তাযকিয়া ও দাওয়াত এই তিনটা কাজই ছিল সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাজ। এশিয়ায় এই তিন কাজ শাহ ওয়ালী উল্লাহ রহ. থেকে প্রকাশ পেয়ে ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী রহ. এর মাধ্যমে প্রচারিত হয়। তারপর তা হযরত কাসেম নানুতবী ও হযরত রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহ.-এর মাধ্যমে বিশ্বময় বিস্তার লাভ করেছে। এরপর হযরত হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. ও হাকীমুল-উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত থানবী রহ. এর সমন্বিত চিন্তা ও ফিকির অবলম্বন করে হযরত ইলিয়াস রহ. দাওয়াতের হাওয়া চালু করেন। তালীম, তাজকিয়া ও দাওয়াতের যে কাজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে গেছেন সেই কাজই করে যাচ্ছে মজলিসে দাওয়াতুল হক ও তাবলীগ জামাত। দাওয়াতের কাজ আল্লাহপাক হযরত ইলিয়াস রহ. এর মাধ্যমে চালু করালেন। আর দাওয়াতের কাজ সম্ভব নয় ইসলাহ তথা আত্মশুদ্ধি ছাড়া, আল্লাহপাক এই ইসলাহের কাজ হযরত থানবী রহ-এর মাধ্যমে ব্যাপক আকারে করিয়েছেন।
হযরত মাদানী রহ. এর নিকট এক লোক বায়আত হওয়ার জন্য আসলে মাদানী রহ. বললেন, তুমি থানবী রহ.-এর নিকট যাও এবং বায়আত হও। ঐ ব্যক্তি নির্দেশ মানতে ইতস্তত করছে দেখে হযরত মাদানী রহ. ঐ লোককে সঙ্গে নিয়ে থানবী রহ.-এর দরবারে উপস্থিত হলেন। থানবী রহ. মাদানী রহ.-এর কথা শুনে বললেন, আপনিই তাকে বায়আত করুন আর আমি তার ইসলাহের দায়িত্বভার নিলাম। হযরত থানবী রহ. কে জামেউল মুজাদ্দিদীন বলা হয়। জামেউল মুজাদ্দিদীন নামে এখন বাজারে কিতাব এসে গেছে।
পয়সা হলেই যেমন সবকিছুই করা যায় তেমনি ইলম হলেই দাওয়াত, তালীম, তাযকিয়ার কাজ করা যায়। এই উপমহাদেশে ইলমের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন হযরত কাসেম নানুতবী রহ., আর দাওয়াতের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন হযরত ইলিয়াছ রহ.। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহপাক কালিমার দাওয়াত পৃথিবীর আনাচে-কানাচে পৌঁছে দিয়েছেন। মোটকথা, ইলম, ইসলাহ ও দাওয়াতের মূল ভিত্তি হলো দেওবন্দ। এই পৃথিবীতে উম্মতের এসলাহমূলক কাজ বান্দাদের দ্বারা বিভিন্নভাবে আল্লাহ পাক করাচ্ছেন তার মধ্যে মজলিসে দাওয়াতুল হকের কাজ হলো এক নম্বরে। আমি দাওয়াতুল হকের আমীর বলে একথা বলছি না বলেছি এজন্য যে, দাওয়াতুল হকের সমস্ত কাজই আলেম-উলামাদের কাজ। আলেম ছাড়া একাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়। অতএব আমি মনে করি আল্লাহ পাক তাঁর দ্বীন ও নবীর সুন্নতের কাজকে দুনিয়ার বুকে চালু রাখার জন্য ছোট এ জামাতকে নির্বাচিত করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে আসা আলেম সমাজকে বলতে চাই যে, আল্লাহপাক আপনাদের উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তার দুটি দিক আছেÑ (১) সৎ কাজের আদেশ- (২) অসৎ কাজের নিষেধ।
সৎকাজের আদেশ দেয়া সহজ। তার কারণ হলো সৎকাজের আহবানকারীকে সর্বশ্রেণীর মানুষ পছন্দ করে, শ্রদ্ধা করে। আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি যে,সাধারণ মানুষের নিকট যে শ্রদ্ধা আমি পাই আহলে ইলমদের কাছে ঠিক সেই পরিমাণ পাই না। তার কারণ হলো, সাধারণ মানুষ মনে করে আলেমদের সান্নিধ্য এবং তাদের সহযোগিতা ছাড়া নাজাত পাওয়ার কোনো পথ নেই। তাই তারা আলেমদেরকে কাছে পেলে হাত-পায়ে চুমু খায়, হাদিয়া তোহফা প্রদান করে। ধর্মপ্রাণ মানুষের সব সময়ের চিন্তা হলো- আখেরাতের মুক্তি কেমন করে পাওয়া যাবে। এই পেরেশানির কারণেই কোন সময় সে হাক্কানী পীরের দরবারে যায়, কোন সময় ভণ্ড পীরের দরবারে যায়। কোনো সময় হয়তো আল্লাহর শত্র“দের সঙ্গ গ্রহণ করে ফেলে। অথচ সে জানেনা যে, মুক্তির আসল পথ থেকে সে বিচ্যুত হয়েছে।
সমাজে ভালো কথার দাম আছে। শুধু মুসলমানরা নয় অমুসলিমরাও ভাল কথাকে, ভাল কথার প্রবক্তাকে শ্রদ্ধা-ভক্তি করে। এজন্য মজলিসে দাওয়াতুল হক ভালো আচরণ ও কথার মাধ্যমে সুন্নতে নববীকে সমাজের মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছে। আপনি যদি মানুষকে সরাসরি বলেন, সুদ-ঘুষ খাওয়া যাবে না, মানুষের জমি দখল করা যাবে না, মানুষের মান-সম্মানের উপর আঘাত করা যাবে না, হিংসা, গীবত, বদগুমানী করা যাবে না, তখন দেখবেন তারা আপনাকে শ্রদ্ধা তো করবেই না, উল্টো ক্ষুব্ধ হবে।
আল্লাহর সাথে শত্র“তা পোষণকারী দল এদেশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় সক্রীয় আছে। মুশরিকরা মাটি দ্বারা তৈরিকৃত মূর্তির পূজা করে। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ দেশের মুসলমানরাও মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারীদের নামে তিনটি মূর্তি বানিয়ে পূজা করে। মুসলমানের এসব ভুল ও শরীয়তবহির্ভূত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আলেমগণ কিছু বললেই তাদেরকে কট্টরপন্থী, মৌলবাদী, পশ্চাদপদ, কূপমণ্ডক ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। মিডিয়ার অপব্যবহারের মাধ্যমে সর্ব সাধারণের কাছেও আলেমদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করা হয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়াবী কাজে কোথাও গেলে কাফের মুশরিকরা তাকে অভ্যর্থনা জানাতো, কিন্তু যখন তাদেরকে বলতেন, মূর্তির পূজা করা যাবে না, তাওহীদের বিশ্বাস বুকে নিয়ে চলতে হবে, অন্যথায় কিয়ামত পর্যন্ত তোমাদের লাঞ্ছিত হতে হবে, তখন তারা নবীর কথা না শুনে তাঁর চরম শত্র“তে পরিণত হয়ে যেত।
ভায়েরা আমার! মুসলমানদের স্বীয় ইজ্জত-সম্মান সব শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তা কারো বুঝে আসছে না। আসলে এই বুঝতে না পারটাই আল্লাহর পক্ষ হতে এক ধরনের আযাব। অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো জ্ঞান ও বুদ্ধি। এই বুদ্ধি-বিবেক যদি অন্যায়কে ন্যায় ভাবে, আর ন্যায়কে অন্যায়কে ভাবে, দুনিয়ার স্বার্থে অন্যায়কে বরণ করে নেয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, তার বুদ্ধি-বিবেক বিকারগ্রস্ত হয়েছে। আল্লাহপাক তার জন্য গোপন আযাব পাঠিয়েছেন। দাড়িহীন ব্যক্তিকে যদি বলি, দাড়ি রাখেন, আল্লাহর কাজে বের হয়ে যান, আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে গুলি খেয়ে মারা গেলে হযরত উমরের সঙ্গে জান্নাতে থাকা যাবে, তখন সে উত্তর দেয় ইসলাম তো দাড়ির ভেতর প্রবেশ করে নাই।
আল্লাহ সবকিছু করেন এই বিশ্বাস আমাদের পাকাপোক্ত হতে হবে। তিনি যাকে ইচ্ছা করেন দেশের রাজা বানান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন অনেক প্রেসিডেন্টের কথা জানা যায় যারা আগে কখনো কল্পনা করতে পারেনি যে, দেশের প্রেসিডেন্ট হবে। আবার যাদের হওয়ার কথা তারা কখনো হতে পারেনি। বস্তুত এসব কিছুই আল্লাহপাকের ইচ্ছাধীন। তিনি যাকে ইচ্ছা ধ্বংস করে দেন, যাকে ইচ্ছা বাঁচিয়ে রাখেন। আল্লাহ তা’আলা নমরুদের মতো বিরাট প্রতাপশালী বাদশাকে সামান্য একটি মশার দ্বারাই ধ্বংস করে দিলেন। আল্লাহ মারতে চাইলে মশারও প্রয়োজন হয় না। কিন্তু তিনি পৃথিবীর সকল বাদশাদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য দেখালেন যে,তোমাদের ভারি অস্ত্র-শস্ত্র কোন কাজে লাগবে না, আমি আল্লাহ ইচ্ছা করলে সামান্য একটি মশার দ্বারাই তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিতে পারি।
ভায়েরা আমার! ইতিহাস পড়ে দেখুন, পৃথিবীর বড় বড় শক্তিমান জাতিকে আল্লাহ তায়ালা কীভাবে ধ্বংস করেছিলেন। আল্লাহর যমিনে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে আজ পর্যন্ত কোন রাজা-বাদশা টিকে থাকতে পারেনি, পারবেও না। আজ বা কাল হোক ধ্বংস তাদের জন্য অনিবার্য। হে দুনিয়ার রাজা-বাদশারা! ডানে-বামের স্বার্থ ছাড়া একমাত্র কালিমা তাইয়্যেবার স্বার্থ নিয়ে তোমরা সামনে অগ্রসর হও। তাহলেই দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে তোমাদের দেশ পরিচালনা ও নেতৃত্বের মেহনত কাজে লাগবে। ছেলে যদি বাবাকে বাবা বলে স্বীকার না করে, তার কথা না মানে, তাহলে ঐ ছেলে সমাজে কুলাঙ্গার ছেলে হিসেবে চিহ্নিত হয়। তদ্রুপ যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে বাদ দিয়ে দুনিয়া-আখেরাতের সফলতা অর্জন করতে চায় সেও ঐ কুলাঙ্গার ছেলের মতো।
আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন লোক এই মুহূর্তে এখানে উপবিষ্ট আছেন। তিনি এ দেশের নয় বছরের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যদি দেশের আলেম সমাজ স্বীয় দায়িত্ব ঠিকমতো আদায় করতো তাহলে দেশের জনসাধারণ থেকে নিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান পর্যন্ত তাদের গোলাম হয়ে যেত, ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করার পদক্ষেপ নিতে সহাস পেত না। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট সাহেবের এখানে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার কারণ কী? আমি তো কোন দিনও তাঁর কাছে যাই না। অনেক মানুষ মনে করে যে, আমি সরকারী দলকে সমর্থন করি। আসলে যারা এমনটি মনে করে তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ইনি আমার কাছে আসেন। আমি তাকে দিক নির্দেশনা দেই যে, এটা করতে হবে, এটা করা যাবে না। তিনি আমার কথা মানেন। তিনি একদিন আমাকে আক্ষেপের সাথে বললেন, হুযুর! আমি যদি আপনার মতো আর দশজন আলেম পেতাম তাহলে এ দেশকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দিতাম।
আলোচনার শুরুতেই বলেছি যে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মত ধ্বংস হবে শুধু আলেমদের কারণেই। আলেমরা তাদের মূল দায়িত্বের ক্ষেত্রে উদাসীন হলে দেশে ইসলাম কায়েম হবে কীভাবে! মজলিসে দাওয়াতুল হকের কাজ হলো মানুষকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ভালো পথে আনা এবং অন্যান্য ভালো কাজকারীদের সহযোগিতা করা। আল্লামা শারানী বলেন, যদি কেউ ভাল কাজ করে আর সেটা দেখার পর তোমার অন্তরে খুশি লাগে, তাহলে বুঝা যাবে যে, আল্লাহ তোমার পক্ষে আছেন। আর যদি হিংসা লাগে, কিংবা নিজেই সে কাজে নেতৃত্ব দিতে মনে চায়, তাহলে বুঝতে হবে আল্লাহ তোমার পক্ষে নেই। ভালো কাজকারীকে ভালোবাসা উচিত। চাই সে মুচি, ধোপা, কামার, কুমার, কৃষক যাই হোক না কেন। হতে পারে আল্লাহপাক তার কাজকে পছন্দ করে তোমার আগেই তাকে জান্নাতের টিকিট দিয়ে দিবেন।
ভাল কাজ কী? ভালো কাজ হলো, দ্বীনদারি। আর দ্বীনদারি মূল হলো গোনাহ না করা। যতই আমল ইবাদত করা হোক গোনাহ বর্জন না করলে সে আমলের সুফল পাওয়া যায় না। এক ড্রাম দুধের মধ্যে মাত্র এক ফোটা প্রশ্রাব পড়লেই তা মূল্যহীণ হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় দামি দামি টাইলস লাগিয়ে সুন্দর সুন্দর মসজিদ বানানো হচ্ছে কিন্তু সে মসজিদ যখন জুতার বালু ও আবর্জনায় অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায় তখন ঐ দামি দামি টাইলসের কী দাম থাকলো! এই সূক্ষ্ম বিষয়গুলোকে বোঝা আলেম ছাড়া সম্ভব নয়। মসজিদের বিরাট বিরাট মিনার হচ্ছে কিন্তু মসজিদে রাখা পবিত্র কুরআন শরীফ ময়লা আবর্জনায় অপবিত্র হচ্ছে। গেলাফ ছাড়া কুরআন ময়লাযুক্ত হয়ে ছিড়ে ছিড়ে পড়ছে। এগুলোকে দেখার মত কেউ নেই। এ সমস্ত বিষয়ে জুমার বয়ানে বললে মসজিদ কমিটির লোকেরা বলে, এই ধরনের হালকা বিষয় নিয়ে কি জুমার বয়ান হয়? মনে রাখবেন, কুরআনের একটি হরফের দাম কোটি কোটি কারুকার্য খচিত মিনারের চেয়েও বেশি। এসব তো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বুঝবে না, বুঝবে শুধু সূক্ষ্ম চিন্তার অধিকারী আলেমরা। ভায়েরা আমার! অজ্ঞতা-মূর্খতার মহাপ্লাবনের মধ্যে রয়েছি আমরা! লাইভ কনসার্টের জন্য পয়ত্রিশ কোটি টাকা বাজেট করা হয়। আবার আয়োজকদের পক্ষ থেকে গর্ব করা হয় যে, আমরাই সবার উপরে। রাষ্ট্রের পরিচালকরাও সেই অশ্লিল নর্তন-কুর্দন দেখতে স্বশরীরে হাযির হয়। অতি দুঃখের বিষয় যে, যখন সারা বিশ্বে কুরআন প্রতিযোগিতায় এদেশের একজন হাফেযে কুরআন এক নম্বর স্থান অধিকার করে দেশে আসে, তখন তাঁকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য কাউকেই পাওয়া যায় না। রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগের কথা তো ভাবাই যায় না। এই হলো কুরআনের প্রতি বর্তমানের মুসলমানের মুহাব্বত-ভালবাসা। আসলে মানুষ যখন সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে তখন অশোভনীয়-চরিত্রহীন কাজ করতে মজা পায়।
মুসলমান হয়েও কুরআন হাদীসের তালীম ও তাবলীগের জন্য সরকারী সমান্য বাজেট নেই। মুসলমান হয়ে মুসলমানরা আল্লাহর বিরুদ্ধে, নবীর বিরুদ্ধে কথা বলে, শরীয়তবিরোধী আইন করে। হে দেশের সরকার ও প্রশাসন! শুনে রাখো, আমরা তোমাদের কাছে কোন কিছুই চাই না। আমরা চাই তোমরা কুরআন-হাদীসের বিরুদ্ধে যেও না। আমাদের শিরায় শিরায় ঈমানের রক্ত প্রবাহমান। আমরা তোমাদের কাছে অর্থ ও পদমর্যাদা চাই না। নব্বইভাগ মুসলিম দেশের জনগণকে আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরিকায় চলার পথে সামান্যতম বাধা সৃষ্টি করো না। এটাই আমাদের চাওয়া।
হে উলামায়ে কেরাম! পৃথিবীর কোন শক্তিই আপনাদের ক্ষতি করতে পারবে না যদি আপনারা প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ ও তার রাসূলকে সঙ্গে রাখেন। জেলে ভরে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়েও কিছুই করতে পারবে না যদি আল্লাহ সহায়ক হয়।
মজলিসে দাওয়াতুল হকের নির্দেশনা হলো, কোনো পাপীকেই ঘৃণা করা যাবে না। পায়খানা ও ময়লায় আচ্ছাদিত শিশু বাচ্চাকে মা যেমন করে কোলে তুলে নিয়ে পরিষ্কার করে, এরপর আদর করে, ঠিক এভাবে সব মানুষকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ঘৃণা না করে, মুহাব্বত ও ভালবাসা দিয়ে ইসলামের বিছানায় এনে শুইয়ে দিতে হবে। আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদেরকে বুকে নিয়ে, মুহাব্বত ভালোবাসা দিয়ে মুসলমান করেছিলেন। আমরা যদি নবীকে ও নবীর সুন্নতকে ভালবাসতে চাই, তাহলে আমাদেরকে সেই রঙে রঙীন হতে হবে। মজলিসে দাওয়াতুল হকের একটা প্রধান কাজ হলো, দেশের নানা প্রান্তে বেশি করে মক্তব হেফয খানা তৈরি করা। মানুষের দিলে যে হিংসা-বিদ্বেষ জমা হয় তা দূর করার একমাত্র উপায় হলো কুরআন তেলাওয়াত। আর কুরআন শিখতে হলে তার কারখানা তৈরি করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একজন প্রশ্ন করেছিলো, দিলের ময়লা পরিষ্কার করার পদ্ধতি কী? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উত্তর দিয়েছিলেন যে, দিলের যাবতীয় ময়লা পরিষ্কার করতে হলে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। সাবান যেমন শরীর ও কাপড়ের ময়লা দূর করে, ঠিক তেমনি কুরআন তেলাওয়াত দিলের ময়লা দূর কর। দিল যখন ময়লামুক্ত হবে তখন সেই দিলে আমলের বৃক্ষ গজাবে, তারপর সুন্নতের ফল ধরবে।
মাদরাসা-মসজিদ বানাতে গিয়ে ভয় করলে চলবে না। এটা ভাবা যাবে না যে, বিদেশীদের চাপে আমাদের মাদরাসাসমূহ বন্ধ হয়ে যায় কী না। জেনে রাখুন আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন -
انانحن نزلنا الذكرواناله لحافظون
অর্থাৎ আমি এই কুরআন অবতীর্ণ করেছি; এর হেফাযতের দায়িত্ব আমি নিজেই নিয়ে নিলাম। এই আয়াতের মর্ম যদি সরকার বুঝতো তাহলে তারা কুরআনের বিরুদ্ধে কিছু করার চিন্তা করতো না। কুরআনের বিরুদ্ধাচরণ করে কেউ শান্তিতে থাকতে পারে নি। যারাই কুরানের দিকে শত্র“তার হাত বাড়িয়েছে আল্লাহ পাক তাদের হাতকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছেন। কাবা শরীফ ধ্বংস করতে এসে আবরাহা বাহিনী যখন আব্দুল মুত্তালিবের উটগুলোকে ধরে নিয়ে গেল। তখন আব্দুল মুত্তালিব আবরাহার বাদশার কাছে উট আনতে গেলো। বাদশা বললো, তোমাকে তো খুব জ্ঞানী মনে হয়েছিল, এখন দেখি তুমি মারাত্মক বোকা। আমি এসেছি তোমাদের প্রধান ঘর ধ্বংস করতে। তুমি সে বিষয়ে কিছু না বলে উটের জন্য তদবীর করছো? আব্দুল মুত্তালিব উত্তর দিলেন, আসলেই আমি বোকা। তবে আমি আমার মালিকানাধীন বস্তু রক্ষা করতে এসেছি। এই উটগুলোর মালিক আমি। তোমরা যেটাকে ধ্বংস করতে এসেছ সেটার মালিক আল্লাহ। অতএব আল্লাহই তাঁর মালিকানাধীন বস্তু রক্ষা করবেন।
অতঃপর আবরাহা বাহিনী যখন কা’বা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সামনে অগ্রসর হতে লাগলো তখন হঠাৎ দেখা গেল, এক ঝাক পাখি এসে ছোট্ট ছোট্ট পাথর মেরে মেরে দাম্ভিক বাহিনীকে চিরতরে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিল। আল্লাহ তাঁর ঘরকে নিজ কুদরতে রক্ষা করলেন। কুরআনের উপর যারা হাত দিবে আল্লাহ পাক তাদেরকেও এ বাহিনীর ন্যায় ধ্বংস করে কুরআনের হেফাযত করবেন। দাওয়াতুল হকের সকল কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলছি যে, আপনাদের কাজে যেন এখলাছ থাকে। যিকরুল্লাহ, কাছরাতে তেলাওয়াত ও এস্তেগফারে অভ্যস্ত হ’তে হবে। প্রতিটি ঘরে ঘরে পাবন্দির সাথে সুন্নতের তালীম, ‘এক মিনিটের মাদরাসা’ কিতাবের তালীম করতে হবে। আপনারা লক্ষ করে দেখুন যে, মাদরাসার উপর আঘাতের কথা ওঠার পর থেকে এ দেশে মাদরাসা প্রচুর হারে বৃদ্ধি পাচেছ। আল্লাহ পাক বলেন -
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ۚ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ ۚ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا
অর্থ : আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।
বর্তমান সময়ে আলেম উলামা ও ছাত্রদের খুবই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। চার দিকে শুধু গুনাহের আসবাব। কাফের-মুশরিকদের খেলাধুলা অনুষ্ঠানে যোগ দান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। খেলাধুলা দেখা বা করা শয়তানের কাজ। কোনো মুসলমান শয়তানের কাজে লিপ্ত হতে পারে না। মোবাইল হাতে নিয়ে মানুষে সর্বপথম ‘হ্যালো’ বলে। ‘হ্যালো’ শব্দটা কাফেরদের বানানো। তারা এ শব্দটা মুসলমানদের মাঝে দু কারণে ছড়াচ্ছে। (১) সুন্নতকে মিটাতে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাক্ষাতের মুহূর্তে সর্বপ্রথম কথা হবে সালাম। এখন যেহেতু মোবাইলের মাধ্যমে মানুষ একে অপরের সঙ্গে প্রচুর কথা বলে, তাই সর্বপ্রথম সালাম দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সালামের উত্তর পাওয়া না যাবে, ততক্ষণ অন্য কথা বলা বন্ধ রাখতে হবে। কথা বলার শুরুতে যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম দিতে বলেছেন, তাই ইসলামের শত্র“রা এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতকে মিটিয়ে দেয়ার জন্য সালামের পরিবর্তে ‘হ্যালো’ শব্দ আবিস্কার করেছে। (২) ‘হ্যালো’ শব্দের অর্থ লোহা দ্বারা পেটানো। যে সমস্ত লোকেরা ইহুদী-খৃষ্টানের চালচলন, কৃষ্টি-কালচার ভালবেসেছে এবং গ্রহণ করেছে, তাদেরকে তো ইহুদী খৃষ্টানরা বিভিন্ন কৌশলে লোহার দ্বারা পেটাচ্ছে। অর্থাৎ তাদেরকে জান্নাতের রাস্তা থেকে জাহান্নামের পথে নিয়ে যাচ্ছ। এখন তারা চাচ্ছে আলেম সমাজের ভিতরেও এই বদ আমল প্রবেশ করিয়ে দিতে। হযরত হারদুঈ রহ. বলতেন, দাওয়াতুল হকের কাজ হলো ব্যক্তি ও সমাজ জীবন হতে গোনাহের কাজ মিটিয়ে দেয়া, মুনকারাত দূর করা। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে এই কাজে সম্পৃক্ত করুন!
মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, পুলিশক্যাম্প, সেনাক্যাম্প, বাসষ্টান্ড মোটকথা সর্বস্থানে সর্ব মহলে গিয়ে মানুষকে ঈমান-আমল শেখানো ও ট্রেনিং দেয়া আলেমদের একান্ত দায়িত্ব।
জাযাকাল্লাহ।