মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.) ও সম্রাট আকবরের দ্বীন-ই-ইলাহীর পতন
লিখেছেন: ' Mohammad Fourkan Hamid' @ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২২, ২০১২ (২:১২ পূর্বাহ্ণ)
লেখাটি এখান থেকে নেয়া হয়েছে…
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/03/16/136299
রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই উম্মতের জন্য প্রতি শতাব্দীর শুরুতে এমন একজন ব্যক্তিকে পাঠিয়েছেন, যিনি এই শতাব্দীর জন্য দ্বীনের সংস্কারমূলক কাজ করবেন।’ হিজরি দ্বিতীয় সহস্রাব্দের শুরুতে জন্মগ্রহণ করে দ্বীনের সংস্কারমূলক কাজ করায় তাকে ‘মুজাদ্দিদে আলফেসানী’ বলা হয়।
মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.) মাত্র ১৭ বছর বয়সে হিফজুল কোরআনসহ হাদিস, তাফসির, ফিকাহ, দর্শন, তর্কশাস্ত্র, কালামশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে পূর্ণ ব্যুত্পত্তি অর্জন করেন। বাহ্যিক জ্ঞানের পাশাপাশি আধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেন তিনি। চিশতিয়া, কাদেরিয়া ও নকশেবন্দিয়া—এই তিন তরিকার প্রতিটিতেই কঠোর সাধনা করে যথাক্রমে শাহ সিকান্দার (রহ.), শাহ কামাল (রহ.) এবং খাজা বাকি বিল্লাহর (রহ.) কাছ থেকে তিনি খিলাফত লাভ করেন।
আধ্যাত্মিক উত্কর্ষ সাধনের পর মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.) সম্রাট আকবরের দ্বীনে ইলাহির কবল থেকে মুক্ত করে কীভাবে উপমহাদেশে আবার দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা যায় সে জন্য কর্মপন্থা নির্ধারণে তার সম্মুখে ৩টি মাত্র পথ খোলা ছিল। ১. দেশ ও রাষ্ট্রকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিয়ে নীরব-নির্জন কোনো স্থানে অবস্থান নিয়ে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগিতে সময় কাটিয়ে দেয়া। ২. মুসলিম নামধারী শাসকদের সংশোধনের আশা একেবারে বাদ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় জিহাদ ঘোষণা করা এবং এদের ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করে খাঁটি ইসলামপ্রেমিক লোকদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যবস্থা করা। ৩. রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী মন্ত্রী-আমলা এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের বিশ্বাস ও আস্থায় নিয়ে আসা। যেন তারাই সম্রাটকে সহিহ ইসলামের পথে নিয়ে আসার জন্য উত্সাহিত করেন।
মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.) এই তিন পন্থার কোনটি বেছে নেবেন? প্রথম পথটি তিনি বেছে নিতে সমুচিত্ মনে করলেন না। কারণ তিনি আল্লাহ প্রদত্ত যে বিশাল আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন, তা নীরবে-নিভৃতে কাটিয়ে দেয়ার জন্যে নয়। তাঁর মাধ্যমে বড় কোনো কাজ সম্পাদন করাবেন, এ জন্যই এই বিশাল নিয়ামত তাঁকে দান করা হয়েছে। দ্বিতীয় পন্থাটি যেহেতু সংঘাতপূর্ণ, তদানীন্তন সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে অত্যন্ত ঝুঁকির্পূণ, আর এজন্য যে ব্যাপক প্রস্তুতি প্রয়োজন তাও তাঁর ছিল না, তাই তিনি দ্বিতীয় পথটি পরিহার করলেন। এ পরিস্থিতিতে মুজাদ্দিদে আলফেসানীর (রহ.) সামনে তৃতীয় পথটিই একমাত্র খোলা থাকে। তিনি নিজের বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে তার সংস্কার কার্যক্রমের জন্য রাষ্ট্রের প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করলেন। আর এ লক্ষ্যেই তিনি তাদের সম্বোধন করে চিঠিপত্র আদান-প্রদান শুরু করলেন। দশম শতাব্দীতে হিন্দুস্তানের শক্তিশালী মোগল সাম্রাজ্যে পরিবর্তনের যে জোয়ার এনেছিল এতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মুখ্য ভূমিকা ছিল হজরতের এসব মাকতুবাত বা পত্রাবলি। একাধারে তিনি পত্র লিখেছেন সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রধানমন্ত্রী নবাব সৈয়দ ফরিদ, রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল, শাহি মোহর নিয়ন্ত্রক ও পরে গুজরাটের সুবেদার খানে আজম মির্জা কোকা, খানে জাহান লুধি, লালাবেগ জাহাঙ্গিরী, সদরে জাহান পাহানি প্রমুখ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে।
এসব চিঠিপত্রের ভাষা ছিল আবেগঝরা ও হৃদয়নিংড়ানো। দ্বীনের প্রতি দরদ, এখলাস ও নিষ্ঠার বহিঃপ্রকাশ ছিল প্রতিটি ছত্রে। ভাষার মান ছিল অত্যন্ত জোরালো ও শক্তিশালী। এসব চিঠিপত্র ও মাকতুবাত দুনিয়ার যে কোনো ভাষায় বিরল। কোনো ধর্মীয় সংস্কারমূলক কাজের ইতিহাসে এর কোনো উপমা খুঁজে পাওয়া যাবে না। সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের এই নজিরবিহীন কার্যক্রম শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনও মনে হবে এগুলো বর্তমান সমাজের জন্যই প্রযোজ্য। চিঠিপত্রি তার এসব বক্তব্যের প্রভাব সব যুগের জন্য সমানভাবে কার্যকর। পত্রের ভাষা প্রাপকের ভেতর যে কী পরিমাণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, তার আন্দোলনের সফলতা থেকেই তা আঁচ করা যায়। প্রকৃত অর্থে এসব পত্রই মুজাদ্দেদে আলফেসানীর (রহ.) দূতের কাজ করেছে। পত্রাবলীর ভাষা থেকে এ বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে যায় যে এরই মধ্যেই হজরতের সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। পরে সব পত্র ‘মাকতুবাত শরিফ’ নামে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় বৃহত্ কলেবরে গ্রন্থিত ও মুদ্রিত হয়।
সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর ছেলে জাহাঙ্গীর যখন ক্ষমতায় আরোহণ করেন তখন মুজাদ্দিদে আলফেসানীর (রহ.) বয়স ৪৩ বছর। এ সময়ের মধ্যেই তিনি তার আন্দোলনকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আকবরের দ্বীনে ইলাহীর প্রভাবে স্বার্থান্বেষী ও মূর্খ আলেম নামধারী ব্যক্তিদের দ্বারা সৃষ্ট বিদআত ও আকিদাগত বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে তিনি তখন মাঠে-ময়দানে সুস্পষ্ট বক্তব্য রাখছেন। তার ভক্ত, মুরিদ ও খলিফাদের তালকিন দিয়ে দলে দলে বিভক্ত করে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়েছেন। অগণিত লোক তার আহ্বানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সংস্কার আন্দোলনে শরিক হচ্ছে। আল্লাহর দ্বীনকে টিকিয়ে রাখার তাগিদে দুনির্বার তাদের গতি। গ্রামেগঞ্জে, শহরে বন্দরে ছড়িয়ে পড়েছে এ আন্দোলনের তীব্রতা। এই আন্দোলনের ফলে কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিজেদের স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য তারা মুজাদ্দিদে আলফেসানীর (রহ.) বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে এবং তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এরা একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে কুফুরি ফতোয়া পর্যন্ত সংগ্রহ করে। তারা সম্রাটকে বোঝাতে শুরু করে যে, সেরহিন্দের এই যুবক বড়ই অহঙ্কারী। সম্রাটের চিন্তাধারার সে ঘোর সমালোচক। সে সম্রাটের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলছে। সে এতটাই দাম্ভিক যে, কারও মতামতের তোয়াক্কা করে না। তাছাড়া তাকে কেন্দ্র করে নতুন চিন্তা-চেতনার আলোকে যে নতুন আন্দোলন গড়ে উঠছে তা জাহাপনার সিংহাসনের জন্য আশঙ্কাজনক বলে মনে করা হচ্ছে। সম্রাট জাহাঙ্গীর দরবারীদের উসকানিতে বিভ্রান্ত হন।
এভাবে সম্রাটকে ক্ষেপিয়ে তোলে মুজাদ্দিদে আলফেসানীর কাছে তার কৈফিয়ত চেয়ে দরবারে ডেকে পাঠান সম্রাট। মুজাদ্দিদ (রহ.) দরবারে উপস্থিত হয়ে সম্রাটকে ইসলামী সংস্কৃতি অনুযায়ী সালাম দিয়ে অভিবাদন জানালেন। দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী ধরে চলে আসা সম্রাটকে সিজদা করার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তার এই মুজাহিদসুলভ আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে সম্রাট তাকে গ্রেফতার করে গোয়ালিয়ার কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
কিন্তু সম্রাটের ক্রোধ, দরবারী ও কায়েমি স্বার্থবাদীদের আক্রোশ, দুর্গের প্রস্তর প্রাচীর ঘেরা অন্ধকার প্রকোষ্ঠের বন্দিত্ব কোনো কিছুই অবদমিত করতে পারল না তাকে। তিনি দুর্গের বন্দিদের মাঝে প্রচার করতে শুরু করলেন ইসলামের অমিয় বাণী। ইসলামের সঠিক ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনার কথা ব্যাখ্যা করে বোঝাতে থাকলেন তাদের। তার কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক বলিষ্ঠ উপস্থাপনা ও চরিত্র মাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে কয়েদি তার হাতে বায়আত গ্রহণ করে সংস্কারবাদী এই চেতনার দীক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করল। এভাবে কেটে গেল এক বছর দুই মাস। এরই মধ্যে সম্রাটকে জানানো হলো, ‘নবাগত এই বন্দির প্রভাবে পশুগুলো মানুষ আর মানুষগুলো ফেরেশতায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে।’ রিপোর্ট পাঠে সম্রাট জাহাঙ্গীর ঘাবড়ে গেলেন, অভিভূত হলেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই তাকে মুক্তি দিয়ে রাজদরবারে নিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন। মুজাদ্দেদকে (রহ.) সসম্মানে রাজদরবারে গ্রহণ করা হলো। সম্রাট জাহাঙ্গীর মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.)-এর কাছে ছেলে শাহজাহান এবং রাজকীয় সেনাবাহিনীর ইসলাহ’র জন্য কিছুদিন রাজদরবারে থেকে যাওয়ার অনুরোধ জানালেন। সম্রাটের এই অনুরোধ যদিও ইসলাহ’র আদলে করা হয়েছে, কিন্তু এর মাধ্যমে মূলত তাকে পর্যবেক্ষণের জন্য নজরবন্দি করে রাখা হয়।
মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.)-এর মূল দর্শন ছিল সম্রাট পরিবর্তনের মাঝে সফলতা নেই; যদি না সম্রাটের মনমানসিকতার পরিবর্তন হয়। তাই তিনি সম্রাট বদলের ঝুঁকিপূর্ণ আন্দোলনের পথে অগ্রসর না হয়ে সম্রাট ও তার সভাসদদের মনমানসিকতা পরিবর্তন করে দেয়ার পথে অগ্রসর হয়েছিলেন। ফলে তিনি সম্রাটের এই অনুরোধ নিজের জন্য সৌভাগ্য হিসেবেই গ্রহণ করলেন। কারণ এর আগে চিঠিপত্র পাঠিয়ে যে কাজটি তিনি রাষ্ট্রের অন্য প্রভাবশালী মন্ত্রী বা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে করে যাচ্ছিলেন, সম্রাটের এই অনুরোধের ফলে এখন থেকে তিনি নিজেই সরাসরি সেই কাজটি করার সুযোগ পাচ্ছেন। নিজেই সরাসরি সম্রাট জাহাঙ্গীর, যুবরাজ শাহজাহান, উজির-নাজিরসহ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারছেন। তিনি তাদের সময়-সুযোগ বুঝে দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকেন। রাজকীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের অন্তরে দ্বীনের প্রভাব বিস্তারে ওয়াজ-নসিহত অব্যাহত রাখেন। দ্বীনের প্রতি দরদ, ইসলামের প্রতি তার ভালোবাসা এবং ক্ষমতার প্রতি তার নির্মোহতা সবাইকে বিমোহিত করে। সম্রাট জাহাঙ্গীরের অন্তর থেকেও শঙ্কা কেটে যেতে থাকে। সম্রাট তার প্রতি আস্থাশীল হয়ে ওঠেন। শাহী দরবারের প্রায় সবাই তার ভক্ত ও মুরিদ হয়ে যায়।
হজরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.) দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর শাহী দরবারে অবস্থানের পর দ্বীনের প্রতি সম্রাটের আস্থা, আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি প্রেম, ভালোবাসা ও ভয়ভীতির বিষয়টি সম্রাটের ভেতর পুরোপুরি সৃষ্টি করতে পেরে সুযোগ বুঝে তিনি একদিন সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছে ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব পেশ করেন। ১. সম্রাটকে সিজদা করার প্রথা রহিত করতে হবে। ২. গরু জবাইয়ের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। ৩. সম্রাট ও তার সভাসদদের তকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ আদায় করতে হবে। ৪. শরিয়াহ বিভাগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে কাজির পদ পুনর্বহাল করতে হবে। ৫. সমাজে প্রচলিত সব ধরনের বিদআত, কুসংস্কার ও ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। ৬. ভগ্ন ও বিধ্বস্ত মসজিদগুলো সংস্কার করে সেগুলো আবাদ করতে হবে। ৭. আকবরের যাবতীয় ইসলামবিরোধী আইন পুরোপুরি বাতিল ঘোষণা করতে হবে। সম্রাট তার এসব দাবি মেনে নিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে এ মর্মে শাহী ফরমান জারি করেন। মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.) এভাবেই তার সংস্কারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে এই উপমহাদেশে ইসলামের ওপর চেপে বসা জগদ্দল পাথর অপসারণ করে ফের ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইতিহাসের সোনালি অধ্যায় রচনার সৌভাগ্য অর্জন করেন। আর এভাবেই উপমহাদেশ থেকে আকবরের দ্বীনে ইলাহীর পরিসমাপ্তি ঘটে।
তথ্যসূত্র : ১. বীস বড়ে মুসলমান ২. তারিখে দাওয়াত ও আযীমত ৩. উলামায়ে হিন্দ কা শানদার মাযী ৪. দেওবন্দ আন্দোলন ইতিহাস ঐতিহ্য অবদান।