লগইন রেজিস্ট্রেশন

সম্মানের খোঁজে উমারের কাছে

লিখেছেন: ' আবু আনাস' @ রবিবার, অগাষ্ট ১, ২০১০ (১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ)

গল্পটা আমরা সবাই জানি। তাও আরেকবার শুনি।

অনেকদিন ধরে মাসজিদুল আকসার শহর জেরুজালেম অবরোধ করে রেখেছে মুসলিমরা। আর থাকতে না পেরে শহরের নেতারা সিদ্ধান্ত নিলেন আত্মসমর্পণ করার। মুসলিমরা যদি নিরাপত্তার অঙ্গীকার করে তবে শহর তাদের হাতে তুলে দেবে তারা। শর্ত একটাই – সে অঙ্গীকার করতে হবে মুসলিমদের খলিফা উমার ইবুনল খাত্তাবকে, স্বয়ং। শহরের চাবি তাঁরা তুলে দেবেন শুধুমাত্র খলিফার হাতে। রক্তপাতহীন এমন বিজয়ের প্রস্তাব পায়ে ঠেললেননা বিচক্ষণ শাসক উমার। মদীনা থেকে রওনা হলেন জেরুজালেমের দিকে।

পথের দূরত্ব নয়শ কিলোমিটারেরও বেশি । সাথী তাঁর ব্যক্তিগত ভৃত্য আর একটি উট। সরকারী কাজে যাচ্ছেন – কোথায় দুটো তাগড়া উট নেবেন, তার বদলে নিয়েছেন এমন একটা দুর্বল উট যে দু’জনকে একসাথেই নিতে পারেনা। শুল্কমুক্ত গাড়ি এনে বিক্রি করা মানুষগুলো আমাদের নেতা। আমরা কিভাবে বুঝব একজন সত্যিকার মুসলিম দেশকে কিভাবে ভালোবাসে? জনসাধারণের অর্থ কিভাবে আগলে রাখতে হয় তা আমাদের কে বোঝাবে?

পথিমধ্যে ভৃত্যের সাথে উমারের চুক্তি হল। একজন যখন উটের দড়ি ধরে পথ চলবে আরেকজন তখন উটে বসে বিশ্রাম করবে। কোথায় বিশাল এক ভূখন্ডের শাসক আর কোথায় একজন সাধারণ ভৃত্য! মানুষ হিসেবে অধিকারের দিক দিয়ে দু’জনেই সমান!

কষ্টকর সফর শেষ। এবার জেরুজালেমে ঢোকার পালা। অবরোধকারী মুসলিম সৈন্যবাহিনীর তো ঘটনা দেখে চোখ কপালে। তাঁরা বললেন – হে আমিরুল মু’মিনিন, আপনাকে এরা অনেক শ্রদ্ধা করে, ভয় করে, সম্মান করে। আপনি যদি এভাবে উটের দড়ি নিয়ে হেঁটে শহরে ঢুকেন তাহলে এরা কি ভাববে? আপনার সম্মান কোথায় থাকে আর আমাদের সম্মানই বা কোথায় থাকে? সারা রাস্তা এভাবে এসেছেন ভাল কথা, এখন অন্তত আপনি উটের পিঠে বসুন।

উমার (রাদিয়াল্লাহু তাআ’লা আনহু – আল্লাহ তাঁর উপর রাযি-খুশি থাকুন) বোঝাতে চাইলেন যে এই ভৃত্যের সাথে তার যে চুক্তি হয়েছিল তার অংশ হিসেবে যখন সে হেঁটে এসেছে, উমার তখন বিশ্রাম করেছেন। এখন তার বিশ্রামের সময় যদি উমার না হেটে আবার উটের পিঠে চড়েন তবে তো সে চুক্তি ভঙ্গ হল, বে-ইনসাফি করা হল। এক ভৃত্যের সাথে যে চুক্তি রাখতে পারেনা, এক শহরের সাথে সে কি চুক্তি করবে? নিজের কাছের মানুষের প্রাপ্য যে দিতে পারেনা সে এত দূরের মানুষদের প্রাপ্য কিভাবে দেবে? সবাই কি ভাববে এই ভয় যে করে, আল্লাহ কি ভাববে সেই ভয় সে কখন করবে?

তিনি বললেন –
আমরা এমন জাতি যাদের কোন অস্তিত্ব ছিলনা, সম্মান ছিলনা। আল্লাহ আমাদের ইসলামের মাধ্যমে সম্মান দিয়েছেন। আমরা যদি ইসলামকে ছেড়ে অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে সম্মান পেতে চাই তাহলে আল্লাহ আমাদের আবার লাঞ্ছিত করবেন।

মুসলিম সেনাপ্রধানরা নিশ্চুপ হয়ে গেলেন।

উমার (রাঃ) উটের রশি ধরে হেটে ঢুকলেন জেরুজালেমে।

শহরের মানুষেরা ভুল বুঝে উটের পিঠে বসা দাসকে অভিনন্দন জানাল।

তাদের বুঝিয়ে বলা হল উমার আসলে সামনে দড়ি ধরে হেটে আসা মানুষটির নাম। বুঝানো হল কেন তিনি একাজ করেছেন। শহরের মানুষেরা বুঝে গেল ইসলাম কি। ভয় বদলে গেল শ্রদ্ধায়। বিরক্তি বদলে গেল ভক্তিতে। সবচেয়ে যে ঘৃণা করত তারও মাথা নুয়ে গেল সম্মানে।

যে আল্লাহর কাছে সম্মান চায় আল্লাহ তাকে সবার সামনে সম্মান দেন। যে অন্য মানুষের পা চেটে সম্মান চায় তাকে আল্লাহ অপমান আর লাঞ্চনায় ডুবিয়ে দেন। যে চোট-পাট আর বাহাদুরি করে সম্মান চায় তাকে আল্লাহ ঘৃণায় ভাসিয়ে দেন। যে টাকার পাহাড়ে উঠে সম্মান চায় আল্লাহ তাকে এমন দারিদ্র্য দেন যে সে বেচারা সারা জীবন টাকা কামাই করে যায় কিন্তু তাও তার অভাব মেটেনা, সম্মান তো জোটেই না।

সম্মান পেতে হলে ইসলাম মানতে হবে। লোক দেখানো পপুলার ইসলাম না, আল্লাহর রসুলের (সাঃ) আসল-খাঁটি ইসলাম। সেটা উমার(রাঃ) প্রাক্টিক্যালি প্রমাণ করে গেছেন। আমাদের চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
১২৩ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)

৪ টি মন্তব্য

  1. আল্লাহ সুবহানাল্লাহতায়ালা আমাদের সঠিকভাবে ইসলামকে মেনে চলার তৌফিক দান করুন।

  2. সহমত । ধন্যবাদ এই লেখার জন্য ।

  3. সুন্দর পো্স্ট। আল্লাহ আপনার উপরে রহম করুন।

  4. এই গল্পটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু লেখাটা আমাকে তা থেকে কিছু শিখতে উদ্বুদ্ধ করছে। আমাদের চরিত্র হোক কুরআনের প্র্র্রতিচ্ছবি। আমিন।