লগইন রেজিস্ট্রেশন

বিদআত

লিখেছেন: ' আবু আনাস' @ রবিবার, অগাষ্ট ২২, ২০১০ (৮:১৫ পূর্বাহ্ণ)

    বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

কেউ যদি ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করে বাংলাদেশের প্রধান পালিত ধর্মের সাথে মিলিয়ে দেখে তাহলে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাবে – বুঝতেই পারবেনা যে বাংলাদেশের মানুষ আসলে মানে কী। আর যদি কারো ইসলামের বাংলাদেশ ভার্সন মানতে মানতে আসল ইসলামের সাথে পরিচয় হয় তখন কূল রাখাই দায় হয়ে যায়, মানবো কোনটা? বাপ-দাদার সামাজিক ইসলাম নাকি আল্লাহর ইসলাম? রবীন্দ্রনাথ বলেছিল বাঙালি নাকি ধর্মের খাঁচা নিয়ে উদ্বাহু নৃত্য করে; পাখিটা যে উড়ে গেছে তার কোন খেয়াল রাখেনা। কিন্তু সত্যটা হল আমাদের হাতে যে ভাঙাচোরা খাঁচাটি আছে তা আসলে পাখির খাঁচাই না। ইসলামের বুননটি এমনি যে খাঁচা ঠিক থাকলে পাখি তাতে থাকতে বাধ্য। যারা পাখির খোঁজে দেশ-বিদেশের তাত্বিকদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন তারা ইসলাম চেনেননি।
আচ্ছা ইসলাম কি কোন ধর্ম? আদতে ইসলাম কিন্তু কোন ধর্ম নয়, কোন ‘বাদ’ বা ‘ইজ্‌ম’ নয়, কোন আদর্শ বা আইডিওলজির নাম নয়। বরং এটি একটি ‘দ্বীন’ বা জীবনব্যবস্থা যার মূল ভিত্তি তাওহিদ। একজন মানুষ যখন তার বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করে আল্লাহকে তার ‘রব্ব’- সৃষ্টিকর্তা, প্রতিপালক এবং প্রভু হিসেবে চিনতে পারে তখন সে নিঃশর্তভাবে আল্লাহকে একমাত্র ‘ইলাহ্‌’-উপাস্য হিসেবে মেনে নেয়। তখন সে আল্লাহর আদেশ এবং নিষেধ এ দুইয়ের কাছেই করে আত্মসমর্পণ। আর এই আত্মসমর্পণকেই বলা হয় ইসলাম।

একজন মুসলিম প্রতিদিন যে কাজই করে তাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় –
১. মু’আমালাত বা জীবন যাপনের সাথে সম্পর্কযুক্ত কাজ- যেমন উপার্জন করা, ঘুমানো, বাজারে যাওয়া, বিনোদন ইত্যাদি।
২. ইবাদাত বা আল্লাহর দাসত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত কাজ- যেমন নামাজ, যাকাত, রোজা, হাজ্ব, কুরবানি, বিচার করা ইত্যাদি।

এখন মু’আমালাতের ক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে নিষেধ আর ইবাদাতের ক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে আদেশ। এই মূলনীতি এসেছে কুর’আনের এই আয়াতে -
রাসূল তোমাদের যা দেন তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত হও” [সূরা হাশর: ৭]

মু’আমালাতের ব্যাপারে মূলনীতি হল যা নিষেধ করা হয়েছে তা ছাড়া বাকি সবই করা যাবে। উপার্জন করার ব্যাপারটা ধরা যাক। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তার রসুল (সাঃ) এর মাধ্যমে কিছু জিনিস সুস্পষ্টভাবে হারাম বা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। এই নিষিদ্ধ জিনিসগুলোর সংশ্লিষ্টতা না থাকা সবকিছুই হালাল বা অনুমোদিত। যেমন সিগারেট ইসলামে হারাম। এখন একজন মুসলিম চাষীর জন্য তামাক গাছ চাষ করা নিষিদ্ধ। একজন মুসলিম ব্যবসায়ীর জন্য সিগারেটের ব্যবসা নিষিদ্ধ। একজন মুসলিম বিজনেস গ্রাজুয়েটের জন্য ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোতে চাকরি করা নিষিদ্ধ। একজন মানুষ যখন নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করবে তার কর্তব্য হবে ইসলামে হারাম যে কোন জিনিস থেকে নিজের উপার্জনকে মুক্ত রাখা।
যারা তর্ক শুরু করে ‘ইসলাম ১৪০০ বছর আগের ধর্ম’ – কথাটা বলে তারা বোঝেইনি ইসলাম কী। ১৪০০ বছর আগের কথা বাদ দেই – ৫০ বছর আগেও সিডি বলে কিছু ছিলনা, আজ আছে। এর ব্যবসা করা যাবে কি? ইসলামের মূলনীতি বলে – পর্ন, মিউজিক, পাইরেটেড সফটওয়ার সহ আর যা হারাম আছে সেগুলো বাদ দিয়ে সিডির ব্যবসাতে সমস্যা নেই। অথচ হবু-সেকুলার ডিজিটাল বাংলাদেশের আইটি নীতিমালাই এখনো চুড়ান্ত হয়নি!
বিজ্ঞানের বদৌলতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বহু কিছু নতুন আসবে। সে ক্ষেত্রে আমরা হারামের নীতিমালা মেনে, সেগুলো বাদ দিয়ে বাকি সবকিছু গ্রহণ করতে পারবো।
রসুল(সাঃ) এর যুগে চড়ত উটে, ভাসতো জাহাজে। এখন মানুষ প্লেনে চলে, গাড়িতে চড়ে। এতে কোন সমস্যা নেই কারণ আকাশে উড়া যাবেনা বা বা দ্রুত চলা যাবেনা এমন কোন নিষেধ আমরা কুর’আন এবং সহিহ সুন্নাহ থেকে পাইনা। বর্তমান সভ্যতার যে সুবিধাগুলো আমাদের জীবনে ভোগ করছি তা আল্লাহর দেয়া অনুগ্রহ এবং পরিমিতভাবে তার সুব্যবহারে কোন নিষেধ নেই।

এবার ইবাদাতের ব্যাপারে আসা যাক। ইবাদাতের ব্যাপারে মূলনীতি হল যা করতে আদেশ করা হয়েছে তা ছাড়া বাকি সব কিছুই নিষিদ্ধ। কোন ইবাদাত যতই ভাল লাগুক না কেন তার পক্ষে যদি কুর’আন এবং সহিহ হাদিস থেকে কোন প্রমাণ না পাওয়া যায় তবে সেটা করা নিষিদ্ধ। কেউ যদি এমন কোন কাজ করে তবে সেটা হবে ‘বিদআত’।

ইসলামি পরিভাষায় বিদআত হল আল্লাহ‌র দ্বীনের মধ্যে নতুন করে যার প্রচলন করা হয়েছে এবং এর পক্ষে শরীয়তের কোন সাধারণ কিংবা সুনির্দিষ্ট দলীল নেই। দলীল বলতে আল কুর’আন এবং সহিহ হাদিস বুঝায়। যঈফ বা দুর্বল হাদিস যেহেতু নিশ্চিতভাবে রসুলের(সাঃ) থেকে এসেছে তা প্রমাণ করা যায়না সেহেতু তা দিয়ে কোন বিধানও জারি করা যায়না।

বিদআত পাপের তালিকায় অনেক বড় পাপ, শিরকের পরেই এর স্থান। এর কারণ বিদআত করা মানে আল্লাহকে খুশি করতে এমন কিছু করা যা রসুলুল্লাহ (সাঃ) করেননি অথবা করতে বলেননি। আমি যখন বিদআত করি সেটার দু’টো মানে দাড়ায় -

১. মুহাম্মদ(সাঃ) রসুল হিসেবে তাঁর দায়িত্ব ঠিক মত পালন করে যাননি। আমি যে কাজটি (বিদআত) করছি সেটা একটা ভালো কাজ অথচ এই ভালো কাজটির কথা আমাকে রসুল (সাঃ) বলে যাননি।
২. আমি রসুলুল্লাহ(সাঃ) এর চাইতে বেশি ভালো মানুষ, কারণ আমি আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে এমন সব ‘ভালো’ কাজ করছি যা তিনি করেননি।
এদু’টিই আমরা যে কালিমা পড়ে মুসলিম হই তার বিরুদ্ধে যায়। কারণ ‘মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ’ কথাটি বলার মাধ্যমে আমরা এই সাক্ষ্য দেই যে – আল্লাহ মানুষ জাতির মধ্যে সবচেয়ে ভাল মানুষটিকে বেছে নিয়ে তাকে শেষ রসুল করে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। আর তিনি আল্লাহর কাছ থেকে যা কিছু এসেছে তার সবকিছু মানুষের কাছে পৌছে দিয়ে তাঁর দায়িত্ব চমৎকারভাবে পালন করেছেন।
শুধু তাই নয় বিদআত কুর’আনের আয়াতের বিরোধীতা পর্যন্ত করে। আল্লাহ বিদায় হাজ্বের দিন নাযিল করেছিলেন -
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে” [সুরা মায়িদা:৩]

এর মানে আল্লাহ তার রসুলের জীবদ্দশাতেই কি করতে হবে আর কি করা যাবেনা তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। যখন কেউ বিদআত করছে সে আল্লাহর পূর্ণ করে দেয়া দ্বীনে কিছু যোগ করছে বা বদলে দিচ্ছে। খোদার উপর খোদ্গারির নিকৃষ্টতম উদাহরণ এটি। পূর্ণ মানে পূর্ণ; এতে যোগ-বিয়োগ বা পরিবর্তন করার কোন সুযোগ নেই।

ইমাম শাতেবী বিদাতির ১৭টা ভয়াবহ পরিণাম উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে প্রথমটি হলো যে বিদাতির ফরয বা নফল কোন ইবাদাতই কবুল হয়না১ যতক্ষণ পর্যন্ত সে তাওবা করে ঐ বিদআত না ছেড়ে দিচ্ছে! এত কষ্ট করে নামায, যাকাত, হাজ্ব, রোযা সবই আল্লাহর কাছে অগ্রহণযোগ্য হবে কারণ সে বিদাতে লিপ্ত আছে। শুধু তাইনা বিদআত করার কারণে তার উপর আল্লাহ সকল ফেরেশতা এবং মানুষের অভিশাপ নেমে আসে।১
সাধারণ একজন মানুষ একটা পাপ করে অনুতপ্ত হয়, তার খারাপ লাগে, সে আল্লাহর কাছে মাফ চায়। কিন্তু যে বিদআত করছে সে ভাবে সে ভালো কাজ করছে আর তাই তার খারাপও লাগেনা আর সে কখনো ক্ষমাও চায়না। শুধু তাইনা, একজন বিদাতি তার কাজের সাথে একমত না হওয়ায় সুন্নাতের অনুসরণকারীদের ঘৃণা করে। আমরা যে আজ এত ভাগে বিভক্ত তার মূল কারণ সুন্নাত ছেড়ে দেয়া আর বিদআতে জড়িয়ে পড়া।

বিদআত সুন্নাতের শত্রু। এক গ্লাস ভর্তি পানির মধ্যে যদি কোন জিনিস ফেলা হয় তখন সেই জিনিসটাকে জায়গা করে দিতে গিয়ে কিছুটা পানি পড়ে যায়। ঠিক তেমন কোন বিদআত যখন চালু হয় তখন সেখানকার সুন্নাত সরে যায়। যেমন আমাদের দেশে ফরজ নামাযের পর হাত তুলে গণ মুনাজাত করা হয়। এর ফলে আল্লাহর রসুল(সাঃ) সালাম ফেরানোর পর যে দু’আগুলো পড়তেন সেগুলো পড়ার আর সুযোগ থাকেনা। কারণ জনগণ তখন ইমামের নাকিকান্নার সাথে আমিন আমিন বলতে ব্যস্ত থাকে।

বিদআত নিয়ে রসুলুল্লাহ(সাঃ) উপদেশের সারমর্ম হল -
নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ‌র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আমার পর তোমাদের মধ্যে যে জীবিত থাকবে সে বহু মতবিরোধ দেখতে পাবে, এমতাবস্থায় তোমরা অবশ্যই আমার ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাত অবলম্বন করবে। আর তা অত্যন্ত মজবুত ভাবে দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরবে, দ্বীনের ব্যাপারে নতুন আবিষ্কার থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকবে। কারণ, নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।”২

বিদআত থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের যা করতে হবে তা হল সুন্নাত সম্পর্কে জানা। কোন কাজ রসুলুল্লাহ(সাঃ) কিভাবে করতেন সেটা কুর’আন এবং সহিহ সুন্নাহের দলীল থেকে আমাদের জেনে নিতে হবে। এ অভ্যাস জীবনের প্রত্যেক স্তরের প্রয়োগ করতে হবে। নামায কিভাবে পড়ব এটা যেমন রসুলের(সাঃ) এর সহিহ হাদিস থেকে শিখে নিব ঠিক তেমনি মানুষ মারা গেলে কি করতে হবে তাও আল্লাহর রসুল(সাঃ) থেকেই শিখতে হবে।

কেউ যদি কোন ইবাদাত করতে বলে তবে যে সেই ইবাদাত করতে বলবে তার সপক্ষে তাকে প্রমাণ দেখাতে হবে। যেমন কেউ যদি বলে – “আসরের নামায ৪ রাকাত ইশার নামায ৪ রাকাত, মাগরিব ৩ রাকাত কেন? নামায পড়া তো ভাল কাজ। বেশি পড়লে সমস্যা কি? মাগরিব ১ রাকাত কম পড়ব কেন? রসুল কোথায় নিষেধ করেছেন যে মাগরিবের নামায ৪ রাকাত পড়া যাবেনা?”
যেহেতু রসুল (সাঃ) ৩ রাকাত পড়েছেন তাই তার মানে ৩ বাদে বাকি সব সংখ্যাই বাদ। কোনটা করা যাবেনা সেটার তালিকা হবে অসীম। তাই আল্লাহর রসুল(সাঃ) যা করেছেন সেটা বাদে বাকি সব বাতিল। এর দলীল -
যে কেউ একটি ভালো কাজ করল যা করার আদেশ আমি দেইনি তা প্রত্যাখ্যাত এবং গ্রহণযোগ্য নয়।৩ আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু সংযোজন ও সৃষ্টি করবে যা মূলত তাতে নেই সেটি পরিত্যাজ্য।” ৪

অনেকে বিদআতের বিরুদ্ধে কথা তুললেই বলেন তাহলে তো মাইক ব্যবহারও বিদআত – এটাতো নতুন আবিষ্কার। মাইক দিয়ে আযান দিলে বেশি সাওয়াব হবে এ জন্য কেউ মাইকে আযান দেয়না, দেয় যাতে বেশি মানুষ আযান শুনতে পায় সেজন্য। একই কারণে রসুলের যুগে গলার স্বর উঁচু করে আযান দেয়া হত।

বিদআত নিয়ে সন্দেহে থাকে অনেকেই, ভাবে শবে বরাতের ইবাদাতের কোন সহিহ হাদিস নেই তো কি হয়েছে, দুর্বল হাদিস তো আছে। ঐ রাতে অনেক নামায পড়লাম, শবে বরাত সত্যি হলে তো সাওয়াব পেলামই- আর না থাকলেও ক্ষতি কি? নামাযের সাওয়াব তো পাব।
একথা মনে রাখতে হবে ইসলামে সন্দেহ-সংশয়ের কোন অবকাশ নেই। যা করতে হবে সব কিছু নিশ্চিত হয়ে। রসুল(সাঃ) বলেছেন -
হালাল স্পষ্ট, হারাম স্পষ্ট এবং এর মাঝে কিছু সন্দেহের বস্তু আছে যার ব্যাপারে অনেকেই জানেনা। যে এসব সন্দেহের বিষয়গুলো এড়িয়ে চলল সে নিজের দ্বীন এবং সম্মানকে রক্ষা করল। কিন্তু যে সন্দেহের বিষয়ে জড়িয়ে গেল সে (যেন) হারামে জড়িয়ে গেল।’৫

একজন প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে, সে ১৫ই শাবানের রাতেও নামায পড়বে -তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি কেউ এ রাতে নামাযের বিশেষ কোন মর্যাদা আছে সেজন্য নামায পড়ে যে তবে সে বিদআত করল। এ রকম ভূরি ভূরি উদাহরণ দেয়া যাবে। যেমন নামাযের সময় রসুলের(সাঃ) মাথায় কাপড় থাকতো। কিন্তু মাথায় টুপি/পাগড়ি দিলে সাওয়াব বেশি হয় এমনটা ভাবা বিদআত কারণ এর প্রমাণে কোন সহিহ হাদিস নেই।

নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া আমল করাই যাবেনা। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল ‘ইয়াওমুশ শাক্ক’। শাবান মাসের ২৯ তারিখে যদি আকাশে মেঘের জন্য চাঁদ না দেখা যায় তবে পরের দিনকে বলে ‘ইয়াওমুশ শাক্ক’ বা সন্দেহের দিন কারণ এটি রমযানের ১ তারিখ হতে পারে আবার শাবানের ৩০ তারিখ হতে পারে। কিন্তু আল্লাহর রসুল(সাঃ) এ দিন রোযা থাকতে নিষেধ করেছেন এবং শাবান মাসের ৩০ দিন পুরো করতে বলছেন। অনিশ্চিত অবস্থায় সেফ সাইডে থাকতে গিয়ে একদিন আগে রোযা রাখাকেই হারাম করা হয়েছে।৬

ইমাম ইবনু কাসির তার তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে নিচের আয়াতটি বিদাতিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য-

আমি কি তোমাদের এমন লোকদের কথা বলবো, যারা আমলের দিক থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ? (এরা হচ্ছে) সেসব লোক যাদের সকল প্রচেষ্টা এ দুনিয়ায় বিনষ্ট হয়ে গেছে, অথচ তারা মনে মনে ভাবছে, তারা (বুঝি) ভালো কাজই করে যাচ্ছে।” [আল-কাহফঃ ১০৩-১০৪]

আমাদেরকে বুঝতে হবে সিরাতাল মুস্তাকিম একটাই, আর সেটা হ্ল রসুলুল্লাহ(সাঃ) এবং তার সাহাবাদের পথ। এ ছাড়া অন্য যে পথেই মানুষ যাবে সে পথ যত সুন্দর মনে হোক না কেন বা যত কষ্টের হোক না কেন সেটা আল্লাহ থেকে শুধু দূরেই নিয়ে যাবে।

আল্লাহ আমাদের বিদআত থেকে বেঁচে রসুলের(সাঃ) সুন্নাত মেনে চলার মানসিকতা ও সামর্থ্য দিন। আমিন।
——————————————————————————–
১- বুখারিঃ ৩১৮০
২- মুসলিম, আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, হাকিম, নাসায়ী। (মিলিত)
৩- বুখারি খন্ড ৯পৃষ্ঠা ৩২৯
৪- মুসলিমঃ ৩২৪৩
৫- বুখারিঃ ৫২, মুসলিমঃ ১৫৯৯
৬- আত তিরমিযিঃ ৬৮৬, আন-নাসায়ীঃ ২১৮৮
যারা বিদআতের ব্যাপারে আরো বিশদ জানতে চান তারা ড. মুহাম্মদ মানজুরে ইলাহী লিখিত ‘বিদআত চেনার মূলনীতি’ বইটি পড়তে পারেন।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
১,০০৮ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)

৩ টি মন্তব্য

  1. একজন বিদাতি তার কাজের সাথে একমত না হওয়ায় সুন্নাতের অনুসরণকারীদের ঘৃণা করে। – ইমাম শাতেবি।
    কথাটা এত সত্য বুঝিনি।

  2. যে এলেম মানুষকে ঘৃণা করতে শেখায় সেটা কোন এলেমই না।
    আপনার লেখার হাত ভালো, কিন্তু এর প্রতিটি শব্দের জন্য কিন্তু জবাবদিহি করতে হবে।
    এত লম্বা চওড়া লেকচার না দিয়ে সুস্পষ্টভাবে বললেই পারেতেন কোন্ কোন্ কাজগুলো বিদআত।

    আবু আনাস

    @সাদাত,আলহামদুলিল্লাহ, আমি যা লিখেছি তা ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন এটাই চাই। আর ঘৃণা করিনা, ছড়াইওনা এ ব্যাপারে বিশ্বাস আছে। ভুলটাকে ভুল বলতে হবে বলে আল্লাহর আদেশেই লিখেছি। বিদয়াতের লিস্ট করলে শেষ হবেনা। তার চেয়ে মানুষ নিজেই বেছে নিক কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। অন্ধভাবে ইসলাম মানার ব্যাপারেও জবাবদিহী করতে হবে। বাজারে মাছ কিনার সময় ভালোটা দেখে কিনতে পেরেছি, চাকরির বাজারে চাকরি যাচাই করেছি কিন্তু ইসলামের ব্যাপারে আমার কোন যাচাই-বাছাই কেন ছিলনা সেটা আল্লাহ জিজ্ঞেস করলে যেন আটকে না যাই।
    সাদাত ভাই খোলা মনে বিদাআত চেনার মূলনীতি বইটা পড়েন, আপনার জ্ঞান দিয়েই আপনি সত্যটা খুঁজে পাবেন, ইনশাল্লাহ