হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর বিদায় হজ্জের ভাষণ
লিখেছেন: ' Mujibur Rahman' @ সোমবার, জুন ২৮, ২০১০ (১২:৪৫ অপরাহ্ণ)
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর বিদায় হজ্জের ভাষণ
শুক্রবার, ৯ জিলহজ, ১০ হিজরী সনে আরাফার দিন দুপুরের পর রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লক্ষাধিক সাহাবির সমাবেশে হজের সময় এই বিখ্যাত ভাষণ দেন| হাম্দ ও সানার পর স্বীয় ভাষণে ইরশাদ করেনঃ
আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মা’বুদ নেই| তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই|
আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন| তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন| আর তিনি একাই বাতিল শক্তিগুলো পরাভূত করেছেন|
হে আল্লাহর বান্দারা! আমি তোমাদের আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর বন্দেগির ওসিয়ত করছি এবং এর নির্দেশ দিচ্ছি|
হে লোক সকল! তোমরা আমার কথা শোন| এরপর এই স্থানে তোমাদের সাথে আর একত্রিত হতে পারব কি না জানি না|
হে লোক সকল! আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, হে মানবজাতি! তোমাদের আমি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে পয়দা করেছি এবং তোমাদের সমাজ ও গোত্রে ভাগ করে দিয়েছি যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পারো| তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর দরবারে অধিকতর সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী, যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া অবলম্বন করে, সব বিষয়ে আল্লাহর কথা অধিক খেয়াল রাখে| ইসলামে জাতি, শ্রেণীভেদ ও বর্ণবৈষম্য নেই| আরবের ওপর কোনো আজমের, আজমের ওপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই| তেমনি সাদার ওপর কালোর বা কালোর ওপর সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই| মর্যাদার ভিত্তি হলো কেবলমাত্র তাকওয়া |
আল্লাহর ঘরের হিফাযত, সংরক্ষণ ও হাজিদের পানি পান করানোর ব্যবস্থা আগের মতো এখনো বহাল থাকবে|
হে কুরাইশ সম্প্রদায়ের লোকরা! তোমরা দুনিয়ার বোঝা নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে যেন আল্লাহর সামনে হাযির না হও| আমি আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমাদের কোনোই উপকার করতে পারব না| যে ব্যক্তি নিজের পিতার স্থলে অপরকে পিতা বলে পরিচয় দেয়, নিজের মাওলা বা অভিভাবককে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে মাওলা বা অভিভাবক বলে পরিচয় দেয় তার ওপর আল্লাহর লা’নত|
ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে হবে| প্রত্যেক আমানত তার হকদারের কাছে অবশ্যই আদায় করে দিতে হবে| কারো সম্পত্তি সে যদি স্বেচ্ছায় না দেয়, তবে তা অপর কারো জন্য হালাল নয়| সুতরাং তোমরা জন অপরজনের ওপর জুলুম করবে না| এমনিভাবে কোনো স্ত্রীর জন্য তার স্বামী সম্পত্তির কোনো কিছু তার সম্মতি ব্যক্তিরেকে কাউকে দেয়া হালাল নয়|
যদি কোনো নাক, কান কাটা হাবশি দাসকেও তোমাদের আমির বানিয়ে দেয়া হয় তবে সে যত দিন আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করবে, তত দিন অবশ্যই তার কথা মানবে, তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবে|
শোনো, তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করবে| পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যথারীতি আদায় করবে, রমজানের রোজা পালন করবে, স্বেচ্ছায় ও খুশি মনে তোমাদের সম্পদের জাকাত দেবে, তোমাদের রবের ঘর বায়তুল্লাহর হজ করবে আর আমিরের ইতা’আত করবে, তা হলে তোমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারবে|
হে লোক সকল! আমার পর আর কোনো নবী নেই, আর তোমাদের পর কোনো উম্মতও নেই| আমি তোমাদের কাছে দু’টো জিনিস রেখে যাচ্ছি| যত দিন তোমরা এ দু’টোকে আঁকড়ে থাকবে, তত দিন তোমরা গুমরাহ হবে না| সে দু’টো হলো আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত| তোমরা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকবে| কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা দীনের ব্যাপারে এই বাড়াবাড়ির দরুন ধ্বংস হয়েছে|
এই ভূমিতে আবার শয়তানের পূজা হবে এ বিষয়ে শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে| কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে তোমরা তার অনুসরণে লিপ্ত হয়ে পড়বে| এতে সে সন্তুষ্ট হবে| সুতরাং তোমাদের দীনের বিষয়ে তোমরা শয়তান থেকে সাবধান থেকো| শোনো, তোমরা যারা উপস্থিত আছো, যারা উপস্থিত নেই তাদের কাছে এই পয়গাম পৌঁছে দিয়ো| অনেক সময় দেখা যায়, যার কাছ পৌঁছানো হয় সে পৌঁছানেওয়ালার তুলনায় অধিক সংরক্ষণকারী হয়|
তোমাদের আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে| তখন তোমরা কী বলবে? সমবেত সবাই সমস্বরে উত্তর দিলেনঃ আমরা সাক্ষ্য দিব, আপনি নিশ্চয় আপনার ওপর অর্পিত আমানত আদায় করেছেন, রিসালতের দায়িত্ব যথাযথ আনজাম দিয়েছেন এবং সবাইকে নসিহত করেছেন|
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশের দিকে পবিত্র শাহাদাত অঙ্গুলি তুলে আবার নিচে মানুষের দিকে নামালেন|
হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো| হে আল্লাহ| তুমি সাক্ষী থাকো|
সুন্দর পোস্ট । কিছুটা ফরমেটিং করে নিলে ভালো হতো । ধন্যবাদ
মানব জাতির ইহকাল পরকালের মুক্তির সনদ এই অসাধারণ ভাষণ।
চমৎকার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।