প্রশ্নঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কিছু কাজ অপছন্দ হওয়া সম্পর্কে
লিখেছেন: ' মুনিস মোর্শেদ' @ রবিবার, মে ২৯, ২০১১ (১:১৬ অপরাহ্ণ)
প্রশ্নঃ কেউ যদি বলে আমি আল্লাহ, রাসূল কুরআন ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখি কিন্ত আল্লাহর রাসূলের কিছু কাজ আমার পছন্দ হয়না। যেমন এত কম বয়সে আয়েশা রাঃ কে বিয়ে করা। বাদীদের সাথে মিলামিশা করা প্রভৃতি। তবে কি সে মুসলমান থাকবে?
উত্তরঃ প্রায় সমস্ত মশহুর তফসীর হাদীসের শরাহ ফেকাহ ও আকায়েদের কিতাবের মর্মে জানা যায় যে, হুজুর পাক সাঃ এর একটি চুল মুবারক ও যদি কেউ অবজ্ঞা করে। অথবা যদি তার সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়কে কেউ অপছন্দ করে বা দোষারূপ করে তবে তা পরিস্কার কুফর। যে এরূপ করবে সে কাফির। ( তাফসীরে রুহুল মায়ানী, শরহে তিরমিযি, শামী, আল মনীরী, ফেকহে আকবর, আকায়েদে নসফি, শরহে আকায়েদ, হাক্কা ইত্যাদি)
কারণ শরিয়তের পরিভাষায় কুফর হল تكذيب النبي صل الله عليه وسلم في شيء مما جاء به من الدين ضرورة
হুজুর পাক সাঃ কতৃক আনীত জরুরী দ্বীনী বিষয়ের কোন কিছুকে অস্বীকার করাকে কুফুরী বলা হয়। (কাওয়াহিদুল ফিকাহ)
কাজেই আল্লাহ, রাসূল, কুরআন, ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখা সত্বেও এমন কিছু বিশ্বাস, কথাবার্তা এবং কাজকর্ম রয়েছে যা কুফরীরই অন্তর্ভূক্ত। যেমন আল্লাহপাক বা নবী রাসূলকে দোষারুপ করা। তাঁদের প্রতি কটুক্তি করা, অথবা তাঁদের প্রতি বিদ্ধেষ পোষন করা, বা কোন কিছু অপছন্দ করা ইত্যাদি। নবী রাসূলকে গালি দেয়ার শাস্তি হচ্ছে মৃত্যু দন্ড। (ফতয়ায়ে আলমগীরী)।
নবী রাসূল আঃ গণ সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা সম্পর্কে শরহে আকাইদে নসফী, ফিকহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আকাইদে হাক্কাহ প্রভৃতি কিতাবের মর্মকথা হলো, সকল নবী ও রাসূল গণই ছিলেন আল্লাহ পাকের বিশিষ্ট ও মনোনীত বান্দাহগণের অন্তর্ভূক্ত। তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কুরআন শরীফের একাদিক স্থানে এরশাদ হয়েছে نوحى اليهم অর্থাৎ আমি তাঁদের নিকট অহী পাঠাতাম। (সুরায়ে ইউসূফ/১০৯, নহল/৪৩, আম্বিয়া/৭)।
অর্থাৎ নবী রাসূল (আঃ) গণের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা (আল্লাহ পাক কতৃক) পরিচালিত হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আকাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে الانبياء عليهم ا لسلام كلهم معصوم ; অর্থাৎ সকল নবীগণ নিস্পাপ। (আকাইদে নস্ফী)
আরো বলা হয়েছে, الانبياء عليهم السلام كلهم منزحون عن الصغاءر والكفر والقباءح সকল নবীগণই সগীরা, কবীরা, কুফরী, এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র। (আকাইদে হাক্কাহ।)
প্রসঙ্গত বিবেচ্য হতে পারে যদি হাদীস শরীফ গ্রহনের ব্যাপারে বিশুদ্ধ রাবীর ক্ষেত্রে সারা জীবনে একবারও মিথ্যা না বলা, বা কোন তথ্য ভূলে না যাওয়া অথবা নিতান্ত কোন অশোভনীয় বা অপছন্দনীয় কাজ না করা প্রভৃতি অতি মানবীয় যোগ্যতার সমাহার মানদন্ড হিসাবে সাব্যস্ত করা হয় তাহলে নবুওয়তের মাকাম যা কোন আমলের দ্বারা অর্জনের উর্দ্ধে সেক্ষেত্রে মহান রাব্বুল ইজ্জত কি ধরনের যোগ্যতার সমাবেশ পছন্দ করবেন?
উল্লেখ্য এ আঙ্গিকে সাইয়িদুল মুরছালিন, ইমামুল মুরসালিন, হুজুর পাক সাঃ এর বিষয় আরো বেশী মর্যাদাপূর্ণ আরো বেশী স্পর্শকাতর। কেননা তিনি সকল নবীদের নবী, রাসুলদের রাসুল। তিনি আল্লাহ তায়ালার মনোনিত বান্দা, নির্বাচিত পয়গাম্বর এবং পছন্দনীয় রাসূল, হাবীবুল্লাহ বা আল্লাহ পাকের হাবীব বা সর্বাপেক্ষা প্রিয় বন্ধু। সর্বপোরি তিনি ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যেমন আলস্নাহ তায়ালা ইরশাদ করেন وماينطق عن الهوى ان هو الاوحي يوحى অর্থাৎ তিনি ওহী ব্যতিত নিজের থেকে কোন কথা বলেন না।
মুলত আল্লাহর রাসুল সায়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালিন হুজুর পাক সাঃ যা কিছু বলেছেন যা কিছু করেছেন তা আল্লাহ পাক কর্তৃক ওহী দ্বারা নির্দেশিত হয়েই করেছেন। সুতরাং তাঁর সংশিস্নষ্ট কোন কিছুকে অপছন্দ করা বা সমালোচনা করা মুলতঃ আল্লাহপাক ও তাঁর ওহীর অস্বীকার করা। যা কুফুরীর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহপাক বলেনঃ و الذين كفروا فتعسا لهم و اضل اعما لهم ذالك بانهم كرهوا ما انزل اليه فاحبط اعمالهم অর্থাৎ যারা কুফুরী করেছে তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ এবং তিনি তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিবেন। তা এ জন্য যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। কাজেই আল্লাহ তাদের কর্ম নিষ্ফল করে দিবেন। (সুরা মুহাম্মদ,৪৭: ৮-৯)
আরো ইরশাদ হয়েছেঃ والذين كفروا اوليائهم الطاغوت يخرجونهم من النور الى الظلمات اولئك اصحاب النار هم فيها خالدون অর্থাৎ যারা কুফুরী করে তাগুত তাদের অভিভাবক তারা তাদেরকে অলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারা জাহান্নামী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ ومن يطع الرسول فقد اطاع الله ان الذين يبائعونك انما يبائعون الله يد الله فوق ايديهم অর্থাৎ যে রাসুল সাঃ এর অনুসরণ করল, সে যেন আল্লাহর অনুসরণ করল। নিশ্চই যাঁরা আপনার সাথে অঙ্গীকার করেছে তারা প্রকৃত পক্ষে আমি আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। (সুরা ফাতাহ ১০)।
তাই নবী করীম সাঃ যে নিষ্পাপ, পবিত্র, ও সকল ত্রুটি বিচ্যুতি এবং অপছন্দনীয় কাজ থেকে পুতঃপবিত্র এই বিশ্বাস ঈমানের অঙ্গ। যদি তা না হতো তবে আল্লাহপাক সরাসরি তাঁর অনুকরণ ও অনুসরন করার নির্দেশ দিতেন না এবং তাঁর অনুসরন করাকে আল্লাহ পাক নিজের অনুসরন কারার এবং তাঁর হাতে হাত রেখে অঙ্গীকার করাকে আল্লাহপাকের কুদরতী হাতে হাত রেখে অঙ্গীকার করার শামিল বলে গন্য করতেন না। সুতরাং আল্লাহর রাসুল সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ের সমালোচনা করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। এমনটি আকাইদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহর রাসুল কদু পছন্দ করতেন তাই সাহাবায়ে কেরাম রাঃ গণও কদু পছন্দ করতেন। এখন কেউ যদি বলে আমি কদু পছন্দ করিনা তবে সে কাফের হয়ে যাবে। কুফুরী কথা উচ্চারণ করলে ঈমান চলে যাবে। পুর্বের নামায, রোযা, হজ্জ, ইবাদত-বন্দেগী যত কিছু করা হয়েছে সব বাতিল হয়ে যাবে। বিবাহ নষ্ট হয়ে যাবে। কাজেই তাওবা করে পুণরায় মুসলমান হতে হবে। এরপর বিবাহ দুহরিয়ে নিতে হবে। আল্লাহ না করেন, কোন মুসলমান যদি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক মুরতাদ হয়ে যায় তবে তাকে তিন দিনের সময় দিতে হবে। তার দিলে ইসলামের ব্যাপারে কোন সন্দেহ সৃষ্টি হলে এর সমাধান দিতে হবে। এতে যদি তার বুঝ আসে এবং তওবা করে মুসলমান হয় তবে ভাল নতুবা তিন দিন পর তাকে হত্যা করা হবে। মহিলা মুরতাদ হলে তাকে হত্যা না করে বন্দী করে রাখা হবে। (আল ফিকহুল আকবর, শরহে আকাইদে নসফি, আকিদাতুত তাহাবী, আকায়েদুল ইসলাম, আকাইদে হাক্কা, তাকমীলুল ঈমান, কালিমাতুল কুফর, ফতয়ায়ে আমিনিয়া, দুররুল মুখতার, আলমগীরী, কাজীখান, বাহরুর রায়েক, ইত্যাদি)
সাইয়্যিদ মুহাম্মদ মুনিস মুর্শিদ