“ইসলামি রাজনীতি কি নিষিদ্ধ করা উচিত?” “বিতর্ক বাহাস”
লিখেছেন: ' মুসাফির' @ বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৩ (১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ)
১৭ সেপ্টেম্বর ১৩, সংখ্যা ৩২ -এর “বিতর্ক বাহাস”
………………………………………………………………
বিগত সংখ্যায় প্রকাশিত ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক-বাহাসে অংশ নিয়েছিলেন জনাব হায়দার আকবর খান রনো এবং জনাব গাজী আতাউর রহমান। পরবর্তীতে জনাব হায়দার আকবর খান রনোর সঙ্গে বিপক্ষের যুক্তি খ-নের জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি জনাব গাজী আতাউর রহমানের দেয়া জবাবের বিপরীতে কোনো প্রকার উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, আমি তাদের সাথে কোনো বিতর্কে অংশ নিতে চাই না। কারণ তাদের যতই বুঝানো হোক তারা বুঝবে না। তাদের সাথে আমাদের রয়েছে আদর্শগত বিস্তর ফারাক।
অগত্যা সাপ্তাহিক লিখনীর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য ও টেলিভিশন টকশো’র সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব রুহিন হোসেন প্রিন্সের সঙ্গে। তিনি ধর্মীয় রাজনীতি নিয়ে যা বলেন তা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো।
…………………………………………………………………………
“ইসলামি রাজনীতি কি নিষিদ্ধ করা উচিত?”
………………………………………………………………………….
স্বপক্ষের যুক্তি ২
রুহিন হোসেন প্রিন্স
সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটি, সিপিবি
মূলকথা হলো, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। সঙ্গত কারণে প্রশ্ন আসতে পারে, কেন? এখানে বলে রাখি, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বিষয়টি ভিন্ন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে যে দু’তিনটি ইসলামি দল রাজনীতি করতো তাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য দল ছিলো জামায়াতে ইসলামী। এই জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা যদি দেখি তাহলে দেখবো, পাকিস্তান আমলেও তারা কাদিয়ানি
সম্প্রদায়ের সাথে মারামারি-হানাহানি এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। সর্বগ্রাসী দাঙ্গাসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাদের কর্মকা-ের কারণে পাকিস্তান সরকার তাদের নিষিদ্ধ করেছিলো। এই জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদির ফাঁসির আদেশও হয়েছিলো। সুতরাং আমরা তাদের ভূমিকা অনেক আগে থেকেই বিতর্কিত দেখতে পাই।
দেখুন, জামায়াতের কর্মকা-ের কারণে পাকিস্তান সরকার তাদের
নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলো। কিন্তু ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কারণে মুক্তিযুদ্ধের সময় আবার তাদের কর্মকা- বা ভূমিকা চলে গেলো পাকিস্তানের পক্ষে। তারা বাঙালিদের গণহত্যায় অংশ নিলো, নারীর সম্ভ্রমহানির কাজে অংশ নিলো, লুটপাট থেকে শুরু করে সব ধরনের অপকর্মে অংশ নিলো। যেটা আজ আধুনিক সমাজের ভাষায় মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, সেই অপরাধে জড়িত হয়ে গেলো। এর মাধ্যমে আমরা দেখলাম রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
এই প্রেক্ষাপটে আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার থাকা উচিত নয়। কারণ ধর্মীয় রাজনীতি দিয়ে তারা জনগণের মঙ্গলের বা মুক্তির জন্য কিছু উপহার দিতে পারেননি। অনেক আগে থেকেই শুধু আমরা না, মানবতাবাদী মানুষরাও বলে আসছিলো, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার, রাষ্ট্র সার্বজনীন। এই ধারাটা রক্ষা করা উচিত ছিলো। এই প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে দেখবো, এই দলগুলোর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের পরে সঙ্গত কারণে ’৭২-এর সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো এবং যথাযথভাবে এই দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।
এখন তারা তাদের স্বপক্ষে বেশকিছু যুক্তি নিয়ে আসে। আমি তাদের সেই সকল যুক্তির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমি পরিষ্কার করতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের পরে যে সংবিধান আমরা রচনা করলাম সেটার প্রেক্ষাপট কী ছিলো। এটা ভাবলে ঠিক হবে না যে, মুক্তিযুদ্ধ চলে গেছে আর হঠাৎ করে একটি সংবিধান চলে আসছে। সেটা কিন্তু নয়। প্রকৃত অর্থে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়েছে সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই। ব্রিটিশের দু’শ বছর এবং এরপর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৪ বছর ধারবাহিক সংগ্রামে আমরা ৯ মাসের যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করেছি। ফকির বিদ্রোহ, সন্যাস বিদ্রোহ, কৃষক আন্দোলনসহ সেই দু’শ বছরের আন্দোলন সংগ্রামে বিভিন্ন সময়ে যে এজেন্ডাগুলো এসেছিলো সেগুলোর সম্মিলিত একটি রূপই হলো ’৭২-এর সংবিধান।
এখন গণপরিষদে কে ছিলো, স্বাধীনতার পরে সেই গণপরিষদ বসেছিলো কিনা, গণভোট হয়েছিলো কিনা এসব প্রশ্ন একেবারেই অবান্তর বলে মনে করি। তবে এটা ঠিক সংবিধানে কিছু অপূর্ণতাও ছিলো। যেমন বাঙালি ছাড়াও অনেকগুলো জাতিসত্ত্বা রয়েছে তাদের স্বীকৃতি দিতে পারিনি, সংসদে নারী আসন আরো বাড়ানো এবং তাদের সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া দরকার ছিলো; অন্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া উচিত ছিলো। এসব অপূর্ণতার মাঝেও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধের যে কথা সংবিধানে বলা হয়েছিলো, আমি মনে করি তা যথার্থই ছিলো এবং এখনও এটা প্রাসঙ্গিক।
প্রাসঙ্গিকতায় সাপ্রতিক সময়ে যদি দেখি তাহলে দেখবো, ধর্মের নাম দিয়ে যারা রাজনীতি করছেন, তারা বিভিন্ন ইস্যুতে উষ্কানি দিচ্ছেন, সাম্প্রদায়িকতা ছাড়াচ্ছেন। তারা রাষ্ট্র মানেন না, রাষ্ট্রের নীতিমালা মানেন না, কোর্ট-কাচারী মানেন না। তারা কিছুই মানেন না। তারা রাজপথে থেকে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তারা বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত হয়ে পড়েছেন।
ইসলামের একটি অন্যতম বিষয় হলো সাম্যের কথা বলা। কিন্তু তারা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে সেই সাম্যের মধ্যে থাকেনি এবং সাম্য প্রতিষ্ঠায়ও কোনো ভূমিকা রাখেনি। যেমন শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকাবার আগে তার মজুরি দেয়ার কথা, গরিবের প্রতি যে দরদ থাকার কথা সেটা কিন্তু থাকেনি। বরং এরা যখন শিল্পমন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলো, তখন আদমজি বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা দেখেছি, শ্রমিকরা না খেয়ে থাকছে কিন্তু এদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরা ফুলে ফেঁপে ওঠছে। বৈষম্যের ধারা তারা
রক্ষা করে চলেছে। তারা যে সম্পদশালী হলো তাতে ইসলাম কায়েমের ধারাবাহিকতা থাকেনি। বরং তারা পুঁজিবাদী অর্থনীতি কায়েম ও তাদের রক্ষায় পাহারাদার হিসেবে কাজ করে চলেছে। এখন এই ধারা রক্ষা করার জন্যই কিন্তু তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছে। এই ধারা রক্ষা করার জন্যই যেনতেনভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তারা একদিকে নারী নেতৃত্ব হারামের কথা বলে নিজেরাই তা মানছেন না। আবার নারী নেতৃত্বের সাথে থেকে ক্ষমতার ভাগাভাগি করেছে। আমি যেটা বলতে চাইছি, তারা মুখে যে কথা বলছে তা বাস্তবের সাথে যায় না। বরং তারা শোষনের অর্থনীতির পাহারাদারের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
আপনারা জানেন, সম্প্রতি হেফাজতের নামে তারা যে কাজটি করলো, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ালো, সহিংস দাঙ্গার সৃষ্টি করলো; আমরা মনে করি এই হেফাজতে ইসলাম কিন্তু ইসলামের হেফাজত নয়, জামায়াতে ইসলামের হেফাজত। এদের সাথে বিদেশি সংগঠনের সাথে আঁতাত রয়েছে।
ইসলামী দল বলতে আমি বারবার যদিও জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করছি, এটা প্রতিকী অর্থে। যেটা বলছিলাম, এদেরকে কখনো প্রকৃত অর্থে ইসলামের রক্ষার ভূমিকায় দেখি না। বরং ক্ষমতা দখলের ভূমিকায়ই বেশি দেখছি। ইসলামের কাজ হবে দাওয়াত দেয়া, ধর্ম পালন করা। তারা কেন ক্ষমতার পিছনে ছুটবে? তা না করে এখন তারা যা করছে তা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, বিরোধী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলা হয়েছে একটি স্বাধীনতার কথা। স্বাধীনতা মানে শুধু একটি পতাকা বা রাষ্ট্র নয়। স্বাধীনতা মানে, গণতন্ত্রের স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তির স্বাধীনতা। যেটা ইসলাম ধর্মেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু তারা এর থেকে সরে গিয়ে যা করছে বা করেছে এসব এখন সবারই জানা। এজন্যই আমাদের দাবি আরও জোরালো হয়েছে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে।
তবে এর মানে কিন্তু ধর্মহীনতা নয়। আমরা বারবার যে কথাটি বলে আসছি তা হলো, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকা উচিত নয়। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে একজন ধার্মিক মানুষকে তার ধর্ম পালনের ব্যবস্থা করে দেয়া এবং সকল ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা। রাষ্ট্রের উচিত নয় বিশেষ কোনো ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করা বা বিশেষ কোনো ধর্মের পক্ষ নেয়া।
এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে যে বিতর্ক তোলা হয়েছে, তা অবান্তর। চেতনা বলতে আপনাকে দেখতে হবে তখনকার প্রেক্ষাপট। তখন আমাদের উপর শোষণ করা হতো। এই শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়া ছিলো মূল কারণ। এখানে শুধু একটি স্বাধীন ভূখ- পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। তাই এই অর্থনৈতিক কার্যক্রম এখন যে পুঁজিবাদের নিয়মে হচ্ছে এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো এর পাহারাদারের ভূমিকা পালন করছে, তা ওই শোষণ পদ্ধতির বাইরে নয়।
আমাদের দেশের ইসলামি দলগুলো যে অর্থনৈতিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন তা বর্তমান পদ্ধতিই। দেখুন ধর্মের ভিত্তিতে কোনো রাষ্ট্র হয় না। তাহলে সমগ্র আরব একটি রাষ্ট্র থাকতো। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তো আরও ভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান যুদ্ধ করেছে। সবার রক্তই লাল। ঐতিহাসিককাল থেকেই বাংলার মানুষ পূজা-পার্বন, ঈদ-উৎসব সবগুলোই সম্মিলিতভাবে পালন করে আসছে। ফলে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের দাবি এখান থেকেই।
সমাজতন্ত্রের কথায় আসি। তৎকালীন পশ্চিমারা আমাদের শোষণ করতো। এই শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়াই যেহেতু বড় বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছিলো, সেটা কোন পদ্ধতির হবে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেহেতু তৎকালীন চলমান পদ্ধতি শোষনেরই পদ্ধতি
সেহেতু সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থাই সময়ের দাবি হয়ে ওঠে। এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রূপ নেয়। আমি মনে করি সমাজতন্ত্র মানে সাম্যের ধারা। এটা প্রকারান্তরে ইসলামরও কথা। সাম্যের জায়গায় ইসলাম ও সমাজতন্ত্র অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ, মোটেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে তাদের আপত্তি কোনোভাবেই চলে না।
যারা মনে করে, কিছু মানুষ একদিন ঘুম থেকে জেগে ওঠে রাইফেল হাতে তুলে নিয়েছে আর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে, তারা ওই জাতীয় কথা বলতে পারে। দু’শ বছরের ধারাবাহিকতায় ধর্মনিরপেক্ষতা এসেছে এবং পাকিস্তানের শোষণের ফলে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়।
এখন ইসলামের নামে মাওলানা সাহেবরা যে ব্যাখ্যা দেয় তাতে সাম্যের অর্থনীতির কোনো ধারা উপস্থাপন এবং ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। বরং তারা যে ব্যাখ্যা দেন তা পুঁজিবাদী অর্থনীতিরই সমর্থিত ব্যাখ্যা। এখন যদি তারা সবক্ষেত্রে যথাযথ ভাবে ইসলামের চর্চা করতেন, তাহলে আমরা হয়তো কিছু উপকৃত হতাম। কিন্তু তারা তা না করে পুঁজিবাদের ধারায় চলে আসছেন। এখন ইসলামে যদি সাম্যের অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দেয়া থাকে তাহলে তারা তা হাজির করুক।
সমাজতন্ত্রে শোষণের অবসান নিয়েই মূলত কথা বলা হয়। এখানে পরিষ্কার করতে হবে উৎপাদন যন্ত্রের মালিকানা কার থাকবে। এখানে মনে রাখতে হবে, উৎপাদন যন্ত্রের মালিকানা বিশেষ কারো হাতে রাখলে শ্রমিকের শোষণ বন্ধ হবে না। এটা সমাজ তথা রাষ্ট্রের হাতে যদি থাকে তাহলেই সম্ভব শোষণ বন্ধ করা।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হজরত ওমর ফারুক রা.-এর সময়ে একটি এলাকা দখলের পর সাহাবিরা একেকজন একেকটি গাছ নিজেদের দাবি করতে চাইলো। কিন্তু হজরত ওমর বললেন, তা হবে না। এগুলো কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি হবে না। যখন এসব গাছে ফল হবে তা উত্তোলন করে যার যার প্রয়োজন অনুসারে বণ্টন করা হবে।
আর সংবিধান কারা প্রণয়ন করেছে তা স্বাধীনতাবিরোধীদের নিকট থেকে ছবক নিতে হবে না। সংবিধান এদেশের মানুষই করেছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষরই প্রণয়ন করেছেন। সুতরাং গণভোটের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করি না। সেই ’৭২ সংবিধানই ছিল যথাযথ। বরং পঞ্চদশ সংশোধিত সংবিধানের মাধ্যমে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। যদিও ইদানিং গণভোটের আলোচনা ওঠে আসছে। কিন্তু গণভোট সবক্ষেত্রে প্রয়োজন বলে মনে করি না। আর এখন সংবিধানে গণভোট নেই। তবে বড় বড় বিষয়ে গণভোট হতে পারে যারা কথায় কথায় গণভোটের কথা বলছে আমার মনে হয় তারা বিশেষ কোােন উদ্দেশ্য নিয়ে বলছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনো বায়বীয় বস্তু নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আলেম-ওলামারা যদি এগিয়ে আসে তাহলে কমিউনিস্ট পার্টির সাথে ঐক্যমত হতে কোনো সমস্যা আছে বলে মনে করি না। তবে রাজনীতিতে যদি ধর্ম নিয়ে আসে সেখানে আমাদের কোনো সমঝোতা হতে পারে না।
……………………………………………………………………………
বিপক্ষের যুক্তি ২
গাজী আতাউর রহমান
সহকারী মহাসচিব, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
গাজী আতাউর রহমান
সহকারী মহাসচিব, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
সিপিবির সভাপতিম-লির সদস্য প্রবীণ রাজনীতিক জনাব হায়দার আকবর খান রনো ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বা ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে সুনির্দিষ্ট ৬টি কারণ উল্লেখ করেছিলেন। ইসলামি রাজনীতি মানুষের জন্যে, সমাজের জন্যে এবং রাষ্ট্রের জন্যে কী ক্ষতি করছে বা কী ধরনের ক্ষতি করতে পারে, তা তিনি বলেননি। গণতান্ত্রিক বিশ্বে এভাবে মানুষের
রাজনৈতিক অধিকার বা আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অধিকার কেড়ে নেয়ার কোনো নজির আছে কিনা তাও তিনি উল্লেখ করেননি। প্রগতিশীল রাজনীতির দাবিদার হিসাবে তিনি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের বিজ্ঞানসম্মত কোনো লজিকও উপস্থাপন করেননি। যে ৬টি কারণ তিনি দেখিয়েছেন তার সবগুলোই হলো সাংবিধানিক, আইনগত এবং নিজস্ব ধারণাপ্রসূত একতরফা সিদ্ধান্তমূলক।
সংবিধানের সব বিষয় এবং আদালতের সকল রায়ই যে মানুষের জন্য কল্যাণকর নয়, এ বিষয়ে মনে হয় কোনো চিন্তাশীল মানুষের দ্বিমত থাকার কথা নয়। এসব নিয়ে নোংরা রাজনীতি চলে, কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্কে জাতির কোনো মৌলিক ইস্যুতে রেফারেন্স হিসেবে এগুলো ব্যবহার করার উপযোগিতা রাখে বলে আমার মনে হয় না। তারপরও বিগত সপ্তাহে আমি জননেতা জনাব রনো সাহেবের উত্থাপিত প্রতিটা বিষয়ে জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছি।
আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দিত ও উপকৃত হতাম রনো সাহেব যদি নিজে আমার জবাবগুলোর যুক্তিপূর্ণ পাল্টা জবাব দিতেন। কিন্তু তিনি বিতর্কে অস্বীকৃতি জানানোয় কিছুটা হতাশ হলাম। তিনি বিতর্ক না করার যে কারণ দেখিয়েছেন তাতে ব্যথিত না হয়ে পারলাম না। রনো সাহেবকে আমি সবিনয়ে বলতে চাই- আপনি আমাকে বুঝালেন কোথায়? আপনি তো আপনার সিদ্ধান্ত আমার ওপর চাপিয়ে দিতে চাইলেন। আপনারা, দেশের শীর্ষ রাজনীতিকরা, যদি ভিন্নখাতের লোকদের সঙ্গে মত ও যুক্তির আদান প্রদান করতে না চান তাহলে নাগরিকদের মধ্যে আদর্শগত বিস্তর ফারাক মিটবে কী করে?
যাই হোক, হায়দার আকবর খান রনো অস্বীকৃতি জানালেও তার দলের প্রভাবশালী সদস্য জনাব রুহিন হোসেন প্রিন্স আমার দেয়া জবাব খ-ন করেছেন। কিন্তু সমস্যা হলো তিনি প্রসঙ্গটি ভিন্ন দিকে নিয়ে গেছেন। প্রসঙ্গ ছিলো ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি কি নিষিদ্ধ হওয়া উচিত?’ কিন্তু তিনি বললেন, ‘রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়া দরকার।’
বিষয় দুটির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার কিন্তু এদেশের বড় বড় সবগুলো রাজনৈতিক দলই করে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত সবাই করে। সাপ্তাহিক লিখনীর প্রসঙ্গ সেটি ছিলো না। তবু আমি ধরে নিচ্ছি জনাব রুহিন হোসেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি তথা ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষেই যুক্তি দিয়েছেন এবং আমার যুক্তি খ-নের চেষ্টা করেছেন।
জনাব রুহিন হোসেনের পুরো বক্তব্যটি থেকে আমি যা বুঝতে পেরেছি তা হলোÑ
(১) বিতর্কটি ছিলো একটি আদর্শিক বিষয় নিয়ে, কিন্তু তিনি তা মূল্যায়ন করেছেন দলীয় রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে।
(২) তিনি জামায়াতে ইসলামের দায় ইসলামের ওপরে চাপালেন।
(৩) ৭২-এর সংবিধান প্রসঙ্গে তিনি আমার বক্তব্যকে খ-নের চেষ্টা করেছেন।
(৪) ধর্মের নাম নিয়ে যারা রাজনীতি করছে, তার দাবিÑ তারা সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে, তারা রাষ্ট্রের আইন মানে না, রাষ্ট্র মানে না।
(৫) তিনি দাবি করছেন ইসলামি দলগুলো ইসলামের অর্থনৈতিক সাম্যনীতি মানে না, গরিবের জন্য কিছু করে না, তারা পুঁজিবাদীদের পাহারাদার।
(৬) ইসলামি দলগুলো সঠিকভাবে ধর্ম পালন করেন না, শুধু ক্ষমতার পিছনে দৌড়ান।
(৭) ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্মের ভিত্তিতে কোনো রাষ্ট্র হয় না। সব ধর্মের লোক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে।
(৮) সমাজতন্ত্রও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিলো। সমাজতন্ত্র ও
ইসলাম অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ।
(৯) তিনি জানতে চেয়েছেন, ইসলামে সাম্যের অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা আছে কিনা। তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রা. এর সাম্যনীতির উদাহারণ পেশ করেছেন।
১০) সর্বশেষে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আলেম ওলামারাও একমত হতে পারেন বলে মনে করেন।
মৌলিকভাবে এ বিষয়গুলো ছাড়াও প্রাসঙ্গিকভাবে আরও কিছু বিষয় এসেছে তার আলোচনায়। তাছাড়া কিছু স্ববিরোধী কথাও প্রকাশ পেয়েছে তার বক্তব্যে। সবগুলো বিষয়েই আমাদের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
প্রথমত রুহিন সাহেব একটা আদর্শের রাজনীতি করেন, আমরা অন্য একটা আদর্শের রাজনীতি করি। আমার মনে হয় আমাদের উদ্দেশ্য একটাই; নিজের ও মানুষের কল্যাণ করা। মানুষের কল্যাণের জন্যই পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম ও আদর্শ। সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন আদর্শ সৃষ্টির বহু আগে থেকেই ধর্মের সৃষ্টি। আর ইসলাম হলো পৃথিবীতে আগত সর্বশেষ ধর্ম। যাকে পবিত্র কালামে পাকে ‘দ্বীন’ বলা হয়েছে। ‘দ্বীন’ অর্থ হলো জীবনব্যবস্থা। পবিত্র কোরআন ইসলাম নামক জীবনব্যবস্থাকেই একমাত্র সঠিক, কল্যাণকর এবং পূর্ণাঙ্গ বলা হয়েছে। ইসলাম নামক এই আদর্শকে অপরাপর আদর্শের ওপর বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এর অনুসারীদেরকে পবিত্র কালামে পাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এই আদর্শের আলোকে একটি সমাজ, একটি রাষ্ট্র এবং একটি জাতি প্রতিষ্ঠা করে করে দেখিয়ে গিয়েছেন আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ স.। তারই আদর্শে পরবর্তীতে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন হযরত আবু বকর, ওমর, উসমান, আলী রা.সহ সাহাবায়ে কেরাম; পৃথিবীর ইতিহাসে যা খোলাফায়ে রাশেদার স্বর্ণযুগ হিসেবে খ্যাত।
ইসলাম নামক জীবনব্যবস্থার অনুসারী হিসেবে আমরা দুনিয়ায় শান্তি এবং পরকালে মুক্তি নিজের জন্যও চাই এবং অন্য মানুষদের জন্যও চাই।
এ জন্যেই আমরা পবিত্র কোরআনে পাকের নির্দেশের আলোকে প্রিয় নবী মুহাম্মদ স. এর আদর্শে সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণে ব্যক্তিজীবন পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, আন্তর্জাতিক জীবন তথা জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আমরা ইসলাম নামক জীবনাদর্শকে চর্চা ও প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
রুহিন সাহেবরা যেমন সমাজতান্ত্রিক আদর্শের আলোকে সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চান, আমরা চাই ইসলামি আদর্শের আলোকে সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তুলতে। রুহিন সাহেবদের কাছে যেমন সমাজতান্ত্রিক আদর্শ শ্রেষ্ঠ, আমাদের কাছে ইসলামের আদর্শ শ্রেষ্ঠ। আমাদের বিতর্ক এই আদর্শ নিয়ে, দল নিয়ে নয়।
দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ভুল করতে পারে, ব্যক্তি হিসেবে জনাব মওদুদী ভুল করতে পারেন, কিন্তু আদর্শ হিসেবে ইসলাম কী দোষ করেছে?
রুহিন সাহেবের কথা যদি মেনেও নেই যে, এদেশের কোনো ইসলামি দলই সঠিকভাবে ইসলাম মানে না, তাহলে তো তাকে পাল্টা প্রশ্ন করতে হয়Ñ এদেশের কোনো গণতান্ত্রিক দল কি সঠিকভাবে গণতন্ত্র মানে? আপনারা কমিউনিস্টরা কি সঠিকভাবে সমাজতন্ত্র মানেন? আপনারাই তো ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের মতো বুর্জোয়া সংগঠনের সঙ্গে মিলে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিলেন। আপনাদের সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে কি কোনো দোষ ত্রুটি নেই? ইসলাম সঠিকভাবে না মানার কারণে যদি ইসলামি সংগঠন নিষিদ্ধ করতে হয়, তাহলে গণতন্ত্র না মানার কারণে তো গণতান্ত্রিক দল এবং সমাজতন্ত্র সঠিকভাবে না মানার
কারণে তো সমাজতান্ত্রিক দলও সেই যুক্তিতে নিষিদ্ধ করতে হয়।
জামায়াত যে বিতর্কিত, আমরা তা কখনও অস্বীকার করিনি। কিন্তু রুহিন সাহেব জামায়াতকে বিতর্কিত প্রমাণের জন্য স্ববিরোধী যুক্তি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংঘর্ষের দায়ে পাকিস্তান আমলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো এবং জামায়াতের নেতা মাওলানা মওদুদীর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলো।
তাহলে কি পাকিস্তান সরকার যা করেছে বাংলাদেশ সরকারকেও তাই করতে হবে? পাকিস্তান সরকার তো আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলো। তাছাড়া তিনি কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের যে প্রসঙ্গ টানলেন এখানেও তার স্ববিরোধিতাই প্রকাশ পেয়েছে। কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের জন্মের ইতিহাস রুহিন সাহেব হয়তো জানেন না। যেই ইংরেজ শাসনের দুইশ বছরের ইতিহাসের কথা রুহিন সাহেবই বলেছেন, সেই ইংরেজ সা¤্রাজ্যবাদীরাই কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে সৃষ্টি করেছে। ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম রূপকার ভারতের শাহ আবদুল আজিজ র. যখন ইংরেজশাসিত ভারতবর্ষকে ‘দারুল হরব’ ঘোষণা করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার ফতোয়া ঘোষণা করলেন, তখন মুসলমানদের জিহাদি তৎপরতায় দিশেহারা হয়ে ইংরেজ সা¤্রাজ্যবাদীরা পাঞ্জাবের গোলাম আহমদ নামের এক ভ-কে মিথ্যা নবীর দাবিদার বানালো। এই গোলাম আহমদ কাদিয়ানি ইংরেজদের প্ররোচনায় মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্যে নতুন নবী দাবি করলো এবং নতুন শরিয়তে মুসলমানদের জন্য জিহাদ অবৈধ ঘোষণা করলো। এই হলো কাদিয়ানিদের জন্মের ইতিহাস। কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের হেড কোয়ার্টার এখনও ইংরেজদের রাজধানী লন্ডনে। বিশ্বের যেখানেই কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ওঠে সেখানেই ইঙ্গ-মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। তবে শেষতক পাকিস্তানে কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছিলো। সেটা শুধু জামায়াতে ইসলামী বা মওদুদীর আন্দোলনের কারণে নয়। বরং মরহুম মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরী ও মরহুম মুফতি মাহমুদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা পাকিস্তানের সর্বস্তরের হক্কানী ওলামায়ে কেরামের তীব্র আন্দোলনের ফলে।
এখানে মুফতি মাহমুদের কথা বলতে হয়; যিনি বর্তমানে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য মাওলানা ফজলুর রহমানের পিতা। তিনি ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান জামিয়াতে ওলামায়ে ইসলামের সভাপতি ছিলেন। তিনি গোটা পাকিস্তানের একটি প্রভাবশালী ইসলামি দলের সভাপতি হয়েও পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরোধিতা করেছিলেন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। যে কারণে বাংলাদেশে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অনেক আলেম সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
১৯৭২-এর সংবিধান নিয়ে কিছু যৌক্তিক প্রশ্ন উত্থাপন করায় রুহিন সাহেব আমাকে স্বাধীনতাবিরোধীদের কাতারে ফেলেছেন। আমরা জানতাম শিক্ষিত মানুষ কমিউনিস্ট পার্টি করে। আর কমিউনিস্টরাও নিজেদেরকে প্রগতিশীল দাবি করে। যাকে-তাকে স্বাধীনতাবিরোধী আর রাজাকার বলা তো একটা বিশেষ দলের নেতা-কর্মীদের খাসলত। তারা তো মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর অব. এম.এ জলিলকেও স্বাধীনতাবিরোধী বলেছে, স্বাধীনতার ঘোষক এবং সেক্টর কমান্ডার জেনারেল জিয়াউর রহমানকেও স্বাধীনতাবিরোধী বলেছে আর এখন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে নব্য রাজাকার বলছে। রুহিন হোসেন প্রিন্সের মতো শিক্ষিত নেতাদের মুখ থেকে এ জাতীয় লাগামহীন বেফাঁস কথা বেমানান। এখন কেনো, আরও শত বছর পরও এদেশের মানুষ জানতে চাইতে পারে স্বাধীন দেশের প্রথম সংবিধান কারা এবং কীভাবে রচনা করেছিলো। একটি সদ্য স্বাধীন দেশের প্রথম
সংবিধানের পক্ষে যথাযথ প্রক্রিয়ায় জনমত যাচাই হয়েছিলো কিনা, তা জানতে চাওয়া কোনো অপরাধ নয়।
তিনি বলেছেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছে সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই। এ কথার সঙ্গে আমরাও একমত। শুধু তাই নয় ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম আন্দোলন শুরুই করেছে ভারত উপমহাদেশের আলেমরা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে আলেমদের সীমাহীন আত্মত্যাগ ইতিহাসে স্বাক্ষী হয়ে আছে। ব্রিটিশরা ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলো মুসলমানদের হাত থেকে। তাই ভারতীয় মুসলমানদের ওপরই ব্রিটিশরা শোষণ-নির্যাতন বেশি চালিয়েছিল। শেষ সময়ে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যবদ্ধভাবে ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন গড়ে তুললেও শুরুতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সহযোগিতা করেছিলো। এ নিয়ে ভারতবর্ষের হিন্দু-মুসলমানদের মাঝে আস্থা-বিশ্বাসের সঙ্কটও সৃষ্টি হয়েছিলো। পরবর্তীতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রবাদতুল্য নেতা শায়খুল ইসলাম মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী অপর ব্রিটিশবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা করমচাঁদ গান্ধীকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দিয়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সেতুবন্ধন রচনা করেছিলেন।
তবে রুহিন সাহেব যে দাবি করেছেন, ‘দুশো বছরের আন্দোলন সংগ্রামের এজেন্ডার সম্মিলিত একটি রূপই হলো ’৭২-এর সংবিধান।’ এটা একটা হাস্যকর দাবি। বরং ব্রিটিশ-প্রবর্তিত যাবতীয় আইন কানুন, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অর্থনীতিকে ’৭২-এর সংবিধানের মধ্য দিয়ে শুধু স্বীকৃতিই দেওয়া হয়নি, নব-উদ্যমে তা প্রতিষ্ঠারও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া দুইশ বছরে ইসলাম ও মুসলমানদের ব্রিটিশরা যে ক্ষতি করতে পারেনি ’৭২-এর সংবিধানের মাধ্যমে তাই করা হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে ধর্মীয় রাজনীতি তথা ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ ব্রিটিশরা সাংবিধানিকভাবে তা করার সাহস করেনি। রুহিন সাহেবরা এখন যাই বলুক, ’৭২-এর সংবিধানের মূলনীতিগুলো যে অন্যদের দ্বারা চাপিয়ে দেয়া, তা তাদের স্বগোত্রীয়দের বক্তব্য থেকেই প্রকাশ পেয়েছে।
বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং এককালের প্রখ্যাত বামপন্থী চিন্তানায়ক ও মুক্তিযুদ্ধ বিশ্লেষক আহমদ ছফা তার রচিত ‘বেহাত বিপ্লব ১৯৭১’-এসব কথারই স্বাক্ষী দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন :
‘এদেশের রুশ সমর্থকরা ক্রেমলিনের নেতৃবৃন্দকে বুঝিয়েছিলেন যে শেখ মুজিবুর রহমানের ইমেজ সামনে রেখেই, ভারত রাষ্ট্রের সহায়তায় বাংলাদেশে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাই রাশিয়াও চাপ প্রয়োগ করে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় মূলনীতির সঙ্গে সমাজতন্ত্র শব্দটি যোগ করিয়ে দিয়েছিলো। ভারতের মতো পুঁজিবাদী একটি দেশের একেবারে উপান্তে পুঁজিবাদ ক্ষমতায় আসীন থাকার সময় কী করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, এবং এই ধারণা হাস্যকর কিনা, সেই সময় আওয়ামী লীগারদের তা ভেবে দেখার বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি।
ভারত থেকে পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মস্কোর পরোক্ষ সাহায্য সহযোগিতা এবং সমর্থনের পথ বেয়ে ন্যাপের মস্কোপন্থী অংশ এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি অঘোষিতভাবে আওয়ামী লীগের ঘাড়ের ওপর সিন্দাবাদের বুড়োর মত চেপে বসে। আওয়ামী লীগ ঝেড়ে ফেলার জন্য যতই কাঁধ ঝাড়া দিয়েছে তারা ততই শক্ত হয়ে বসেছে। বারবার ভারত-রাশিয়ার মিলিত চাপের কাছে আওয়ামী লীগকে নতি স্বীকার করতে হয়েছে। এভাবে জনগণের সঙ্গে সম্পর্কবিবর্জিত সংখ্যালঘিষ্ঠ দল হওয়া সত্ত্বেও মস্কোপন্থী ন্যাপ এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি অভিভাবকদের ¯েœহে সিদ্ধান্ত প্রণয়নে অংশগ্রহণ করতে পেরেছে। স্বাধীনতার পরে তাদের প্রভাব খর্ব না হয়ে আওয়ামী
লীগের ওপর উত্তরোত্তর বৃদ্ধিলাভ করেছে। এমনকি তাদেরই পরামর্শে এবং সক্রিয় সমর্থনে আওয়ামী লীগ দলটি ভেঙে বাকশাল নামে তিন দলের একটি সম্মিলিত ফ্রন্ট গঠন করে শেখ মুজিবুর রহমানকে মৃত্যুর পথ প্রশস্ত করতে হয়েছে।’
আরেক কমিউনিস্ট তাত্ত্বিক, সমাজচিন্তক ও খ্যাতিমান লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ ‘আবু জাফর শামসুদ্দীন স্মৃতি বক্তৃতা ২০০৩’ এর এক জায়গায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশ কি সেদিন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হতে চেয়েছিলো? সেদিন বাংলাদেশের ধর্মাবলম্বী নির্বিশেষে বাঙালি জনগণ চেয়েছিলো অতীতের সাম্প্রদায়িকতার বিষ ধুয়ে-মুছে একটি সাম্পদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে, সেক্যুলার হতে নয়।
সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সেক্যুলারিজমের কোনো এজেন্ডা ছিলো না। সেক্যুলারিজম ও নন-কমিউনালিজমের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ, কিন্তু দুটি এক জিনিস নয়। অনেকেই এদের এক করে গুলিয়ে ফেলেন এবং ভুল করেন সেখানেই। পৃথিবীতে নন-কমিউনাল রাষ্ট্র আছে অনেক, কিন্তু সেক্যুলার রাষ্ট্রের সংখ্যা খুব কম। শুধু কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলোই সত্যিকারের সেক্যুলার রাষ্ট্র।’
জনাব আবুল মকসুদ আরও বলেছেন, ‘সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমার মনে হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতারা সেদিন চেয়েছিলেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে। ধর্মের কারণে সেখানে থাকবে না কোনো বিরোধ ও ভেদাভেদ, সকল ধর্মাবলম্বীই সেখানে ভোগ করবে সমান অধিকার। তবে সেখানে ইসলামি সংস্কৃতির থাকবে প্রাধান্য, যেমন ধর্মনিরপেক্ষ বলে পরিচিত ভারতে হিন্দুধর্মের আধিপত্য।’ আহমদ ছফা এবং সৈয়দ আবুল মকসুদের বক্তব্য থেকেই বুঝা যায় ’৭২-এর সংবিধান প্রণয়ন সংক্রান্ত রুহিন হোসেন প্রিন্সের দাবি ও যুক্তি সঠিক নয়।
রুহিন সাহেব বলেছেন, ধর্মের নামে যারা রাজনীতি করছে তারা সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে, তারা রাষ্ট্রের আইন মানে না, তারা রাষ্ট্র মানে না।
নিজধর্মের প্রচার বা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার নাম সাম্প্রদায়িকতা নয়, বরং সম্প্রদায়িকতা হলো ভিন্ন ধর্ম বা ভিন্ন জাতির প্রতি অন্যায় আচরণ। সে অর্থে বাংলাদেশের কোনো ইসলামি সংগঠন ভিন্ন ধর্মের বিরুদ্ধে বা ভিন্ন ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ করেছে এর কোনো নজির নেই। এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি ইসলামি সংগঠনগুলো যতটা সহনশীল, তথাকথিত গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল দাবিদাররাও ততটা সহনশীল নয়। বাংলাদেশ কোনো ইসলামি সংগঠনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন সম্পদ ও ইজ্জতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত দেশের যতগুলো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তা বিশ্লেষণ করলেই বুঝা যাবে এ ঘটনাগুলো কোন আদর্শের কর্মীরা ঘটিয়েছে।
ইসলাম সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে না। ইসলামের দৃষ্টিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা সংখ্যাগুরু মুসলমানদের জন্য পবিত্র আমানত। তাদের জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধান করা মুসলমানদের পবিত্র কর্তব্য। এ বিশ্বাস ও চেতনাবোধ না থাকলে ইসলামি সংগঠন তো দূরের কথা প্রকৃত মুসলমান দাবি করারই অধিকার থাকে না। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা তো দূরের কথা জাতীয়তাবাদী সাম্প্রদায়িকতাও ইসলাম সমর্থন করে না। আজ বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নিয়ে যে সংকীর্ণতা ও বিদ্বেষ চলছে ইসলাম এর কোনোটাই সমর্থন করে না। ইসলাম বলে পৃথিবীর গোটা মানবম-লী এক জাতি। সব মানুষ এক পিতা আদমের সন্তান। ইসলাম সব সাম্প্রদায়িকতা ও জাতীয়তাবাদের উর্ধ্বে এক মানবতাবাদী বিশ্বজনীন আদর্শ। বর্ণ, ভাষা, গোত্র, ভূগোলভেদে ইসলাম মানুষে মানুষে কোনো
ভেদাভেদ ও বিদ্বেষ সমর্থন করে না। যারা ইসলামের ওপর সাম্প্রদায়িকতার অপবাদ দেন তারা ইসলাম বুঝেন না। কোনো দেশ বা কোনো দল বিশেষের চরিত্র দিয়ে ইসলামকে বিশ্লেষণ করলে অবিচার করা হবে।
আর যারা এদেশে ইসলামি রাজনীতি করে তারা আইন মেনে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই করতে চায়। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথ রুদ্ধ করে দিলেই বরং আইন অমান্য করার প্রবণতা শুরু হবে, যা রাষ্ট্রের জন্য কিছুতেই শুভ হবে না।
ইসলামি দলগুলো ইসলামের অর্থনৈতিক সাম্যনীতি মানে না, গরিবের জন্য কিছু করে না, পুঁজিবাদের পাহারাদারÑ তার এসব দাবি সঠিক নয়। বরং ইসলামি দলগুলো নিজেরাই গরিব। তারাই বরং সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্যের শিকার। পুঁজিবাদের পাহারা দেয়ার মতো শক্তি সামর্থ ইসলামি দলগুলোর নেই। সেই শক্তি যখন অর্জিত হবে তখন পুঁজিবাদের পাহারা নয় বরং কবর রচনা করবে। আর খোদ ইসলামি রাজনীতিটাই পরিচালিত হয় শোষিত, বঞ্চিত, গরিব, দুঃখী ও মেহনতি মানুষের স্বার্থে।
‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এটা শুধু রুহিন সাহেবদের কথাই নয় এটা আরও অনেকেরই কথা। এখানে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, রাষ্ট্রের মালিক রাষ্ট্রের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালা। তিনি মানুষকে তার খলিফা বা প্রতিনিধি হিসাবে রাষ্ট্র ব্যবহারের অনুমতি বা সুযোগ দিয়েছেন। তবে মানুষ তার খেয়াল খুশিমতো রাষ্ট্র চালাতে পারবে না। তার রাষ্ট্র চালাতে হবে তারই বিধানের আলোকে তারই দেয়া পদ্ধতিতে। মানুষ ইচ্ছা করলেই রাষ্ট্র ধ্বংস করতে পারে না আবার ইচ্ছা করলেই নতুন একটা রাষ্ট্র বা বিশ্ব সৃষ্টি করতে পারে না।
আর ইসলাম একটি সমাজমুখি ধর্ম। ইসলাম একটি কাক্সিক্ষত
সমাজ ছাড়া তার সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারে না। অতএব ইসলাম ধর্ম শুধু ব্যক্তিগত চর্চার বিষয় নয়। এর বেশিরভাগ কর্মসূচিই সামাজিক ও রাষ্ট্রিক। তবে ইসলাম অন্য কারও ধর্মচর্চায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় না বা ধর্মাবলম্বীকে তার ধর্মকর্ম পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকে বৈধতা দেয় না। সব ধর্মের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে বলেই তো আমরা বলি কোনো ধর্মের মানুষের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অধিকার বা স্বাধীনতা কেড়ে নেয়াটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী।
সমাজতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কীভাবে ঢুকেছিলো তা প-িত আহমদ ছফার জবানি থেকে পূর্বেই তুলে ধরেছি। আর সমাজতন্ত্র ও ইসলামের অর্থনৈতিক সাম্যনীতি যদি অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তাহলে তো ভালো কথা। সমাজতন্ত্রীদের তাহলে ইসলামি রাজনীতির ব্যাপারে এতো অ্যালার্জি কেনো? এদেশের মানুষ যদি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা চায় তাহলে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। আর যদি ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা চায় তাহলে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে। এটাই তো যুক্তির কথা। ইসলামপন্থীরা তো তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলে না, তাহলে তারা কেনো ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলেন? তাদের আদর্শ যদি কল্যাণকর ও গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে এতো ভয় কিসের? আইন করে ভিন্নমতকে দাবিয়ে রাখার ইচ্ছা তো প্রগতিশীলতা নয়।
…………………………………………………………………………………….
জনাব গাজী আতাউর রহমানের প্রদত্ত জবাবের পুরো অংশ স্থান সংকুলানের অভাবে এ সংখ্যায় ছাপা সম্ভব হলো না। তার প্রদত্ত জবাবের বাকি অংশ আগামী সংখ্যায় প্রকাশ করা হবে। পাঠকের পাঠানো মতামতও ছাপা হবে আগামী সংখ্যায়। -সম্পাদক
গাজী আতাউর রহমান সাহেবের দাতভাঙ্গা জবাবে রুহিন হোসেন প্রিন্সকেও পরবর্তিতে খুজে পাওয়া যায় কি না সেই অপেক্ষায় রইলাম।যারা অন্যদের উচ্ছিস্ট ভোগ করে মানবরচিত মতবাদ প্রতিস্ঠার আন্দোলন করে তারা যে কি জবাব দিবে বা কি বাহাস করবে তা সচেতন মানূষ ভাল ভাবেই জানে।
সাপ্তাহীক লিখনীকে এবং গাজী আতাউর ভাইকে অভিনন্দন।
আপনাকে শুকরিয়া।
তবে লিখণীর লিংকটা দিলে আরো সুন্দর হতো।