রাজধানীতে মহিলাদের জন্য পৃথক বাস চালু করা হউক
লিখেছেন: ' মুসাফির' @ মঙ্গলবার, এপ্রিল ৫, ২০১১ (১:০৩ অপরাহ্ণ)
সকাল আটটা বাজে। ফাল্গুন বাসের টিকেট কেটে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাস এর জন্য অপেক্ষা করছি। আমার মত অনেকই অপেক্ষা করছেন। তন্মধ্যে মহিলাদের সংখ্যাও অনেক। প্রায় ১৫ মিনিট পর ১টি বাস আসল কিন্তু বাসের ভিতরে এতই ভীর যে মহিলা যাত্রিত দূরের কথা কোন রকম ধাক্কাধাক্কি করে সর্বোচ্চ ৫-৭ যাত্রি উঠলেন। এই বাসে উঠার সাহস হলনা দরজায় ঝুলে যেতে তাই পরের বাসের অপেক্ষা প্রায় দশ মিনিট পর আর একটি বাস আসল । বাসের ভিতরে যাত্রিদের অবস্থা আগের মতই কিছু যাত্রি নামলেন এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলাম যে ভাবেই হোক বাসে উঠে যাব, কোন রকম ঠেলা ধাক্কা করে উঠে গেলাম কেননা অফিসের সময় খুব হাতে ছিলনা। সাথে সাথে ৪-৫ মহিলা যাত্রিও উঠলেন। কিন্তু গাড়ির ভিতরে তিল পরিমান জায়গা নেই। এই অবস্থায় যখন গাড়ি ব্রেক করে সাভাবিক ভাবেই একজন অপর জনের দিকে হেলে পড়ে। এটা যে কেমন অবস্থা যারা অফিস টাইমে লোকাল গাড়িতে উঠেন তারাই বুঝতে পারবেন। মহিলাদের জন্য পরিবহন সংস্থা যে ৯ টি সিটের ব্যবস্থা করে রেখেছেন তা মহিলা যাত্রির তুলনায় খুবই অল্প। সুতরাং মহিলা যাত্রিরাও পূরুষদের শরীর ঘেসে দাড়িয়ে থাকতে বাধ্য। এই অবস্থায় যখন পিছন থেকে যাত্রিরা নামতে যান তখনই হয় সমস্যা। এমনেতেই দুজন দাড়ানোর কারণে মাঝখান দিয়ে অন্যজন যাওয়ার রাস্তা থাকেনা, তন্মধ্যে যদি দাড়ানো ব্যক্তিরা উভয় জন মহিলা হন বা একজন পূরুষ ও একজন মহিলা হন তাহলে উনাদের মাঝখান দিয়ে অন্য একজন পূরুষ গেলে কতটুকু চাপ দিয়ে যেতে হয় ভূক্ত ভূগিরাই বলতে পারবেন।
প্রতিদিনের ন্যায় আজও কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা চোখের সামনে ঘটল যে গুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সমাধান করা প্রয়োজন। এক ভদ্রলোক ভিড় ঠেলে নামতে লাগলেন দুজনের মাঝখান দিয়ে যেতেই এক মহিলার বড় আওয়াজ দেখে যেতে পারেননা। ভদ্রলোকের পাল্টা জবাব জানালা দিয়ে নামবো নাকি? এভাবে কিছুক্ষণ তর্ক বিতর্ক হল। কিছু অগ্রসর হওয়ার পর অন্য আর এক মহিলার চিৎকার এইযে ঐদিক দিয়ে সরে দাড়ান তো গায়ের উপর পড়ে যাবে মনে হচ্ছে। ভদ্রলোকের কড়া উত্তর বাসে গেলে এভাবেই যেতে হবে ভীর সহ্য করতে না পারলে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে বের হবেন। ততক্ষনে ভীর ঠেলে একদম বাসের পেছনে চলে আসলাম। ভাগ্যক্রমে একটি সিটও পেয়ে গেলাম আশে পাশে থাকিয়ে দেখলাম কোন বৃদ্ধ বা মহিলা নেই তাই বসলাম। আমার আবার বাসে চড়লে বেশির ভাগ রাস্তাই দাড়িয়ে যেতে হয় কেননা কোন বৃদ্ধ বা মহিলা আমার সামনে দাড়িয়ে থাকলে আমি সিটে বসে যেতে পারিনা। বাসের সামনের দিকে পূরুষ যাত্রির চেয়ে মহিলা যাত্রির সংখ্যাই বেশি। কোন কোন ভদ্র মহিলা ধাক্কা ধাক্কি সহ্য করেও চুপ করে দাড়িয়ে রয়েছেন। আবার কেহ কেহ বিভিন্ন বিষয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছেন।(মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে যখন দেখি দুষ্ট ছেলেরা ভীরের মাঝে তাদের হাত দ্বারা মহিলাদের সাথে অশুভ আচরণ করে।) পিছন থেকে বিভিন্ন ভদ্রলোক নানান ধরনের মন্তব্য করতেছেন। কেহ বলতেছেন পূরুষদের লক্ষ্য করে ভাই একটু পিছনে সরে আসুন মহিলাদের আরামে দাড়াতে দিন। আবার কাউকে বলতে শুনলাম ভাই এখন তো নারী পূরুষ সমান অধিকার তাহলে পূরুষদের গায়ে ধাক্কা লাগে মহিলাদের গায়ে ধাক্কা লাগলে অসুবিধা কি? বাক স্বাধীনতার দেশ যে যাই বলুক না কেন তার মূখে তো হাত দিয়ে রাখা যাবেনা। ততক্ষনে একজন প্রায় বৃদ্ধ মহিলা ভীর ঠেলে আমার সিটের সামনে এসে দাড়ালেন, মহিলা বসতে বলে নিজের সিট খানা খালি করে দিলাম। আর ভাবতে লাগলাম যারা আমাদের দেশের সাধারণ নারীদেরকে নারী স্বাধীনতা আর নারী অধিকারের নাম দিয়ে হাজার সমস্যায় ফেলে নিজেরা পাজারো গাড়ি নিয়ে ঘোরে বেড়ান তারা কি এই সাধারণ নারীদের কথা একটু ভাবেন? তাই আমরা আবেদন করব শুধু নারী অধিকার আর নারী স্বাধীনতা নিয়ে লাফালাফি না করে তাদের সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হোন। আর সাধারন নারীদের রাস্তা ঘাটে এই সমস্যার সমাধানে নারীদের জন্য কমপক্ষে রাজধানীতে পৃথক বাস সার্ভিস চালু করুন।
সহমত ।
@এম এম নুর হোসেন, আপনাকে ধন্যবাদ।