সোনার বাংলায় ন্যায়বিচার
লিখেছেন: ' মুসলিম' @ রবিবার, ডিসেম্বর ১৩, ২০০৯ (৩:০২ অপরাহ্ণ)
দুর্ণীতি আর অব্যবস্থায় জর্জরিত বাংলাদেশে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে ন্যায়বিচার লাভ করা খুবই কঠিন , বিশেষত: সমাজের গরীব-দুখী, অধিকারবঞ্চিত মানুষের জন্য।
কিন্তু এমন অবস্থা সবসময় ছিলোনা।
মুসলিম শাসনামলে বাংলার সুলতানগণ সুশাসন ও ন্যায়বিচারের অনন্য উদাহরণ রেখে গিয়েছেন। বাংলা তখন সত্যিই ছিল “সোনার বাংলা”।
আজ যে কাহিনীটি লিখতে বসেছি সেটা প্রথম পড়েছিলাম প্রফেসর মুহাম্মদ মোহর আলী লিখিত “হিসট্রি অফ মুসলিমস অফ বেংগল” বইটিতে।
অনলাইনে একটা সুন্দর ফটোব্লগে কাহিনীটা আবার পড়লাম অনেকদিন পর….
গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ (১৩৯০ – ১৪১১ খৃষ্টাব্দ) ছিলেন ইলিয়াস শাহী বংশের তৃতীয় সুলতান, সোনারগাঁয়ে ছিল তার রাজধানী। আদর্শ চরিত্র, জ্ঞানচর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা ও সুশাসনের জন্য তাঁর সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। আইনের শাসনের প্রতি তাঁর ছিল গভীর শ্রদ্ধা।
একদিন সুলতান তীরন্দাজি চর্চা করছিলেন। হঠাত্ তাঁর ছোঁড়া একটা তীর দুর্ঘটনাবশত: এক বিধবা মায়ের কিশোর সন্তানের গায়ে গিয়ে লাগে, আর তাতেই ছেলেটা মারা যায়। বিধবা মহিলা তখন কাযীর দরবারে উপস্থিত হয়ে সুলতানের বিরুদ্ধে হত্যামামলা দায়ের করেন। কাযী সমন জারি করলে পর সুলতানকে অতিসাধারণ আসামির মতো আদালতে হাজির করানো হয়। সুলতানকে দেখে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখানোর যে রীতি, কাযী তা অগ্রায্য করেন, কারণ আদলতের দৃষ্টিতে সুলতান তুচ্ছ আসামিমাত্র।
তো সুলতান নিজের ভাগ্য কাযীর রায়ের ওপর ছেড়ে দিলেন। ইসলামী আইন মতে অনিচ্ছাকৃত হত্যার শাস্তি হলো নিহতের পরিবারকে সন্তোষজনক ক্ষতিপূরণ দেয়া। কাযী সেইরকমই রায় দিলেন এবং সুলতান সে রায় মেনে নিলেন।
বিচার শেষ হলো। এইবার কাযী উঠে দাঁড়িয়ে সুলতানের ভূয়সী প্রশংসা করলেন আইনের প্রতি সুলতানের আনুগত্যের জন্য। সুলতান তখন তাঁর তলোয়ারটি দেখিয়ে বললেন, ” মহামান্য কাযী, আপনি যদি সুলতানের ভয়ে ঐ বিধবাকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করতেন, তাহলে এই তরবারী দিয়ে আমি আপনার মাথা কেটে ফেলতাম।” জবাবে কাযী তাঁর চাবুকটি দেখিয়ে বললেন,” মহামান্য সুলতান, আপনি যদি ক্ষমতার দাপটে আমার রায় মানতে অস্বীকৃতি জানাতেন, তাহলে আমি আপনার পিঠ চাবুকের ঘায়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিতাম।”
————
ফটোব্লগটার লিংক:
http://dhakadailyphoto.blogspot.com/200 … es-in.html
বি দ্র: লেখাটি অনেকদিন আগে আমি ‘ইসলামিক ডিসকাশন ফোরামে’ পোস্ট করেছিলাম
ছোটকালে মুঘল সম্রাজ্যের ইতিহাস পড়েছিলাম এখন যতটুকো মনে পড়ে বাচ্চাটির মাতাও মুঘল বাদশার এই বিচারশ্রদ্ধাবোধ দেখে মুগ্ধ হয়েই সেচ্ছায় “পণ” এর বিনিময় গ্রহণ করেছিল।
হাফিজ, বাংলা মৌলভী ও দ্য মুসলিম ভ্রাতৃত্রয়কে ধন্যবাদ। আমাদের প্রিয় এই দেশটাতে আবারও একদিন ইসলাম বিজয়ী হবে ইনশাল্লাহ। সেদিন নিশ্চয়ই ন্যায়বিচার ফিরে আসবে এই দেশে।