লগইন রেজিস্ট্রেশন

বাংলা নববর্ষ উদযাপনে পৌত্তলিকতার অনুপ্রবেশ

লিখেছেন: ' মুসলিম' @ শনিবার, এপ্রিল ১০, ২০১০ (৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ)

দৈনিক নয়া দিগন্তে সুলেখক কাজী সাইদ লিখিত এই গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধটি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। উদ্দেশ্য দু’টো — (১) নববর্ষ উদযাপনের নামে যে ধর্মনিরপেক্ষ অজাচার সমাজে চালু হয়ে গেছে তার প্রতিবাদ করতে সকলকে উতসাহিত করা এবং (২) সবাইকে এটা বোঝানো যে মাদ্বহাব / লা-মাদ্বহাব নিয়ে গৃহযুদ্ধ করার চাইতে অধিক প্রায়োরিটি দেয়ার মতো বিষয় বাংলাদেশে আছে। সেকুলার শক্তি আজ পুরো দেশটাকেই গিলে খেতে চলেছে। ওরা কিন্তু আলবানির অনুরাগী কিংবা থানভীর গুণগ্রাহী কাউকেই ছাড় দেবেনা। আমরা আমাদের প্রায়োরিটি-টা একটু ভেবে দেখবো কি?

বাংলা নববর্ষ উদযাপনে পৌত্তলিকতার অনুপ্রবেশ
লেখক: কাজী সাইদ

সপ্তম শতকে আরবে ইসলামের পূর্ণ বিকাশের ফলে যখন বিশ্বমানবতার মুক্তির জয়জয়কার তখন আর্যশাসিত বাংলার শোষিত জনগণ ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হয়ে এক মানবেতর জীবনযাপন করত। তাদের কোনো সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অথবা ধর্মীয় মর্যাদা ছিল না। মুখের বাংলা ভাষা ছিল অচ্ছুত। এ ভাষায় আর্য ধর্মগ্রন্থ অনুবাদ তো দূরের কথা বাংলায় ধর্মীয় আলোচনাও ছিল অবধারিত নরকবাস। বাংলার সাধারণ মানুষের ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করাও ছিল জঘন্যতম অপরাধ। পুণ্য ছিল শুধু উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সার্বক্ষণিক পদসেবায়। ৬৪০ সন থেকে মুসলমানরা বাংলায় হিজরত করতে শুরু করেন। এ দেশে তখন ব্রাহ্মণ্যবাদীদের একচ্ছত্র আধিপত্য। তাদের আহ্বানে এ জনপদের জনগণ দলে দলে ইসলামের সুশীতল পতাকা তলে দীক্ষিত হতে শুরু করেন। এ সময় সংস্কৃতের পরিবর্তে নব্য মুসলিমদের মধ্যে বাংলার চর্চা বৃদ্ধি পায়। বহিরাগতরা আপন করে নেন এ দেশের মানুষ, তাদের প্রাণের ভাষা এবং এ দেশীয় নির্দোষ সংস্কৃতিকে। আরব মুসলমানরাই প্রথম বাংলায় ধর্মীয় বিধিবিধান বর্ণনা করে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও এর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধিতে সহযোগিতা করেন। সমান তালে চলতে থাকে ব্যাপকভাবে বাংলায় সাহিত্য সাধনা। তখনো দেশ কিন্তু আর্য শাসনাধীন। পরে ১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বঙ্গ বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় সূচিত হয় সুলতানি আমলের মুসলিম শাসন।
সুলতানি বাংলার সুলতানরা বাংলা ভাষা চর্চায় উৎসাহ জোগান এবং বাংলা সাহিত্য বিকাশে সর্বাত্মক পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। ফলে বাংলা ভাষা এ দেশের সার্বজনীন ভাষায় পরিণত হয় এবং রাজকীয় ভাষার মর্যাদা লাভ করে। এ সময় ব্যাপক জোয়ার আসে বাংলা সাহিত্যচর্চায়। বাংলা ভাষা রাজকীয় মর্যাদা পেলেও বাংলা সনের অভাবে এবং দেশে প্রচলিত বিভিন্ন সনের জটিলতায় রাজকাজ ও রাজকর পরিশোধে সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যার সমাধানকল্পে তৃতীয় মোগল সম্রাট আকবর তার আমত্যবর্গকে নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজী একটি নয়া সন উদ্ভাবন করেন। এ বাংলা সন প্রবর্তিত হয় হিজরি সনের সাথে সম্পর্ক রেখে। তারিখ গণনার সূত্রপাত করার জন্য হিজরি সনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত হয়। সম্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহণের ২৯ বছর পর হিজরি ৯৯২, ইংরেজি ১৫৮৫ সনে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গবেষণা করে হিজরি সনের চান্দ্র হিসাবের স্খলে সৌর হিসাবে দিন গণনা প্রক্রিয়া বের করে নতুন ইলাহি সন বা ফসলি সনের উদ্ভাবন করেন আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজী, যা বাংলা সন নামে পরিচিত। সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণ বর্ষকে স্মরণযোগ্য করার জন্য হিজরি ৯৬৩ এবং ইংরেজি ১৫৫৬ সালের এপ্রিল থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয় বৈশাখকে প্রথম মাস ধরে। মোগল রাজত্বে ভারতের পূর্বাঞ্চলের জনগণ কর প্রদানের পরিবর্তে ফসলের একটি অংশ রাজস্ব হিসেবে প্রদান করত। তাদের সুবিধার্থেই বাংলা সন প্রবর্তিত হয় এবং বর্ষ শুরুর একটি ব্যবস্খা নেয়া হয়। ফসলের সাথে এর সম্পর্ক থাকায় একে ফসলি সনও বলা হয়। মূলত এ সনটি কৃষিজীবী মানুষের জীবন ব্যবস্খাপনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। এই সনের সাথে মোগল ঐতিহ্যের একটি সম্পর্ক ছিল এবং ঐতিহাসিকভাবে এ সম্পর্ককে আমাদের চিরকাল মান্য করতে হবে। এই সনের সাথে মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই। মুসলমানদের ধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত একমাত্র সন হচ্ছে হিজরি সন। উল্লেখ্য, যেহেতু বাংলা সনের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে হিজরি সন প্রাসঙ্গিকভাবে এসেই পড়ে সেহেতু ভারতবর্ষে বাংলা সনের অংশত পরিবর্তন ঘটিয়ে তাকে শকাব্দ বা বিক্রমাব্দে পরিণত করার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমানে ভারতে শকাব্দের প্রচলন প্রবলভাবে করা হচ্ছে যাতে হিজরি সনের সাথে এর সব ধরনের সম্পর্ক মুছে ফেলা যায়। ভারতবর্ষের একমাত্র বাঙালি মুসলমানরাই এই সনটিকে বাংলা সন হিসেবে গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন। এমনকি নির্দোষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোও পালিত হয় এ সন অনুযায়ী। যেমন, ইছালে সাওয়াবের মাহফিল, বিয়ে অনুষ্ঠান, সন্তানদের আকিকা, মুসলমানি, জন্ম-মৃত্যু দিবস ইত্যাদি। হিন্দুরা আজো তাদের কাজকর্ম শকাব্দ সন অনুযায়ী করে থাকেন। বাংলা সনকে আজো তারা সার্বিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। তাই পশ্চিম বাংলার হিন্দুরা অনুসরণ করেন শকাব্দ সন আর মুসলমানরা বাংলা সন।
অনন্তকাল ধরে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মুখে বাংলা সনের পাশাপাশি উচ্চারিত হবে সম্রাট আকবর ও পণ্ডিত ফতেহ উল্লাহ সিরাজীর নাম। ফতেহ উল্লাহ সিরাজী সম্রাট আকবরের এক বিশেষ সভাসদ, তার প্রিয়পাত্র ও সার্বক্ষণিক সঙ্গী। এ প্রতিভাবান ব্যক্তি বিজাপুরের মতো একটি ছোট্ট রাজদরবার থেকে ভারত সম্রাট আকবরের বিশিষ্ট সভাসদের পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন। মাঝখানে হয়েছিলেন রাজা টোডরমলের অর্থনৈতিক সহকারী। অর্থনীতিবিষয়ক গ্রন্থ লিখতে তিনি টোডরমলকে করেছিলেন বিশেষ সহায়তা। পরে অধ্যক্ষ হন ওই বিভাগের এবং তিন বছর বিশেষ দক্ষতার সাথে সে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ‘আমির-উল-মূলক’ উপাধিতে ভূষিত হন। খেতাব পান ‘আসদ-উদ-দৌলা। তিনি আকবরের নবরত্ন সভার সদস্য না থাকলেও ছিলেন সম্রাটের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। ফৈজী, আবুল ফজল ও বীরবলের পরই উচ্চারিত হতো তার নাম। আবুল ফজল তার বিখ্যাত ‘আকবর নামা’ গ্রন্থে তার অসাধারণ জ্ঞান, সাহস ও কর্মকুশলতার প্রশংসা করেছেন। এক স্খানে তিনি এমনও বলেছেন, যদি দেশের সব প্রত্নতাত্ত্বিবক নিদর্শনাদি বিলুপ্ত হয়, আমির তা-ও পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম। সিরাতুল আলম গ্রন্থে তাকে বিশেষ প্রজ্ঞাসম্পন্ন মনীষী বলা হয়েছে। তিনি একজন খ্যাতনামা বীরও ছিলেন। তার অসাধারণ বীরত্বের জন্য তাকে দ্বিতীয় রোস্তম বলা হতো।
বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেয়ার রেওয়াজ এখন প্রতিটি বাঙালির ঘরে ঘরে। ফসলি সন বা বাংলা সনকে বরণ করে নেয়ার ধুম পড়ে যায় এখন রাজধানীসহ প্রতিটি নগরীতে। বাংলা ১৪০০ সন উদযাপনের ডামাডোল এখনো স্মৃতিতে দেদীপ্যমান। তখন ইংরেজি ১৯৯৩ সাল(!) তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ১৪০০ সন উদযাপন পরিষদ আয়োজিত নববর্ষবরণ অনুষ্ঠান কর্মসূচির অংশ হিসেবে সেদিন শুক্রবার ধানমন্ডি লেকে মঙ্গলপ্রদীপ ভাসিয়ে দেন। বাংলা একাডেমিতে তিনি বাজিয়েছিলেন মঙ্গল ঘন্টা। সুফিয়া কামাল মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন শিল্পকলা একাডেমিতে। সেকুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ও ‘বাম’ ঘরানার কিছু বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিসেবী পয়লা বৈশাখে বের করেছিলেন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। এতে লক্ষ্মীপেঁচা, বাদুর, বাঘ, বানর, হনুমান ও রাক্ষস-খোক্ষসসহ বিচিত্র সব জন্তুজানোয়ারের মুখোশ পরেছিলেন অনেকেই।
এ প্রসঙ্গে তৎকালীন ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রভাবশালী সাপ্তাহিক বিক্রম-এর পক্ষ থেকে জাতীয় অধ্যাপক মরহুম সৈয়দ আলী আহসানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ‘বাংলা নববর্ষ উদযাপনে শাঁখ, মঙ্গলপ্রদীপ আর জান্তব মুখোশসহ উৎসব করতে বাধা কোথায়? কেন? (বিক্রম বর্ষ ৬, সংখ্যা ১৯, ঢাকা সোমবার ১৯-২৫ এপ্রিল ’৯৩)। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ অঞ্চলের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, এ অঞ্চলে অষ্টম শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত পাল সম্রাটরা রাজত্ব করেছিলেন। তারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং তারা প্রত্যেকেই ছিলেন জন্মগতভাবে এ অঞ্চলের সন্তান। তারা সমাজজীবনে বিনয়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং জাতিভেদ প্রথা রহিত করেছিলেন। পালদের আমলের কোনো অনুষ্ঠানের সূচনায় শঙ্খ বা কাঁসার ঘন্টা বাজানো হতো না এবং মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানো হতো না। সর্বপ্রথম আমরা যে বাংলাদেশী কবির পরিচয় অষ্টম-নবম শতকে পাই, তিনি হচ্ছেন সরহপা। তিনি তার ‘দোঁহাকোষ গীতি’র ‘ষঠ্দর্শন খণ্ডনে’ এই কাঁসার ঘন্টা, হোম, জাগযজ্ঞ, শঙ্খ-ঘন্টা এগুলোর বিরুদ্ধে তার বক্তব্য রেখেছেন । সুতরাং দেখা যায় যে, পাল রাজত্বকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সব আচরণকে বিলুপ্ত করা হয়। পালরা প্রায় চার শ’ বছর এ দেশে রাজত্ব করেছেন। এই চার শ’ বছরের সমাজজীবনের ইতিহাস আমরা সরহপার রচনার মধ্যে পাই এবং চর্যাগীতিকায় পাই। এগুলোর মধ্যে কোথাও মঙ্গলপ্রদীপ, শঙ্খ বাঁধন এবং কাঁসার ঘন্টার সমর্থন পাওয়া যায় না। সুতরাং এ অঞ্চলের মানুষের জীবন ধারার সাথে এগুলো কোনো ক্রমেই সম্পর্কিত নয়।
পাল রাজত্বের অবসানের পর দ্বাদশ শতকে বহিরাগত সেনরা এ দেশ তাদের অধিকারে এনেছিল। সেনরা ছিল ব্রাহ্মণ এবং কর্ণাটকের অধিবাসী। তারা এ দেশে এসে বৌদ্ধদের হত্যা করে এবং বৌদ্ধ মন্দিরগুলো ধ্বংস করে। তারা সংস্কৃতিকে রাজভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং নতুন করে জাতিভেদ প্রথা প্রবর্তিত করে। তারা সংস্কৃতিকে হিন্দু মন্দিরের মধ্যে নিয়ে যায় এবং দেব-দেবীর পূজা উপলক্ষে মঙ্গলপ্রদীপের প্রবর্তন করে। মন্দিরের মধ্যে হোম এবং আরতি হতে থাকে। কাঁসার ঘন্টা প্রবর্তিত হয়। মূলত কাঁসার ঘন্টা ও মঙ্গলপ্রদীপ হচ্ছে একটি সম্পূর্ণ বিজাতীয় অনুষ্ঠান। তা ছাড়া এ অনুষ্ঠানগুলো হচ্ছে ধর্মীয় বিশ্বাসযুক্ত এবং পূজারীতির সাথে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গলপ্রদীপের প্রবর্তন করা হয়েছে এবং দেব-দেবী পূজার বিধি অনুসারে কাঁসার ঘন্টারও ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের দেশের কিছুসংখ্যক মেরুদণ্ডহীন, পরজীবী এবং ধর্মচেতনাশূন্য ও ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ কিছু লোক এ দেশের কোনো কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঙ্গলপ্রদীপের আয়োজন করে থাকে এবং কাঁসার ঘন্টা বাজিয়ে থাকে। আমি সুস্পষ্টভাবে ইতিহাসের ধারা অনুসরণ করে জানাতে চাই যে, মঙ্গলপ্রদীপ এবং কাঁসার ঘন্টা সম্পূর্ণরূপে পৌত্তলিক এবং একটি সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাসের প্রতীক। তা ছাড়া এগুলো কোনো ক্রমেই এ অঞ্চলের মানুষের জীবনধারা সম্পর্কে যুক্ত নয়।
যারা জান্তব মুখোশ পরে কোনো আনন্দ উৎসব করতে চান, করুন। তবে ইতিহাস অনুসরণ করে যে সত্যটুকু পাওয়া যায় তা হচ্ছে, এ সব অনুষ্ঠান নিু শ্রেণীর হিন্দুদের গাজনের এবং হরি উৎসবের সাথে যুক্ত। গাজনের মেলায় ডোম, মেথর ও চণ্ডাল শ্রেণীর হিন্দু লোকেরা নানাবিধ বহুরূপী সঙ সেজে তাদের উৎসব করত। আমাদের মধ্যে কেউ তাদের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে চান, তা তারা নির্বিঘেí করতে পারেন।
এদেশীয় কোনো ‘নামধারী’ মুসলমানকেও স্বধর্ম ত্যাগ করে ব্রাহ্মণ্যবাদে রূপান্তরিত হতে ইহজীবনে কখনো দেখিনি, শুনিনিও কোনো কালে। ব্রাহ্মণ্যবাদ ত্যাগ করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে ঠাঁই নেয়ার উদাহরণ রয়েছে ভূরি ভূরি । মুসলমান কোথাও হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে এর উদাহরণ এ দেশে কেন পুরো উপমহাদেশে একটিও আছে কি না সন্দেহ। যেহেতু মুসলমানদের পৌত্তলিক ব্রাহ্মণ্যবাদে ধর্মান্তরিত করা কোনো কালেও সম্ভব নয়, তাহলে মুসলমানদের শায়েস্তা করা যায় কিভাবে? এ যন্ত্রণা থেকেই ইয়াহুদি, নাসারা এবং পৌত্তলিক ব্রাহ্মণ্যবাদীদের সঙ্ঘশক্তি অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের সংস্কৃতিতে বিষাক্ত ছোবল হেনে একে এক কিম্ভূতকিমাকার চরিত্রহীন সংস্কৃতিতে পরিণত করার নিরন্তর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ দেশের জনগণের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধকে ইসলামি বিধিবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক করে তুলতেই তাদের যত প্রচেষ্টা। আমাদের স্বকীয় জীবনাচারের আদর্শে নির্দোষ উৎসব আনন্দের ভিড়ে তারা ঢুকে পড়ে পঞ্চম বাহিনীর মতো। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলমান রাষ্ট্রে নববর্ষ পালনে জান্তব মুখোশ পরে মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে রাস্তায় নারী-পুরুষের নৃত্য, ঢাক-ঢোলের তালে তালে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, মঙ্গলপ্রদীপের অনুপ্রবেশ, কাঁসার ঘন্টা, শাঁখ বাজানো, গলায় পৈতা, কুর্তার সাথে ধুতির সম্মিলনে ‘দাদাবাবু’ বনে যাওয়ার এসব দৃশ্য দেখে বাংলা সনের রেপ্লিকা ‘শকাব্দ’ অনুসারীদের দেহ-মন পুলকিত হয়ে উদ্বাহু নৃত্য করাই তো স্বাভাবিক।
ডিনামাইটের আবিষ্কারক আলফেন্সড নোবেল জীবদ্দশায় এর ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা দেখে মর্মাহত হয়েছিলেন, অনুশোচনায় দগ্ধ আলফেন্সড বিশ্বশান্তির জন্য নিজ সম্পদের বিনিময়ে রেখে যান নোবেল শান্তি পুরস্কার। পয়লা বৈশাখ পালনোৎসবে পৌত্তলিকতার অনুপ্রবেশে ইসলামি জীবনব্যবস্খায় যে সমূহ ক্ষতি সাধিত হয়েছে এবং ক্রমাগত হচ্ছে তা জীবদ্দশায় দেখতে পেলে আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজীও হয়তো তেমন কিছু করে যেতেন মুসলমানদের ক্ষত নিরসনে।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
২৪১ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)

৬ টি মন্তব্য

  1. মুসলিম ভাই, দ্বন্দ কেন করবো? ভুলটাকে ভুল বলতেই হবে – সেটা নববর্ষ হোক আর মিলাদ হোক

  2. সবাইকে এটা বোঝানো যে মাদ্বহাব / লা-মাদ্বহাব নিয়ে গৃহযুদ্ধ করার চাইতে অধিক প্রায়োরিটি দেয়ার মতো বিষয় বাংলাদেশে আছে। সেকুলার শক্তি আজ পুরো দেশটাকেই গিলে খেতে চলেছে। ওরা কিন্তু আলবানির অনুরাগী কিংবা থানভীর গুণগ্রাহী কাউকেই ছাড় দেবেনা। আমরা আমাদের প্রায়োরিটি-টা একটু ভেবে দেখবো কি?

    পুরোপুরি একমত।
    তবে ইসলামে মতভিন্নতা যে একটি স্বাভাবিক বিষয়, এটা অনেকেই বুঝতে চান না। সমস্যাটা তখনই বাঝে।

  3. মীলাদ, মাজার এগুলোর দৃষ্টিকোন যদি শিরকের হয়, অর্থাত মীলাদে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম যদি উপস্থিত হন এমন মানসিকতা কারো থাকলে তা অবশ্যই বিজাতিয় বাংলাসনের কালচারের চাইতে ভয়াবহ ।
    আর বাংলাসন-ইরেজীসন ইত্যাদির আড়ালে পৌত্তিলক-নাসারাদের সংস্কৃতি চর্চাও এক মরণ ব্যাধি । সস্থানে সকল অন্যায়ের সমালোচনাই কাম্য। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

  4. আল্লাহ সুবহানাল্লাহতায়ালা আমাদের সকল কু-সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন।

  5. আলহামদুলিল্লাহ।
    সময়োপযোগী পোষ্ট। ধন্যবাদ।

  6. সবাইকে এটা বোঝানো যে মাদ্বহাব / লা-মাদ্বহাব নিয়ে গৃহযুদ্ধ করার চাইতে অধিক প্রায়োরিটি দেয়ার মতো বিষয় বাংলাদেশে আছে। সেকুলার শক্তি আজ পুরো দেশটাকেই গিলে খেতে চলেছে। ওরা কিন্তু আলবানির অনুরাগী কিংবা থানভীর গুণগ্রাহী কাউকেই ছাড় দেবেনা। আমরা আমাদের প্রায়োরিটি-টা একটু ভেবে দেখবো কি?

    আপনার এই মতের সাথে সম্পূর্ন একমত । এটা আমাদের ফার্স্ট প্রায়োরিটি না । তবে যে প্রথম আক্রমন করেছে সে দায়ী হবে । কেননা কেউ একজন শুরু করলে তখন স্বাভাবিকভাবেই আর চুপ থাকা যায় না ।