লগইন রেজিস্ট্রেশন

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” ঘোষণার শর্ত -২

লিখেছেন: ' মুসলিম৫৫' @ শুক্রবার, ডিসেম্বর ৪, ২০০৯ (৯:১৫ অপরাহ্ণ)

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
السلام عليكم ورحمة الله و بركاته

[পূর্বের আলোচনার ধারাবাহিকতায়......

তৃতীয় শর্ত:
জিহ্বা ও অন্তর দ্বারা “শাহাদা”র নিহিতার্থসমূহ কবুল করে নেয়া
[এই শর্তটা শোনামাত্র পাঠকের মনে হতে পারে যে, প্রথম দুটো শর্ত পূরণ করার পর, আবার “কবুল” করার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? গ্রহণ বা কবুল করার আর কি বাকী থাকে? কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখবো যে, অনেক মানুষই শাহাদা সম্বন্ধে জ্ঞান ও তার বিষয়বস্তু সম্বন্ধে নিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও, তা কবুল করতে পারে না। ] । একজন ব্যক্তি যদি “শাহাদার” প্রথম দুটো শর্ত পূরণ করে থাকে – অর্থাৎ, তার যদি নিজের দেয়া সাক্ষ্য সম্বন্ধে জ্ঞান থাকে [অর্থাৎ, সে কি সাক্ষ্য দিচ্ছে তা যদি সে জেনে থাকে] এবং তার যদি “ইয়াক্বীন” বা নিশ্চয়তা থাকে যে, “আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই” তবে ঐ “শাহাদার” নিহিতার্থসমূহও তাকে “কবুল” করতে হবে – তা না হলে সে অবিশ্বাসী বলে গণ্য হবে। অনেক সময় অহঙ্কার বা হিংসাবশত মানুষ “শাহাদার” অর্থ জানা সত্ত্বে এবং “শাহাদার” ঘোষণার বক্তব্য সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও, তা গ্রহণ করতে পারে না [যেমন রাসূল (সা.)-এঁর যুগের অনেক ইহুদীরাই জানতো যে, তিনি যা বলছেন তা সত্য - তবু তারা তাঁর বাণীকে কবুল করতে পারেনি। উম্মুল মু’মিনীন সাফিয়া(রা.) যেমনটা বর্ণনা করেছেন যে, তার ইহুদী বাবা ও চাচার মাঝের সংলাপে তিনি জানতে পারেন যে, তারা বিশ্বাস করতেন, রাসূল (সা.) সত্য নবী । কিন্তু তিনি ইহুদী বংশোদ্ভূত নন বলে, তারা তাঁকে মানতে নারাজ ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে অস্বীকার করেন। রাসূল (সা.)-এঁর চাচা আবু তালিবও সম্ভবত গোত্র ও বংশ মর্যাদাবশত তা করতে পারেন নি। আবার বর্তমান যুগে অনেক প্রাচ্য-বিশারদ(Orientalist) বা পশ্চিমা স্কলার রয়েছেন, যেমন Annemarie Schimmel, Edward Said প্রমুখ - কোনটা সত্য তা জেনে শুনেও এবং সত্যের পক্ষ অবলম্বন করে লেখালেখি করেও - যারা শেষ পর্যন্ত “শাহাদা” গ্রহণ করেননি বা করতে পারেননি। অমুসলিম হিসেবেই মৃত্যু বরণ করেছেন। ] ।

এই “কবুল” করার ব্যাপারটা হচ্ছে আসলে প্রকারান্তরে এই শর্ত যে, কুর’আনে যা কিছু আছে এবং রাসূল (সা.) যা কিছু বলেছেন – তার সবকিছুকে নিঃশর্তভাবে বিশ্বাস করা। তার নিজের যা পছন্দ হয় সেটা বিশ্বাস/গ্রহণ করবে এবং যা পছন্দ হয় না তা প্রত্যাখ্যান করবে – এমন অধিকার সংরক্ষণ না করে বিশ্বাস স্থাপন করা। কুর’আনে আল্লাহ্ বলেন :

أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ

“…..তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের যারা এরকম করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিপ্তি হবে।………” (সূরা বাক্বারা, ২ : ৮৫)

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا

“আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে, কোন মু’মিন পুরুষ বা কোন মু’মিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না। কেউ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে তো পথভ্রষ্ট হবে।” (সূরা আহ্যাব, ৩৩ : ৩৬)

চতুর্থ শর্ত:
“শাহাদার” চতুর্থ শর্ত হচ্ছে “আল-ইনক্বিয়াদ”
বা আত্মসমর্পণ ও বাস্তবে মেনে চলা – অর্থাৎ বাহ্যত শারীরিক কাজের মাধ্যমে “শাহাদাকে” জীবনে কার্যকর করা – এটা আসলে ইসলাম শব্দের অর্থগুলির একটা: “আল্লাহর ইচ্ছা ও আদেশের কাছে আত্মসমর্পণ করা”।

কুর’আনে আল্লাহ্ ঠিক এরকমই আদেশ করেছেন :
وَأَنِيبُوا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ

“তোমরা তোমাদের প্রতিপালকমুখী হও এবং তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ কর………..” (সূরা যুমার, ৩৯ : ৫৪)

وَمَنْ أَحْسَنُ دِينًا مِمَّنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ
“দ্বীনে, তার চেয়ে আর কে ভালো যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহ্র কাছে আত্মসমর্পণ করে……..”
(সূরা নিসা, ৪ : ১২৫)

কেউ যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের(সা.) আদেশের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবেন – সেটাকে আল্লাহ্ কুর’আনে ঈমানের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন সূরা নিসার ৬৫ নম্বর আয়াতে:

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ
حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

“কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ। তারা মু’মিন হবে না যতণ পর্যন্ত তারা তাদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারের ভার তোমার উপর অর্পণ না করে। তারপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়।” (সূরা নিসা, ৪ : ৬৫)

আমরা পরে ঈমানের আলোচনা করতে গিয়ে যেমন দেখবো: “শাহাদা” হচ্ছে ঈমানের সেই ঘোষণা বা সাক্ষী যা একজন বিশ্বাসীর অন্তরে, জিহ্বায় ও কর্মকাণ্ডে কার্যকরভাবে প্রতিফলিত হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ কারো হৃদয়ে বা অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, ভীতি ও আল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্তির আশা থাকতে হবে। সেই একই ব্যক্তিকে জিহ্বা দ্বারা উচ্চারণ করে “শাহাদা”-র ঘোষণা দিতে হবে। এছাড়া এই ঈমানের ঘোষণা তার কাছে যে সব কার্যকলাপের দাবী রাখে, সেগুলোকেও একজন বিশ্বাসী বাস্তবে প্রয়োগ করবেন তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। কেউ যখন নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করেন, অথচ সেই অনুযায়ী কোন কাজ করেন না – তখন বুঝতে হবে যে, হয় তিনি বুঝেনই না যে ইসলাম কি? আর নাহয়, তিনি নিজের বিপক্ষেই এই সাক্ষ্য রাখছেন যে, তিনি যে “শাহাদা” উচ্চারণ করছেন, তা আসলে সত্যিকার ও সঠিক ঈমানের সাক্ষ্য বা ঘোষণা নয়।

তার মানে কি এই যে, একজন সত্যিকার বিশ্বাসী একদম [perfect বা] নিখুঁত এবং কখনোই তিনি কোন পাপ করেন না? না, ব্যাপারটা তা নয়। সত্যিকার বিশ্বাসীরাও কখনো কখনো গুনাহর কাজ করে বসেন। কিন্তু যতক্ষণ তারা উপলব্ধি করেন যে, তারা যা করেছেন (অর্থাৎ ঐ পাপকর্ম) তা সঠিক নয় এবং তাদের ঐ কাজ আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করার যে বাধ্যবাধকতা তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় – ততক্ষণ তারা তাদের “শাহাদার” শুদ্ধতাকে নষ্ট করেননি বা তাদের “শাহাদা”কে অর্থহীনতায় পরিণত করেননি বলে বলতে হবে [এখানে একটা উদাহরণ দেয়া যায়: আল্লাহ্ মদ হারাম করেছেন। এখন কেউ যদি বিশ্বস করে যে, মদ হারাম হবার কোন কারণ নেই বরং মদ নিষিদ্ধ করাটা সঠিক হয়নি তবে তার শাহাদার শুদ্ধতা নষ্ট হয়ে যাবে এবং তাকে “কাফির” বলে গণ্য করা হবে - অথচ ব্যক্তিগতভাবে সে হয়তো কখনো মদ ছুঁয়েও দেখেনি। আবার এমন কোন ব্যক্তি, যে অভ্যাসবশত মদ খায়, কিন্তু সে সব সময়ই বিশ্বাস করে যে, মদ বাস্তবিকই হারাম এবং সে একটা গর্হিত কাজ করছে - এক্ষেত্রে তাকে “ফাসিক” বলা হবে, কিন্তু তার ঈমান নষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে করা হবে না। স্কলাররা এ প্রসঙ্গে দুই ধরনের কুফরের কথা বলেছেন। Kufr of Belief এবং Kufr of Action । প্রথমটিতে লিপ্ত হলে যে কেউ কাফির হয়ে যায় - আর দ্বিতীয়টিতে লিপ্ত হলেও, সে তথাপি ইসলামের গন্ডির মাঝেই থাকতে পারে। তবে কোন কোন Action আছে, যা সরাসরি কাউকে ”মুরতাদ” বানিয়ে দেয়, যেমন: আল্লাহ বা তাঁর রাসূলকে(সা.) গালি দেয়া - এক্ষেত্রে কারো মনে কি ছিল তা আর বিচার্য নয়।]

ফি আমানিল্লাহ্!

[চলবে .............ইনশা'আল্লাহ্!]

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৭১ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)