দ্বীনী জ্ঞান অর্জনে আগ্রহীদের জ্ঞাতব্য
লিখেছেন: ' মুসলিম৫৫' @ শনিবার, জানুয়ারি ১৬, ২০১০ (৯:২৫ পূর্বাহ্ণ)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু ‘আলাইকুম!
আমরা অনেকেই “পিস ইন ইসলামের” মত ব্লগে নিজেদের আগমন ও অংশগ্রহণের কারণ বণর্না করতে গিয়ে বলে থাকি যে, জ্ঞান অর্জন হচ্ছে আমাদের এখানে আসার একটা মুখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু আসলেই কি তাই? আসুন জ্ঞান অর্জন সংক্রান্ত কিছু করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ের আলোকে, আমরা নিজেদের জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারটা একটু পরখ করে দেখি:
১. দ্বীনের জ্ঞান অর্জন ইবাদত ৷ আর তাই অন্যান্য ইবাদতের মতই এর একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন - নিজেকে জাহির করা, বিতর্কে জয়ী হওয়া বা বিখ্যাত হওয়া এসব নয় ৷
২. আল্লাহ পাকের তাওফীক্ব ছাড়া কোন জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয় ৷ আর তাই ক্রমাগত দু’আর মাধ্যমে তাঁর কাছে জ্ঞান চাইতে হবে ৷ দু’আ কবুল হওয়ার পথে যেন কোন বাধা না থাকে (যেমন হারাম রোজগার) সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিৎ ৷
৩. জ্ঞান অর্জনের জন্য জ্ঞানী ব্যক্তির অনুসন্ধান করতে হবে, নির্ভরযোগ্য আলেমদের কাছ থেকে অথবা তাঁদের লেখা বই কিংবা তাঁদের বক্তব্য থেকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে ৷ এক্ষেত্রে অনির্ভরযোগ্য কিংবা যথেষ্ট জ্ঞানী নয় এমন কোন উৎসকে পরিহার করতে হবে ৷
৪. দ্বীনী জ্ঞানার্জনের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া রয়েছে – এর বিভিন্ন ধাপ আছে ৷ জ্ঞান অর্জনের প্রাথমিক ধাপকে বাদ দিয়ে, উচ্চতর বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার মধ্যে ভুলের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকে ৷ এজন্য জ্ঞানী ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি অনুযায়ী, ধাপে ধাপে জ্ঞানার্জন করা জরুরী (শুধু ইসলামী জ্ঞান নয়, বরং জ্ঞানের যে কোন শাখার ক্ষেত্রেই এ কথা সত্য) ৷ উদাহরণস্বরূপ ইসলামের জ্ঞান অর্জন করতে চাইলে, প্রথম করণীয়গুলো হচ্ছে তৌহীদ সম্বন্ধে জানা, নিজেকে তৌহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত করা এবং আক্বীদাহ শুদ্ধ করা ইত্যাদি। যার তৌহীদের সুস্পষ্ট ধারণা নেই, তার উচিত নয় ফিকাহ বা তফসীরের খুঁটিনাটি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করা বা বচসায় জড়িয়ে পড়া।
৫. জ্ঞানার্জনের জন্য সাম্প্রতিক সময়ের আলেমগণের মুখাপেক্ষী হওয়া জরুরী, কেননা তাঁরাই অতীতের জ্ঞানী ব্যক্তিদের লেখনী/বক্তব্যকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম ৷ নতুবা, প্রাথমিক পর্যায়ের একজন শিক্ষার্থী সরাসরি প্রাচীন বইপত্র ঘেঁটে কোন বিষয়কে বুঝতে চাইলে, ভুল হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে (শুধু ইসলামী জ্ঞান নয়, বরং জ্ঞানের যে কোন শাখার ক্ষেত্রেই এ কথা সত্য)৷ যে জন্য ইসলামে ইসনাদ বা unbroken chain এত গুরুত্বপূর্ণ ৷
৬. ইসলামের ধর্মীয় বিষয়ের গভীরে কেউ গবেষণা করতে চাইলে, তাকে অবশ্যই আরবী ভাষায় পারঙ্গম হতে হবে ৷
৭. প্রশ্ন তাকেই করা উচিৎ – যার জ্ঞান, যোগ্যতা ও সততার ওপর প্রশ্নকারীর আস্থা রয়েছে। আর প্রশ্নের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ শেখা – বিতর্ক করা কিংবা কাউকে নাজেহাল করা নয়৷
৮. দ্বীনের কোন একটি দিককে নিয়ে বেশী মেতে ওঠা এবং অন্যান্য দিককে অবহেলা করা জ্ঞানার্জনের কিংবা শেখার ভুল প্রক্রিয়া ৷
৯. দ্বীনের কিছু বিষয় আছে, যা সর্বদা অপরিবর্তনীয়, আর কিছু বিষয় অবস্থা অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে – এই দুই প্রকার বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা একজন শিক্ষার্থীকে ভুলভ্রান্তি থেকে রক্ষা করতে পারে ৷ এজন্য অতীতের কোন পন্ডিতের বক্তব্য থেকে সূত্র দেয়ার ক্ষেত্রে, একজন বিশেষজ্ঞ আর একজন সাধারণ ব্যক্তির বক্তব্য সমতুল্য নয় ৷ কেননা একজন বিশেষজ্ঞ বুঝতে পারেন যে, অতীতের জ্ঞানীজনদের কোন কথাগুলো অপরিবর্তনীয় মূলনীতি আর কোন কথাগুলো যুগের প্রেক্ষিতে পরিবর্তনযোগ্য, কিন্তু একজন সাধারণ ব্যক্তি এই দুইয়ের পার্থক্য করতে না পারায়, তার দ্বারা কখনও অপ্রাসঙ্গিকভাবে অতীতের সূত্র উল্লিখিত হতে পারে৷
১০. জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের অবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিৎ, অন্যের অবস্থা, অনাগত কিংবা দূরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে অতিরিক্ত কালক্ষেপণ কল্যাণকর নয় ৷ (বিশেষত অন্যের দোষ ধরার চেয়ে, নিজের দোষ-ত্রুটির প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত৷)
১১. তেমনি জ্ঞানের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা অধিকতর মনযোগী হব ঐসব নিয়ে, যা করতে আমরা “সক্ষম” – সেসব বিষয় নিয়ে নয়, যা করতে আমরা “অক্ষম” ৷ প্রত্যেকে যদি তার সাধ্যের সীমাটুকু ব্যবহার করে, আর সাধ্যাতীত বিষয়গুলো নিয়ে অহেতুক মাতামাতি না করে, তবেই আমাদের প্রচেষ্টা সফল হবে, ইনশা’আল্লাহ !!
ফি আমানিল্লাহ্!
জাযাকাল্লাহ। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার তুলে ধরেছেন। আমল করার চেষ্টা করবো ইনশা’আল্লাহ। ধন্যবাদ।
যত এবাদত আছে তার মধ্যে আল্লাহর সৃষ্টিকে ভালবাসা অন্যতম। আর এই লক্ষ্যে আল্লাহর সৃষ্টির কল্যাণ সাধণে যে কর্ম করে যাবে সেটি হবে অন্যতম আমল। আর এই অন্যতম আমল প্রয়োগ করতে যোগ্য ইলিম অর্জন করতে হয়। তাই যে কোন বিষয়ের ইলিম যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি একমাত্র লক্ষ্য হয় সেটিই উত্তম এবাদত।
আস-সালামু আলাইকুম,
একজন মুসলমান যেকোনো কাজ করবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য । কেউ ইসলামিক বিষয়ে কোনো পোস্টে বা লিখা ব্লগে দিলে সেটাও আল্লাহর সন্তুস্টির জন্য দিবে । কোনো বিষয়ে না যেনে শুধুমাত্র অনুমানের উপর কিংবা ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের কারনে দিলে তাকে কঠিন গোনাহগার হতে হবে ।
এ বিষয়ে আমাদের একটি নিজস্ব লেখা দিবার ইচ্ছে ছিল কিন্তু তার আগেই আমাদের এক ভাই “মুসলিম৫৫” এখানে এই পোস্টটি দিয়ে দিয়েছে , যার বক্তব্যের সাথে আমরা সম্পুর্ন একমত । আল্লাহতাআলার অশেষ রহমত এখানে এমন ব্লগার আছেন যারা এই সত্যটি উপলদ্ধি করতে পেরেছেন ।
উনার লেখার ১-১১ পর্যন্ত পয়েন্টগুলো গভীর মনোযোগ সহকারে সবার পড়া উচিত ।
ওয়াসসালাম।
এক কথায় অসাধারন
ভীষন ভাল লাগল। তবে মাঝে মাঝে একটু বিতর্ক না হলে অনেক কিছুই অজানা থেকে যায়।
যেমন ডাঃ জাকির নায়েক এবং অন্যান্য অমুসলিম ধর্মীয় নেতাদের বিতর্ক অনুষ্ঠান না দেখলে আমি অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানতে পারতাম না। তবে কোন একটি বিষয়ের বিতর্ক যেন কাউকে হেয় প্রতিপন্ন না করে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সম্পূর্ণ আক্ষরিকভাবে না হলেও পোষ্টটির মূল বক্তব্য ও উদ্দেশ্যর সাথে একমত।
সুন্দর
অসাধারন সুন্দর