শিয়া-doctrine-এর ফাঁদে পা দেবার আগে নিজের দ্বীনকে জানুন
লিখেছেন: ' মুসলিম৫৫' @ রবিবার, জানুয়ারি ৩, ২০১০ (১০:১২ অপরাহ্ণ)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
ভূমিকা:
এই লেখাটি প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু somewhereinblog-এর “ইসলাম” গ্রুপের জন্য লেখা। তারপর ঐ সাইটের আরো ২/১টা গ্রুপে অবগতির জন্য দেয়া হয়েছিল।
এই লেখার ভূমিকাস্বরূপ বা পূর্বকথা হিসেবে যে লেখাটা লিখেছিলাম: ঘোলা পানিতে মাছ শিকার – তা ইতোমধ্যেই Peace in Islam-এ “পোস্ট” হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম এখানে আর শিয়া-doctrine নিয়ে কিছু লেখার প্রয়োজন নেই, কারণ এখানকার প্রায় সবাই practicing Muslim বলেই মনে হয়। কিন্তু গতকাল জুমু’আর খুতবায়, আমি যে মসজিদে জুমু’আর সালাত আদায় করলাম তার খতিব, বাংলাদেশে শিয়াদের অতি সাম্প্রতিক insidious অগ্রযাত্রা সম্বন্ধে আলোচনা করলেন – যা শুনে চিত্রটা, ধারণার চেয়ে অনেক ভয়াবহ বলে মনে হলো। রংপুর/সৈয়দপুর অঞ্চলে বহু বাংলাদেশী ও বাংলাভাষী মানুষ নাকি “শিয়া” হয়ে যাচ্ছেন সন্তর্পনে। তাদের proselytize করার জন্য ইরান থেকে শিয়া-doctrine-এ PhD করা “শিয়া আলেম” নিযুক্ত রয়েছেন ঐ এলাকার একটি অঞ্চলে। আমাদের দেশের মূলধারা মুসলিম জনগোষ্ঠীর গণসাধারণের ধর্মীয় জ্ঞান এতই সীমিত যে, শিয়া-doctrine আহলে সুন্নাহ্ ওয়া আল জামা”আহ্ থেকে কত বিচ্যুত, তা কল্পনা করাটাও তাদের জন্য কষ্টকর। আমাদের নানী-দাদীরা “near religious zeal” নিয়ে “বিষাদ সিন্ধুর” বানোয়াট ও মিথ্যা গল্প পড়তেন – পিতা-পুত্র সোহরাব ও রুস্তমের দুঃখজনক পরিণতির গল্প পড়তে পড়তে, তারা ধর্মীয় ভক্তি সহকারে অশ্রু বিসর্জন দিতেন এটা না জেনেই যে, সোহরাব ও রুস্তমের উভয়ই ছিলেন নির্ভেজাল “অগ্নি-উপাসক কাফির” তথা মুসলিমদের শত্রু । নিজের দ্বীন সম্বন্ধে অজ্ঞ বর্তমান সুসলিমদের অবস্থা তার চেয়ে ভালো কিছু নয় – বরং সংঘবদ্ধ ও সমাজবদ্ধ না থাকার কারণে, আগের চেয়ে আরো নাজুক ও vulnerable। আমরা তাই চেষ্টা করবো আমাদের দ্বীনী ভই-বোনদের শিয়া-doctrine সম্বন্ধে, ইনশা’আল্লাহ্, কিছু ধারণা দিতে। এই ব্লগে উপস্থাপনের জন্য মূল লেখাটায় সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। ]
মূল আলোচনা:
somewhereinblog-এ আসার পর বুঝলাম যে, সেখানে শিয়া-doctrine-এর বেশ রমরমা প্রচারণা চালানো হয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক দেশে এমন হতেই পারে। সেই সুদূর সুইজারল্যান্ড থেকে এসে, যদি খৃষ্টান পাদ্রীরা আমাদের দেশের মানুষের মাঝে প্রচারণা চালাতে পারেন এবং কিছু মানুষকে সফলভাবে খৃষ্টানও বানাতে পারেন – তাহলে নিকটবর্তী ইরান থেকে এসে শিয়ারা কেন কিছু মানুষকে তাদের দলে টেনে প্রচারণা চালাতে পারবেন না? এটা অত্যন্ত যৌক্তিক একটা প্রশ্ন! যার উত্তরে বলা যায় যে, তারা অবশ্যই তা করতে পারেন, বিশেষত তারা সব দিক দিয়েই যখন সুইস্ খৃষ্টানদের চেয়ে আমাদের অনেক কাছের – তারা তো আল্লাহকে, আল্লাহই বলেন, রাসূল (সা.)-কে রাসূলই মানেন; আর তাছাড়া ভাত ছড়ালে তো কাকের অভাব হবার কথা নয়। আমাদের এই অভাগা দেশটা বহুজাতিক কোম্পানী থেকে শুরু করে বহুমাত্রিক ধর্মবিশ্বাসী – সকলের জন্যই এক উর্বর চারণভূমি বা বলা যায় উন্মুক্ত fishing ground। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষদের যেন কিছুই বলবার নেই – অনেকটা বিশ্বযুদ্ধকালীন থাইল্যান্ডের অবস্থা যেন। সবার জন্যই উন্মুক্ত – যার খুশী আসো, আমাদের “ভিতর” দিয়ে যেখানে খুশী যাও, আমাদের তাতে কিছুই এসে যায় না, আমরা সকলকেই স্বাগত জানাই – আমরা হচ্ছি যাকে বলে একেবারে নিরপেক্ষ, absolute ধর্ম-নিরপেক্ষ! আমাদের অবস্থা যেন “গরীবের বৌ, সকলের ভাবী” বলে যে অব্যক্ত ইঙ্গিত দেয়া হয় – তেমন।
তবু, আমার কখনো ইচ্ছা হয়নি যে তাদের refute করি। আমার মনে হয়েছে শিয়া-doctrine বা অন্য যে কোন মতবাদকে refute করার চেয়ে বরং নিজের দ্বীনকে সঠিকভাবে জানাটা অনেক বেশী জরুরী। এজন্যই ”সঠিক পথ কি একটা না অনেকগুলো?” – এধরনের সারমর্ম সম্বলিত পোস্ট দিয়ে আসছি আগা-গোড়া। সঠিক পথ যে কেবল একটাই, তা জেনে নিয়ে আমরা সবাই যেন আপ্রাণ চেষ্টা করি সেই পথের উপর নিজেকে এবং নিজের প্রিয়জনদের প্রতিষ্ঠিত করতে – যেমন আল্লাহ্ বলেছেন: নিজেকে ও নিজের জ্ঞাতি-গোষ্ঠীকে “আগুন” থেকে রক্ষা করতে!!
আমি যদি ধরুন পিকাসোর পেইন্টিং-এর উপর গবেষণা করতে চাই এবং এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ হতে চাই, তবে, আমার সর্বপ্রথম কর্তব্য হবে কোনগুলি সত্যিই পিকাসোর পেইন্টিং, সেগুলোর বৈশিষ্ট্য কি সে সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করা। তাহলে যে কেউ যদি প্যারিসের রাস্তার কোন একটা লোকের একটা নকল চিত্রকর্ম আমার সামনে নিয়ে এসে আমাকে প্রতারণা করতে চায়, আমি মুহূর্তেই বুঝে ফেলবো যে, ওটা আসলে পিকাসোর মিলিয়ন ডলার মূল্যের চিত্রকর্ম তো নয়ই বরং নকল কিছুকে মূল্যবান কিছু বলে চালিয়ে দেয়ার এক জঘন্য অপচেষ্টা। কিন্তু তা না করে, আমি পৃথিবীর সকল Tom, Dick Harry-র চিত্রকর্ম কেন মান সম্মত নয় বা সেগুলোর কি দোষ ত্রুটি রয়েছে তা নিয়ে যদি গবেষণা শুরু করি, তাহলে এক জীবন নয়, বরং অবকাশ থাকলে, পিকাসোর চিত্রকর্ম কি বা কেমন – তা না জেনেই, কারো বহু জীবনকাল কেটে যেতে পারে ।
Blog-এ আমার বয়স যত বাড়ছে, ততই বুঝতে পারছি যে, এসব ব্লগের সদস্যরা তাদের “পৈত্রিক দ্বীন” সম্বন্ধে কত অসচেতন – আর তার চেয়েও দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক হচ্ছে আমাদের “ইসলামী ব্লগ”গুলোর অবস্থা – পোস্টগুলো দেখলেই বোঝা যায়, জীবনটাকে কত হালকা জ্ঞান করে আমরা “ইসলাম-ইসলাম” খেলায় মেতে উঠি । নির্মলেন্দু গুণের মত আমারো বলতে ইচ্ছা হয়: “এতই যদি দ্বিধা তবে জন্মেছিলে কেন?” [নাউযুবিল্লাহ্ - এটা কেবলই এক অক্ষম আক্ষেপ - কিছুতেই আমার বিশ্বাসের প্রতিফলন নয়]। এরই পথ ধরে আজকের এই পোস্ট লিখতে বসা।
শিয়া-doctrine-এর প্রচারণার ফাঁদে পা দেবার আগে আমাদের জেনে নেয়া উচিত যে, শিয়ারা আমাদের দ্বীন সম্বন্ধে কি ভাবেন বা তাদের বিশ্বাসগুলো কি? বিস্তারিত লিখতে গেলে কেউ হয়তো এ নিয়ে হাজার পৃষ্ঠা লিখতে পারবেন। আমাদের দেশে যেমন দেওয়ানবাগী ইসলাম, আটরশী ইসলাম, চরমনাই ইসলাম, রাজারবাগী ইসলাম, আযানগাছী ইসলাম, হাক্কানী ইসলাম, তবলীগী ইসলাম, জামাতী ইসলাম, হিযবুত তাহরীরি ইসলাম, ১৯ ভিত্তিক ইসলাম – এমন বহু ব্র্যান্ডের ইসলাম রয়েছে এবং যাদের প্রায় সবাই নিজেদের “আহলে সুন্নাহ্ ওয়া আল জামা’আহ্” বলে দাবী করেন, শিয়াদের মাঝেও তেমন বহু বহু ফেরক্বা রয়েছে, যাদের কোন কোনটিকে স্পষ্টতই সর্বজনস্বীকৃতভাবে ইসলাম বহির্ভূত বলে মনে করা হয় – যেমন Alawisদের ইসলাম বহির্ভূত মনে করা হয়, কারণ তারা আলী (রা.)-কে অবতার মনে করেন অর্থাৎ আলীর মাঝে ঈশ্বর নিজেকে প্রকাশ করেছেন বলে মনে করেন। প্রাথমিকভাবে শিয়ারা Twelver ও Sevener এই দুই ভাগে বিভক্ত হলেও, এদের মাঝ থেকেই Babi, Bahai, Druze, Ismaili, Zaidi, Alawis, Khoja, Akhbari, Nizari ইত্যাদি নানা শাখা প্রশাখা বেরিয়ে এসেছে। যাহোক, আমরা মূলত Twelver শিয়াদের প্রচারণার সম্মুখীন – যারা ইরানের রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছেন এবং ইরানের জনসংখ্যার প্রায় ৯০% যাদের দ্বারা গঠিত। এরা ১২ জন নির্ভুল ইমামের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন। আমি এই পোস্টে শিয়াদের কেবল তিনটি বিশ্বাসের কথা আলোচনা করবো, যার সাথে কোন মূলধারার মুসলিম কিছুতেই একমত হতে পারেন না:
১)আমাদের কাছে যে কুর’আন রয়েছে তা অসম্পূর্ণ – অসৎ সাহাবীরা কুর’আনের অনেকাংশ সরিয়ে ফেলেছেন (নাউযুবিল্লাহ)! এই বিশ্বাস স্বয়ং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’লার নিম্নলিখিত ওয়াদা ও ঘোষণাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে:
We have, without doubt, sent down the Message; and We will assuredly guard it (from corruption). (Qur’an,15:9)
২) আল্লাহর রাসূলের (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ সাহাবীদের মিথ্যাচারী, আত্মসাৎকারী ও জাহান্নামী মনে করা। রাসূল (সা.) এক এক করে নাম ধরে ১০ জনের জান্নাত লাভের কথা বলেছেন, যাদেরকে আমরা “‘আশারা মুবাশশারা” বা “সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন” বলে থাকি:
”আবু বক্বর জান্নাতে থাকবেন, উমর জান্নাতে থাকবেন , ওসমান জান্নাতে থাকবেন, আলী জান্নাতে থাকবেন, তালহা জান্নাতে থাকবেন, আয্-যুবায়ের জান্নাতে থাকবেন, আব্দুর রহমান ইবন আউফ জান্নাতে থাকবেন, সা’আদ ইবন আবি ওয়াক্কাস জান্নাতে থাকবেন, সাঈদ ইবন যায়েদ জান্নাতে থাকবেন, আবু উবায়দা ইবন আল-যাররা জান্নাতে থাকবেন।” (সূনান আবি দাউদ, আলবানীর মতে সহীহ্)
শিয়ারা মনে করেন, এঁদের প্রথম তিনজনই মিথ্যাচারী, আত্মসাৎকারী ও জাহান্নামী। তাদের এই বিশ্বাস আল্লাহর কালামকেও মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, যেখানে আল্লাহ্ বলেছেন:
The vanguard (of Islam), the first of those who forsook (their homes) and of those who gave them aid, and (also) those who follow them in (all) good deeds, well-pleased is Allah with them, as are they with Him: for them Hath He prepared Gardens under which rivers flow, to dwell therein forever: that is the supreme Felicity. (Qur’an, 9:100)
৩) তারা তাদের ইমামদের গায়েবের জ্ঞানের অধিকারী বলে মনে করেন – যা স্পষ্টতই ইমামদের নবী-রাসূলদের উপরে স্থান দেয়ার নামান্তর। এটা ইসলামী বিশ্বাসের পরিপন্থী। কুর’আনে বলা হয়েছে:
Say: “I have no power over any good or harm to myself except as Allah willeth. If I had knowledge of the unseen, I should have multiplied all good, and no evil should have touched me: I am but a warner, and a bringer of glad tidings to those who have faith.” (Qur’an, 7:188)
আজ এখানেই শেষ করবো ইনশা’আল্লাহ্!
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
শিয়া-doctrine-এর প্রচারণার ফাঁদে পা দেবার আগে, নিজের দ্বীনকে একবার অন্তত সঠিকভাবে জানার চেষ্টা করুন। আল্লাহ্ আমাদের সত্য জানার ও মানার তৌফিক্ব দান করুন। আমীন!!
ফি আমানিল্লাহ্!
আমীন!!(F)(F)
আমীন।
দেখুন আমার মনে হয় শিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে বা তাদের সাথে কথা না বলে তাদের সম্পর্কে উক্তি করা বা মন্তব্য করা ঠিক না। কারণ, আমি অনেক শিয়া ভাইদেরকে চিনি যারা এ ধরণের আকিদা বা বিশ্বাসের বিশ্বাসী নয়।