লগইন রেজিস্ট্রেশন

জিহবার রক্ষণাবেক্ষণ করা -১

লিখেছেন: ' মুসলিম৫৫' @ শনিবার, মার্চ ৬, ২০১০ (১২:২৭ পূর্বাহ্ণ)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!

মূল: ইমাম নববী

মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন:
“মানুষ যে কথাই উচচারণ করে, তার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে ৷” (সূরা কাফ:১৮)
এবং তিনি বলেন:
“অবশ্যই তোমার প্রতিপালক সতর্ক দৃষ্টি রাখেন ৷” (সূরা আল-ফজর:১৪)

আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি, আল্লাহকে স্মরণ করার গ্রহণযোগ্য জিকিরের সে সমস্ত পদ্ধতি – যেগুলো আল্লাহ আমার জন্য সহজ করেছেন ৷ আমি সেই সাথে একজন মানুষের বক্তব্যের বা কথাবার্তার নিষিদ্ধ বা অপছন্দনীয় দিকগুলো তুলে ধরতে চাচ্ছি ৷ সুতরাং, সেগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরবো, যা সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলিমের সচেতন থাকা উচিত ৷

প্রত্যেক ব্যক্তি, যে তার কার্যসমূহের জন্য দায়িত্বশীল, তাকে অবশ্যই নিজের জিহ্বাকে সব ধরনের বক্তব্য বা কথা থেকে রক্ষা করা উচিত, কেবলমাত্র সে সমস্ত কথা ছাড়া যেগুলোর মধ্যে কোন মঙ্গল রয়েছে ৷ ফলে যে পরিস্থিতিতে কথা বলা বা না বলা উভয় অবস্থাই মঙ্গলজনক, সেক্ষেত্রে চুপ করে থাকাই হচ্ছে সুন্নাহ ৷ অনুমোদনযোগ্য বক্তব্য (যেক্ষেত্রে ভাল ও মন্দ সমান) নিষিদ্ধ এমনকি অপছন্দনীয় কাজের পথ সুগম করে দেয় ৷ বরং, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এটাই সাধারণত ঘটে থাকে এবং এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন আদৌ কার্যকর হয়না ৷

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে কেউ আল্লাহ এবং শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে, হয় সে ভাল কথা বলুক বা চুপ থাকুক ৷” (সহীহ আল-বুখারী ও মুসলিম) ৷

এ হাদীসটি, যার বিশুদ্ধতা নিয়ে আলেমগণের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই, একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, একজন ব্যক্তির কথা বলা উচিত নয়, যদি না তার বক্তব্য ভাল হয় বা তার বক্তব্যের মধ্যে মঙ্গলজনক কিছু থাকে ৷ সুতরাং, কারো যদি সন্দেহ থাকে যে, তার বক্তব্য ভাল না মন্দ, তবে তার চুপ থাকাই উত্তম ৷

ইমাম আশ-শাফি’ঈ (রহ.) বলেছেন: “যখন কেউ কথা বলার ইচ্ছা রাখে, তখন তার বলার আগে চিন্তা করা উচিত ৷ সে যে কথা বলতে চায় সেটা যদি উপকারী হয়, তবে তার সেটা বলা উচিত ৷ আর যদি তার সে সম্পর্কে সন্দেহ থাকে, তবে কথা না বলাই উত্তম (যতক্ষণ না সে তার বক্তব্যকে সন্দেহমুক্ত করে নেয়) ৷”

আবু মুসা আল-আশআ’রী (রা.) থেকে বর্ণিত: আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ৷ মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কে?” তিনি (সা.) বললেন: “সেই ব্যক্তি যার জিহবা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ ৷” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

সাহল ইবন সা’দ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, “কেউ যদি আমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারে যে, তার দু’চোয়ালের মাঝখানের অঙ্গ (জিহবা) এবং দু’পায়ের মধ্যবর্তী অঙ্গ (গুপ্তাঙ্গ) সম্পর্কে (যে সে সেগুলো সুরক্ষিত রাখবে), আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হতে পারি ৷” (সহীহ আল-বুখারী)

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, “বস্তুত আল্লাহর বান্দা কোন কথা বলবে যখন এর ফলাফল নিয়ে সে চিন্তা করবে না এবং এর পরিণতিতে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে, যার দূরত্ব হচেছ পূর্বদিক ও পশ্চিমদিকের মধ্যবর্তী দূরত্বেরও অধিক ৷” (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)

সহীহ বুখারীতে এ শব্দগুলো পূর্ব দিকের উল্লেখ ব্যতীত এভাবে এসেছে; “যার দূরত্ব পশ্চিম দিকের চেয়েও অধিক৷” ‘অসচেতন ভাবে’-র অর্থ হচ্ছে যখন কোন লোক তার কথাটা ভাল না মন্দ তা চিন্তা করার জন্য থামে না ৷

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “বস্তুত, আল্লাহর বান্দাহ কোন কথা বলবে যেটা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়, যার ফলে আল্লাহ তা’আলা তার সম্মানকে আরও বৃদ্ধি করেন ৷ এবং সত্যিই আল্লাহর বান্দাহ এমন বাক্য উচচারণ করবে না যা আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয়, ফলশ্রুতিতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়না কিন্তু সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয় ৷” (সহীহ বুখারী)

সুফিয়ান ইবন আবদিল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বল্লেন: “হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাকে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে বলুন যার উপর আমি দৃঢ় থাকতে পারি ৷” তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বল: “আমি আল্লাহতে বিশ্বাসী, এবং তারপর এর উপর দৃঢ় থেকো ৷” আমি বললাম: “হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আমার জন্য আমি কোন বিষয়কে বা পরিস্থিতিকে সবচেয়ে ভয় করব ?” তখন তিনি (সা.) তার জিহবাকে ধরলেন এবং বললেন, “এইটি ৷” (৪:২৪১৩ হাসান, সহীহ আত-তিরমিযী, ইবন মাজাহ, আহমদ)

ইবন উমর (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, “আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত অধিক কথা বস্তুত অন্তরকে শক্ত করে দেয় ৷ এবং যাদের হৃদয় শক্ত, তারাই মূলত আল্লাহ থেকে অধিক দূরে ৷” (যয়ীফ, আত-তিরমিযী)

উকবা ইবন আমীর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল (সা.), একজন মানুষ কিভাবে নাজাত পেতে পারে?” তিনি (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার জিহবাকে সংযত রাখো, ঘরে অবস্থান করো এবং তোমার গুনাহ্‌সমূহের জন্য কান্নাকাটি কর ৷” (৪:২৪০৯ হাসান, আত-তিরমিযী, আহমদ)

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “একজন ব্যক্তির দ্বীন পালনের সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে যে, সে সেই বিষয়গুলো (সেগুলো নিয়ে কথা বলা) ত্যাগ করে যেগুলো তার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় ৷” (সহীহ, মালিক, আত-তিরমিযী)

এ বিষয় সম্পর্কে সালাফগণের প্রচুর বর্ণনা রয়েছে ৷ পূর্ববর্তী বিবরণীর পর সেগুলোর উল্লেখ জরুরী নয় ৷ তারপরও সংক্ষিপ্তভাবে তা উল্লেখ করা হল:

আবু আলী আল-ফুদাঈল ইবন ইয়াদ (রহ.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার কথাবার্তাকে কমিয়ে এনেছে তার কর্মের সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য, তার উচিত নয় সে সম্পর্কে কোন কথা বলা, যেটা তার সম্পর্কে নয় ৷”
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেছেন: “অন্য যে কোন কিছু অপেক্ষা জিহবাকেই বেশী বন্দি করে রাখা উচিত ৷”
অন্যরা বলেছেন: “জিহবার উদাহরণ হচ্ছে একটি বন্য পশুর ন্যায় ৷ যদি তাকে বেঁধে না রাখো, এটি তোমার বিরুদ্ধে চলে যাবে৷”

(চলবে……….ইনশা’আল্লাহ্!

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৪১৯ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)

৭ টি মন্তব্য

  1. Assalamu alaikum bhai, how are you? Indeed its an important matter however most of us unaware about the evil of the tongue. May allah reward you with good.
    From mobile

    মুসলিম৫৫

    @manwithamission, Wa ‘Alaikassalaam! I am fine Alhamdulillah! Thank for appreciating – JazakAllahu Khaira!

  2. “যে কেউ আল্লাহ এবং শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে, হয় সে ভাল কথা বলুক বা চুপ থাকুক ৷” (সহীহ আল-বুখারী ও মুসলিম) ৷ (F)