জিহ্বার রক্ষণাবেক্ষণ করা – ২
লিখেছেন: ' মুসলিম৫৫' @ বুধবার, মার্চ ১৭, ২০১০ (১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
মূল: ইমাম নববী
[আগের লেখার ধারাবাহিকতায়...............]
গীবত ও পরচর্চার নিষিদ্ধকরণ
এ দু’টো জিনিস হচেছ সবচেয়ে গর্হিত ও ঘৃণ্য জিনিসগুলোর অন্যতম, তবুও মানবজাতির মধ্যে এগুলো এমনভাবে ছড়িয়ে রয়েছে যে, কোন ব্যক্তিই এর থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়, শুধুমাত্র কিছু লোক ছাড়া ৷
গীবত বা পরনিন্দা তখনই করা হয়, যখন আপনি কোন ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কিছু উল্লেখ করেন যা (তার অনুপস্থিতিতে, উল্লিখিত হলে) সে ঘৃণা করতো বা শুনে কষ্ট পেতো; হোক তা তার শরীর সম্পর্কে, তার দ্বীনের আচরণাদি সম্পর্কে, তার দুনিয়াবী বিষয়াবলী সম্পর্কে, তার নিজের সম্পর্কে, তার শারীরিক গঠন সম্পর্কে, তার চরিত্র সম্পর্কে, তার সম্পদ সম্পর্কে অথবা তার সন্তান, তার বাবা, তার স্ত্রী, তার চাকর, তার গোলাম, তার পাগড়ী, তার পোশাক, তার হাঁটার ধরন, তার হাসি, তার অসচ্চরিত্রতা, তার ভ্রূকুটি করা, তার উৎফুল্লতা বা উপরোল্লিখিত যে কোন কিছুর সাথে সম্পর্কযুক্ত ৷ তেমনিভাবে, তা গীবত হবে যদি – আপনি ওরকম কিছু মুখে উচচারণ করেন, লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করেন বা আপনি তাকে চোখ, হাত বা মাথার ইশারায় নির্দেশ করেন ৷
শরীরের ক্ষেত্রে তখনই গীবত হয়, যখন আপনি বলেন: ‘সে অন্ধ’, ‘সে খোঁড়ায়; ‘সে ঝাপসা চক্ষু বিশিষ্ট’, ‘সে টেকো; ‘সে খাটো, ‘সে লম্বা,’ ‘সে কালো’, ‘সে হলদেটে’৷ তার দ্বীনের বৈশিষ্ট্যাবলীতে গীবত হবে, যখন বলা হয়: ‘সে একটা পাপী’ ‘সে একজন চোর’, ‘সে প্রতারক,’ ‘সে জালিম’, ‘সে তার সালাতকে হালকাভাবে দেখে’, ‘সে অপবিত্রতার ব্যাপারে বেখেয়ালী’, ‘সে তার বাবা-মার সাথে ভাল আচরণ করেনা’, ‘সে নিয়মিত যাকাত আদায় করে না’, এবং ‘সে পরনিন্দা (গীবত) থেকে বেঁচে থাকে না’। পার্থিব বিষয়ের ক্ষেত্রে পরনিন্দা বা গীবত হয়, যখন আপনি বলেন, ‘তার আচরণ খুব খারাপ’, ‘সে লোকদের ব্যাপারে অমনোযোগী’, ‘সে বেশী কথা বলে’, ‘সে বেশী খায় এবং ঘুমায়’, ‘সে ভুল সময়ে ঘুমায়’, ‘সে এমন স্থানে বসে থাকে যেটা তার নয়’ ইত্যাদি ৷
কারো বাবা-মার ক্ষেত্রে গীবত তখনই হবে, যখন আপনি বলেন, ‘তার বাবা একজন পাপী, ‘একজন ইন্ডিয়ান’, ‘একজন নাবাতিয়ান’, ‘একজন নিগ্রো’; ‘একটা লোফার’, ‘একজন বীজওয়ালা’, ‘একজন গরুর ব্যবসায়ী’, ‘একজন কাঠমিস্ত্রী’ ‘একজন কামার’, ‘একজন তাঁতী’; তার চরিত্র সম্পর্কে আপনি যখন উল্লেখ করেন, ‘তার আচরণ ভাল নয়’, ‘সে বদমেজাজী’, ‘সে ঝগড়াটে’, ‘সে খুব অপরিণামদর্শী ও অস্থির’, ‘সে জুলুমকারী,’ ‘সে দুর্বল’, ‘সে দুর্বল হৃদয়ধারী’, ‘সে দায়িত্বহীন’, ‘সে লম্পট’, ইত্যাদি ৷ পোশাকের ক্ষেত্রে : ‘এর হাতাগুলো প্রশস্ত’, ‘এর সেলাইগুলো ছোট’, ‘কি বিশ্রী পোশাক’! ইত্যাদি এবং অন্যান্য বিষয় ইত্যাদি ৷
অবশিষ্ট শ্রেণীগুলো সম্পর্কে উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে সহজেই অনুমান করা যায়, এ মূলনীতির ভিত্তিতে যে, কারো সম্পর্কে এমন কিছু উল্লেখ করা যা শুনতে সে অপছন্দ করে ৷
ইমাম আবু হামীদ আল-গাজ্জালী গীবত সম্পর্কে মতৈক্যকে এমনভাবে উল্লেখ করেছেন যে, “একজন ব্যক্তির অন্য লোকদের (তাদের অনুপস্থিতিতে) এমন কিছু উল্লেখ করা, যেটা উল্লিখিত হওয়া তাদের নিকট অপছন্দনীয় ৷”
পরচর্চা (নামিমাহ্) তখনই হয়, যখন কেউ একদল লোকের কথা অন্যদলের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়, এই নিয়তে যে, তাদের মধ্যে ঝগড়া বা বিরোধের সৃষ্টি হোক ৷
এ হচেছ এ দু’টোর সংজ্ঞা ৷ এগুলোর ব্যাপারে ইসলামী বিধান হচ্ছে যে, এগুলো হারাম, যার ব্যাপারে আলেমগণের কোন দ্বিমত নেই ৷ কুর’আন ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে এবং উম্মতের ঐক্যমত এগুলোর নিষিদ্ধ হওয়াকে সুনিশ্চিত করে ৷
আল্লাহ বলেন: “এবং তোমরা একে অপরের পিছনে নিন্দা করো না ৷” (সূরা হুজুরাত, ৪৯:১২)
এবং তিনি বলেন: “দুর্ভোগ প্রত্যেক সামনে এবং পিছনে নিন্দাকারীর’৷ (সূরা আল-হুমাজাহ, ১০৪:১)
এবং তিনি বলেন: “পশ্চাতে নিন্দাকারী, যে একের কথা অপরের কাছে লাগিয়ে বেড়ায় ৷” (সূরা কলম, ৬৮:১১)
হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি পরচর্চা করে বেড়ায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না ৷” (সহীহ বুখারী, মুসলিম)
ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) একদা দু’টি কবরের পাশ দিয়ে গেলেন এবং বললেন: “নিশ্চয়ই তারা (কবরবাসীগণ) নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছে এবং তারা কোন গুরুতর অপরাধের জন্য যন্ত্রণাভোগ করছে না ৷”
আল-বুখারীতে উল্লেখ আছে: “বরং এটি হচেছ বস্তুত একটি গুরুতর অপরাধ, প্রথমজনের ক্ষেত্রে, সে একের কথা অপরকে লাগিয়ে বেড়াতো এবং অপরজন, সে নিজেকে পেশাবের পবিত্রতা থেকে মুক্ত করতো না ৷” (সহীহ আল-বুখারী, মুসলিম)
আলেমগণ বলেন, “এবং তারা গুরুতর কিছুর জন্য নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছে না”-এর অর্থ হচেছ, তাদের মতে যা ‘গুরুতর কিছু’ ছিলনা, অথচ যেটা আসলে গুরুতর কিছু ছিল এবং তাদের সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা উচিত ছিল ৷
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা (তাঁর সাহাবীগণকে) বললেন: “তোমরা কি জান গীবত কি?” তারা বললেন, “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা.) সবচেয়ে ভাল জানেন ৷” তিনি বললেন: “তোমার ভাই সম্পর্কে এমনকিছু উল্লেখ করা (তার অনুপস্থিতিতে), যেটা সে ঘৃণা করে (যে সেটা উল্লেখিত হোক)” ।
তাঁকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হল: “যদি তার মধ্যে সেই দোষ থাকে, যেটা আমি তার সম্পর্কে উল্লেখ করলাম?” তিনি (সা.) উত্তর দিলেন: “তুমি তার সম্পর্কে যা বললে, সেটা যদি তার মধ্যে উপস্থিত থাকে, তবে তুমি তার গীবত করলে এবং তুমি তার সম্পর্কে যা বললে, তা যদি তার মধ্যে পাওয়া না যায়, তবে তুমি তার সম্পর্কে অপবাদ দিলে ৷” (সহীহ মুসলিম)
আবু বকর সিদ্দীক (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা) বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেন, “বস্তুত, তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের সম্মান তোমাদের জন্য পবিত্র, তেমনি এ দিনটি তোমাদের জন্য পবিত্র এ ভূমিতে, এ মাসে ৷ আমি কি তা পৌঁছিয়ে দিইনি ?” (সহীহ আল-বুখারী)
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বললাম: “আপনি সাফিয়্যা থেকে এই এই বেশী” ৷ [কোন কোন বর্ণনাকারী বলেছেন এটা বোঝাচ্ছে যে, তিনি ক্ষুদ্রাকৃতির ছিলেন], তো তিনি (সা.) বললেন: “তুমি এমন একটি কথা উচচারণ করলে, সেটিকে যদি সমুদ্রের পানির সাথে মিশ্রিত করা হত, তবে তা সে পানিকেও বিবর্ণ করে দিত ৷” (সহীহ আবু দাউদ, আত-তিরমিযী এবং আহমদ)
আত-তিরমিযী এ হাদীসকে হাসান সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন ৷ আমি(নববী) বলি যে, ‘বিবর্ণ’ (মাঝাজা) শব্দটির অর্থ হচেছ যে, “তা পানির সাথে এমনভাবে মিশ্রিত হত যে, তা পানির স্বাদ এবং গন্ধকে পরিবর্তন করে ফেলতো – এর দুর্গন্ধ ও বীভৎসতার কারণে ৷ এ হাদীসটি গীবত হারাম হওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণগুলোর অন্যতম, যদি না এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয় ৷
“এবং তিনি (রাসূল) কোন মনগড়া কোন কথা বলেন না, বরং এটি হচেছ ওহী যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়” ৷ (সূরা নজম, ৫৩:২-৩)
আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন: “যখন আমি আকাশে আরোহণ করলাম, আমি দেখলাম একদল লোকের নখগুলো পিতলের তৈরী, যার দ্বারা তারা নিজেদের মুখ ও বুকগুলো খামচাচ্ছিল ৷ ফলে আমি বললাম, “হে জিব্রাইল, এ লোকগুলি কে?” তিনি বললেন, “তারা হচ্ছে সে সমস্ত লোক যারা অন্যের গোশত খেতো অর্থাৎ গীবত করতো এবং তাদের অসম্মানিত করতো ৷” (সহীহ আহমদ, আবু দাউদ)
[চলবে.... ইনশা'আল্লাহ্!]
সুন্দর এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পোস্ট ।
আপনাকে ধন্যবাদ ।
@হাফিজ, ধন্যবাদ আপনাকেও!
[...] যেগুলো এখানে রয়েছে: http://www.peaceinislam.com/muslim55/4733/ http://www.peaceinislam.com/muslim55/4942/ http://www.peaceinislam.com/muslim55/5043/ http://www.peaceinislam.com/muslim55/5060/ [...]
[...] যেগুলো এখানে রয়েছে: http://www.peaceinislam.com/muslim55/4733/ http://www.peaceinislam.com/muslim55/4942/ http://www.peaceinislam.com/muslim55/5043/ http://www.peaceinislam.com/muslim55/5060/ [...]