জিহ্বার রক্ষণাবেক্ষণ করা – ৩
লিখেছেন: ' মুসলিম৫৫' @ সোমবার, মার্চ ২২, ২০১০ (৬:০৬ অপরাহ্ণ)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
মূল: ইমাম নববী
[আগের লেখার ধারাবাহিকতায়, যেগুলো এখানে রয়েছে:
www.peaceinislam.com/muslim55/4733/
www.peaceinislam.com/muslim55/4942/ ]
গীবতের সীমা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ
পূর্ববর্তী অধ্যায়ে, আমরা বলেছি যে, গীবত তখনই হয় যখন একজন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তি সম্পর্কে তার অনুপস্থিতিতে এমন কিছু ব্যক্ত করে, যা শুনতে সে ঘৃণা করে, এখন তা মৌখিক উক্তিই হোক বা লেখনীর মাধ্যমে বা হাত, মাথা বা চোখের ইশারায় হোক ৷
এর নির্দেশাবলী: এমন সবকিছু যার দ্বারা একজন ব্যক্তি অন্য এক মুসলিমের যে সকল দোষ রয়েছে তা বুঝাতে সক্ষম হয়, সেটিই হচেছ গীবত এবং এটা ‘হারাম’ ৷
উদাহরণস্বরূপ, কেউ যখন কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্য নিয়ে অন্য এক ব্যক্তিকে বলে ‘অমুক ব্যক্তি’ হাঁটার সময় খোঁড়ায় বা কুঁজো হয়ে থাকে বা এ ধরনের কিছু বলে ৷ এগুলো সবকিছুই হারাম (নিষিদ্ধ) – এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই ৷ এর আর একটি উদাহরণ হচেছ, একজন লেখক, যখন নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে ছোট করার উদ্দেশ্য নিয়ে লেখে, ‘অমুক অমুক’ ব্যক্তি একথা বলেছে…..”৷ এটি হারাম ৷ যাহোক, যদি তার এ উদ্দেশ্য থাকে সে ব্যক্তিটির দোষ উল্লেখ করলে কেউ সেটা অনুসরণ করবে না বা সেই ব্যক্তির জ্ঞানের অপূর্ণতাকে পরিস্কারভাবে তুলে ধরা, যাতে করে সে অন্যদের ভুল পথে পরিচালনা না করে বা মতামত কেউ গ্রহণ না করে, তবে সেটা গীবত নয় ৷ বরং, সেটা হচেছ উপদেশ (নাসীহাহ্) এবং একটি নৈতিক দায়িত্ব, যার কারণে সে পুরস্কৃত হবে যদি সত্যিই তার নিয়ত এমন থাকে ৷ তেমনিভাবে, যদি কোন লেখক বা কোন লোক সাধারণভাবে কোন কিছু বলে এভাবে “এ লোকগুলো বা এই দল এরকম চিন্তাভাবনা করে এবং এটি ‘দোষযুক্ত’ বা ‘ভুল’ বা ‘অজ্ঞানতা’ বা ‘অবহেলা’ বা এরকম কিছু, তাহলে সেটা গীবত নয় ৷ গীবত কেবলমাত্র তখনই হয় যখন কোন ব্যক্তি একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা একটি নির্দিষ্ট দলের লোকদের সম্পর্কে কিছু বলে (নাম উল্লেখপূর্বক) ৷
খারাপ ধরনের গীবতের মধ্যে আরেকটি হচেছ, যখন কেউ বলে: ‘কোন কোন ব্যক্তি এই ধরনের কাজ করছিল’ বা ‘আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ’ বা ‘কোন কোন ব্যক্তি যাদের জ্ঞান আছে বলে দাবী করে’ বা ‘কোন কোন মুফতী বা কোন কোন ব্যক্তি যারা নিজেদের উম্মতের সংশোধনকারী হিসেবে গণ্য করেন’ বা ‘যারা সংযমের দাবী করে বা যারা আমাদের অতিক্রম করে গিয়েছিল’ বা ‘কিছু লোক যাদের আমরা দেখেছিলাম বা এ ধরনের কিছু….’ এই এই করেছিল; কাউকে নির্দিষ্ট না করে, কিন্তু এরপরও যাকে কথাগুলো বলা হচেছ, তিনি বুঝতে পারেন কোন লোকদের সম্পর্কে বলা হচেছ, কেননা বক্তার কথার ধরনই এমন থাকে যে তা বোঝা যায় ৷
এর আর একটি ধরন হচেছ যে, ধার্মিক ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের গীবত ৷ কেননা তারা গীবত করে ফেলে যখন তারা (যাদের সম্পর্কে বলা হচেছ, তাদের নির্দিষ্ট না করেও) অন্যদের বোঝাতে সক্ষম হয় কাদের সম্পর্কে বলা হচেছ ৷ উদাহরণস্বরূপ, যখন তাদের কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘অমুক ব্যক্তিটি কেমন লোক?’ হয়ত তিনি উত্তর দেন, “আল্লাহ আমাদের সংশোধন করুন” বা “আল্লাহ আমাদের মাফ করুন” বা “আল্লাহ তাকে সংশোধন করুন”, “আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই”, “আমরা আল্লাহর কাছে মদ থেকে পানাহ চাই” বা “আল্লাহ আমাদের তাওবা কবুল করুন” এবং এ ধরনের উক্তি সমূহ, যার দ্বারা যে কেউ ঐ ব্যক্তির দোষসমূহ সম্পর্কে বুঝতে পারে ৷ এগুলো হচেছ খারাপ ধরনের গীবত৷ তেমনিভাবে, এটি একই রকম, যদি কেউ বলে: “অমুক ব্যক্তি পরীক্ষিত হচেছ যেমনিভাবে আমরা সকলেই পরীক্ষার সম্মুখীন হই” বা “আমরা সকলেই এ ধরনের কাজ করে থাকি ৷” এগুলো হচেছ গীবতের উদাহরণ এবং ব্যাপারটি যদি এরকম নাও হয়, তবুও আমরা গীবতের মূলনীতির দিকে ফিরে যাবো যেটা হচেছ: একজন ব্যক্তির জন্য অন্য লোকদের দোষ সম্পর্কে শ্রোতাকে অবগত করা (তাদের নামোল্লেখ না করেও), যা আগে বর্ণিত হয়েছে ৷
গীবত করা যেমনভাবে একজন বক্তার জন্য হারাম, তেমনিভাবে এটি তার জন্য হারাম যে গীবত শোনে এবং সেটাকে সমর্থন করে ৷ সুতরাং, একজন ব্যক্তির পক্ষে যে কোন ব্যক্তিকে গীবতের মত খারাপ কাজ করতে দেখলে তাকে বাধা দেয়া তার জন্য অবশ্যকর্তব্য যতক্ষণ না এতে তার কোন সামনাসামনি ক্ষতির আশংকা থাকে ৷ কিন্তু তিনি যদি কোন ক্ষতির ভয় করেন, তবে তিনি সেই গীবত বা পরনিন্দাকে অন্তর থেকে ঘৃণা করবেন এবং নিজেকে এ ধরনের বৈঠক থেকে দূরে রাখবেন ৷ যদি তার এরূপ ক্ষমতা থাকে যে, তিনি সেটাকে তার জিহ্বা দিয়ে অস্বীকার করতে পারবেন বা বিষয়কে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারবেন, তবে তার সেটাই করা উচিত এবং যদি তা না করেন, তবে সেটা হবে একটা গুনাহর কাজ ৷ যদি তিনি মুখে চুপ করতে বলেন, কিন্তু মনে মনে গীবতকে চালু রাখার ইচছা করেন, তবে আবু হামিদ আল গাজ্জালী বলেছেন: “এটি হচেছ মুনাফিক্বী ৷ এটি গুনাহ থেকে বাঁচাতে পারবেনা ৷ বরং, তাকে অবশ্যই সেটাকে অন্তর থেকে ঘৃণা করা উচিত ৷”
যদি তাকে এ ধরনের বৈঠকে বসে থাকার জন্য চাপ দেয়া হয় যেখানে পরনিন্দা হচেছ বা তিনি তা নিষিদ্ধ করতে ভয় পান বা তিনি বাধা দেন, কিন্তু তাতে যদি লাভ না হয় এবং তাদের থেকে বিচিছন্ন হওয়ারও কোন পথ না থাকে, এমতাবস্থায় এ ধরনের গীবতে কান দেয়া বা এর প্রতি মনোযোগ দেয়া তার জন্য হারাম ৷ এর পরিবর্তে, তিনি আল্লাহর জিকিরে মগ্ন হবেন তার জিহবা বা অন্তর দ্বারা বা কেবলমাত্র তার অন্তর দ্বারা ৷ বা তিনি ভাল কিছু চিন্তা করতে থাকবেন যাতে করে তিনি গীবত শোনা থেকে বিরত থাকতে পারেন ৷ এরকম পরিস্থিতিতে তিনি এ ধরনের পদক্ষেপগুলো নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না ৷ যদি তার পক্ষে এরপর তাদের নিকট হতে বিচিছন্ন হওয়া সম্ভবপর হয় এবং তারা তখনও পরনিন্দায় মগ্ন থাকে, তবে নিজেকে আলাদা করা তার জন্য অবশ্যকর্তব্য ৷ আল্লাহ বলেন :
“এবং তুমি যখন দেখ, তারা আমার আয়াতসমূহ সন্বন্ধে উপহাসমূলক আলোচনায় মগ্ন হয় তখন তুমি তাদের নিকট হতে সরে পড়বে, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে প্রবৃত্ত হয় এবং শয়তান যদি তোমাকে ভ্রমে ফেলে তবে স্মরণ হওয়ার পর যালিম সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না ৷” (সূরা আল-আন‘আম, ৬:৬৮)
@হাফিজ,সব সময়ের মতই – ধন্যবাদ!
আলহামদুলিল্লাহ, শিক্ষনীয় পোষ্ট, ভাই।
@দ্য মুসলিম, ধন্যবাদ!
ভাষাটা আরেকটু সহজ হলে ভালো হত।
নিচের প্যারাটা বুঝতে খুবই কষ্ট হলো, তারপরও মনে হয় পুরোটা বুঝি নাই!
খারাপ ধরনের গীবতের মধ্যে আরেকটি হচেছ, যখন কেউ বলে: ‘কোন কোন ব্যক্তি এই ধরনের কাজ করছিল’ বা ‘আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ’ বা ‘কোন কোন ব্যক্তি যাদের জ্ঞান আছে বলে দাবী করে’ বা ‘কোন কোন মুফতী বা কোন কোন ব্যক্তি যারা নিজেদের উম্মতের সংশোধনকারী হিসেবে গণ্য করেন’ বা ‘যারা সংযমের দাবী করে বা যারা আমাদের অতিক্রম করে গিয়েছিল’ বা ‘কিছু লোক যাদের আমরা দেখেছিলাম বা এ ধরনের কিছু….’ এই এই করেছিল; কাউকে নির্দিষ্ট না করে, কিন্তু এরপরও যাকে কথাগুলো বলা হচেছ, তিনি বুঝতে পারেন কোন লোকদের সম্পর্কে বলা হচেছ, কেননা বক্তার কথার ধরনই এমন থাকে যে তা বোঝা যায় ৷
@সাদাত, দুঃখিত! – একটু অবাকও হয়েছি!!
@মুসলিম৫৫,
অবাক হলেন কেন?
জটিল বিষয়। আমল করা ব্যাপক কঠিন।