লগইন রেজিস্ট্রেশন

জিহ্বার রক্ষণাবেক্ষণ – ৬

লিখেছেন: ' মুসলিম৫৫' @ রবিবার, এপ্রিল ৪, ২০১০ (১২:৫০ অপরাহ্ণ)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!

মূল: ইমাম নববী

[আগের লেখার ধারাবাহিকতায়, যেগুলো এখানে রয়েছে:
www.peaceinislam.com/muslim55/4733/
www.peaceinislam.com/muslim55/4942/
www.peaceinislam.com/muslim55/5043/
www.peaceinislam.com/muslim55/5060/
www.peaceinislam.com/muslim55/5072/ ]


যখন কেউ তার শাঈখ, বন্ধু বা অন্য কোন ব্যক্তির সন্বন্ধে গীবত শুনে, তখন সে কি করবে?

একজন ব্যক্তি, যে একজন মুসলিম ভাই সম্পর্কে গীবত শুনে, তার উচিত এর প্রতিবাদ করা এবং যে ব্যক্তি গীবত করছে তাকে বাধা দেয়া ৷ যদি তিনি তাকে তার মুখ দ্বারা বাধা দিতে না পারেন, তবে তিনি তার হাত দ্বারা তাকে বাধা দিবেন ৷ যদি তিনি তার হাত বা জিহবা কোনটি দ্বারাই বিরত না রাখতে সক্ষম হন, তবে তার সে স্থানটি ত্যাগ করা উচিত ৷ এবং যদি তিনি শুনেন যে, তার শাঈখ বা শিক্ষক সম্পর্কে গীবত করা হচ্ছে – বা যে কেউ, যার তার উপর অধিকার রয়েছে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে, বা এমন একজন ব্যক্তি সম্পর্কে গীবত করা হচ্ছে যিনি সৎকর্মশীল ও উচ্চমর্যাদাসম্পন্নদের অন্তর্ভুক্ত, তবে তার উদ্বেগ আরও বেশী হওয়া উচিত ৷

আবু আদ দারদা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্মানহানি থেকে বিরত থাকেন, আল্লাহ তার চেহারাকে শেষ বিচারের দিনে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন ৷” (হাসান বা সহীহ আত-তিরমিযী, আহমদ)

সহীহ আল বুখারীতে ও মুসলিমে ইতবান (বা কারো কারো উচ্চারণে উৎবান) এর দীর্ঘ ও বিখ্যাত হাদীস হতে বর্ণিত, যে, “রসূলুল্লাহ (সা.) একবার সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন, তখন লোকেরা বলল: “মালিক ইবন আদ-যুখসুম কোথায়?” একজন লোক বলল: “ঐ মুনাফিক! আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) তাকে ভালবাসেন না”। তখন রাসূল (সা.) বললেন, “ঐ কথা বলনা! তুমি কি দেখনা সে বলে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) এবং এর মাধ্যমে সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে ?” (সহীহ আল বুখারী, মুসলিম)

কাব ইবন মালিক (রা.) তার তওবা সংক্রান্ত দীর্ঘ হাদীসে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাবুকে (Tabuk) কয়েকজন লোকের সাথে বসা অবস্থায় জিজ্ঞাসা করলেন, “কাব বিন মালিক কি করছিল?” বানু সালিম গোত্রের এক লোক বলল, “হে আল্লাহর রাসূল (সা.) তার জোববার সৌন্দর্য ও তার জমকালো পোশাকের আকর্ষণ তাকে প্ররোচিত করে ও তার বিলম্ব ঘটায় (অর্থাৎ অভিযানে গিয়ে যুদ্ধ করতে!)”
এটা শোনামাত্র মুয়ায ইবন জাবাল (রা.) তাকে বললেন: “তুমি কতই না মন্দ কথা বললে! আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি হে রাসূলুল্লাহ (সা.), আমরা তার সম্পর্কে ভাল ছাড়া মন্দ কিছু জানিনা ৷” ফলে, রাসূলুল্লাহ (সা.) চুপ করে রইলেন ৷ (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)

মুয়ায ইবন আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি একজন বিশ্বাসীকে একজন মুনাফিক হতে রক্ষা করে, আল্লাহ তা’আলা একজন ফেরেশতা পাঠাবেন যিনি তার চামড়াকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করবেন এবং যে, কোন একজন মুসলিমকে হেয় করার মনোভাব নিয়ে, কোন কারণে তাকে দোষী সাব্যস্ত করল, আল্লাহ তা’আলা তাকে জাহান্নামের সেতুর উপর ঝুলিয়ে রাখবেন যতক্ষণ না সে তার কথা ফিরিয়ে নেয় ৷” (হাসান, আবু দাউদ, আহমদ)

অন্তরের গীবত

কোন ব্যক্তি সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করা যেমনি নিষিদ্ধ, তেমনি কারো সম্পর্কে কু ধারণা পোষণ করাও নিষিদ্ধ ৷ সুতরাং, যেমনিভাবে কোন ব্যক্তির দোষত্রুটি সম্পর্কে অন্যদের বলা হারাম, তেমনিভাবে নিজের কাছে তা বলা এবং তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখাও হারাম ৷ আল্লাহ বলেন:
“হে মুমিনগণ! তোমরা অধিক অনুমান করা হতে দূরে থাক, কারণ অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে পাপ ৷” (সূরা হুজুরাত, ৪৯:১২)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন: “সন্দেহ থেকে বেঁচে থাকো, কেননা সত্যিই সন্দেহ হচ্ছে সবচেয়ে অসত্য বক্তব্য ৷” (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)

অন্তরের গীবত হচ্ছে সেই গীবত, যখন হৃদয় কারো সম্পর্কে দৃঢ়ভাবে খারাপ ধারণা পোষণ করে থাকে ৷ তবে আলেমগণের মতে, যে চিন্তাসমূহ হঠাৎ করেই মনে উদয় হয় এবং যেটা মানুষ নিজের মনে বলে থাকে, সেগুলো যতক্ষণ না দৃঢ়ভাবে অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বা তার মধ্যে চলমান থাকছে, ততক্ষণ তা ক্ষমাযোগ্য ৷ এটি এ কারণে যে, এ ধরনের ধারণাকে রোধ করা বা না করার ব্যাপারে তার কোন হাত নেই ৷

আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন :
“আসলেই আল্লাহ আমার উম্মতকে অব্যাহতি দিয়েছেন, তাদের অন্তরসমূহ তাদের যা বলে থাকে তা থেকে, যতক্ষণ না তারা সেটা প্রকাশ করে বা তা কার্যে পরিণত করে ৷” (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)

স্কলারদের মতে, “এটা সেই সমস্ত ধারণাসমূহ নির্দেশ করে, যেগুলো একজনের মনে জন্ম নেয়, কিন্তু তা প্রতিষ্ঠিত বা স্থায়ী হয়না ৷”

এবং তারা বলেছেন : “ধারণাগুলো যদি গীবত, অবিশ্বাস বা এ ধরনের কিছু হয়, তবে সেগুলো বিবেচনার বিষয় নয় (অর্থাৎ সেগুলো ক্ষমার্হ, যতক্ষণ সেগুলো স্থায়ী না হয় ), উদাহরণস্বরূপ যে ব্যক্তির অন্তর কুফরী চিন্তায় ভরে উঠে, কিন্তু সেগুলো কেবলই ধারণা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে, সেগুলো কার্যকর করার কোন উদ্দেশ্য যার থাকে না এবং যখনই তা মনে আসে তখন তিনি সেগুলো মন থেকে ঝেড়ে ফেলেন, তবে তিনি অবিশ্বাসী বা গুনাহগার নন ৷”

সাহাবাগণ একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বললেন: “হে রাসূলুল্লাহ (সা.)! আমাদের কারো কারো মনে এমন চিন্তার উদয় হয় যেটা সম্পর্কে কথা বলাও ভয়ংকর ৷” তখন তিনি (সা.) বললেন, “সেটা হচ্ছে ঈমানের প্রমাণ ৷” (সহীহ মুসলিম)

এ চিন্তা বা ধারণাসমূহ এ কারণে ক্ষমাযোগ্য যে, এ ধরনের চিন্তাকে পরিহার করা বা বাধা দেয়া অসম্ভব ৷ বরং একজন ব্যক্তি এ ধরনের চিন্তাকে মনের মধ্যে স্থায়ী ও প্রতিষ্ঠিত হতে বাধা দিতে পারেন ৷ এজন্যই অন্তরে এ সমস্ত চিন্তা স্থায়ী রাখা হারাম বা নিষিদ্ধ ৷

তাই যখনই এ ধরনের চিন্তাসমূহ – যেগুলো গীবত বা অন্য ধরনের পাপপূর্ণ চিন্তা সম্বলিত – কারো মনের মধ্যে উদিত হয়, সেগুলো তাড়িয়ে দেয়া, সেগুলো থেকে দূরে থাকা এবং মনে এ সম্পর্কে ব্যাখ্যা বা ওজর পেশ করা উচিত যাতে করে মনে যা উদিত হয় তা পরিবর্তিত হয়ে যায় ৷

আবু হামিদ আল গাজ্জালী তার ইয়াহ্‌ইয়া উলুমুদ্দিন-এ বলেছেন: “যদি আপনার মনে কোন কু ধারণা উত্থিত হয়, তবে সেগুলো শয়তানের ওয়াসওয়াসার ফলে ঘটে থাকে, যা সে আপনার মনে স্থায়ী করে ৷ সুতরাং, আপনার উচিত সেগুলোকে অস্বীকার ও বাতিল করা কেননা সে (শয়তান) হচ্ছে মন্দ কর্মীদের/অসৎ কর্মীদের (ফাসিক) মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ৷
এবং আল্লাহ বলেন :
‘হে মু’মিনগণ! যদি কোন পাপাচারী তোমাদের নিকট কোন বার্তা আনয়ন করে, তোমরা তাহা পরীক্ষ করিয়া দেখিবে, পাছে অজ্ঞানতাবশত তোমরা কোন সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করিয়া বস, এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদিগকে অনুতপ্ত হইতে হয় ।’ (সূরা হুজুরাত, ৪৯:৬)৷

তাই ইবলিসে বিশ্বাস করা আপনার উচিত নয় ৷ এবং যদি এমন কোন লক্ষণ প্রকাশিত হয় যে, কোন ব্যক্তি দুর্নীতিবাজ কিন্তু সে এর বিপরীতটি করে, তবে তার সম্পর্কে কুধারণা করা যাবে না ৷ কারো সম্পর্কে কুধারণা পোষণ করার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে যে, আপনার অন্তর তার ব্যাপারে পরিবর্তিত হয়ে যাবে অর্থাৎ আগে যে রকম ছিল সেরকম থাকবেনা, আপনি তার থেকে পালিয়ে বেড়াবেন এবং তাকে আপনার অসহ্য মনে হবে ৷ এবং তার জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া, তার জন্য সহমর্মিতা অনুভব করা বা তার প্রতি দয়া প্রকাশের ব্যাপারে আপনি অলসতা অনুভব করবেন ৷ এবং সত্যি শয়তান একজন ব্যক্তির হৃদয়ের কাছাকাছি চলে আসে যখন মানুষের মধ্যে যৎসামান্য ত্রুটি দেখা দেয়, এবং সে এগুলো আপনার মধ্যে তৈরী করে যদিও আপনি মনে করেন যে, এগুলো আপনার বিচক্ষণতা, জ্ঞান ও সতর্কতার জন্য ঘটেছে ৷ কিন্তু একজন বিশ্বাসী আল্লাহর নূর দ্বারা দেখে ৷ তাই এ ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে শয়তানের প্রতারণামূলক ও মন্দ ষড়যন্ত্রের শিকার ৷ এবং কোন বিশ্বাসী বা ঈমানদার ব্যক্তি যদি আপনাকে এ সম্পর্কে কিছু জানায়, তবে না তাকে বিশ্বাস করবেন, না তাকে অস্বীকার করবেন ৷ যাতে করে আপনার মনে কারো সম্পর্কে কুধারণা না আসে ৷

যখনই কোন মুসলিম সম্পর্কে কোন মন্দচিন্তা আপনার মনে উদয় হয়, তখন আপনার উচিত তার সম্পর্কে আরও উদ্বিগ্ন ও সহানুভূতিশীল হওয়া, কেননা তা শয়তানকে রাগান্বিত করে এবং আপনার নিকট হতে তাকে সরিয়ে দেয় ৷ ফলে সে আপনার মধ্যে এ ধরনের খারাপ চিন্তা আর স্থাপন করতে পারবে না এই ভয়ে যে, সেগুলো কেবলমাত্র লোকটির জন্য আপনার দোয়াই বৃদ্ধি করবে ৷ এবং যখন আপনি কোন মুসলমান ভাই-এর দোষ বা ভুল সম্পর্কে কোন প্রমাণের ভিত্তিতে অবগত হন , যেটা অনস্বীকার্য, তখন আপনি তাকে উপদেশ দিবেন এবং শয়তানকে আপনি ধোঁকায় ফেলার সুযোগ দিবেন না যাতে আপনি গীবতের দিকে চলে যান ৷ এবং আপনি যখন ঐ ব্যক্তিকে মৃদু র্ভৎসনা করবেন তখন এমনভাবে তাকে তিরস্কার করবেন না যে, আপনি তার ক্ষুদ্রতা সম্পর্কে জেনে খুশী এবং সন্তুষ্ট ৷ বরং, এমনভাবে দুঃখিত হওয়া উচিত, যেমনিভাবে আপনি নিজের মধ্যে কোন দোষত্রুটি দেখলে দুঃখিত ও হতাশ হন ৷ এবং তিরস্কার ব্যতীত তার গুনাহমুক্ত হওয়া আপনার কাছে আরো প্রিয় হওয়া উচিত ৷”

এগুলো হচ্ছে আল-গাজ্জালীর মতামত ৷ আমার (অর্থাৎ ইমাম নববীর) মতে, কোন ব্যক্তির মনে যদি অন্য কোন ব্যক্তি সম্পর্কে মন্দ ধারণা দেখা দেয়, তবে তার উচিত সেসব খারাপ চিন্তাকে দূর করা – যদি না এভাবে চিন্তা করার মধ্যে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কোন মঙ্গল থাকে ৷ সুতরাং যদি এ ধরনের কোন কারণ থাকে, তবেই তার দোষত্রুটি সম্পর্কে চিন্তা করা অনুমোদিত ৷ এমনকি সেটা সম্পর্কে কোন সাক্ষী বা সংবাদদাতার ভিত্তিতে সমালোচনা করা বা সতর্ক করা জায়েয ৷

[চলবে ...............ইনশা'আল্লাহ্!]

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
২৩২ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)

৩ টি মন্তব্য

  1. আলহামদুলিল্লাহ।
    আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল প্রকার গীবত থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দিন। আমিন।

    মুসলিম৫৫

    @দ্য মুসলিম, আমীন!! JazakAllahu Khair!