লগইন রেজিস্ট্রেশন

আজ তারাবী পড়ে আসলাম…

লিখেছেন: ' মুসলিম৫৫' @ শুক্রবার, অগাষ্ট ১৩, ২০১০ (২:৩৬ অপরাহ্ণ)

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
السلام عليكم ورحمة الله و بركاته

আজ তারাবী পড়ে আসলাম ঢাকার অভিজাত এলাকার একটা মসজিদে। আমি বেশ দূর থেকে ওখানে যাই – একটু ভালো ক্বিরাত শোনার জন্য – তিন জনে পড়েন, আর ধীর গতিতে পড়েন। কিছুটা আরবী বুঝি বলেও, ভালো তেলাওয়াত শুনতে খুব ভালো লাগে। মসজিদের যেখানটায় আমি ছিলাম (নীচের তলার প্রথম সারিতে), তার আশে পাশে ছিলেন বাংলাদেশের অভ্যুদয় থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক অতীতের অনেক জেনারেলরা – ৪তারা, ৩ তারা, ২ তারা ও ১ তারা জেনারেলরা – যাদের পদভারে একসময় মাটি কেঁপেছে – যাদের চিৎকার করা খালি গলার কমান্ডে পুরা প্যারেড স্তব্ধ হয়ে গেছে। আর লাল ফিতা ছাড়াও যারা চাকুরী করেছেন – তেমন বহু ক্যাপ্টেন বা মেজর যে ঐ জামাতে ছিলেন, তা বলাই বাহুল্য। আজ তারা দেড় ঘন্টারও বেশী সময় ধরে দাঁড়িয়ে থেকে ‘ঈশা ও বিতর সহ তারাবী পড়ছেন কেন?? একদম সহজ উত্তর হচ্ছে: তারা সকলেই বিশ্বাসী। বাংলাদেশের সকল সাধারণ মসজিদে, প্রথা অনুযায়ী, আজ দেড় পারা পড়ার কথা – যারা “হাফিজী কুর’আন” সম্বন্ধে জানেন, তারা জেনে থাকবেন যে, এভাবে পড়তে গেলে প্রতি রাকাতে কতটুকু পড়তে হবে তাও একধরনের নির্ধারিত। আজকের তারাবীর ৭ম রাকাত শেষ হলো সূরা বাক্বারার শেষ আয়াত দিয়ে:

رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

“…………….Our Lord! Condemn us not if we forget or fall into error; our Lord! Lay not on us a burden like that which Thou didst lay on those before us; our Lord! lay not on us a burden greater than we have strength to bear. Blot out our sins, and grant us forgiveness. Have mercy on us. Thou art our Protector; help us against those who stand against Faith.”

“…………হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না ৷ হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন ৷ হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই ৷ আর আপনি আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন ৷ আপনি আমাদের অভিভাবক ৷ অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন ৷ “

এই আয়াতটা দিয়ে আমি অনেক সময় অনেক ‘আলেমকে মুনাজাত করতে শুনেছি – আর সে সময় তাঁদের কান্না লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতেও দেখেছি। মক্কার মসজিদুল হারামের ঈমাম আব্দুর রহমান আস সুদাইসকেও কুর’আন খতমের সাথে সাথে করা দোয়াতে এই আয়াত উচ্চারণ করে কাঁদতে শুনেছি। অথচ, আজ আমার তারাবী নামায পড়া মসজিদে কোন commotion টের পেলাম না। আজকের তারাবীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিও হয়তো ঐ আয়াত শুনেছেন, তিন বাহিনীর প্রধানরাও শুনেছেন, ধরে নিচ্ছি সকল মুসলিম ও পুরুষ মন্ত্রীরাও শুনেছেন, আমলারা শুনেছেন, দেশের নের্তৃবর্গ শুনেছেন – আর আমাদের অবসর প্রাপ্ত faithful জেনারেলদের সাথে সাথে, আমার মত ম্যাঙ্গো-পিপলরা তো শুনেছিই। শেষ লাইনে আমরা কি বললাম? “অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন ৷” আমরা কি বুঝলাম আমরা কি চাইলাম? নাকি আল্লাহর সাথে একধরনের “ফাজলামি” করলাম – শুধু বলার জন্যই একটা কথা বললাম – কিছু mean করলাম না! আসলে তো শয়নে-স্বপনে-নিদ্রায়-জাগরণে আমরা “কাফির সম্প্রদায়ের” মত হবার প্রাণান্তকর চেষ্টায় “মুষিক-দৌড়ে” ব্যস্ত! এভাবে, “যা বলা হলো, তা mean না করার” জন্যই একদিন মধ্যযূগীয় বুখারা, সমরখন্দ তথা বাগদাদের উপর আল্লাহর wrath বা “গদব” হিসেবে নেমে এসেছিল দুর্বার মঙ্গোলদের খড়গ। আমার তো ভয় হয়, প্রার্থনায় দাঁড়িয়ে যা mean করি না তা বলার জন্য, আমাদের জন্যও পৃথিবীর কোন দূর-দূরান্তে হয়তো প্রস্তুত হচ্ছে কোন “নব্য-মঙ্গোল” বাহিনী – কখন আমাদের উপর তারা আল্লাহর wrath হিসেবে নেমে আসবে, তা কেবল সময়ের ব্যাপার! বিশ্বাসী মুসলিম পাঠকগণ – আপনাদের কি মনে হয়??

[লেখাটা গতকালের তারাবী থেকে ফিরে এসে লেখা।]

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
১৩৪ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)

১ টি মন্তব্য

  1. সোবহান আললাহ। আপনার লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ। সুরা বাকারার শেয দুই আয়াতের অতীব ফজিলত রয়েছে। এ দুটি আয়াত এমন একজন ফেরস্তা এনেছেন যিনি প্রথমবারের মত পৃথীবিতে আকাশের দড়োজা খুলে এসে নেমেছেন শুধু এদুটি আয়াত নিয়ে আসার জন্য। এদুটো আয়াত বুঝে পড়লে কান্না আসারই কথা। আমরা অধিকাংশই সুর করে আল কুরআন পড়ি কিন্তু অর্থ বুঝার চেষ্টা করি না।যার ফলে অন্তরে কোন দাগ কাটে না। ফলে ধর্ম পালন প্রায়ই ‘শোবিজ’ বা সামাজিক অনুষ্ঠানের মত হয়ে গেছে।নাস্তিকেরাও দাবী করে তাদের জানাজা পড়ার অধিকার আছে – যেন এটা তাদের সামাজিক অধিকার। কিছু মোল্লা তাদের জানাজা ও পড়তে যান।শয়তান চায় আমরা যেন ধর্ম তথা আল্লাহর পথ থেকে দূরে থাকি- শুধু ধর্ম পালনের নামে ‘শোবিজ’ করেই ব্যস্ত থাকি। আল্লাহ সোবহানল্লাহ তালা আমাদের সকলকে সঠিকভাবে পরিচালিত করুন- আমীন।