রামাদানে রোজা রাখা – শেষ পর্ব
লিখেছেন: ' মুসলিম৫৫' @ সোমবার, অগাষ্ট ১৬, ২০১০ (১:২৩ পূর্বাহ্ণ)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
আমরা আগে বলেছিলাম যে,
রামাদানে রোজা রাখা - ইসলামের ৫টি স্তম্ভের একটি।
আমরা রামাদান নিয়ে আমাদের আলোচনার শেষভাগে উপনীত হয়েছি – রামাদানে রোজা রাখা নিয়ে আমাদের লেখার এটাই শেষ পর্ব। রামাদান আমাদের মাঝে কোন পরিবর্তন আনতে পারছে/পারলো কিনা, আমরা আমাদের গুনাহ্ মাফ করানোর যথেষ্ট চেষ্টা করতে পারলাম কিনা, আরেকটা সুযোগ (বা আরেকটি রামাদান) আমাদের জীবনে আদৌ আসবে কিনা, আজ থেকে নিয়ে রামাদান মাসের যে কয়টা দিন বাকী রয়েছে, সে কয়টা দিনকে কিভাবে সব চেয়ে বেশী কাজে লাগাতে পারি ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে পারি আমরা। এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কিছু তথ্য দিয়ে শেষ করবো ইনশা’আল্লাহ্!
সিয়াম বা রোজার উপকারীতা সম্বন্ধে ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন,
“রোজা রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে কামনা-বাসনার জোয়াল থেকে মানুষের আত্মাকে মুক্ত করা এবং তার পশু সত্ত্বাকে নিয়ন্ত্রিত রাখা, এবং এর মধ্য দিয়ে সে আত্মশুদ্ধি ও স্থায়ী পরিতৃপ্তির ল্ক্ষ্য অর্জন করে। ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মাধ্যমে লোভ ও লালসার প্রবণতাকে হ্রাস করা হচ্ছে এর উদ্দেশ্য – যাতে সে উপলব্ধি করে যে, পৃথিবীতে কত মানুষ সামান্য একটু খাদ্য ছাড়াই তারই মত ক্ষুধার অনুভূতি নিয়ে দৈনন্দিন জীবন যাপন করছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে শয়তানের জন্য, তাকে ধোকা দেয়ার কাজটিকে কঠিন করে তোলা এবং স্বীয় অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে এমন সব কাজ থেকে বিরত রাখা যেগুলোর মাঝে তার জন্য দুই জাহানের ক্ষতি নিহিত রয়েছে। রোজা তাই হচ্ছে আল্লাহ্ ভীরুদের জন্য লাগাম স্বরূপ, সংগ্রামরত যোদ্ধাদের জন্য ঢাল স্বরূপ এবং গুণীজনদের জন্য শৃঙ্খলা।”
যারা সঠিকভাবে সিয়াম সম্পূর্ণ করে না বা অশুদ্ধ পন্থায় রোজা ভাঙ্গে, তাদের শাস্তি সম্বন্ধে সতর্ক করে রাসূল (সা.)-এঁর একটি হাদীস রয়েছে :
“আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম, তখন দুইজন লোক আমার কাছে এলেন এবং আমার বাহু ধরলেন। তারা আমাকে একটা খাড়া পাহাড়ের কাছে নিয়ে এসে বললেন ‘(পাহাড়ে) ওঠো’। আমি বললাম, ‘আমি তা করতে সক্ষম নই।’ তারা বললেন, ‘আমরা আপনার জন্য তা সহজ করে দেবো।’ আমি তখন পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত ওঠা অবধি চলতে থাকলাম, সেখানে পৌঁছে করুন আর্তনাদ শুনতে পেলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘এসব কিসের আর্তনাদ?’ তারা বললেন, ‘এসব হচ্ছে জাহান্নামের আগুনের বাসিন্দাদের আর্তচিৎকার।’ তারা আমাকে আরো সামনে নিয়ে গেলেন, যেখানে আমি আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা লোকজনের একটা সমষ্টি দেখতে পেলাম যাদের চোয়ালের হাড়গুলো ভাঙ্গা এবং সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আমি বললাম, ‘এরা কারা?’ তিনি বললেন, ‘এরা হচ্ছে এমন লোকজন, যারা সঠিক সময়ের আগেই, তাদের রোজা ভঙ্গ করেছিল।” (ইবন হিব্বান ও ইবন খুজাইমা কর্তৃক সংগৃহীত – আলবানীর মতে সহীহ)।
যে রোজা রাখে না, তার বেলা বিধান:
কোন ব্যক্তি যদি সিয়ামের ফরজিয়াত বা সিয়াম যে ফরজ তা অস্বীকার করে, তবে সে “কাফির” হয়ে যায়। ফরজ হিসাবে রোজার নির্ধারণ ও মর্যাদা কুর’আনে ও বহু হাদীসে প্রমাণিত।
আল-যাহাবী লিখেছেন :
“প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাসীদের মতে, অসুস্থ হওয়া ছাড়া – যে কেউ যদি রামাদান মাসের রোজা ছেড়ে দেয়, তবে সে একজন ব্যভিচারী বা মদ্যপায়ীর চেয়েও অধম। আসলে তখন তার ইসলামকে নিয়ে সন্দেহ জাগে এবং সে “যিন্দিক” কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয় – তাদের একজন যারা ইসলামকে ধ্বংস করে।”
ফি আমানিল্লাহ্!