লগইন রেজিস্ট্রেশন

ক্রান্তিলগ্নে ইসলাম – ২

লিখেছেন: ' মুসলিম৫৫' @ মঙ্গলবার, মে ২৪, ২০১১ (১১:০৪ অপরাহ্ণ)

বিসমিল্লাহির রাহমানি রাহিম
আস সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

…….পূর্বে প্রকাশিত লেখার সূত্র ধরে…..
[এর আগের পর্বটি রয়েছে এখানে:

www.peaceinislam.com/muslim55/9899/

এরপর ১৯৩৪ সালের লেখা Islam at the Crossroads বইয়ের মূল "পূর্বকথা" বা Foreword-এ মুহাম্মাদ আসাদ, ২২+ বয়সে তিনি যখন প্রথম মুসলিমদের সাথে, মুসলিম সমাজের সাথে এবং মুসলিম বিশ্বের সাথে পরিচিত হলেন, তাঁর তখনকার অনুভূতির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন:

"I saw before me a social order and an outlook on life fundamentally different from the European; and from the very first there grew in me a sympathy for the more tranquil - I should rather say more human - conception of life, as compared with the hasty, mechanized mode of living in Europe...... ....At the time in question, that interest was not yet strong enough to draw me into the fold of Islam, but it opened to me a new vista of a progressive human society, organized with a minimum of internal conflicts and a maximum of real brotherly feeling." (Page#10, Islam at the Crossroads - Muhammad Asad)

তিনি বলছেন: "আমি আমার সামনে এমন একটা সামাজিক বিন্যাস ও জীবনের প্রতি এমন একটা দৃষ্টিভঙ্গী/মনোভাব দেখতে পেলাম, যা মৌলিকভাবেই জীবনের প্রতি ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গীর চেয়ে ভিন্ন; আর প্রথম থেকেই আমার ভিতর ঐ অধিকতর প্রশান্ত - অথবা, আমি বরং বলবো যে ইউরোপীয় ত্রস্ত ও যান্ত্রিক জীবনযাত্রার চেয়ে, জীবনের প্রতি অধিকতর মানবিক - ঐ দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতি একটা মমতা জন্মাতে শুরু করে। ......আমি যে সময়ের কথা বলছি, ইসলাম সম্বন্ধে আমার আগ্রহ তখনো এমন প্রবল হয়ে ওঠেনি যে, তা আমাকে ইসলামের জগতে অন্তর্ভুক্ত করে নেবে, কিন্তু তা আমার সামনে একটা বিকশমান মানবসমাজের দৃশ্যপট খুলে দেয় যা কিনা

    ন্যূনতম অন্তর্দ্বন্দ্ব ও সম্ভাব্য সর্বাধিক ভ্রার্তৃত্ববোধ দিয়ে গঠিত।

"

ইসলাম সম্বন্ধে একজন পশ্চিমা, ইউরোপীয় এবং ইহুদী বিধর্মীর কি দারুণ স্নেহময় ও কোমল অনুভূতি! আপনারা যারা আসাদের The Road to Mecca পড়েছেন, তারা হয়তো জেনে থাকবেন যে, তাঁর Autobiography তথা travelogue হিসেবে লেখা ঐ বইয়ের পাতায় পাতায় সতীর্থ মানুষের প্রতি, এমন কি অচেনা মুসাফিরের প্রতি, ইসলামী সভ্যতা ও সমাজের করুণা, দয়া, ভ্রার্তৃত্ববোধ দেখে তাঁর অভিভূত হয়ে যাবার কত বর্ণনা রয়েছে! আমি প্রথম যখন ঐ বইখানা পড়ি, তখন, এমন বহু বর্ণনা আছে যা পড়তে গিয়ে, আমার জন্য অশ্রু ধরে রাখা কষ্টকর মনে হয়েছিল। আপনাদের কারো যদি তেমন না লেগে থাকে, তবে হতে পারে যে, আমি হয়তো তখন একটু বেশী মাত্রায় আবেগপ্রবণ ছিলাম, তাই ব্যাপারটা হয়তো একান্ত আমার ব্যক্তিগত দুর্বলতা ছিল। আরো একটা কারণ থেকে থাকতে পারে বলে আমি মাঝে মাঝে ধারণা করেছি - নিজে ধর্ম-কর্ম বিবর্জিত একজন মানুষ হওয়াতেই (নাউযুবিল্লাহ্) হয়তো, আল্লাহ্-প্রদত্ত ফিতরার বশবর্তী হয়ে একজন সম্ভাব্য convert-এর soul searching আমাকে সব সময় স্পর্শ করেছে - হয়তো নিজের চিন্তা-ভাবনা, অনুভব, অনুভূতি ও আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ নিয়ে নিজের ভিতরের অন্তর্দ্বন্দ্ব ইত্যাদির একটা প্রতিফলন আমি তাঁদের লেখায় দেখতে পেয়েছি ! শুধু আসাদ বলে নয় - আমি যখন প্রথম The Road to Mecca পড়ি, তখন প্রায় একই সময় আরেকজন পশ্চিমা convert - অস্ট্রেলীয় Amatullah Armstrong-এর And the Sky is Not the Limit বইখানাও পড়ি। ঐ বইখানাকেও আমার কাছে দারুণ হৃদয় স্পর্শকারী মনে হয়েছিল। ওখানেও লেখিকা ইসলামী সমাজব্যবস্থার সুন্দর দিকগুলো দেখে নিজের অভিভূত হবার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা পড়ে অশ্রু সম্বরণ করা কষ্টকর। যাহোক, তখনও এবং এখনো আমার প্রায়ই মনে হয়েছে/হয় যে, আমরা জন্মগত মুসলিমরা কিভাবে ইসলামের তথা ইসালামী মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত এই সমাজের সুন্দর দিকগুলো "মিস" করি।

কয়েকদিন আগে, প্রজন্ম হিসবে সাহাবীদের বৈশিষ্ট্যের সাথে, আমাদের বৈশিষ্ট্যের পার্থক্যের উপর একটা লেখা পড়ছিলাম [আপনারা হয়তো বা জেনে থাকবেন যে, একটি সহীহ্ হাদীসে রাসূল (সা.), সাহাবীদের প্রজন্মকে "সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম" বলে বর্ণনা করে গেছেন]। ঐ লেখায় একটা প্রধান পার্থক্য হিসাবে বলা হয়েছে যে, সাহাবীরা সব সময় মনে করতেন যে, আল্লাহ্ তাঁদের যে favour করেছেন, তার বিপরীতে তাঁরা যে শুকরিয়া জানান – তা পর্যাপ্ত নয়। লেখার এই পর্যায়ে প্রশ্ন আসে যে, একজন হতদরিদ্র সাহাবীর ভিতরও গভীর কৃতজ্ঞতার এই বোধটা আসতো কোথা থেকে, আল্লাহ্ তাঁকে কি এমন নিয়ামত দান করেছিলেন যে, আপাত দৃষ্টিতে দরিদ্র বা নিঃস্ব হওয়া সত্ত্বেও তিনি ভাবতেন আল্লাহ্ তাঁকে অশেষ করুণা করেছেন! তখনই প্রশ্ন এসে যায় পৃথিবীর এই জীবনে, একজন মানুষের সবচেয়ে বড় পাওয়া কি? বা, তার উপর বর্ষিত আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত কি? আমরা মুসলিমরা হয়তো অনেকেই এর উত্তর জানি না বা এসব নিয়ে ভাবার সময়ও আমাদের নেই। খালেদা-হাসিনা কি করলেন? নিজামী যুদ্ধাপরাধী কি না? মাহমুদুর রহমান কি রকম ঝলসে উঠেছেন? ক্রিকেট খেলায় প্রিয় দল জিতলে, কোন নায়িকা বিবস্ত্র হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন? এসব ভাবতে ভাবতে আর জানতে জানতেই আমাদের জীবন আর জীবনের সময় দু’টোই শেষ! সাহাবীরা ভাবতেন: “ঈমান” হচ্ছে আল্লাহর তরফ থেকে তাদের দেয়া শ্রেষ্ঠতম উপহার বা নিয়ামত – যা না হলে তারা চিরকালের তরে নিশ্চিতভাবে জাহান্নামী হতেন, আর যা “নসীব” হওয়াতে অসীম-অফুরন্ত পরকালের সময় ধরে তারা যে জান্নাতে “স্বর্গীয় সুখে” থাকবেন, তার হয়তো সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। পৈত্রিকসূত্রে ঈমান লাভ করে “মুসলিম” হিসাবে গণ্য হয়েও, আমরা এই সৌভাগ্যটা চোখে দেখি না কেন? আমরা “ঈমান”-কে সম্পদ মনে করি না কেন?? বর্তমান দুঃসময়ে আমাদের বরং দেখা যায, কাক-পক্ষীর বিষ্টায় নস্ট হয়ে যাওয়া একটা জামা কত তাড়াতাড়ি ছাড়া যায় সে ব্যাপারে যেমন একটা তাড়া থাকে – ঈমান ত্যাগ করার ব্যাপারে এবং পরিপুর্ণ সেক্যুলার হবার ব্যাপারে আমাদের অনেকের অস্থিরতাও অনেকটা তেমনই।

আসাদ যা দেখে অভিভূত হয়েছিলেন, তার মূলে ছিল ইসলামের collectivism বা সমাজবদ্ধতা – আর আজ আমরা তা ত্যাগ করে বস্তুবাদী অবিশ্বাসীদের individualism বা ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রের পূজায় লিপ্ত হয়েছি। “আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশী তাকে দেব” এমন স্লোগানের মতই “জরায়ূ স্বাধীনতা”র দাবী তুলে “তসলিমা-পন্থীরা” আসলে individualism-এর স্লোগানই দিয়ে থাকেন – অথচ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মুসলিমের সবকিছুতেই collectivism যেমন স্পষ্ট, তেমনি ইসলামের সকল প্রধান ইবাদতই বলতে গেলে collective: আপনার সালাত collective – জামাতে আদায় করতে হয়, আপনার যাকাতও সামাজিক ব্যাপার, আপনি একা রামাদান পালন করতে পারেন না – ঈদের নামায সকলের সাথে পড়তে হয়, হজ্জ্ব স্পষ্ট একটা collective ব্যাপার, আপনার মৃত্যুতে জানাযা এবং সৎকার তাও collective। অথচ আজকের আমাদের, অধিকাংশ মুসলিমদের, দেখে কি তা বোঝার কোন উপায় আছে? আজ ঢাকার রাস্তায় মাত্র ১০ হাত দূরে একটা ছিনতাই হলেও, “ঝামেলা এড়াতে” কেউ সে দিকে তাকিয়ে দেখতে চায় না – ঢাকার এ্যাপার্টমেন্টগুলোতে থাকা আমরা, নিজের পাশের ফ্ল্যাটের মানুষটির নামও হয়তো জানি না। যা দেখে একজন ইউরোপীয় ইহুদী কাফির অভিভূত হয়ে মুসলিম হলেন, আমরা আমাদের সেই গুণ হারিয়ে কাফিরদের মত হবার কি প্রাণান্তকর চেষ্টা করে চলেছি!! আল্লাহ্ আমাদের দৃষ্টি যেন খুলে দেন – আমাদের যেন “সত্য ও সুন্দর” দেখার ক্ষমতা দান করেন।

[ইনশা'আল্লাহ্ চলবে.....]

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
১২০ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)

৭ টি মন্তব্য

  1. যা দেখে একজন ইউরোপীয় ইহুদী কাফির অভিভূত হয়ে মুসলিম হলেন, আমরা আমাদের সেই গুণ হারিয়ে কাফিরদের মত হবার কি প্রাণান্তকর চেষ্টা করে চলেছি!! সত্যই আফসোস হয় আমাদের জন্য। মহান আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে হেফাজত করুন। আপনাকে ধন্যবাদ আরো লেখা আশা করছি।

    মুসলিম৫৫

    @মুসাফির, আপনাকেও সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ! (F)

  2. তখনই প্রশ্ন এসে যায় পৃথিবীর এই জীবনে, একজন মানুষের সবচেয়ে বড় পাওয়া কি? বা, তার উপর বর্ষিত আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত কি?

    “ঈমান” হচ্ছে আল্লাহর তরফ থেকে তাদের দেয়া শ্রেষ্ঠতম উপহার বা নিয়ামত। (Y)

    মুসলিম৫৫

    @রাসেল আহমেদ, ধন্যবাদ! (F)

  3. জাযাকাল্লাহ। আহসানাল জাযা (F)

    মুসলিম৫৫

    @anamul haq, আপনাকেও আল্লাহ্ উত্তম প্রতিদান দিন! (F)

  4. [...] …….পূর্বে প্রকাশিত লেখার সূত্র ধরে….. [এর আগের পর্বটি রয়েছে এখানে: http://www.peaceinislam.com/muslim55/9959/ [...]