‘তথ্যপ্রযুক্তি ও যুব আলেমসমাজ’ শীর্ষক আলেমসমাজের প্রথম আইটি সেমিনার
লিখেছেন: ' ইঊসুফ সুলতান' @ মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০১০ (৫:২৬ অপরাহ্ণ)
সপ্তাহ দুয়েক আগের কথা। শফিক ভাইকে বলেছিলাম, আলেমদের জন্য একটা আইটি সেমিনার করতে চাচ্ছি। শফিক ভাই বলেছিলেন, আলেমরা আইটি বুঝে না। বাস ভাড়া দিলে কিছু ছাত্র আনা যেতে পারে। সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। বাস ভাড়া দিয়ে অডিয়েন্স আনাবো, এত নিম্নমানের সেমিনার করছি তাহলে!
শফিক ভাইকে আইডিয়াটা একটু একটু করে শুনিয়েছি মোবাইলে। ততদিনে অবশ্য আমার আইডিয়াটা পূর্ণাঙ্গও হয় নি। কেবল বিষয়গুলো কিছুটা ঠিক করেছি। আর কিছু আয়োজন নিয়ে অল্প কিছু লিখেছি। প্রতিদিন বাসে বসে যতটুকু সময় পাই, আমার নোকিয়ার নোটবুকে একটু একটু করে আইডিয়া নোট করি।
পরদিন শফিক ভাইকে আবার ফোন দিই। কোথায় হল ভাড়া নেয়া যায়, আলাপ করি। আমি সিরিয়াস। প্রচন্ড রকম। শফিক ভাই জানান, তিনি খোঁজ নিচ্ছেন। এরই মধ্যে হঠাৎ জানালেন, নভোথিয়েটারে সেমিনার হল আছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সেমিনার করা যায়।
ব্যস, পরদিনই চলে গেলাম নভোথিয়েটারে। সেখানেও কথা হলো আরেক শফিক ভাইয়ের সাথে। অনুমতির জন্য দরখাস্ত করতে হবে, তিনি জানালেন। ততক্ষণে আকরাম ভাইও পৌঁছে গেছেন সেখানে। আমি, শফিক ভাই আর আকরাম ভাই দরখাস্ত লিখলাম।
পরদিন মঙ্গলবার। বুধবার নভোথিয়েটারের সাপ্তাহিক বন্ধ। বৃহস্পতিবার ১৬ই ডিসেম্বর, সরকারী ছুটি। শুক্রবার ১০ই মুহররম, সরকারী ছুটি। শনিবার, সাপ্তাহিক ছুটি, বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় বন্ধ। তার মানে, অনুমতি পেলাম কিনা, তা জানতে পারব ৫ দিন পর। এত দিন অপেক্ষার পর যদি জানি যে, অনুমতি পাই নি, তাহলে?!
নভোথিয়েটারের শফিক সাহেবকে বললাম, ভাই, আপনি শুধু ফোনে যদি জানাতেন অনুমতি পাব কিনা, তাহলেও হত। তিনি জানতে চাইলেন, চীফ গেস্ট কে? চীফ গেস্ট না থাকলে বুঝি হল পাব না? তিনি বললেন, না, সেরকম না, তবে তাড়াতাড়ি হত। আমি বললাম, আমাদের কোনো চীফ গেস্ট নেই। আমরা একেবারেই গঠনমূলক একটা সেমিনার করতে চাচ্ছি। এখানে কোনো অযথা বক্তৃতা হবে না।
যাহোক.. পরদিন শফিক সাহেব খুব ব্যস্ত ছিলেন। সেদিনটি আমাদের অপেক্ষায়ই কেটে গেল। এর পরের দিন, মানে বুধবার, শফিক সাহেব জানালেন, অনুমতি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমাদের বিষয়গুলো তাদের ভালো লেগেছে। আমরা যেভাবে জানিয়েছি, সেমিনার যেন সেভাবেই হয়। আমি বললাম, আপনাদের সবাইকে আমাদের সেমিনারে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আশা করি, আগামীতে আপনাদের এতবার আর বলতে হবে না। দেশের সেবায়, দশের সেবায় আপনারাই এগিয়ে আমাদের হল ভাড়া দিবেন।
এরপর কত ঘটনা। আইডিয়াগুলো যখন ‘ফ্রী মাইন্ড’ দিয়ে অর্গানাইজ করা হলো, প্রিন্ট দেয়া হলো, তখন তা A4 সাইজের পাঁচ পৃষ্ঠায় পরিণত হলো। একেবারে প্রতিটি বিষয় তাতে প্ল্যান করার চেষ্টা করেছি। শফিক ভাই আর আকরাম ভাই মিলে আমরা আরো কিছু আইডিয়া শেয়ার করলাম। এরপর প্রিন্ট হলো পোস্টার, প্রবেশ কার্ড ও ব্যানার। পোস্টার লাগানোর পর থেকে পুরো ঢাকা থেকে আলেমদের যে পরিমাণ সাড়া পেয়েছি, তা বলার মতো নয়। শফিক ভাইয়ের সেই অনুমান ভুল প্রমাণিত হলো।
পরে বাধ্য হয়ে ১০-২০ জনের মধ্য হতে মোবাইল ইন্টারভিউ নিয়ে মাত্র ১-২ জনকে প্রবেশ কার্ড দিতে হয়েছে। অনেকে মোবাইলে এ ধরণের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রশ্ন করেছেন, এমন উদ্যোগ আরে আগে কেন নিলেন না? হাহা.. এর কী জবাব দেব?! সত্যিই তো.. আরো আগে নেয়া উচিৎ ছিল। আমরা কেবল দোয়া চেয়েছি তাদের কাছে।
পেনড্রাইভ, সিডি, ডিভিডি, পয়েন্টার এগুলো সব কাউসার ব্যবস্থা করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে ডিভিড বার্ণ, স্টিকার লাগানো এমনকি সেমিনারের আগের রাত ১টা পর্যন্ত এসব করেছে সে।
সেমিনারের দুই দিন আগে অফিসে প্রেজেন্টেশনগুলো সবাই মিলে রিহার্সেল করলাম। সমালোচনা করে যতদূর সম্ভব সুন্দর করার চেষ্টা করেছি। শ্রদ্ধেয় মাওলানা শামসুল হক সাহেব পুরো আয়োজনে বন্ধুর ন্যায় পাশে থেকেছেন। সাহস, পরামর্শ ও সমালোচনা করে সহযোগিতা করেছেন।
অবশেষে সেই দিন চলে আসে। ২৪ ডিসেম্বর ২০১০। শুক্রবার। আমরা সকাল ৭.৩০ এই ওখানে পৌঁছে যাই। প্রজেক্টর ঠিক মতো রাখা, ব্যানার লাগানো, স্বেচ্ছাসেবকদের ঠিক মতো দাঁড় করানো ইত্যাদি করতে করতে সময় চলে যায়।
শুরু হয় সেমিনার। ৯টা ১০ এ। একে একে প্রেজেন্টেশন নিয়ে আসেন মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক, মাওলানা সাদিকুর রহমান, আমি এবং মাওলানা লুৎফর রহমান। উপস্থাপনা করেন মাওলানা গাজী সানাউল্লাহ এবং শফিক ভাই। উভয়ের প্রাণবন্ত উপস্থাপনা সেমিনারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
সেমিনারের এক পর্যায়ে কোনো এক কাজে হলের বাহিরে বের হই। নভোথিয়েটারের একজন কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, “এই হলে অনেক সেমিনার হয়েছে। কিন্তু আজকের মতো এত গোছানো, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল সেমিনার আর হয় নি। গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। আবেগ আর ধরে রাখতে পারি নি। তাইতো সেমিনারের শেষ দিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের সময় এই মন্তব্যটি উল্লেখ না করে পারি নি।
শাবাকা সফটের চেয়ারম্যান মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক সেমিনারের সমাপ্তি টানেন। শাবাকা সফটের সিইও মো: শরীফুল আলম প্রচন্ড গলা ব্যথার কারণে সেমিনারে উপস্থিত হতে পারেন নি। ‘প্রযুক্তি কী ও কেন’ প্রেজেন্টেশনটি তারই উপস্থাপন করার কথা ছিল। তার অনুপস্থিতিতে আমার ঘাড়ে এ দায়িত্ব আসে।
সেমিনারে আগত প্রত্যেক অডিয়েন্সকে একটি মাকতাবা শামেলা ডিভিডি, একটি জাওয়ামেউল কালিম ডিভিডি এবং সকল প্রেজেন্টেশনের একটি সিডি উপহার দেয়া হয়। কুইজের পুরস্কার হিসেবে তিনটি পেনড্রাইভ জিতে নেন তিনজন ভাগ্যবান আলেম।
(মাকতাবা শামেলা একটি আরবী সফটওয়্যার। যাতে প্রায় ৬৫০০০ এরও বেশি বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাসিক্যাল আরবী বই রয়েছে। তাফসীর, হাদীস, ফিকহ, ইতিহাস, গবেষণা, বংশ পরিচয়, চিকিৎসা, জীবনী ইত্যাদি নানা ক্যাটাগরীতে শত শত খন্ডের বইও আছে। যে কোনো গবেষকের জন্য এটা এক বৃহৎ পাঠাগারের চেয়েও অনেক বড়ো।
আর জাওয়ামেউল কালিম শুধু হাদীস গবেষণার জন্য। এতে হাদীসের ব্যাখ্যা, বর্ণনাকারী, বর্ণনাসূত্র ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে সহজে গবেষণা করা যায়।)
অনুষ্ঠান শেষে গত দুই দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আলেমদের কম্পিউটার কেনার খবর শোনা যায়। অন্যান্য জেলায়ও এ ধরণের সেমিনার করার আহ্বান জানান আলেমগণ।
আমরা সেমিনারের অডিয়েন্সদের কাছে যে ম্যাসেজগুলো দিই, সেগুলো হলো:
১. বাংলাদেশের সব মাদ্রাসায় কম্পিউটার ল্যাব থাকতে হবে।
২. ঢাকাসহ সারা দেশের বড় বড় মাদ্রাসাগুলোতে এ ধরণের আইটি সেমিনার আয়োজন করতে হবে। কেউ উদ্যোগ নিলে আমরা সেখানে যাব, ইনশা’আল্লাহ।
৩. আমরা স্বপ্ন দেখি, আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের কমপক্ষে ৫০% মাদ্রাসা ও ৬০% আলেমের ওয়েবসাইট থাকবে।
৪. সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ, যেন সব ধরণের সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে এখনি শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
৫. বাংলা ভাষায়ও মাকতাবা শামেলা বা জাওয়ামেউল কালিম মানের সফটওয়্যার বা এ্যাপলিকেশন হতে পারে। বাংলাদেশে সেরকম প্রোগ্রামার আছেন, আছেন পরিকল্পনাকারীও। শুধু অভাব উদ্যোক্তার। আমরা আশা করব কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন।
সেমিনারের সব প্রেজেন্টেশন স্লাইড নিম্নে দেয়া হলো :
১. তথ্যপ্রযুক্তি কী ও কেন?
২. তথ্যপ্রযুক্তি ও গবেষণা
৩. তথ্যপ্রযুক্তি ও দাওয়াহ
৪. তথ্যপ্রযুক্তি ও আত্মকর্মসংস্থান
৫. মাদ্রাসা, মসজিদ ও আলেমদের জন্য ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা
৬. সাইবার ক্রাইম : আলেমদের করণীয়
৭. তথ্যপ্রযুক্তি ও সময় পরিচালনা
===============
মূল পোষ্ট : http://yousufsultan.com/posts/it-and-ulama-seminar-2010-novo-theater/
========
বি:দ্র: বাংলা লায়ন দিয়ে শুরু থেকেই পিস ইন ইসলামে লগিন করা যায় না। এ ব্যাপারে আমি দুই-তিন বার অভিযোগ করেও কাজ হয়নি। এজন্য এই ব্লগে সাধারণত আসা হয় না। আজ প্রক্সি দিয়ে ঢুকে পোষ্ট দিলাম, যদিও এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। আশা করব কর্তৃপক্ষ ঘেঁটে দেখবেন, সমস্যা বাংলা লায়নের, নাকি পিসইনইসলামের। ধন্যবাদ।
ইউছুফ সুলতান আপনাকে ধন্যবাদ, সুন্দর ও সমসাময়িক পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করার জন্য। এরকম বেশি বেশি সেমিনার হওয়া প্রয়োজন। আলেমদের ইন্টারনেটে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে ইসলাম বিরূধী লেখা সমুহের জবাব দিতে হবে। আর আপনি লিখেছেন বাংলা লায়ন দিয়ে পিস ইন ইসলামে লগিন করা যায়না। এ ব্যাপারে আমিও কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম, উনারা বললেন বাংলা লায়ন এবং কিউ বি থেকে এধরনের সমস্যা হচ্ছে। পিস ইন ইসলাম কতৃপক্ষ উনাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেছেন উনারা আশ্বাস দিয়েছেন কিছুদিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। উনারা আরও বললেন সমস্যাটা বাংলা লায়নেরই।
তবে ভবিষ্যতে এমন প্রোগরাম করলে আশা করি ভাই আমরাও দাওয়াত পাব।
আল্লাহ তালা কবুল করুন। চট্টগ্রামে কারো প্লান থাকলে আমাকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো। ০১৯১৩৬২৪১৮৮
কতৃপক্ষকে পোষ্টটি “ফিচার পোষ্ট” করার অনুরোধ করছি। আল-মুরতাহিল ভাইয়ের মত, যশোরে কারো প্লান থাকলে আমাকে জানালে আমিও কৃতজ্ঞ থাকবো। ০১৯২০-২৯৩৪৬৬, ০১৭১২-৯৭৯৫৪৭
সুন্দর উদ্যোগ , আল্লাহ পাক আমাদের সবার সৎ মনোবাসা গুলি পুর্ন করুন ও হালাল রুজীর ব্যবস্হা করুন। আমিন।
ইউছুফ সুলতান ভাই আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চাই। আপনার নাম্বার টা দেয়া যাবে কি?
Proxy দিয়ে উত্তর লিখছি, তাই আলাদা জবাব দেয়া যাচ্ছে না। একসঙ্গে জবাব দিই।
@মুসাফির, অনেক ধন্যবাদ আমাদেরকে সাহস দেয়ার জন্য। আমার মোবাইলের চেয়ে ইমেইলে যোগাযোগ করলে ভালো হয়। yousufs.online এ্যাট জিমেইল ডট কম।
@আল মুরতাহিল, ইবনে হাবীব ও দেশী, দোয়া করবেন।