হাক্কানী তরিকা সম্পর্কে কিছু কথা
লিখেছেন: ' osman' @ বুধবার, ডিসেম্বর ১, ২০১০ (৯:৫২ পূর্বাহ্ণ)
আল্লাহ্ নামে শুরু করেছি, যিনি পরম করুনাময় দয়ালু। আল্লাহ্ কাছে আশ্রয় চাচ্ছি, অভিশপ্ত শয়তানের থেকে। আমি নিজেকে এভাবে প্রকাশ করতে পছন্দ করব যে, যেগুলো সম্পর্কে আমি শতকরা শত ভাগ শিওর না সেগুলোর সাথে আমি সম্ভবত শব্দটি যোগ করতে পছন্দ করব। সম্ভবত এটাই ঠিক পন্থা নিজেকে এবং নিজের চিন্তা চেতনাকে প্রকাশ করার…। আমি(সম্ভবত) হাক্কানী ফিলোসফিতে বিশ্বাসী। যেখানে আল্লাহ্ কে (সম্ভবত) খুব সহজে বোঝা যায়, কিন্তু সেই বুঝটা অন্যকে ভাষার মাধ্যমে বোঝানোটা সম্ভবত খুব কঠিন হয়। হাক্কানী ফিলোসফিতে আল্লাহ্ মূল নাম হক্, যার অর্থ বাংলায় সত্য, শাশ্বত, কঠিন-নির্মম-সত্য অথবা এক কথায় খাঁটি সত্য । ইংরেজিতে যাকে বলে রিয়েল ট্র“থ, রিয়ালিটি বা দি এক্চুয়াল। তাই হাক্কানী দর্শন থেকে জানি, আল্লাহ্ চরম-পরম সত্য। তাই তাকে অনুভব করা সহজ, সবসময়, চারপাশে এবং নিজের ভেতরে। হাক্কানী দর্শন সম্ভবত প্রয়োজনের খাতিরে ফর্ম করা হয়েছিল। সম্ভবত খলিফা রাশেদিন এর প্রথম খলিফা আবুবকর সিদ্দিকী (রঃ) এর মন মগজে। ইসলামের কথা দূর দূরান্তে পৈাছে গিয়েছিল, আর অনেক মানুষ মুসলমান হতে চাইল, কেউ মন থেকে আর কেউ বিধর্মী হবার র্কর দিতে হবেনা এই জন্য। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রের মূল শহর গুলোতেও এক কপি লিখিত কোরআন নেই, অথবা দুই একজন কোরআন স্মরণকারী/স্মরণকারীনী আছেন। আবুবকর সিদ্দিকী (রঃ) হযরত মোহাম্মদ সাল্লেলাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের শিক্ষা অনুসারে কিছু সহজ কথা শেখালেন। প্রথমে শেখালেন বিসমিল্লাহ্ ব্যাবহার গুরুত্ব এবং বিশালতা। যা অন্তর থেকে স্বিকার করে মুখে উচ্চারন করলে আল্লাহ্র নামে শুভ সূচনা হয়। তারপর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্, এক আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ (মালিক, মাবুদ, সৃষ্টি-পালন-সংহার-কর্তা, উপাস্য )নাই, মোহাম্মদ সাল্লেলাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল। এই বাক্যের গুরুত্ব বোঝালেন। তারপর আল্লাহ্ ও তার রাসুলের নামে হুকুম করলেন আল্লাহ্কে হাজির নাজির মানতে। অর্থাৎ, আল্লাহ্ সবসময় আমাকে দেখছেন (দেখছেন বলাটা হয়তো ঠিক হবেনা… কেউ আল্লাহ্র চোখ আছে কিনা সেই ভাবনায় ডিস্ট্র্যাক্টেড্ হয়ে যেতে পারেন…), ঠিক করে বলতে খেয়াল করছেন। এমনকি যখন আমি ঘুমিয়ে আছি তখনও। সব জায়গায়, সব সময়, সব অবস্থায়। তারপর নিজের নাফস্ বা সেলফ্ এর ব্যাপারে বোঝালেন যা একটু বাধনহারা হলেই পাপ করতে চায়, নিজের ফায়দা বুঝতে চায়, তাতক্ষনিক আনন্দে মেতে থাকতে চায়, সুযোগ সন্ধানী হয়ে পরে। পাপ করে মজা লুটে সেটা, শয়তানের কুমন্ত্রনায় করে ফেলেছে বলে নিজেকে বুঝ দিতে চায়। বোষ্টিং করতে, অহংকার করতে চায়, যৌন উত্তেজনা খুজে বেড়ায় জন্তুর মত। এটাকে নিজের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রন করতে বললেন। বললেন এই ডিজ্্এডভান্টেজকে কষ্টি পাথর হিসেবে ব্যাবহার করতে। যেটা করার ব্যাপারে নাফস্ এর তুমুল আগ্রহ সেটা পাপ কাজ কিনা অথবা নিজের ও অপরের জন্য কোন ভাবে ক্ষতিকর কিনা, ভেবে করতে বললেন। নিজের নিয়ত পবিত্র ও আড়াল ছাড়া করতে বললেন। কারন আল্লাহ্ কোন কাজ কি নিয়তে করা হয়েছে, তার উপর নির্ভর করে ফলাফল দিবেন। তার অর্থ হল আমি হয়তো কোন খুনি, ব্যাভিচারী, বা চোর কে গ্রাম সালিশের কাছে ধরে আনলাম বিচারের জন্য, সে হয়তো গ্রাম বাসীর অনিষ্ঠ করছে, তাকে শাস্তির ব্যাবস্থা করা ইসলামের আলোকে সোয়াবের কাজ, কিন্তু আমার মনের গহীনে লুকিয়ে আছে ঐ অপরাধীর প্রতি ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা, সে হয়ত কখনও আমার হীন সার্থে আঘাত করেছিল, তাই এই সুযোগে আমি প্রতিশোধ নিয়ে অপবিত্র চরম উল্লাসে মেতে আছি। আমার সেই খারাপ নিয়ত বা মনস্কামনা আল্লাহ্ সুবহানা ওয়া তায়ালা জানবেন এবং নিশ্চিত ভাবে আমাকে সেই অনুযায়ী তাৎক্ষনিক ও অনন্তকালিন ফলাফল দিবেন। ইহকালে ও পরকালে। আল্লাহ্ তায়ালা যে মানুষ ও অন্যান্য অনেক সৃষ্টিকে ফ্রি উইল বা স্বাধীন মনোইচ্ছা দিয়েছেন তা বোঝালেন। আমি, আপনি সকলে যে যেকোন কিছু নিয়ত করতে পারি তা বোঝালেন। সাধারনত, ভাল নিয়ত যে আরো ভালর দিকে এবং খাড়াপ নিয়ত যে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে তা সহজ ভাষায় বর্ননা করলেন। পারে বললাম এই কারনে যে অনেক সময় খারাপ কিছু থেকে ভাল কিছু বের হতে পারে আবার ভাল নিয়তের খারাপ ফল হতে পারে। এটার সম্পূর্ন কারন ও অর্থ আল্লাহ্ই ভাল জানেন। সতর্ক করলেন যে কোন যুক্তিবাদী মানুষ হয়ত শেষ বিচারের দিনে যুক্তি দিয়ে প্রমান করতে পারেন যে তার সব কর্ম, পাপ পূন্যের জন্য আল্লাহ্ দায়ী অথবা শয়তান দায়ী। কিন্তু তার দাবী ধোপে টিকবেনা শুধু মাত্র তার নিয়তের কারনে। আল্লাহ্ অসিম সতর্ক। আখেরাতে আমাদেরকে যাতে আমাদের কাজের জন্য ধরে শাস্তি বা পুরষ্কার দিতে পারেন তাই আগে থেকেই স্বাধীন বা মুক্ত ইচ্ছার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, তাই তিনি সব কিছু আগে থেকে জানলেও আমার পাপের জন্য আমাকেই শাস্তি পেতে হবে। শেষ বিচারের দিনে হাইয়ুল কাইউম আল্লাহ্কে কেউ দোষারোপ করতে পারবেনা। কজালিটি কি তার সম্পর্কে ধারনা দিলেন, অর্থাৎ কোন এক মুহূর্তে আমার মনে আপনা হতেই কোন ইচ্ছার উদয় হোলো, সেই ইচ্ছা বাস্তবায়ন করার আগে, সেই ইচ্ছার পরিনতি সম্পর্কে চিন্তা করে, হ্যাঁ বা না সিদ্ধান্তে পৌছানোর আপেক্ষিক স্বাধীনতা আমারই আছে। তারপর হাক্কানী দর্শনের শেষ কথা বোঝালেন, হাকিকাতে বা পরম-বাস্তবে আল্লাহ্ ছাড়া আর কিছুই নাই। তাঁর সকল সৃষ্টি তাঁর কাল্পনিক বাস্তবে আবধ্য। এবং সাবধান করলেন, আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ নাই, কিছুই নাই এর অর্থ এই নয় যে আল্লাহ্ জগৎটাকে খেলা ছলে তৈরী করেছেন এবং সবকিছু অলিক মায়া… তাই যা খুশি কর, শেষে আল্লাহ্ অনেক কারনে মাফ্ করে দিবেন। আমাদের জন্য আমাদের চারপাশের জগৎই চরম-বাস্তব। এবং এর জন্যই আমাদের হিসাব গ্রহন করা হবে। অতপর যারা এগুলো মন থেকে বুঝে শুনে মানবে ও মুখে প্রকাশ করতে দ্বিধা করবেনা , কাজে ও ব্যাবহারে এই সকল বিস্বাস ও হুকুমের প্রতিফলন ঘটাবে, তারা সকলেই মুসলিম বলে গন্য হবে। তারপর যত তারাতারি সম্ভব কোরআন ও সুন্নাহ্ সম্পর্কে জানতে সচেষ্ট হতে হবে এবং অন্তত নামাজ পরা শিখবে। কারন কোরআন সম্পর্কে কোরআনের দ্বিতীয় সূরার প্রথমেই বলা আছে, এই কিতাব তাদের জন্য পাথেয় যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে, নামাজ পড়ে এবং আল্লাহ্র দেয়া রিজিক হতে যাকাত দেয় ও ভাল কাজে যথাসাধ্য খরচ করে। তাই, মুসলমান হবার জন্য মক্কা এবং মদিনার বস্তুগত সংস্পর্শ জরুরী বা বাধ্যতামূলক নয়। এমনকি আরবি ভাষায় বুৎপত্তি অর্জন না করলেও হবে। অল্প কিছু সূরা দিয়ে পড়া নামাজও ঈমানের জোড়ে এবং মনোযোগের গভীরতার কারনে এবং প্রাত্যহিক কর্মে ঈমানদারীর কারনে আল্লাহ্র কাছে প্রিয়তম হতে পারে। যদি সেই ব্যক্তি প্রকৃত অর্থেই আল্লাহ্ কে হক্ (সত্য) মানে। কারন আল্লাহ্কে বাস্তবে অনুভব করলে, নিকটতম জানলে আল্লাহ্র প্রতি ভয়,ভালবাসা, তার নৈকট্য পাবার আশা দিন দিন বৃদ্ধি পায়। আমাদের সাবকন্টিনেন্টে ইসলামী মূল তরিকা পন্থিদের আসার বহু পূর্বেই হাক্কানী তরিকার দরবেশ এবং সুফিরা ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন। তাদের সাথে ভারতীয় সন্নাসীদের আপেক্ষিক অর্থে মিল থাকায়, তারা আমাদের দেশের গভীরে সহজেই প্রবেশ করতেন, তখন আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ সনাতন ধর্ম, বৌধ ধর্ম, বৈষনব ধর্ম ও উপজাতীয় ধর্মের অনুসারি ছিল, কাকতালীয় ভাবে সহজযান বৌধ্য ধর্মের সহজিয়া দর্শনের সাথে কিছু মিল্ থাকায়, তখনকার বাংলাবাসীরা হাক্কানী তরিকা সহজে বুঝতো ও এর প্রতি আকর্ষিত হয়েছিল। কারন ইসলাম প্রচারের বহু আগেই বাংলায় শত শত বছর ধরে সহজযান বৌধ্য ধর্ম প্রচারিত হয়েছিল। বাংলায় নবাবী মুসলিম শাসন আমলের বহু আগেই বিচ্ছিন্ন ভাবে হাক্কানী সুফী,দরবেশ,ফকিরেরা ইসলাম প্রচার করেছেন। তাই তখন যারা মুসলিম হয়েছেন তারা তথাকথিত ইসলামী তরবারীর ভয়ে মুসলিম হয়েছেন তা হয়ত বলা যায়না। ইসলামে প্রবেশ করার মূল কারন ছিল সম্ভবত, সনাতন ধর্মের জাত-পাত ভেদ, বহুজন্ম নিয়ে ভয়, জন্মপাপ অর্থাৎ জন্মের পর জন্ম নিচু জাতের হয়ে জন্মানো, অর্থ, শিক্ষা, এবং মেধা থাকা সত্বেও নিচু জাত বা চাড়াল বলে গন্য হওয়া, আর বৌধ্য ধর্মের ঈশ্বরহীন মতবাদ। ইসলামের দর্শন অনুযায়ী জন্মপাপ বলে কিছু নেই, মানুষের জন্মান্তর নেই শেষ বিচারের দিনে উত্থিত হওয়া ছাড়া, বর্ন ভেদে ইসলামে উচু নিচু নেই, সব মুসলমান আল্লাহ্ কাছে সমান, সবাই এক কাতারে নামাজ পড়ে, হজে¦র সময় মিলেমিশে যায়। হাবসীর দেয়া আযান শুনে বনু সৈয়দ বংশের লোক সিরিয়াক ধর্মান্তরিত ইমামের পেছনে দাড়িয়ে জামাতে নামাজ পড়ে। এগুলোই ইসলামের প্রতি বাংলার মানুষকে আকর্ষন করেছিল সম্ভবত। যদিও পরবর্তিতে তথাকথিত মুসলমানদের ভেতর আশরাফ-আতরাফ, সিয়া-সুন্নি ভেদাভেদ তরিকার ভেতর উচু নিচু শুরু হয়ে যায়। বাংলায় পীরবাদের আগমনের পর ধীরে ধীরে হাক্কানী দরবেশ দের সহজ সরল দর্শন চাপা পরে যায়। কিন্তু যা হক্ বা সত্য সেটা কি চাপা দিয়ে রাখা যায়? তাই আমার মত অনেকেই এখনও এই ইন্টারনেটের যুগেও হাক্কানী তরিকায় আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে যায়। যা আমাদের হয়ত সিরাতুল-মুস্তাকিমে নিয়ে যাবে, আল্লাহ্ই তা ভাল জানেন। আল্লাহ্ হক্ বলেইতো বাংলার লালন ফকিরের গানে উচ্চারিত হয়…সহজ মানুষ ভজে দেখ দেখি মন দিব্য জ্ঞানে, পাবিড়ে অমূল্য বিধি বর্তমানে…., সহজ মানুষ ভজে দেখ দেখি মন দিব্য জ্ঞানে। সালাতুল মিরাজুল মোমেনিনা, জানতে হয় নামাজের বেনা, বিশ্বাসীদের দেখা-শোনা, লালন কয়, হয় এ ভুবনে, সহজ মানুষ ভজে দেখ দেখি মন দিব্য জ্ঞানে ॥
এক প্যারাতে সব লেখা না দিয়ে , ভাগ ভাগ করে দিন । বুঝতে সুবিধা হবে ।