সংবিধান সংশোধনী : আল্লাহর ওপর আস্থা থাকছেনা
লিখেছেন: ' রোকন রাইয়ান' @ শনিবার, জুন ১৮, ২০১১ (২:৫৬ অপরাহ্ণ)
দীর্ঘ দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠা সংবিধান সংশোধনের চূড়ান্ত সুপারিশ এখন সংসদে পাশের অপেক্ষায়। এ সংশোধনীতে বড় যে পবিবর্তন আসছে, রাষ্ট্রের প্রধান মূলনীতি ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হইবে যাবতীয় কার্যাবলীর ভিত্তি’ এ কথাটি পরিস্কারভাবেই বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমান সংবিধানটি আদালতের নির্দেশনায় বাদ যাওয়া সংশোধনী সমূহ ও মহাজোট সরকারের ধর্মহীন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে গৃহীত হচ্ছে ধর্মহীন চেতনায় একটি আওয়ামী মনোভাপন্ন রাষ্ট্রীয় নীতিমালা। জাতীয় চেতনাও এতে অনেকটা ভাবাদর্শ ভিত্তিক হবে বলে অনেকে মনে করছে। তবে এটা পরিস্কারই বলা যায় বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ইসলামি চেতনা-বিশ্বাস সম্পূর্ণ বিদায় করা হচ্ছে। সংবিধান সংশোধনে গঠিত কমিটি সংসদে সংবিধান সংশোধনীর সুপারিশ আকারে যে প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে, তাতে রাষ্ট্রের প্রধান মূলনীতির জায়গায় বসানো হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতাকে। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এ চার নীতি এবং এই নীতি থেকে উদ্ভূত অন্য সব নীতিকেই রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি করা হয়েছে।
এর ফলে প্রস্তাবনার আগে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’, ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ও ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি’র যে সুযোগ অনেক আন্দোলন-সমাবেশের পর টিকিয়ে রাখা হয়েছে তা অনেকটাই নামমাত্রে পরিণত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিসমিল্লাহর পাশাপাশি ‘পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে’ এবং রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে বহাল রাখলেও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য ‘রাষ্ট্রকর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান’ বিলোপের কথা অন্য একটি ধারায় পরিষ্কারভাবে বলে দেয়া হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে ধর্মভিত্তিক দল বা সংগঠন করার সুযোগ থাকলেও ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করা বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে এই বিধানই বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড়াতে পারে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত, সংরক্ষণ এবং জোরদার করিতে সচেষ্ট হইবেন’ ধারাটি পুরোপুরি বাদ দেয়া হয়েছে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের করা সংবিধানের প্রস্তাবনার আগে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতির প্রথম মূলনীতি হিসেবে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ এবং ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই যাবতীয় কার্যাবলীর ভিত্তি হইবে’ কথাগুলো দীর্ঘ প্রায় ৩২ বছর পর ধুয়ে মুছে পরিস্কার করতে যাচ্ছে বর্তমান মহাজোট সরকার। পাশাপাশি অনির্দিষ্টভাবে কোনো ব্যক্তিকে ঠিক ওই মর্যাদায় ওঠানোর জন্য বাড়তি আইনও চাপানো হচ্ছে। প্রস্তাবনার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ ‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিলো- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূল নীতি হইবে’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করতে যাচ্ছে কমিটি। সংশোধনী প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তার প্রতিকৃতি টাঙানো বাধ্যতামূলক এবং রাষ্ট্রপতির প্রতিকৃতি টাঙানোর বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকেই ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ হিসেবে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে স্বাধীনতা ঘোষণার টেলিগ্রাম সংযুক্ত করা হয়েছে।
এই সংশোধনীর আরো বড় একটি প্রস্তাব হচ্ছে মুসলিম দেশের সাথে সম্পর্কের ধারা বাদ দেয়া। সংবিধানে থাকা মুসলিম দেশের সাথে সংহতির বিধানসম্পর্কিত ২৫ (২) অনুচ্ছেদে বলা ছিল ‘রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত, সংরক্ষণ এবং জোরদার করিতে সচেষ্ট হইবেন।’ কিন্তু বর্তমান কমিটির সুপারিশে এই ধারাটি সরাসরি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে সংসদে গঠিত ১৫ সদস্যের এই সংবিধান সংশোধন কমিটি রোববার এক বেঠকে সংবিধান সংশোধনের ৫১ দফা সংবলিত সুপারিশ চূড়ান্ত করে। এ লক্ষ্যে কমিটি ২৭টি বেঠক করে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে একান্ত বৈঠক করে পাঁচটি। এ ছাড়া সংবিধান বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী চারদলীয় জোটের বাইরের অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাথে বৈঠক করে তাদের মতামত শোনে।
কমিটির চূড়ান্ত করা এই সুপারিশ দুয়েক দিনের মধ্যেই সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করা হবে। কমিটিতে বিরোধী দলের কোনো সদস্য নেই।
এ দিকে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে চারদলীয় জোট ৫জুন রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করেছে। ইসলামি দল ও সংগঠনসহ আলেমসমাজ সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। তবে এসব আন্দোলনে এ সরকার কান দেয় বলে ভবিষ্যত পরিণতি ঘোলাটে হওয়ার দিকেই ইঙ্গিত বহন করছে।
আজ বড় প্রয়োজন এমন একটি জিহাদ যে জিহাদ ধ্বংস করবে নাস্তিকদের প্রসাদ।