লগইন রেজিস্ট্রেশন

ইসলামী দৃষ্টিকোণ : উপার্জন, বণ্টন ও ব্যয় নীতি

লিখেছেন: ' নোমান' @ রবিবার, মার্চ ১৪, ২০১০ (১২:৪৬ অপরাহ্ণ)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রদত্ত ও তাঁর রাসুল (সা.) প্রদর্শিত জীবন বিধানই ইসলাম। যেহেতু ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, সেহেতু এর অনুসারীদের জন্য এতে রয়েছে ব্যক্তিজীবন, সমাজজীবন, রাষ্ট্রীয় জীবনের দায়-দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালনের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও যথার্থ নীতিমালা। এরই মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পরিবার, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসন, আইন ও বিচার। ইসলামী অর্থনীতি বলতে ওই অর্থনীতিকে বোঝায় যার আদর্শ, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, কর্মপদ্ধতি এবং পরিণাম ইসলামী নীতি ও আকিদা মোতাবেক নির্ধারিত হয়। এই অর্থনীতির মূলনীতি ও দিকনির্দেশনা বিধৃত রয়েছে আল-কোরআন ও সুন্নাতে।

মূলত ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ সম্পদের মালিক নয়, ব্যবহারকারী মাত্র�এই নীতির ভিত্তিতে ইসলাম নির্ধারিত সীমারেখার আলোকে মানুষের অর্থনৈতিক আচরণ বিশ্লেষণ, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও ন্যায়ানুগ বণ্টনের নিশ্চয়তা বিধান করাই ইসলামের অর্থনীতির মূল কথা।

মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে নিম্নরূপ নির্দেশনা প্রদান করেছেন :

১. �তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের দিবসের আশা করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, তার জন্য আল্লাহর রাসুলের সুন্দর আদর্শ রয়েছে।� [সূরা আহ্যাব] ইসলামী নীতিশাস্ত্র ও ইসলামী অর্থনীতি উভয়েরই উত্স এ উসওয়াতুন হাসানা।

২. �হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অপরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে বা অবৈধ পন্থায় ভক্ষণ করো না। তবে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসায়িক লেনদেন করতে পার। আর তোমরা একে অন্যকে হত্যা করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি বড় দয়ালু। আর যারা জুলুম সহকারে এভাবে সীমা অতিক্রম করবে, তাদের আমি জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করব। [সূরা নিসা : ২৯-৩০]
ধন উপার্জনের ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সা.) উল্লেখ করেন�

(১) ফরজগুলো পালনের পর �ইবাদতের সত্তরটি অংশ রয়েছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে হালাল রিজিকের সন্ধান।�
(২) �হালাল রুজির সন্ধান করা।
(৩) �যে আল্লাহকে ভয় করে, তার ধনী হওয়াতে দোষ নেই।�

ইসলাম সম্পদের ব্যক্তিমালিকানায় বিশ্বাস করে, তবে সেই মালিকানা নিরঙ্কুশ নয়, তার মালিকানা ব্যবহারকারী হিসেবে মাত্র। সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ। সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে ইসলাম ব্যক্তির উদ্যোগকে সম্মান করে, তবে কোনোক্রমেই হারাম বা সমাজের জন্য ক্ষতিকর কোনো দ্রব্যের উত্পাদন বা ব্যবসার অনুমতি দেয় না, তা যতই লাভজনক হোক না কেন। অনুরূপভাবে উত্পাদন বা ব্যবসার জন্য এমন কোনো পন্থা সমর্থন করে না, যা ধোঁকা, প্রতারণা, বলপ্রয়োগ বা অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ন করার পর্যায়ে পড়ে। যেমন�মাপে কম দেয়া, দ্রব্যের দোষ গোপন করে বিক্রি করা, জুয়া বা লটারির মাধ্যমে মানুষকে ঠকানো। মজুতদারি বা কৃত্রিম পন্থায় বাজার দর প্রভাবিত করে অধিক মুনাফা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। সুদি কারবার বা কোনো হারাম পন্থায় উপার্জনও গ্রহণযোগ্য নয়।

এছাড়া অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে সব হারাম পথ যেমন�সুদ, ঘুষ, জুয়া, হারাম ও নাপাক বস্তুর ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রতারণা, অশ্লীলতার প্রসার ঘটায় এমন যে কোনো উপকরণের উত্পাদন ও ব্যবসা পরিচালনা, ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন, জবরদখল, অধীনস্তদের থেকে উপহার গ্রহণ ইত্যাদিকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। সম্পদ বণ্টন এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে ইসলামী অর্থনীতিতে স্বাভাবিক আবর্তন এবং প্রয়োজনে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। ইসলামী অর্থনীতি মানব সম্পদ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পদের বৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে উত্পাদন ও আয় বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে চায়, অপরদিকে অপচয় রোধ, সুষম বণ্টন ও আবর্তন নিশ্চিত করে দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক সাম্য স্থাপন করতে চায়।

মহান রাব্বুল আলামিন সম্পদ বণ্টন এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে উল্লেখ করেন : �যে রিজিক আমি তোমাদের দিয়েছি তা থেকে খরচ কর� [সূরা বাকারা-৩]। �হে মানব জাতি! পৃথিবীতে যেসব হালাল ও পাক জিনিস রয়েছে সেগুলো খাও এবং শয়তানের দেখানো পথে চলো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু� [সূরা বাকারা-১৬৮]। �অপচয়কারী শয়তানের ভাই� [সূরা বনি ইসরাইল]। �আল্লাহর ওই সম্পদ থেকে তোমরা দাও যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন� (সূরা নূর-৩৩]। �যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে অথচ আল্লাহর রাস্তায় তা খরচ করে না, তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও� [সূরা তাওবা]। �তোমরা যে সম্পদ ব্যয় কর তা তোমাদের নিজেদের জন্য� [সূরা বাকারা]। �তাদের সম্পদে প্রার্থনাকারী ও বঞ্চিতদের হক আছে� [সূরা যারিয়াত-১৯]। �যাতে এ সম্পদ শুধু ধনীদের মধ্যে কুক্ষিগত না হয়ে পড়ে� [সূরা হাশর-৭]। �তারা আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় ধন-সম্পদ আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও ক্রীতদাসদের মুক্ত করার জন্য ব্যয় করবে� [সূরা বাকারা-১৭৭]। �এ সদকাগুলো তো আসলে ফকির মিসকিনদের জন্য আর যারা সদকা সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত এবং যাদের মন জয় করা প্রয়োজন তাদের জন্য। তাছাড়া দাস মুক্ত করার, ঋণগ্রস্তদের সাহায্য করার, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের উপকারে ব্যয় করার জন্য এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিধান এবং আল্লাহ সবকিছু জানেন, তিনি বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ� [সূরা তাওবা-৬০]।
ধন বণ্টন এবং ব্যয়ের ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সা.) উল্লেখ করেন�

�হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা মুসলমান ধনী লোকদের ধন-মাল থেকে এমন পরিমাণ দান করা ফরজ করে দিয়েছেন, যা গরিব-ফকিরদের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট হতে পারে। ফলে ফকির-গরিবরা যে ক্ষুধার্ত কিংবা উলঙ্গ থেকে কষ্ট পায়, তার মূলে ধনী লোকদের সাবধান হওয়া উচিত। নিশ্চয়ই জেনে রাখ, আল্লাহ তায়ালা এই লোকদের খুব শক্তভাবে হিসেব গ্রহণ করবেন এবং তাদের কঠিন পীড়াদায়ক আজাব দেবেন [তিবরানি আস-সগীর ও আল আওসাত]।

হজরত মিকদাম ইবনে মায়াদি কারাব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, মানুষের খাদ্যের মধ্যে সেই খাদ্যই সবচেয়ে উত্তম, যে খাদ্যের ব্যবস্থা সে নিজ হস্তে উপার্জিত সম্পদ দ্বারা করে। আর আল্লাহর প্রিয় নবী হজরত দাউদ (আ.) আপন হাতের কামাই থেকে খাদ্য গ্রহণ করতেন (বুখারি)।

উপরিউক্ত কোরআন এবং হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী ইসলামী অর্থনীতিতে সম্পদ বণ্টন ও ব্যয়ের লক্ষ্য হচ্ছে�
১. আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদরাশির সর্বাধিক উত্পাদন এবং সুষ্ঠু ও ন্যায়ভিত্তিক বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ২. প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক উপকরণ ও সেগুলোর প্রয়োজন মেটানোর মধ্যকার ব্যবধান দূর করার সঙ্গে সঙ্গে মানবজাতির বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, সাম্য, মৈত্রী, সমবেদনা ও সহযোগিতার বন্ধন সৃষ্টি করা। ৩. সর্বোপরি মানব জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য চারিত্রিক উন্নতি সাধনের মাধ্যমে পরকালীন চিরস্থায়ী জীবনে পরম শান্তি ও মুক্তি অর্জনে সহায়তা দান।
এক কথায় বলা যায়, শুধু বস্তুগত কল্যাণই ইসলামী অর্থনীতির লক্ষ্য নয় বরং সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে মানব জীবনে বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক তথা সামগ্রিক কল্যাণ সাধনই এর লক্ষ্য। ষজ্ঞান-বিজ্ঞান প্রসারে মুসলমানদের অবদান

Source:
মোঃ জি ল্লু র র হ মা ন পা টো য়া রী
Amardesh

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৯০৮ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)

৩ টি মন্তব্য

  1. ইসলাম সম্পদের ব্যক্তিমালিকানায় বিশ্বাস করে, তবে সেই মালিকানা নিরঙ্কুশ নয়, তার মালিকানা ব্যবহারকারী হিসেবে মাত্র। সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ। সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে ইসলাম ব্যক্তির উদ্যোগকে সম্মান করে, তবে কোনোক্রমেই হারাম বা সমাজের জন্য ক্ষতিকর কোনো দ্রব্যের উত্পাদন বা ব্যবসার অনুমতি দেয় না, তা যতই লাভজনক হোক না কেন। অনুরূপভাবে উত্পাদন বা ব্যবসার জন্য এমন কোনো পন্থা সমর্থন করে না, যা ধোঁকা, প্রতারণা, বলপ্রয়োগ বা অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ন করার পর্যায়ে পড়ে। যেমন�মাপে কম দেয়া, দ্রব্যের দোষ গোপন করে বিক্রি করা, জুয়া বা লটারির মাধ্যমে মানুষকে ঠকানো। মজুতদারি বা কৃত্রিম পন্থায় বাজার দর প্রভাবিত করে অধিক মুনাফা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। সুদি কারবার বা কোনো হারাম পন্থায় উপার্জনও গ্রহণযোগ্য নয়।

    (F)

  2. জ্ঞানগর্ভ পোষ্ট। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। (F)

  3. (১) ফরজগুলো পালনের পর �ইবাদতের সত্তরটি অংশ রয়েছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে হালাল রিজিকের সন্ধান।�

    সহমত ।