একটি ছোট্ট গল্প ও আমাদের “ফুলিশ”
লিখেছেন: ' রাসেল আহমেদ' @ শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১১ (১২:১০ অপরাহ্ণ)
একজন ভদ্র লোকের সাথে হেটে যাচ্ছি একটি নির্দিষ্ট ঘটনার পর (ঘটনাটি পরে বলছি)। ভদ্রলোক আমাকে একটি গল্প শুনানেল, আজ তা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
কোন এক দেশে রাজা একদিন স্বপ্নে দেখলেন, তার দেশে বৃষ্টি হচ্ছে । যে লোকই এই বৃষ্টি মিশ্রিত পানি পান করছে সেই পাগল হয়ে যাচ্ছে। যারা কোন এক সুফি সাধক কে প্রশ্ন করলেন এটা কেন হচ্ছে? সুফি সাধক জবাব দিলেন এটার নাম “পাগলা পানির বৃষ্টি” যে ব্যক্তিই এই পানি পান করবে সেই পাগল হয়ে যাবে।
পরদিন রাজা ঘুম থেকে উঠেই মহ চিন্তায়! কি স্বপ্ন দেখলাম? তৎক্ষনাৎ উজিরের সাথে পরামর্শ।
উজির সাহেব, গত রাত্রে আমি এমন এমন একটি স্বপ্ন দেখেছি আর আমার মন বলছে স্বপ্নটি বাস্তব হবে।
উজির সাহেব: চিন্তা কইরেন না রাজা মশাই আমরা কয়েক টাংকি পানি আগে থেকেই মজুদ করে রাখব। তাতে আমাদের রাজ পরিষদের সদস্য গন সুস্থ থাকবে রাজ্য পরিচালনা করতে কোন অসুবিধা হবেনা।
কথা মত প্রচুর পরিমান পানি মজুদ করা হল, পাগলা পানির বৃষ্টিও হল। সেই বৃষ্টির পানি পান করে সমস্ত প্রজারা পাগল হয়ে গেল, শুধু মাত্র রাজ পরিষদ ছাড়া।
এখন সব পাগল রা মিলে করে পাগলামি, আর রাজ পরিষদ চায় তাদের সুন্দর করে পরিচালনা করতে। যা হবার তাই হল, ফল হল হিতে বিপরিত। পাগল রা সংখ্যায় অনেক বেশি তারা রাজ দরবারে এসে চিল্লাচিল্লি করে আর বলে রাজ পরিষদ এর সবাই পাগল হয়ে গেছে। তাদের প্রতি ঢিল ছুড়ে, রাজ দরবার ভাংচুর করে।
রাজা পরলেন মহা সমস্যায় তিনি তার মন্ত্রি পরিষদের সব চাইতে বুদ্ধিমান লোকটির সাথে পরামর্শে বসলেন কি করা যায় এই পরিস্থিতিতে?
বুদ্ধিমান মন্ত্রি: রাজা মশাই পাগলা পানি খেয়ে আমাদের দেশের সবাই পাগল হয়ে গেছে আমরা গুটি কয়েক জন ব্যতিত। সুতরাং আমাদের এখন আর এই সমাজে চলার মত পরিস্থিতি নাই, যদি চলতে হয় তাহলে আমাদের কেও পাগলা পানি খেয়ে পাগল হতে হবে। আবার যখন ভাল হব তখন সবাই একসাথে ভাল হব।
রাজা তার বুদ্ধি গ্রহন করলেন পাগলা পানি খেয়ে সবাই পাগল হলেন। পাগলদের সাথে চলতে তাদের আর কোন সমস্যা হলনা।
যে কারণে ভদ্রলোক গল্পটি শুনালেন
গত রবি বার অফিস শেষে আমি ও আমার অন্য একজন সাথি অফিস থেকে বের হয়ে বেইলী রোডে অবস্থিত ভিকারুন্নিসা স্কুলের সামনে যেতেই দেখি, একজন পুলিশ আসতেছেন ও একজন পথচারি যাচ্ছেন, পুলিশ মহোদয়ের ইউনিফর্মে লেগে বেচারা ভদ্রলোকের শার্ট ছিড়ে গেছে।
ভদ্রলোক একটু রাগত স্বরে কথা বললে, পুলিশ মহোদয়ের কি ঝাড়ি এবং কুরুচি পূর্ণ কথা। একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি, ভদ্রলোক দিলেন এক ঘুসি, আর যায় কই? পুলিশ মহোদয়ের মূখ দিয়ে যা কুরুচি পূর্ণ কথা ছিল সবই বের হচ্ছে। তাতেই শেষ নয় অন্য দো’জন পুলিশ কে দেখে তাকে গ্রেফতাতের নির্দেশ দিয়ে, থানায় নিয়ে আচ্ছা মত দেখে নেয়ার হুমকি ধমকি। অবশেষে আমরা বিনিত স্বরে লোকটির পক্ষথেকে ভূল স্বীকার করে রমজানের উছিলায় মাফ করে দেয়ার জন্য অনুরুধ করি। অনেক ঝাড়ি আর বকাবকির পর অনেক মানুষের অনুরুধে লোকটিকে ছাড়া হল।
অনেক লোকের মাঝে সেই ভদ্র লোক ও একজন ছিলেন।
হাটতে হাটতে মগবাজার মোড় চলে এলাম। ভদ্রলোক একদিকে আর আমি অন্য দিকে চলে গেলাম। যাবার আগে তিনি বলে গেলেন: যে হারে পুলিশরা জনগণের সাথে দুর্ব্যবহার করছে তাতে জনগণ ও তাদের মত না হলে এর সমাধান হবেনা।
আমি কিছুক্ষণ ভদ্রলোকের গল্পটি নিয়ে দাড়িয়ে ভাবছিলাম, বাস এল বাসে উঠে বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম।
যে হারে পুলিশরা জনগণের সাথে দুর্ব্যবহার করছে তাতে জনগণ ও তাদের মত না হলে এর সমাধান হবেনা।
@এম এম নুর হোসেন, পড়ার জন্য ধন্যবাদ।