নবীজির (সা.) জীবনী লেখার কাজ শুরু করেছি: হুমায়ুন আহমেদ
লিখেছেন: ' রাসেল আহমেদ' @ রবিবার, অক্টোবর ২৩, ২০১১ (৯:২২ পূর্বাহ্ণ)
প্রশ্ন : আপনি অনেক দিন ধরে বলছেন যে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী আপনি লিখতে চান। সেই লেখার প্রস্তুতিটা কী রকম?
হুমায়ূন আহমেদ : আমার প্রস্তুতির কথা বলব, কিন্তু এখানেও কিছু সমস্যা আছে। সমস্যা হলো দুই ধরনের। প্রথম সমস্যা হলো, আমার মধ্যে কিছু ছেলেমানুষি আছে তো…আমি যখন সব কিছু ঠিকঠাক করলাম, তখন একটা ঘটনা ঘটে। শুরু থেকেই বলি। বাংলাবাজারে অন্যপ্রকাশের একটি স্টল আছে। স্টলটি উদ্বোধনের জন্য আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক দিন পরে আমি বাংলাবাজারে গেলাম। স্টলের ফিটাটিতা কাটলাম। এক মাওলানা সাহেব প্রার্থনা করলেন। আমি খুবই অবাক হয়ে তাঁর প্রার্থনা শুনলাম। আমার কাছে মনে হলো, এটি বইপত্র সম্পর্কিত খুবই ভালো ও ভাবুক ধরনের প্রার্থনা। একজন মাওলানা এত সুন্দর করে প্রার্থনা করতে পারেন যে আমি একটা ধাক্কার মতো খেলাম। মাওলানা সাহেবকে ডেকে বললাম, ‘ভাই, আপনার প্রার্থনাটা শুনে আমার ভালো লেগেছে।’ মাওলানা সাহেব বললেন, ‘স্যার, আমার জীবনের একটা বড় আকাঙ্ক্ষা ছিল আপনার সঙ্গে একদিন দেখা হবে। আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। আপনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে।’ আমি তাঁর কথা শুনে বিস্মিত হলাম। আমি বললাম, ‘এই আকাঙ্ক্ষাটি ছিল কেন?’ মাওলানা সাহেব বললেন, ‘আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই কারণ আমি ঠিক করেছি, দেখা হলেই আপনাকে আমি একটা অনুরোধ করব।’
‘কী অনুরোধ শুনি?’
‘আপনার লেখা স্যার এত লোকজন আগ্রহ নিয়ে পড়ে, আপনি যদি আমাদের নবী করিমের জীবনীটা লিখতেন, তাহলে বহু লোক এই লেখাটি আগ্রহ করে পাঠ করত। আপনি খুব সুন্দর করে তাঁর জীবনী লিখতে পারতেন।’
মাওলানা সাহেব কথাগুলো এত সুন্দর করে বললেন যে আমার মাথার ভেতর একটা ঘোর তৈরি হলো। আমি তাঁর কাঁধে হাত রেখে বললাম, ‘ভাই, আপনার কথাটা আমার খুবই মনে লেগেছে। আমি নবী করিমের জীবনী লিখব।’ এই হলো ফার্স্ট পার্ট। চট করে তো জীবনী লেখা যায় না। এটা একটা জটিল ব্যাপার, কাজটা বড় সেনসেটিভ। এতে কোথাও একটু উনিশ-বিশ হতে দেওয়া যাবে না। লিখতে গিয়ে কোথাও যদি আমি ভুল তথ্য দিয়ে দিই, এটি হবে খুবই বড় অপরাধ। এটা আমাকে লেখা শুরু করতে বাধা দিল।
প্রশ্ন : আপনি কি মহানবীর জীবনী লেখার কাজটা শুরু করেছিলেন?
হুমায়ূন আহমেদ : নাহ্, আমি লেখার কাজ শুরু করিনি। আমি অন্যদিন-এর মাসুমকে বললাম, ‘তুমি একটা সুন্দর কাভার তৈরি করে দাও তো। কাভারটা চোখের সামনে থাকুক। তাহলে আমার শুরু করার আগ্রহটা বাড়বে।’ মাসুম খুব চমৎকার একটা কাভার তৈরি করে দিল। বইটার নামও দিলাম_’নবীজী’। তখন একটা ছেলেমানুষি ঢুকে গেল মাথার মধ্যে। ছেলেমানুষিটা হলো, আমি শুনেছি বহু লোক নাকি আমাদের নবীজীকে স্বপ্নে দেখেছেন। কিন্তু আমি তো কখনো তাঁকে স্বপ্নে দেখিনি। আমি ঠিক করলাম, যেদিন নবীজীকে স্বপ্নে দেখব, তার পরদিন থেকে লেখাটা শুরু করব। স্বপ্নে এখন পর্যন্ত তাঁকে দেখিনি। যেহেতু এক ধরনের ছেলেমানুষি প্রতিজ্ঞার ভেতর আছি, সে কারণে লেখাটা শুরু করতে পারিনি। ব্যাপারটা হাস্যকর। তবু আমি স্বপ্নের অপেক্ষায় আছি।
প্রশ্ন : আপনার প্রস্তুতি কী? মানে পড়াশোনা আর অন্যান্য…।
হুমায়ূন আহমেদ : আমার প্রস্তুতি ভালো। পড়াশোনা ভালোই করেছি। বইপত্র জোগাড় করতে পেরেছি। বন্ধুরাও বইপত্র সংগ্রহ করতে সাহায্য করেছেন। কাজেই এখন আমি বলতে পারি যে নবীর জীবনী লেখার জন্য আমার প্রস্তুতি যথেষ্ট হয়েছে।
প্রশ্ন : বাংলা ভাষায় হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যেসব জীবনী লেখা হয়েছে, এর মধ্যে আপনার পছন্দের কোনটা?
হুমায়ূন আহমেদ : সত্যি কথা বলতে কি, আমার তেমন পছন্দের কোনো জীবনী নেই। জীবনীগুলোর মধ্যে ভক্তি চূড়ান্তভাবে বেশি। আমার লেখার মধ্যেও ভক্তি থাকবে। কিন্তু একটু অন্যভাবে থাকবে এবং আরো কিছু ব্যাপার থাকবে।
প্রশ্ন : ধানমণ্ডিতে আপনার বাড়িটা যখন করলেন, তখন আমি দেখেছি, আপনি একটা নামাজঘর করেছেন। নুহাশপল্লীতেও আপনি নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রেখেছেন। এটা কোন চিন্তা থেকে করেছেন?
হুমায়ূন আহমেদ : নামাজঘর করার চিন্তাটা ধর্মীয় ভাব থেকে যতটা না এসেছে, তার চেয়ে বেশি এসেছে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের বই পড়ে। তাঁদের বইয়ে দেখি, তাঁদের একটা ঠাকুরঘর আছে, পূজাঘর আছে। তাঁরা প্রতিটি বাড়িতে একটা অংশ আলাদা করে রাখেন উপাসনার জন্য। এই কাজটা আমরা করি না। আমাদের প্রার্থনার জন্য আলাদা জায়গা রাখি না। নামাজঘর বানাই না। আমি বানাতে চেয়েছি। আর নুহাশপল্লীতে আমি নামাজের জায়গাটা করেছি আমার মায়ের জন্য। একটা খোলা মাঠে_লোকজন নেই, একটা গাছের নিচে বসে নামাজ পড়তে হয়তো বা তাঁর ভালো লাগবে_এ কথা মনে করেই শ্বেতপাথর বসিয়ে একটা জায়গা আলাদা করে দিয়েছি।
[শিলালিপিতে ইমদাদুল হক মিলনের নেয়া একটি সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ]
হেদা্য়েতের মালিক আল্লাহ।আল্লাহপাক কাকে যে কিভাবে হেদায়েত দেন তার কল্পনাও আমরা করতে পারবো না।সাক্ষাৎকারটি পড়ে তারই কিছু আলামত পেলাম।সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করার জন্য রাসেল ভাইকে ধন্যবাদ।পরিশেষে আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে প্রকৃত হেদায়েত দান করুন।আমিন।