প্রশ্ন ; আমাদের অনেক ভাই বলেন, মাযহাব মানার কোন দলীল নাই। বরং এটা ভিত্তিহীন, বানানো ,বিদাআত। আসলে কি তাই?
লিখেছেন: ' রাসেল আহমেদ' @ বৃহস্পতিবার, জুন ৭, ২০১২ (১০:২০ পূর্বাহ্ণ)
উত্তরঃ না ভাই, কথাটি সঠিক নয়। মাযহাব মানার অবশ্যই দলীল প্রমান আছে। আমাদের কে প্রথমে একটা বিষয় পরিষ্কার করতে হবে। তা হল, মাজহাব মানার অর্থ কি? এর একটা অর্থ হতে পারে কোরআন –সুন্নাহ বাদ দিয়ে কোন ব্যক্তির কথা মানা । আরেকটা অর্থ হল, ধর্মীয় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কোন বিজ্ঞ বেক্তির ফায়সালা মেনে নেওয়া। যা তিনি কোরআন –সুন্নাহ কে সামনে রেখে প্রদান করেছেন। তার থেকে বর্ণিত প্রতিটি মাসালায় তিনি কোরআন – হাদিসকে ই প্রাধান্য দিয়েছেন। সুতরাং এদের কথা মানার অর্থই হল , কোরআন হাদিস মানা । মূলত এদেরকে মানা উদ্দেশ্য নয়, এবং মানাও হয়না । বরং তাদের দেখান মূলনীতি অনুযায়ী কোরআন- সুন্নার উপর আমল করা ই উদ্দেশ্য , এবং তাই করা হয়। এমন নয় যে, তারা একেকটা নতুন ইসলাম দাড় করিয়েছেন।আর আমরা এ ইসলাম গুলুর অনসরন করছি। সারকথা, দ্বীন মানার জন্য তাদের মাতামত গুলু কে সহায়ক হিসেবে নেয়া হয় মাত্র।
এখন আসুন, দলীল চতুষ্টয় দ্বারা আমরা মাজহাব মানা প্রমান করি।
কুরআনের আলোকে মাযহাব
কুরআনের মোট ৩ টি আয়াত এবিষয়ে প্রমান হিসেবে তুলে ধরছি ।
১ ম আয়াতঃفا سئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون তোমাদের কোন বিষয়ে জানা না থাকলে আহলে ইলমদের নিকট জিজ্ঞাসা কর । সুরা, আল আম্বিয়াঃ৭,ও সুরা আন নাহালঃ৪৩,
টীকাঃ এ আয়াত যদিও বিশেষ ঘটনার সাথে যুক্ত । কিন্তু কুরআনের একটি মূলনীতি হল, যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা নাযিল হয়েছে তা এতে সীমাবদ্ধ থাকেনা।বরং শব্দের ব্যাপক অর্থ ব্যাবহার হবে।
বিশ্লেষণঃ দেখুন, আয়াতটির হুকুম রহিত হয়নি।
আয়াতে বলা হচ্ছে,অজানা বিষয়ে বিজ্ঞ লোকদের অনুসরণ করার জন্য। এখন আমরা যদি বলি , না তাদের অনুসরণ কারা যাবেনা । তাহলে এটা কি কোরআনের বিরোধিতা হবেনা।
আর অজানা বিষয়ে বিজ্ঞদের অনুসরণ করার নাম ই হল , তাকলিদ। সুতরাং তাকলিদ কোরআন দ্বারা প্রমাণিত।
আল্লামা খতীবে বাগদাদি (রাহ)বলেন, করান-সুন্নার যে সকল বিষয়ে সাধারণ লোক সরাসরি শরীয়তের বিধান আহরণে অক্ষম, তাদের জন্য কোন বিজ্ঞ আলেমের তাকলিদ করা আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক জায়েজ।সুত্রঃ আল ফাকিহ ওয়াল মুতাফাককিহ ৩০৬।
আল্লামা ফাখ্রুদ্দিন ও আল্লামা আলুসি উক্ত আয়াতের তাফসীরে লিখেন, উপরুল্লিখিত আয়াতের ভিত্তিতে অনেকে ই মুজতাহিদ ইমামগনের তাকলিদ বৈধ ও অনভিজ্ঞ সবাইকে বিজ্ঞ মুজতাহিদের শরণাপন্ন হওয়া ওয়াজিব বলেন।
সুত্রঃতাফসিরে কাবির১৯/১৯,রুহুল মায়ানি-১৪/১৪৮, মাঝহারি- ৫-৩৪২, লুবাব-১২/৬১, কুরতুবি ১০/৭২
২য় আয়াতঃ اطيع الله واطيع الرّسول وأولى ألامر من كم الخহে ইমানদারগণ ! আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য কর।আর আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যে যারা “ উলিল আমর” তাদের । সুরা আন নিসাঃ ৫৯
বিশ্লেষণঃ দেখুন , আয়াতে আল্লাহ ও তার রাসুলের পাশাপাশি উলিল আমরের আনুগত্য করতে বলা হয়েছে।আসুন, দেখি এ ব্যাপারে মুফাসসির গণ কি বলেন।তাফসির গ্রন্থাবলিতে উলিল আমরের ২ টি তাফসীর পাওয়া যায়। ১মঃ কুরআন- সুন্নার ইলমের অধিকারী ফাকিহ ও মুজতাহিদগণ। ২য়ঃ মুসলিম শাসক বর্গ । ১ম তাফসীর টি অধিক গ্রহণযোগ্য । কেননা , এর পক্ষে মতামত দিয়েছেন, হযরত জাবের, এবনে আব্বাস, মুজাহিদ, আতা বিন আবি রাবাহ, আতা বিন সাইব, হাসান বাসরি ও আলিয়াহ (রাহ) এর মত সেরা মুফাসসিরগন । মাত্র দু একজন ২য় মত টি ব্যক্ত করেছেন।
আল্লামা রাযি (রাহ) প্রথম তাফসীরের সমর্থনে সারগর্ভ যুক্তি প্রমান অবতারনা করে বলেছেন, বস্তুত আয়াতে উলিল আমর ও উলামা শব্দ দুটি সমার্থক।
ইমাম আবু বাকার (রাহ) বলেন , এখানে মূলত কোন বিরোধ নেই। মূলত উলিল আমর শব্দ টি ব্যপক। সুতরাং ধর্মীয় বিষয়ে ১ম তাফসীর গৃহীত হবে। আর আহকাম ও মাসআলার ক্ষেত্রে ২য় তাফসীর গ্রহন হবে। আয়াতের অর্থ হবে, তোমরা রাজনীতি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে শাসকবর্গের কথা আর আহকাম ও মাসআলার ক্ষেত্রে আলিমগণের ইতায়াত কর । সুত্রঃ আহকামুল কুরআন-২/২৫৬,তাফসিরে কাবির-৩/ ৩৩৪ ।
মোট কথাঃ আলোচ্য আয়াতের আলোকে আল্লাহ ও রাসুলের ইতায়াত যেমন ফরয তেমনি কুরআন ও সুন্নার ব্যাখ্যা দাতা হিসেবে আলিম ও মুঝতাহিদ্গনের ইতায়াত ও ফারয।
আয়াতের শেষাংশের ব্যাখ্যা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, যেখানে বলা হয়েছে মতবিরোধ পূর্ণ ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসুলের দিকে ফিরার জন্য । এ ব্যাপারে আমরা বলবো, মূলত এ দ্বিতীয়াংশের মাধ্যমে ফকিহ ও মুজতাহিদদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। সাধারন মানুষের জন্য নয়। যা আহলে হাদিস ইমাম জনাব নবাব সিদ্দিক হাসান খান তার লিখিত কিতাব “ফাতহুল বায়ান “ নামক গ্রন্থে স্বীকার করেছেন, তার ভাষায়ঃوالظاهرأنّه خطاب مستقلّ مستأنف موجّه للمجتهدين স্পষ্টতই এখানে মুজতাহিদ গণকে সতন্ত্রভাবে সম্ভোধন করা হয়েছে। এ দুটি আয়াতের আলোচনা বিস্তারিতভাবে করলাম। আশা করি আমার লা মাজহাবই ভাইগণ একটু হলেও চিন্তা করবেন।
তৃতীয় আয়া: والتّبع سبيل من أناب اليّ যে আমার অভিমুখী হয়েছে , তুমি তার পথ অনুসরণ কর। সুরা আল লোকমানঃ ১৫
এ আয়াতে মূলত আবু বাকার (রা) মতান্তরে সা”দ ইবনে ওয়াককাসের ব্যাপারে মন্তব্য করা হলেও কোন কোন তাফসীর কারক বলেছেন, এখানে উদ্দেশ্য হল , ধর্মানুরাগী মুসলমান । আল্লাম জমখসরি লিখেন,আল্লাহ অভিমুখী বলতে মুমিনদের পথ বুঝানো হয়েছে। কাজেই আয়াতের অর্থ হল, তুমি দ্বীন ধর্মের ক্ষেত্রে মুমিনগণের পথ অনুসরণ কর। সুত্রঃ আল কাসসাফ-৩/৪৭৯।
হে আল্লাহ! আমাদের কে সরল পথে পরিচালিত কর ।অর্থাৎ তাদের পথে যাদের কে তুমি নেয়ামত দান করেছ,
ইমাম / আলিমগণকে প্রশ্ন করাই কি তাক্বলীদের প্রমাণ ?
দেওবন্দীগণ তাক্বলীদের সত্যতা প্রমাণ করার জন্য দাবী করেন যে , তাক্বলীদ হলো –
১- প্রচারিত জ্ঞানের অনুসরণ মাত্র ।
২- ‘ধর্ম সম্পর্কে সবচেয়ে জ্ঞানী’ – একথা বিশ্বাস করেই ইমাম / আলিমগণকে জিজ্ঞেস করা ।
প্রমাণ হিসেবে তারা এই আয়াত উপস্থাপন করেন , “তোমরা যদি না জানো , তবে ঐশি গ্রন্থধারীদেরকে জিজ্ঞাসা কর” – সুরা আন নাহল : ৪৩-৪৪ । দেওবন্দীগণের দাবী অনুসারে , কুরআনের এই আয়াত মুসলমানদেরকে অন্ধভাবে একজন ইমামকে অনুসরণ করতে বলে কি না , তা আমাদেরকে বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে । তাছাড়াও , আমরা দেওবন্দীগণের সংজ্ঞা এবং তাক্বলীদের শর্তসমূহ তুলনা করবো – ইমাম বা আলিমগণকে জিজ্ঞাসা করার অর্থ এবং প্রচারিত জ্ঞানের অনুসরণ করার সাথে ; এজন্য যে , দুটি ধারণা একই , বা একই রকম কি না !
ইমাম / আলিমগণকে জিজ্ঞাসা করার অর্থ :
আল্লাহ কুরআনে বলেন , “(হে মুহাম্মাদ সাঃ !) তোমার পূর্বে আমি প্রত্যাদেশসহ মানুষই (রাসূল রুপে) প্রেরণ করেছিলাম (মানব জাতিকে আল্লাহর এককত্বের বিশ্বাস – এই আহবান এবং এর প্রচারের জন্য) , তোমরা (হে মক্কার মুশরিকগণ !) যদি না জানো , তবে ঐশি গ্রন্থধারী (তাওরাত ও ইঞ্জিলের আলিমগণ) দের জিজ্ঞাসা কর । (আমি রাসূল পাঠিয়েছিলাম) সুস্পষ্ট নিদর্শন ও অবতীর্ণ গ্রন্থসহ ; আর আমরা তোমার প্রতি (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি , মানুষের নিকট যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল , তা তাদের সুস্পষ্টভাবে বোঝাবার জন্য , যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে । (সুরা আন নাহল : ৪৩-৪৪)
ইসলাম ধর্মের মূল উৎস হলো কুরআন ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আদর্শ , যাঁকে শিক্ষক এবং পথ প্রদর্শক রুপে পাঠানো হয়েছিলো । আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর প্রতিটি কথা , কাজ ও নীবর সমর্থনই ধর্মের স্বপ্রমাণিত অংশ ।
সাহাবাগণের শিক্ষার মৌলিক উপাদান ছিলো , আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যা প্রচার করেছেন , তাই পূর্ণ নিস্পত্তি হিসেবে মেনে , শুনা এবং মুখস্ত করা । তাঁরা এ সকল রায় বা বাণী অনুসরণ করতেন , মুখস্ত করতেন এবং যারা অনুপস্থিত তাদের কাছে বলতেন । সাহাবী (রাঃ) গণ বেশীর ভাগ সময় আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর সান্নিধ্যে অতিবাহিত করতেন । কাজেই , তাঁরা অন্যদের চেয়ে ফতোয়া ও আদেশ-নিষেধ বেশী জানতেন ।
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর ইন্তিকালের পর সাহাবী (রাঃ) গণ কার্যাবলী সেই ভাবেই করেছেন , যে ভাবে রাসূল (সাঃ) করতে বলেছেন , বা তাঁকে (সাঃ) করতে দেখেছেন বা শুনেছেন । আর , যদি বিশেষ কোন ফতোয়া অজানা থাকতো , তবে , অধিক জ্ঞানী সাহাবা (রাঃ) গণের নিকট থেকে জেনে নিতেন । এরপরও , যদি কোন বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে সমাধান না পেতেন , তখন ইজতিহাদের আশ্রয় নিতেন । যেহেতু , সাহাবীগণ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন , কাজেই , পরবর্তী সময়ে তাবেঈগণ সাহাবী (রাঃ) গণ থেকে একই পন্থায় ধর্মের শিক্ষা গ্রহণ করতেন । সাহাবী (রাঃ) গণ শাসন ও ধর্মীয় কাজে ইসলামী সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ভ্রমণ করতেন । তাবেঈগণ নিকটস্থ শহরে অবস্থানকারী সাহাবী (রাঃ) এর নিকট থেকে হাদীস ও ধর্মীয় আদেশ-নিষেধ শিখতেন । পুরুষানুক্রমে , ঐ শহরের যারা সুপরিচিত ও বিশ্বাসযোগ্য ছিলেন , তাদের থেকে লোকেরা জ্ঞান আহরণ করতো এবং ফতোয়া চাইতো । সাধারণ লোকদের , নিকটস্থ শহরের কোন সব চেয়ে জ্ঞানী আলিমকে জিজ্ঞাসা করে ধর্মীয় বিষয়াদি জেনে নেয়ার প্রচলিত অভ্যাস তাবেঈদের যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত চালু আছে । এই প্রচলিত নিয়মটিই আল্লাহর বাণী , “তোমরা যদি না জানো তবে ঐশি গ্রন্থধারীদের জিজ্ঞাসা কর” । আল্লাহর রাসূল (সাঃ) থেকে সহীহ সনদে যা বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর অনুসরণ করাই প্রচারিত জ্ঞানের অনুসরণ এবং উপরের নিয়মই তার জন্য প্রচলিত আছে ।
“প্রচারিত জ্ঞানের অনুসরণ” , “জ্ঞানী ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করা” এসব রীতি দেওবন্দীগণ তাক্বলীদ হিসেবে গণ্য করেন না । নিম্নলিখিত শর্ত সমূহ (বিভিন্ন গ্রন্থ , বিভিন্ন বিষয় ও অনুচ্ছেদ থেকে সংক্ষিপ্তাকারে সংকলিত) যারা কঠোরভাবে মেনে না নেয় , তাদেরকেও দেওবন্দীগণ মুকাল্লিদ (মাযহাবের অনুসারী) বলে স্বীকার করেন না ।
১ – সমস্ত অনুসরণযোগ্য ইমাম/আলিমগণ থেকেই মুসলিম উম্মাহ উপকৃত হয়েছেন ; কিন্তু তাক্বলীদ (অন্ধ-অনুসরণ) যোগ্য ইমাম মাত্র চারজন ।
২ – কোন ইমামের মাযহাব অনুসারীকে ধর্মীয় সকল বিষয়াদীতে ঐ মাযহাবের নিয়ম-কানুনই মানতে হবে ।
৩ – কোন ফতোয়া মানার জন্য মুকাল্লিদের ঐ ফতোয়া যাচাই করতে কোন বই-পুস্তক দেখার প্রয়োজন নেই । ‘ইমাম প্রমাণ ব্যতীত কিছুই বলেন নি’ – এ বিশ্বাস থাকাই যথেষ্প , কারণ , ইমামের কথা স্বপ্রমাণিত ।
৪ – কোন মাযহাবের মুকাল্লিদ সামান্যতম কোন ব্যাপারেও অন্য তিন মাযহাবের অনুসরণ করতে পারবে না । অন্য মাযহাব অনুসরণ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ । কোন মাযহাবের মুকাল্লিদ যদি , কোন বিষয়ে কুরআনের কোন আয়াতে বা সহীহ হাদীসে তার মাযহাবের ফতোয়া বিরোধী কিছু পায় , তবুও তাকে তার মাযহাবের ফায়সালাই মানতে হবে ।
তাক্বলীদের শর্তসমূহ , জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করা বা সাহাবা (রাঃ) গণের অনুশীলন বা পরবর্তী প্রজন্মের নিয়মের মত নয় । পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে , সাহাবী (রাঃ) গণও তাদের মধ্যে যারা বেশী জ্ঞানী তাদের দ্বারস্থ হতেন । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর একান্ত সান্নিধ্যে যারা বেশী থাকতেন , তারাই জ্ঞান এবং বুঝের দিক থেকে উঁচু স্তরের ছিলেন । যাহোক , তারা মাত্র একজন জ্ঞানী সাহাবীকেই ধর্মের সমস্ত বিষয় জানার জন্য নির্দিষ্ট করে নেয়াকে অবশ্য কর্তব্য মনে করতেন না । তারা শুধুমাত্র জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করতেন , তাক্বলীদ করতেন না । দেওবন্দীগণের যুক্তি-তর্কের মত যদি , একজনের সাহাবী (রাঃ) গণের অনুশীলনকে তাক্বলীদও ধরে নেয়া হয় ; তা’হলে এটা একজন সাহাবীর তাক্বলীদ ও অন্ধ অনুসরণ প্রমাণিত হয় , কিন্তু কোন নির্দিষ্ট ইমাম বা আলিমের নয় ।
এভাবেই দেওবন্দীগণ দাবী করেন , যখন রাসূল (সাঃ) মু’য়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) কে ইয়ামেনে পাঠিয়েছিলেন , ইয়েমেনবাসীরা তাকে (মু’য়াজ ইবনে জাবালকে) তাক্বলীদ করতো । এখানে ইয়ামেনবাসীরা মু’য়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) এর মতামতের অনুসরণ করাকে আবশ্যিক করে নেননি বা অন্য সাহাবীগণের ফতোয়া নিষিদ্ধ করেননি । এখানেও তাক্বলীদের শর্ত পূরণ হচ্ছে না । রাসূল (সাঃ) থেকে সহীহ বর্ণনায় যা কিছু পেয়েছেন , ইয়ামেনবাসীরা তা মেনে নিয়েছেন ।
যাহোক , দেওবন্দীগণের মতে , ইয়ামেনবাসীগণের উচিত ছিলো , রাসূল (সাঃ) এর তাক্বলীদ – তথা , ইত্তিবা বাদ দিয়ে , চার ইমামের তাক্বলীদ করা । এছাড়াও , তাক্বলীদের সমর্থনে দেওবন্দীগণ ‘জাল হাদীস’ তুলে ধরেন , “আমার সাহাবাগণ তারকার মত , এদের যাকেই তোমরা অনুসরণ করবে , সঠিক পথের নির্দেশ পাবে ।” সুতরাং , এই জাল হাদীসের আলোকেও ইয়ামেনবাসীদেরকে মু’য়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) এর তাক্বলীদ করতে দেয়া উচিত । কিন্তু , তাও দেওবন্দীগণের নিকট অগ্রহণযোগ্য । তাদের স্ববিরোধীতার কি শেষ আছে ?
আপনার দেয়া দ্বিতীয় দলীলে উলুল আমরের আনুগত্য শর্তহীন নয় । শর্তযুক্ত । যা আয়াতের পরের অংশেই দেয়া আছে । ফেতনাবাজরা শুধু প্রথম অংশ উল্লেখ করে , পরের অংশ করে না । আয়াতটি আবার দেখুন :
অর্থ : হে ঈমানদার বান্দাগণ ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের এবং উলিল আমরের (তোমাদের মধ্যে যারা নির্দেশ দানের অধিকারী তাদের ) । অতপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে মতবিরোধ করো তবে তা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি উপস্থাপন করো , যদি তোমরা ঈমান এনে থাকো আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ; এটাই তোমাদের জন্য উত্তম পরিণতির দিক দিয়ে কল্যাণকর ।
আপনি আল্লাহর আনুগত্য করবেন প্রশ্ন ছাড়া , রাসূল (সাঃ) এর আনুগত্য করবেন প্রশ্ন ছাড়া কেননা তিনি আল্লাহ কতৃক পরিচালিত । আর উলিল আমর – পরবর্তি আলেম ওলামাদের আনুগত্য করবেন শর্ত সাপেক্ষে । দলীল ভিত্তিক তাদের যে কারও আনুগত্য আল্লাহ ও রাসূলেরই আনুগত্য । আর তাদের মধ্যে যদি মতভেদ হয় তাহলে আপনার যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান থাকে আপনার যদি শেষ দিবসের প্রতি ঈমান থাকে তাহলে কুরআন এবং সহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক সঠিক সমাধান খুঁজে নিবেন । এটাই ঈমানের দাবী । যেমন এক মাযহাব মতে রক্ত বেরিয়ে গড়িয়ে পড়লে ওযু ভেঙ্গে যাবে , আর এক মাযহাব মতে ভাঙ্গবে না । এখানে একসাথে দুটিই সঠিক হতে পারে না । কারন আমল গ্রহণকারী আল্লাহ একজন , যিনি আমাদের শিক্ষিয়েছেন সেই রাসূল (সাঃ) একজন , একই কাজ ফলাফল দুটি হতেই পারে না । এখন আপনি যদি সত্য যাচাই ছাড়া আপনার মাযহাবের অন্ধ অনুসরণ করেন , আর আপনার আমল যদি নবী (সাঃ) এর আমলের বিপরীত হয় তাহলে সুরা মুহাম্মাদ এর ৩৩ আয়াত অনুযায়ী আপনার আমল ব্যর্থ হতে বাধ্য ।
অর্থ : হে ঈমানদার বান্দাগণ , তোমরা ( সর্বাবস্থায় ) আল্লাহর আনুগত্য কর এবং তার রাসূলের আনুগত্য কর ( শর্তহীন ভাবে ) এবং ( এর বিপরীত করে ) তোমাদের আমল সমূহ বিফলে যেতে দিওনা । ( সূরাঃ মুহাম্মাদ : ৩৩ )
আপনার দেয়া তৃতীয় আয়াতেও আনুগত্য (পিতা-মাতার) শর্তসাপেক্ষে করা হয়েছে । সুতরাং বুঝে শুনে দলীল দিন ।